রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৮

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৮
লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)

___” আপনি এখানে কি করছেন?”
আমার কথা শুনে সানগ্লাসটা চোখ থেকে নামালেন সাদি ভাই। তারপর হেসে বললেন,
___” আগামীকাল থেকে যেখানে ডাক্তারি করবো সেখানটা একটু দেখতে হবে না বল?”
ওহ রাক্ষসটা তারমানে এখানেই জয়েন করবে।ধূর!এখন এখানেও পাক্কা জ্বালাবে। মুখের সামনে তুড়ি বাজানোতে ধ্যান ভাঙলো আমার। চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,

___” কি সমস্যা?”
___” বাসায় চল।”
___” কোন বাসা?”
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
___” তোর বাসায়। আর কই?”
___” না মানে,আমি তো যাবোই কিন্তু আপনিও আমার সাথে যাবেন?”
___” হ্যা। আর এতক্ষণে মা ও নিশ্চয়ই চলে গেছে। আমি এলাম তোকে নিয়ে একবারে ফিরবো বলে।বাচ্চা মেয়ে কেউ নিয়ে টিয়ে চলে গেলে!”
আমি মুখ ভেংচি কাটলাম। তারপর বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

___” যথেষ্ট বড় হয়েছি হাহ। আর আপনি আমাকে নিতে এলেন কেন?ফুপি কি আপনাকে বলেছে আমাকে নিয়ে যেতে?”
আমার কথায় উনি হালকা রাগ দেখিয়ে বললেন,
___” এত্ত কথা বলিস কেন!তোর একটা প্রশ্নেরও জবাব দিতে বাধ্য নই আমি। গাড়িতে উঠ।”
আমি আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম। রাক্ষসটার সাথে প্যাচাল পারা মানেই সময় নষ্ট। গাড়ি চলতে লাগলো। হঠাৎ উনি আমার দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিলেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

___” রুমাল কেন দিচ্ছেন? ”
উনি ড্রাইভিং করতে করতেই শান্ত গলায় বললেন,
___” চোখের কাজল লেপ্টে গেছে।কেন কেঁদেছিস জানতে চাইবো না।কিন্তু বাসার লোক জানতে চাইবে।”
আমি চুপচাপ রুমালটা নিয়ে নিলাম।তখনের কান্নার জন্য হয়তো চোখের কাজলটা লেপ্টে গেছে। আমি চোখ মুছতে মুছতে ওনার দিকে তাকালাম। অফ হোয়াইট কালারের একটা শার্ট আর জিন্স। হাতে ঘড়ি।আর ড্রাইভিং করার জন্য চোখের সানগ্লাসটা খুলে বুকে রেখেছেন। ইশ!এতটুকুতেও কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে? এতদিনের বাধাটা ভেঙে আজ যেন পুরোদমে ক্রাশ খেলাম আমি।উনার হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁটটার দিকে চোখ পড়লো আমার। নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে ভ্রু কুঁচকে ড্রাইভ করছেন। সেই গোলাপি ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে উনি বলে উঠলেন,

___” আমাকে দেখা শেষ হলে রুমালটা দে আর সামনে তাকা।”
আচমকা এমন বলায় আমি ধরফরিয়ে উঠলাম। তুতলিয়ে বললাম,
___” ম..মানে?”
___” মানে এভাবে তাকিয়ে থাকলে এক্সিডেন্ট করবো।”
ওনার দিকে তাকালাম আমি। ওনার ঠোঁটে হালকা হাসি।কেমন যেন লজ্জা লাগলো আমার।রুমালটা ওনার দিকে দিয়ে গাড়ির জানালায় তাকালাম আমি।ইশ!কি লজ্জা!!উনিও মনে হয় হাসলেন।
বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো। অয়নকে নিয়েই এতক্ষণ ভাবছিলাম আমি। গাড়ির ঝাকুনিতে সেই ভাবনাটা ভেঙে গেলো। আমি নিমে পড়লাম।কিন্তু সাদি ভাইয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আমি ওনার উদ্দেশ্যে বললাম,

___” আপনি যাবেন না?”
উনি গম্ভীর গলায় বললেন,
___” তুই যা আমি আসছি।”
___” ফুপি জিজ্ঞাসা করলে…”
উনি আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে থামিয়ে দিলেন। শান্ত গলায় বললেন,
___” বলবি আমি একটু পর আসবো।রিলাক্স করছি।”

আমি মাথা নাড়ালাম।তারপর বাসার দিকে এগুতে লাগলাম আর ভাবছি, কিসের রিলাক্স করবেন উনি এই গাড়িতে বসে বসে? নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবেন। এছাড়া আর কি! রাক্ষস একটা।তবুও কি ভেবে যেন পিছনে ফিরলাম।যা দেখলাম,এতে আমার চোখদুটো রসগোল্লা হয়ে গেলো। সাদি ভাই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন আর মুখের উপর সেই রুমালটা। এই রুমাল উনি মুখের উপর দিয়ে কি করছেন?আর কিছু না ভেবে আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। সাদি ভাই আপন মনেই বলছেন,

___” তোমার ছোঁয়াটা এত মিষ্টি কেন?কেন বারবার তোমার ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে হয়? কেন এত কাছে পেতে ইচ্ছে হয় তোমাকে? এখন এই মায়া কে কাটাবে?”
আরো নানা কথা বলছেন উনি। আমি উঠে দাঁড়ালাম। এবার তাড়াহুড়ো করে হেঁটে বাসায় ঢুকছি। আচমকা পিছনে ফিরে দেখি, উনি এখনো রুমালটা মুখে দিয়ে আছেন। এবার অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হলাম আমি। বিছানায় বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।আমি ফোনটা রিসিভ করবো এমন সময় দেখি সাদি ভাই রুমে ঢুকলেন।এই লোকটা কখনো আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন যে ঢুকেন না!! উনি সোজা এসে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বললেন,

___” কি হলো? কলটা ধর!”
এতক্ষণে আমার হুঁশ এলো যে ফোন বাজছে।ফোনটা ধরতে ধরতে কেটে গেলো। আমি ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
___” আপনি এখানে কি করছেন?”
উনি হাই তুলতে তু্লতে বললেন,
___” শুয়ে আছি।দেখতে পারছিস না?”
___” তা তো দেখতেই পারছি।কিন্তু আমার বিছানায় কেন?”

উনি কিছু বলবেন তার আগেই আমার ফোনটা আবার বেজে উঠলো।সেই একই নাম্বার। কে এটা আজব! আমি বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে। উনি আবারো বলছেন,
___” কি হলো? কে কল করেছে? ধরছিস না যে! আমি থাকতে সমস্যা হচ্ছে? ”
ওনার গা জ্বালানো কথায় মুখ ভেংচি কাটলাম আমি। কলটা রিসিভ করতেই পরিচিত গলা ভেসে এলো।
___” কি? চিনতে পেরেছো?”
মিশমির এমন কথায় আমি রেগে গেলাম।হালকা রেগেই বললাম,

___” তুমি!”
___” হ্যা আমি। কেমন লাগলো আজ?”
সাদি ভাই উঠে দাঁড়ালেন। আমার হাত থেকে ফোনটা টান দিয়ে লাউডে দিলেন। আমি কিছু বললাম না।কিছু বলার সাহসও নাই। মিশমিই বলতে লাগলো,
___” কি হলো চুপ যে?আজকের ডোজটা কেমন লাগলো অনুওও আপুউউউ!”
___” তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো। আমার নাম্বার কই পেলে! “(তুতলিয়ে বললাম আমি)”
___” অয়ন বেবি থেকে। যাই হোক! আজকে যে তোমাকে এতগুলো কথা শুনালাম ভালো লাগেনি? ইশশ!তোমার চেহারাটা দেখার মত ছিলো জানোতো!বেশ ইনজয় করেছি আমি। তা এখন কি করছো? কার সাথে আছো? তুমি তো আবার ছেলে পাল্টাও তাই না?”

আমি রেগে বললাম,
___” মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ।”
___” আমাকে ভাষা শিখিয়ো না।তুমি যে কেমন সেটা তো আজ সবার সামনে প্রুফ করলামই। অয়নকে তোমার থেকে কেড়ে নিলাম তো আমি?বায় দা ওয়ে,কালকে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট। চলে এসো কিন্তু। ”
আমার বুকটা ধক করে উঠলো। অয়নের এঙ্গেজমেন্ট!
আমি সাদি ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে আছেন চুপ করে। হাতটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আছে।রেগে যাচ্ছেন। এদিকে মিশমি বলছেই,

___” আসলে তোমার সাথে অয়নের যায় না। ঠিক বনে না। কই আমার অয়ন আর কই তুমি! তোমাকে কে বিয়ে করবে বলোতো? তোমার মত মেয়ের সেই রাস্তার ছেলেদের সাথেই বিয়ে হবে। আবার রাস্তার কোনো পশুর খাদ্য না হয়ে যাও।”
আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। এমনি সময় অনেক কথা বললেও সাদি ভাইয়ের সামনে আজ কিছু বলতে পারছি না। তবুও মনে সাহস জুগিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সাদি ভাই ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মারলেন। আমি ছলছল চোখে ওনার দিকে তাকালাম। আর বললাম,

___” এটা কি করলেন?”
সাদি ভাই রেগে চেঁচিয়ে উঠলেন,
___” কে ছিলো মেয়েটা? ওর সাহস কেমনে হলো তোকে এসব বলবার?”
আমি কেঁপে উঠলাম ওনার ধমকে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আমার কাঁধ ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললেন,
___” আনসার মি! কে মেয়েটা? আর তোকে কেন এসব বললো? ওর সাহস কেমনে হলো?”
আমি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লাম। দুহাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম। সাদি ভাই রাগটা কন্ট্রোল করে আমার পাশে এসে বসলেন। জোর করে আমাকে নিজের বাহুডোরে টেনে নিলেন আর বললেন,
___” বল! কে কি বলেছে?”

আমি আর কিছু না ভেবে ওনার সাথে সবটা শেয়ার করতে লাগলাম। উনি বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনলেন। আমি সব বলে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। উনি আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
___” একদম কাঁদবি না। কেন কাঁদছিস? কার জন্য?”
আমি ফোপাতে লাগলাম। উনি আমার চোখ মুছে বললেন,

___” আর কান্না নয়।”
বলেই উঠে দাঁড়ালেন।আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
___” কালকে ওদের সবার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।এখন তুই চল!”
___” কোথায়?”(হেঁচকি তুলতে তুলতে)
___” কাজী অফিস।”

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)
(কিছু কথা: আপনাদের মন্তব্যে আমি শোকাহত। শেষমেশ বাধ্য হয়েই আরেকটা পর্ব দিতে হলো। আমারো পরীক্ষা। তাই একটু ছোট হলে ক্ষতি কি? মাঝে মাঝে বড়, মাঝে মাঝে ছোট।কোনো ক্ষতি হবে কি? কিছু কিছু লেখিকা আপুরা দু-তিন দিন পর পর গল্প দেন তাও আমি রোজ দি। সবাই অপেক্ষা করে তাই। তাও আপনারা বলছেন যে আমি রেগুলার দিই না। ভীষণ কষ্টের আমার জন্য কথাটা😞।

বিশেষ কথা: গত পর্ব পড়ে আপনারা অনুকে আত্মসম্মানহীন বলছেন। মূলত আপনাদের মতে সব দোষ অনুর। ভাই,গল্পের সাত নম্বর পর্ব এটা। অনু জবাব দিবে। আপনাদেরও অপেক্ষা করতে হবে। আমি আগেও গল্প লিখেছি। তখন অনু ঝটপট জবাব দিত বলে কারোর পছন্দ ছিলো না। নায়িকার নাকি এটিটিউড বেশি। তাহলে কোনদিকে যাই বলুন তো? সেকেন্ড কথা হলো, আপনারা গল্পের ভালো সময়ে পাশে থাকতে পারেন আর খারাপ সময় এলেই সব দোষ নায়িকার,লেখিকার। কেন জবাব দেয় না। একটু তো ধৈর্য্য ধরাই যায়। এটা চলমান গল্প। আর লিখতেও সময় লাগে। বাক্যগুলো তৈরী করতে হয়। যেমন তেমন লিখে দিলে কি চলে আপনারাই বলুন।আমিও একসময় পাঠিকা ছিলাম। ধৈর্য্য ধরে গল্প পড়তাম। শেষ এটাই কথা,ভালো না লাগলে জাস্ট ইগনোর। লেখিকার খুঁত এতটাও নাই। আমি নিরাশ করবো না ইনশাআল্লাহ। সামনে ভালো কিছুই পাবেন। শুধু ধৈর্য্যের বিষয়)

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৭

( আপনাদের মন্তব্যে তাড়াহুড়া করে আরেক পার্ট লিখতে হলো। ছোট হলে দুঃখিত। লিখতে পেরেছি এটাই আমার জন্য অন্তত অনেক। আর লেখিকারও খারাপ লাগতে পারে এমন কোনো মন্তব্য করবেন না প্লিজ। আমার অনুরোধ😞)

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৯