শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪২

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪২
নূরজাহান আক্তার আলো

_’তার বুকজমিনে এভাবে চুমু এঁকে আগে আমার নামটা আগে খোদাই করতাম। তাহলে কেউ নজর দিতেও পারত না কেড়ে নেওয়ার কথাও ভাবত না।’
শুদ্ধ জবাব দিলো না শুধু শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বুকের কাছটায় অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে। বারে বারে এভাবে মনের কথা জানালে আর কত সংযম করা যায়? আর কত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়া যায়?সে তো মানুষ।
তারও তো ধৈর্য্যের সীমা পরিসীমা আছে। চাওয়া-পাওয়া আছে। ইচ্ছে আকাঙ্খা আছে।

আজকাল ইচ্ছে করে শীতলকে জানিয়ে দিতে যে তার বুকের গহীনে ছোট্ট একটি রাজকুঠুরি আছে৷ সেই কুঠুরিটা দলিল করা একমাত্র ব্যক্তিগত নারীর জন্য। সেই নারীর জন্য কুঠুরিতে একটু একটু করে জমা করেছে প্রেম সাগর। সেই সাগরে ঢেউ নেই। পানি নেই। নেই কোনো গর্জন। তবুও ভালোবাসার কমতি নেই সেখানে। বরং দিনকে দিন তা বেড়েই চলেছে। এদিকে শীতল একবুক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে শুদ্ধর দিকে। আর কীভাবে বোঝালে বুঝবে শুদ্ধভাই? কতভাবে বোঝাব সেও এ মানুষটাকেই খুব করে চায়। যতটা চাইলে নিজের করে পাওয়া যাবে ঠিক ততটা চায়। এবার আর মিথ্যাে ভালোবাসা নিয়ে মানুষটার সামনে দাঁড়ায় নি। এবার সত্যি সত্যি অনুভব করছে কিছু একটা। পূর্বের মতো আজও শুদ্ধকে চুপ দেখে শীতলের হাসি ধীরে ধীরে মুছে গেল। সে তবুও শেষ আশাটুকু নিয়ে তাকিয়েই রইল যেন বিশুদ্ধ পুরুষ কিছু বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু তাকে হতাশ করে শুদ্ধ সামনে থেকে সরে গেল। ড্রেসিংটেবিলের সামনের দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করল। আতর লাগল। পুরো রুমে সেই সুগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। শীতলের খুব ইচ্ছে করল তার বুকে মুখ লুকিয়ে
সুগন্ধ নিতে। কিন্তু এবার করলে সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। মার জুটতে পারে কপালে তাই আর দাঁড়াল না নিচে চলে গেল। বাড়ির পুরুষরা একে একে নামাজে চলে গেল। শীতল নিজেও ভাবল গোসল সেরে ফুলপরী সেজে রেডি হয়ে থাকবে। বাবা-চাচা, ভাইয়ারা ফিরলেই সালামীর জন্য ধরবে। কিন্তু হঠাৎ পেট ব্যথা অনুভব করায়নস্মরণ হয়ে গেল আজকের ডেট। সে চট করে উঠে রুমের দিকে ছুটল। মেয়েকে এভাবে যেতে দেখে সিমিন খেঁকিয়ে উঠে আস্তে যেতে বললেন। কিন্তু শীতল শুনলে তো সে দৌড়ে চলে গেল তার রুমে। এরপর গোসল, সাজগোছ তো দূর পেটের ব্যথায় জুবুথুবু হয়ে বিছানায় পড়ে রইল। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে শীতল নামছে না দেখে সিমিন উপরে এলেন। মেয়েকে পেটে বালিশ চেপে ধরে শুয়ে থাকতে দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন। এই কষ্টের ভাগ তো আর নেওয়া যায় না। কিন্তু কষ্ট যাতে একটু কম হয় তাই খাবার, মেডিসিন,

হট ওয়াটার পট এনে দিলেন। শীতল ঘুমাবে বলে মাকে যেতে বলে চোখ বন্ধ করে নিলো। সিমিন আর কথা বাড়ালেন না দরজা হালকা ভিজিয়ে
চলে গেলেন। সিঁতারা, সিমিন শীতলের কথা জিজ্ঞাসা করলে সমস্যার কথা বলায় চুপ হয়ে গেলেন।
ওদিকে ঈদগাহ মাঠে নামাজের জন্য কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে শতশত মুসল্লি। যথাসময়ে নামাজ শেষ করে চলল কোলাকুলি। তারপর সেখান থেকে ফিরে চৌধুরীরা ফিরে এলেন বাড়িতে। খাওয়া-দাওয়াও করলেন।
সাম্য সৃজন একে একে সবার থেকে সালামি নিলো। শারাফাত চৌধুরী ছোটো ভাই, ছেলে-মেয়ে কিংবা বাড়ির বউদেরকে সালামি দিতেও বাদ রাখেন না। সিঁতারাও দেয় দুই জাকে। সালামি দেওয়া-নেওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার মতো ঘুরতে বের হলো। রুবার বের হলো ঐশ্বর্যের সাথে দেখা করতে। সায়ন ঘুমানোর নাম করে স্বর্ণকে ইশারা করে গেল নিজের রুমে। শুদ্ধ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাউকে না পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে টুকটাক ফোনকল সারল। কথা বলতে বলতে খেয়াল করল এখনো একটা পড়ে আছে। খামের উপরে নাম লেখা ‘সুবহানা চৌধুরী।’

তারমানে সে সালামি নিতে রুমে আসে নি। এমনটা তো হওয়ার কথা না।
নিচেও তো নেই তাহলে গেল কোথায়? কিয়ারার সাথে রাস্তা ঘুরতে বের হয়েছে নাকি? যদি তাই হয় তো মার একটাও মাটিতে পারবে না। কান টেনে লম্বা করে দেবে। একথা ভেবে শীতলের রুম পার হতে গিয়ে দেখল দরজা ভিজিয়ে রাখা। রুমে আছে নাকি? ইদের দিন রুমে বসে থাকার মেয়েও তো সে নয়। তবুও একবার নক করতেই শীতল খ্যাঁক করে বলে
উঠল,

_’ওই কে রে বাল? উঠতে পারব না যার দরকার ভেতরে চলে আসুন।’
ঝাঁঝালো কন্ঠে শুনে শুদ্ধ বিরবির করে বলল,
_’বেয়াদবটাকে ম্যানার্স শিখাতে পারলাম না। ওই কে রে বাল আবার কি কথা? চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিলে যদি শিক্ষা হয়।’

বিরবির করতে করতে সে রুমে ঢুকে দেখে শীতল পেটে বালিশ চেপে চুপ করে শুয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে এইটুকু হয়ে আছে। সকালে যেই ড্রেসে দেখে গেছে এখনো পরনে ওই ড্রেস। তারমানে শাওয়ারও নেয় নি, কিন্তু কেন? কেন এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু একটা বুঝে নিলো। সব কথা মুখে না বললেও বুদ্ধিমানরা ঠিক ঠিকই ধরে ফেলে। হঠাৎ শুদ্ধকে দেখে শীতল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওড়না কোথাও? তড়িঘড়ি ওড়না খুঁজতে গিয়ে খেয়াল করল ওড়না দিয়ে তার পায়ের পেটি বাঁধা। কোমর থেকে পা অবধি কেমন কামড়াচ্ছিল তাই পা বেঁধে রেখেছিল। ওড়নায় যা গিট্টু মারা মেরেছে খুলতেও দু’মিনিট লাগবে তাই পাশে রাখা তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে নিলো। শুদ্ধর দৃষ্টি ততক্ষণ ছিল শীতলের স্টাডি টেবিলের চেয়ারে। চেয়ারে ঝুলানো নতুন টি-শার্ট। একদিন পরে তারপর আর খুঁজে পায় নি। এই লোভী বিড়াল হাতিয়েছে আন্দাজ করে খোঁজও করে নি। শুদ্ধর পরনে এখনো সকালের সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। শীতল
মুগ্ধ হলো। মিনমিন করে বলল,

_’কিছু বলবেন শুদ্ধ ভাই?’
_’ডাকাতি করে নয় হাজার টাকা দিয়ে ড্রেস কিনে নিলি। বলিস নি তো সেটা তুলে রাখার জন্য?’
_’পরে পরব।’
_’পরে কেন?’
_’এমনি।’
_’যা শাওয়ার নিয়ে আয় ঘুরতে বের হবো।’
_’ শরীর ভালো লাগছে না। মাথা ঘুরছে। আপুদের নিয়ে যান।’

অথচ অন্যসময় হলে ঘুরতে যাওয়ার কথা শোনামাত্রই সেই লাফিয়ে উঠত। আজ যেন তার সব খুশি ফুরিয়ে গেছে। শুদ্ধ সালামির খামটা এগিয়ে দিলে শীতল অভিমানে থমথমে মুখ তাকিয়ে রইল। সকালে তো বললই সালামি হিসেবে টাকা নিবে না এবার। যা চেয়েছে দিলে পারলে যেন সেটাই দেয়। নতুবা টাকা ফাঁকা লাগবে না তার। বাবা এসেছে একটু ঢং করে মুখ ফুলালেই টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু টাকা তো চায় না তার। চায় জলজ্যান্ত বিশুদ্ধ পুরুষটাকে। একদম আপন করে। নিজের করে।
শীতল খাম ধরছে না দেখে শুদ্ধ বলল,

_’ধরছিস না কেন?’
_’লাগবে না।’
_’না লাগলেও ধর।’
_’আমার বাবার অনেক টাকা আছে অন্যের টাকা না নিলেও চলবে।’
শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকাল। নিচের ঠোঁট কামড়ে কোনোমতে হাসি আঁটকে বলল,
_’তোর বাপের যা আছে সেটা নিবি না তাই তো? তা তোর বাপের কিসের অভাব? কি লাগবে, কিসে খুশি তোর বাপ?’
_’মেয়ের খুশির ধার ধাঁরে না আসছে মেয়ের বাপের খুশি ঠেকাতে।’
একথা বলে শীতল মুখ বাঁকাল। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই বসল। একটু আগে খাওয়া শীতলের এঁটো পানিটুকু শুদ্ধ পান করে বলল,

_’আজ বিশেষ দিন যেহেতু অখুশি রাখব না কাউকে, বল কি চাস?’
_’আর কতবার বলব?’
—’যতবার জানতে চাইব।’
_’এতবার জানিয়েও যখন প্রাপ্তির খাতা শূন্য তাহলে জানাব কেন?’
একথা বলে শীতল অভিমানপূর্ন চোখে শুদ্ধর দিকে তাকাল। তবে তার
চোখ যেন বলে দিচ্ছে মনের কথা। কন্ঠস্বর যেন চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে, ‘আমার হয়ে যান বিশুদ্ধ পুরুষ। ইদ সালামি হিসেবে আপনার ‘আমিটা’ শুধু আমার জন্য চিরস্থায়ী হোক।’
শীতলকে চুপ থাকতে দেখে শুদ্ধ পুনরায় খাম এগিয়ে দিলো। শীতল
পুনরায় গোঁ ধরে বলল,

_’বললামই তো সালামি লাগবে না।’
_’অন্যদের দিয়ে দিবো?’
_’হুম।’
_’ভেবে বলছিস?’
_’হুম।’
_’ সালামি হিসেবে স্বয়ং শুদ্ধ ছিল, তাকেও কি তবে..?’
_’হুম।’

একথা বলে শীতল তড়িৎ তাকাল শুদ্ধর দিকে। চোখ-মুখে বিষ্ময়। তাকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে শুদ্ধ হাত ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো শীতলকে। আকষ্মিক কান্ডে শীতল বাকহারা। নড়চড়ও ভুলে গেছে যেন।
বুকের ভেতর অদ্ভুত শিহরণ। হাত-পা যেন কাঁপছে। তার মাথা ঠেঁকেছে শুদ্ধর বুকে। তবে কি শুদ্ধ ভাই মেনে নিচ্ছে তাকে? সত্যি? সত্যি সত্যিই তার ব্যক্তিগত পুরুষ হবে শুদ্ধ ভাই? তার এখনো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে কেন? নাকি সত্যিই স্বপ্ন দেখছে একটুপরেই ঘুম ভেঙে যাবে? যদি স্বপ্ন হয় তো এই ঘুম না ভাঙ্গুক। আর যদি সত্যি হয় তো আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ সে। তার অবস্থা দেখে শুদ্ধ ফিচেল হাসল। বাঁধন একটু শক্ত করে ধরল। তারপর একটু ঝুঁকে কানে কানে বলল,

_’ইদের দিন সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়াতে কোলাকুলি করা উত্তম।’
একথা শুনে শীতল শুধু লাজুক হাসল। তার গালজোড়া কেন জানি লাল হয়ে উঠেছে। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। হঠাৎ কি ভেবে তার
কম্পিত হাতজোড়া রাখল শুদ্ধর পিঠের উপর। না স্বপ্ন নয় এই যে প্রিয় পুরুষটাকে ধরতে পারছে। ছুঁতে পারছে। অনুভব করতে পারছে। তখন শুদ্ধ হঠাৎ বলল,
-‘এবার সবার সামনে আমাকে গ্রহন করতে যদি পিছিয়েও যাস তাহলে আমায় চিরতরে হারাবি। ওয়াদা করে বলছি, সত্যিই হারাবি। কেঁদে মরে গেলেও আমাকে পাবি না। যেন না পাস এজন্য তোকে আমার বিয়েতে প্রধান সাক্ষী করে অন্য মেয়েকে নিয়ে বাসরে ঢুকব আমি।’

একথা শুনে শীতল শক্ত করে খামচে ধরল শুদ্ধকে। কয়েকবার মাথা নাড়িয়ে বোঝাল এসব শুনতে চাস না। এসব কথা শুনলে তার নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। তার অবস্থা দেখে শুদ্ধর বুকের ভারটা যেন কমে এলো।
বুঝল, হারানোর ভয়টা ভালো ভাবেই শীতলের মনে ঢুকাতে পেরেছে।
তাই মনে মনে খুশি হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে সিমিন দাঁড়িয়ে আছে।
উনাকে দেখে শুদ্ধ সোজা হয়ে দাঁড়াতেই শীতল বাঁধা দিলো। মাকে না দেখে শুদ্ধকে খাবলে ধরে পুনরায় মাথা রাখল প্রিয় পুরুষটার বুকে। এবার শুদ্ধ তাকে সরাল না বরং সিমিনের আগুন চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টিতে। তখন সিমিন হাতের প্লেটটা স্বজোরে আছড়ে ফেলতেই শীতল চমকে উঠল। বিষ্ফোরিত দৃষ্টিকে মাকে দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। মেয়ের বেহায়াগিরি নিজের চোখে দেখে রাগটাকে সামলাতে পারলেন না তিনি। মারতে তেড়ে আসতেই শুদ্ধ শীতলকে আড়াল করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর ঠান্ডা সুরে বলল,

-‘এখানে এই বিষয়ে কোনো কথা হবে না ছোটো আম্মু। যাবতীয় কথা হবে ড্রয়িংরুমে সবার সামনে।’
একথা বলে সে শীতলের হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে গেল। শুরুর দিকে জোরে হাঁটলেও কিছু একটা মনে করে ধীরে সুস্থে সিঁড়ি দিয়ে নামল।
এদিকে সিমিনের সাথে তখন সাম্য সৃজনও গিয়েছিল। কারণ সকাল থেকে শীতলকে তারা দেখে নি। এদিকে সালামি টাকা গুনার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তারা শুদ্ধ শীতলকে জড়াজড়ি অবস্থায় দেখে সিমিনের প্লেট ছোঁড়া দেখে বিপদের সংকেত বুঝে গেছে। তাই দৌড়ে চলে গেছে সায়নের কাছে। ঘুমন্ত সায়নকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ডাকছে,

-‘ সায়ন ভাইয়া! এই সায়ন ভাইয়া, ওঠো তাড়াতাড়ি দেখো সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
-‘প্যাঙ্গার দল জ্বালাস না তো। ঘুমাতে দে।’
-‘ওইদিকে গিয়ে আগে দেখো কি হয়েছে? শুদ্ধ ভাইয়া আর শীতল আপু চুপিচুপি প্রেম করছিল। তখন ছোটো আম্মু দেখে ফেলেছে। এখন ওদের দুমদুম করে মারবে বোধহয়।’
-‘শুদ্ধ আর শীতলের প্রেম কবে হলো যে তারা প্রেম করছিল?’
-‘জড়াজড়ি করলেই তো প্রেম হয়ে যায়। তুমি কিছুই জানো না দেখছি।’
এবার সায়নের ঘুম ছুটে গেল। চোখ বড় বড় তাকিয়ে কিছু বলার আগে শুনতে পেল নিচে গোলমাল হচ্ছে। তাহলে ঘটনা সত্যি নাকি? সে তড়িৎ
লাফ মেরে উঠে নিচে যাওয়ার জন্য ছুটল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই দেখল বড়রা সবাই জড়ো হয়ে গেছে। শুদ্ধর কোমরের কাছটার পাঞ্জাবি
খামচে ধরে তার পেছনে শীতল দাঁড়িয়ে আছে। ফিসফিস করে কাঁদছে।
সে গিয়ে দাঁড়াতেই সিমিন শাহাদত চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,

-‘এবার হলো তো? মিলল আমার কথা?’
-‘সিমিন থামো। ব্যাপারটা আগে বুঝতে দাও। শুদ্ধ কি হয়েছে?’
শুদ্ধ তখনো শিনা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। না আছে তার চোখে ভয়। আর না কন্ঠে বিব্রতবোধ। শাহাদত চৌধুরীর কথায় সে এবার অকপটে জবাব দিলো,
-‘ আমি শীতলকে বিয়ে করতে চাই। কবে, কখন, জানি না তবে সে বউ হলে আমার বউ হবে।’
অকপটে বলা কথা শুনে থমকে গেল ড্রয়িংরুম। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন সকলে। তখন সিমিন খেঁকিয়ে উঠে বললেন,

-‘এ হয় না এটা রক্তের অপমান!’
-‘কেন হয় না?’
-‘কারণ তোমরা ভাই-বোন..!’
শুদ্ধ এবার উনার কথা কেড়ে ভুলটা সংশোধন করে দিলো,
-‘উহুম একটু ভুল হলো। আমরা চাচাতো ভাই-বোন। যেখানে আমাদের ধর্মে জায়েজ আছে সেখানে আর কোনো বাড়তি কথার কারণ দেখছি না।’
এবার সিরাত মুখ খুললেন,
-‘মানলাম ধর্মে জায়েজ তবুও মানুষ কি বলবে?’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪১

-‘বাইরের মানুষের ধাঁর কবে ধারলাম আমি ,ঠিকঠাক মনেও তো পড়ছে না? আর তোমরা কেউ বলে দাও নি কেন চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে কিছু হওয়া যাবে না। এখানে মূলত ভুলটা আমাদের নয়, তোমাদের!’
একথা শুনে এবার সিমিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,
-‘এত যুক্তিতর্ক শুনতে চাই না। আমি মানি না তোমাদের সম্পর্ক।’
-‘সেটা তোমার ব্যাপার। জানানো দরকার তাই জানালাম মানলে ভালো নয়তো আমাদের পথ আমরা বেছে নেবো।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৩