আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২২

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২২
Raiha Zubair Ripte

লারা অবিশ্বাসের চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের হাতে থাকা ফোনের দিকে। এ কার ছবি দেখছে সে! দমবন্ধ লাগছে,,শ্বাস আঁটকে আসছে। কাঁপা কাঁপা হাতে তর্জনী উঁচু করে বলে-
-“ ত..তামিম ফারুকী!
দু কদম পিছিয়ে গেলো। তন্ময় ফোনের দিকে তাকালো। আশ্চর্য ফাহাদ কে তামিম ফারুকী কেনো বলছে?

-“ তামিম ফারুকী কে?
লারা চেয়ার শক্ত করে ধরলো। শরীর বেয়ে ঘাম ছুটছে এই এসির মধ্যেও। তন্ময়ের দিকে চেয়ে বলল-
-“ ওর নাম তো তামিম ফারুকী। মালদ্বীপ শহরে ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে,কথা হয়েছে।
তন্ময় অবাকের ন্যায় বলে-“ হোয়াট!
রাহাত,লিখন,সাব্বির ও অবাক হয়। যাকে কি না পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছে তারা আর সেই ছেলে তাদের ই সঙ্গীর সাথে দেখা করেছে কথা বলেছে! এ যেনো পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো সবার। রাহাত লারার হাত টেনে বলে-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ আমাদের জানাস নি কেনো?
“ আমি কিভাবে জানবো তামিম ফারুকী ফাহাদ?
রাহাত হতাশ হলো। তারা তো ফাহাদের ছবি টা লারা কে দেখায় ই নি। লিখন তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কত ধুরন্ধর এই ছেলে দেখছিস! আমাদের নাকের ডগা দিয়ে লারার সাথে দেখা কথা বলল অথচ আমরা জানতেই পারলাম না। এটা নিশ্চয়ই ওর প্ল্যান ছিলো।

“ হতে পারে।
সাব্বি চেয়ারে বসতে বসতে তার হাতে থাকা ট্যাব টা তন্ময়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ লোকেশন ট্র্যাকিং করা হয়ে গেছে। সাভারের রপ্তানি এলাকায় দেখাচ্ছে। এলাকা টা বেশ বড়ই।
-“ আর সময় নষ্ট নয়,,বের হতে হবে কুইক।

সাব্বির, রাহাত,লিখন,সাব্বির বেড়িয়ে পড়লো। লারা ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তার কান্না পাচ্ছে। তামিম ফারুকী ওরফে ফাহাদ এভাবে গেইম খেললো তার সাথে! ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়লো। কি করে ভালোবেসে ফেললো এই ছেলে কে?
দূর থেকে ফারাহ্ দেখলো লারা কে। এগিয়ে আসলো কাছে। ঘাড়ে হাত রাখতেই লারা তড়িৎ গতিতে চোখের পানি মুছলো। মুচকি হাসার চেষ্টা করে পেছন ফিরে ফারাহ কে দেখে বলে-

-“ ওহ্ ফারাহ্ তুমি।
-“ হুমম আমি। কাঁদছো কেনো?
-“ আ..আরে ক..কই কাঁদছি। কাঁদি নি,চোখে কিছু একটা ঢুকে ছিলো সেজন্য পানি পড়ছে।
-“ মুখ না হয় মিথ্যা বলছে কিন্তু চোখ তো অন্য কিছু বলছে লারা। তুৃমি কি কোনো ভাবে ফাহাদের উপর দূর্বল হয়ে পড়েছিলে?
লারা এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। ফারাহ্ র হাত আঁকড়ে মুঠোয় নিয়ে বলে উঠল-

-“ ভুল করেছি আমি ফারাহ্,ভীষন রকমের ভুল করেছি। আমার এমন টা করা ঠিক হয় নি। আমি কি করে তাকে ভালোবেসে ফেললাম বলো। আমার মোটেও তাকে ভালোবাসা উচিত হয় নি। সে একজন ক্রিমিনাল সে জানতো হয়তো আমরা কেনো গিয়েছিলাম সেখানে।
-“ ফাহাদ তোমাকে ভালোবাসতো? নাকি ভালোবাসার নাটক করেছে কোনটা?
ফারাহ্ চুপ হয়ে গেলো। ফাহাদ তো দুটোর কোনোটিই করে নি। না তাকে ভালোবেসেছে আর না তার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে। উল্টো তাকে তার থেকে দূরে থাকতে বলেছে। কিন্তু সেই তো বারবার ফাহাদের কাছে ছুটে যেত।

-“ কি হলো চুপ কেনো?
-“ সে কোনো কিছুই করে নি।
-“ তারমানে সব শুধু তোমার সাইড থেকেই ছিলো?
-“ হ্যাঁ।
-“ সব জানার পরও ভালোবাসো তাকে?
লারা কিছু বলতে পারলো না। বসা থেকে উঠে চলে গেলো।

ফারাহ্ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে একের পর এক ফোন করছে ফাহাদ কে। ফাহাদ রিসিভ করছে না। ফারাহ র রাগ হলো। কাজের সময় ফোন কেনো রিসিভ করবে না। এদিকে যে তন্ময়রা চলে গিয়েছে তাকে খুঁজতে।
তুলিকে কাঠের চেয়ারে রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে রেখেছে ফাহাদ। তুলির ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। এই রুমে কোনো ফ্যান নেই,আর না কোনো জানালা আছে। গরমে তুলির অবস্থা যাচ্ছে তাই। অক্সিজেন ও ঠিক মতো পাচ্ছে না।

স্কুল ছুটে হতেই স্কুল থেকে বের হওয়ার পর এই ফাহাদ তার সামনে আসে। জানায় তন্ময় বাজেভাবে এক্সিডেন্ট করেছে,অবস্থা খুবই খারাপ। তুষার খাঁন তাকে পাঠিয়েছে হসপিটালে নিয়ে যেতে তুলি কে। তুলি কথাটা শোনা মাত্রই পাগলের মতো ফাহাদের সাথে চলে আসে। একটি বার ফোন করে সিউর হলো না আদৌও এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না।

তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তুলির৷ শরীরে শক্তিও শেষের পথে। গলায় মৃদু শব্দ এনে বলল-
-“ পানি দিন,,পানি,,খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে।
ফাহাদ এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো। তুলির মুখের সামনে ধরতেই ঢকঢক করে পানি খেলো। ফাহাদ গ্লাস টা সাইডে রেখে তুলির সামনে চেয়ার টেনে বসলো।

-“ আপনি কে? আমাকে এভাবে আঁটকে রেখেছেন কেনো,,কি চাই?
-“ তন্ময় শাহরিয়া কে।
-“ ভাইয়া কে!
-“ জ্বি। আপনার ভাই আমার বাবা কে আঁটকে রেখেছে। এতোক্ষণে জেনেও গেছে আপনি আমি এখানে। আমি সব ব্যাবস্থা করে রেখেছি।

-“ সব ব্যাবস্থা করে রেখেছেন মানে!
-“ মানে টা হচ্ছে,, এই বিল্ডিং এর এক কোনায় আমি বোম ফিট করে রেখেছি। হয় আপনি, আমি আর তা না হলে তাদের মধ্যে কারো অথবা আমরা সবাই উপরে পগারপার হয়ে যাব।
তুলি কে ভয় দেখানোর জন্য বলল ফাহাদ।

-“ কিহ! পাগল আপনি? আর আপনি কে। আমাকে কেনো এনেছেন। আমি কি আপনাকে চিনি?
-“ নাহ্
-“ তাহলে?
-“ আপনাকে খোঁজার জন্য ই তো তন্ময় আসবে। সেজন্য আপনাকে উঠিয়ে এনেছি।
-“ এতে কি লাভ?
-“ লাভ লোকসান এখন আর খুঁজি না। যদি খুঁজতাম তাহলে জীবন টা অন্য রকম হতো।
-“ খুঁজতে না করেছে কে লাভ লোকসান?
-“ জীবন।
-“ সেটা কে?
ফাহাদের মাথা ধরে গেলো। জীবন মানে জীবন কেই বুঝিয়েছে সে।

-“ কি হলো বলুন জীবন টা কে?
-“ কেউ না।চুপ থাকুন মাথা ধরে গেছে।বকবক করতে থাকলে রাগের বশে দু চাড় থাপ্পড় পড়তে পারে আপনার গালে। আপনি মোটেও চাইবেন না আমার হাতে চড় খেয়ে গালে দাগ বানাতে।
তুলি চুপ রইলো। ফাহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফারাহ্ র অনেক গুলো ফোন কল এসেছে। সাইলেন্ট থাকায় শুনে নি। চেয়ার ছেড়ে উঠে কিছুটা দূরে গিয়ে ফারাহ্ র নম্বরে কল করলো। দু বার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো।

-“ হ্যালো ভাইয়া।
-“ হুম বল।
-“ তুলি কে ওখানে রেখেই তুমি পালিয়ে যাও। তন্ময় অলরেডি চলে গিয়েছে তোমার ওখানে। প্লিজ ভাইয়া তুমি পালিয়ে যাও।
-“ পালিয়ে কতদিন বাঁচা যায়? একদিন না একদিন তো এই খেলা শেষ করতেই হতো তাই না? সেটা না হয় আজই হোক।

-“ কি করতে চাইছো তুমি?
-“ সেটা তোর অজানাই থাকুক।
-“ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-“ হুমম।
-“ লারা কে চিনো?
-“ হ্যাঁ চিনি৷ কি হয়েছে?
-“ লারা তোমাকে ভালোবাসে জানতে সেটা?
-“ হুমম।

-“ মেয়েটা আজ সত্যি টা জেনে গেছে। কেঁদেছে খুব।
-“ তারজন্য ও নিজেই দায়ী, আমি বলেছিলাম নিজেকে সংযত করতে কিন্তু পাগল মেয়ে শুনলোই না।
-“ লারা কিন্তু মেয়ে হিসেবে অনেক ভালো।
-“ আই নোও। তার জন্য সুন্দর ছেলে খুঁজে বিয়ে দিস।
-“ তাকে ভালোবেসে ছিলে কি?
ফাহাদ চুপ রইলো। তারপর ফাহাদের কাঠকাঠ গলায় বলল-

-“ না।
-“ সত্যি?
-“ মিথ্যা কেনো বলবো?
-“ তাহলে হঠাৎ করে এতোটা বদলে গেলে কি করে? তোমার তো বিডি আসার কথা ছিলো না। বিডি কেনো আসলে? তুলি কে কেনো কিডন্যাপ করলে?
-“ এটার সাথে লারার কি যোগ?
-“ যোগ না,,বিয়োগের খেলায় মেতে গেছো ভাই। যোগের খেলায় থাকলে তুমি এভাবে বাবার গড়া সাম্রাজ্য ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে না। কি এমন হয়েছে ভাই আমাকে বলো না।

-“ কিছু হয় নি। রাখছি।
ফোন কে’টে দিলো ফাহাদ। ফারাহ্ কে কি করে জানাবে তার বাবা কতটা নিকৃষ্ট। তাদের ই মা কে তার বাবা টাকার লোভে পা’চার করে দিয়েছে ছিঃ!
আর লারা,, তাকে ফাহাদ ভালোবাসে কি না জানা নেই। তবে তার দুষ্টমি কথাবার্তা বেশ ভালো লাগতো। ইনোসেন্ট, বোকা একটা মেয়ে লারা। তবে ফাহাদ চায় নি লারা তাকে ভালোবাসুক। এখন পস্তাচ্ছে ভালোবেসে।
তুলি ঘাড় কাত করে জিজ্ঞেস করলো-

-“ এই কার সাথে কথা বললেন?
ফাহাদ তাকালো।
-“ আপনাকে মে’রে গুম করে দেওয়ার জন্য কথা বললাম। আর কিছু?
-“ না। ক্ষিধে পেয়েছে ভাই কিছু তো খেতে দিন।
-“ আমি খাবার নিয়ে বসে নেই। আপনার ভাই আসলে বেঁচে থাকলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাইয়েন। এবার চুপচাপ থাকুন।

ফাহাদ চলে গেলো। তুলি মুখ বাঁকালো। বেয়াদব ছেলে, তুলি এনেছিস ভালো কথা খেতে তো দে।
তন্ময় রা রপ্তানির পুরান গেটের সামনে এসে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে আবার ফোনে ঢুকে। এই গেট থেকে ডানের রাস্তা ধরে বাঁয়ে এক বিল্ডিংয়ে ফাহাদের লোকেশন দেখাচ্ছে।
তন্ময় রা সেদিকে এগিয়ে গেলো। চারতলা বিল্ডিং। তন্ময় রা সতর্কতার সাথে ভেতরে ঢুকলো। এক তালা এক তালা করে সব খুঁজে দেখে চতুর্থ তালায় গেলো। চতুর্থ তালায় পাঁচ টা কক্ষ। চারটা কক্ষ দেখা শেষ। লাস্ট কক্ষে যেতেই দেখে তুলি চেয়ারে বাঁধা। তন্ময় দৌড়ে গেলো বোনের কাছে। তুলি তন্ময় কে দেখো খুশিতে হেসে ফেলে।

-“ ভাইয়া তুমি এসেছো!
তন্ময় তুলির হাত পা খুলে দিলো। তুলি উঠে দাঁড়ালো। তন্ময় বোন কে জড়িয়ে ধরলো। রাহাত পুরো বিল্ডিং খুঁজে দেখলো ফাহাদের ছিটেফোঁটা ও নেই। সাব্বির এসে জানালো-
-“ ফাহাদ নেই পালিয়েছে।
তন্ময়ের ফোনে মেসেজের শব্দ আসে। তন্ময় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আননোন নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে।

-“ আমাকে ধরা এতো সহজ নয় মিস্টার শাহরিয়া। সব শেষ করে তবেই আমি ধরা দিব। এক ব্যাক্তির৷ র’ক্ত ঝড়িয়ে তবেই আমি ক্ষান্ত হবো।
তন্ময় ফোন করলো এই নম্বরে। ফোন সুইচ অফ। নাহ্ এভাবে হবে না। এই ছেলে তাদের ধারণার বাহিরের চেয়েও অনেক ধুরন্ধর। নিশ্চয়ই কোনো গুপ্তচর আছে যার মাধ্যমে এই ফাহাদ তাদের সকল খবরাখবর পাচ্ছে আর বেঁচে যাচ্ছে।
তুলি মেসেজের দিকে তাকালো।

-“ ভাইয়া আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে। বেয়াদব টা খেতে দেয় নি। বলেছে বেঁচে থাকলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে।
তন্ময় বের হলো বিল্ডিং থেকে তুলি কে নিয়ে। তারপর রেস্টুরেন্টে গেলো। তুলি কে পেট ভরিয়ে খাওয়ালো।
এতিমখানায় এখনও বসে অপেক্ষা করছে চিত্রা তুষার। তন্ময় একটু আগেই জানিয়েছে তুলি কে পাওয়া গেছে। ফিরছে এতিমখানায়। তুষার দেহে প্রান ফিরে পেলো। চিত্রা কে এতক্ষণ ভুংভাং বুঝিয়ে রেখেছিল। তন্ময় ফোন করে জানাতেই চিত্রা কে জানালো তুলি ফিরছে। চিত্রা তুলির রুমে গিয়ে জামাকাপড় সব ল্যাগেজে ভরছে। মেয়ে কে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। এক মুহূর্তের জন্য ও আর এই এতিমখানায় রাখবে না।

রাত ১ টার দিকে তুলি কে নিয়ে এতিমখানায় ফিরে তন্ময়। চিত্রা তখন তুলির রুমে বসে তুলির অপেক্ষায়।
তুলি নিজের রুমে ঢুকে চিত্রা কে বসে থাকতে দেখে চিত্রার দিকে এগিয়ে আসে। চিত্রা মেয়েকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুলিকে দু হাতে আগলে নিয়ে বলে-

-“ আমার মেয়ে,আমার কলিজা। আমার তৃষা।
তুলির জায়গায় তৃষার নাম শুনে তুলির মুখের হাসি সরে যায়।
চিত্রা তুলি কে ছেড়ে মুখে অসংখ্য চুমু খায়। তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এমপি মশাই আমাদের মেয়ে। আমাদের তৃষা।
তুষার এগিয়ে আসে। তুলি কে বুকে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম তুলি কে বুকে জড়িয়ে ধরলো। বুকটা কেমন শীতল হয়ে গেলো। কত বছর পর মেয়ে কে বুকে টেনে ধরলো। কত গুলো মানুষের হিংস্রতার জন্য তার মেয়ে তার থেকে দূরে ছিলো। না দূরে ছিলো না কাছেই ছিলো, চোখের সামনেই কিন্তু অজানা।
তুলি হা হয়ে তাদের কথোপকথন শুধু শুনছে।

-“ আমাকে তৃষা কেনো বলছো তোমরা? আমি তুলি মা,তৃষা নই।
চিত্রা হাসলো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
-“ না তুই তুলি নস। আমার মেয়ে তৃষা তুই।
-“ কিহ্ আবোলতাবোল বলছো মা। ভাইয়া দেখো চিত্রা মা কিসব বলছে।
-“ ঠিকই বলছে উনি। তুইই তৃষা।
-“ এটা সম্ভব কি করে?

তন্ময় সব খুলে বলল। সব শুনে তুলি নির্বাক। অধরা এমন টাও করতে পারে?তাকে দেখে তো মনে হয় না তার ভেতর এমন শয়তানি। তার মায়ের থেকে তাকে আলাদা করে দিয়েছে। মা’কে তো কাছেই পেয়েছিল মায়ের ভালোবাসা পেয়েছিল কিন্তু আপন মা যেভাবে ছায়ার মতো থাকতো পাশে সেভাবে তো পায় নি। চোখের সামনেই তো ছিলো তার পরিবার। তুলির একদিকে যেমন খুশি হচ্ছে তার মা বাবা কে পেয়ে,, অন্যদিকে মানতে কষ্ট হচ্ছে সেই তৃষা। তুলির মোটেও নিজেকে তৃষা ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
তন্ময় তুলি কে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বলল তুষার কে।

-“ তুই বাড়ি ফিরবি না?
তুষারে কথায় তন্ময় মুচকি হাসলো।
-“ হ্যাঁ ফিরবো খুব শীগ্রই। এখন আসি দোলন অপেক্ষা করছে বাসায়।
তন্ময় চলে গেলো। চিত্রা ল্যাগেজ তুলে নিলো হাতে।
-“ চল তৃষা বাড়ি ফিরবি। তোর দাদি ফুপি অপেক্ষা আছে তোর।

তুলি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাফিজা বেগমের দিকে তাকালো। হাফিজা বেগম নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে। চোখ দুটো কেমন ছলছল করছে। ছোট্ট থেকে হাফিজা বেগম তুলি কে পেলেপুষে বড় করলো। আর এখন মেয়েটা চলে যাবে ভাবতেই মন টা বিষাদে ভরে যাচ্ছে। তুলি এগিয়ে গেলো। হাফিজা বেগম চোখের পানি টুকু মুছে নিলো অগোচরে।

-“ তোমার কষ্ট হবে তাই না আমি চলে গেলে?
হাফিজা বেগম হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ না না কষ্ট হবে না মা। তুই তোর পরিবার পেয়েছিস তার কাছে এই কষ্ট কিছুই না। আমি খুশি।
-“ সত্যি?
-“ হুমম।

তুষার গিয়ে গাড়িতে অপেক্ষা করলো। চিত্রা তুলির হাত ধরে চলে আসলো।
তন্ময় বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজে যায়। কাছে থাকা সেকেন্ড চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। পুরো রুম অন্ধকার। তন্ময় আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দেওয়াল হাতড়ে সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালায়। তারপর ঘুরে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই দেখে সোফায় শুয়ে আছে দোলন। বুঝতে আর বাকি নেই মেয়েটা তার অপেক্ষায় ছিলো বসে। তন্ময় সোফার দিকে এগিয়ে গেলো। দোলন কে আর না ডেকে পাঁজা কোলে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো। তারপর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দোলন কে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিলো।

খাঁন বাড়িতে ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে সবাই চিত্রা দের। চিত্র তুলি কে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবাই এগিয়ে আসলো। তানিয়া বেগম তুলি কে প্রথমে জড়িয়ে ধরলো। তার নাতনি তারই চোখের সামনে ছিলো। আর জানতেই পারলো না। তৃষ্ণা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোট্ট তৃষা টা তাদের তুলি ভাবতেই কেমন লাগছে।
তুষার রাতুলের রুমে চলে যায়। চিত্রা তুলির রুমে নিয়ে যায়। আজ রাত টা মেয়ের সাথেই থাকবে।
রাতুল বেলকনি তে দাঁড়িয়ে ছিলো। তুষার কে নিজের পাশে দাঁড়াতে দেখে বলে-

-“ খুশি মেয়েকে পেয়ে?
-“ ভীষণ।
-“ যাক,, তুষার খাঁন এখন পরিপূর্ণ।
-“ এবার তোর ও হবার পালা পরিপূর্ণ।
-“ নাহ্ রাতুল আর এ জীবনে পরিপূর্ণ হতে পারবে না। বাকি জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিব।
-“ কেনো? অধরার জন্য কেনো তুই সাফার করবি?
-“ কারন জীবন টাই এমন।
-“ জীবন এমন না, জীবন টাকে তুইই এমন বানাচ্ছিস রাতুল।
-“ কেমন বানাচ্ছি জটিল?
-“ জটিল নয় তো কি?

-“ আচ্ছা ধর তুই একটা মেয়ে কে না না চিত্রা কেই ভালোবাসিস,,মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিস,,সামনে চিত্রার সাথে তোর বিয়ে,রাত দিন চিত্রা কে নিয়ে কল্পনা জল্পনা করেছিস হুট করে একদিন দেখলি তোর মৃত্যুর কারন তোরই সেই ভালোবাসার মানুষ তখন ফিলিংস টা কেমন হবে?
-“ এখন ও ভালোবাসিস অধরা কে?
রাতুলের বুক টা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। কি করে বুঝাবে তার মনের ব্যাথা। পাগলের মতো ভালোবেসেছে মেয়েটাকে। খুশি রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এবার কণ্ঠনালী কেঁপে উঠলো রাতুলের। এলোমেলো করে বলল-
-“ ন…না ভালোবাসি না। তাকে ভীষণ বাজে ভাবে ঘৃণা করি।

তুষার আর কিছু বললো না। রাতুলের মনে আজও অধরা আছে বুঝতে বাকি নেই। রাত অনেক হওয়ায় রুম ছেড়ে চলে গেলো। রাতুল আকাশ পানে তাকালো। চোখ তার নোনা জলে ভরে উঠলো। ছেলেরা খুব সহজে কান্না করে না। কিন্তু রাতুল আজ আর আঁটকে রাখতে পারছে না। চোখ বন্ধ করতেই নোনা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২১

-❝ পৃথিবী আমার মতো প্রেমিক পুরুষদের জীবনে এমন বিষাক্ত ভালোবাসা কখনই দিয়ো না। না পারা যায় ছেড়ে থাকতে আর না পারা যায় আঁকড়ে ধরে বাঁচতে। মাছের কাঁটার মতো গলায় আঁটকে থাকে এমন ভালোবাসা। শান্তি মতো নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচা দুষ্কর হয়ে যায় বুঝলে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৩