যেদিন তুমি এসেছিলে সারপ্রাইজ পর্ব 

যেদিন তুমি এসেছিলে সারপ্রাইজ পর্ব 
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

গুড়ুম গুড়ুম মেঘের গর্জনে কানে তালা লাগার উপক্রম। যখনই আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তখনই দু’হাত কানে চেপে ধরছে অর্ষা। মেঘের এই গর্জনে তার বুক ভারী হয়ে ওঠে। ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে প্রতিটা গর্জনের মুহূর্তে। বাইরে ভারী বর্ষণ। কখন থামবে এই বৃষ্টি তারও কোনো হদিস মিলছে না। পার্লারের দক্ষ নারী মহিলাটি রেশমিকে বিয়ের সাজে সাজাচ্ছে। এদিকে নিজের সাজসজ্জা শেষ করে পার্লারের ভেতর পায়চারি করছে অর্ষা। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তার নূপুরের শব্দও নিস্তব্ধ পার্লারে ঝঙ্কার তুলছে। আজ অনেকদিন বাদে রেশমির বিয়ে উপলক্ষেই নূপুর পরা থেকে শুরু করে বেশ ভারী সাজই সে সেজেছে। রেশমির সাথে সাথে লামিয়া আর জুঁইয়ের সাজসজ্জা এখনো চলছে। চিন্তিত মনে অর্ষা যখন বারংবার পায়চারি করছিল জুঁই প্রায় বিরক্তস্বরেই তখন বলে উঠল,

‘তোর হাঁটাহাঁটি থামাবি? একই তো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। তার ওপর তোর নূপুরধ্বনি! মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে আশেপাশে।’
পার্লারের মেয়েগুলো জুঁইয়ের কথা শুনে হেসে ফেলে। অর্ষার চিন্তিত মেজাজে বিচরণ করে এবার রাগ। সে ক্ষোভের সাথে বলে,
‘চিন্তা হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যে ফিরব কীভাবে আমরা?’
লামিয়ার ঠোঁটে পার্লারের মেয়েটি তখন লিপস্টিক দিয়ে দিচ্ছিল। সে মেয়েটির হাত ধরে থামিয়ে অর্ষার দিকে তাকাল। রিল্যাক্স মুডে বলে,
‘যেতে না পারলে বরপক্ষ এখানে আসবে। বিয়েটা না হয় পার্লারেই হবে। মন্দ কী বল?’
অর্ষা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ওদের সাথে কথা বলা মানে অযথাই কথা বাড়ানো। কখনো সিরিয়াসনেস ওদের মাঝে কাজ করে না। তাই আর কিছু না বলেই সে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে। সেই সময়ে ফোন আসে আহনাফের।
বান্ধবীদের ওপর রাগে প্রচন্ড অনিহা চলে এসেছে অর্ষার মাঝে। তবুও সে ফোন রিসিভ করল। ওপাশ থেকে আহনাফ মিষ্টিসুরে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘রেডি হয়েছ সুইটহার্ট?’
অর্ষা রাগ করতে গিয়েও রাগ করতে পারে না। উলটো হেসে ফেলে। এই মানুষটার প্রতি তার রাগ করার সাধ্যি থাকলে তো! মানুষটার প্রতি ভালোবাসাই আসে শুধু। মাঝেসাঝে চলে অভিযোগ, অনুযোগ কিংবা অভিমান।
হাসি হাসি মুখ করে অর্ষা বলল,’হ্যাঁ।’
‘তোমার বান্ধবীরা রেডি হয়েছে?’
‘রেশমির আরেকটু সময় লাগবে। ব্রাইডাল সাজ তো! বাকিদের প্রায় হয়ে গেছে।’!
‘ঠিক আছে। আমি তাহলে গাড়িতেই অপেক্ষা করছি। সবার রেডি হওয়া হলে আমায় ফোন দিও।’
‘মানে! কোথায় আছেন আপনি?’
‘পার্লারের সামনেই।’

‘এই বৃষ্টির মধ্যে আপনি কেন এসেছেন? বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লেই তো আপনার জ্বর আসবে আবার।’
‘কী আশ্চর্য! বৃষ্টির ভয়ে কি এখন বাড়িতে লুকিয়ে থাকব?’
‘তা বলেছি নাকি আমি? এখানে এসে কাজটা ঠিক করেননি। আহিলকে পাঠিয়ে দিতেন।’
‘নাকের ডগায় সবসময় রাগ থাকেই নাকি তোমার?’
‘জ্বর আসলে তখন খুব ভালো লাগবে তাই না?’
‘সত্যি কথা বলব?’
অর্ষা নিরুত্তর রইল। পাল্টা কোনো প্রশ্ন করল না। আহনাফ নিজ থেকেই বলল,’জ্বর আসলে আসলেই আমার ভালো লাগবে। ইয়ে মানে ভুলটুল কিছু করা যায় বোঝো না?’
লজ্জায় গাল লাল হয়ে ওঠে অর্ষার। সে উপস্থিত সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। নাহ্! কেউ তার দিকে তাকিয়ে নেই। সবাই সবার মতো করে ব্যস্ত। এই যাত্রায় দ্বিতীয় দফায় লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। ভাগ্যিস আহনাফ সামনে নেই। নাহলে সে লজ্জা পাওয়া নিয়েও আরো লজ্জা দিত।
অর্ষাকে ফের নিরুত্তর দেখে আহনাফ বলল,’কী হলো? এখনো তো কিছু করিনি। চুপ করে আছো কেন তাহলে?’
‘আপনি অনেক অ’স’ভ্য। রাখছি এখন। ওদের রেডি হওয়া হলে ফোন করব।’
অর্ষা লজ্জা পেয়েছে বুঝতে পেরে মনে মনে হাসে আহনাফ। হেসেই বলে,’ঠিক আছে। রাখো।’

বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রেশমিসহ সবাইকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হয় আহনাফ। বাড়ির লোকজন, আত্মীয়-স্বজনরা রেশমিকে পেয়ে যেন জান হাতে ফিরে পেল। এমন হবেই না বা কেন? বরপক্ষও যে এলো বলে!
রেশমিকে বসানোর পর ওর দাদী বারবার বিলাপ করছেন,’ছুডুবেলায় কতবার কইছিলাম কড়াইতে লাইগা থাকা পোড়া খিচুড়ি খাইস না। তখন তো শুনস নাই। এখন দেখ কেমন বৃষ্টি হইতাছে বিয়ার দিন।’
রেশমির দাদীর কথায় মনোযোগ নেই। সে বাকিদের সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত। ওর বাবা অবশ্য একবার চোখ রাঙিয়ে ইশারায় থামতে বলেছেন। যদিও এসব কথা কুসংস্কার ব্যতীত অন্য কিছু নয়; তবুও ছোটো বেলার কথা মনে করে অর্ষা আনমনেই হেসে ফেলে।

‘কী ব্যাপার? হাসছ কেন একা একা?’ পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল আহনাফ।
অর্ষা একবার তাকিয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিল। বুক বেয়ে বেরিয়ে আসলো চাপা দীর্ঘশ্বাস। আহনাফের মুখের দিকে পূণরায় দৃষ্টিপাত করে বলল,
‘এমনি।’
কয়েক সেকেন্ড থেমে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,’মাথায় বৃষ্টির পানি আপনার। নির্ঘাত আজ জ্বর আসবে। এদিকে আসুন,মুছে দেই।’
‘উঁহু। জ্বর আসতে দাও। রেশমির সাথে তোমার বাসরটাও না হয় আবার হয়ে যাবে। মনে আছে আমাদের প্রথম এক হওয়া কিন্তু বৃষ্টির রাতেই…’
আহনাফকে কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না অর্ষা। ডান হাত আহনাফের মুখের ওপর রেখে বলল,
‘দোহাই লাগে মুখটা বন্ধ করেন! আপনার কথাবার্তা আমায় ভীষণ লজ্জায় ফেলে দেয়।’
আহনাফ হেসে ফেলে। সবার দৃষ্টির অগোচরে অর্ষার হাতে চুমু খেয়ে বলে,

‘ঠিক আছে। আপাতত এখনকার জন্য চুপ থাকলাম। বাকি হিসাব-নিকাশ না হয় রাতে হবে।’
অর্ষাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে গ্যাঞ্জাম পার্টির আগমন ঘটে তখন। রেশমি সুন্দর করে হেসে আহনাফের উদ্দেশ্যে বলে,
‘ভাইয়া বউ তো আপনারই। যখন মন চায় তখনই কথা বলতে পারবেন। সময় দিতে পারবেন। আদর করতে পারবেন। আদর করার কথাটা বাড়াবাড়ি ভাববেন না যেন। আমি কিন্তু দেখেছি আপনি অর্ষার হাতে চুমু খেয়েছেন। তাই বেফাঁসে কথাটা বলে ফেলেছি। যাই হোক, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে অর্ষাকে নিয়ে যাই? মাহিত ওরা আসার আগেই ওদের সাথে কিছু গ্রুপ ফটো তুলতে চাই।’
অস্বস্তি ও লজ্জায় স্থির হয়ে যায় আহনাফ। অর্ষার সাথে যতই দুষ্টুমি করুক না কেন বাইরের কারও সাথে সে এতটা সহজ কখনোই হতে পারবে না। অথচ কত অবলীলায় না রেশমি কথাগুলো বলে ফেলল। অবশ্য ওরা তো এমনই। এতদিনে গ্যাঞ্জাম পার্টিকে পুরোটা না চিনতে পারলেও একটু-আধটু বেশ ভালোই চিনেছে। অর্ষা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। বাকিরা ভাবলেশহীন। যেন রেশমির এহেন কথাবার্তা ওদের নিকট পান্তাভাত। রেশমি তখনো উত্তরের অপেক্ষায় আহনাফের মুখপানে তাকিয়ে ছিল।

সে কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,’হ্যাঁ, শিওর।’
বরপক্ষ এলো মিনিট বিশেক পর। কমিউনিটি সেন্টারের হৈ-হুল্লোড় এবার কয়েক দফা বেশি বেড়ে গেছে। প্রতি বারের মতো বরপক্ষের গেট ধরেছে গ্যাঞ্জাম পার্টির সদস্য। নিজের বিয়ে বলে রেশমি গেইট ধরতে পারেনি। এই দুঃখে বেচারির যা তা একটা অবস্থা। বাকিরা যখন গেইট ধরতে যাচ্ছিল রেশমি তখন ওদেরকে ফিসফিস করে বলে দিয়েছে,
‘টাকা বেশি করে নিবি। আর হ্যাঁ, আমাকেও কিন্তু ভাগ দিস প্লিজ! নিজের বিয়ে বলে এভাবে অবহেলা করিস না।’
ওর আকুতিমিনতি শোনার চেয়ে গেইট ধরাটা জরুরী বেশি ছিল বলে কেউই বিশেষ পাত্তা দেয়নি। মাহিতের দু’পাশে অল্প বয়সী ইয়ং ছেলে-মেয়ে দিয়ে ভর্তি। সকাল কিছুক্ষণ পরপর লাজুক দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে গাঢ় নীল রঙের গাউনে সকালকে দেখে আহিলের তো মরি মরি অবস্থা। আশিক একবার মেয়েগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। বেশ সুন্দরী মেয়েগুলো। কিন্তু গতবারের মতো ভুল করলে চলবে না। গতবার মেয়ে পটাতে গিয়ে জুঁই ও লামিয়ার বিয়ের দিন অর্ষা আর রেশমির হাতে যেই চ’ড় খেয়েছে; এরপর দ্বিতীয় ভুল করাটা নেহাৎ-ই বোকামি। বেমানান। তাছাড়া সেদিন দুটো চ’ড় গালে পড়লেও আজ যে তিনটা চড় পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তৃতীয় চ’ড়-টা কোথায় পড়বে কে জানে! নাকে নয় তো? যাক সেসব, চিন্তা-ভাবনা। আগে টাকা তো উসুল করতে হবে।

দু’পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি করতে গিয়ে ছোটো-খাটো একটা তর্কময় ঝগড়ারও সৃষ্টি হয়েছে বৈকি! তবুও মেয়েপক্ষ ছিল তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ়। শেষমেশ মাহিত আর চুপ থাকতে না পেরে বলেই ফেলেছে,
‘দশটা না, পাঁচটা না আমার একটা মাত্র বউয়ের ভাই-বোন, বন্ধুরা টাকার দাবি করেছে। সেখানেও এত ক্যাচাল করলে চলবে? এই নাও তোমাদের টাকা।’
মেয়েপক্ষের আবদারই শেষমেশ পূর্ণ হলো। টাকা পেয়ে বরকে শরবত খাইয়ে আদর-আপ্যায়ন করে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আহনাফ, নিহাল আর সুবাস এতক্ষণ সাইডে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল। সুবাস হেসে বলল,
‘টাকার হিসাব তুলতে মেয়েরা একদম ওস্তাদ। মনে নেই আমাদের বিয়ের সময়ও এমন করেছিল?’
শেষের কথাটি সুবাস নিহালের উদ্দেশ্যেই বলল। নিহাল হেসে বলল,’মনে থাকবে না আবার!’
আহনাফ মনে মনে মৃদু হাসল। একমাত্র তার নিজের বিয়েতেই সবকিছু এলোমেলো ঘটেছে। বিয়েটা যদি আবার নতুন করে করার উপায় থাকত তাহলে কেমন হতো?

সকালকে সামনে বসিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আহিল। এতে করে আহিলের কী লাভটা হচ্ছে সকালের জানা নেই। তবে তার ভীষণ অস্বস্তি লাগছিল। সঙ্গে লজ্জা তো ছিল-ই।
সকালের দৃষ্টি নত। সে কোনো রকমভাবে কম্পনরত স্বরে বলল,’এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন?’
‘কেন আবার? তোমাকে দেখছি।’
‘আশ্চর্য! তাই বলে এভাবে? যদি কেউ দেখে ফেলে?’
‘তোমার কি মনে হয় এতক্ষণে কেউই দেখেনি?’
‘দেখেছে?’ আতঙ্কিতস্বরে জানতে চাইল সকাল।
‘অবশ্যই। কিন্তু তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আজকে কেউ সন্দেহ করবে না শিওর থাকো।’
‘তবুও!’

‘তোমার বান্ধবীরা কোথায়?’
সকাল চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,’ওদের দিয়ে কী দরকার আপনার?’
‘আরে! ওদের কেন দরকার হবে আমার? এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।’
‘জানিনা।’
‘এই দেখো! শুধু শুধু গাল ফুলিয়ে রেখেছ। আজ তোমার ভাইয়ের বিয়ে। আজ অন্তত রাগটাগ না করে একটু হাসি-খুশি থাকো।’
‘ঠিক আছি আমি। আচ্ছা ভাবির কাছে যাই। এখনো তো আপনার জন্য দেখাই করতে পারলাম না।’
সকাল বসা থেকে উঠে যাওয়া ধরে আহিল তখন পেছন থেকে হাত টেনে ধরে। হ্যাঁচকা টানে কিছুটা কাছে এনে আচমকা গালে চুমু বসিয়ে দেয়। ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছে যে বাকিরা কেউ লক্ষ্য করবে তো দূরের কথা! সকাল নিজেই বুঝতে পারছিল না হুট করে কী হয়ে গেল। আর যখন বুঝল এক মুহূর্তও সেখানে রইল না। দৌঁড়ে পালিয়ে যায় রেশমির কাছে। ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আহিল।

‘খুব বদমাই’শ হয়েছিস তাই না?’ পেছন থেকে এসে আহিলের কান মুচড়ে ধরে বলল কেয়া।
আহিল সামনে তাকিয়ে কেয়া আর সিফাতকে দেখে অবাক হয় এবং কিছুটা ভয়ও কাজ করছে। ওরা আবার দেখে ফেলেনি তো?
সে ব্যথায় চাপা আর্তনাদ করে বলে উঠল,’ব্যথা লাগছে আপু! ছাড়ো প্লিজ!’
কেয়া ওর কান ছেড়ে দিয়ে সামনের চেয়ারে বসল। চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে বলল,
‘এই তাহলে কাহিনি চলছে সবার অগোচরে?’
আহিল একবার সিফাতের দিকে তাকাল। সিফাত মুচকি মুচকি হাসছে। আহিল ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
‘তার মানে তুমি দেখেছ?’
‘তোর কী মনে হয় আমি আন্ধা?’
‘ছি! ছি! তা হবে কেন? তবে তোমার দেখা উচিত হয়নি।’

‘তাই নাকি? তুই চুমু খেতে পারবি আর আমি দেখলেই দোষ? লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম হু?’
সিফাত এবার কেয়ার পাশের চেয়ারে বসে আহিলের উদ্দেশ্যে বলল,’তুমি বলতে পারছ না, সেও যখন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করত? তোমাদের তো বলেনি।’
আহিল পয়েন্ট খুঁজে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,’ঠিক! তাই তো।’
কেয়া সিফাতের দিকে তাকায়। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলে,’ও আচ্ছা! এখন ওর সাপোর্ট নেওয়া হচ্ছে?’
‘আরে বাচ্চা মানুষ! সাপোর্ট না নিলে হয় বলো?’ কেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল সিফাত।

এরপর তিনজনই কথা বলতে বলতে হাসে। ওদের আড্ডায় আশিক, দিদারসহ আরো কয়েকজন পরিচিত মুখ এসে যোগ দেয়। দূর থেকে কেয়ার দৃষ্টি যায় আহনাফের দিকে। সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে সে কারও সাথে ফোনে কথা বলায় ভীষণ ব্যস্ত। গুটি কয়েকবার আহনাফের সাথে কথা হলেও কখনো সরাসরি ক্ষমাটা এখনো চাওয়া হয়ে ওঠেনি। কোথায় যেন একটা জড়তা কাজ করে। এরচেয়েও বেশি কাজ করে অপরাধবোধ। ক্ষমা না চাওয়া অব্দি যে এই অপরাধবোধের পরিসমাপ্তি ঘটবে না সেটা কেয়া অন্তত এতদিনে হারে হারে টের পেয়েছে। তাই সে সিফাতের কাছে বলে আহনাফের দিকে এগিয়ে যায়। ততক্ষণে আহনাফের ফোনে কথা বলা শেষ। মুখের কাঠিন্য ভাবটা কেয়াকে দেখে সহজ করে।
‘ভালো আছেন?’ জানতে চাইল কেয়া।
প্রত্যুত্তরে আহনাফ স্মিত হেসে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো।’
‘ভাইয়া কোথায়? আসেনি।’
‘এসেছে তো। ঐযে আহিলের সাথে গল্প করছে।’ পেছনে ঘুরে সিফাতকে দেখিয়ে বলল কেয়া।
‘তারপর। বাবুর কী অবস্থা?’
এই পর্যায়ে কেয়া একটু শব্দ করেই হাসল। বলল,’বলল আলহামদুলিল্লাহ্‌। দুনিয়াতে আসলে পুরোপুরি বলতে পারব।’
‘সাবধানে থাকবেন। নিজের যত্ন নেবেন।’
‘জি ভাইয়া।’
একটুখানি থেমে কেয়া ইতস্তত করে বলল,’কিছু কথা বলতাম।’
‘অবশ্যই।’

‘জানি, কথাগুলো শুনতে এখন হাস্যকর লাগবে হয়তো। অথবা মনে হতে পারে অযথা আলাপ। তবুও না বলে স্বস্তি পাচ্ছি না। তাই সব জড়তা উপেক্ষা করেই বলতে এসেছি, আমাকে মাফ করে দিয়েন ভাইয়া। সেদিন এভাবে চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। দয়া করে মাফ করবেন আমায়।’
এই প্রসঙ্গ উঠলে আহনাফ নার্ভাস হয়ে পড়ে ভীষণ। নার্ভাস সে এজন্য হয় না যে, কেয়া সেদিন পালিয়ে গিয়েছিল; বরং এজন্যই হয় যে, সে ভুল মানুষকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেননা সে তো তখন বুঝতেই পারেনি তার রিয়েল অনুভূতিটা আসলে কেয়ার প্রতি নয় বরঞ্চ অর্ষার প্রতি কাজ করত।

সে যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বলা শুরু করল,’এক্ষেত্রে আসলে আমারও ভুল ছিল। অর্ষার প্রতি আপনার পসেসিভনেস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। মানে অসহায় কারো পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখলে একজন মানুষ হিসেবে আমাদের যেমন মনোভাব তৈরি হয় সেরকম। সেদিক থেকে একটা ভুল ভাবনাও আমার মাঝে তৈরি হয়ে গেছিল যে, আমার হয়তো আপনাকে ভালো লাগে। এবং এই ভালোলাগাটা বিয়ে করার মতো। ভুল ছিল এটাই। অত তাড়াহুড়া না করে যদি আরেকটু সময় নিতাম নিজের মনটাকে বোঝার তাহলে হয়তো আমি এটাও বুঝে যেতাম আসলে সেদিনের সেই মার খাওয়া মেয়েটাকেই আমার ভালো লেগে গেছিল; মার থেকে বাঁচানো মেয়েটিকে নয়!

এরপর বিয়েটাও হলো একটা ঘোরের মধ্যে। আপনি ওভাবে চলে যাওয়াতে আমিসহ আমার পুরো পরিবার সবার কাছে অপমানিত হয়েছিলাম। এই জিনিসটাই আমায় সবচেয়ে বেশি পোড়াত। আমার ইগোতে হার্ট করেছিল। আর ঠিক এই কারণেই অর্ষাকে আমি মানতে পারতাম না। আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতো আমাদের সম্পর্কটা এজন্যই শুরু থেকে সুন্দরভাবে এগোয়নি। সময় নিয়েছে অনেক। যতবার ও’কে দেখতাম আপনার পালিয়ে যাওয়ার কথাটি আমার মনে হতো। রাগ লাগত এটা ভেবেই যে, সেদিন যদি ও’কে মার খেতে না দেখতাম, আপনাকেও না দেখতাম তাহলে আমি এবং আমার পরিবারকে সবার কাছে বিয়ের দিন অপমানিত হওয়া লাগত না।

আমার জেদ, রাগ আমায় এতটাই ডুবিয়ে রেখেছিল যে আমি ভাগ্যটাকেই বিশ্বাস করতে ভুলে গেছিলাম। নিয়তি যে এমনটাই ভেবে রেখেছিল এটা বুঝতে অনেকটা দেরিও করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আনন্দের বিষয় হচ্ছে, ততটাও দেরি করিনি যে অর্ষাকে হারাতে হবে! দেরি হলেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম ভালোবাসা আর ভালোলাগা দুটো শব্দের মধ্যে ঠিক কতখানি ব্যবধান রয়েছে। আর তাই, আপনার প্রতি এখন আর আমার কোনো রাগে-ক্ষোভ কিছুই নেই। সত্যি বলতে, সেসব অতীত নিয়ে একদমই ঘাটাঘাটি করি না। আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটোই এখন অর্ষাকে ঘিরে। আর আলহামদুলিল্লাহ্ আমি প্রত্যাশার চেয়েও অর্ষার থেকে ভালোবাসা অনেক বেশি পেয়েছি। পাই।’

কথাগুলো শুনে কেয়া খুশি হয়। অর্ষা ভালো আছে আহনাফের কাছে। আহনাফও ভালো আছে অর্ষার সাথে। তার ওপর দুটো মানুষের কোনো রাগও নেই। আল্লাহ্ সবকিছু কতটাই না সহজ করে দিয়েছে! আহনাফ স্মিত হেসে ফের বলল,
‘ঠিক আছে এসব কথা এখন থাক। দয়া করে আর গিল্টি ফিল করবেন না। আপনিও আগের সবকিছু ভুলে যান। এখন বরং চলুন, ওদের সাথে আমরাও সময় দেই।’
‘জি, ভাইয়া।’

বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান শেষ হয় জাঁকজমকভাবেই। শুধু বিদায়বেলাতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে কাছের মানুষজন। রেশমি কাঁদবে এটা ভাবতে কষ্ট হলেও বন্ধুরা মেনে নিয়েছিল। কেননা বাবার বাড়ি ছেড়ে অচেনা বাড়িতে সারাজীবনের জন্য যেতে হবে এটা ভাবলেই তো কান্না পেয়ে যায়। রেশমি ওদের ভাবনার চেয়েও বেশি কান্নাকাটি করেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছে বন্ধুরাও। এক সাইডে দাঁড়িয়ে রেশমির বাঁধনহারা কান্না দেখছিল সকাল। তার মুখে বেদনার ছাপ। মুখটা মলিন হয়ে আছে। রেশমির জন্য তার নিজেরও এখন কষ্ট হচ্ছে।
পাশ থেকে আহিল এসে হালকা কেঁশে বলে,’একদিন তুমিও এই সিচুয়েশনে পড়বে। দেখে রাখো কীভাবে কাঁদতে হয়।’
সকাল ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,’কেন? আমি কি কাঁদতে জানিনা নাকি?’

‘আমি কী করে বলব?’
‘খুব শখ আমার কান্না দেখার?’
‘একদমই নয়। সকালের চোখে-মুখে, ঠোঁটে সবসময় সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশের মতোই সুন্দর হাসিটাই মানায়।’
সকাল মৃদু হাসে। বাবার ডাক পড়ে তখন। সে আলতো করে আহিলের হাত ধরে বলল,
‘আসছি।’
আহিল ঘাড় কাৎ করে সায় জানাল। বাড়ি ফেরার পথে আহনাফ অর্ষাকে দেখল তখনো তার চোখে পানি টলমল করছে। আজকে গাড়ি ড্রাইভ করছে ড্রাইভার। ড্রাইভারের পাশের সিটে আহিল আর পেছনে আহনাফ এবং অর্ষা। বাবা-মা অন্য গাড়িতে।

অর্ষাকে টেনে আরো কাছে আনে আহনাফ। কাঁধ জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,
‘কী হয়েছে? এত মন খারাপ কেন?’
অর্ষা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,’কিছু না।’
‘বলো না! রেশমির জন্য মন খারাপ?’
অর্ষা এবারও দু’দিকে মাথা নাড়াল।
‘তাহলে?’ বলল আহনাফ।
আহনাফের বুকে এবার মাথা রাখল অর্ষা। ধরে আসা কণ্ঠস্বরে বলল,
‘বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।’
এ কথার প্রেক্ষিতে আহনাফ আর কিছু বলতে পারল না। শুধু শক্ত করে অর্ষার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। পরম আদরে অর্ষার মাথায় একটা চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ডোন্ট বি স্যাড মাই কুইন!’

সেই রাতেই আহনাফের জ্বর এলো। সাথে ঠান্ডাও লেগেছে। একের পর এক করে চায়ের কাপ খালি হচ্ছে। চা ব্যতীত অন্য কিছু আপাতত তার রুচিতে পছন্দও হচ্ছে না। আমেনা বেগম আর অর্ষা প্রতিটা বেলায় জোর করে খাওয়াচ্ছে। কখনো একটু খাচ্ছে তো; কখনো আবার তার এক কথাতেই স্থির থাকছে। জ্বর যদিও খুব বেশি নয় তবে ঠান্ডাটা বেশ ভালোভাবেই লেগেছে। একটু পরপর হাঁচি-কাশি তো আছেই।

জ্বর কমে আসায় ল্যাপটপ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল আহনাফ। আজও প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। অর্ষা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’হাত বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বের করে দিয়েছে। বৃষ্টির ছাট এসে শরীর কিছুটা ভিজিয়ে দিলেও তার ভালো লাগছে। বিয়ের আগে কতবার সে বৃষ্টিতে ভিজেছে! ছোটোবেলাটা বেশি সুন্দর ছিল। মায়ের বকুনির ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার মাঝে আলাদা রকম একটা আনন্দ ছিল। সেসব তো এখন অতীত। মন খারাপ থাকলেও সে বৃষ্টিকে খুব করে চাইত। খুব করে চাইত একটু যদি বৃষ্টি হয়! কেন জানে না, বৃষ্টি আসলে তার মন অল্প হলেও ভালো হয়। আজও তার মনটা খারাপ। ভীষণ খারাপ। আর মাত্র ছয় দিন আছে আহনাফ বাংলাদেশে। এরপর আবার সুইজারল্যান্ডে চলে যাবে। যদিও তার ঠিক তিন মাস পরেই অর্ষাও একেবারে সুইজারল্যান্ড চলে যাবে; তবুও এই তিন মাস যেন তার নিকট কয়েকশো যুগের ন্যায়! কী করে সে এতগুলো দিন আহনাফ বিহীন থাকবে কে জানে!

ভেতর থেকে আহনাফের ডাক শুনে অজান্তেই বুকের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস চলে আসে। ওড়নায় দু’হাতের পানি মুছতে মুছতে ভেতরে আসে। জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু লাগবে?’
ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে তাকায় আহনাফ। পাল্টা প্রশ্ন করে,
‘বৃষ্টির মধ্যে বারান্দায় কী করছ?’
‘কিছুই না। এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে আহনাফ বলল,’মন খারাপ?’
‘উঁহু।’

‘এদিকে আসো।’ হাত বাড়িয়ে ডাকল আহনাফ।
অর্ষা বিনাবাক্যে গিয়ে আহনাফের পাশে বসল। ল্যাপটপ বন্ধ করে সরিয়ে রাখল আহনাফ। অর্ষাকে পাঁজাকোলা করে নিজের কোলের ওপর বসাল। মৃদুস্বরে বলল,
‘কী হয়েছে পাখি?’
অর্ষা নিরুত্তর।
আহনাফ বলল,’বউ বলছি। বলো কী হয়েছে?’
আহনাফের মুখপানে তাকিয়ে অর্ষা বিষাদিত কণ্ঠে বলল,
‘আপনাকে ছাড়া আমি থাকব কীভাবে?’
‘আমাকে ছাড়া কে থাকতে বলল?’
‘মাত্র ছয় দিন পরই তো আপনি চলে যাবেন।’

‘ও এই ব্যাপার! তাতে কী? তুমিও তো যাবে। সুইজারল্যান্ডেই পড়বে। সবসময় আমার সাথে থাকবে। ছুটিতে আমরা দেশে আসব বেড়াতে।’
‘আপনার কাছে যাওয়ার জন্য আমায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই তিনটা মাস আমার আপনাকে ছাড়াই থাকতে হবে।’
অর্ষার গালের সাথে গাল ঢেকিয়ে আহনাফ বলল,
‘কী করব বলো, উপায় তো নেই। আমাকে তো কাজের জন্যই যেতে হবে। থেকে যাওয়ার উপায় থাকলে নিশ্চয়ই তোমায় রেখে যেতাম না।’

মনকে সামলে নিল অর্ষা। মৃদু সহাস্যে বলল,
‘ঠিক আছে। সমস্যা নেই। মাত্র তিনটা মাস-ই তো।’
আহনাফ মুচকি হাসল। অর্ষাকে কোল থেকে নামিয়ে বলল,’চলো।’
‘কোথায়?’ অবাক হয়ে জানতে চাইল অর্ষা।
‘আগে আসো তো।’
অর্ষার হাত ধরে ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আহনাফ। অর্ষা হতবাক হয়ে বলল,
‘একি! ছাদে কেন যাচ্ছেন? বৃষ্টি হচ্ছে তো এখনো।’
আহনাফ কিছুই বলল না। রিমঝিম বৃষ্টির মাঝেই দুজনে গিয়ে ছাদের ফ্লোরে দাঁড়াল। অর্ষা বারবার আকুতি করে বলেই যাচ্ছে,

‘প্লিজ নিচে চলেন। বৃষ্টিতে ভিজিয়েন না প্লিজ! আবার জ্বর চলে আসবে আপনার।’
আহনাফ মুচকি হেসে অর্ষাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরল। অর্ষার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর আহনাফের বুকের হৃদস্পন্দন ব্যতীত অন্য কিছু আর তার মস্তিষ্কে হানা দিচ্ছে না।
‘আমি জানি, তোমার বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ। শুধুমাত্র আমার জন্যই একা একা ভেজো না। আমার জ্বর আসে বলে তুমি কেন ভিজবে না? স্বামীর জন্য এত স্যাক্রিফাইজ করো। আমরা স্বামীরা কি স্যাক্রিফাইজ করতে জানি না? আমার সাথে বৃষ্টিবিলাস করার ভীষণ ইচ্ছে তোমার। মুখ ফুটে কেন বলো না?’

‘আপনার জ্বর আসবে।’
‘আসুক। জ্বর আসবে, চলেও যাবে। কিন্তু সুন্দর মুহূর্ত কি বারবার আসবে? একপক্ষ সবসময় কেন স্যাক্রিফাইজ করবে?’
‘যেই স্যাক্রিফাইজে আপনার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেই স্যাক্রিফাইজ আমার দরকার নেই।’
‘পাগলী! স্যাক্রিফাইজ মানেই তো বিসর্জন। কিছু না কিছু বিসর্জন দেয় বলেই তো সেটাকে স্যাক্রিফাইজ বলে তাই না?’
অর্ষার আর বলার মতো কিছু নেই। সে চুপ করে আছে। বৃষ্টির পানিতে দুজনেই ভিজে একাকার।
আহনাফ ডাকে,’অর্ষা?’
‘হু?’ ক্ষীণস্বরে প্রত্যুত্তর করল অর্ষা।
‘ভালোবাসি।’
‘ভালোবাসি, ভালোবাসি। হাজারবার, লক্ষবার, কোটিবার একটা কথাই বলব ভালোবাসি।’
‘আমিও কি এতগুলা ভালোবাসি?’
‘বাসতে হবে।’

আহনাফ হাসে। অর্ষা বলে,’শুনেন না!’
‘বলো না!’
‘একটা কথা বলি?’
‘বলো।’
‘না। অনেকগুলা বলো।’
হালকা করে আহনাফের বাহুতে কিল দেয় অর্ষা। আহনাফ শব্দ করে হাসে। কী সুন্দর সেই মুহূর্ত! প্রতিটা নারীর জীবনেই এমন মুহূর্ত আসুক।
আহনাফের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে মুখপানে তাকাল অর্ষা। এখনো দুজনে একে অপরের সাথে আলিঙ্গনবদ্ধ। বৃষ্টিতে কাঁপন ধরে গেছে শরীরে। কাঁপান্বিত কণ্ঠে সে বলল,
‘আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড়ো গিফ্ট তুমি আমার।’

যেদিন তুমি এসেছিলে শেষ পর্ব

আহনাফ পলকহীন তাকিয়ে থাকে। প্রথমবার সে অর্ষার মুখে তুমি সম্বোধন শুনছে। মন্দ লাগছে না। বরঞ্চ আদুরে লাগছে। অর্ষা ফের বলে,
‘আমার উপস্থিতি তোমার জীবনে কেমন পরিবর্তন এনেছে আমি সেটা জানিনা। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার জীবনটা সেদিন থেকেই একটু একটু করে রঙিন হতে শুরু করেছে, যেদিন তুমি এসেছিলে।’

যেদিন তুমি এসেছিলে সারপ্রাইজ ২