লীলাবালি পর্ব ৩৩

লীলাবালি পর্ব ৩৩
আফনান লারা

কুসুম ও ঘুমিয়ে পড়েছিল।তবে শুরুর দিকে ভয় করছিল বাগিচার দিকে চেয়ে।সত্যি কি ওখানে ভূতের বসবাস?
যদি ছুটে এসে গলা চেপে ধরে?ঘেমে একাকার হয়ে তারপর যখন মনে আসলো অর্ণব আজ তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিল তখন সব ভূতের ভয় চলে গেলো তার।খুশিতে আটখানা হয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো সে |

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরেরদিন সকাল সকাল উঠে গেছিল ফোনের শব্দে।একটা আননউন নাম্বার।স্টিকার ছিলনা বলে কুসুম বুঝলোনা এটা কার নাম্বার।ধরতেই ওপাশ থেকে একটা ছেলে ভুলভাল কথা শুরু করলো।একেবারে জঘন্য ভাষা।কুসুম থতমত খেয়ে লাইন কেটে দিছে।দুনিয়ায় এমন আজাইরা মানুষ ও আছে?এমন সকাল সকাল ফোন করে এগুলো কি বললো?আমি আরও ভাবলাম উনি ফোন করেছেন।এটা কে!কি বলছিল এসব!আমাকে চেনে কেমনে!

অর্ণব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।সারারাত ভাল ঘুম হয়েছে।এখনও হচ্ছে।আজ আর অফিসে যাবেনা।দুদিনের ঘুম একদিনে যাবে।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে দু পুক্ষের কলের ভয়ে।
কুসুম পুরো বাড়ি ঝাড়ু-টারু দিয়ে এখন ফোন টিপে অর্ণবকে কল করে শুনলো নাম্বার বন্ধ।হঠাৎ ফোন বন্ধ করলো কেন সে বুঝতে পারলোনা।ফোন রেখে এবার সে রান্নাঘরে গেলো ভাবীকে সাহায্য করবে বলে কিন্তু দেখলো সব উল্টো। ভাবী রান্নাঘরেই আসেননি।ভাইয়া আসবেন বলে যে সাজ তিনি দিয়েছিলেন সেটা নাকি রান্নাঘরে আসলে তাপে নষ্ট হয়ে যাবে।

মা তাই একা কাজ করছেন।কুসুম ও কাজে হাত লাগালো।কিছু শুকনা পিঠা বানাচ্ছিলেন তিনি।কুসুম হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো শুকনো পিঠা সাগর ভাইয়ার বুঝি অনেক পছন্দের।মা বললেন না এটা অর্ণবের অনেক পছন্দের।এক বোয়াম এক বসাতে শেষ করতে পারে সে।সাগর আসবে বলে তার ও আসা হবে তাই বানাচ্ছেন।সাগর ভাইয়ার জন্য তো সব পিঠা আগে থেকেই বানিয়ে তুলে রেখেছেন।

কুসুম পেলো মহা সুযোগ।মাকে কাজ থেকে উঠিয়ে নিজে বানাতে বসলো।সে অর্ণবের জন্য পিঠা বানাবেই।কারোর কথা শুনবেনা।মা আর কি করবেন,কুসুমের সাথে ত্যাড়ামিতে না পেরে চলে গেছেন নাস্তা করতে।যেতে যেতে বলে গেলেন কুসুম যেন কাজটা রেখে নাস্তা করতে আসে।
কুসুম বসেছে তো বসেছেই।

বেলা বারোটার দিকে অর্ণবের ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙ্গলো।অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে চোখ মুখ ফুলে গেছে তার।ফ্রেশ হয়ে এসে সবার আগে ফোন খুললো সে।তারপর ফোনটা পকেটে পুরে চললো কাছের একটা হোটেলে।ভাত খাবে।মেসে যা রান্না হয়েছে তা ভাল লাগেনা।পাতলা মুসুর ডাল,পোয়া মাছ!না না এটা খাওয়া যেতোনা।অপছন্দের মাছ!

হোটেলে এসে ভাত,ডাল আর মুরগী এক পিস অর্ডার দিয়ে বসলো সে।
তখনই কল আসলো কুসুমের।এতক্ষণ সে ভাবছিল সকাল থেকে অফ পেয়ে বাড়িতে থেকে নিশ্চিত তান্ডব মাতিয়েছিল।হেসে দিয়ে কানে ধরলো ফোন।
-‘আসসালামু আলাইকুম’

অর্ণবের সালাম শুনে কুসুম লজ্জায় লাল হয়ে সালামটা নিয়ে নিজেও সালাম দিলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো অর্ণব খেয়েছে কিনা।
-‘খেতে বসলাম’
-“সকাল থেকে আপনাকে ফোন দেবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ বলছিল।ইচ্ছে করে বন্ধ রেখেছিলেন?’
-“হ্যাঁ’
-“কি দিয়ে খাচ্ছেন?’

-‘তোমার এত জেনে কি হবে?তোমাকে না বললাম আমাকে বেশি ফোন দেবেনা।শুধু শুধু এতবার কেন ফোন দাও?’
-“কই দিলাম?সকালে তো আপনার ফোন বন্ধই ছিল।আমি কি করবো আমার সময় কাটেনা এখানে’
-“এবার বুঝো।আমি তোমায় এখানে নিয়ে আসলে তোমার তো হলেমূলেও সময় কাটতোনা’
-“তখন বেশ কেটে যেতো।কারণ তখন তো আপনার পাশে থাকতাম।সময় দৌড়ে দৌড়ে শেষ হতো তখন’
-“রাখছি’

অর্ণব লাইনটা কেটে দিয়ে ভাবছে এবার কুমিল্লা গেলে বাবা না জানি জোর করে কুসুমকে ধরিয়ে দেয়।কোনোমতে খাবারটা সেরে সে তার অফিসের দিকে গেলো।
এই চাকরিটা ছেড়ে দেবে নতুন পেলে।একম ঝামেলার চাকরি ভাল লাগেনা।
না পারতে করছে সে।অফিসে আসার পর জানতে পারলো জুথি এসেছিল।কিসের জরুরি কারণে এসেছিল কেউ জানেনা।বলে যায়নি।অর্ণবের খোঁজ নেওয়ার জন্য এসে আবার চলেও গেছে।
অর্ণব আর ফোন করলোনা ওকে।কথা বললে কথা বাড়বে।দরকার মনে করলোনা।

কুসুম দেখলো মিশু ভাবী তার বিছানায় নতুন বিছানার চাদর বিছিয়েছেন।এ কদিন ধরে ওনার মুখ থেকে হাসি যেন নড়ছেইনা।কত দিন পর সাগর ভাইয়া আসবেন খুশিতে তিনি খাওয়া দাওয়া ও বন্ধ করে দিছেন।কুসুম শুধু তার খুশি দেখে যায়।
আর ফোন হাতে ভাবে অর্ণবকে কল দেবে কিনা।অর্ণবের হুটহাট রেগে যাওয়াকে সে অনেক ভয় পায়।যার কারণে এখন ফোন দিতে প্রচণ্ড ভয় লাগে।

রাতে খাবার খাওয়ার আগে সাহস করে আরেকটিবার ফোন দিলো সে।কিন্তু রিসিভ করেনি অর্ণব।সে তখন ওয়াশরুমে ছিলো।কুসুম ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে।সাগর ভাইয়া নাকি আজ দেশে আসবেন রাতে।

অর্ণব আসবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল সবার মনে।কুসুম ভাবলো সে বুঝি আসবেনা।ভোর চারটার দিকে সাগর আর অর্ণব দুইভাই একসাথে বাড়ি ফিরলো।সাগরকে এয়ারপোর্ট থেকে অর্ণব রিসিভ করে একসাথে কুমিল্লা ফিরেছে তারা।মিশু সেজেগুজে তৈরি ছিল।মায়ের পেছনে দঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল সে।
সাগর মিশুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে।অর্ণব তার ব্যাগটা নিয়ে ওর এসে দেখলো তার বাচ্চা বউ ফোন বুকে ধরে ঘুমোচ্ছে।লাইট জ্বালানো।নেভায় ও নি।ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে সে লাইটটা অফ করে আবার চলে গেলো সাগরের কাছে।সাগর বললো সে এখন কিছু খাবেনা।আসার পথে খেয়েছিল।

বাবা বললেন কুসুমকে ডেকে আনতে।সাগর ওকে থামিয়ে দিলো।
বললো সকালে কথা বলা যাবে।ঘুম থেকে উঠানোর দরকার নেই।
এসব বলে সে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।অর্ণব আবার রুমে চলে আসলো।কুসুমের ফোনটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলো সকালে একটা আননউন নাম্বার থেকে কল আসায় কুসুম দু মিনিট কথা বলেছিল।আড় চোখে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবলো এটা কে হতে পারে।সেসময়ে অর্ণবের ফোনে এলার্ম বেজে উঠেছে।রিমাইন্ডার সেভ করেছিল।এ সময়ে ভাইয়াকে আনতে যাবে।ভাইয়া তো আরও আগেই এসেছিল।শুধু শুধু এটা সেভে দিয়ে রাখছিল সে।
অফ করার আগেই কুসুম নড়েচড়ে অন্যদিকে ফিরে শুয়েছে।

অর্ণব ফোন হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেলেছিল আওয়াজে ও জেগে যাবে বলে।
ও আজ এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছিল।শাড়ী পরতে জানেনা।কদিন ধরে শিখছিল।তো সেই শেখার ফল হলো তার এখন শাড়ী গায়ে সঠিকভাবে নেই।ঘুরে শুতেই তার পেট দেখে অর্ণব চমকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।কোনোমতে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসলো।
শাড়ী দিয়ে ঢেকে দেবার সাহস তার নেই।ইচ্ছাও নেই।যেমন আছে তেমন থাকুক।নিজে নিজেরটা দেখে ঠিক করে নেবে।

আমি এখানেই বসে থাকি।
পাঁচটার দিকে কুসুমের ঘুম ভাঙ্গলো।সে এখনও জানেনা অর্ণব এসেছে।সোজা হয়ে বসে চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছাড়লো।শাড়ীর আঁচলটা কোনো মতে গলায় ঝুলিয়ে বারান্দায় গেলো হাই তুলতে তুলতে।
সেখানে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বললো,’চুইট সকাল।পাখিরা ওঠো।দেখো সকাল হয়ে গেছে।চুইট পাখিরা ওঠো!!সুন্দর ভুবনের স্বাদ নাও পাখিরা!

আমার সোনার ময়না পাখি রে…..এএএএ…হে হে হে
কই গেলি……’

অর্ণব ওর ভাষণ না গান যাই হোক! উদ্ভট বক্তৃতা শুনে জেগে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ছিল।এটা কে?চুল দেখে সিওর হলো এটা কুসুম।তারপর আবার সেই এলোমেলো শাড়ীর পরন দেখে হালকা কেশে উঠে দাঁড়িয়ে কুসুমের পাশ দিয়ে রুমে চলে গেলো সে।কুসুম সবেমাত্র অর্ণবকে দেখলো যেটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
নিশ্চিত হতে পেছনে তাকিয়ে চেয়ে রইলো শুধু।অর্ণব বিছানায় বসতেই দেখলো কুসুম রোবটের মতন দাঁড়িয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে।যা বোঝা গেলো ধমক ছাড়া এসব ঠিক হবেনা।

লীলাবালি পর্ব ৩২

বড়সড় একটা ধমক মেরে অর্ণব বললো,’আমি এসেছি!ঠিক আছে?তুমি স্বপ্ন দেখতেছোনা।এখন এমন শাড়ীর বেশ পাল্টাও।তোমার কি লজ্জা করছেনা একটুও?’
অর্ণবের কথায় কুসুম বোকার মতন নিজের দিকে তাকিয়ে শাড়ীর এমন অবস্থা দেখে বিদ্যুৎতের গতিতে ওয়াশরুমের দিকে ছুট লাগিয়েছে।
অর্ণব এসেছে নাকি আসে নাই সেটা পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে।আগে শাড়ী ঠিক করতে হবে।

লীলাবালি পর্ব ৩৪