রংধনুতে প্রেমের বাড়ি শেষ পর্ব 

রংধনুতে প্রেমের বাড়ি শেষ পর্ব 
ফারজানা মুমু

সোফার উপরে দু’পা তুলে বসে আছে চৈতি-ঝুমুর। আজকের বাসার যাবতীয় কাজ চয়ন-অক্ষরের দ্বারা করানো হবে। বেচারা দুজন বউদের অ’ত্যা’চা’রে অতিষ্ট হয়ে কিচেন রুমে ঢুকেছে। আটটার ভিতরে সকালের নাস্তা চাই হুকুম মহারাণীদের। অক্ষর টুকটাক রান্না জানলেও চয়ন ডিম-ভাজি ব্যাথিত কিছু পারে না। গাজর, ফুলকপি,সিম,আলু,পটল ইত্যাদি আরো সবজি মিলিয়ে রান্না করা হবে সবজি। গাজর কাটছে চয়ন। কাটছে কম খাচ্ছে বেশি। অক্ষর লক্ষ্য করে চা’কু হাতে দাঁড়াল চয়নের সামনে।

-” খেলে হবে না। তাড়াতাড়ি রান্না বসাতে হবে। একটু পরেই ডাক দিবেন দুই মহারাণী।
-” স্যার, রান্না করার প্রয়োজন নেই। এই দেখুন আমি কাঁচা খেয়ে ফেলছি।
-” তোমার ভুঁড়ি অনেক বেড়েছে চয়ন। কাচাঊ সবজি খাও।
ফুল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ল চয়ন। বুঝল অক্ষর তাকে আবারও খোঁচা দিয়ে কথা বলেছে। এই লোকটা সুধরাবে না। খোঁচা ছাড়া কথা বললে পেটের ভাত হজম হবে না হয়তো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাঁচমিশালি তরকারি দিয়ে সবজি রান্না করা হলো, গরম-গরম ফুলকো-ফুলকো রুটি। চাঁদের জন্য সিদ্ধ ডিম,সবজি দিয়ে খিচুড়ি। সুন্দরভাবে সাজিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখল অক্ষর। গলা ছেড়ে ডাক দিল, কোথায় আপনারা? ব্রেকফাস্ট রেডি।
অলস ভঙ্গিতে পা নামাল দুজন। ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই মাথা হলো গরম। বলল, এসব কী রান্না হয়েছে? আমরা গরু?

চট করে চয়ন বলল, গাঁই।
ঝুমুর অগ্নি চোখে তাকাল। চয়ন মুখে আঙ্গুল দিল। অক্ষর শান্ত হয়ে বলল, আমাদের অফিস আছে। তাড়াতাড়ি খেতে হবে। সরকার কিন্তু বসিয়ে-বসিয়ে মাইনে দিবে না।
ঝুমুর কথা বাড়ালো না। দাদাভাইকে ভয় পায় সে যদিও বা আজকাল দাদাভাইয়ের মাঝে ভিন্ন মানুষ খোঁজে পেয়েছে তবুও ভয় কাজ করে। চৈতিকে ইশারায় বলল খেয়ে নিতে। আপত্তি করল না চৈতি। চেয়ার টেনে বসল। চয়ন সুযোগ বুঝে ঝুমুরের পাশে বসে পড়ল। চাঁদ ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠার পর তাকে খাওয়ানো হবে। স্বাভাবিক ভাবেই শেষ হলো সকালের নাস্তা।

ভার্সিটির মাঠে গোল হয়ে বসেছে তিনজন। শান্তা-কান্তার মুখ গম্ভীর। আজ চঞ্চল শান্তার শান্ত থাকাটা ভালো লাগছে না চৈতির। গলা ঝেড়ে বলল, দোষ জয়-বিজয়ের নেই। ওরা বুঝতে পারেনি। তোদের দুজনকে চশমা ছাড়া এক রকম লাগে। আমিও কনফিউজড হয়ে যাই বেচারাদের কী দোষ বল তো?

কান্তা চশমা ঠিক করল। চোখে তার অজস্র পানি। কান্নার জন্য কথারা আটকে যাচ্ছে কণ্ঠস্বরে। ঢোক গিলে বলল, বাসর রাতে জয় আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আমি বিজয় ভেবে কিছু বলিনি। জয় যখন দুষ্টু-দুষ্টু কথা বলছিল তখন আমি বিজয় ভেবে লজ্জায় ম’রি-ম’রি। কিন্তু কথার শেষ পর্যায়ে জয় শান্তার নাম উচ্চারণ করাতে বুঝতে পেরেছি বিরাট ভুল করে বসেছি আমরা। জয়কে যখন বললাম আমি কান্তা ও এক লাফে বিছানা থেকে ধপাস করে ফ্লোরে পরে যায়। তুই বল চৈতি, সেদিন যদি অঘটন হয়ে যেত তাহলে কী হতো? ছি ছোট বোনের স্বামীর সাথে। ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠছে।

কথাটা শুনে হাসি পেলেও হাসলো না চৈতি। যদি সত্যিই গভীরে চলে যেত তাহলে মা’রা’ত্ম’ক, ভ’য়ংক’র কাজ হতো।
-” তোকে কে বলছে চশমা ছাড়া বাসর ঘরে ঢুকতে? দোষ তোদের। তোরা নিজেরাও তো জয়-বিজয়কে চিনতে পারিসনি।
শান্তা বলল, চিনব কীভাবে, দুটোই এক কোম্পানির। দেখতে শুনতে সেম-সেম।

মাথা নাচাল চৈতি। রসিকতা করে বলল, ওদের ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট দুটো একই কোম্পানির একই ব্র্যান্ডের একই মডেলের আর তোমরা দুইটা কী? তোমরাও একই ধরনের প্রোডাক্ট। বেচারারা ভুল করলে ভুল তোমরা ভুল করলে সাধু। দেশ নারী চালাচ্ছে বলে দোষ-গুন দেখবি না? নারী তান্ত্রিক যা বলবে তাই হবে? মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ব্রিটিশদের মত আচরণ করে বেচারাদের কষ্ট দেওয়া মোটেও ঠিক হচ্ছে না।

চৈতির ভাষণ শুনে দুই বোন বেশ কিছুক্ষণ তাকাল। দীর্ঘতম নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, উপায় বল?
-” উপায় একটা। কান্তা কানা তাই ও কানার মত থাকবে। তুই জ’ল্লা’দ জ’ল্লা’দে’র মত থাকবি। সমস্যা সমাধান শেষ, জোরে বল বাংলাদেশ।
চৈতির কথা শেষ হতে দেরি শান্তা-কান্তা এলোপাথাড়ি থা’প্প’ড় বসাতে দেরি করল না। দুটোকে পুরো শক্তি দিয়ে সরিয়ে রাগী সুরে বলল, উপকারীর উপকার মনে রাখেনা যেজন, মানুষ নয় তারা শা’ক’চু’ন্নি’র সুজন।

চৈতির জন্য বিয়ের বেনারসি থেকে শুরু করে গায়ে হলুদের যা যা প্রয়োজন সব কিনা হলো। ঝুমুর ক্লান্ত মুখে চকলেট মিল্ক সেক খেয়ে চলেছে। বিয়ের মার্কেট কম নয়। অক্ষর-চয়ন আসতে পারেনি। স্বাক্ষর নিয়ে এসেছে তাদের। চৈতি খেয়াল করে দেখল স্বাক্ষরের মুখ শুকনো। চঞ্চল ছেলেটা চুপচাপ হয়ে গেছে। ফোলা-ফোলা চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কেঁদেছে। চোখের নিচের কালো দাগ জানান দিচ্ছে অনেকদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগছে। ঝুমুর চাঁদকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে গিয়েছে দুই মিনিট হলো। চৈতি দেখল আজ স্বাক্ষর তার সাথে কথা বলছে না। ভুল করেও তাকাচ্ছে না। বলল, স্বাক্ষর আপনি আমায় কিছু লুকাচ্ছেন?

দ্বিমত পোষণ করল না স্বাক্ষর। অক্ষরের মতোই শান্ত হাসলো সে। সোজাসুজি ভাবেই বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি চৈতি।
চৈতি ঘাবড়ালো না। সে জানতো স্বাক্ষর এমন কিছুই বলবে। স্বাক্ষরের মুখের ভাব-ভঙ্গি দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছিল। গোপন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, আমি আপনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী স্বাক্ষর।
-” আমি জানি চৈতি। মনের কথা চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো তাই বলে ফেললাম। দয়া করে দাদাভাইকে বলবে না।
-” কবে থেকে ভালোবাসেন আমায়?

চোখ মেলে তাকাল স্বাক্ষর । চৈতিকে ভালো করে দেখে বলতে শুরু করল, ঝুমুর আপুর বাসায় যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই পছন্দ করা শুরু করেছি। ধীরে ধীরে ভালোবেসেছি। মন খারাপ করবে না চৈতি। আমি তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করব। পুরোপুরি ভুলতে হয়তো পারবো না ।
চৈতি কথা বাড়ালো না। দরকার কি পুড়া হৃদয়ের ক্ষত বাড়াতে। একজন পুরুষ তখনই কান্না করে যখন সে কাউকে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসে। কিন্তু নিরুপায় চৈতি। অক্ষরকে ছাড়া সে অচল।
পুরো দমে বিয়ের কিনাকাটা শেষ করল তিনজন। রাত প্রায় দশটা, ক্লান্ত শরীরে বিছানায় শুইয়ে ফোনের দিকে তাকালো। অক্ষরের নাম্বারে ডায়াল করল। ফোন রিসিভ হবার পর রাশভারী কণ্ঠ ভেসে উঠল, বলো।

-” জীবনসঙ্গীকে রোমান্টিক হতে হবে। আনরোমান্টিক আমি নিজেই।
-” বিয়ের চিন্তায় নিশ্চয় পাগল হয়ে গিয়েছ?
-” পুলিশ লোককে বিয়ে করতে নেই সাহেব। তারা মনের খবর রাখেনা।
-” তো কাকে বিয়ে করা উচিৎ?
-” এই ধরুন আমার সমবয়সী ইয়াং ছেলেকে বিয়ে করব। তাদের মাঝে রোমান্টিকতায় ছোঁয়া বেশি।
-” ফোন কেটে বাহিরে আসো। ইয়াং ছেলে বিয়ে করার শখ অতি যত্নে পূরণ করছি।

-” আসতে পারবো না।
-” জোর করে ধরে আনবো। আসবো?
-” আসছি। বি’প’দ’জ’ন’ক মানুষ।
-” অবশেষে ঠোঁটকা’টা নামের মূচন ঘটল। নতুন নাম বি’প’দ’জ’ন’ক।
চৈতি সদর দরজা খুলে বাহিরে গেল। দূরে দাঁড়িয়ে আছে অক্ষর। কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল, কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন। ঘুমাবো।

এক মুঠো গোলাপের পাপড়ি ছুঁড়ে দিল অক্ষর। কাছে টেনে বলল, পালানোর ধান্দা কেন ম্যাম? স্বামীর কাছেই তো আছেন।
-” রোমান্টিক হওয়ার জন্য কার বই ফলো করেছেন?
-” অন্যর বই ফলো করে রোমান্টিক হইনি। আমি জন্মগত ভাবেই রোমান্টিক। আজ বাইকে চড়ে তোমাকে নিয়ে ঘুরব। বাইক বিলাস করব হাহাহা।

চৈতিও হাসলো। অক্ষর এই প্রথম চৈতির ঠোঁটে চুমু খেল। চৈতি বারণ করল না।
দূর থেকে স্বাক্ষর এই দৃশ্য দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। খাঁ খাঁ হৃদয়ের শূন্যতা অনুভব করল। সিগারেট জ্বালিয়ে ঠোঁটে স্পর্শ করালো। আজকে তার অনুভুতি শুধুই নিকষ কালো ধোঁয়া।
ঘনিয়ে আসলো বিয়ের দিন। লাল বেনারসি শাড়ি পরে লাল টুকটুকে বউ সেজে চৈতি বসে আছে নিজের রুমে। কান্তা চুপচাপ থাকলেও দু’একটা দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলল। কিন্তু শান্তা ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছে। শান্তার কথার ধরনে চৈতি লালের মাঝে লাল হচ্ছে।

-” শান্তা তুই খুব পেকে গেছিস।
-” হুম বেবি তোমার জন্যই । সেদিন তো বেশ বুঝালে আমাদের। বুঝানোর ফল এখন তো ভুগবে।
শান্তার কথা শোনে চৈতি মৃদু হাসলো। সেদিন তার বুঝানো কাজে দিয়েছে। দু-বোন রাগ করে থাকেনি জয়-বিজয়ের উপর। মিটমাট হয়ে যায় তাদের মধ্যকার ঝামেলা।
বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো। চৈতিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে সুবাস ছড়ানো ফুলের রাজ্যে। চারদিকে ফুলের সুবাস ম-ম করছে। অক্ষর আসলো রুমে।

-” আজ আমার রুমে পদ্মফুলের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।
অক্ষরের কথা শুনে চৈতি লাজুক হাসলো। বলল, স্বয়ং পদ্মফুল হাজির তোমার রুমে। পদ্মফুলের উপহার কোথায় সাহেব?
অক্ষর বুকে হাত রাখল। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল, আমি ভূল শুনছি কী? তুমি আমায় ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করছ?
লজ্জাকে বিদায় জানিয়ে অক্ষরের গলায় হাত রেখে বলল, বলেছিলাম না সময় হলে বলব। আজ থেকে সময় শুরু পুলিশ বাবু। আজ থেকে আমার কাছে তুমি আ’সামি।

-” স্বামী হয়ে গেল আসামি। ভালোবাসার পাল তুলে চলো মোরা ভেসে যাই।
অচীন দেশে বাঁধবো বাঁসা, যে দেশে আর কেউ নাই…।
রাতের রজনী আজ বড়ই সুন্দর। দুজন মানব-মানবীর পূর্ণতা লাভ ঘটল। মিল হলো দুটো আত্মার। আবদ্ধ হলো দুজন।

ছয় বছর পর………
কোমরে আঁচল গুঁজে একটি তিন বছরের মেয়ের পিছনে দৌড়াচ্ছে চৈতি। চোখে-মুখে অজস্র রাগ। ছোট্ট মেয়েটি এক দৌড়ে স্বাক্ষরের রুমে প্রবেশ করল। চৈতি সেখানে গিয়ে জোরে দম ছাড়ল। আরো দুটো বাচ্চা স্বাক্ষরের বুকের উপর বসে আছে। বাচ্চা মেয়েটিও যোগ দিল বাকি দুজন বাচ্চার সাথে। হতাশ কণ্ঠে বলল, স্বাক্ষর আপনি সহ্য করেন কীভাবে? তি- তিনটা দুষ্টুর দুষ্টুমি?

প্রসার হেসে স্বাক্ষর বলে, ভাবী তুমি জানো না আজ এরা তিনজন না থাকলে আমার কী হতো। দাদাভাইকে ধন্যবাদ আমাকে তিন-তিনটা বেবির চাচা বানানোর জন্য।
কথার মাঝে মেয়ে বাবুটা স্বাক্ষরের চুল ধরে টান মা’রে। আ’র্ত’না’দ করে উঠে স্বাক্ষর। করুণ গলায় বলে, ছেলে দুটো বাবার মত হয়েছে। মেয়েটা হয়েছে আমার মত। জানো ভাবী, ছোট থাকতে আমিও ভীষন দুষ্টু ছিলাম। সবার আদরে বাঁদর যাকে বলে। পৃথিবীতে ভয় শুধু একজনকে পেয়েছি সে হলো দাদাভাই।
চৈতি ফিক করে হেসে দিল। প্রশ্ন করল, বিয়ে করবেন কবে?

-” দাদাভাইয়ের মত বয়স বাড়িয়ে পরে বিয়ে করব। যেন আমিও তিন-তিনটা সন্তানের বাবা হতে পারি।
-” আপনারা দুভাই ঠোঁটকাটা। কথা বলার সময় ভেবে কথা বলেন না।
-” আচ্ছা ভাবী দাদাভাইকে জিজ্ঞাসা করে দেখো তো কী খেলে একসাথে এগারোটা বাচ্চার বাবা হওয়া যায়? ভাবছি বউকে বারবার ডেলিভারির কষ্ট দিবো না। পুরো ক্রিকেট টিম আমি একাই বানিয়ে ফেলব।

চৈতি হতাশ হলো স্বাক্ষরের কথায়। বিয়ের পর যখন সে শশুর বাড়িতে পা রাখল তখন থেকেই দেখে চলে স্বাক্ষরের ঠোঁটকাটা স্বভাব। সে ভেবেছিল প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে হয়তো স্বাক্ষর দেবদাস হবে কিন্তু না, তাকে অবাক করে দিয়ে স্বাক্ষর হয়ে উঠল দেবদাসের ঠিক উল্টো। ছয় বছর ধরে স্বাক্ষরের কথা শুনতে-শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে আজকাল। এখন তো আরো বেশি চলে তার দুষ্টুমি। সাদ, রাদ ও সারাকে নিয়ে চলে দুষ্টুমি।

বাচ্চা তিনটে মা ভক্ত কম চাচ্চু ভক্ত বেশি। স্বাক্ষর হয়তো বাচ্চা তিনটিকে তার মতো বানিয়ে শাস্তি দিচ্ছে চৈতিকে। চৈতি নিজের রুমে আসলো। অক্ষর সবে বাসায় এসেছে। চৈতির হতাশ মুখ দেখে বলল, বাবুরা আসেনি তাই তো?
মাথা ঝাঁকাল চৈতি। অক্ষর তখন চৈতির দু-কাঁধে হাত রেখে বলল, ওদের মত ওদের থাকতে দাও। আমরা আমাদের মত থাকি।
-” বেচারা স্বাক্ষর। তিন-তিনজন ল্যাদা-বাচ্চার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে বনবাসী না হলে হয়।
-” হাহাহা।

ফোনের ম্যাসেজের শব্দে চৈতি ফোন হাতে নিল। ভিতিও পাঠানো হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাড়ে চার বছরের ছোট্ট একটি ছেলে আড়াই বছরের ছোট্ট আরেকটি মেয়েকে হাতে ধরে সামনে এগোচ্ছে। কিছুদূর যাবার পর দেখল দুজন একই দেখতে রমণী, একই দেখি যুবক দাঁড়িয়ে। বাচ্চা দুটো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে একে অপরের মুখে তাকাচ্ছে। তারা হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে তাদের বাবা-মা কে। বাচ্চাদের কনফিউসন মুখ দেখে কান্তা চোখে চশমা পরে। বাচ্চা দুটো হেসে দিয়ে ছেলে বাচ্চাটা কান্তার দিকে ও মেয়ে বাচ্চাটা শান্তার দিকে পা বাড়ায়।

ভিডিওটা দেখে খুশিতে চোখ জ্বলজ্বল করল চৈতির। মাতৃত্ব কত সুন্দর। অক্ষরের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বলল, আমাদের সবার সুন্দর সংসার।
-” আর আমার সংসার তুমি।
নয়/দশ বছরের একটি মেয়ে দৌঁড়ে আসে। দরজার কাছে এসে বলে, ফুপ্পি মামা আব্বু-আম্মু বোনকে নিয়ে চলে এসেছে। তাড়াতাড়ি আসো।

মেয়েটি আবারও আগের মত দৌড়ে চলে যায়। মেয়েটিকে দেখে চৈতি ভাবে তাদের সেই ছোট্ট চাঁদ কত বড় হয়ে গেছে। এখন আর আগের মত তুতলিয়ে কথা বলে না। সুন্দর,গোলগাল চাঁদকে দেখে মুগ্ধ হয় বারবার। তিনদিন হলো ঝুমুরের দ্বিতীয় মেয়ে হয়েছে। আজ হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হয়েছে। চৈতি সকাল থেকে ঝুমুরের জন্য এটা সেটা বানাচ্ছে। নতুন অতিথিকে স্বাগতম জানানোর জন্য সাজিয়েছে ঝুমুরের রুম।

চৈতির বিয়ে হবার পর ঝুমুরকে নিয়ে আসে অক্ষরের বাড়িতে। অক্ষরের মা বাবা ভীষন খুশি। তিন ছেলে-মেয়ে। পুত্রবধূ, নাতি নাতনী নিয়ে পুরো বাড়ি হৈ-হুল্লোড়। চয়ন প্রথমে রাজি ছিল না কিন্তু একমাত্র বোনের আবদারে রাজি হলো।
চৈতি দৌড়ে গিয়ে ঝুমুরের মেয়েকে কোলে নিলো। মায়ের কোলে আরেকটি বাচ্চাকে দেখে সাদ রাগ করল। মুখ গম্ভীর করে অক্ষরকে বলল, পাপ্পা। বাবুটা পঁচা। মাম্মা নিয়ে নিছে।

অক্ষর হাসলো ছেলের কথা শুনে। রাদ ও সারা দুজন বাচ্চাটির পাশে খেলা করছে। তারা ভীষন খুশি তাদের নতুন বোন হওয়াতে। চাঁদের তো ভাব বেড়ে এখন আকাশ ছোঁয়া। সে সকলের বড় বোন। সবাই তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে। ঝ’গড়া করলে শাসন করবে। বলে বলে জানিয়ে দিল সবাইকে।
পরিবারের আনন্দ উপভোগ করল সকলে। ইচ্ছে পুষণ করল জীবনের দীর্ঘ আয়ুর। রংধনুর সাজে সজ্জিত পরিবার। হৃদয়ে প্রেমের সাত রঙ। ” জর্জ সান্তায়না ” বলেছেন পরিবার হলো প্রকৃতির একটা সেরা শিল্পকর্ম ।

রংধনুতে প্রেমের বাড়ি পর্ব ১৮

[বিঃদ্রঃ .১ গতকাল গল্পটা লিখছি আর কাটছি কারণ কাহিনী খোঁজে পাচ্ছিলাম না। গল্পের কাহিনী যতগুলো ভাবা ছিল আমি লিখে ফেলেছিলাম। আপনাদের জন্য ভেবে ছিলাম গল্পটা বড় করব কিন্তু হচ্ছিল না। একবার ভেবেছিলাম অক্ষরকে মে’রে স্বাক্ষরকে নায়ক বানাবো। লিখেও ফেলি কিন্তু পরে ডিলেট করি। কারণ চৈতির সাথে অক্ষর ছাড়া অন্য কাউকে আমি নিজেই মানতে পারিনা। পরে লিখলাম স্বাক্ষরকে ভিলেন দিয়ে। সেটাও ডিলেট করলাম। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল মনে হলো ভাই ভাইয়ের যু’দ্ধ। বারবার মনে হচ্ছে গল্পটাকে অসুন্দর বানিয়ে রেখেছি। অনেক ভেবে-চিন্তে অন্তিম পর্ব লিখলাম। জানি না কেমন হয়েছে। সুন্দর করে সাজাতে চেয়েও পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছে গল্পটার সুন্দর্য আমি অনেক আগেই নষ্ট করে ফেলেছি। সেজন্য দুঃখিত আমি। নতুন হিসেবে ক্ষমা করে দিবেন।]
[বিঃদ্রঃ ২. নতুন গল্প নিয়ে ঈদের পর হাজির হবো যদি বেঁচে থাকি। সবাইকে রমাদান মোবারক এবং অগ্রিম ঈদ মোবারক।]

রংধনুতে প্রেমের বাড়ি সারপ্রাইজ পর্ব 

1 COMMENT

Comments are closed.