শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩১

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩১
নূরজাহান আক্তার আলো

শাঁ শাঁ শব্দে গাড়ি চলছে হাইওয়ের উপর দিয়ে। শীতলরা ভাই-বোনরা মজা করতে করতে যাচ্ছে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। কখনো তারা একযোগে গান গাইছে। কখনো হইহই করছে। কখনো পেছনের গাড়িকে টেক্কা দিতে পেরে একযোগে হেসে লুটোপুঁটি খাচ্ছে। এরিমধ্যেই পুরনো ঘটনা স্মরণ
করে একে ওকে পঁচাচ্ছে। গাল ফুলাচ্ছে। তো খুনশুঁটি মারামারি করছে।

গাড়ির মধ্যে শুদ্ধই শুধু নিশ্চুপ। সে একমনে অভিজ্ঞ হাতে গাড়ির হুইল ঘুরাতে ব্যস্ত। কিছু জিজ্ঞাসা করলে হ্যাঁ/ না তে জবাব দিচ্ছে। নতুবা চুপ থাকছে। যা স্বভাব তার। শুদ্ধর পাশের সিটেই শীতল বসেছে। পেছনের সিটে সাম্য, সৃজন, সায়ন, শখ আর স্বর্ণ। পেছনে বসতে চেয়েছিল কিন্তু সায়ন ইশারায় স্বর্ণের পাশে বসতে চাওয়ায় সে সামনে বসেছে। সায়নকে সুযোগ দিয়েছে স্বর্ণের পাশে বসতে। কিন্তু এখানে বসে তার দম আঁটকে আসছে। অস্থির অস্থির লাগছে। শুদ্ধর গায়ের পারফিউমের সুগন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে। ঝাঁক ঝাঁক কথারা পেটে খুচাখুচি করলে কন্ঠস্বর যেন কেউ চেপে ধরে আছে৷ কম্পিত হাতজোড়া মুঠ করে ধরায় হাতের তালু ঘেমে একাকার। বুকের ভেতরে ধুকপুকানি শব্দটা যেন বেড়েই চলেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এসব কেন হচ্ছে? ভয়ে নাকি অন্যকিছু? যদি অন্যকিছু হয় তাহলে সেটা কি? খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে এসবই ভাবছে সে। তবে তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য চিন্তা। বিগত কয়েকমাস যাবৎ সায়ন তাকে শুদ্ধর ব্যাপারে বারবার সিরিয়াস হতে বলছে। নানান ভাবে বোঝাচ্ছেও।
বোঝানোর মূল কারণ যাতে তার মনে শুদ্ধর প্রতি সফ্ট কর্ণার তৈরি হয়। কিন্তু কেন জানি তার সাথে স্বাভাবিক হতে গেলে উল্টো কিছু ঘটে যায়। কথায় কথায় দ্বন্দ লেগে যায়। দ্বন্দের রেশ ধরে মারও খেতে হয়। এমনটা কেন হয়? মনের টান নেই বলে? নাকি জোরপূর্বক সে স্বাভাবিক হওয়ার ভাণ করে বলে?

কিছুক্ষণ আগেও সায়ন ভাই কিসব বলে মনের অশান্তি বাড়িয়ে দিলো। ধুর, ভালো লাগে না এসব। আর কিভাবে শুদ্ধকে বাধ্য করবে সম্পর্কে
জড়াতে? শুরুটা করবেই বা কী দিয়ে? মানুষটা যে পরিমানের রাগী যদি থাপ্পড় মেরে বসে? থাপ্পড় না মারলেও চ্যালাকাঠ দিয়ে আধমরা ঠিকই করবে। অতঃপর জিজ্ঞাসাও করতে পারে, ‘আমার সাথে প্রেম করবি? শখ মিটেছে প্রেম করার? না মিটলেও বল, যত্ন করে বাকি হাড্ডিগুড্ডি ভেঙ্গে প্রেমের ভূত মাথা থেকে নামাই?’
মনে মনে এসব ভেবে একবার শুদ্ধর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো।
বিনিময়ে সে মিষ্টি করে হাসল। কিন্তু হাসির বিনিময়ে শুদ্ধ নজর সরিয়ে সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। অশান্ত ব্যাঙাচির হঠাৎ শান্তু হয়ে বসে থাকার কারণ খুঁজছিল শুদ্ধ । তাছাড়া সে খুব ভালো করে জানে শীতলের দস্যি পণা মানে সব স্বাভাবিক। আর চুপচাপ থাকা মানেই বুঝতে হবে কোনো জট পাঁকানো পায়তারা করছে। সে আবার তাকাল। এবারও চোখাচোখি হলো।

শীতল পূর্বের মতো করে হাসল। তা দেখে শুদ্ধর ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে গেল। সন্দেহ আরো প্রবল হলো। একে এখন বকবক করাতে হবে নতুবা রাগাতে হবে। নাহলে পেট থেকে কথা বের করা যাবে না। আর কথা না বের করলে জানা যাবে না মনে মনে কী ঘোঁট পকাচ্ছে। তাছাড়া বাড়ি এসে অবধি খেয়াল করেছে সায়নের সাথে গোপন মিটিং চলে শীতলের। সায়ন কীসব বলে আর সে মুখ ভোঁতা করে শোনে। বলা বাহুল্য, চৌধুরী বাড়ির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বিচ্ছু হচ্ছে শীতল আর সায়ন।
এদের পেটে পেটে প্রচুর শয়তানি বুদ্ধি। দুুই বিচ্ছু একসাথে গুজুরগুঁজুর করা মানেই বড় কোনো কেলেঙ্কারির পূর্বাভাস। এসব ভেবে শুদ্ধ বলল,

-‘পানি খাবি?’
-‘না।’
-‘খারাপ লাগছে?’
-‘না।’
-‘তবে?’
-‘পানি খাব।’
শুদ্ধ পানি দিলো। সেও সময় নিয়ে পানি খেলো। মুখ মুছে বোকা বোকা হাসল। তারপর বলল,
-‘ আপনার ফোনটা দিন তো শুদ্ধ ভাই।’
শুদ্ধ কথা বাড়াল না লক খুলে দিলো। শীতল ব্যস্ত হাতে নোটপ্যাডে কিছু টাইপ করে শুদ্ধকে দেখাল। সেখানে লেখা, ”আমার কিছু বলার আছে।”
শুদ্ধ লেখাটা দেখল। বলতে অনুমতি দিতেই শীতল ঢোক গিলে কপালে জমা ঘাম মুছে জানাল পরে বলবে। শুদ্ধও আর জোড়াজুড়ি করল না।
তখন সাম্য বলল আইসক্রিম খাবে। তার দেখে বাকিরাও জানাল তারাও খাবে। অগত্যা একসাইডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে শুদ্ধই নামল গাড়ি থেকে।
রাস্তা পার হয়ে ওপাশে চলে আইসক্রিম আনতে। শীতলের প্রচুর অস্থির লাগছে। কিছু কথা মনের ভেতর টগবগ করে ফুটছে। কি মনে করে গাড়ি থেকে নামল সে। তার দেখে সায়নও নামল। শীতলের চিন্তিত মুখ দেখে মুখ টিপে হাসল। তারপর ফিসফিস করে বলল,

-‘নার্ভাস?’
-‘হুম।’
-‘আজ মনের কথা বলতেই হবে।’
-‘আমি পারব না ভাইয়া। তাছাড়া পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব, বলো?’
-‘পৃথিবীতে ছেলের অভাব না। তবে একজন নিঃস্বার্থ জীবনসঙ্গী পাওয়া খুব টাফ। শুদ্ধ তোর জন্য বেস্ট অপশন।’
-‘ভাই..য়া? বাদ দাও না, প্লিজ!
-‘তোর ভালোর জন্যই বলছি বোন। শখ আর তুই কেউ’ই আমার কাছে কম না। দু’জনই আমার জানবাচ্চা। আমি যা করছি জেনেবুঝে করছি। বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তোর ধারণা নেই। তুই ভাবতেও পারবি না এই পৃথিবীতে ভালোবাসার নামে কত কী ঘটছে প্রতিনিয়ত। একটা মেয়ের জন্য একজন ছায়াসঙ্গী কতটা জরুরি। তিক্ত কথা কি জানিস? মেয়েরা যদি লয়্যাল জীবনসঙ্গী পায় তবে সে ইহজীবনেই জান্নাতের সুখ পায়। আর যদি জীবনসঙ্গী অমানুষ হয় তাহলে দুনিয়াতে নরক যন্ত্রণা অনুভব করে।’

-‘তুমি যেমন আমার ভাইয়া তেমনি শুদ্ধ ভাইয়াও তো..!’
-‘শুদ্ধর আসন বদলে ফেল। আমি শুধু তোর ভাইয়া;শুদ্ধ নয়।’
-‘তুমি এরকম কেন করছো ভাইয়া? কেন বুঝছো না ভয় পাচ্ছি আমি। খুব ভয় লাগছে আমার। বাড়িতে জানাজানি হলো আব্বু আম্মু মেরেই ফেলবে আমাকে।’
-‘তুই শুধু শুদ্ধকে কাবু কর বাকিসব সেই সামলে নেবে। আমি যেমন তোর বোনের সমস্যায় ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি তোর রক্ষাকবজ হবে শুদ্ধ। আমার কথাটা শোন বোন। আমার আল্লাহর করে কসম বলছি,
এসবের পেছনে আমার কোনো স্বার্থ নেই। আমি শুধু চাই তোরা ভালো থাক।’
-‘শুদ্ধ ভাই কেন? আর কেউ কেন নয়?’
-‘কারণ আমার মতে ওর মতো লয়্যাল ছেলে তোর জন্য খুঁজে পাব না। এতদিন তোকে যথাসাধ্য বুঝালাম। কে, কী,কেন, কিভাবে, এক প্রশ্নের উত্তর বারবার দিয়েছি। এবার যা করার তোকেই করতে হবে। এখন যদি মনে হয় তুই পারবি না তাহলে আমিও আর কিছু বলব না। শুদ্ধ আসছে
আপাতত টপিক চেঞ্জ কর।’

শীতল মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। হঠাৎ করে
সব জটিল হয়ে যাচ্ছে কেন? যাকে নিয়ে ওসবকিছু ভাবে নি হঠাৎ তাকে
ভালোবাসবে কিভাবে? স্বপ্ন সাজাবে কিভাবে? যাকে ভাই বলে ডেকেছে তাকে কিভাবে…..! সায়ন শীতলের মনের কথা বুঝলেও কিছু বলল না।
কারণ সে বেঁচে থাকতে শীতলকে না অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে দেবে। আর না অন্য কারো বউ হতে দেবে! শখকে আঁটকাতে পারবে ন। কারণ সে তার আপনবোন। আপন রক্ত। তাকে রাখার অজুহাতও নেই।
তবে শীতলকে চোখের সামনেই রাখবে। কারণ চাচাতো বোন বিয়ে করা জায়েজ। শীতল মেয়ে হয়ে জন্মেছে যখন বিয়ে তো দিতেই হবে। তাহলে
শুদ্ধর সাথে কেন নয়? সেই পাত্র শুদ্ধ কেন নয়?যদি সে বেঁচে থাকে তবে
শীতলই হবে শুদ্ধর সহধর্মণী। সে তাদের বিয়ে দেবে। নিজে প্রধান সাক্ষী হবে। এবং একদিন দেখিয়ে দেবে এ টম এ্যান্ড জেরীই হবে বেস্ট জুটি। বেস্ট কাপল!

শুদ্ধকে আসতে দেখে শীতলকে স্বাভাবিক হতে বলে অন্য কথার প্রসঙ্গ টানল সায়ন। এমন সব কথা বলল শীতল না হেসেও পারল না। তাকে হাসতে দেখে সায়ন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। অতঃপর আইসক্রিম খেতে খেতে তারা হইহই করে আনন্দে ডুবে গেল। এবার সায়ন সামনের সিটে। আর শীতল বসেছে পেছনে বোনদের সাথে। এতক্ষণ চুপ থাকলে এবার তার খিলখিল হাসি শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকায় যেন চারপাশ কেমন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কি একটা কথায় বোনরা খুব হাসছে। তাদের এত হাসতে দেখে সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকাল। তারপর আরাম করে বসে মনে মনে আওড়াল, ‘তোরা সারাজীবন এভাবে হাসি খুশিতে থাক। তোরা ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকব। আর তোদের ভালো রাখতে যখন যা করার আমি সায়ন তাইই করব।’
শারাফাত চৌধুরীর গাড়ি রিসোর্টে প্রবেশ করার পরপর শুদ্ধদের গাড়িও এসে থামল। একে একে নামল সবাই। অসম্ভব সুন্দর রিসোর্ট। গোছগাছ।

ছিমছাম পরিবেশ। শারাফাত চৌধুরী ভেবেছিলেন ছোটো করেই হয়তো আয়োজন করা হবে। কিন্তু এসে হতবাক হয়ে গেছেন। কারণ সায়ন শুদ্ধ বিশাল আয়োজন করেছে। অনেক পরিচয় মুখের দেখা পাচ্ছেন। শশুড় বাড়ির লোক সহ বিজনেস পার্টনাররাও এসেছে। সকালে উনাকে হাসি মুখে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ফুলের বুকে তুলে দিচ্ছেন। এমনকি উনার বসার আসন করেছে রাজকীয়ভাবে। কোথায় উনিই ছেলেদের বিয়েতে এসব করে তাক লাগিয়ে দেবেন তা না। বরং উনার বিয়েতেই ছেলেরা এসব করে হতবাক করে দিচ্ছেন, কী কান্ড, কী কান্ড! তারপর বাড়ির মেয়ে-বউয়েন শুদ্ধ ভিআইপি আসনে বসাল। কারো কিছু প্রয়োজন হলে তাকে জানাতে। কত চেনা মুখ এসে কথা বলছে শুদ্ধ ও সায়নের সাথে। বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করছে। ওরাও হাসি মুখে অতিথির সাথে কথা বলছে। শীতল জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে শুদ্ধকেই খেয়াল করছে। মানুষটা সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে। শুধু তার সাথে কথা বলতে গেলে যেন হাসি ফুরিয়ে যায়। তারও একদিন সময় আসবে তখন সব শোধ তুলবে।

এসব ভাবতে ভাবতে তার মুখের হাসি চওড়া হলো। মনের ভেতর সমস্ত ভয় হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো। এতক্ষণ চেপে থাকা চঞ্চলতা আবার যেন ফিরে এলো। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর বড় আব্বুর পাশে গিয়ে বসল। শারাফাত চৌধুরী হাসিমুখে তাকালে ফিসফিস করে বলল,
-‘বড় আব্বু আমি কিন্তু বরযাত্রী। আমাকে যেন দুইটা রোস্ট দেওয়া হয়।’
ফিসফিস করে বলা কথাটা আশেপাশের সবাই শুনে ফেলল। অতঃপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সকলে। মজাও করল অনেকে। এরপর বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো। এবং বাড়ির ছেলেরা হলো মেয়ে অর্থাৎ সিঁতারার প্রধান সাক্ষী আর মেয়েরা হলো শারাফাত অর্থাৎ বরপক্ষের মূল সাক্ষী।
এই মুহূর্টা এত চমৎকারভাবে কাটল যেন সবটাই স্বপ্ন। আর স্বপ্নটাকে
স্মৃতিচারণে সহায়তা করতে হলো ফটোশূট হলো। ফটোশূট করতে গিয়ে ঘটল আরো অনেক মজার মজার কাহিনী। হাসতে হাসতে কাহিল হলো।
তন্মধ্যে শুধু বর বউয়ের ছবি তোলার সময় ক্যামেরা মান জানাল একটু ক্লোজ হয়ে দাঁড়াতে। অথচ এত মানুষের সামনে শারাফাত সিঁতারা যেন
একটু লজ্জা পাচ্ছিলেন। পাশাপাশি দাঁড়ালেও ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। বার বার বলার পরও একই অবস্থা। তখন শুদ্ধ মুখ খুলল,

-‘বাবা, ক্যামেরামান বোধহয় ক্লোজ হতে বলছে। আমার জানামতে ক্লোজ মানে দূরত্ব মিটানো/ঘনিষ্ঠ।’
সর্বসম্মুখে একথা বলায় শারাফাত চৌধুরী অপ্রস্তুত হাসলেন। কাশলেন।
এদিক ওদিক তাকিয়ে স্ত্রী সাথে আরেকটু ক্লোশ হতে যাবেন তখন সায়ন বলল,
-‘প্রাচীনকালে বিয়ে করেছো। বাসর সেরেছো। আমাদেরকে পৃথিবীতে আনাতে সাহায্য করেছো। এখন আমরাও নতুন প্রজন্ম আনার পায়তারা করছি। অথচ আজ দেখি তোমার লজ্জা পুরোপুরো ভাঙ্গে নি। এই দিনও দেখতে হলো? আম্মু তুমি অন্তত কিছু বলো? দেখো তোমার স্বামী লজ্জা পাচ্ছে।’
সায়নের কথা শুনে পুনরায় হাসির রোল পড়ল। হাসতে হাসতে সকলের নাজেহাল খারাপ।শারাফাত চৌধুরী কটমট করে তাকিয়ে ছবি তুললেন।
বাবার চাহনি দেখে সায়ন ইনোসেন্ট লুক নিয়ে তাকিয়ে হাসল। ভাবখানা এমন তার মতো নিষ্পাপ ছেলেই হয় না। সে নাদান বাচ্চা। এ কদিন হলো পৃথিবীতে এসেছে।
এরপর চৌধুরী নিবাসের সদস্যদের একসাথে অনেক ছবি তোলা হলো।
শারাফাত তিনকন্যাকে নিয়ে ছবি তুললেন গুনধর পুত্ররাও বাদ গেল না। ভাইরা আদরের বোনদের সাথে ছবি তুলল। চমৎকার এক একটা দৃশ্য।

ঠিক করা হলো সবাই একসাথে দাঁড়ানো ছবিটায় বড় করে বাঁধাই করে ড্রয়িংরুমে রাখবে।
এরপর খাওয়া_দাওয়ার পর্ব এলো। সবাই খেতেও বসল। বড়রা এদিকে আর ভাইবোনরা সবাই এক টেবিলে। ওয়েটার খবার বেড়ে দিতে এলে শুদ্ধ তাকে যেতে বলে নিজেই সবাই খাবার সার্ভ করে দিলো। প্রত্যেকটা পদ যত্ন করে তুলে দিলো ভাই বোনদের প্লেটে। কে কোন খাবারটা পছন্দ করে সে অবগত। সবাইকে একে একে দিয়ে শীতলের প্লেটে হাড়ওয়ালা মাংস তুলে দিলো। বিড়ালস্বভারের শীতল হাড় গোঁড় খেতে পছন্দ করে।
সবাইকে দিয়ে নিজে বসতেই সায়ন শুদ্ধর প্লেট সাজিয়ে সামনে এগিয়ে দিলো। শুদ্ধ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল বড় ভাইয়ের দিকে। সায়ন খেতে ইশারা করে নিজে খেতে শুরু করল। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করায় সবাইই খাচ্ছে।
সায়ন হঠাৎ পরপর আরো দুইপিচ রোস্ট শুদ্ধর প্লেটে তুলে দিলো। শুদ্ধ ভ্রুঁজোড়া তাকালে সায়ন বলল,

-‘ছোটো ছোটো টুকরো করে শীতলের প্লেটে তুলে দে। রোস্ট খেতে গিয়ে
আমার বোনের লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
-‘তোমার বোন তুমি দাও।’
একথা শুনে সায়ন ভ্রুঁ কুঁচকাল। তারপর অতি সন্তপর্ণে তার পাশে বসা স্বর্ণকে ইশারা করে বলল,
-‘আমি তোর বোনকে দিচ্ছি তুই আমার বোনকে দে, শোধবোধ!’
তাদের দুই ভাইয়ের ফিসফিস কথা কেউ খেয়াল করে নি। বোনরা খেতে খেতে তখনকার ছবি তোলা নিয়ে গল্প করছিল। সাম্য, সৃজন বোরহানির গ্লাস ফাঁকা করতে ব্যস্ত। শুদ্ধ আর কথা বাড়াল না মাংসের ছোট টুকরো শীতলের প্লেটে তুলে দিতে থাকল। শীতল মুখ তুলে তাকাল। খুশি হলো।
তবে কিছু বলতে গেলে শুদ্ধ বলল,

-‘ দ্রুত খাওয়া শেষ কর নয়তো এখানে রেখেই চলে যাব।’
শুদ্ধর কথা শুনে শীতল দাঁত কপাটি বের করে হাসল। তারপর জবাব দিলো,
-‘যান। আপনাকেই নিতে আসবে হবে।’
-‘রাইস দেবো?’
-‘না।’
-‘স্যালাড?’
-‘না।’
-‘পানি?’
-‘না।’
-‘তাহলে মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে খাওয়া শেষ কর।’
-‘হুম।’

শীতলের হঠাৎ সায়নের দিকে নজর পড়ল। সায়ন মিটিমিটি হাসছে। ওর আর বুঝতে বাকি রইল না বড় মহারাজ আবার কলকাটি নেড়েছে। তবে শুদ্ধকে জ্বালানোর সুযোগও মিস করল না। শুদ্ধ মাংসের টুকরো দিতেই থাকল সে খেতেই থাকল। দুটোর জায়গায় তিনটে রোস্ট খাওয়াও শেষ। চার নাম্বার চলমান।শুদ্ধ নিজের খাওয়া রেখে দাঁতে দাঁত চেপে শীতলের প্লেটে মাংসের টুকরো দিতে দিতে বলল,
-‘কত বছরের অনাহারী তুই?’
-‘খবরদার বলছি খাওয়ার খোঁটা দিবেন ন। বড় আব্বুকে বলে দিবো কিন্তু।’
-‘বল। এক্ষুণি বল। না বললে থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দেবো বেয়াদব।’
-‘যান, খাবই না আর।’
-‘খাবার নষ্ট হোক তারপর দেখ তোর অবস্থা কি করি।’
-‘খেলেও বকছেন না আবার খেলেও বকছেন, সমস্যা কি আপনার?’
-‘শেষ কর।’

তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্বও শেষ করল তারা। এদিকে সময়ও শেষের দিকে। মেহমানরা অনেকেই চলে গেছেন। উনারাও যাওয়ার জন্য কেবল পাকিং লটে দাঁড়িয়েছেন। এরিইমধ্যে সায়ন শুদ্ধর কথা কাটাকাটি সবার কানে গেল। দুই ভাইয়ের হঠাৎ কী হলো কেউ কিছুই বুঝলেন না। শুদ্ধ যে প্রচন্ড রেগেছে তার হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকসের ক্যান ছুঁড়ে মারা দেখে বুঝল সবাই। ওদিক ফাঁকা। আশেপাশেও তেমন কেউ নেই৷ শুদ্ধ সহজে রাগে না। সচারচর তাকে সহজে রাগতে দেখা যায় না। কিন্তু যখন রাগে, যার উপর রাগে তার জীবনে ঝড় তুলে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্যবোধ করে না। এতক্ষণ তো সব ঠিকই ছিল। হঠাৎ কি হলো যে দুই ভাই রণমূর্তিরূপ ধারণ করল? দুই ভাইয়ের কথা সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে শারাফাত ও সাফওয়ান চৌধুরী এগিয়ে গেলেন। শুদ্ধ অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে বড় ভাইয়ের দিকে। তবে সায়ন হাসছে। আর এই হাসিই শুদ্ধর রাগের মাত্রা শতগুন বাড়াল। সে কাউকেই কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি ছাড়াই হনহন করে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। না কারো ডাক শুনল। না কেউ তাকে থামাতে পারল। সায়নকে জিজ্ঞাসা করলেওকোনো জবাব পাওয়া গেল না। এরপর অনেকগুলো গিফ্টবক্স গাড়িতে তুলে বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে উনারাও বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

এদিকে সিদ্দিকের অবস্থা পাগলা কুকুরের মতো। ছেলেকে কোনোমতেই জাবিন করাতে পারেন নি উনি। এই উকিল তো সেই উকিল কেউই কেস নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে এর জবাব এখনো মেলে নি। ছেলেটা দেশে এসেই ফেঁসে গেছে। কতবার বারণ করেছিলেন চোখ-কান খোলা রেখে চলতে।
উনার চারপাশে শত্রুপক্ষ হিজগিজ করছে। কিন্তু ছেলে কর্নপাতই করে নি। এদিকে কনকের ধর্ষিত বোনটা মারা গেছে। কনক এখন নিজে যেন ভেঙ্গে পড়া কলাগাছ। তাকে দিয়ে কোনো চাল চালাবে সেই সুযোগ নেই।
কিন্তু থেমে থাকলে হবে না। উনি কাঁটা হাত-পা গুলো দেখেছেন।

কাটার ধরণ দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি একাজ আজমের। সায়নের হাতডান আজম। অর্থাৎ সায়নই এসব ঘটিয়েছে। ভেবেছিলেন ছেলেটাকে কদিন প্রাণপণে উড়তে দিবেন। বন্দির আগে মুক্তির স্বাদ নেওয়াবেন। কিন্তু এই ছেলে আজকাল যা করছে মনে হচ্ছে এখনই ছাই দিয়ে খপ করে ধরতে হবে। যাতে পিছলে যেতে না পারে। এসব ভেবে সে কল করল ইয়াসির নামে সেভ করা নাম্বারে। কিন্তু কল রিসিভ হলেও কেউ কথা বলল না। শুধু শোনা গেলো কোনো মেয়ের চাপা গোংড়ানোর সুর। কান্নার শব্দ।
একটু পরে কল কেটে মেসেজ এলো,
-‘ডো’ন্ট ডিস্টার্ব পার্টনার। উফ! চরম মুডে আছি। মুড নষ্ট হলে তোমার মেয়ে বউকে দিয়ে আমার মুড উঠাব বলে দিলাম।’
মেসেজ পড়ে রাগে সিদ্দিকের পুরো শরীর জ্বলে উঠল। হাতের ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘ব্লাডি হোর ওসব নিয়েই থাক তুই। তোরও তেজ কমাব। শুধু সময়ের অপেক্ষা।’

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে কেবল রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে রুবাব। সুদর্শন যুবকটাকে দেখে অনেকেই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। পরনের পোশাকেই স্পষ্ট উচ্চ বংশের ছেলে সে। হাঁটার স্টাইল নজরকাড়া। হাতে থাকা নামিদামি ওয়াচে টাইম দেখে বারবার তাকাচ্ছে নক্ষত্রভরা আকাশ পানে। চলমান
শিপে থাকাকালীন বারবার আকাশ দেখে। আকাশের রং দেখে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। সেটাই আজকাল অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সন্ধ্যার আজান হয়েছে একঘন্টা পেরিয়ে গেছে। ধরিনীর বুকে নেমেছে গাঢ় অন্ধকার। ঘড়ির তখন ক’টা হবে? সাড়ে সাতটার মতো। যানজটে রাস্তায় জ্যাম বেঁধেছে। যানজটও তার ভালো লাগছে। আপন দেশে বলে হয়তো। সে পুনরায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বুকভরে শ্বাস টানল। দেশে ফিরল প্রায় সাত মাস পর। কাউকে বলে না আসায় গাড়ি আসে নি বাড়ি থেকে। উবারই শেষ ভরসা। আর দাঁড়িয়ে না থেকে দুই হাতে দুটো ট্রলি নিয়ে সামনে এগোতেই একটা গাড়ির এসে থামল তার সামনে। এভাবে গাড়ি থামায় বিরক্তও হলো। দুটো গালি ছুঁড়ে মারার আগে গাড়িতে বসা
একজন মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল,

-‘আপনে কি রুবাব ভাই?’
-‘জি। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?’
-‘শুদ্ধ ভাই আমারে পাঠাইছে গাড়িতে উইঠা আহেন। যাইতে যাইতে কথা হবে নে।’
-‘শুদ্ধ পাঠিয়েছে?’
-‘জ্বে।’
-‘আমি তো আসার কথা কাউকেই জানাই নি তাহলে জানল কিভাবে?’
-‘আমি কইতাম কেমনে? আমারে খালি ফুন দিয়ে কইল আপনেরে যেন চৌধুরী বাইত পৌঁছাইয়া দেই।’
-‘ওকে।’
মুখে একথা বললেও ফোন বের করে চেক করল শুদ্ধর মেসেজ এসেছে কি না। যার তার গাড়িতে ওঠা যাবে না। কারণ বিপদ বলে কয়ে আসে না। সে দেশে থাকে না মানে দেশের অবস্থার কথা জানে না তা কিন্তু নয়।
হ্যাঁ মেসেজ এসেছে। তাহলে যাওয়ায় যায়। তারপর আজমের সাথে গল্প করতে করতে সে রওনা হলো চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সারাদিন বিয়ের ঝামেলা শেষে ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরেছে সবাই। শুদ্ধর সাথে সায়নের কিছু একটা নিয়ে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে সায়ন ভাইয়ের কথায় হেসেছে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা তার। ভাইকে হাসতে দেখে শুদ্ধ রাগে জেদে সবার আগে রিসোর্ট থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়েও রাগে গা কাঁপছে। এর কারণও শীতল। সব দোষ ওই বেয়াদবটার। আজ সারাদিন
তাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। আর এসব ভুলভাল কাজে ওকে উস্কে দিয়েছে
সায়ন। ভালোবাসার জীবানু টীবানু বলে আজাইরা সব যুক্তি দিয়ে ব্রেণ ওয়াশ করেছে গাধীটার। ক’দিন ধরেই হচ্ছে এসব। মাথামোটা গাধীটাও সেসব ব্রেণে ঢুকিয়ে তাকে জ্বালাচ্ছে। যখনই শীতলের দিকে তাকিয়েছে তখনই দেখে শীতল আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। মানে হয় এসবের?

সে সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখে শীতল বিছানায় বসে আছে। পরনে অনিয়ন কালারের শাড়ি। খোলা চুল। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। দুপুর থেকে মাথায় হিজাব পরা থাকলেও এখন এলোচুল।
ওকে দেখেই শুদ্ধ খাটের নিচে থাকা চ্যালাকাঠটা নিয়ে এক বারি বসিয়ে দিলো শীতলের বাহুতে। শীতল ‘উফ মা’ বলে কঁকিয়ে উঠল। অন্যসময় হলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠত। কিন্ত এখন কাঁদা তো দূর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তারই পায়ের পাতার উপর উঠে দাঁড়িয়েছে। চোখে ভয়ের লেশমাত্র নেই। শীতলের পাগলামি দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুদ্ধ। কেবল শাওয়ার নিয়েছে তারপরেও দরদরিয়ে ঘামছে সে। কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সরু চিকন ঘাম। তার পায়ের পাতার উপর দাঁড়ানো শীতলকে বড্ড বেশি অচেনা লাগছে। চোখে অন্যরকম চাহনী। ঠোঁটে যেন সর্বনাশা কিছুর ইঙ্গিত। তবে সে কিছুতেই এসবে প্রশ্রয় দেবে না। তাই শীতলকে স্বজোরে ধাক্কা দেওয়ার আগেই শীতল শুদ্ধর কাঁধ শক্ত করে আকঁড়ে ধরল। অতঃপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুদ্ধর কানের দুই ইঞ্চি নিচে নরম মাংসে চুমু এঁকে বসল। হঠাৎ ই নরম ওষ্ঠ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠল শুদ্ধর সর্বাঙ্গ। চোখে, মুখে স্তম্ভিত ভাব। কেবলই কী ঘটল তা বুঝে ওঠার আগেই শীতল ফিসফিস করে বলল,

-‘শুদ্ধ ভাই? আপনার নামে যদি দু’একটা কলঙ্ক মাখি আপনি কি রাগ করবেন, হুম?’
শুদ্ধ হতবাক। হতভম্ব চোখের চাহনি। ঘাড়ের কাছটা ঘিরঘির করছে। কি হয়ে গেল? কি ঘটাল এই মেয়ে? এর ধারণা আছে সে কি করছে? আর কিসের আবদার করছে? তার নামের কলঙ্ক মাখার? কলঙ্কের মানে বুঝে সে? আবদার করে কলঙ্ক মাখা যায়? তাও আবার তার নামের কলঙ্ক?
সে কিয়ৎকার কোনো কথায় বলল না। বলা বাহুল্য, বলতে পারল না।
শুধু নিশ্চুল হয়ে শীতলের কাজল চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। ঝোকের বশে অঘটন ঘটিয়ে এখন মৃদুভাবে কাঁপছে শীতল। এবং কাঁপুনির মাত্রা বাড়ছে। চোখে চোখ রাখতে পারছে না। ঘামছে। বুঝতে বাকি নেই সায়ন ফাঁদে পা দিয়েছে শীতল। সায়নের কথায় তার রাগ ভাঙ্গানো এ কাজটা করেছে। মোটকথা, দুটোতে মিলে তাকে গেমের গুঁটি বানাচ্ছে। কিন্তু সে সেটা হতে দেবে না। আজ অবধি নিজের বানানো গেমে অন্যকে গুঁটি বানাতে অভ্যস্ত সে। হঠাৎ গুঁটি হবে কিভাবে তাও জেনে শুনে? হাস্যকর!
এদিনের অভিজ্ঞ খেলোয়ারের অভ্যাস কি ছাড়া যায়? মোটেও না! তাই সে ঠান্ডা চাহনী নিক্ষেপ করে হাড় হিম করা কন্ঠে বলল,

-‘ সত্যি ভালোবাসিস আমাকে?’
-‘হুম!’
-‘কতটা?’
-‘অনেকটা।’
-‘বিয়ে করবি?’
-‘(…..)’
শীতল নিশ্চুপ। শুদ্ধর ঠান্ডা চাহনি দেখে ঠকঠক করে কাঁপছে। চোখের পানি আপনাআপনিই গড়তে শুরু করেছে। তাকে কাঁপতে দেখে শুদ্ধ পুনরায় বলল,
-‘প্রেম চাস নাকি প্রেমিক?
-‘দুটোই।’
-‘উহুম যে কোনো একটা অপশন।’
-‘প্রেমিক।’
-‘সামলাতে পারবি?’
-‘পা..পারব।’
-‘বাড়ির সবার সামনে দাঁড়িয়ে এখন যা বললি বলতে পারবি? তোর বড় আব্বুর থেকে আমাকে চেয়ে নিতে পারবি? কি হলো বল, একবুক সাহস নিয়ে উঁচু কন্ঠে বলতে পারবি, তুই আমার বউ হবি!’

-‘(…..)’
-‘কি রে পারবি না?’
-‘(….)’
-‘কথা বল? এখন চুপ কেন? সৎ সাহস নেই? কি রে উত্তর দে? এখনই সব ভালোবাসা উবে গেল?’
-(….)’
-‘সর যা। তোরা কেউ আমার চোখের সামনে আসবি না। আজকের পর থেকে তোরা আমার কেউ না। কেউ না! যারা অকারণে আমার ইমোশন নিয়ে খেলতে চায়। মিথ্যা ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসে আমাকে ফাঁদে ফেলে চরমভাবে দূর্বল করতে চায়। তারা আমার কেউ হতেই পারে না।’
একথা বলে শীতলকে নিজের থেকে সরিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে হনহন করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল। গ্যারেজ থেকে বাইকটা নিয়ে বের হতেই
সায়নের সাথে মুখোমুখি হলো। সায়ন কিছু বলতে গেলে বাইকের গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। শুদ্ধর থমথমে মুখ দেখে সায়ন
‘ওহ শিট!’ বলে ছুটল বাড়ির দিকে। প্রাণপণে ছুটে তার বাইকের চাবিটা নিয়ে সেও বাইক ছুটাল রাগ্বান্বিত ভাইয়ের পেছন পেছন।

বাইকের গতি বাড়িয়েছে সায়নও। কিছুদূর গিয়ে দূর থেকে সে শুদ্ধকে একটু দেখতে পেল। শুদ্ধর বাইকের স্পিড দেখে সায়নের কালঘাম ছুটে গেল। ভাই যে বড্ড ক্ষেপেছে। এখন এই পাগলটাকে থামাবে কিভাবে? কিভাবে কি করবে সে? তার মাথাও কাজ করা বন্ধ করে দিলো। অজানা এক ভয়ে বুক কাঁপতে লাগল। এই ছেলের বাইকের যা গতি না থামালে নির্ঘাত সে এক্সিডেন্ট করবে। আপাতত আর কিছু ভেবে পেল না সে তাই বিপরীত পথ ধরল। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। তবে আগে পিছে চলতে থাকল দুই ভাইয়ের দুটো বাইক। সায়ন যখন একটু নাগাল পেল তখন চেঁচিয়ে বলল,

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩০

-‘শুদ্ধ! শুদ্ধ দাঁড়া!’
-‘(….)’
-‘বাইক থামা ভাই!
-‘(….)’
-‘আমার কথাটা অন্তত শোন।’
-‘(….)’
-‘শীতলকে ভালোবাসতে হবে না। জীবনেও বলব না ওকে ভালোবাসার কথা। যা বলেছি তার জন্য আমি সরি। ভুলে যা সব। শীতলকেও বারণ করে দেবো। সেও তোকে আর কখনো জ্বালাবে না। ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোর সামনে আসবে না। এবার একটু শান্ত হ। স্পিড কমা ভাই। এ্যাই ভাই আমার কথা শোন না ইয়ার, প্লিজ, প্লিজ থাম!’
-‘(……)’
-‘সামনে হাইওয়ে। স্পিড কমা কুত্তার বাচ্চা। এ্যাই.. এ্যাই ভাই এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। পায়ে পড়ি এবার থাম…থাম না! শু…দ্ধ!

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩২