লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৫

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৫
নাফিসা আনজুম

আমাদের পরিবার সম্পর্কেও তো ওনার ধারনা আছে, হটাৎ বিয়ে না করলে হয়তো আব্বু কিছু দিতো হটাৎ বিয়ে করার কারনে সেটাও হয় নি। আজকে আসুক ওনার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে,,
দুপুর দুইটা বাজে,বাবার বাড়ির সবাই এসে গেছে, আজকে আমাকে আর ওনাকে যেতে হবে আমাদের বাড়িতে এটাই নিয়ম, আপু ও যেতো কিন্তু শশুর বাড়ির দায়িত্ব বেশি হওয়ার কারনে আপুর যাওয়া হচ্ছে না। উনিও বেশ সময় মতো এসে গেছে। সবার সাথে কথা বলে রুমে আসছে, আমি ওনার অপেক্ষাতেই ছিলাম,,

আসার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলাম,,
আপনি হটাৎ করেই আমাকে বিয়ে করলেন কেনো।
উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আজব মানুষ তো, আমি কথা বলার জন্য বসে আছি আর উনি ফ্রেশ হতে গেলো। মানুষটা দেখি দিনে একরকম রাতে অন্যরকম। ছেলে মানুষ কি এমন হয়।
একটু পর উনি ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে বসে বসলো, তোমাকে হটাৎ বিয়ে করার কারন জানতে চাচ্ছ তো,
আমি মাথা নাড়লাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঝুমুর ভালোবাসি আমি তোমাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে প্রথম দিন দেখেই ভালো লেগেছে, কিন্তু তুমি আমার ছোট ভাইয়ের শালী এজন্যই সবসময় এড়িয়ে চলেছি তোমাকে। কিন্তু আমি যখন থেকে বুঝতে পারছি যে তুমিও দূর্বল আমার প্রতি তখন থেকে আমি আর দূরে থাকতে পারছি না, তোমাকে লুকিয়ে দেখা, তোমাকে ফলো করা, তুমি কখন কোথায় যাচ্ছো কি করতেছো সব কিছুর ওপর নজর রাখা যেনো আমার দায়িত্ব হয়ে গেছে।

হটাৎ একদিন মনে হলো ফেসবুকে নক দিয়ে কথা বলি, নক দিলাম কিন্তু তুমি প্রথম পাত্তাই দিলা না, কাউকে ভালোবাসলে তার সাথে কথা বলার জন্য নত হতেও লজ্জা লাগে না কথাটা আগে মানতাম না। সবসময় বলতাম যে আয়ান চৌধুরী কখনো কারো কাছে নত হবে না, কিন্তু আমি নিজেই কথাটা ভুল প্রমান করে বার বার এস এম এস দিতাম তোমাকে। শেষে তুমি কথাও বললে কিন্তু দুলাভাই বানিয়ে।

আমি হা করে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, ওইটা তাহলে ইনি ছিলো।
তারপর আবারো বলতে লাগলেন,, তোমরা যে বান্ধবীরা মিলে কথা বলছিলে আমার সাথে এটাও আমি বুঝতে পারছিলাম। কিভাবে বলি, একদিন আমি তোমার ভার্সিটির সামনেই গাড়িতে ছিলাম, তখন তোমার হাতে ফোন ছিলো না কিন্তু আমার সাথে কথা হচ্ছিলো তখনে বুঝেছি যে তুমি একা না অন্যকেউ ও আমার সাথে কথা বলে। আয়ান চৌধুরীর সাথে মজা করেছো না তাই আমিও হুট করেই বিয়ে করে ফেললাম।

আচ্ছা আপনি আপনার পরিচয় কেনো দেন নি(ঝুম)
আমি পরিচয় দিতাম, কিন্তু কেনো জানি খুব জানতে ইচ্ছে হলো দেখি একটু ভার্চুয়াল জগতে তুমি কেমন, ফেসবুকে সবার সাথে কিভাবে কথা বলো। এজন্য পরিচয় দেই নি।
ওহহহ,
আর হটাৎ বিয়ে করার আর একটা কারন হলো, আমাক অফিসের কাজে পনেরো দিনের জন্য আমেরিকা যেতে হবে, আর আপনার তো,,

আমার খুব ইচ্ছা আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত নায়াগ্রা ফলস দেখার।
জ্বী হ্যা,এটা দ্বিতীয় কারন। অফিসের কাজে যাচ্ছি তাই ফ্যামিলির কাউকে নিয়ে যাওয়া যেতো না, কিন্তু আমার সাথে আমার পি.এ যেতেই পারে। এজন্যই আপনাকে খুব তারাতাড়ি বিয়ে করলাম, আর যাই হোক বিয়ের আগে যে তোমাকে একা আমার সাথে পাঠাবে না এটা আমি জানতাম। এখন তো আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। কাল থেকে তুমি আমার পি.এ তার তিনদিন পর আমরা যাচ্ছি।

তার মানে আমি সত্যি আমেরিকায় যাবো। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম, আপনি জানেন আমি এতো দিন শুধু কল্পনায় করছি যে আমি ওখানে গেছি, কখনো ভাবি নি আমার এই ইচ্ছেটা পুরন হবে। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো আমার ভাষা নেই।
আয়ান মনে মনে ভাবছে, এই মেয়েটা কি বুঝতে পারছে না বউ এভাবে জড়িয়ে ধরলে কি অবস্থা হয়। তার ওপর এই প্রথম একটা মেয়ে এইভাবে বুকের মধ্যে চেপে আছে সত্যি ব্যাপারটা ছেলেমানুষ ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। আয়ান দাতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে।

একটু পর ঝুম আয়ান কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে দৌড়ে বাহিরে যায়। উদ্দেশ্যে সবাইকে বলা যে ও আমেরিকা যাবে।
ঝুম বের হতেই আয়ান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আর একটু হলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতো না। ভালোবাসার মানুষটা বুকের মধ্যে থাকলে যে কোন পুরুষ কন্ট্রোলহীন হয়ে পরে। আরো সে যদি হয় বউ তাহলে তো আর কথায় নেই।
ঝুমুর দৌড়ে নিচে নামতেই ওর শাশুড়ির মুখোমুখি হয়। শাশুড়িকে দেখার সাথে সাথে স্টাচুর মতো দাঁড়িয়ে যায় ঝুম।
ওহহহ আল্লাহ, ভুলেই গেছিলাম যে এটা আমার শশুর বাড়ি। আর যম আছে এখানে।(মনে মনে)
ঝুম মা একটু আমার সাথে আসো তো, এই বলে সবার সামন থেকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,,

এইটা তোমার শশুর বাড়ি, একটু ভদ্র ভাবে চলাফেরা করবা কেমন। একে তো একদিনেই তোমার বাবা মা এতো মানুষ নিয়ে আসছে, তার ওপর কোনো জিনিস আনে নাই‌। সবাইকে খুব বড় বড় করে বলছিলাম ছোট ছেলে প্রেম করলে কি হবে, বড় ছেলেকে কোনো এক রাজকন্যার সাথে বিয়ে দেবো, আর হলো আগেরটার মতোই। একটু কঠোর ভাবে কথাটা বললেন উনি।

মা,এটা আপনারো শশুর বাড়ি তাই এভাবে নিজেকে রাজারানি ভাবা বন্ধ করেন। আপনিও এই বাড়ির বউ আমিও এই বাড়ির বউ,আপনি আমাকে ছোট করে দেখতেই পারেন কারন আপনি আমার আগে আসছেন এই বাড়িতে আপনার অধিকার বেশি, কিন্তু আমার বাবা মা কে ছোট করে কথা বললে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার স্বামির মা। তখন আপনি আমার সাথে যেভাবে আচরন করবেন আমি ঠিক তেমনটাই ফিরিয়ে দেবো আপনাকে।( নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কথাগুলো বললো ঝুম)

এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না, তোমার বড় বোন শেখায় নি তোমাকে কিভাবে শাশুড়ির সাথে কথা বলতে হয়।
জ্বি মা, শিখিয়েছে, কিন্তু কি বলুন তো‍,আমি তো রজনি না আমি হলাম ঝুমুর তাই আমি যেটা করি আমার কাছে সেটাই ঠিক। অন্যকারো কথা শুনে চলতে পারি না আমি।
এমন সময় রাজন চৌধুরী সেখানে হাজির হয়, ওনাকে দেখে আমার শাশুড়ি হেসে বলে,
কি ব্যাপার আয়ানের বাবা কিছু লাগবে।

হ্যা, বড় বউমাকে লাগবে। মা ঝুমুর একটু আসো তো আমার সাথে, আমার কিছু বন্ধু এসেছে তোমাকে দেখতে।
আমি নিজেকে আর একবার আয়নায় দেখে নিয়ে বাবার পেছন পেছন আসলাম। একটু পর আয়ান ও নিচে আসলো। সবার সাথে দেখা হলো কথা হলো, আপু আর ফাহিম ভাই ও সাথে ছিলো। আমরা আসার কিছুক্ষণের মধ্যে আমার শাশুড়িও সেখানে এসেছে‌। সবাই একটা করে গিফ্ট দিয়ে গেলো।
সবকিছুর মধ্যে একটা জিনিস খেয়াল করলাম, আমার শাশুড়ি সবার মাঝে অসম্ভব ভালো মানুষ। দেখলে মনে হবে আমাদের দুই বউকে মেয়ের মতো দেখে।

সবাই চলে গেছে, আমাদের যাওয়ার কথা থাকলেও ওনার অফিসে দরকার থাকার কারনে যাওয়া হয় নাই। আমি আর আপু একসাথে বসে আছি।
আচ্ছা আপু তোর শাশুড়ি এমন তুই কখনো বলিস নি কেনো,,

কি বলতাম বল, আর কিভাবে বলতাম, বিয়ে তো আমি নিজের পছন্দে করেছি। আর আমার বাবার এতোও ক্ষমতা নেই যে আমি কিছু বললে সাথে সাথে দিতে পারবে। তাই আমি কিছু বলে বাবা মা কে টেনশন এ ফেলতে চাই নি।
আচ্ছা সব বুঝলাম কিন্তু তুই আমার বেলাতে না করলি না কেনো। তুই তো জানতিস তোর শাশুড়ি কেমন,তবুও কেনো আমাকে বিয়ে তে জোর করলি….

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৪

কেনো জোড় করেছে সেটা আমি বলছি (আয়ান)
কথাটা কর্নপাত হতেই দুই বোন দরজার দিকে তাকালাম,,,,

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৬