লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৬

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৬
নাফিসা আনজুম

আপু তুই তো জানতিস তোর শাশুড়ি কেমন,তবুও কেনো আমাকে বিয়ে তে জোর করলি….
কেনো জোড় করেছে সেটা আমি বলছি (আয়ান)
কথাটা কর্নপাত হতেই দুই বোন দরজার দিকে তাকালাম,,,,

আমি আর আপু একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি মায়ের কথাটা কি উনি শুনে ফেললো নাকি। কিছু যদি মনে করে।
উনি আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রজনীকে যখন আমি বলেছি যে আমি তোমার বোনকে বিয়ে করবো‌ তখন ও যে খুশি হয়েছে তা ওর চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু একটু পর কেনো জানি ও আমাকে না করেলো। বলেলো আপনি বড়লোক ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেন ভাইয়া।আমার বোন আপনার জন্য পারফেক্ট নয়। ওর এই কথাটা আমার কাছে ঠিক মনে হয় নি তাই আমি এই ব্যাপার নিয়ে ফাহিমের সাথে কথা বলেছি, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ফাহিম হয়তো রজনির সাথে খারাপ ব্যবহার করে কিন্তু পরে শুনলাম তেমন কিছুই না। সমস্যা টা আমার মায়ের। আমার মায়ের কারনেই রজনী রাজি হতে চায় নি।
এর মাঝে ফাহিম ভাইয়া আপুকে ডাকে আর আপু চলে যায়।

উনি আমার পাশে বসে আমার দুই গালে হাত রেখে বলছ, আয়ান চৌধুরী ভালোবেসেছে তোমাকে। আর তার ভালোবাসার মানুষটাকে সে নিজের করে নেবে না তা কি করে হয়।
আমি যতোবার এই মানুষটার চোঁখের দিকে তাকাই ততোবার ওনার প্রেমে পরে যাই। মানুষ বলে না যে কেউ কখনো কারো চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না, এনার চোখের দিকে তাকালে আমার কথাটা সত্যি মনে হয়, এনার চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই, দেখলে মনে হয় মানুষটা আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে।
তারপর আবারো বলতে শুরু করল,,

ঝুমুর, আমি আমার মা আর বাবাকে যখন বলেছি তোমাকে ওনার পছন্দ কি না তখন বাবার উত্তর ছিলো কিছুটা এরকম,
বাবা: হ্যা, মেয়েটা ভালো আছে, একটু চঞ্চল বাড়িটা মাতিয়ে রাখতে পারবে।
আর মা বলছে,,
এমনিতে দেখতে ভালো তবে চঞ্চলতা বাড়ির মেয়েদের শোভা পায় বউদের না। আর এক বাড়ির দুই মেয়ে আসলে সংসারে আমাকে দাম দিবে না। নিজেরাই সবকিছু করবে।
আমি,,

মা তুমি না সবসময় বলতে, আমরা পরিবার একসাথে থাকবো সবসময়, কখনো ভাগ হবো না, ওরা দুই বোন একসাথে থাকলে কখনো আলাদা হবে না,সংসারটা একসাথে থাকবে। আর সবথেকে বড় কথা তোমার ছেলেরা তাদের পছন্দের মানুষের সাথে থাকবে।
তারপর মা রাজি হয়।

আর সেদিন দেখতে গিয়ে বিয়ে করার আরেকটা কারন মা। আমি জানি যদি সেদিন বিয়ে করে তোমাকে নিয়ে না আসতাম তাহলে মা চাইতো তোমার বাবা যেনো মেয়েকে সবকিছু দিয়ে তবেই পাঠায়। আমি জানি তোমার বাবা আমার থেকে কিছুই নিতো না, কিন্তু ওনার মাথায় চিন্তা বেড়ে যেতো কিভাবে কি করবে না করবে। এজন্য আমি সেদিনে বিয়ে করে নিয়ে আসি,যাতে মা মনে করে হটাৎ বিয়ে হওয়ার কারনে কিছু দিতে পারে নি। আর তোমার বাবারো অনুষ্ঠান বা কিছু দেওয়া নিয়ে চিন্তা না হয়। বিয়ে পরিয়ে রাখলে হয়তো পরে অনুষ্ঠান ছাড়া বিদায় দিতে পারতো না। আত্নিয় স্বজনদের কথার ভয় করতো। হটাৎ হওয়াতে কেউ কিছু বলতে পারবে না।

আমি মনে মনে ভাবলাম,, তবুও তো আপনার মা কিছু বলা বাকি রাখে নি। যাই হোক এটা আমাদের বউ শাশুড়ির ব্যাপার। শাশুড়ি আপনাকে কিছু না বললে আমিও বলবো না। কি দরকার মা ছেলের মধ্যে ঝামেলা বাজানোর।
ঝুমুর কি ভাবছো,,
না কিছু না ,

জানি ভাবতেছো যে, ফাহিম বউকে কথা শোনার হাত থেকে বাঁচতে পারলো আমি কেনো পারি না। আজকের পর থেকে মা তোমাকে কিছুই বলবে না ঝুমুর। শুধু তোমাকে না তোমার অপুকেও বলবে না। আমি এতোদিনো জানতাম না আমার মা এমন, এখন জানতে পারছি তাই সেটা সমাধানের উপায় ও বের করেছি, উনি আমার মা,ওনাকে তো আমি কিছু বলতে পারি না তাই তোমাকে বলছি আমার মা কে কখনো কষ্ট দিও না। মা কিছু বললে সহ্য করে নিও,উনি অনেক কষ্ট করে এই সংসারটা সাজিয়েছে।

আপনি কিভাবে বুঝলেন আপনার মা কিছু বলবে না,
উনি হেসে বললেন,,
পরশুদিন সকালেই দেখতে পারবে।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে বসে আছি, এই লোকটা এখনো আসছে না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ট্যুর এর ব্যাপারে কথা বলতেছে, আমি দুইবার ডাকতে গিয়ে ঘুরে আসছি ডাকতে পারি নাই। কেনো জানিনা খুব মন চাচ্ছে উনি একটু আমাকে কাছে টেনে নিক, কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিক আর তারপর জড়িয়ে ধরে ঘুমাক। আচ্ছা উনি কি বুঝতে পারছে না কিছু। ধুর ভাল্লাগেনা।

অনেকক্ষণ পর উনি রুমে আসলো, আমি বিছানায় দুটো বালিশ উঁচু করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি, উনি এসে আমার সাথে কোনো কথা না বলে শুয়ে পরলো।
আজব তো, আমি জেগে আছি ওনার অপেক্ষায় আর উনি আমাকে কিছুই বললো না। ঠিক আছে না বলুক নাই আমিও কিচ্ছু বলবো না। মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরলাম। উনি যখন বুঝলই না কিছু তাহলে যেচে আর বোঝাতে পারবো না আমি।

আমি জানি ঝুমুর তুমি কি চাচ্ছিলে, বুঝতে পারছি আমি কিন্তু তুমি এখন পর্যন্ত একবারো বলো নি তুমি আমায় ভালোবাসো। যেখানে আয়ান চৌধুরী নিজের মুখে তোমাকে বলেছে ভালোবাসার কথা সেখানে তুমি এতো চঞ্চল একটা মেয়ে হয়ে বলতে পারলে না। তুমি যেদিন নিজের মুখে শিকার করবে ভালোবাসার কথা, যেদিন বলবে, আয়ান আমাকে একটু ভালোবাসেন সেদিন তোমাকে কোনো আদর থেকে বঞ্চিত করবো না মিসেস আয়ান।

অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পর ভালো লাগছে না, কেমন কেমন যেনো লাগছে, ওনাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতেছে। আচ্ছা উনি নিশ্চই এখন ঘুমিয়ে পরেছে এখন তো জড়িয়ে ধরায় যায়, আমি খুব সাবধানে মাঝখানের বালিশটা সরিয়ে ওনাকে একহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ওনার গালে ছোট্ট করে ঠোঁট ছোয়ালাম।
সকালবেলা,,,

ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি পাশে নেই। শাড়ি পরা ছিল শাড়ি অনেকটা এলোমেলো হয়ে আছে, আমার ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করার অভ্যাস আছে, বিছানার একপাশ থেকে অন্য পাশ পুরোটাই আমার লাগে, আর এজন্যই শাড়ি ঠিক নেই। আজকে উঠতে একটু দেরি হয়েছে, নিচে গিয়ে দেখি আপু সবার নাস্তা রেডি করছে আমি গিয়ে আপুকে একটু সাহায্য করলাম। দেখলাম উনিও নিচেই আছে।

নাহ এভাবে থাকা সম্ভব না, একে তো রাতে জড়িয়ে ধরে পাগল করে দিচ্ছিলো আর সকালে দেখি শাড়ি ঠিক নেই, এই মেয়েটা সব উল্টাপাল্টা করে দিচ্ছে। কোনো কিছুতেই মন বসতেছে না, পাগল পাগল লাগতেছে। কন্ট্রোল আয়ান কন্ট্রোল। মনে মনে কথাগুলো ভাবছে আয়ান।
কি রে ঝুম সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো(আপু)
হ্যা আপু, কেনো কিছু হয়েছে

না না কি হবে, একটু থেমে বলল গোসল করিস নি যে তাই কথাটা বললাম।
আপুর কথাটা শুনে ভীষণ লজ্জা লাগছে, এইভাবে খেয়াল করেছে ব*জ্জাত মেয়েটা। মানে বিয়ে করলেই কি প্রতিদিন সকালেই গোসল করতে হবে নাকি। তাছাড়া আমাদের তো কিছু হয় নি যে গোসল করতেই হবে।

আমার লজ্জা পাওয়া দেখে আপু হেসে বলল, আরে এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো আমি তো এমনি বললাম। আচ্ছা বাদ দে ভাইয়া কালকে আর কি বলছিলো রে। আসলে আমাকে উনি সেদিন বলেছিলো যে তোমার বোনকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না। আমি জানি উনি ওনার কথা রাখবে, আর এটাও বলেছে যে অন্যকোথাও বিয়ে হলেও যে সেখানে সবাই ভালো থাকবে কেউ কিচ্ছু বলবে না এমনটা তো না। সেখানে আরো দেখা গেলো শাশুড়ি, শশুর ননদ, জ্বা সবাই খা*রাপ তাহলে সেখানে কি করবে। তারপর ভেবে দেখলাম কথাটা ভুল বলে নি, আমাদের শাশুড়ি মা এমনিতে সব দিক দিয়ে তো ভালো তবে ঐ ব্যাপারটা নিয়ে যে এমন কেনো করে বুঝি না।

সারাদিন কেটে গেলো এর মধ্যে ওনার সাথে আর দেখা হয় নি। দুপুরে খাওয়ার আগে একবার কল দিয়ে বলেছে খেয়ে নিতে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে এলো উনি এখনো নেই। একটা কল পর্যন্ত করলো না। আচ্ছা উনি কি কোনো কারনে আমার ওপর বিরক্ত, নাকি সত্যি সত্যি ব্যাস্ত আছে। এসব ভাবতে ভাবতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘরে খাবার এনে রাখছিলাম যে উনি আসলে একসাথে খাবো। উনিও আসলো না খাওয়াও হলো না।

রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ চোঁখে পানির ছিটা পেয়ে ঘুম ভাঙ্গে, উঠে দেখি উনি লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে একটা গ্লাস হাতে নিয়ে হাঁসি মুখে দাড়িয়ে আছে। চুল থেকে পানি পরছে, মনে হচ্ছে মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে। আমাকে জাগতে দেখে বললো,,

যাক অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙ্গলো,কখন থেকে ডাকতেছি তোমায়।
কেনো জানিনা খুব অভিমান চেপে ধরলো। চোখদুটো ভিজে আসতেছে,
কি হয়েছে আমাকে ডাকছিলেন কেনো,,
বা রে বউটা অভিমান করেছে। তা অভিমানের কারন কি। আর আমার বউটা না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে তা কি করে হতে দেই।
কিসের অভিমান, কোনো অভিমান করি নি।

উনি একনলা ভাত আমার মুখের সামনে নিয়ে বললো, অভিমান করছো কি না কথাতেই বুঝেছি।
কাজের অনেক চাপ ছিলো বউ, মাঝখানে আর দুই দিন সময় তারপরেরদিন আমাদের বেড়োতে হবে, আর তোমার তো এখনো শপিং করাও হয় নি। আমারো কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
ওনার মুখে বউ ডাক শুনতে বেশ ভালো লাগছে, আর লজ্জাও। আপনি দুপুরের পর থেকে একবারো কল করেন নি কেনো।
উনি হেসে বললো, আমি তো তোমার কলের অপেক্ষায় ছিলাম। যে আমার বউটা কখন কল দিয়ে বলবে ‘এখনো ফিরছেন না কেনো’।

ইশশশ, ভুলে গেছি। আমিও তো কল দিতে পারতাম।
আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম।

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৫

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই খুব জোরে হর্ন বাজতে শুনলাম। ব্যাপারটা দেখার জন্য বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম,নিচে তাকিয়ে দেখি বড় বড় দুটো ট্রাক। কি নিয়ে আসছে দেখার জন্য নিচে গেলাম।
এতো কিছু দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না,,

লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব ৭