আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২১

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২১
Raiha Zubair Ripte

মেঘনাদবধ কাব্যের সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই জানি। মেঘনাদবধ কাব্যের রচিত বিভীষণ যে কিনা জন্ম ধর্ম ভুলে তাদেরই রাক্ষসপুরীর শত্রু লক্ষ্মণ কে সাহায্য করেছিল।সেখান থেকে লোক মুখে এক প্রবাদ শোনা যায় সেটা হলো ঘরের শত্রু বিভীষণ।

এই অধরা কে এখন সেই বিভীষণের সাথেই তুলনা করা যায়। আবার মীরজাফরের সাথেও তুলনা করা যায়। বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলা যে কি না তার কাছের সকল মানুষের থেকে বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছে। তার পরাজিত হওয়ার পেছনে ছিলো তারই কাছের মানুষ। যারা সামনে থেকে সিরাজের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও পিঠ পেছন তারাই সিরাজ কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তুষার ঠিক নবাবের মতোই বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার। অধরা যে কি না তাদেরই পরিবারের অংশ,ছোট থেকে নিজের বোনের মতো দেখে এসেছে। খাইয়ে পড়িয়ে এতো বড় করেছে অথচ এই শান্তশিষ্ট অধরাই তুষারের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে তার সর্বস্ব কেঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভালোবাসা, লোভ, মানুষ কে পশুর সমান তৈরি করে। যার বাস্তব উদাহরণ অধরা। কাউকে ভালোবাসা অন্যায় না। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ টিকে পাবে না যেনে তারই ক্ষতি করা কখনও ভালোবাসা হতে পারে না।
ভালোবাসা তো সেটাই,,যেখানে ভালোবাসার মানুষটি কে পাবে না জেনেও তার মঙ্গল কামনা করা। তার ভালো চাওয়া। তাকে নিজের মতো করে সুখী থাকতে দেওয়া। তাহলেই না ভালোবাসার মাঝে আনন্দ!

অধরা ভেবেছিল সবাই কে বদ্ধ রুমে আঁটকে রেখে নিশ্চিন্তে খাঁন বাড়ি থেকে বের হতে পারবে। কিন্তু সদর দরজার কাছে আসতেই তন্ময় আর সায়ান কে দেখে থমকে যায়। হাতে থাকা ছুরি টা তন্ময় সায়ানের দিকে তাক করে বলে-
-“ তন্ময় আমাকে যেতে দে,তা না হলে এই ছুরি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিব। তুই তোর ফুপি কে বড্ড ভালোবাসিস আমি জানি। তুই নিশ্চয়ই চাইবি না তোর ফুপি তোর সামনে শেষ হয়ে যাক।

তন্ময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অধরা কে দেখছে। এই অধরা কে তার বড্ড অচেনা লাগছে। কতই না ভালোবাসতো এই অধরাকে। নিজের মায়ের চাইতেও বেশি টাইম স্পেন্ড করেছে অধরার সাথে। ছোট্ট বোন টাকে যখন হারিয়ে তার মা গুমরে গুমরে মরছিলো তখন এই অধরাই তাকে তার মায়ের বিরুদ্ধে ম্যানুপুলেট করেছে। বুঝিয়েছে তার মায়ের বোকামির জন্যই তার বোন হারিয়ে গেছে। ছোট্ট মন ছিলো তখন যা বুঝিয়েছিল তাই বুঝে নিছে।

এটুকু বুঝতে পারে নি তন্ময় যে কোনো মা-ই চায় না তার সন্তানের কোনো ক্ষতি হোক। কিন্তু অধরার ম্যানুপুলেটের কাছে তার চিন্তা খুবই নগ্ন ছিলো। এমন ভাবে মায়ের বিরুদ্ধে সবসময় উস্কে দিতো যে অধরা যাই বলতো তন্ময় তাই বিশ্বাস করতো। করবেই না কেনো? অধরা চিত্রার চাইতেও বেশি ভালোবাসা দেখাতো। তন্ময়ের এখন সব টা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার লাগছে। মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশি এটা লোকমুখে শোনা গেলেও,মায়ের চেয়ে কখনও মাসির দরদ বেশি হতে পারে না। মাসি মাসিই থাকে আর মা মা’ই।

কেউ কি ভেবেছিল এই সাধাসিধা অধরা এতদূর যাবে?এক সাথে এতো গুলো মানুষের জীবন তচনচ করে দিবে?
-“ ইউ নোও হোয়াট ফুপি? মায়ের চেয়েও বেশি ভরসা করতাম ভালোবাসতাম তোমায়। সেই তুমিই এমন জঘন্য অপরাধী ট্রাস্ট মি যখন শুনলাম তখন বিলিভ করতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছিল।
অধরা আড়চোখে তাকালো। সে তন্ময় কে চিত্রার বিরুদ্ধে উস্কে দিলেও তন্ময় কে সে সত্যি ভালোবাসতো। তন্ময়ের সাথে কখনও বাজে কিছু করে নি। কোনো আঘাত ও করে নি কখনও।

-“ আমার এমন টা হওয়ার পেছনে একমাত্র দায়ী কে জানিস তন্ময়?
তন্ময় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
-“ আমার মা?

-“ ইয়েস,,ইউর মাদার চিত্রা। আমি আজ এই পর্যায়ে গিয়েছি শুধু মাত্র তোর মায়ের কারনে। তোর বাবা কে ছোট্ট থেকে ভালোবেসে এসেছি আমি,নামাজের মোনাজাতে চেয়ে এসেছি আমি। তারজন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কান্না করেছি আমি। অথচ তোর মা বিনা সাধনায় তাকে পেয়ে গেল! আর আমি সেটা চোখে সামনে দেখে সহ্য করে নিব?
-“ কাউকে মোনাজাতে রাখা,কারো জন্য তাহাজ্জুদের নামাজে চোখের জল ফেলা অপরাধ নয় ফুপি কিন্তু ভুল মানুষ কে চাওয়া,ভুল মানুষ কে ভেবে চোখের জল ফেলা নেহাতই বোকামি ছাড়া আর কিছু না।

এই যে তুমি আল্লাহর কাছে বাবা কে চাইলে। বাবা যদি তোমার জন্য কল্যাণকর হতো তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ বাবাকে তোমার ভাগ্যে না রেখে মায়ের ভাগ্যে রাখতো না।জীবনসঙ্গী উপর থেকে আগেই ঠিক করে রাখা হয়। তুমি আমি চাইলেও সেই ভাগ্য বদলাতে পারবো না। তুমি যদি বাবা কে ভালোই বাসতে ফুপি তাহলে বাবার এতবড় ক্ষতি তুমি করতে পারতে না। ভালোবাসতে জানতে হয়। রাতুল আঙ্কেল কে দেখে শিখো।

তুমি তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়ার পরও সে তোমাকে কিচ্ছুটি বলে নি এতবছর কেনো জানো? সে তোমার মতো নিকৃষ্ট নয়। সে ভালোবাসার সংজ্ঞা জানে না। ভালোবাসার মানুষটি তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে বলে সে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে আসে নি। তুমি কি কখনও রাতুল আঙ্কেল কে ভালোবেসেছিলে ফুপি? শুনেছি অনেক গুলো মাসই তো কাটিয়েছো এক সাথে কখনও কি তাকে নিয়ে মনে অনুভূতি জাগে নি? শুধুই কি টাইমপাস ছিলো?
অধরা এবার জোর গলায় বলল-

-“ না আমি কোনোদিন রাতুল কে ভালোই বাসি নি। বাসার চেষ্টা ও করি নি।
তন্ময় হাসলো। সেই হাসিতে ছিলো অধরা কে নিয়ে উপহাস।

-“ চেষ্টা করলে দেখতে পেতে রাতুল আঙ্কেলের তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা। সে এখনও দ্বিতীয় বার কাউকে আর ভালোবাসতে পারে নি। তোমাকে দেখে আমার আজ সত্যি করুণা হচ্ছে ফুপি। পৃথিবী তোমার প্রথম ভালেবাসা কেঁড়ে নিলেও তার চেয়ে দ্বিগুণ ভালোবাসা এক মানুষ কে তোমার জীবনে দিয়েছিল কিন্তু তুমি তার মূল্য বুঝলে না। যাই হোক আর কথা বাড়াবো না। তুমি অযথা পালানোর চেষ্টা করো না। বাড়ির চারপাশে সিআইডি টিম ঘেরাও করে আছে। এখন বলো তৃষা কোথায়?

-“ তৃষার খবর জানতে চাস? বলবো না।
-“ তোমার অনুতপ্ত লাগছে না? এতো অন্যায় করেও তুমি কি সুন্দর জোর গলায় এখনও কথা বলছো। টাইম ওয়েস্ট করো না বলো তৃষা কোথায়?

-“ বললাম তো বলবো না৷ তোদের জীবনে তৃষা ফিরবে না। আমি ফিরতে দিবো না। বলবো না ও কোথায়…
আর বলতে পারলো না। পেছন থেকে কেউ হাত টেনে পরপর গালে চড় বসিয়ে দিলো দুটো। আকস্মিক এমন চড়ে হাত থেকে ছুরি টা পড়ে গেলো ফ্লোরে। রাতুল ছুরি টা তুলে নেয়। চিত্রা অগ্নিমূর্তি ধারন করে আছে। বাড়ির পেছনের পাইপ বেয়ে ছাঁদে উঠেছিল রাহাত। তারপর ছাঁদ থেকে নেমে তুষার দের রুমের দরজা খুলে দেয়। রাতুল এমন টা হবে আগেই ধারণা করেছিল সেজন্য তন্ময়দের ইনফর্ম করে দিয়েছিল। অধরার চুলের মুঠি ধরে চিৎকার করে চিত্রা বলে-

-“ বলছিস না কেনো আমার মেয়ে কোথায়? তোকে আমি নিজের বড় বোনের মতো ভালোবেসেছি। আর তুই আমার মেয়েকে আমার থেকে কেঁড়ে নিলি! হৃদয় কাঁপলো না ঐ টুকু মেয়েটাকে তার মায়ের বুক থেকে কেঁড়ে নিতে? ওহ্ সরি যার নিজের ই হৃদয়ে বিষ ভরা তার হৃদয় কি করে কাঁপবে অন্যের হৃদয় কে কাঁদিয়ে।
অধরা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে চিত্রার থেকে কিন্তু পারছে না। তুষার এসে চিত্রা কে থামালো। রাতুল মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো অধরার।

-“ তৃষা কোথায় অধরা বলে দাও।
অধরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাতুলের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে রেখেছে কিন্তু এখন আর পারছে না। তার ইচ্ছে করছে অধরা কে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিতে। কিন্তু সেটাও পারছে না। ভালোবাসা এতো টা বাজে কেনো? হ্যাঁ বাজেই। তা না হলে কেনো সে অধরা কে চেয়েও শাস্তি দিতে পারছে না?
তুষার রাতুল কে সাইডে সরালো। অধরার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল-

-“ দেখ অধরা রাগাস না আর আমায়। অলরেডি ফারহান কে আধমরা করে রেখে এসেছি। আৃি এবার রেগে গেলে তুই যে মেয়ে মানুষ ট্রাস্ট মি মানবে না। তাই বলছি বলে দে তৃষা কোথায়?
অধরা এবার এক ঢোক গিললো। পালানোর সব রাস্তাই তো বন্ধ।
-“ কি হলো বলছিস না কেনো তৃষা কোথায়?
তুষরের ধমকে কেঁপে উঠলো অধরা। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-

-“ এ…এতিমখানায়।
-“ কোন এতিমখানায়?
-“ শান্তিনিকেতন।
তুষার পিলে চমকালো নিজের এতিমখানার নাম শুনে। অবাকের ন্যায় বলল-
-“ শান্তিনিকেতনে আছে তৃষা?
-“ হ্যাঁ।
-“ মিথ্যা বলছিস তুই।

-“ না সত্যি বলছি। আপনার মেয়ে আপনাদের এতিম কানা তেই বড় হয়েছে দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে।
-“ দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে!
-“ হ্যাঁ। তুলি,,তুলিই তৃষা।
বসার রুমে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে চমকে উঠে অধরার কথা শুনে। তুলিই তৃষা! এতোদিন ধরে খাঁন বাড়ির চোখের মনি তাদের এতিমখানায় বড় হয়েছে অথচ তারা জানতেই পারে নি!
চিত্রা অধরার বাহু টেনে ধরলো-

-“ সত্যি বলছিস তুই? তু…তুলিই তৃষা। ও আমার তৃষা?
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা এবার তুষারের কাছে গেলো। হাত ধরে বলল-
-“ এমপি সাহেব শুনছেন তুলি আমাদের তৃষা। আমি আমার মেয়ের কাছে যাব নিয়ে চলুন না।
তুষার চিত্রা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো এতিমখানার উদ্দেশ্যে। সব তুষারের চোখের সামনেই ঘটেছে অথচ তার সামনে এমন ভাবে পর্দা ফেলে রাখা হয়েছিল যার কারনে কোনো ভাবেই সেই পর্দা ভেদ করে সত্য টা দেখতে পারে নি। দেখতে পাবে কি করে? কেউ কি ভেবেছিল তাদের অধরা তাদের সাথে মিশে এমন টা করবে!

তন্ময়ের ইচ্ছে করলো বাবা মায়ের সাথে চলে যেতে। তুলি কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে। তার বোন তুলি! এতোদিন ধরে চোখের সামনেই ছিলো নিজের বোন অথচ তারা বুঝতেই পারলো না!
রাহাত হ্যান্ডকাফ পড়ালো অধরার হাতে। বাকি যা কথা লকাপে গিয়ে বলবে।
তুষার চিত্রা কে নিয়ে এতিমখানায় আসে। চিত্রা তুলির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকে। হাফিজা বেগম চিত্রার ডাক শুনে ভেতর থেকে বাহিরে এসে বলে-

-“ তুলি তো নেই।
চিত্রা অবাক হয়। -“ তুলি নেই?
-“ না।
-“ কোথায় গেছে?
-“ স্কুল থেকে এখনও ফিরে নি।

তুষার হাত ঘড়ি টায় সময় দেখলো। এখন বিকেল ৫ টা বেজে ৫ মিনিট। স্কুল ছুটি দেয় ৩ টায়। এতক্ষণ তো বাসায় আসার কথা। পকেট থেকে ফোন বের করে সাইডে গিয়ে তুলির নম্বরে কল লাগালো।
চিত্রা উৎফুল্লতা নিয়ে হাফিজা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ হাফিজা জানো আমি আমার মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। আমার তৃষা কে খুঁজে পেয়েছি।
-“ সত্যি?
-“ হ্যাঁ। তুলিই আমার তৃষা। আমার মেয়ে। আমার কলিজা। আচ্ছা ও ফিরছে না কেনো? ও যকন জানবে আমি ওর মা, আসল মা। তখন ও আমারই মতো অবাক হবে তাই না? আমি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো ও কে।
হাফিজা বেগম কিছুই বুঝলো না। তুলি কি করে তৃষা হয়? তৃষা না হারিয়ে গেছে? তাহলে তুলি কে তৃষা বলছে কেনো?

এদিকে তুষার তুলি কে একের পর এক ফোন দিয়েই চলছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। তুষারের কপালে চিন্তার ভাজ। স্কুলে ফোন করে জিগ্যেস করলো তুলি আছে কি না স্কুলে। স্কুলের পিওন জানালো তুলি অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে ক্লাস শেষ করে।
তুষার জিজ্ঞেস করলো-
-“ কতক্ষণ আগে?
-“ তিন টার পরপরই।

তুষারের ভালে লাগলো না। তন্ময় কে ফোন দিলো। তন্ময় নিজের কেবিনে বসেছিল। বাবার ফোন পেয়ে খুশি মনে ফোন রিসিভ করে বলল-
-“ তুলি কে পেয়েছো? দাও ফোন টা।
-“ তুলি এখন ও এতিমখানায় ফিরে নি তন্ময়। অথচ স্কুল ছুটি হয়েছ ৩ টায়। আমার মনে হয় তুলির কোনো বিপদ হয়েছে।
তন্ময় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

-” ফোন করেছিলে তুলি কে?
-“ হুমম ফোন রিসিভ হচ্ছে না। তোর মা এটা শুনলে এবার নিশ্চিত খারাপ কিছু হবে। ও এখনও হাসিখুশি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুলির ফেরার।
-“ আমি দেখছি।
তন্ময় ফোন কেটে দিলো। সামনেই বসে ছিলো সায়ান। তন্ময়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখের পরিবর্তন হতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে তন্ময়?
-“ তুলি কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
-“ হোয়াট!

-“ হ্যাঁ। ইমিডিয়েটলি তুলি কে খুঁজে বের করতে হবে। মা অধীর অপেক্ষায় আছে এতিমখানায় তুলির ফেরার।
-“ তুলি কোথায় যেতে পারে?
-“ আমার মনে হয় ফুপি জানে।
তন্ময় ছুট লাগালো অধরার কাছে। ফারহান, শরাফত উল্লাহ এর পাশেই অধরা কে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। তন্ময় ভেতরে ঢুকে বলে-
-“ ফুপি তৃষা কোথায়?
অধরা বিরক্ত হলো।

-“ বললাম ই তো তোদের এতিমখানায়।
-“ তুলি এতিমখানায় নেই। তুলি কে কোথায় লুকিয়ে রাখছো?
অধরা অবাক হয়। তুলি কোথায় সে কিভাবে জানবে?
-“ আমি কি করে জানবে তুলি কোথায়?
-“ দেখো ফুপি রাগিয়ো না। বলে দাও তুলি কোথায়।
-“ আরে সত্যি আমি জানি না তুলি কোথায়। আমি তো তোদের সাথেই ছিলাম…
পাশ থেকে ফারহান হেঁসে উঠলো। তন্ময় তাকালো।

-“আপনি জানেন তুলি কোথায়?
-“ সেটা জানি না তুলি কোথায় কিন্তু তুলি কার কাছে সেটা মনে হয় আমি জানি।
-“ কার কাছে?
ফারহান বিশ্রী ভাবে হেঁসে বলল-
-“ বলবো না।

তন্ময় রাগে কিলবিল করতে লাগলো। পাশ থেকে লোহার রড নিয়ে ফারহানের চোয়াল বরাবর আঘাত করলো। মুহূর্তে ফারহান লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে। মুখের ভেতর থেকে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়তে লাগলো।
রাতুল ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। কেবলই জানতে পারলো তুলি মিসিং। এই ছোট্ট জীবনে এতো নাটকীয়তা কেনো? কেনে এতো জটিলতা? আট পাঁচ টা মানুষের মতো কেনো হলো না তাদের স্বাভাবিক জীবন?

চিত্রা তুষার তাদের সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করতো। রাতুল না হয় বাকি জীবন টা তার মা কে নিয়েই কাটিয়ে দিত। অধররা এতো বড় ধোঁকা দেওয়ার পরেও তো রাতুল অধরাকে সেটা নিয়ে একটা টু শব্দ ও বলে নি। অধরা তো রাতুলের থেকে কত ছোট অথচ সেই ছোট মাথায় কত-শত শয়তানি বুদ্ধি এঁটে রেখেছিল ভাবা যায়!
রাতুল পকেট থেকে ফোন বের করে সায়ান কে ফোন করলো।

-“ পেলি তুলির খোঁজ?
-“ না মামু। তুলির ফোন পাওয়া গেছে স্কুলের পাশে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে তুলি এক লোকের সাথে তার গাড়িতে হন্তদন্ত হয়ে উঠেছে।
-“ লোকটার মুখ দেখেছিস?
-“ না মাস্ক পড়া ছিলো। তবে ধারণা করেছি ওটা ফাহাদ।
-“ ধারণার উপর দিয়ে থাকলে চলবে না। সিআইডি তোমরা, তোমাদের চোখের আড়ালে কোনো কিছুই থাকার কথা না।

-“ চেষ্টা তো করছি মামু। এমন তো না আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি। গাড়ির নম্বর সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে। এখন এটা ধরেই আগাচ্ছি আমরা।
-“ আচ্ছা রাখি এখন।
রাতুল ফোন কেটে দিলো।
তন্ময় লকাপ থেকে বের হতেই অধরা শরাফত উল্লাহ এর দিকে তাকায়। রাগী কন্ঠে বলে-

-“ তুলি কে কোথায় সরাইছেন আপনারা আবার?
শরাফত উল্লাহ অধরার দিকে তাকায়। এই মেয়ে যে এতোদিন ফারহানের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল তা জানতো না। কত বছর আগে এক পাপ করেছে তার মাশুল এতো বছর পর দিতে হচ্ছে কথায় আছে পাপ ছাড়ে না তার বাপে রে। কথাটা মিলে যাচ্ছে এখন।
ফারহান ব্যাথা যুক্ত মুখ নিয়ে বলল-

-“ বাঘের বাচ্চার কাছে আছে সিংহের ছানা।
-“ মানে?
-“ আপনার গুবরে পোকা ভর্তি মাথায় ঢুকবে না।
-“ জাস্ট শাট-আপ। মুখ সামলে কথা বলুন। ভুলে যাবেন না আমার এই দশা আপনারই জন্য। তখন তো খুব বলেছিলেন ধরা পড়বো না আমরা। এখন কি হলো?

-“ কি হবে তুষার জেনে গেলো আপনার আসল চেহারা, সাথে পুরো খাঁন বাড়ি। তখন তুষার কে মেরে ফেললো আজকে এই দিন দেখতে হতো না। আপনার করা বোকামির ফল এটা। এখন সকলে আপনায় ঘৃণা করছে স্বয়ং রাতুল ও। যে কি-না আপনার সো-কল্ড ভালোবাসার জোরে বেঁচে ফিরেছে। হাহা…

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২০

-“ আপনার ইতিহাস জানলে লোকে আপনাকে আমার চেয়েও ঘৃণা করবে।
নিকৃষ্টতর লোক একটা আপনি আমার চেয়েও। নিজের বউকেও পা’চার করে দিছেন। তার মুখে আবার আমাকে নিয়ে হাসি!ভেবে দেখুন আপনার ছেলেমেয়ে জানলে কি হবে আপনার?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২২