শিমুল ফুল পর্ব ১৭

শিমুল ফুল পর্ব ১৭
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

গতকাল শওকত হাওলাদারের মুখে শিমুলের আহত হবার খবর শুনে এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ আসতে চায়।জানায় শিমুলের অসুস্থ অবস্থায় দেখা উচিৎ তাই তিনি আসবেন।উনি নিজেই আসতে চাইছে না করে কিভাবে?শওকত হাওলাদার বলেন,
“ভাইজান অবশ্যই আসবেন।সাথে আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসলে আরো খুশী হবো।”

ইউসুফ সাহেব মাথা নেড়ে জানায় আসবে।শওকত হাওলাদার বাড়িতে এসে আয়োজনের ব্যবস্থা করে।কোনকিছুতে যেন কমতি না পরে।এই সুযোগ যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে তার কপাল খুলে যাবে।কিন্তু শিমুল গর্দভটাই বুঝলো না।কই এমপির বাড়ি আর কই মিজানের বাড়ি ভাবলেই তার গা কিটকিট করে উঠে।ছেলের রুচি যে এতো নিচে যাবে তা তো ধারনা ছিলো না।মজিব হাওলাদার বলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কোনভাবেই ওই হোটেল ওলার মাইয়া এই বাড়িতে আনা যাবে না।”
শওকত বললো,
“কিন্তু আপনার নাতীর ঘাড় কিন্তু তেড়া।
“ত্যাড়া ঘাড় সোজা করে নিবি।”

শওকত হাওলাদার মাথা নাড়ে।দুপুরের দিকে এমপি সাহেব তার পরিবার নিয়ে আসে।উনার মূল উদ্যেশ্য ছিল শিমুলের সাথে উনার ভাগিনীর দেখা করানো।উনারা এসে হাওলাদার বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে।কিন্তু শিমুলকে কোথাও দেখতে পায় না।ইউসুফ সাহেবের ভাগনী অন্তরা এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে তার মামার বর্ননা অনুযায়ী ছেলেটাকে খুঁজে কিন্তু চোখে পড়ে না।শওকত হাওলাদার কয়েকবার তার আব্বার দিকে তাকিয়ে উশারা করে শিমুলকে নিয়ে আসার জন্য মজিব হাওলাদার উঠে শিমুলের রুমের দিকে যায়।

শিমুল গাড়ির শব্দ,মানুষের কথাবার্তার শব্দ সবই শুনতে পায়।শওকত সাহেব বলেছিলো উনারা আসলে দরজায় গিয়ে এগিয়ে আনতে কিন্তু শিমুল ইচ্ছা করেই যায়নি।এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তাকে কিনা অন্য মেয়ে দেখতে এসেছে এর চেয়ে বিষাক্ত অনুভূতি আর কিছুই হতে পারেনা।

ক্ষমতার লোভে তার বাপ দাদা তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে একটুও কৃপনতা করছেনা।শিমুল কখনোই এই বিয়ে করবেনা।তার যে প্রিয় ফুল আছে যে ফুলটা শিমুলের একান্ত প্রিয় ফুল।আচ্ছা পুষ্প যদি এসব জানতে পারে তাহলে কি শিমুলকে ভুল বুঝবে?শিমুল ভাবতে পারে না দুই হাতে চুল টেনে ধরে।
মজিব হাওলাদার দরজা ঠেলে ভেতরে আসে।

“শিমুল ওনারা এসে পড়েছে।দেখা করবি চল।”
দাদার কথা শুনে শিমুল ভ্রু কুচকে বললো,
“আমি এই বিয়ে করবনা।দেখা টেখাও সম্ভব না।”
মজিব হাওলাদারের মুখ অন্ধকার করে বললো,

“তুই বিয়ে করবি না বললে তো হবে না।আলাদিনের দৈত্য চেরাগ নিয়ে এসেছে তাকে কি ফিরিয়ে দেয়া যাবে?”
উনার কথা শুনে শিমুল বলে,
“তোমরা এতো লোভী!পুষ্পকে ছাড়া আমি কাউকেই বিয়ে করবো না।”
মজিব হাওলাদার বললো,

“জলদি আয় তা না হলে কি হবে বুঝতেও পারবিনা।”
এটা বলে উনি চলে যায়।শিমুল যায় না।নাকের পাটাতন ফুলে ফুলে রাগ বাড়ছে।মনে হচ্ছে তার আব্বার সাথে তার দাবা খেলতেই হবে,সুন্দর করে বললো কথার দাম দিলোনা এবার একটু খারাপ হোক।বেয়াদবের তকমা গায়ে লাগাক।তারপরও পুষ্পকে তার চাই-ই চাই।

কিছুক্ষন পরে ফুলি আসে,
“ভাইজান আপনারে ডাকে আইয়েন।”
ফুলির হাসিখুশী মুখ চুপসে গেছে।শিমুল বলল,
“এতোক্ষণ লাফালি এখন মুখ এমনে রাখছিস কেন?”

“ভাইজান হেছা কতা কই।মাইয়াডা সুন্দরী কিন্তু লাস শরম নাই।গেলেই বুঝবেন ছি ছি ছি।”
অজানা মেয়ের বদনাম শুনতে শিমুলের ভালো লাগে।সে বলে,
“আচ্ছা যা।”

শিমুল ড্রয়িংরুমে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়।মুখটা অন্ধকার রেখে যেনো বুঝিয়ে দিচ্ছে তার অমতের কথা।অন্তরা শিমুলকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।তার মামার বর্ননার থেকেও সুন্দর।সবার সামনেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।শিমুল এই মেয়ের বেহায়াপনা দেখে রাগে দুই ঠোঁট চেপে ধরে।তাকে এমন করে দেখবে শুধু পুষ্প অন্য কেউ দেখলে তার জ্বলে,সহ্য হয় না।

মেয়েটা উগ্র কাপড়চোপড় পরে এসেছে আর এই জন্যই ফুলি ছি ছি বলছিলো।ইউসুফ সাহেবের সাথে শিমুল এটা সেটা বলে।কিছুক্ষণ পরে বলা হয় দুজনকে একান্তে কথা বলার জন্য।শিমুল দাঁতে দাঁত চেপে তার মায়ের দিকে তাকায়।রাবেয়ার খুব অসহায় লাগছে,মেয়েটাকে তার মোটেই পছন্দ হয়নি,তার উপর ছেলে পুষ্পকে ভালোবাসে

।কিন্তু স্বামী শশুড়ের উপরে কথা বলার কোন সাহস নেই।অনিচ্ছা থাকা সত্বেও শিমুল উঠে দাঁড়ায়।এই মেয়েকে যদি পুষ্পর কথা বলে বুঝানো যায়!শিমুলের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হলো তাদের বাড়ির ছাদ।কিন্তু অন্তরাকে নিয়ে সে মোটেই ছাদে গেলো না বাহিরে বাগানে গেলো।

পছন্দের জায়গায় পছন্দের মানুষ নিয়ে যেতে হয়।শিমুল বাগানে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না তার শুধু মনে হচ্ছে পুষ্পকে যদি দেখে বা শুনে তাহলে ম*রে যাবে।অন্তরাই বলে,”আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।”
শিমুল মাথা তুলে তাকায়।মূহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এই মেয়ে তো ভারী নিলজ্জ।শিমুল পুষ্পর কথা বলবে তখনি মজিব হাওলাদার এসে উপস্থিত হয় উনি জানতেন শিমুল পুষ্পর কথা বলবে তাই তো এসেছেন।

“কি কথা বলো তোমরা?আমি শুনলে সমস্যা হবে?”
অন্তরা হেসে বলে,
“না দাদু সমস্যা নেই।”
শিমুল বুড়ার ভিমরতি দেখে মনে মনে গালি দিয়ে জাত উদ্ধার করে নেয়।মাথা নেড়ে বললো,
“তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”

ক্ষেপা সিংহের মতো দ্রুত পায়ে হেটে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।পুষ্প ছাড়া দুনিয়ার আর কোনকিছু ভালো লাগছে না।আজকে রাতে এর বিহিত করতে না পারলে পুষ্পকে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যাবে।যারা সমাজকে গুরুত্ব দিয়ে তার ইচ্ছার কথা ভাবে না তাদের মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে আর কোনো লাভ নেই থাকুক তারা তাদের সমাজ নিয়ে।

অন্তরা শিমুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটা রেগে আছে নাকি?রাগলেও এতো ভালো লাগে?মজিব হাওলাদার অন্তরার মনের ভাব বুঝে হাসে।মাছটা টোপ গিললেই হয়!
সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এমপির ভাগিনীর সাথে চেয়ারম্যানের ছেলে শিমুলের বিয়ে।রোকসানা পাশের বাড়ির ভাবির থেকে শুনলেন।তারপর পুষ্পর রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।তার চিন্তাই ঠিক হলো।শিমুল কখনোই এই বাড়িতে বিয়ে করতে আসবেনা।

পুষ্প আজকাল বেশীরভাগ সময় শুয়ে থাকে।সে তার মা’কে দেখে উঠে বসে।
রোকসানা পাশে বসে,
“তোকে বলেছিলাম পুষ্প আমরা গরীর বড়লোকের চোখে যেতে পারি কিন্তু মনে না।”
মায়ের কথা বুঝতে না পেরে পুষ্প তাকিয়ে থাকে।রোকসানা আবার বলে,
“তারা ব্যবহার করে ফেলে দিতে যানে।পুষ্প তোর আর শিমুলের মাঝে কিছু হয়েছে?আম্মা না ভালো আমারে সত্যি করে বল।”

মায়ের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পুষ্পর কষ্ট হয় না।তাকে নিয়ে তার আম্মার চিন্তাধারা কতো নিচে নেমে গেছে এটা ভেবেই খারাপ লাগে।শিমুল চাইলে কবেই এসব হতে পারতো গভীর রাতে যখন হিজল গাছের নিচে দেখা করতো তখন শিমুল চাইলেই পুষ্পকে একান্ত নিজের করে নিতে পারতো।কিন্তু শিমুল যে ভিন্ন।আগে পুষ্পর ইচ্ছার গুরুত্ব দেয়,পুষ্প এগিয়ে গেলেই শিমুল সঙ্গ দেয়।তাদের মধ্যে কোন নোংরামি নেই।মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আম্মা আমি আর শিমুল এতো খারাপ না।প্রেম করলেই মানুষ খারাপ হয়ে যায় না।”
পুষ্পর বিশ্বাস দেখে রোকসানার খারাপ লাগে।শিমুলের বিয়ের কথা শুনলে মেয়েটা কিভাবে নেবে।
“আমি যানতাম শিমুল তোকে বিয়ে করবে না।”
পুষ্প শান্ত গলায় জোড় দিয়ে বললো,

“বিয়ে করবে আম্মা।আমি জানি।শিমুল আমাকে কথা দিয়েছে।”
“আজকে শিমুলের বাড়িতে তার হবু স্ত্রী এসেছে।সারা গ্রামে হইচই পড়ে আছে।”

পুষ্প কপাল কুচকে তার আম্মাকে দেখে।পাগলের মতো কি বলে?শিমুল কি তাকে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে করবে?এটা কি সম্ভব?নাকি শিমুলের দিক থেকে তাকে ফিরানোর জন্যই তার আম্মা মিথ্যা বলছে।মাথা নেড়ে বললো,
“আমি বিশ্বাস করিনা।তুমি মিথ্যা বলছো।”
রোকসানা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

“এমপির ভাগনীর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।এতো বড়লোক ছেড়ে আমাদের মতো গরীবের ঘরে আসবে?”
পুষ্পর ডাগর চোখে পানি জমে।তার মায়ের মুখ দেখে মনে হচ্ছেনা মিথ্যা বলছে।চোখ ঘুরিয়ে ওরনার কোনা দিয়ে চোখ মুছে।রোকসানা বলে,

“সারা এলাকার মানুষ জানে।আর তুই কিনা এই বেইমানের জন্য আমাদের কষ্ট দিলি?”
পুষ্প বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।তার শিমুল এমন কাজ করবে কেন?গলার স্বর কেঁপে যায়।তার আম্মাকে বলে,
“তোমার ফোনটা একটু দাও শিলাকে একটা ফোন দিবো।”

রোকসানা সঠিক খবর জেনেই পুষ্পকে বলেছে।তাই তিনি ভাবলেন শিলাকে ফোন দিলে কি আসে যায় বিয়ে তো ঠিকই।ফোনটা পুষ্পকে দিলে পুষ্প ফোন হাতে উঠোনে চলে যায়।রোকসানা জানে পুষ্প আরো কাঁদবে।
পুষ্প শিলাকে ফোন দেয়।শিলা পুষ্পর ফোন ধরে।পুষ্প উত্তেজিত গলায় বলে,

“শিলা শিমুলের নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”
শিলা চুপ করে থাকে।কিভাবে বলবে?শিলার চুপ থাকা দেখে পুষ্পর বুকে ভয় নেড়ে উঠে।মনে মনে আল্লাহর কাছে বলতে থাকে সব যেনো মিথ্যা হয়।

“শিলা!”
শিলা বলে,
“আমি জানি না।”

পুষ্পর বিশ্বাস হয় না।তিয়াস শিমুলের কাছের বন্ধু সবার আগে তিয়াসের জানার কথা।শিলার প্রথমে নিশ্চুপতা এর পরে হঠাৎ করে বলা কথার মানে ধরতে পেরে পুষ্প জরজর করে কেঁদে দেয়।
“সত্যিই শিলা?”
“হ্যাঁ।আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।”

পুষ্প জোড়ে শ্বাস ফেলে,পিছন ফিরে দেখে কেউ আছে কিনা তারপর বললো,
“উনাকে ফোন দিয়ে বলবি রাত বারোটায় হিজল গাছের নিচে আসতে।আমি থাকবো।বলবি এটা পুষ্পর লাস্ট আবদার।”
পুষ্প ফোন কেটে দেয়।চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।রোকসানা আর মেয়ের কাছে যায় না।থাকুক একলা,বুঝে নিক কিসে ভালো,কিসে মন্দ।পুষ্পর বুকটা বোবা কান্নায় ভেঙে যাচ্ছে।

এতো কষ্ট হচ্ছে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা শিমুল তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বউ বানাবে।শিমুল কি সব ভুলে গেছে।পুষ্প নিজের হাতে নিজে কামড় দেয়।নিশ্চুপভাবে কাঁদে।কান্নার দমকে শরীর কেঁপে উঠে।সে শিমুলকে ছাড়া বাঁচতেই পারবেনা,তবে শিমুল পারবে।না পারলে কি আর বিয়ে ঠিক হতো?কিন্তু তার বিশ্বাস হতে চায় না,শিমুলকে যে খুব বিশ্বাস করে,তার শিমুলের উপর ভরসা আছে।তার সব কষ্ট বৃথা,ভালোবাসা বৃথা,সব বৃথা।

সন্ধ্যার দিকে শিলা ফোন করে জানায়,পুষ্প দেখা করতে চায়।শিমুল বুঝতে পারে পুষ্প অবদি খবর চলে গেছে।পুষ্পর সামনে কিভাবে যাবে?সেখানে মেয়ে হয়েই পুষ্প প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছে আর সে কিনা বিয়ের আসরে যোগ দিচ্ছে।রাগে শরীর রি রি করে উঠে।রাত দশটার দিকে শিমুল শওকত হাওলাদারের কাছে যায়।তিনি তখন ড্রয়িংরুমে বসে তার আব্বার সাথে কথা বলছিলেন।

শিমুল গিয়ে বললো,
“আব্বা এই বিয়ের কথা বার্তা এখানেই থামিয়ে দিবেন।”
শওকত হাওলাদার বললেন,
“তোমার কথা শুনতে হবে নাকি?”
“জীবনটা আমার তাই আমার কথাই প্রথম।”

শওকত হাওলাদারের রাগ হয়,শিমুল বদমেজাজী কিন্তু আজকের মেজাজ তার ভালো লাগছে না।
“বেয়াদব মুখে মুখে তর্ক করে।থাপ্পড় দিয়ে গালের দাঁত ফেলে দেবো।”
শিমুল তার আব্বার চেয়েও রেগে যায়।চিল্লিয়ে বলে,
“মারেন আর যাই করেন বিয়ে আমি করব না।আমার পুষ্পকেই লাগবে শুনেছেন?”

পুষ্পর নাম শুনে শওকত হাওলাদারের কপালের রগ রাগে ভেসে উঠে।দুই পয়সার মেয়ের জন্য কিনা চাঁদ হাতছাড়া করবে?
“আর এককবারো ওই ফকিন্নির নাম নিবিনা।ছোটলোকের বাচ্চা কোথাকার।চেয়ারম্যানের ছেলে দেখে মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছে।বে*শ্যা মেয়ে।”

শিমুল এগিয়ে এসে বললো,
” বাজে কথা বলবেন না।”
“কি করিবি বললে?”
“যে মুখে আমার পুষ্পর নামে বাজে কথা আসবে সেই মুখ ভেঙে দেবো।”

উপস্থিত সবাই শিমুলের কথায় চমকে যায়।শওকত হাওলাদার শিমুলের গালে প্রচন্ড জোড়ে থাপ্পড় দেয়।শিমুল চোখ বন্ধ করে হজম করে।তারপর দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।এই বাড়িটা তাকে শান্তি না অশান্তি দেয়।
আজকে পুষ্পর ভাগ্য ভালো রোকসানা পিছনের দরজায় তালা দেয়নি।

বারোটার কাটায় যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগে পুষ্প বেরিয়ে পরে।আজকে হয় বাঁচবে না হয় মরবে।কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সন্ধ্যা থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে উঠেছে।দ্রুত পায়ে হিজল গাছের নিচে গিয়ে দেখে শিমুলের বাইক দাড় করানো।শিমুল গাছে হেলান দিয়ে বসে আছে।

পুষ্পকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।পুষ্প শিমুলকে দেখে মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠে।সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তার না,এই বুকের শান্তি পুষ্প আর কুড়াতে পারবেনা এটা ভেবে পুষ্পর শরীরে হারানোর বিষ ব্যাথা ছেয়ে যায়।পরিনতি যদি এমন হয় তাহলে এতো মধুর সূচনার কি দরকার!ধীর পায়ে এসে শিমুলের সামনে দাঁড়ায়।শিমুল কিছু বলার আগে পুষ্প কাঁপা গলায়,থেমে থেমে বলে,

“কখন এসেছো?”
পুষ্পর কাঁপা গলার স্বর শুনে শিমুলের মন খারাপের আলাপন আরো বেড়ে যায়।আস্তে করে বলে,
“কিছুক্ষণ আগে।”

অথচ শিমুল গত দুউ ঘন্টা ধরে এখানে বসে আছে।পুষ্প মাথা উঠিয়ে তাকায়।শিমুল দেখে লাল চোখ জোড়ায় ব্যাথারা ভীড় জমিয়েছে।পুষ্প ঠোঁট মৃদু কাঁপে কথা বলার চেষ্টা করে দেখে কথা বের হচ্ছে না বহুক্ষণ পরে বললো,
“এটাও হওয়ার ছিলো?শেষমেশ তুমিই আমাকে মে*রে ফেললা?কিভাবে পারলা শিমুল?বুক কাঁপলো না?”

পুষ্প হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে।সেই কখন থেকে চোখ মুছতে মুছতে চোখের বর্ণ লাল আকার ধারন করেছে।
শিমুলের বুকটা কষ্টে কাঁমড়ে উঠে।তার পুষ্প যেনো তাকে ভুল না বুঝে।একপা এগিয়ে বলে,
“এগুলো কি বলো?”

পুষ্প কেঁদে কেঁদেই বলে,
“বিয়ে তো করতেছো।জানি সব।”
শিমুলের খুব অসহায় লাগে ঘরেও কাউকে বুঝাতে পারেনা বাহিরেও পারেনা।গলার স্বর মরে যায়।চুপ করে থাকে।শিমুলের চুপ থাকায়

পুষ্প হঠাৎ করেই চিৎকার করে বললো,
“আমি তোর জন্য কি না করেছি?প্রতিদিন মাইর খাই,বকা খাই,আব্বা আম্মার প্রিয় মেয়ে এখন চোখের বিষ,আমার সাথে কেউ কথা বলেনা।আর তুই কিনা বিয়ে করতেছিস?বেইমান।”
পুষ্পর ক্ষতবিক্ষত কথাগুলো শুনে শিমুলের চোখে পানি চিকচিক করে।এই মেয়েটা তাকে ভুল বুঝলে সে মরে যাবে।উতলা হয়ে বুঝানোর জন্য বললো,

“আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবনা।বিশ্বাস নাই আমার উপরে?”
পুষ্পর খুব বিশ্বাস আছে।জীবনের প্রতিটা পথে বিশ্বাস করতে চায় কিন্তু মেয়ে কেনো আসবে?বিয়ে কেন ঠিক হবে?আর বিয়ে ঠিক হয়েছে হয়ে যেতে কতোক্ষন।
“আমি সব শুনেছি।”
“ভুল শুনেছো।”

পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে শিমুলের বড় বড় উজ্জ্বল চোখ থেকে ফোটা ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে।তা দেখে পুষ্পও নিজের চোখের পানি মুছে বলে,
“কাঁদো কেন?”
“তুমি কাঁদো কেন?”
“হারিয়ে ফেলতেছি যে তাই কাঁদি।”
শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বলে,

“বলেছিলাম তো আমাকে বিশ্বাস করতে হবে,ভরসা করতে হবে।তা না করে উল্টো ভুল বুঝা হচ্ছে?এই মূহুর্তে তোমার সাপোর্ট না পেলে আমি শক্তি পাবো কই জান?”
পুষ্প বললো,
“বিয়ে ঠিক আর কি শুনবো?”
তারপর থেমে শিমুলের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই বুকে আমার রাজত্ব শেষ।”
শিমুল সাথে সাথে পুষ্পকে বুকে চেপে ধরে বললো,

“এই শিমুলের উপর শুধু তোর রাজত্ব।এই উলটাপালটা কথাগুলো আর বলিস না ফুল।”
তারপর একে একে শিমুল পুষ্পকে সব খুলে বলে।সব শুনে পুষ্প শিমুলের প্রসস্থ বুকে নিজেকে মিশিয়ে দেয়।তখনো চোখে দিয়ে অজোড়ে পানি পড়ছে।

শিমুল দুই হাত দিয়ে পুষ্পকে ধরে রাখে।যেন ছাড়লেই হারিয়ে যাবে।
“আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।এই বুঝি আমার শিমুল অন্যকারো হয়ে গেলো।”
শিমুল শান্ত চোখে পুষ্পকে দেখে।তারপর পুষ্পর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“শিমুল বেঁচে থাকলে পুষ্পর আর মরে গেলে তো গেলোই।”
পুষ্প শিমুলের গালে হাত রেখে বললো,

“জান এতো ভালোবাসি।”
পুষ্পর কথা শুনে শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খায়।এই মেয়েটাকে দেখলেই শান্তি লাগে।বুকটা ভরে যায়।
“এতো কাঁদে কেউ?কি অবস্থা করেছে।”
পুষ্প কান্নাভেজা মুখে হাসে।কিছুসময় দুজনেই চুপকরে থাকে।কান্না ভুলে দুজনের মুখে ফুটে মুচকি হাসি।প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে বুঝি এমনই শত কষ্টের পরেও কাছে আসলে দেখলে মন প্রান উভয়ই ঠান্ডা হয়।পুষ্প শিমুলের বুকে মাথা রেখে খুব আস্তে করে ডাকে,

“শিমুল।”
শিমুলের বুকটা সুখে ভরে যায়।
“হুম।”
“একটু শান্তি লাগবে।”
শিমুল পুষ্পর মুখটা তার দিকে করে বললো,
“শান্তি হচ্ছে না?”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“না।”

শিমুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“আর কি চাই?”
পুষ্প কথা বলেনা।শিমুলের ছাইরঙা টিশার্ট শক্ত করে ধরে।শিমুল বালিকার অব্যক্ত ইচ্ছা বুঝে নেয়।হাসে।মাথা নিচু করে বললো,
“একবার ভুলে হয়েছে বিয়ের আগে আর না।এগুলা খারাপ কাজ।”
“আজকে একটু খারাপ হই?”

কি অবুজপনা আবদার!পুষ্প নিজে এমন বলছে!শিমুল তো পুরুষ,তার উপরে পাগল প্রেমিক এমন আবদার উপেক্ষা করে কি করে?মাথা নিচু করে আফিম বক্স খুলে দেয়,পুষ্প টুপ করে শিমুলের ঠোঁটে চুমু খায়।তারপর মাথা নিচু করে বলে,”বাড়ি যাব।”
শিমুলের হাতের বাধন শক্ত হয়।নিঃশ্বাস ততক্ষণে আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।ফিসফিস করে বললো,
“নিজের শান্তি খুঁজে নিলেই কি হবে?আমারো চাই।”

পুষ্প মাথা নিচু করে।শিমুল পুষ্পর মতো করেই টুপটাপ চুমু খেয়ে বলে,
“খুব শীঘ্রই বেশী খারাপ হওয়ার রাস্তা বের করছি।”
পুষ্প কিছু বলেনা শক্ত করে শিমুলকে আবার জড়িয়ে ধরে।এতো জোড়ে ধরে যে যেন বুকেই ঢুকে যাবে।শিমুল হেসে বলে,
“বুকে ঢুকে পড়বা নাকি?”

শিমুল ফুল পর্ব ১৬

পুষ্প চুপ করে আছে।শিমুলও তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে নরম শিমুল তুলোকে ধরে বলে,
“তোমাকে বুকে নিলে এতো শান্তি লাগে কেন?সব কষ্ট দূর হয়ে নিজেকেই সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।”

শিমুল ফুল পর্ব ১৮