মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১০

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১০
লেখিকা Sabihatul Sabha

আম্মা আমি ছোঁয়া কে ছাড়া থাকতে পারবো না আম্মা, প্লিজ তুমি ছোঁয়াকে নিয়ে আসো, আমার যে ছোঁয়া কে বড্ড বেশি প্রয়োজন আম্মা। তুমি সব দেখো ছেলের কষ্টটা দেখো না!
হালিমা বেগম অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্জন নেশা করে আছে!.?
নির্জন হালিমা বেগমের পায়ের কাছে বসে কাঁদতে শুরু করলো।

~ আম্মা আমার ছোয়াকে লাগবে আম্মা।
হালিমা বেগমঃ রুমে যাও নির্জন।
~ আম্মা তুমি শুধু নিজের জেদ টাই দেখো, কোনটা সঠিক কোনটা ভুল কেনো বুঝ না! তোমার সিদ্ধান্ত কেন আমার উত্তর দিচ্ছ! তোমার জন্য কেন আজ আমি কষ্ট পাচ্ছি! আমার মানুষটা কেন আজ অন্যের জন্য বউ সাজছে.? আমি সব শেষ করে দিব আম্মা সব।
হালিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহনাফ হাতে পিস্তল নিয়ে মাহিনের কলার চেপে ধরলো।
মাহিন বিশ্রীভাবে হেঁসে উঠলো।
আহনাফ মাহিনের কলার ছেড়ে বললো,’ তুই কার সামনে বসে আছিস জানিস.!?’
মাহিনঃ তুই ও মানুষ আমিও মানুষ, আমি এখন মানুষের সামনে বসে আছি নাকি তুই নিজেকে পশু ভাবছিস!.?
বলেই আবার হেঁসে উঠলো।
আহনাফ আশেপাশে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাহিনের মুখে পরপর কয়েকটা ঘুসি মারলো। মাহিনের মুখে দিয়ে রক্ত পরছে।

হাত পা বাঁধা মাহিন আবার হেঁসে উঠলো।
আহনাফঃ এমনটা কেনো করেছিস!.?
মাহিনঃ তোর আগে আমি ওকে চেয়েছি।
আহনাফঃ কিন্তু ও আমার বউ।
মাহিনঃ আগে ছিল।
আহনাফঃ এখনো আছে।
মাহিনঃ অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আহনাফঃ আমি তোকে শেষ করে ফেলবো।
মাহিনঃ তাহলে বসে আছিস কেন!.?
আহনাফঃ এতো সহজে না, আজ পাঁচটা বছর যেই কষ্টে প্রতিটা মুহূর্ত কাটিয়েছি তোকেও তার কিছু ভাগ দিতে হবে না!

মাহিনঃ মহুয়াকে আমি আমার করেই ছাড়বো।
আহনাফঃ বেঁচে থাকলে ত।
মাহিনঃ তুই আমাকে চাইলেও মারতে পারবি না।
আহনাফ পিস্তল মাহিনের মাথায় চেপে ধরে বললো,’ প্রতিটা মুহূর্ত ছটফট করবি মৃত্যুর জন্য ‘
আহনাফ চোখের ইশারায় কাউকে কিছু বলে বেরিয়ে গেলো।

মহুয়া সবকিছু গুছিয়ে বসলো। আজ ছোঁয়ার বাসায় যাবে বিয়ে শেষ হলে নিজের শহরে ফিরে যেতে হবে।
নিজের রুম থেকে বের হতেই আহনাফ কে বাড়িতে আসতে দেখলো।
আহনাফ সোজা নিজের রুমে গেলো, মহুয়া নিচে গিয়ে মেঘলাকে বললো।
মেঘলা নিজেও রেডি হয়ে আছে।
মহুয়াঃ শ্রাবণ ভাইয়া কিছু বলবে.?
মেঘলাঃ একটু বকা দিবে আমি বুঝিয়ে নিব।
মহুয়াঃ ভাইয়া তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
মেঘলাঃ হুম।

মহুয়াঃ ভালোবাসার মধ্যে বিশ্বাসটা হয়তো একটু বেশি প্রয়োজন।
মেঘলা চায় না নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা বলে মহুয়ার কষ্ট বাড়াতে তাই বলে উঠলো, ‘ আলভি কোথায়!.?’
মহুয়াঃ এখানেই ত ছিল।
আমেনা বেগমঃ আলভি ওর দাদার কাছেই ছিল আহনাফ এসে নিয়ে গেল।
আহনাফের কাছে আলভি এটা শুনতেই মহুয়ার মুখ কালো হয়ে গেল। সে কিছুতেই চায় না আলভির আশেপাশে আহনাফ থাকুক।

মহুয়া শাড়ির আঁচল টেনে উপরে যেতে নিলে আমেনা বেগম ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
চোখের থেকে কাজল নিয়ে মহুয়ার কানের পেছনে লাগিয়ে বললো,’ কারো নজর না লাগুক। তোমাকে দেখলেই মনে হয় চাঁদ আকাশে নয় আমার ঘরে। আল্লাহ খুব যত্ন করে তোমাকে বানিয়েছেন দেখলে দেখতেই ইচ্ছে হয়। আমার শাশুড়ী ছিল তোমার মতো সুন্দরী, সব সময় বলত মেয়েদের বেশি সুন্দর হতে নেই, সৌন্দর্য হলো একটা অভিশাপ।
মহুয়া হাল্কা হেঁসে বললো,’ দাদিশাশুড়ি ত ভুল কিছু বলেনি মা, সব সৌন্দর্য জীবনে সুখ আনে না, কিছু সৌন্দর্য জীবন জাহান্নাম করে দেয়, অভিশাপ হয়ে থেকে যায়।

আমেনা বেগমঃ তোমার জীবন থেকে সব কালো অধ্যায় মুছে যাক, আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক।
মহুয়াঃ দোয়া করবেন আমার জন্য।
আমেনা বেগমঃ সব সময় আমার দোয়া তোমাদের জন্য আছে। আহনাফের সাথে সব ঠিক করে নাও। আমাদের বয়স হচ্ছে সব মা বাবা তার সন্তানের সুখ দেখে যেতে চায়।

মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কিভাবে বলবে উনার ছেলের সুখ যে ওর কাছে নেই, আহনাফ যে ওকে আর ওর সন্তান কে অস্বীকার করেছে! ওকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছে এইসব বললে কতোটা কষ্ট পাবে উনি!
আমেনা বেগম নিজ থেকে বলে উঠলো, ‘ আমি জানিনা কেন আহনাফ আলভিকে নিজের সন্তান বলে স্বীকার করে না! কি হয়েছিল তোমার.? কেন আহনাফ এভাবে পাল্টে গেল.? যেই ছেলে তোমাকে চোখের আড়াল করতো না সে কেন এভাবে বদলে গেল.?
মহুয়া কি বলবে!.?

আমেনা বেগমঃ এখন অন্তত বলো পাঁচ বছর আগে কি হয়ে ছিল.? কেন আজ তোমাদের মধ্যে এমন দূরত্ব!.?
মহুয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। এখানে ত ওর কোনো দোষ নেই! আহনাফ ওকে ভুল বুঝে ছিল।
মহুয়া কিছু বলার আগে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আম্মু আমার জন্য কফি পাঠান।’
আমেনা বেগম সিঁড়ির দিকে তাকালো। আহনাফের কোলে আলভি।

মহুয়া অন্য দিকে ফিরে চোখের পানি মুছে আহনাফের কোল থেকে আলভিকে নিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু আলভি কিছুতেই আহনাফের কোল থেকে আসবে না।রাগে দুঃখে মহুয়া আলভির গালে থাপ্পড় মেরে বসলো৷
উপস্থিত সবাই বেশ চমকে উঠলো। আহনাফ নিজেও ভাবতে পারেনি মহুয়া এমন কাজ করে বসবে।
মিম ত অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো। আজ চার বছরে এই প্রথম মহুয়া আলভির গায়ে হাত তুললো।
মহুয়া রেগে আলভিকে আবার মারতে গেলে আহনাফ আলভিকে সরিয়ে নিল।

আমেনা বেগমঃ মহুয়া কি করছো.?
মহুয়াঃ যারতার কোলে ওর যাওয়া আমার পছন্দ না আম্মু।
আমেনা বেগমঃ যারতার! আহনাফ ওর বাবা।
মহুয়াঃ প্লিজ একবার বলেছেন দ্বিতীয় বার আমি কারো মুখে শুনতে চাই না। আলভি শুধু মাত্র আমার ছেলে।
মহুয়া আলভিকে নিতে চাইলে আহনাফ কোল থেকে ছাড়ল না। আলভি কাঁদছে মহুয়ার কোলে যাবে। এই প্রথম মা মেরেছে ফুপিয়ে কাঁদছে আলভি ছোট বাচ্চা হলেও মায়ের প্রথম থাপ্পড়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।
মহুয়াঃ আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন।

আহনাফঃ তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার!.?
মহুয়া হেঁসে উঠলো, তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ আপনার ছেলে.? ভীষণ মজা পেলাম, এটা আমার শোনা সেরা বিনোদন কথা ছিল।’
আহনাফ কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মহুয়া এক ঝটকায় আলভিকে আহনাফের কোল থেকে নিয়ে নিল।
মহুয়াঃ আমার সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকবেন।

মহুয়া চলে যেতেই আহনাফ মায়ের দিকে তাকালো।
আমেনা বেগমঃ একদম ঠিক করেছে মহুয়া, থাপ্পড়টা আমার নাতিকে না দিয়ে তোকে দেওয়ার দরকার ছিল।
আহনাফঃ আম্মু তুমিও!
আমেনা বেগমঃ কিছু জিনিসের ক্ষমা নেই। কিছু কথা হৃদয়ে গিয়ে লাগে,হৃদপিণ্ডটাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, রুহ অব্দি কেঁপে ওঠে।
আহনাফঃ আম্মু আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে।
আমেনা বেগমঃ এটা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছো।

দরজার খুলে হালিমা বেগম কে দেখে অবাক হোন নিরুপমা।
হালিমা বেগমঃ ভেতরে আসতে বলবে না.?
নিরুপমাঃ আসুন।
হালিমা বেগম ভেতরে এসে চারপাশে একবার তাকিয়ে সোফায় বসলো।
নিরুপমা হালিমা কে বসতে দেখে নাস্তা আনতে গেলো।
হালিমা বেগম চা হাতে নিয়ে বললো,’ কেমন আছো নিরু.?
নিরুপমাঃ ভালো।
হালিমা বেগমঃ আমার উপর রেগে আছো.?

নিরুপমা হাসলো, হেঁসে বললো,’ আপনার উপর আমি কেন রাগ করবো!.?’
হালিমা বেগম কি বলবে কনফিউশানে পরে গেল।
নিরুপমাঃ ভালো করেছেন এসেছেন একদম বিয়ের পর যাবেন।
হালিমা বেগমঃ একটা কথা ছিল নিরু।
নিরুপমাঃ বলুন।
হালিমা বেগমঃ আমার কথাটা রাখবে ত.?
নিরুপমাঃ রাখার মতো হলে চেষ্টা করব।

হালিমা বেগম নিরুপমার হাতে ধরে বলে উঠলো, ‘ বোন আমার ছেলেটাকে বাঁচাও। ‘
নিরুপমা আগের মতো বসে রইলো,’ আপনার ছেলের কি হয়েছে.? অসুস্থ হলে হসপিটাল আছে আমি ডাক্তার নই।’
হালিমা বেগমঃ ডাক্তার ত তোমার মেয়ে, আমার ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে চাইতে এসেছি।
নিরুপমাঃ সরি, আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক, কাল বাদে পরশু বিয়ে।

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ৯

হালিমা বেগমঃ তুমি চাইলে এখনো সম্ভব, তুমি তাদের নিষেধ করে দাও। আমার ছেলেটার দিকে তাকাতে পারছি না। তুমি ত নির্জন কে নিজের ছেলে বলতে।
নিরুপমা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি। আপনাদের বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য এখনো আমার মেয়ে হতে পারেনি। বসুন নির্জন কে নিয়ে এসে আমার মেয়ের নতুন জীবনের জন্য দোয়া দিয়ে যাবেন।’

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১