শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৯

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৯
নূরজাহান আক্তার আলো

-‘দেখুন আপনার জন্য মৌমাছি কামড়ে কী করেছে। ওহ নিজের ব্যথাটা ব্যথা আর আমারটা বুঝি শরীর না? আমার বুঝি ব্যথা লাগে না? কষ্ট হয় না, না?’
শুদ্ধ হতভম্ভ। ততক্ষণে দৃষ্টি আঁটকে গেছে মৌমাছির কামড়ে ফুলে লাল হয়ে থাকা শীতলের ঘাড় ও পিঠের কিছু অংশে। এসব কখন হলো? ইশ! কি অবস্থা করেছে! গাছে কী তবে মৌমাছি ছিল? মনে মনে জবাব পেয়ে এবার বুঝে নিলো শীতলের রাগ মিটানোর মূল কারণ। তাকে মৌমাছিরা কামড়েছে বলে সে সুযোগ বুঝে রাক্ষসীর মতো খামচি দিয়েছে। ভাগ্যিস বলে নি, ‘শুদ্ধ ভাই, আপনার জন্য মৌমাছিরা আমাকে কামড়েছে এখন আমি আপনাকে কামড়াব। নিন এবার ঘুরে দাঁড়ান দেখি গুনে গুনে সব ক’টা কামড় শোধ করি।’

একথা ভেবে শুদ্ধ গলা খাঁকারি দিয়ে চ্যালাকাঠ যথাস্থানে রেখে দিলো।
যা পানিশমেন্ট পাওয়ার পেয়েছে বাড়তি কিছু করলে ওভার ডোজ হয়ে যাবে। তখন আবার আরেক বিপদ। তাই একবার তাকিয়েই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। শীতল তখনো অভিযোগ করে যাচ্ছে। কেন হলো, কিভাবে কী করল সেসবই বলছে। শুদ্ধ তার কথা শুনল কী না বোঝা গেল না। তবে ভেজা চুল মুছতে মুছতে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
-‘ এ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে নে।’
উক্ত কথা বলেই ভেজা তোয়ালে মেলে দিতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। ঠান্ডা দমকা বাতাস ছুঁয়ে দিলো তার পুরুষালি শরীর। শিরশিরিয়ে উঠল লোমকূপ। ধীরে ধীরে চেপে রাখা শ্বাসটুকু ছাড়ল। বুক ভরে শ্বাস টানল। ভোরে বৃষ্টি নামবে বোধহয়। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। চাঁদ-তারকার দেখা নেই। সে টাউজারের পকেটে এক হাত গুঁজে কিছু ভাবল। একবার
রুমের মধ্যে উঁকি মেরে দেখল শীতল ড্রয়ার খুঁলে এ্যান্টিসেপটিক নিয়ে
ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে পিঠে, ঘাড়ে, এ্যান্টিসেপটিক লাগাচ্ছে। সে আর তাকাল না৷ তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করল না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘কনট্রোল’ জিনিসটাতে লাল কার্ড দেখাতে বরাবরই পারদর্শী সে। যদিও সেটা একটু একটু করে গড়ে তোলা কঠোর পরিশ্রমের ফল। এত সোজা না সামান্য কিছুতে নিজের আত্নসংযমকে পায়ে পিষে ফেলা। আবেগের বশে ভুল করে বসা। বলা বাহুল্য, রিসার্চের ক্ষেত্রে নগ্ন নারীদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যাপারে অনেককিছু জানতে হয়েছে। পড়তে হয়েছে। এমনকি নোট করতে হয়েছে। সাইন্সের স্টুডেন্টদের কাছে শুরুর দিকে ব্যাপারটা অস্বস্তিকর হলেও দিনকে দিন কাজের ক্ষেত্রে মানিয়ে নিতেই হয়। একটা সময় স্বাভাবিক হয়ে ধরা দেয়। যদি তা না হতো তাহলে নারীদের শরীরে থাকা গোপন অসুখের চিকিৎসা হতো না। আর না অসুখের প্রতিষেধক তৈরি হতো। এমনটাও না, নারীদের অসুখের মেডিসিন নারী তৈরি করে।

কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। নারী ও পুরুষরা মিলে অনেক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে
একেকটা প্রতিষেধক সৃষ্টি করে। রিসার্চ করে দেখে কতটা কাজে দেবে।
কতটা উপকারী। মোটকথা, সে ভালো করে জানে শীতল চঞ্চল। অশান্ত মাথামোটা। কোনো কিছুই ভেবে করে না। একবারও ভাবে না বোকামির কাজ কী রুপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন সেদিনই বোকামি করে ফোন তার কামিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। অন্যকেউ হলে এমনটা করত? করত না। বরং দশবার ভাবত। সেদিনের মতো আজকেও আচমকা তার
কামিজের চেইন খুলে দাঁড়িয়ে গেছে তার সামনে। একবারও ভাবে নি যে সে আগের ছোটো শীতল আর নেই। এখন হাতে পায়ে বেশ বড় হয়েছে। শরীরে পরিবর্তন ধরা দিয়েছে। এখন আর এসব বোকামি চলে না। কিন্তু মেয়েটা বুঝলে তো? এসব আবার সায়নের কাছে করে না। সে সায়নের কাছে সমস্ত গোপন কথা জমা রাখে। এমন সব গোপন কথা তাদের মুখে বোম পড়লেও কেউ বলবে না। আর না তাদের দেখে কেউ টের পাবে না।

অথচ সে এত মারে। বকে। তবুও তার কাছে উদ্ভট কর্মকান্ডগুলো করে।
যদিও এসবে অভ্যাস হয়ে গেছে আজকাল। এজন্য বোধহয় অন্তবার্সের কালো ফিতা দেখেও তেমন কিছু মনে হয় নি। হচ্ছে না। বরং স্বাভাবিক।
সব স্বাভাবিক! এর কারণও হতে পারে কঠোর আত্নসংযম।তবে একদিন নির্দিষ্ট কারো প্রতি সমস্ত কনট্রোল হারাবে। বাঁধা, নিষেধের দুয়ারে তালা লাগিয়ে বদ্ধ উন্মাদ হবে। এতটাই উন্মাদ হবে যা কেবল সেই নারীই তার উন্মাদনায় মাতাল হবে, কাতর হবে। ছটফটিয়ে কান্নারত স্বরে অভিযোগ ছুঁড়বে, ‘আপনার নামের মতো আপনি শুদ্ধ পুরুষ নন। আপনি অশিষ্ট ও অসভ্য পুরুষ।’
এদিকে শীতল এ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে কামিজের চেইন আঁটকে নিলো।

বিকাল থেকে যা ঘটেছে এসবের মূল হোতা ওই শুদ্ধ। সে মূল অপরাধী। যার প্রমাণ রয়েছে তার গায়েও। এতকিছুর পরেও একটা সরি বলল না। কেন বলল না, হুম? বলতেই হবে। সে ভুল করলে তাকে ছাড়ে না। বরং চ্যালাকাঠ দিয়ে মেরে আধমরা করে দেয়। আজ সে ভুল করেছে অর্থাৎ তাকে সরি বলতেই হবে। না বললেই আগামীকাল এমনকিছু ঘটাবে তার
জন্য ওই বিশুদ্ধ পুরুষই দায়ী থাকবে। এসব ভেবে গুঁটি গুঁটি পায়ে গিয়ে দাঁড়াল বেলকনিতে। বেলকনির লাইট অবধি জ্বালায় নি পাষাণ মানব। ঘুটঘুটে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কোন রাজ্যের রাজ্যপাঠ চালাচ্ছে কে জানে।
তার উপস্থিতি টের পেয়েও তাকাল না শুদ্ধ। পূর্বের ন্যায় একই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে শীতল একটু পর পর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিক। গাছগুলোকে দেখতে দানবের মতো লাগছে। যেন এই বুঝি মাথা তুলে হাউ মাউ করে তেড়ে ফুঁড়ে আসবে।

আশপাশের কোথাও একটা পেঁচা ডাকছে। কি অদ্ভুত স্বর! সেই মুহূর্তেই কারেন্ট চলে গেল। বাতাসের গতি বাড়ল। ঝড় উঠছে। চোখের পলকেই বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আঁছড়ে পড়ল মাটির বুকে। শান্ত হতে লাগল উতপ্ত মাটির বুক। ছড়াল সোঁদা মাটির গন্ধ। শীতল আশপাশের গাছগাছালির দিকে তাকাল না। বরং একটু সরে গেল। ভয়ে মুখ চুপসে গেছে। কখন না জানি তেনাদের চোখে চোখ পড়ে যায়? আচ্ছা যদি সত্যি সত্যিই চোখে চোখ পড়ে যায় তাহলে কী করা উচিত? লাজুক মুখে হাসা উচিত নাকি ভয়ে জ্ঞান হারানো উচিত? কি করবে সে? কোনটা করলে ভালো হবে?
এসব ভেবে পরক্ষণেই ভাবল, আরে ধূর, পাশে শুদ্ধ ভাইয়ের মতো এক ষাঁড়মার্কা তেনা(ভূত) থাকতে এক ভয় কিসের? একথা ভেবে মুখ টিপে হাসল। তারপর গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁতেই মন ভালো হয়ে গেল। ভুলে গেল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। মুখভর্তি হাসি নিয়ে মিষ্টি করে ডাকল,

-‘শুদ্ধ ভাই?’
-‘ যা করতে বলেছি করে বিদায় হ।’
কর্কশ কন্ঠে কথাটা বলতে দেখে শীতলের মুখের হাসি নিভে গেল। মলিন মুখে তাকাল পাশে দাঁড়ানো বর্বর মানবটার দিকে। সবসময় খ্যাক খ্যাক করে কেন? একটু ভালো করে বললে কি হয়? ততক্ষণে জেনারেটর অন
হয়ে গেছে। ঝকঝকে আলোয় ভরে গেছে শুদ্ধর রুম। তাই সে বলল,
-‘রুমে চলুন।’
-‘রুম কি তোর বাপের? নাকি তোর শশুড়ের যে তোর কথামতো রুমে যেতে হবে?’
-‘বড় আব্বুকে বলে দিবো কিন্তু আপনি অকারণে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।’
-‘আমিও বলব যখন তখন আমার রুমে এসে আমাকে বিরক্ত করিস!’
-‘কই যখন তখন আসি? এখন এসেছি কারণ আপনার কারণ মৌমাছির কামড় খেতে হয়েছে। যা করেছেন তা দেখবেন না?’

-‘আমি করেছি? আমি করলে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় থাকতি? কথা বাড়াস না রুমে যা।’
-‘রুম কি আপনার বাপের? নাকি আপনার শশুড়ের যে আপনার কথামতো রুমে যেতে হবে?’
একথা বলে সে নিজেই খিলখিল করে হেসে হাতের পানি ছুঁড়ল শুদ্ধর দিকে। এবার শুদ্ধর মেজাজ বিগড়ে গেল। সে শক্ত হাতে শীতলের লম্বা বেনুণি হাতে পেঁচিয়ে টান দিতেই শীতল ব্যথাতুর শব্দ করে উঠল। চুল ছাড়াতে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগল। তখন শুদ্ধ হাতের বাঁধনে দ্বিগুন চাপ প্রয়োগ করে বলল,
-‘এত জ্বালাস কেন আমাকে? কি সুখ পাস আমাকে জ্বালিয়ে?’
-‘উফ! লাগছে শুদ্ধ ভাই। ছাড়ুন।’
-‘ আর জ্বালাবি?’
-‘জ্বালাব!’

একথায় শুনে হাতের মুঠ আর একটু শক্ত করতেই শীতল ও মাগো করে
কেঁদে উঠল। আর জ্বালাবে না বলে কথা দিলো। তখন শুদ্ধ চুল ছাড়ল। ছাড়া পেয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে রুমে চলে গেল শীতল। একে একে ছড়ানো জামা কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখল। পূর্বের ন্যায় সব পারফিউমের কৌটা গুলো থরে থরে সাজাল।এবারের পারফিউমের বোতলগুলোর ডিজাইন অন্যরকম সুন্দর। সবগুলো বোতল কাঁচের অফ হোয়াইট কালার বিধায় লাইটের ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। সে সাজাতে সাজাতে প্রতিটা পারফিউম নিজের গায়ে স্প্রে করেছে। সুগন্ধ শুঁকছে। সব ক’টা মিলিয়ে অদ্ভুত সুগন্ধ বের হচ্ছে শরীর থেকে। এসব করতে করতেই হঠাৎ স্মরণ হলো উপন্যাসের প্রিয় উক্তিটার কথাটা। বিরবির করে একবার আওড়ে নিলো,
‘কাউকে জীবন্ত লাশ বানাতে চাও? তবে তার সবাঙ্গে তীব্র ভালোবাসার জীবাণু ছড়িয়ে দাও। রন্ধে রন্ধে তুমি নামক রোগ ছড়িয়ে দাও। তোমার নাম তার মনকুঠুরিতে খোদাই করতে বাধ্য করো। যদি করো, দেখবে সে মরবে না তবে ভালোও থাকবে না। প্রাপ্তি হিসেবে দেখবে পুরো মানুষটাই তোমার দখলে। তোমার আয়ত্তে। ‘
মনে মনে একথা আওড়ে সে উঁকি মেরে দেখল শুদ্ধকে। দুই পকেটে হাত গুঁজে এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। অশান্ত পুরুষ শান্ত হওয়ার কারণ বুঝল না সে। তার জানামতে এতটাও বৃষ্টিপ্রেমী না শুদ্ধ ভাই, তবে? এই নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করল না শুধু চেঁচিয়ে বলল,

-‘আরেকটা ট্রলি কোথায়? কই খুঁজে পাচ্ছি না তো শুদ্ধ ভাই?’
শুদ্ধ এসে ট্রলি বের করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসল। ফোন স্কল করতে করতে হাসানের মেসেজ এলো। তার বউটা জব্দ হয়েছে। আগের মতো খারাপ ব্যবহার করছে না। বরং স্বামীকে চোখে হারাচ্ছে।মেসেজটা ফ্রেন্ডদের চ্যাট গ্রুপে বলায় মজা করা শুরু হয়ে গেল। হাসানকে পঁচাচ্ছে সবাই। বেবি নিয়ে নেওয়ার বুদ্ধি দিচ্ছে। কেউ বিনামূল্যে টিপস্ও দিলো।
শুদ্ধ বন্ধুদের মশকরা দেখে হাসল শুধু। এদিকে কার্পেটের উপরেই বসে পড়েছে শীতল। ট্রলির চেইন খুলে দেখছে কী কী এনেছে। তার পছন্দের চকলেট দেখে চটজলদি মুখ পুরলো।আরো দুটোর খোসা ছাড়িয়ে পাশে রাখল। তারপর খচমচ করে চিবাতে চিবাতে তিনটে একই রকম লেডিস ওয়াচ দেখে বুঝল ওদের তিনবোনের জন্য। এত চমৎকার স্মার্ট ওয়াচ! তবে তিনটের মধ্যে কোনটা নিবে বুঝতে উঠতে পারল না। তাই তিনটেই শুদ্ধর সামনে নিয়ে গেল। একবার ওয়াচগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকাল। তারপর খুশিতে গদগদ হয়ে শুধাল,

-‘আমার কোনটা শুদ্ধ ভাই?’
-‘ একটাও না। তিনটের মধ্যে দুটো শখ আর স্বর্ণের জন্য। আর একটা..!’
-‘আর একটা?’
-‘ ঐশ্বর্যের।’
-‘ঐশ্বর্য কি আপনার বোন লাগে?’
-‘আমি বলেছি সে আমার বোন?’
-‘বোন না তো একই রকম ওয়াচ নিলেন কেন?’
-‘এর কৌফিয়ত তোকে দিতে হবে? তোর যা নেওয়ার নিয়ে বিদায় হ।’
একথা শোনামাত্রই শীতলের হাসি মিলিয়ে গেল। অন্ধকার নেমে এলো
স্নিগ্ধ মুখজুড়ে। তিনটে ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে ফিরে গেলে ট্রলির কাছে। ঘড়িগুলো আগের স্থানে রেখে ট্রলির চেইন আঁটকে উঠে দাঁড়াল।
খোসা ছাড়ানো চকলেটটা ছুঁড়ে মারল কার্পেটের উপর। অপমানে পুরো মুখ থমথম করছে। তখন শুদ্ধ বলল,

-‘কি হলো নিলি না?’
-‘লাগবে না। দরজা খুলে দিন।’
-‘ হঠাৎ কি হলো? মুখ চুপসে গেল কেন? কিছুই পছন্দ হয় নি?’
-‘অনেক রাত হয়েছে কাল নেবো।’
-‘পেটে পেটে হিংসে কেন তোর? মন পরিষ্কার কর।’
-‘আমি খারাপ তাই আমার মন মানসিকতা খারাপ। কথা বাড়াবেন না দরজা খুলুন।’
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সে উঠছে না দেখে শীতল একের পর এক ভুল পার্স ইন করতে লাগল। শুদ্ধ উঠে এক হাত টেনে দরজা থেকে সরাতেই শীতল চেঁচিয়ে বলল,
-‘সব সময় সবকিছু ভালো লাগে না। যেতে দিন।’

-‘বস। ভুল পার্সে দরজা লক হয়ে গেছে। একটু পর নিউ পার্স ইন করলে দরজা খুলবে।’
একথা শুনে শীতল বসল। মেঝের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কিছু। সে হঠাৎ মুখ তুলে তাকাল। বিছানায় আধশোয়া শুদ্ধর আপাদমস্তক দেখল। কিছু চিন্তা করল। কিয়ারা প্রায়ই বলে শুদ্ধ ভাই সুর্দশনের সেরা। তার পার্ফেক্ট হাইট, চোখ, নাক, ঠোঁট, কথা বলার ভঙ্গিমা, হাঁটার স্টাইল, পোশাকের ধরনে অভিজাত্যের ছাপ। আসলেই কি তাই? যদিও খেয়াল করা হয় নি। সময়ই বা কোথায়?কারণে অকারণে ধমকের উপর রাখলে খেয়াল করা সম্ভব? তাছাড়া শত্রুকে কেউ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে? এই চৌধুরী বাড়িতে অঘোঘিতভাবে তার একটাই শত্রু, শোয়াইব শুদ্ধ। কথা বলার ইচ্ছে না থাকলেও থমথমে কন্ঠে বলে বসল,

-‘আপনি কি ঐশ্বর্যকে ভালোবাসেন।’
-‘সে তোর অনেক বড়। সন্মান দিয়ে কথা বল। নয়তো চ্যালাকাঠ তোর পিঠে ভাঙ্গব বেয়াদব।’
-‘(…..)’
-‘ভালোবাসার কি বুঝিস তুই?’
-‘বুঝি না বলেই তো বুঝতে চাই?’
-‘বুঝতে হবে না। তাছাড়া কাকে ভালোবাসি না বাসি এর কৌফিয়ত তোকে দেবে না।’
-‘কেন দিবেন না?’
-‘কেন দিবো? তুই কে?’
-‘আমি কেউ না?’
-‘না।’
-‘সত্যি কেউ না?’
-‘বললাম তো না।’
একথা বলে শুদ্ধ উঠে দরজায় নিউ পার্স ইন করে বলল,
-‘ বের হ।’
অভিমানী চোখে তাকিয়ে শীতল রুম থেকে বেরিয়ে গেলে শুদ্ধ স্বজোরে
দরজা আঁটকে দিলো। বিরবির করে বকতে বকতে শুয়ে পড়ল। বকবক করে মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছে ফাজিলটা।

পরেরদিন সকালবেলা,
ঘড়িতে সকাল আটটা। খাবার টেবিলে বসেছে বাড়ির সবাই। বড়রা গল্প করছে। গিন্নিরা খাবার পরিবেশন করছে। কিন্তু বাড়ির কনিষ্ঠ তিন সদস্য শীতল, সাম্য, সৃজন মন খারাপ করে চুপ করে বসে আছে। একটুপরেই শুদ্ধ এসে চেয়ার টেনে বসল। তার উপস্থিতি বুঝেও শীতল তাকাল না।
আর না কোনো কথা বলল। তারপর সায়ন এলো। গা ঘেঁষে বসে পড়ল স্বর্ণের পাশে। অতি সন্তপর্নে স্বর্ণের একটা হাত গুঁজে নিলো তার হাতে।
স্বর্ণে জানে হাত ছাড়ানো সম্ভব নয় তাই অযথা বৃর্থা চেষ্টা করল না। বরং মুচড়ামুচড়ি করলে অন্যের নজরে পড়ার সম্ভবনা আছে।

শারাফাত চৌধুরী তখন সাওয়ান চৌধুরীর সাথে জরুরি ব্যাপারে কথা বলায় ব্যস্ত। এদিকে এখনো খেয়াল করেন নি। তবে সিঁতারার ইশারায় তাকালেন অভিমানে পূর্ণ তিনটে মুখপানে। গলা খাঁকারি দিলেন। তবুও তাকাল না উনার বাগানের তিনটে ফুটফুটে ফুল। বুঝলেন গুরুতর কিছু।
তাই আদর দিয়ে ডাকলেন। প্রিয় বড় আব্বুর ডাক উপেক্ষা করার সাহস নেই কারো। তাই সাম্য টেবিলে থুতনী রেখে অভিমানী স্বরে জবাব দিলো,
-‘আমরা বুঝে গেছি তুমি আমাদেরকে আর ভালোবাসো না বড় আব্বু।’
-‘একথা কেন মনে হলো বাবা?’
এবার সৃজন জবাব দিলো,
-‘আমরা তোমার একটা কাজে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি বড় আব্বু।’
-‘কি কাজে কষ্ট পেয়েছো বলো আমাকে? না বললে বুঝব কি করে?’

এবার শীতল মুখ তুলল। সবাইকে একবার করে দেখে নিয়ে টেবিলের নিচ দিয়ে সাম্যকে টিমটি কেটে আসল প্রসঙ্গে কথা বলার ইঙ্গিত দিলো। বোনের ইঙ্গিত পেয়ে সাম্য কন্ঠে এক আকাশ সমান দুঃখে ঢেলে বলল,
-‘তুমি নাকি আজকের দিনে বড় আম্মুকে বিয়ে করেছিলে। অথচ আমাদেরকে কাউকেই নিয়ে যাও নি। কেন বড় আব্বু?’
সাম্যের কথা শুনে বড়দের হাত থেমে গেছে। বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাম্যের দিকে। সাম্যের কথা শেষ হতেই পুনরায় সৃজন বলল,
-‘আমরা গেলে খুব মজা করতে পারতাম। কিন্তু কেন নিয়ে গেলে না আমাদের?’
সাম্য, সৃজনের কথা শুনে সায়ন মিটিমিটি হাসতে হাসতে বাবার দিকে তাকাল। শারাফাত চৌধুরীর চোখ, মুখে অস্বত্বি ফুটে উঠেছে। জবাবে কি বললেন সেটাই চিন্তা করছেন বোধহয়। সিঁতারা চৌধুরী তরকারী আনার ছুঁতোয় রান্নাঘরে চলে গেলেন। বাবা-মার অবস্থা দেখে সায়নের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো। বাবার থেকে একটানা গাল মন্দ খেতে খেতে অরুচি এসে গেছে। এই সুযোগে বাবাকে ফাঁদে ফেলার বাঁশ রেডি করে ফেলেছে৷ এদিকে সাম্য, সজৃন এখনো জবাবে আশায় শারাফাত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আরেকটু উস্কে দিতে সায়ন কিছু বলার আগে শীতল মলিন মুখে বলল,

-‘আমরা ছোটো বলে কেউ আমাদের গুরুত্ব দেয় না। এতদিন জানতাম বাড়ির কেউ ভালো না বাসলেও বড় আব্বু আমাদের ভালোবাসে। কিন্তু আজ জানলাম বড় আব্বুও আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।
আর কিছু বলার নাই। আহ্ কষ্ট!’
এবার তাদের কথার সুর ধরে সায়নও হতাশার সুর ধরে বলল,
-‘তোরা ছোটো। আমি তোদের সবার বড় তাইই আমাকে সাথে নেয় নি। আসলে এই পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই রে। থাক কষ্ট পাস না। আমার বাপের বিয়েতে রোস্ট খেতে পাস নি তো তাতে কী, বল? আমার বিয়েতে তোদের ডাবল রোস্ট খাওয়াব।’
সৃজনের প্রতিবাদী স্বর,
-‘না। আমি বড় আব্বুর বিয়েরই রোস্ট খাব।’
সাম্যেরও একই কথা,
-‘আমিও।’

এদিকে সিরাত, সিমিন, শখ, সাওয়ান চৌধুরী পারছে না হেসে মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে। দম ফাঁটা হাসি চেপে রাখাও কত যে কষ্টের হারে হারেই টের পাচ্ছেন উনারা। ছেলের কথা শুনে শারাফাত চৌধুরী কপাল কুঁচকে তাকালেন। বেয়াদবটা কী বলছে এসব? কোথায় ছোটো ভাই-বোনদের বুঝিয়ে সুজিয়ে প্রসঙ্গ বাদ দিবে তা না। সে নিজেই আরো উস্কে দিচ্ছে। বড় আব্বুর বিয়েতে সায়ন ভাইয়াও ছিল না শুনে ছোটোরা আরেকদফা হতাশ হলো। কষ্ট পেল। নাস্তার প্লেটও দূরে ঢেলে দিলো। খাবে না তারা।
মনের দুঃখে আজ সারাদিন না খেয়ে থাকবে। শারাফাত চৌধুরী কাতর চোখে সহধর্মিনীকে মুখ টিপে হাসতে দেখে হতাশ হলেন। এবার উপায়?

কিভাবে এদের বলবে উনি বিয়ে করেছিলেন বলেই সায়ন, শুদ্ধ, শখ এ পৃথিবীতে এসেছে। বিয়েটা জরুরি। কারণ বিয়ে না করলে তারা পৃথিবীর মুখ দেখত না। উনি সিঁতারাকে ইশারা করলেন বাঁচিয়ে দিতো। বিনিময়ে যত খরচ করা লাগে করবেন। এছাড়া উপায় নেই। বাড়ির ছানাপোনারা আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছে বুঝতে বাকি নেই। তবে উনাদের কাউকেই কিছু বলতে না দিয়ে শেষ বোমটা ফাটাল শুদ্ধ। শারাফাত চৌধুরীকে আরেক দফা বিষ্ময়ের সাগরে চুবিয়ে ভাইবোনদের উদ্দেশ্যে বলল,
-‘কে কে বিয়েতে যাস নি কাউন্ট কর।’

শুদ্ধর কথা শুনে সবার আগে হাত তুলেছে সিরাত। আবেগে হাত তুলে বেচারী লজ্জায় মুখ কাঁচুমাচু করছে। উনাকে লজ্জা থেকে বাঁচল সায়ন। সে সিমিনকে হাত তুলতে ইশারা করল। সিমিন হাত তুলে সায়নের দিকে তাকাল সায়ন মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ সেও যায় নি। তারপর শুদ্ধর দিকে তাকাল শুদ্ধ তাকাল শখের দিকে। শখ তাকাল স্বর্ণের দিকে। স্বর্ণ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল শীতলের দিকে। শীতল তাকাল সাম্যের দিকে আর সাম্য তাকাল সৃজনের দিকে। সজৃন তাকাল পাশের ফাঁকা চেয়ারে। কেউ নেই দেখে তাকাল বড় আব্বুর দিকে তাকাল। এবার উনার মুখ দেখার মতো হয়েছে। কাউন্ট করে দেখা গেল না যাওয়ার সংখ্যা বেশি। এবং সকলেই উনাদের বিয়েতর এটেন্ড করার তীব্র ইচ্ছের কথাও জানিয়েছে। অর্থাৎ ছেলে মেয়েদের অনুপস্থিতিতে মাকে বিয়ের করার পনিশমেন্ট হিসেবে মা-বাবার আবার বিয়ে দেওয়া হবে। এবারে সাক্ষী হবে ছেলের মেয়েরা। একথা শুনে শারাফাত চৌধুরী নাকচ করে গুরু গম্ভীর সুরে বললেন,

-‘ পাগলে হলে তোমরা? ছেলেমানুষী বাদ দাও অন্যকিছু ভাবো।’
একথা শুনে শুদ্ধ গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জবাব দিলো,
-‘সাম্য, সৃজন তোরা তাহলে জেনে নে কেন আমাদেরকে বিয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল? না বলা অবধি ছাড়বি না। অন্যায় করেছে, কেন করেছে, এর জবাব দিতেই হবে।’
আরেক ফাজিলের কথায় শারাফাত চৌধুরীর মনে হলো দেওয়ালে মাথা ঠুকতে। এতদিন খাইয়ে পড়িয়ে এক একটা বাঁশ তৈরি করেছেন। এখন কারণে অকারণে সেই বাঁশ নিজেকেই হজম করতে হচ্ছে। সিঁতারা সেই কক্ষণ লজ্জা থেকে বাঁচতে রান্নাঘরে চলে গেছেন আর বের’ই হোন নি।
ছেলে মেয়েদের সাথে না পেরে শারাফাত চৌধুরীকে রাজি হতেই হলো।
উনি কোনোমতে নাস্তা সেরে উঠতেই সায়ন বলল,

-‘ বাবা একটা রিসোর্ট বুক করে ফেলি? সেখানে বিয়ে বাসরের ব্যবস্থাও থাকে।’
-‘আহাম্মক কোথাকার। ‘
একথা বলে উনি দ্রুতপায়ে স্থান ত্যাগ করলেন। তবে যেতে যেতে ঠিকই শুনলেন অট্টহাসির শব্দ। বাবাকে তড়িঘড়ি যেতে দেখে সায়ন সকলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘বাবাকে বাঁশ দেওয়ার বুদ্ধিটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে হাত তুল। সে গিফ্ট পাবে।’
একথা শুনে শীতল গদগদ হেসে এক হাত তুলল। ভোররাতে তার স্মরণ হয়েছে আজ বড় আব্বু ও বড় বড় মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। কোনোবারই জাঁকজমকভাবে কিছু করা হয় না। কারণ শারাফাত চৌধুরী পছন্দ করে না। এজন্য সেই সাম্য আর সৃজনের মাথায় একথা ডুকিয়েছে যে তাদের বড় আব্বু তাদের ভালোবাসে না। ভালোবাসলে কেন উনাদের বিয়েতে নিয়ে গেল না? ব্যস, বাকিটা ইতিহাস!

আজ রাতে সেহরী খেয়ে কালকে থেকে রোজা। তাই আজ দুপুরে বিয়ের কাজ সারা হবে। বাড়িতে বিয়ে বিধায় আনন্দের সীমা নেই। তবে বিয়ের খাওয়া-দাওয়া হবে রিসোর্টে। ইতিমধ্যেই তিনঘন্টার জন্য রিসোর্ট বুকিং করেছে সায়ন। তারই এক বন্ধুর রিসোর্ট বলে হয়েছে। তিনঘন্টার মধ্যে কাজ সারতে হবে সন্ধ্যায় আবার আরেকজনের গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান হবে। বাড়িতে এত আনন্দ দেখে শীতল খুশিতে ডগমগ হয়ে কল করল শাহাদত চৌধুরীকে। হাসতে হাসতে জানাল পুরো ঘটনা। অতঃপর কথার মাঝে থেমে গিয়ে ধীরে ধীরে বলল,

-‘তুমি আসবে না বাবা?’
-‘না মা। তোমরা মজা করো।’
-‘কাউকে বলে দেখো না বাবা কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও এসো।’
-‘তোমরা মজা করো মা। আমি দূরে থেকেও তোমাদের সাথে আছি।’
-‘বিশেষ দিনগুলো তোমাকে কাছে পাই না কেন বাবা? মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় তোমার চাকরির প্রতি। দায়িত্বের প্রতি। এই দায়িত্ব দায়িত্ব করে আমাদেরকে সময় দাও না তুমি।’
শাহাদত চৌধুরী মেয়ের ছলছল চোখ দেখে নিঃশব্দে হাসলেন। এ নতুন কিছু না। বিশেষ দিনগুলো বাবাকে কাছে না পেলে মেয়েটা এভাবেই অভিযোগ করে বসে। স্বর্ণ বুঝদার। শীতলের মতো যখন তখন আবদার জুড়ে বসে না। তবে মাঝে মাঝে তার চোখজোড়াও বলে ‘ও বাবা এসো।’
কিন্তু আবেগে পড়ে দায়িত্বের অবহেলা কখনো করেন নি করবেনও না।।এতে মৃত্যু সই। বাবা আসবে না জেনে শীতল মুখ ভার করে ফোনটা তার মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।

সারাদিন বিয়ের ঝামেলা শেষে ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরেছে সবাই। শুদ্ধর সাথে সায়নের কিছু একটা নিয়ে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে সায়ন ভাইয়ের কথায় হেসেছে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা তার। ভাইকে হাসতে দেখে শুদ্ধ রাগে জেদে সবার আগে রিসোর্ট থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়েও রাগে গা কাঁপছে। এর কারণও শীতল। সব দোষ ওই বেয়াদবটার। আজ সারাদিন
তাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। আর এসব ভুলভাল কাজে ওকে উস্কে দিয়েছে
সায়ন। ভালোবাসার জীবানু টীবানু বলে আজাইরা সব যুক্তি দিয়ে ব্রেণ ওয়াশ করেছে গাধীটার। ক’দিন ধরেই হচ্ছে এসব। মাথামোটা গাধীটাও সেসব ব্রেণে ঢুকিয়ে তাকে জ্বালাচ্ছে। যখনই শীতলের দিকে তাকিয়েছে তখনই দেখে শীতল আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। মানে হয় এসবের?

সে সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখে শীতল বিছানায় বসে আছে। পরনে অনিয়ন কালারের শাড়ি। খোলা চুল। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। দুপুর থেকে মাথায় হিজাব পরা থাকলেও এখন এলোচুল।
ওকে দেখেই শুদ্ধ খাটের নিচে থাকা চ্যালাকাঠটা নিয়ে এক বারি বসিয়ে দিলো শীতলের বাহুতে। শীতল ‘উফ মা’ বলে কঁকিয়ে উঠল। অন্যসময় হলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠত। কিন্ত এখন কাঁদার তো দূর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তারই পায়ের পাতার উপর উঠে দাঁড়িয়েছে। চোখে ভয়ের লেশমাত্র নেই। শীতলের পাগলামি দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুদ্ধ। কেবল শাওয়ার নিয়েছে তারপরেও দরদরিয়ে ঘামছে সে।

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৮

কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সরু চিকন ঘাম। তার পায়ের পাতার উপর দাঁড়ানো শীতলকে বড্ড বেশি অচেনা লাগছে। চোখে অন্যরকম চাহনী। ঠোঁটে যেন সর্বনাশা কিছুর ইঙ্গিত। তবে সে কিছুতেই এসবে প্রশ্রয় দেবে না। তাই শীতলকে স্বজোরে ধাক্কা দেওয়ার আগেই শীতল শুদ্ধর কাঁধ শক্ত করে আকঁড়ে ধরল। অতঃপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুদ্ধর কানের দুই ইঞ্চি নিচে নরম মাংসে চুমু এঁকে বসল। হঠাৎ ই নরম ওষ্ঠ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠল শুদ্ধর সর্বাঙ্গ। চোখে, মুখে স্তম্ভিত ভাব। কেবলই কী ঘটল তা বুঝে ওঠার আগেই শীতল ফিসফিস করে বলল,
-‘শুদ্ধ ভাই? আপনার নামে যদি দু’একটা কলঙ্ক মাখি আপনি কি রাগ করবেন, হুম?’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩০