শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩০

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩০
নূরজাহান আক্তার আলো

ঘড়িতে তখন বেলা এগারোটা,
থমথমে মুখে বাড়ির বড় কর্তা শারাফাত চৌধুরী বসে আছে বিলাশবহুল সোফায়। পরনে সাদা পাজামা-পাজ্ঞাবী। চোখে, মুখে একরাশ বিরক্তি।
উনি একই স্থানে বসে আধাঘন্টা যাবৎ দেখে যাচ্ছেন অন্যসব সদস্যের হুঁটোপুঁটি। এটা ওটা নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেঁচি। বাবা-মায়ের বিয়েতে তার ছেলে-মেয়েরা আদৌও বরযাত্রী রুপে গিয়েছি কী না জানা নেই উনার। হয়তো চৌধুরী বাড়িতে এই ঘটনা বিরল। যদিও এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ এ বাড়িতে একেক পন্ডিতের বসবাস। এরা নিজেরা একেক টা নিউটন কিংবা আলবার্ট আইনস্টাইন। নতুবা এ বয়সে বাবাকে নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসায়? নাকি এসব অত্যাচার করে? এখানে উনিই বর। অথচ উনার মতের দাম নেই। কিছু বলার সুযোগ নেই। কিছু বলতে গেলে বড় দামড়া দুটো ঠিকই পাল্টা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। নতুবা অবুজ বাচ্চাগুলোকে ভুলভাল বুঝিয়ে আরো উস্কে দিচ্ছে। তারা মূলত চাচ্ছেই উনাকে অস্বস্তিতে ফেলতে। বড় গাধা কিছুক্ষণ আগে বলেছে, ‘সে নাকি ভালো বাবা ডিভার্জ করে।’ তার মায়ের উচিত ছিল জেনেবুঝে একজন ভালো মানুষকে বিয়ে করা।’ একথা দ্বারা বোঝাল উনি ভালো মানুষ না।

ছেলের কথা শুনে শুধু চিৎকার করে বলতে পারেন নি, ‘এ্যাই বেয়াদব, তোকে পয়দা করলাম আমি। বড় করলাম আমি। পড়ালেখাও শেখালাম আমি। অথচ এখন তুই আমাকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বাঁশ দিচ্ছিস! এই তোর শিক্ষা!’
কিন্তু বুকের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন নি কিছুই। পারবেন কিভাবে? ছেলের মতো বেহায়া নাকি উনি? ব্যাপারটা এখানে থামলেও হতো। তা অবশ্য থামে নি। বাড়ির বউরা শতরুপাকেও ঘটনাখানা জানিয়েছে। এই মাত্রই শতরুপা দ্বিতীয় বিয়ের জন্য অভিনন্দন জানাল। সেও নাকি গেস্ট নিয়ে রিসোর্টে ভাইয়ের বিয়ে খেতে যাবে। ছিঃ! ছিঃ! এসব কী সহ্য হয়? তাছাড়া লোকে কী বলবে? সামনে না বলুক পেছনে তো ঠিকই বদনাম করবে। বলবে, বুড়ো বয়সে ভীমরতি। ছেলের বিয়ে দেওয়ার বয়সে উনি নিজেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। একটুপরেই সূর্যোদয় রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে উনারা। অথচ বাড়ির মেয়ে বউয়ের সাজগোজ শেষ হয় নি।
যে যার মতো সময় নষ্ট করছে অথচ কিছু বলতেও পারছেন না। কারণ একবার বলতে গিয়ে কনিষ্ঠ বিচ্ছু সাম্যের কথায় অপদস্থও হতে হয়েছে। তাই ভেবেছেন কিছুই বলবেন না। বললেই তখনকার মতো শুনতে হবে ‘বিয়ের জন্য বড় আব্বুর তর সইছে না।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শীতল, শখ, স্বর্ণ তিনবোন এক রুমে রেডি হচ্ছে। স্বর্ণ শখের শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছে। তারা তিনবোনই শাড়ি পরবে। কালার আলাদা হলেও এক কোয়ালিটির শাড়ি সব। সঙ্গে মেচিং হিজাব। এদিকে শীতল এখনো মুখ ভোঁতা করে চুপ করে বসে আছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণিকেঁদে দেবে।কারণ তার একচোখের আইলাইনার মোটা তো আরেক চোখেরটা ত্যাড়া বাঁকা, এবড়োথেবোড়ো। তখন সৃজন না জ্বালালে এমন হতো না।
পাজিটাকে বার বার বারণ করা সত্ত্বেও তাকে নড়িয়েছে। ফলস্বরুপ কষ্ট বৃথা। এখন মুছতে গিয়ে পুরো মুখি কালি হয়ে গেছে। শীতল মুখ কাঁদো কাঁদো করে আয়নায় নিজেকে দেখল। ভূতের মতো দেখাচ্ছে। হুট করে কারো সামনে দাঁড়ালে নির্ঘাত অক্কা পাবে। নিজের করুণ অবস্থা দেখে শীতল দুঃখভরা কন্ঠে শখকে ডাকল। বলল,

-‘আপু, আইলাইনার ঠিক করে দাও। ‘
-‘এই তো সোনা আর একটু দাঁড়া হয়ে গেছে আমার। তার আগে ঝটপট মুখ ধুয়ে আয় দেখি।’
শখের কথা শুনে শীতল ওয়াশরুমে গিয়ে পুরো মুখ ধুয়ে এলো। গরমের যে অত্যাচার মেকাব করার ভুল করা যাবে না। তাছাড়া শুদ্ধ ভাই আছে। সে নিরামিষ টাইপের পুরুষ মানুষ মেকাব টেকাব পছন্দ করে না। দেখা যাবে মুখের উপরেই বলে বলবে, ‘এ্যাই তুই অন্য গাড়িতে যা। এমনিতেই ওয়েদার গরম। তোর মুখের এত আটা ময়দা দেখে আরো গরম লাগছে।’

মানুষটার মুখের লাগাম নেই যাতা বলে অপমান করে বসতে পারে। সেই সুযোগে থাকে বোধহয়। শাড়ির সাথে হিজাবও তো পরতে হবে। নয়তো এক আছাড়ে নাড়িভুড়ি বের করে দিয়ে তাকেই জিজ্ঞাসা করতে পারে, ‘ বারণ করেছিলাম হিজাব ছাড়া বের হতে? আর বের হবি? আর আমার কথার অবাধ্য হবি?’ কি দরকার শুধু শুধু বকা খাওয়ার। হিজাবের সাথে ভারী মেকাব তার নিজেরও পছন্দ নয়। স্কিণেও সু্ট করে না। কারণ স্কিন সেনসিটিভ। একটু এদিক ওদিক হলে দুগালে, কপালে, নাকে, থুতনীতে ব্রণের দেখা মিলে। যদিও আজকাল মুখ ফ্রেশ আছে। দাগ টাগও তেমন নেই। স্বর্ণ কোথায় থেকে কিসের কিসের যেন গুঁড়া এনে দিয়েছে। সেসব দিলে পুরো স্কিণ চকচক করে। এখনো করছে। তাই ওসব মেকাব টেকাব না দিলেও চলবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আয়নায় তাকিয়ে শীতল তার মুখের পানি মুছল। চোখের পাতার উপরিভাগ আরেকটু ঘষাঘষি করল।

অনিয়ন কালার শাড়ি পরেছে সে। ফর্সা গায়ে রংটা যেন ফুটে উঠেছে। শাড়িতে কী একটু বড় বড় লাগছে নাকি, হুম? লাগবেই তো, সে এখন কলেজে পরে। কলেজ! ভাবা যায়? কলেজে পরা মেয়ে বড় তো অবশ্যই হয়েছে, তাই না?
মনে মনে একথা ভেবে মুখ টিপে হাসল শীতল। হঠাৎ মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো। আচ্ছা শুদ্ধ ভাই এখন কি করছে? ঘন্টা খানিক আগে
সাম্য, সৃজনকে চুল কাটাতে নিয়ে গিয়েছিল। বিচ্ছু দুটো জেদ ধরেছিল তারা শুদ্ধ ভাইয়ের মতো করে চুল কাটবে। ওই কাটে নাকি শুদ্ধ ভাইকে হিরো হিরো লাগে। আজ তারাও হিরো হিরো লুক নিতে চায়। পরে শুদ্ধ যেখানে চুল কাটে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। নিজেও চুল কেটেছে আর বাকি দুটোরও কাটিয়েছে। তা সেই মানুষটা আর নিচে নামে নি কেন?

তাকে একবার জ্বালিয়ে এলে কেমন হয়, হুম? জ্বালিয়ে আসতে আসতে শখ, স্বর্ণ আপুও রেডি হয়ে যাবে। দু’জন সাজালে সেও চটজলদি রেডি হয়ে নিতে পারবে। হ্যাঁ, যেই ভাবা, সেই কাজ। সে শখকে আসছি বলে শাড়ির কুচি ধরে উপরে গেল। শুদ্ধর রুমের দরজা হালকা করে ভিজিয়ে রাখা। অর্থাৎ রুমেই আছে সে। আচ্ছা দুম করে ঢুকে গিয়ে শুদ্ধ ভাইকে একটু চমকে দেওয়া যাক? চমকে গিয়ে খুশিও হতে পারে। খুশির ঠেলায় কিছু টাকাও দিতে পারে। সকাল থেকে দুই হাত চুলাকাচ্ছে টাকা আসার সম্ভবণা শতগুন। তাই সাড়াশব্দ না করে ঢুকতে গিয়ে আচমকা নাকের উপর কুশন এসে পড়ল। কুশন ক্যাচ করে মুখ ভোঁতা করে দেখে শুদ্ধই ছুঁড়ে মেরেছে। এও বুঝল নক না করে ঢুকার শাস্তি। শীতল কুশন ধরে রেখে গমগমে সুরে বলল,

-‘ অপ্রয়োজনে আসি নি প্রয়োজনেই এসেছি।’
-‘বলে বিদায় হ।’
-‘ফুল এনে দেন।’
-‘ফুল কি করবি?’
-‘চুলে লাগাব।’
-‘এই বুদ্ধি নিশ্চয়ই তোর মাথা থেকে বেরিয়েছে?’
-‘হুম। আমি ছাড়া সৎ বুদ্ধির মানুষ এ বাড়িতে আর ক’জন আছে?’
-‘তা অবশ্য ঠিক।’
-‘এবার ঝটপট ফুল এনে দিন দেখি।’
-‘ওসব ফুল টুল গুঁজতে হবে না। হিজাব পর।’
-‘না। আমি হিজাব পরব না।’
-‘ তাহলে আর যাওয়ার দরকার নেই। রুমে গিয়ে ঘুমা।’
-‘কেন যাব না? আমার বড় আব্বুর বিয়ে আমি যাব। আর হিজাব ছাড়াই যাব।’
-‘তাহলে আমিও তোর পায়ের নলা কাটব, আজই কাটব। নিচে গিয়ে বল কেউ যেন হিজাব ছাড়া বের না হয়। আমার চোখে পড়লে খবর আছে এক একটার।’

-‘এত সুন্দর শাড়ির সাথে হিজাব ভালো দেখাবে না শুদ্ধ ভাই।’
-‘না দেখাক।’
-‘প্লিজ।’
-‘উহুম, অজুহাত চলবে না। যা বলেছি সেটাই কনফার্ম। ‘
-‘এই শাড়ির সাথে কোন কালারের হিজাব পরব তাহলে?’
-‘বাড়িতে কী মেয়েমানুষের অভাব যে এখন আমাকে হিজাব চুজ করে দিতে হবে?’
-‘দিলে কি হয়?’
-‘তুই যাবি এখান থেকে? ‘
-‘ বাড়ির মেয়েরা শাড়ি পরলে খ্যাচখ্যাচ করতে নেই। সুন্দর নজরে একটু তাকাতে হয়। প্রশংসা করতে হয়। একটু প্রশংসা করলে কারো জাত যায় না, হুহ!’
শাড়ির কথা শুনে শুদ্ধ এতক্ষণে খেয়াল করল শীতল শাড়ি পরেছে। এই শাড়ির নামধাম জানে না যদিও। তবে শাড়িটা সুন্দর। মানিয়েছেও বেশ।

আচ্ছা মানালেই কী শাড়ি পরতে হবে? অবিবাহিত মেয়ের ঘনঘন শাড়ি
পরা কিসের? তারা জানে না শাড়ি পরলে নজর লাগে? নজর লাগলেই বাড়িতে ঘটকের আনাগোনা শুরু হয়। তখন প্রস্তাব আসতেই থাকে। যা চরম মাত্রায় অসহ্যকর! একথা ভেবে তার বিরক্তের মাত্রা দ্বিগুন বাড়ল। আজ প্রচুর গরম। এ গরমে শাড়ি পরে যাবে শীতল? সামলাতে পারবে? নাকি গিয়ে হাসফাঁস করে বলবে,’কেউ আমাকে বাড়ি নিয়ে চল। শরীর খারাপ করছে। আমি মরে যাচ্ছি।’ এসব তো নতুন না। এসব বহু পুরনো কথা। জানা কথা। তার প্রতিটা কাজকর্ম সম্পর্কে সকলেই অবগত কী না। এইতো দু’মাস আগের এক ঘটনা, সেদিন শারাফাত চৌধুরীর বন্ধুর
মেয়ের বিয়েতে সে ছাড়া বাড়ির সবাই গিয়েছিল। সেদিনও শীতল শাড়ি পরেছিল। এই মেয়ের আবার শাড়ি পরতে অকেশন লাগে না। মন ভালো থাকলেই মাঝে মধ্যে শাড়ি পরে। তবে এখনো শাড়ি সামলাতে শেখে নি।
তবে কবে শিখবে কিংবা আদৌও শিখবে কী না তা অবশ্য জানাও নেই।

তো সেদিন বিয়ে বাড়ি গিয়ে কুঁচি পায়ে বেঁধে পড়েছিল। মুখ থুবকে পড়ে থুতনী কেটে গিয়েছিল। রক্তারক্তি অবস্থা। নতুন বর-বউকে রেখে সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পরে সাওয়ান চৌধুরী তাকে ফোন করে শীতলকে বাড়ি আনার কথা বলেন। অগত্যা ল্যাবের কাজ রেখে বকতে বকতে বেয়াদবটাকে আনতে যায়। থুতনী শক্ত করে চেপে ধরার পরেও রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না। কাঁদছিলও খুব। ওর কান্না দেখে ভেবেছিল ব্যথায় কাঁদছে। রাগ টাগ ভুলে সান্ত্বণা দিয়েছিল, ‘কাঁদিস না। মেডিসিন নিলেই ব্যথা কমে যাবে।’ একথা শুনে সে জবাব দিয়েছিল, ‘সেলাই টেলাই যেন না করে শুদ্ধ ভাই। সেলাই করলে থুতনীতে দাগ পড়ে যাবে। তখন বিয়ে হবে না আমার। বরপক্ষ এসে বলবে থুতনী কাঁটা বউ নিবো না আমরা। এভাবে একের পর পাত্র ফিরে গেলে তখন বিয়েই হবে না আমার।’

তার কথা শুনে ডাক্তারও হো হো করে হেসে ফেলেছিল। পরে সেলাই না দিলেও থুতনীতে হালকা দাগ এখনো রয়েই গেছে। দূর থেকে বোঝা না গেলেও খুব কাছ থেকে বোঝা যায় দাগটা। তবুও এ মেয়ের হুঁশ হয় না। প্রচলিত প্রবাদে আছে ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়। আর শীতল যায় বারে বারে। কেন যায়? কারণ বেল বারবারই তারই মাথায় পড়ছে কী না সেটাই দেখার জন্য যায়। নতুবা এই মেয়ের এতদিনে কান্ডজ্ঞান হতো। যার যা ভালো লাগে করুক কাউকেই কিছু বলবে না। শুদ্ধ হাতের বইটা সেল্ফে রেখে উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল,
-‘আমার পাঞ্জাবী..!’
শুদ্ধর কথা শেষ হতে দিলো না শীতল। তার আগেই হড়বড় করে বলল,
-‘এখন কোনো কাজ করতে পারব না শুদ্ধ ভাই।’
-‘কেন?’
-‘শাড়ি পরে কাজ করলে শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া এ জীবনে একটা শাড়ি এনে তো বলতে পারলেন না, ‘শীতল ধর, এটা তোর জন্য। পরিস কেমন?’
-‘(….)’
-‘ মানুষের বড় ভাইরা দেখি তার ছোটো বোনকে কত কিছু কিনে দেয়। অথচ আপনি?’
-‘(….)’

-‘ জীবনে তো এক টাকাও খরচ করতে দেখলাম না। এত টাকা কোথায় রাখবেন শুনি?’
শুদ্ধ শুধু শুনে গেল। সে আপাতত ভেবে পেল না মানুষ এত বেইমান হয় কিভাবে? তিন বোনকে একই রকম ড্রেস কিনে দেওয়ার দুইমাস হয় নি। তিনজনেরই নাম খোদাই করা একই রকম স্বর্ণের ব্রেসলেট। নুপূর। দুল। ড্রেস। হিজাব। আরো কত কী এনে দিয়েছে। যতবারই ঢাকা থেকে আসে ততবারই কিছু না কিছু আনে। অথচ এ বেইমান বলছে সে নাকি কখনো কিছু এনে দেয় নি। ঠোঁট মোছা মুরগী কোথাকার। আগে ভালো জিনিস তুলে নিয়ে এখন বলে কী না কিছুই নেয় নি। ঘষেটি বেগম বেগমও এত তাড়াতাড়ি পাল্টি খায় নি যত তাড়াতাড়ি এই মেয়ে পাল্টি খেতে পারে।

সে কথা বাড়াল না হালকা আকাশী রংয়ের পাঞ্জাবী বের করে বিছানার উপর রাখল। আজ এটাই পরবে। তারপর ওয়ালেট থেকে দুইশত টাকার নোট পাঞ্জাবীর উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। শীতল বুঝল পাঞ্জাবী
আইরণ করে দিলো টাকা তার। টাকা যেহেতু পাওয়া যাবে তাহলে দেরী কিসের? টাকার বেলাতে সে আবার না করতে পারে না। তাই একগাল হেসে আঁচল কোমরে গুঁজে আধভেজা চুলগুলো হাতখোঁপা করে নিলো। তারপর শুদ্ধর বের করা পাঞ্জাবীটা নেড়ে চেড়ে মুখ কুঁচকাল। এটা তার ভালো লাগল না। শুদ্ধ ভাইকে তো সাদা পাঞ্জাবীতে বেশ লাগে। তাই সে কাবার্ড খুলে হ্যাংগারে ঝুলানো অনেকগুলো পাঞ্জাবীর মধ্যে থেকে খুঁজে খুঁজে সাদা পাঞ্জাবী বের করল। এই পাঞ্জাবীটা একটু বেশিই সুন্দর। এর আগে পরে নি বোধহয় একেবারে নতুন। বুকের কাছের ডিজাইনও বেশ।

সে পাঞ্জাবীটা নিজ গায়ে ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব আফসোস করল। মেয়েদের যদি পাজ্ঞাবী পরার নিয়ম থাকত সেই কবেই এটা চুরি করে নিয়ে যেতো। কিন্ত তাতো আর নেই, আহারে! কেন যে এমন নিয়ম বের হয় না? নারী-পুরুষ সমান অধিকার। তাহলে পুরুষ পাঞ্জাবী পরলে নারী পরতে পারবে না কেন? একথা ভাবার পরমুহূর্তে পাঞ্জাবীটা নিজের গায়ের উপর থেকে সরিয়ে শাড়ি পরা নিজেকে দেখে মুচকি হাসল।ছোট
ছোট চুল কানের পেছনে চুল গুঁজে বিরবির করে উচ্চারণ করল, ‘উহুম শাড়িতেই নারী।’
অতঃপর গুনগুন করতে করতে সে যত্ন করে পাঞ্জাবীটা আইরণ করল। ড্রেসিংটেবিলের একটি তাকে ওয়াচের কালেকশন। একেকটা একেক রকমের। সে গ্লাস সরাতে গিয়ে বুঝল লক করা। কিছু ভেবে পারফিউম রাখা তাকের গ্লাস খুঁলতে গিয়েও দেখল সেটাও লক। টানাটানি করেও খোলা গেল না। তবে সে রাগ করা দূর ফিক করে হেসে ফেলল। একবার ভেঙ্গেছে দেখে বেচারা ভয়ে এবার লক করে রেখেছে। তবে কী বিশুদ্ধ পুরুষ মনে মনে তাকে ভয় পায়, হুম, হুম?

কতক্ষণ একা একা হাসল সে। তারপর হঠাৎ মনে পড়ল সাজগোজ করা হয় নি তার। শখ বোধহয় ডাকছে। এই রুমটা তো সাউন্ডপ্রুফ ডেকে মরে গেলেও কারো ডাক কানে পৌঁছাবে না। তাই সে ওয়াশরুমের দরজায় থাবা দিয়ে বলল,
-‘শুদ্ধ ভাই, আইরণ করে দিয়েছি।’
একথা বলে পুনরায় দরজায় আরেক থাবা বসিয়ে বলল,
-‘সাইন্টিস্ট মানুষের মেলা টাকা। দুইশ টাকায় লস হয়ে যায় তাই হাজার টাকা নিয়ে গেলাম।’
একথা বলে দুইশ টাকার নোটটা ওয়ালেটে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
আসলে হিজাব পরবে না বলে শুদ্ধকে রাগাতে এসেছিল। আর পাঞ্জাবী আইরণ করার কাজ এ নতুন নয়। বাবা এলে বাবার টা করে দেয়। সায়ন ভাইয়েরটা করে। সাম্য, সৃজনের করতে হয়। বড় আব্বু, মেজো আব্বুও কখনো কখনো আইরণ করার কাজ দেয়। কখনো বা বোতাম লাগানোর হুকুম আসে। বাড়ির ছোটো সদস্য হলে এমন টুকটাক সব কাজ করতেই হয়। অভ্যাসও আছে। শীতল শাড়ি ধরে কোনোমতে সিঁড়ি বেয়ে নেমেই ছুঁটল শখের রুমে। শখ, স্বর্ণ রেডি হয়ে বসে আছে। সিঁতারা, সিমিনের কথা শোনা যাচ্ছে। তারা বাকিদের তাড়া দিচ্ছেন। সিরাত সায়নকে কল করে বকাবকি করছে। ছেলেটা গাড়িতে তেল ভরার নাম করে সেই কখন বেরিয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই। কোথায় যাওয়ার কথা বললেই এই ছেলের কাজ বাঁধে। এতক্ষণ টইটই করে ঘুরে শীতল এবার তাড়াতাড়ি করে ওকে সাজিয়ে দেওয়ার তাড়া দিলো। শখ, স্বর্ণ একসাথে শীতলকে রেডি করে দিলো। সাজ বলতে আইলাইনার, কাজল, ঠোঁটে লিপবাম, হাতে চুরি এই তার সাজ। তারপর শীতল নিজেই হিজাব বেঁধে নিলো।

শখ, স্বর্ণ একদম হালকা সাজে তৈরি। শখ আর শীতলের জোড়াজুড়িতে
স্বর্ণ শাড়ি পরতে বাধ্য হয়েছে। সে শাড়ি সামলাতে পারলেও এক অভদ্র পুরুষকে সামলানো খুব মুশকিল হয়ে যায়। শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। সুযোগ পেলে বলে, ‘জান রে আর কত ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিবি? হয় চুপিচুপি বিয়ে কর নয়তো বাড়িতে জানাতে দে। তোর কারণে আমার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
স্বর্ণ বিরক্ত হয়। চোখ পাকায়। তা দেখে সায়ন কিছুক্ষণের জন্য চুপচাপ থাকলেও একটুপর যা তাই। মাঝে মাঝে তার পাগলামি দেখে সন্দেহ হয় এই পাজি পুরুষটা নাকি রাজনীতি করে। মানুষ জবাই করে গবাদিপশুর মতো। তার হাত কাঁপে না। অন্তর কাঁপে না। অথচ সেই পুরুষ তার কাছে এলেই যেন সবটুকু ধৈর্য্য হারায়। কথার লাগাম ছুটায়। রোমান্টিতার তার কথায় কথায় ঝরে পড়ে। ব্যাকুল চোখে তাকেই দেখতে থাকে। অথার্ৎ সে বাইরের পৃথিবীর কাছে কঠিন, পাষাণ, পুরুষ হলেও কেবল তারই কাছে
সায়ন অন্যরকম।

তিনবোন রেডি হয়ে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলল। তারপর একে একে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাঁড়াল। তিনবোনকেই অনিন্দ্য সুন্দর দেখাচ্ছে। চৌধুরী নিবাসের এক একটা জীবন্ত পুতুল যেন তারা। শারাফাত চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলে। দেখলেন তিন রাজকন্যাকে। মনে মনে আওড়ালেন, ‘মাশাআল্লাহ! মাশাআল্লাহ্! মাশাআল্লাহ্!’ মেয়েগুলো
বড় কী সত্যিই বড় হয়ে যাচ্ছে? উনার কাছে তো ছোটোই আছে। এখনো মনে হয় কেবলই পৃথিবীতে এলো তারা। কেউ বাবা ডাকল তো কেউ বপ বু বলে বাড়ির মাতিয়ে তুলতো। মেয়েরা বড় হলেও যত মুশকিল। তাদের বাপের বাড়ি থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসে। নিজের বাবার মেয়ে বিদায় করার তাড়া না থাকলেও অন্যের কাছে যেন মেয়ে ভারী হয়ে আসে। পথ ঘাটে লোকমুখে শুনতে হয়, ‘মেয়ের বিয়ে দিবেন না?’ একথা ভেবে হঠাৎ কেন জানি বুক ভার হয়ে এলো উনার। কত আদর যত্নে গড়ে তুলেছেন তিন রাজকন্যাকে। এমন না শখ আপন মেয়ে বলে তাকে আলাদা ভাবে দেখেছে। উনি ভাবেন উনার তিনটা মেয়ে। আর তিনটাই উনার। তিনটার একটা কষ্ট পেলে উনার বুকে বিঁধে। শীতলটা কিডন্যাপ হলো সেদিন কী উনার বুকের ভাঙ্গন দেখেছিল? না কেউ দেখে নি! শীতল বাসায় ফেরার পর আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে উনারা তিন ভাইই দুই চোখের পানি ঝরিয়ে শুকরিয়া আদায় করেছিল একথা কেউ জানে না। জানবেও না!

একবার রিকশার চাকায় স্বর্ণের ওড়না বেঁধে গিয়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছিল গলায়। গলার চামড়া ছিলে যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়েছিল।মেয়েটা তিনদিন কথা বলতে পারে নি। সেই তিনদিন উনি একটু পর পর গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়েছেন। উনার মনের অবস্থা বুঝে বুঝদার স্বর্ণ উনার দুহাত মুঠোয় পুরো অনেক কষ্টে বলেছিল, ‘আমি ঠিক আছি বড় আব্বু। কই,ব্যথা নেই তেমন একটা।’ অথচ গলায় প্রচন্ড ব্যথা ছিল। সাম্য, সৃজনের জ্বর এলে এখনো জ্বালিয়ে মারে। রাত বিরেতে কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় তুলে। কী জেদ তাদের৷ পরে উনিই বুকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুম পড়ান। গল্প শুনান। গল্পের ছলে সূরা পড়ে ফুঁ দেন। সায়ন, শুদ্ধ বড় হয়েছে। কিন্তু তারা বাড়ি না ফিরলে উনি আগে টের পান। বাবার মন বলে হয়তো বুঝতে পারেন। কিছুদিন সায়ন আহত হয়ে বাড়ি ফিরল রাগ দেখালেন ঠিকই কিন্তু তার সেবাযত্নের ক্রুটি রাখেন নি। কথা না বললেও বাসায় ফিরে সব খোঁজই নিতেন।

শুদ্ধ তো প্রায়ই ঢাকাতেই থাকে। ঢাকায় থাকলে তাকে কি? তার ফ্ল্যাটের কর্মরত লোকদের সাথে উনার সরাসরি কথা হয়। শুদ্ধ বরাবরই খুঁতখুঁতে স্বভাবের। যার তার হাতে খাবে না যার তার জিনিস নেবো না। রান্নার ব্যাপারেও তাই। হয় নিজে রান্না করে খাবে নতুবা তার ঠিক করা রাঁধুনী রান্না করে দিয়ে যাবে। ছেলের যাতে সুবিধা হয় উনি সেই খেয়াল রাখেন। বাকি রইল শখের কথা। সে আর ক’দিনের অতিথি মাত্র। ভাবলে বুক পাঁজর ভেঙ্গে আসে। শখটা বড্ড নরম স্বভাবের। কষ্ট পেলেও বলবে না কষ্ট পাচ্ছি। শখের পরপরই স্বর্ণের পালা তারপর ছোট্ট শীতলের। কী অদ্ভুত, পেলেপুষে বড় করে কলিজাগুলোকে নাকি পরের বাড়িতে দিতে হবে। মায়ার বাঁধন কাটিয়ে চলে যাবে পরের বাড়ি। তখন চাইলেও জোর দেখাতে পারবেন না। শখ, স্বর্ণ বরাবরই বুঝদার। তবে শীতল? এই মেয়ে মাথাতেই বড় হয়েছে বোধবুদ্ধি হয় নি। নতুবা রাত দিন যেচে পড়ে শুদ্ধর পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করে। মার খায়।সে বাড়ির ছোটো কন্যা হিসেবে সবারই যেমন আদরের তেমনি আহ্লাদী’ও। সত্যি বলতে মেয়েটা ছোটো থেকে বাবাকে কাছে পায় না বলে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা তার জন্যই বরাদ্দ থাকে। এজন্য মাঝে মাঝে তার ভুলচুক চোখে দেখেও দেখেন না।
এদিকে বাড়ির তিন গিন্নিও একেবারে তৈরি। উনাদের পরনে জামদানী শাড়ি। ম্যাচিং হিজাব। স্বর্ণের গয়নায় স্পষ্ট চৌধুরী বাড়ির গিন্নি উনারা।

শারাফাত চৌধুরী, সাওয়ান চৌধুরী, সাম্য, সৃজন, সবার পরনে আজকে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী। একটুপরে শুদ্ধও নিচে নামল। বরাবরের মতোই চুপচাপ সে। মুখভঙ্গি গম্ভীর্যভাব। তাকে দেখে শীতল মিটিমিটি হাসছে। পাঞ্জাবী বদলে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পুরুষ যে বিরক্ত বুঝতে বাকি নেই তার।
তবে এই লোক আদৌও জানে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামাতে তাকে ঠিক কী পরিমান সুদর্শন লাগছে? জানে না বোধহয়! জানলে নাচতে নাচতে এসে তাকে একটা ধন্যবাদ দিতো। যদিও এটা তার থেকে আশা করা আকাশ কুসুম ভাবনা। শুদ্ধ নেমে এসে দাঁড়াতেই সাওয়ান চৌধুরী তার কাঁধ ধরে এবার বলেই ফেললেন, ‘কি রে বাপ সাদাতে কী দারুণ দেখাচ্ছে তোকে।’

শুদ্ধ নিশ্চুপ। এটা তার কাছে নতুন কিছু না। একথা অনেক শুনেছে তাই
তার মতে বিশেষভাবে পাত্তা দেওয়ার মতো কিছু না এটা। তবে অদূরে দাঁড়ানো সিরাত সিঁতারার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমাদের শশুড়ের আকার গঠন পেয়েছে শুদ্ধ, তাই না ভাবি? আব্বা তো এমনই উঁচা লম্বা দেখতে শুনতে ছিল।’ সিঁতারা মেজো জায়ের কথা শুনে হেসে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালেন। শুদ্ধ বসেছে বাবার পাশে।তবে কথা বলছে সাওয়ান চৌধুরীর
সাথে। সবাই এখানে হাজির হলেও সায়নের দেখা নেই। তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, ঘামে ভিজে হন্তদন্ত হয়ে বাসায় কেবল ফিরছে সায়ন।
সবাইকে রেডি দেখে একপ্রকার দৌড়ে যেতে যেতে শারাফাত চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
-‘নতুন বরদের বকবক করতে নেই বউ বাচাল হয়।’
একথা বলে রুমের দিকে ছুটল সে। এদিকে সময় হয়ে গেছে তাই শুদ্ধ যাওয়ার কথা বলল। কারণ সময় নির্ধারণ করে রিসোর্ট বুক করা। দেখা যাবে তাদের ঢিলেমীর কারণে বিশেষ কাজটা সম্পূর্ণ করা আগেই সময় শেষ। এরচেয়ে কেউ যাক ওখানে। পরপর দুটো গাড়ি পাকিং লটে দাঁড় করানো। একটায় বড়রা উঠল। আরেকটাতে ছোটোরা সবাই। বড়দের যাওয়ার কথা জানালে উনারা সাবধানে আসতে বলে চলে গেলেন। শুদ্ধ বসেছে ড্রাইভিং সিটে। পাশে বসেছে শীতল। তার কোলে সাম্য। পেছনের সিটে শখ, স্বর্ণ আর সৃজন। এইদিকে এখনো সায়নের আসার নাম নেই।
তখন শীতল মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,

-‘ আমি গিয়ে সায়ন ভাইয়াকে ডেকে আনি।’
একথা বলে সাম্যকে কোল থেকে নামতে বলতেই শুদ্ধ বলল,
-‘প্রয়োজন নেই। সময় হলে ঠিকই চলে আসবে। তাছাড়া চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তাদের বিশ্বাস সেই। তাই আগেই বলে দিচ্ছি কেউ পড়ে টরে গেলে হসপিটালে যেতে পারব না আমি।’
একথা শুনে শীতল মুখ বাঁকাল। খোঁচাটা যে তাকেই মারল বুঝতে বাকি নেই। তবুও শুদ্ধর বারণ অমান্য করে নামতে গেলে শুদ্ধ পুনরায় বলল,
-‘বারণ করেছি।”
-‘ওয়াশরুমে যাব।’

একথা বলে সে শাড়ি সামলে নিচে নামল। গুঁটি গুঁটি সায়নের রুমে গিয়ে দেখল সায়ন কেবল শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। তাকে দেখে গালভর্তি হেসে বলল,
-‘কিরে বনু শাড়ি পরেছিস? তোর বোনও পরেছে নাকি?’
শীতল তাড়া দিলো,
-‘হুম। উফ তাড়াতাড়ি করো ভাইয়া।’
-‘ এইতো হয়ে গেছে।’
একথা বলে সায়ন পাঞ্জাবী খোঁজার যুদ্ধে নামল। কিন্তু সাদা পাঞ্জাবীর
খোঁজ মিলল না। সায়নের সাথে শীতলও হন্ত হয়ে খুঁজে একটা দলামলা পাঁকানো সাদা পাঞ্জাবী খুঁজে পেল। সেটার অবস্থা দেখে শীতল থমথমে মুখে বলল,

-‘ ছ্যাবলামার্কা দুলাভাই নেবো না আমি। কালই গিয়ে রিহানকে আপুর নাম্বার দিয়ে আসব।’
-‘এই না! ভুলেও না। তুই না আমার গুড সিস্টার?’
-‘তাহলে এক্ষুণি এই মুহূর্তে চকচকে,স্মার্টমার্কা, দুলাভাই চাই আমার।’
-‘তাহলে বোন দিবি তো?’
-‘হুম।’
-‘ওকে।’
একথা বলে সে কাবার্ড থেকে পাঞ্জাবী বের করল। সে জানে বাড়িতে না থাকলেও তার ড্রেস ঠিকই রেডি পাবে। শীতলকে আর দু’মিনিট অপেক্ষা করতে বলে সে দ্রুত রেডি হয়ে এলো। চুল ঠিক করল। পারফিউম স্প্রে করল। এবার একেবারে পার্ফেক্ট লুক! তারপর শীতলের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু জোড়া নাঁচিয়ে বলল,
-‘ চলবে?’
শীতল খিলখিল করে হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
-‘চলবে না দৌড়াবে। এবার চলো নয়তো তোমার জাঁদরেল ভাই আবার ঐতিহাসিক লেকচার শুরু করবে।’
শীতলের কথা শুনে সায়ন হেসে ফেলল। তখন তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভর করল। সে ফিচেল হেসে বলল,

-‘শুদ্ধ আমার ভাই হলে তোর কে হয়, হুম?’
-‘শত্রু!’
-‘পরম শক্রকে বশে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে কি দিয়ে বশ করা হয়, জানিস?’
-‘কি দিয়ে?’
শীতলের পাল্টা প্রশ্ন শুনে সায়ন কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর বলল,
-‘ ক্ষেত্রবিশেষ ধনুকের তীর মিস গেলেও ভালোবাসার তীর কখনো মিস যায় না। ট্রাই করে দেখতে পারিস। আর শুদ্ধর বিশেষ গুন কি জানিস? সে একান্ত কারো জন্য মরতে রাজি কিন্তু ছাড়তে রাজি নয়।’

-‘খুব মারে।’
-‘জান দিয়ে ভালোবাসতেও জানে।’
-‘মিথ্যা কথা। তার মন নেই। সে পাষাণ পুরুষ।’
-‘ওই পাষাণ পুরুষদের মন জয় করতে পারলে এক পৃথিবী সমান সুখ তোর পায়ের কাছে এনে দেবো।’
-‘সে আমাকে ভালোবাসবে না ভাইয়া।’
-‘বাধ্য করবি।’
-‘ বাধ্য করে ভালোবাসা হয়?’
-‘হয় না। তবে ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা আদায় করা যায়।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৯

-‘যদি না পারি?’
-‘আমি আছি তোর পাশে।’
-‘পথ খু্ব কঠিন।’
-‘প্রাপ্তি কিন্ত অমূল্য রত্ন।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩১