লাল নীল ঝাড়বাতি গল্পের লিংক || নাফিসা আনজুম

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ১
নাফিসা আনজুম

বড় বোনের ভাসুর বাবা মাকে সহ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ভেবেই কেমন যেনো অদ্ভুদ লাগতেছে, লোকটার বয়স আটাশ কি উনত্রিশ। অনেকটা গম্ভীর টাইপের, আমার সাথে কখনোই কোনো কথা হয় নি তাই এভাবে বিয়ের প্রপজালটা আমি ঠিক মানতে পারছি না।

আমি ঝুমুর সবাই ঝুম বলেই ডাকে। আমি এইবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমার বড় বোন রজনী। বিয়ে হয়েছে একবছর হতে চললো। রজনী আপুর যখন বিয়ে হয়েছে তখন ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, দুলাভাই(ফাহিম চৌধুরী)ও সেম ইয়ার। প্রেমের বিয়ে ওদের। এখন ওরা তৃতীয় বর্ষে। দুইজনেই পড়াশুনা করে‌।
আর দুলাভাইয়ের বড় ভাইয়ের নাম আয়ান চৌধুরী। উনার বাবা রাজন চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুফ অফ ইন্ডার্সট্রিজ এর মালিক। আপুর শশুর আর আয়ান ভাই সবকিছু দেখাশোনা করে‌। আর কোনো ছেলে মেয়ে নেই। বাকি কথা গল্পেই জানতে পারবেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রেডি হয়ে পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে বসলাম। আপুর শশুর শাশুড়ির সাথে আগে থেকেই কথাবার্তা বলতাম কিন্তু এই লোকটার সাথে দেখা হলেও কথা হয় নি। দেখতে মাশাআল্লাহ কিন্তু সবসময় চুপচাপ গম্ভীর হয়ে থাকে জন্য আমার পছন্দ না ওনাকে।আমার জামাই একটু আমার মতো চঞ্চল, দুষ্ট না হলে তো মিলবে না।
আজকে ভার্সিটি থেকে এসে শুনি যে আপুর শশুর শাশুড়ি আর তাদের বড় ছেলে আসবে। আসবে ভালো কথা, আমি আমার মতো এসে গোসল করে গান শুনতেছি আর ফেসবুকে গল্প পারতেছি। এমন সময় আম্মু রুমে এসে বলতেছে শাড়ি পরতে।
আজব,আমি কেনো শাড়ি পারবো
আমি পরতে বলছি তাই,

আম্মু তোমার কথা না আমি বুঝতে পারতেছি না, আমি কেনো শাড়ি পরবো।
কারন রজনীর শশুর শাশুড়ি তোকে দেখতে আসবে।
আম্মু তুমিও না, আপুর শশুর শাশুড়ি তো আমাকে অনেক দেখছে আর কি দেখবে। আর দেখলে দেখবে এতে শাড়ি পরার কি আছে, আমার জামার সাথে প্লাজুই ঠিক আছে।
ঝুম, ওনারা তোকে ওনাদের বড় ছেলের জন্য দেখতে আসছে,
কিইইইহহহহ,, আম্মু ঐ বুইড়া লোকটা,,

কি বলছিস কি ঝুম, তোর থেকে নয় বছরের বড় হবে। বিয়ের জন্য এরকমি ঠিক আছে। তোর বাবা আর আমার বয়সের পার্থক্য বারো বছরের।
আম্মু আগের কথা বাদ দাও, এখন কি এতো বড় কাউকে বিয়ে করে নাকি। উনি সব আগের কালচার নিয়ে থাকবে, আর আমি এই যুগের মেয়ে।

নয় বছরের পার্থক্যে এমন কিচ্ছু হবে না, আর শুনেছি ইরহাম নিজেই বলেছে তোকে বিয়ে করবে,তোর বাবারো কোনো আপত্তি নেই, আমাদের তো আর কোনো ছেলে নেই, তোরা দুই বোন একসাথে থাকবি, আর একবছর হতে চললো আমরা রজনীর শশুর শাশুড়িকে চিনি,অনেক ভালো মানুষ। যতোদুর চিনেছি আয়ান বাবাও অনেক ভালো। শুধু একটু চুপচাপ থাকে, তাতে কি ছেলে মানুষ একটু গম্ভীর থাকা ভালো। তাই তোর বাবা ঠিক করেছে সমন্ধ পাকা করবেন।
আম্মু গম্ভীর থাকা ভালো তাই বলে এতোটা গম্ভীর, উনি কখনো আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলে নাই।
তুই কথা বলছিলি,

কি যে বলো না আম্মু ওনাকে দেখলেই ভয় লাগে কেমন যেনো খেয়ে ফেলার মতো করে তাকায়। যদিও একবার কি দুবার তাকিয়েছে এছাড়া দেখি নি আমি ওনাকে। সবসময় তো অফিস আর রুমের ভেতরেই সীমাবদ্ধ উনি।

এতোক্ষণ চুপচাপ ওদের সামনে বসে মনে মনে এসবে ভাবছিলাম। হটাৎ আপুর শাশুড়ি বলতেছে,
কি রে মা যা, আলাদা একটু কথা বলে আয়।
এতোক্ষণে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আয়ান ভাই সামনে নাই। আমার রুমের দিকে যাচ্ছে। আমি কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে ওনার পিছনে পিছনে আসলাম। বুঝতেছি না এমন কেনো হচ্ছে আজ। এমনিতে তো আপুর শশুর শাশুড়ির সামনেও বেশ চটপট করে বেড়াই। আমি আর আপু একদমি আলাদা। আমি চটপটে আর আপু শান্ত। ওদিকে ফাহিম ভাই চটপটে আর আয়ান ভাই শান্ত।

এই প্রথম নিজের রুমে ঢুকতেও ভয় করতেছে আমার। বুকে থু থু ছিটে দিয়ে পেছনে আপুর শশুর শাশুড়ির দিকে একবার তাকিয়ে রুমে পা রাখলাম। পা রাখতেই শক্ত একটা কন্ঠ কানে এলো,,
এতোক্ষণ লাগে আসতে, এমনিতে তো একজায়গায় ঠিক থাকো না।
আমার কান্না পাচ্ছে, এই লোকটা আমার সাথে এই প্রথম কথা বললো তাও আবার ধমক দিয়ে, প্রথম কথা বুঝি একটা গু*ন্ডা*ও ভালোভাবে বলে আর ইনি তো ভালো মানুষ। না না না আমার মতো মেয়ে কিছুতেই এই উদ্ভট লোকটার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবে না।

যেই এই কথাটা বলতে যাবো তখনি উনি বলে উঠলেন,
আমি তোমার মতামত জানতে আসি নি, চুপচাপ এই শাড়ি পাল্টে বিয়ের শাড়ি পরে নাও, আজকে একটু পর আমাদের বিয়ে হবে। এই বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো, আবার ফিরে এসে বললো, আজকেই শশুর বাড়িতে নিয়ে যাবো তোমাকে। কথা না শুনলে ফেসবুকে কার সাথে কি করছো সব তোমার আব্বুকে বলে দেবো।
আমি তাজ্জব বনে গেলাম, এটা কি আদেশ করলো নাকি থ্রেট দিয়ে গেলো। আরে ভাই আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে নাকি। একটু পর আম্মু এসে একটা মিষ্টি আমার মুখে ধরে বললো, তুই আগে থেকে পছন্দ করতি আয়ানকে কখনো বলিস নি তো।

কি সব উদ্ভট কথা বলতেছো আম্মু,,
কেনো, তুই নাকি আয়ানকে বলছিস যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন।
কিইহহহ,, আম্মু এসব তোমায় কে বলেছে,
কেনো, কে আর বলবে তুই যাকে বলছিস সেই বলেছে।
আয়ান ভাই এসব বলেছে,

এই দেখ সত্যি কথা মুখ দিয়ে বের হয়েছে, তার মানে সত্যি বলছিলি।
আচ্ছা যাই হোক রেডি হয়ে নে। রজনী আর ফাহিম কাজী নিয়ে আসতেছে।বলে আম্মুও বেরিয়ে গেলো।
আম্মু আম্মুউউউউ, এই যা চলে গেলো। আর এ আমার কথাটা তো শুনবা। আমি কখন ওনাকে বললাম আমি বিয়ে করবো ওনাকে।

আর আমি ফেসবুকে কার সাথে কি করছি,শুধু তো একটা একটা ছেলেকে দুলাভাই বানিয়ে,,,, উফফ শিট। এই কথাটা উনি জানলো কিভাবে।
আসলে হয়েছে কি, কিছুদিন থেকে একটা ছেলে সবসময় হাই,হ্যেলো দিতো আর খোঁজ খবর নিতো‌। প্রথমে পাত্তা না দিলেও একসময় আমিও কথা বলতাম। কথা বলতে বলতে দুলাভাই বানাইছি‌। তারপর আর একটা আইডি দিয়ে নিজেই কথা বলছি, এই আইডির পাসওয়ার্ড আমার বান্ধবীদের কাছেও আছে ওরাও কথা বলতো। কিন্তু আমি তো সব এমনি ফাইজলামি করছি। কিন্তু এই লোকটা কিভাবে জানলো এসব। আল্লাহ এইবারের মতো বাঁচায় দাও আর জীবনেও ফেসবুক চালাবো না।চালালেও কারো সাথে কথা বলবো না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি, এই সময় আপু রুমে আসে।
এই ঝুম তুই এখনো রেডি হস নি,

আমি আপুর পা জড়িয়ে ধরে বললাম আপু, ও আপুরে আমি ওনাকে বিয়ে করবো না রে। তুই দেখিস না উনি কেমন, জেনে বুঝে আমাকে নদিতে ফালায় দিচ্ছিস কেনো। তোর জামাই কত্ত ভালো আর আমাকে কি না গোমড়ামুখোটার মাথায় চাপিয়ে দিচ্ছিস।
আমার জামাই তোর হলে বুঝতি, সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারে আমাক। জামাইরা গম্ভীরে ভালো বুঝলি তো‌। আর আয়ান ভাইয়া অনেক ভালো জানিস। আমাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসে। আর উনি সেদিন আমাকে ডেকে বলতেছে,,
রজনী একটু কথা ছিলো,

জ্বি ভাইয়া বলুন,
তোমার বোন ঝুমুর এইবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ার তাই না।
হ্যা ভাইয়া, কেনো কিছু হয়েছে, ও কি কিছু করেছে,

না না তেমন কিছু না, আমি বিয়ে করবো ওকে। তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলো।
বিশ্বাস কর ওনার কথায় আমি এত্তো খুশি হয়েছি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
এবার ঝটপট রেডি হয়ে নে তো। আর জানিস তো আয়ান ভাইয়া যখন বলেছে তোকে বিয়ে করবে। তখন করেই ছাড়বে।

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ২