শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩৮
নূরজাহান আক্তার আলো
-‘এতকিছু থাকতে শুধু ছোলা দিয়ে ইফতার করবে কেন?’
বাবার কথায় শুদ্ধ সিমিনের দিকে একবার তাকিয়ে ঘুরে বাবার দিকে তাকাল। তারপর ঠান্ডা স্বরে বলল,
-‘সামান্য ছোলা নিয়ে যখন এত কান্ড ঘটে গেল তারমানে বুঝতে হবে এ ছোলা মহামূল্যবান কিছু। একদিন ছোলা না খেলে মানুষ মারা যেতেও পারে। এ পাপ কি আর জেনেশুনে করা যায়? তাই ইফতার আজ ছোলা দিয়েই হবে।’
একথা বলে নিজেই সব সরাতে গেলে সিঁতারা এসে ছেলেকে থামালেন।
শুদ্ধর হাত থেকে সেসব কেড়ে টেবিলে রেখে ছেলেকে বসালেন চেয়ারে। তারপর পাশে দাঁড়িয়ে ওর মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললেন,
-‘ইচ্ছে করে মারে নি অসাবধানে লেগে গেছে।’
-‘ ওকে ফাইন তাহলে রক্তাক্ত হলো কেন?’
-‘মা মেয়েকে শাষণ করবে না?’
-‘বারণ করলাম কখন? এর আগেও ছোটো আম্মু নানান কারণে মেরেছে কিছু বলেছি কখনো? কিন্তু মারেরও একটা সিট্টেম থাকা লাগে। আমিও তো কতবার মারি রক্তাক্ত হয় কি? এতটা রক্ত ঝরেছে কখনো?’
-‘ঠিক আছে তোর বোনকে আর কেউ মারবে না এভাবে। শান্ত হ বাপ।’
শুদ্ধ শান্ত হলো না বরং পুনরায় সিমিনের উদ্দেশ্যে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘আমাদের বাড়িতে সাম্য, সৃজন, শীতল এরা চঞ্চল এই কথা তো কারো অজানা নয়। তারা ছোটো থেকেই দুরন্ত। তারমধ্যে এখন দু’জন গুরুতর অসুস্থ। তাদের অসুস্থতা আমাদের বাড়িটাকে মিইয়ে দিয়েছে। আগের মতো বাড়িতে প্রানবন্ত ভাবটা নেই। খুঁনশুটির মুহূর্ত নেই। গত কয়েকটা দিন ধরে মনেপ্রাণে চেয়ে যাচ্ছি কবে সব ঠিকঠাক হবে। কবে আমাদের বাড়িটা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু এরমধ্যেই সামান্য একটা কারণে আরেকজনকে মেরে রক্তাক্ত করলে। খুব দরকার ছিল? যেভাবে মারলে এতে যদি ওর শ্বাস আঁটকে যেতো? তোমার আরো ভালো করে জানা যে ও কাঁদতে পারে না। তাছাড়া সারাদিন রোজা আছে। কিছুদিন আগে সে রক্ত দিয়েছে। এমন তো নয় ইচ্ছে করে ছোলা ফেলেছে। তাহলে এভাবে মারার দরকার ছিল কী? হ্যাঁ মানছি, তোমার মেয়ে। শাষণ করবে তুমি। সেই রাইট অবশ্যই তোমার আছে কিন্তু এভাবে কেন? রক্তাক্ত হবে কেন? সে নাহয় অবুজ তুমি তো তা নও ছোটো আম্মু? একবার তাকিয়ে দেখো ঠোঁটটা কিভাবে কেঁটেছে। এখন খাবে কিভাবে?’
শুদ্ধর কথা শুনে সিমিন মুখ ভোঁতা করে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। পাজিটা মাকে নাস্তাবুদ হতে দেখে মিটিমিটি হাসছে। কতবড় ফাজিল!
তবে হাসলে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। ঠোঁটের একপাশ অনেকটাই ফুলে কালচে রক্ত জমে আছে। প্রচন্ড ব্যথা হবে। তখন উনিও সুযেোগ বুঝে অভিযোগ দিলেন,
-‘মারাটাই চোখে দেখলি কেন মারলাম দেখলি না? ও সপ্তাহ খানিকের মধ্যে বই হাতে নিয়েছে কী না একবার জিজ্ঞাসা কর। বাড়িতে পড়তে বসে না, কোচিংয়ে যায় না, কিয়ারাকে অবধি ডাকতে আসতে বারণ করেছে। সারাটাদিন খালি টইটই করে ঘুরা, গাছে উঠে পাখি দেখা, ফল পাকড় পাড়া এসবই করে বেড়ায় সে। ডাক্তার দেখিয়ে মেডিসিন গুলো যে এনে দিলি হাত দিয়ে ছুঁয়েছে নাকি জিঞ্জাসা কর। এখনই জিজ্ঞাসা কর।’
মায়ের অভিযোগ শুনে শীতলের মুখটা লটকে গেল। একটা অভিযোগও
মিথ্যা নয়। সিমিন তখন আরো বললেন,
-‘এগুলো নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু আমার মন বলছে ও আবার কোনো কান্ড ঘটাচ্ছে। ওই আঠাখোরের মতো আবার কাউকে…!”
ভাসুরের সামনে সিমিন আর পুরো কথা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই থেমে গেলেন। তবে সকলে বুঝল উনার কথার অর্থ তাই সকলের দৃষ্টি শীতলের দিকে। শীতল নিজেও হতবাক। হতভম্ভ চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। প্রেম না করেই প্রেমের অপবাদ মানা যায়? তখন সায়ন সিমিনের কথা ধরল,
-‘তোমার কেন মনে হলো ও প্রেম করছে?’
-‘ ওর রুমে ময়লা কাপড় আনতে গিয়ে দেখি ময়লার ঝুড়িতে দলামলা পাকানো এক ঝুঁড়ি কাগজ। এগুলো কিসের কাগজ? এত কেন? কীসব ভেবে একটা কাগজ খুলে দেখি সেখানে লেখা, ‘আমার মুডি সাইটেশ।’ সাইটেশ কি বা কে একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানে।’
মায়ের কথা শুনে শীতল মাথা নিচু করে মুখ গলার সাথে মিলিয়ে নিলো।
ইশ! এভাবে ফাঁস হয়ে যাবে কে জানত। কাগজগুলো পুড়িয়ে ফেললেই
হতো এখন না জানিনা এই কাগজের জন্য বাঁশ খেতে হয়। যদি সত্যিই বাঁশ খেতে তাহলে চোখ বন্ধ করে শুদ্ধর নাম বলে দিবে। মার এমনিতেও খেতে হবে ওমনিতেও খেতে হবে। সেদিন বিশুদ্ধ পুরুষ তাকে চেয়ে নিতে বলল না? আজ ধরা খেলে বড় আব্বু না বড় মাকেও বলবে, ‘ তোমাদের ছোটো পুত্রের নববধূ হওয়ার টোকেনটা আমাকেই দাও বড় আব্বু।’
ওদিকে সায়ন আর রুবাব পারছে না হেসে গড়াগড়ি খেতে। সায়ন বসে থেকেই শুদ্ধকে পা দিয়ে খোঁচাচ্ছে। ইঙ্গিত দিচ্ছে কিছু একটার। এদিকে শুদ্ধ নিশ্চুপ। বাকিরাও চুপ থেকে শীতলের থেকে জবাবের অপেক্ষায়। সিমিনের কথা শুনে শারাফাত চৌধুরী এবার গলা খাঁকারি দিলেন। উনি কথা বলবেন বুঝে বাকিরা নিজেদের কৌতুহল দমিয়ে রাখলেন। এরপর
উনি স্বভাবসূলভ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন,
-‘এসব কি শুনছি মা?’
-‘না মানে বড় আব্বু..!’
-‘তোমার মা যা বলছে তা কী সত্যি?’
সবাইকে এড়িয়ে গেলেও বড় আব্বুকে উপেক্ষা করতে পারে না শীতল। তাই আঙ্গুল মুচড়াতে মুচড়াতে আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
-‘সাইটেশ কোনো আঠাখোর বা রাস্তার টোকাই না বড় আব্বু। সে আমার দেখা সুপার জেন্টেলম্যান। আমি তাকে পছন্দ করি। সুযোগ পেলে বিয়ে করে বিদেশ চলে যাব।’
শীতলের কথা শুনে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বলে কী এই মেয়ে?
মাথা টাথা পুরোটাই গেছে নাকি? তবে শীতলের কথা শুনে শারাফাত চৌধুরী রাগলেন না। বরং ঠান্ডা স্বরে কথা চালিয়ে গেলেন,
-‘তা কে সেই জেন্টেলম্যান? কি করে, বাসা কোথায়? ‘সাইটেশ’ এটা তার পদবি নাকি পেশা?’
-‘সাইটেশ তার পদবী। আসলে সে তামিল মুভির হিরো। আমাদের শুদ্ধ ভাইয়ের মতোই নামকরা সাইন্টিস্টও। দেখতে পুরাই জেন্টেলম্যান। নাম পিউর ক্যারেক্টা সাইটেশ। সায়ন,রুবাব ভাইও চিনে। ভাইয়া তোমরা কিছু বলো?’
শীতলের কথা শুনে সায়ন আর রুবাবের হাসি ভস করে মিলিয়ে গেল। নিচে থেকে শুদ্ধকে খোঁচানো সায়নের পা টা ও থেমে গেল। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হেসে বলল,
-‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ছেলে দেখতে শুনতে ভালোই মানাবে ওদের।’
এবার সাফওয়ান চৌধুরী বিষ্ময়ভরা কন্ঠে বললেন,
-‘ তোরা মুভির হিরোর কথা বলছিস? কী কান্ড বল দেখি! কোথায় আমি ভাবলাম সত্যি টত্যি বোধহয়।’
একথা বলে তিনি হো হো করে হেসে ফেললেন। সিঁতারাও ফিক করে হেসে বললেন,
-‘আমিও তো সত্যিই ভেবেছি।’
বড় মা ও মেজো চাচ্চুর কথা শুনে শীতল খিলখিল করে হেসে উঠল। তার হাসি দেখে সকলে বোকা বনে গিয়ে নিজেরাও হাসলেন। মেয়েটা পারেও বটে! এদিকে এতক্ষণ সায়ন আর রুবাব যেন শ্বাসটা আঁটকে রেখেছিল।
ভেবেছিল আজকে বোধহয় সত্যিটা ফাঁস হয়েই যাবে। কিন্তু এই মেয়েটা
আবার পাল্টি খেলো। আর পাল্টি খেয়ে করল কি? সাইন্টিস্টকে বানিয়ে দিলো সাইটেশ। আর শুদ্ধ নামের জান খেয়ে নাম দিয়ে দিলো ক্যারেক্টা। যদিও পিউর বা কারেক্ট মানেই শুদ্ধ। শীতল কথা শেষ করে আড়চোখে শুদ্ধর তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে বিশুদ্ধ পুরুষ। হয়তো ভাবছে তার পাশে বসে তারই নাম বদলে তাকেই সুঁড়সুড়ি দিচ্ছে। এর আগে শুদ্ধ অভিযোগ করেছে যে মেয়ে কারো সামনে তাকে চেয়ে নিতে পারবে না সেই মেয়েকে সে বিয়েই করবে না। এজন্য সাহেব কত রাগ দেখিয়েছিল। কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। তার রুমেও যেতে দেয় নি। আজ দেখ বলতে পারবে না কী না। যদিও এটা ছোট্ট রিভেঞ্জ! যখন ফাইনাল মোমেন্টে আসবে তখনো স্ব-গৌরবে বড় আব্বুর কাছে চেয়ে নেবে। বুঝে নেবেই নেবে বিশুদ্ধ পুরুষটাকে। সে কী ভেবেছে? তার করা পাগলামির পরিমান একটু বেশি বলে এটাও পাগলামি? না,মোটেও না!
এদিকে এখনো মেয়ের বাদরামী বন্ধ হয় নি দেখে সিমিন ফুঁসে উঠলেন। কটমট করে তাকিয়ে শুদ্ধকে অভিযোগ করলেন,
-‘শুনলি, শুনলি, বেয়াদবটার কথা? ও কী এমনি এমনি মার খায়?’
শীতলের ইঙ্গিত বা কথার ধাঁচে শুদ্ধ রাগ হঠাৎ উধাও। কী বলবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না। তবে সায়ন আর রুবাবে৷র মুখ দেখে কেন জানি ভীষণ হাসি পেল। হাসলে মেইন টার্গেট মিস হয়ে যাবে তাই মুখটা যথেষ্ট থমথমে করে রাখল। আর সিমিন এতকিছুর পরও মেয়ের করা বাদরামি কমছে না দেখে অঝরে কাঁদতে লাগলেন। আপাতত প্রসঙ্গ পাল্টানো খুব দরকার। তাই সে থমথমে মুখে বলল,
-‘ আজ থেকে বাড়ির ছোটোরা লাখ টাকার জিনিসও যদি নষ্ট করে কেউ কিছু বলবে না। বলবে না বলবেই না, মারধর তো দূর। যার যা ক্ষতি হবে ক্ষতিপূরণ আমি দেবো। তারপরও যেন এই ঘটনা পূনরাবৃত্তি না হয়।’
এইটুকু বলে ঘাড় বাঁকিয়ে শীতলের দিকে একবার তাকাল। পাজি মেয়ে কাঁটা ঠোঁটে এখনো হাসছে মুচকি মুচকি হাসছে। তাকে এভাবে হাসতে দেখে শুদ্ধ ধমকে উঠল। হঠাৎ ধমকে ওঠায় শীতল চমকে উঠে বলল,
-‘ হিরোকে ভালো আমি কি করব?’
-‘এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব। কোথায় কী বলতে হয় তাও জানিস না?’
-‘ আশ্চর্য তো! এইতো সেদিনই তো কিছু বললাম না চুপ ছিলাম বলেই কত ধমকালেন। বকলেন। অথচ আজকে বলছি বলেও ধমকাচ্ছেন।’
-‘এত কথা শুনতে চাই নি। আগামীকাল থেকে সকাল, সন্ধ্যা, দুই বেলা আমার কাছে পড়তে বসবি।’
একটা শুনে শীতল আঁতকে উঠল। মাকে দেওয়া বাঁশ তার দিতে ঘুরলো কীভাবে? এতক্ষণ ভালোই তো চলছিল এরমধ্যে পড়াশোনা এন্টি নিলো
কোন ফাঁক দিয়ে? তার উপরে শুদ্ধ ভাইয়ের কাছে নাকি পড়তে হবে। এ হতে দেওয়া যাবে না। শুদ্ধ ভাই তুখর স্টুডেন্ট তার পড়ানোর ধাঁচ কেমন হবে ধারণা আছে। এত এত পড়া দেয়। হাতের লেখা একটু খারাপ বলে অপমান করে। পড়া না মারলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে নতুবা মারে। না সে কিছুতেই পড়বে না। নয়তো এই লোক পূর্বের যত রাগ জমে আছে পড়ানোর নাম করে সব রাগ তুলবে। একথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে কিছু বলতে গেলে ঠোঁটে টান খেলো। ব্যথা পেয়ে দুই হাতে ঠোঁটে চেপে ধরে অস্পষ্ট সুরে বলল,
-‘না শুদ্ধ ভাই তা না হয় না। তাছাড়া আপনি এত বিজি মানুষ আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না।’
-‘আমার ব্যস্ততা নাহয় আমি বুঝে নেবো। আর হ্যাঁ, আগামীকাল থেকে
তোরা তিনবোন একা কোথাও যাবি না। শখ, স্বর্ণ কথাটা স্মরনে রাখিস। প্রয়োজনে রুবাব দিয়ে আসবে নিয়ে আসবে। আমার কথা নচচড় হলে এক একটা আমি নিজে শায়েস্তা করব।’
হঠাৎ এমন কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণ বুঝল না কেউই। তবে মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস করল না। সায়নের সাথে শুদ্ধর চোখাচোখি হলে সায়নের ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসির দেখা দিলো। কী সুন্দর করে এক ঢিলে চারপাখি মেরে দিলো। সিমিনকে বাঁশ দিলো, শীতলকে একা পড়ানোর ব্যবস্থা করে ফেলল, ভাইদেরকে আঁছিলা বাঁশ খাওয়া দেখল,
এবং এই সুযোগে শখ, স্বর্ণের সেপটির কথা ভেবে স্বয়ং রুবাবের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে দিলো। শুদ্ধ যখন নিষেধাঞ্জা জারি করেছে তখন সবাই
বিনাবাক্যে মেনে নেবে। কিন্তু তার বাঘিনী কি মানবে? সে দিনের বেলা সেফটি নিয়ে চললেও রাতের বেলা মানবে না৷ এটা তো আরেক জাতের ঘাড়ত্যাড়া।
অতঃপর এসব কথা বাদ দিয়ে সবাই হইহই করে ইফতার করল। ভাই ও বোনদের পছন্দের আলুর চপ নিয়ে কাড়াকাড়ি হলো। হাসাহাসি হলো। গল্পে গল্পে একটু আগের সব রাগ বাগ মিটে গেল।
পরেরদিন সকাল থেকে সত্যি সত্যিই শুদ্ধর কাছে পড়তে আসতে হলো। ভেবেছিল কোনো বাহানা দেখিয়ে ব্যাপারটা ঘেঁচে দেবে। কিন্তু না স্বয়ং তার জননী ঘুম থেকে টেনে তুলে তাকে পড়তে পাঠিয়েছে। সঙ্গে শুদ্ধর হাতে মোটা একটা চ্যালাকাঠ তুলে দিয়ে বলে গেছে, ‘মাংস তোর হাড্ডি আমার। কখন কী পড়ালি দেখতে আসব না আমি শুধু রেজাল্ট দেখব।’
একথা বলে উনি বিদায় নিতেই শুদ্ধ তাকে চ্যালাকাঠ দেখিয়ে বলেছে।
-‘এটাকে সালাম। আজ থেকে এটাই তো শিক্ষাগুরু। এর যা দাপট সেটা তোর সেনাবাহিনী বাপেরও নেই। এবার বই বের কর।’
মুখ লটকে শীতল বই বের করলে শুদ্ধ তাকে পড়িয়েছে। বারবার একটা পড়া বুঝিয়েছে। শীতল বলেছে বুঝেছে। কিন্তু সেটা যখন তাকে করতে দিয়েছে তখনই বেঁধেছে ঝামেলা ফলে কপালে ঝুটল চ্যালাকাঠে বারি।
এভাবেই রোজ শুদ্ধর কাছে না চাইতেও পড়তে বসতে হলো শীতলের।
কখনো পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ ব্যাথা, বলে কত কী অজুহাত সৃষ্টি করলেও ছাড় পায় নি। এভাবেই দিন দিন শীতলের পড়ার চাপ বাড়ল।
নিত্যদিনের সাথী হলো মার, ধমক। তবে শুদ্ধ যখন তাকে কিছু বুঝাতে
একমনে কিছু লিখত তখন সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত। একবার দেখত শুদ্ধর হাতের সুন্দর লেখা, আরেকবার দেখত সুন্দর মানুষটাকে।
মনে মনে কত কী বলত। মুখ টিপে হাসত। শুদ্ধও বুঝত তবে কিছু বলত না। কী বলবে? শীতলকে ওর কাছাকাছি রাখার জন্যই তো পড়ার কথা বলেছিল। নয়তো রিসার্চের কাজ ছেড়ে পড়ানোর সময় কোথায় তার?
আর এ কাজ করার কারণ ভালোবাসা সৃষ্টি একমাত্র ওষুধ ভালোবাসার মানুষটার খুব কাছাকাছি থাকা। একা সময় কাটানো। পড়ানোর ফাঁকে একটু গল্প। মারলে গাল ফুলিয়ে থাকলে একটু প্রশ্রয় দেওয়া। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে দুচোখ ভরে দেখা। মন ভরে শরীরের সুভাষ টেনে নেওয়া।
কলম নেওয়া ছুঁতোয় ছুঁয়ে দেওয়া। মাঝে মাঝে তার খিলখিল করা হাসি দেখে বুকের তোলপাড় ঝড়টা বহুকষ্টে দমানো। এগুলোই ভালোলাগার এক একটি অংশ। আর এর থেকেই একটু একটু করে সৃষ্টি ভালোবাসার।
দেখতে দেখতে রোজা প্রায়ই শেষের পথে। সকলের কেনাকাটা এখনো বাকি। শুদ্ধর জরুরি কিছু কাজ থাকায় রুবাব, শারাফাত ও সাফওয়ান চৌধুরী মিলে একদিন ইফতারের পরে বাকিদের নিয়ে শপিংয়ে গেলেন।
সবাই সবার জন্য মিলেঝুলে মাঝরাত অবধি কেনাকাটা সারল। পরদিন বাড়ির মেয়েরা টেইলার্সে ড্রেস বানাতে দিয়ে এলো। সপ্তাহখানিক পরেই সিঁতারা, সিমিন টুকটাক কেনাকাটা করতে গিয়ে মেয়েদের ড্রেসও নিয়ে এলেন। যার যার ড্রেস তাকে বুঝিয়ে দিলেন। শীতল পরে দেখবে ভেবে
ড্রেসটা রেখে দিয়েছিল। সারাদিন রোজা থেকে ইফতার সেরে রুমে এসে শুতেই চোখ গেল শপিং ব্যাগটার দিকে। দ্রুত উঠে আনন্দে ঝুমঝুম করে ইদের ড্রেস টা হাত নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেই মন টা খারাপ হয়ে গেল। ড্রেস মনমতো না হওয়ায় কান্না পেল এবং রুমে বসে সে কাঁদতে থাকল।
আজকে ইফতার পার্টি থাকায় ফ্রেন্ডদের সাথেই ইফতার সেরেছে শুদ্ধ। ফ্রেন্ডদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গিয়েছিল তার ল্যাবে। সেখানে কিছু কাজ সেরে রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি ফিরল। বাড়ির মেয়েরা তখন কিছু একটা নিয়ে খু্ব হাসাহাসি করছিল। ক্লান্ত বিধায় সেদিকে না গিয়ে সোজা রুমে চলে গেছে। সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ওর ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ডিসপ্লেতে সাওয়ান চৌধুরীর নাম দেখে
কলটা রিসিভ করল। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে শুনল, আজ সিরাতের মেডিসিন আনতে হবে। না আনলে রাতে মেডিসিন মিস হয়ে যাবে। এদিকে উনি মিটিংয়ে আঁটকে গেছেন এজন্য শুদ্ধকে আনার কথা বললেন। অগত্যা শুদ্ধ পুনরায় রেডি হয়ে রুম বের হতেই শীতলের কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। এইতো কিছুক্ষন আগেও দাঁত বের হাসছিল। এখন আবার কি হলো? আবার মার খেলো নাকি? একথা ভেবেই সে রুমের দরজায় নক করলে শীতল চোখ তুলে তাকাল। সকল আবদার মেটানোর মানুষটাকে দেখে ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে অসহায় কন্ঠে বলল,
-‘শুদ্ধ ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
শীতলের করুণ আর্তনাদ শুনে শুদ্ধ ভেতরে প্রবেশ করল। গুরুতর কিছু হয়েছে ভেবে জিজ্ঞাসা করল,
-‘কি হয়েছে?’
-‘আমার ইহজীবনের হাসি-খুশি সব ধূলোয় মিশে গেছে।’
-‘অযথা না বকে ঝেড়ে কাশ।’
-‘টেইলার্সে ইদের ড্রেস বানাতে দিয়েছিলাম ওই হারামজাদা সালোয়ারে ইলাস্টিক না দিয়ে বেল্ট দিয়েছে। বেল্টের সালোয়ার পরতে পারি না আমি। ঘন্টায় ঘন্টায় গিট্টু বেঁধে যায়। এর আগের সালোয়ারে খালি গিট্টু বেঁধে যাওয়ায় ওয়াশরুমে কাটা একটা কম্প্যাস রেখেছিলাম। যতদিন ওই সালোয়ার পরেছি ততদিন কাটা কম্প্যাসটাকে সাথে সাথে রাখতে হয়েছিল।’
-‘তা গিট্টুর সাথে কাটা কম্প্যাসের কি সম্পর্ক?’
একথা শুনে শীতল ঢোক গিলে নাক টানতে টানতে জবাব দিলো,
-‘কারণ কাটা কম্প্যাস দিয়ে গিট্টু খুলতে সুবিধা হয়। কিন্তু আমি এবার ওসব আপদ সহ্য করতে পারব না। আমি নেবোই না এই সালোয়ার।’
শুদ্ধ দুই আঙ্গুলে কপাল ডলে দীর্ঘশ্বাস চাপল। এজন্য মরাকান্না কাঁদতে হবে? সে শীতলের কান্নারত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে হাতে থাকা সালোয়ারের দিকে তাকাল। তারপর ইশারা করে বলল,
-‘এটা ঠিক হবে না আর?’
-‘হবে। কিন্তু আম্মু বলেছে এটাই পরতে হবে। টেইলার্সে অনেক ভিড় পরে ঠিক করে এনে দেবে।’
-‘ঠিকই তো বলেছে।’
-‘মনমতো ড্রেস না পারলে ইদ হয় নাকি? এটা যদি ঠিক না হয় এই ইদে কোনো ড্রেসই পরব না বলে দিলাম।’
-‘তোর কী একটাই ড্রেস যে কাঁদতে বসেছিস?’
-‘একটা না সব মিলিয়ে পাঁচটা। তবে পাঁচটা ড্রেস কবে কখন পরব প্ল্যান করেও ফেলেছি। এখন এটা মনমতো নাহলে সব প্ল্যান ভেস্তে দিতে হবে।’
একথা বলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুনরায় কেঁদে ফেলল সে। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে শুদ্ধ বলল,
-‘ টেইলরকে দিলে এটার সমাধান হবে, তাই তো?’
-‘হুম।’
-‘ঠিক আছে রেডি হয়ে নিচে আয়।’
-‘আচ্ছা।’
শীতল ঘাড় কাত করে দুইহাতে চোখ মুছে রেডি হতে গেল। শুদ্ধ বিরবির করতে করতে সিরাতের থেকে প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে গেল পাকিং লটে। ওর বাইকটা বের করে বাইকের উপর বসতেই শীতল শপিং ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলো। আজকে হিজাব পরে নি তবে মাথায় ওড়না টানা। পরনে সাদা রঙ্গের থ্রিপিচ। শুদ্ধ তাকে আপাদমস্তক দেখে বসতে ইশারা করলে উঠে বসল। কাঁধে হাত রাখল। তারপর বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে গেল শীতলের বিরাট সমস্যার সমাধান খুঁজতে।
এদিকে শুদ্ধরা যেতেই সায়ন স্বর্ণের অন্ধকার রুমের লাইটটা জ্বালাল।
তারপর পুনরায় এগিয়ে এসে স্বর্নের কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। স্বর্ণ সায়নের মাথার চুল টেনে দিতে দিতে লেপটপে কিছু একটা করছে। সায়নের কেন জানি সেটা পছন্দ হলো না। সে চট করে চিৎ হয়ে শুয়ে স্বর্ণের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। মুগ্ধ নয়নে
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
-‘ বারণ করেছিলি বলেই তো দূরে ছিলাম হঠাৎ জরুরি তলব কেন?’
-‘মিস করছিলাম।’
-‘আমাকে নাকি আমার স্পর্শকে?’
-‘দুটোই।’
-‘তাহলে বিয়ের কথা বাসায় জানাই?’
-‘আপুর অনুষ্ঠানের পর এমনিতেই আমাদের পালা। তখন জানিও আর বাঁধা দেবো না।’
সায়ন কিছুক্ষণ স্বর্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে নিলো। এরপর কিছু একটা ভেবে বলল,
-‘কোন খা’ন’কি’র বাচ্চার…!’
স্বর্ণ সায়নের মুখ চেপে ধরে কথা থামিয়ে দিতেই দরজার ওপাশ থেকে সিমিন বন্ধ দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
-‘স্বর্ণ? এ্যাই স্বর্ণ? ঘুমিয়েছিস মা?’
ছোটো মায়ের কথা শুনে সায়ন চট করে উঠে স্বর্ণের ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট আঁকড়ে ধরল। মুহূর্তের মাঝেই জোকের মতো চুষে নিতে থাকল স্বর্ণের ঠোঁট। স্বর্ণ শব্দ ছাড়াই নিজেকে ছাড়াতে চাইল সায়ন যেন আরো জোরে আঁকড়ে ধরল। তার অবাধ্য হাতজোড়া স্বর্ণের কামিজের ফালিতে হাত রাখতেই স্বর্ণ তার হাত খাপচে ধরল। বাঁধা পেয়ে সায়ন ঠোঁট ছেড়ে কানে কানে বলল,
-‘আমাকে এতদিন কাছে আসতে দিস নি। ঠিক কতটা ছটফট করেছি জানিস? পানিশমেন্ট জমা আছে।’
-‘আম্মু এসেছে। কি বলে দেখি তারপর পানিশমেন্ট যা দেবে মাথা পেতে নেবো।’
-‘প্রমিস?’
-‘প্রমিস।’
একথা শুনে সায়ন স্বর্ণের অন্ধকার বেলকনিতে চলে গেল। ঠোঁটে তার ফিচেল হাসি। এদিকে স্বর্ণ ওড়নায় মুখ মুছে খোলা চুল বাঁধতে বাঁধতে দরজা খুলল। বলল,
-‘ওয়াশরুমে ছিলাম তাই দেরি হলো, এসো রুমে এসো।’
-‘তোর বাবা তোকে ফোন করছে ধরছিস না কেন? কী বলে শুনতো মা।’
-‘ফোন ভাইব্রেশন করা। ওয়াশরুমে থাকায় ভাইব্রেটও শুনতে পাই নি।
আচ্ছা দেখছি। ‘
একথা বলে শাহাদত চৌধুরী কল দিতেই ডিসপ্লেতে ভেসে উঠল বাবার মুখ। সে সালাম দিলো। বিনয়ীভাবে কুশল বিনিময় করল। সে বরাবরই কম কথা বলে বিধায় কী বলবে খুঁজে পেল না। তখন শাহাদত চৌধুরী একটা বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে জানালেন। একটা ছেলেকে দেখালেন। ছেলেটা ভলিবল খেলছে। সেনাবাহিনী বিধায় শারীরিক গঠন ফিটফাট। ছেলের নাম মুস্তাকিম। চমৎকার একটা ছেলে। ডিপার্টমেন্ট তার সাহসী কাজের কথা মুখে মুখে আলোচিত। তার বাবা মেজর আনিসুল হক। তিনি স্বর্ণ আর মুস্তাকিমের বিয়ের প্রস্তাব রেখেছেন। মুস্তাকিমকে উনার ভীষণ পছন্দ। এখন স্বর্ণ পজেটিভ ইঙ্গিত দেয় তাহলেই কথা এগোবেন।
স্বর্ণ বাবার কথা শুনে একবার তাকাল বেলকনির দিকে। এসব শুনে ওই পাগলটা বেরিয়ে না আসে। মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে শাহাদত চৌধুরী বললেন,,
-‘ নিজের পছন্দ থাকলেও জানাতে পারো মা। আমি তোমার পছন্দকেও সমান গুরুত্ব দেবো। এবার বলো দেখি আছে নাকি কেউ?’
স্বর্ণ বাবার মুখের দিকে একবার তাকাল। তারপর সরাসরি বলল,
-‘আছে। তবে আমাকে একটু সময় প্রয়োজন বাবা। কিছু জানাতে হলে সবার আগে আমি তোমাকেই জানাব, প্রমিস।’
শাহাদত চৌধুরী নীরবে শুধু হাসলেন। মৃদু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলেন। মুস্তুাকিমকে ভীষণ পছন্দ বিধায় হাত ছাড়া করতেও নারাজ উনি। তাই বললেন,
-‘তাহলে শীতল..!’
শীতলের নামটা উঠতেই বুদ্ধিমান স্বর্ণ উনাকে বলল,
-‘শীতল এখনো অনেক ছোটো বাবা। হাত-পায়ে বড় হলেও বড্ড অবুজ।
আমার মতে এখনই ওকে এসবের মধ্যে জড়ানো ঠিক হবে না। কয়েক বছর যাক তখন নাহয়..।’
এবারও শাহাদত চৌধুরী মেয়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে কল কাটলেন। সিমিন মেয়ে ও স্বামীর কথা শুনলেও আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি। কারণ উনি জানেন স্বর্ন বুঝদার। যা সিধান্ত নেবে জেনেবুঝে নেবে।
অন্তত আরেকটার মতো লাফাতে লাফাতে গিয়ে শুকনো মাটিতে মুখ থু্বকে পড়বে না। তারপর উনি নিচে যেতে স্বর্ণ দ্রুত দরজা আঁটকে ঘুরে দাঁড়াতেই সায়ন তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
-‘ছেলেটা কেমন? করবি বিয়ে?’
স্বর্ণ সায়নের হাতটা গলা থেকে সরিয়ে নিজেই রাগান্বিত সায়নের গলা জড়িয়ে ধরল। তারপর মুচকি হেসে বলল,
-‘আমার শাহরিয়ার সায়ন কি কম যে অন্যকে বিয়ের কথা ভাবতে হবে আমার?’
একথা সায়নের কানে পৌঁছাতেই রাগ গলে জল হয়ে গেল। স্বর্ণকে ঠেলে দেওয়ালে ঠেকিয়ে গ্রাবীয় নাক ঘঁষতে ষঁষতে বলল,
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৩৭
-‘শখের অনুষ্ঠান হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তোকে আমার ঘরে তুলব। জান, বিশ্বাস কর সত্যিই অধৈর্য্য হয়ে গেছি। আজকাল কষ্ট হয় নিজেকে সামলে নিতে। তোকে দেখলেই অবাধ্য মন বলে তোর মাঝে ডুব দিতে।’
স্বর্ণ হাসল। তারপর সায়নের কপালের চুল সরিয়ে আচমকা চুমু এঁকে বসল। এদিকে সায়ন হতভম্ভ। সে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। এ প্রথম স্বর্ণ নিজে থেকে তাকে চুমু দিলো. তাও কপালে। কিন্তু এই মেয়েটা কী জানে তার কপালে দেওয়া ছোট্ট একটি চুমু তার হৃদপিন্ডে পৌঁছে গেছে।
কাছে না আসায় অভিমানে পূর্ন উতপ্ত বুকটা একেবারে হিমশীতল হয়ে গেছে।