শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৫২
নূরজাহান আক্তার আলো
-‘ হেই বাবুই পাখি পালাচ্ছ বুঝি?’
কন্ঠে দরদ মিশিয়ে ভীষণ আদুরে সুরে কথাটা বলল ইয়াসির। তবে হঠাৎ এত কাছে ইয়াসিরকে দেখে শীতলের শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠল।
অজানা আতঙ্কে ঘামতে লাগল। এদিকে গলাটাও শুকিয়ে কাঠ। আতঙ্ক, ভয়ে বুকটা ধুকপুক করছে ঠিকই কিন্তু তার মস্তিষ্ক পুরো সজাগ। তাকে বারবার সংকেত পাঠাচ্ছে; স্বাভাবিক থাকতে হবে, চৌধুর বাড়ির কেউ না পৌঁছানো অবধি নিজেকে সেইভ করতেই হবে৷ নিজের সন্মান নিজে
রক্ষা করতে হবে। তার বিশুদ্ধ পুরুষের জন্য হলেও সেইভ থাকতে হবে।
তার কিছু হলে বিশুদ্ধ পুরুষটা কষ্ট পাবে। আর বেঁচে থাকতে সে কখনো তার কষ্টের কারণ হবে না। মেয়েটা সে বয়সে ছোটো হতে পারে। দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান কমতে থাকে পারে, বোকা হতে পারে কিন্তু মনে এ কদিনে শুদ্ধর প্রতি ভালোবাসা জমিয়েছে সেটা একদম খাঁটি। এই ভালোবাসায় না আছে খাঁত ;আর না আছে বিন্দুপরিমাণ স্বার্থ। আর সেই পুরুষটাকে
কষ্ট দেবে? দিয়ে নিজে ভালো থাকতে পারবে? ভালো থাকাটুকুও পরের
হিসাব, সে কী বাঁচতে পারবে? পারবে না, পারবে না, কখনো না কখনো যদি সে নিজে শুদ্ধর কষ্টের কারণ হয়ে যায় নিজের অস্বস্তি মুছে ফেলবে পৃথিবী থেকে। সে আজকাল তাকে ছাড়া কিছু ভাবতেও পারে না। মাত্রই কদিন হলো সম্পর্কে জড়িয়েছে অথচ এখন মনে হয় তাকে ছাড়া বাঁচায় অসম্ভব। তবে পরিস্থিতি তো সব সময় একরকম থাকে না। ক্ষেত্রবিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সহজ-সরল, বোকা-সোকা,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
থাকাও ভালো কেনোনা বেশি বুঝতে গেলেি ঝামেলা। কিন্তু এতটা বোকা হওয়া যাবে না যে অন্যের চাইলে সহজে ক্ষতি করতে পারে। সে চৌধুরী বাড়ির মেয়ে। আর চৌধুরী বাড়ি তার জন্য নিরাপদ স্থান হলেও বাড়ির বাইরে পদে পদে বিপদ। সারা পথ কাঁটায় ভরা। এখন তাকে কাঁটা দেখে পথ চলতে হবে..ঠিক ততক্ষণ চলতে হবে যতক্ষণ না তার প্রিয় পুরুষটা তার কাছে এসে পৌঁছায়। সে জানে শুদ্ধ আসবেই। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ইয়াসির তাকে লুকিয়ে রাখুক সেভাবেই হোক শুদ্ধ সেখানে পৌঁছাবেই।
শুধু শুদ্ধই নয় তার বাকি ভাইরাও তাকে পাগলের খুঁজতে বের করবেই।
এটাই তার বিশ্বাস! তবে না পৌঁছানো অবধি নিজের সন্মান নিজে রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু একজন কিডন্যাপারের কাছে থেকে সে নিজেকে কতক্ষণ সেইভ করতে পারবে? বা করা যায়? অচেনা অদেখা মানুষটার সঙ্গে ভদ্রতার খাতিরে দুটো কথা বলা যায়, সাহায্য করা যায়,
কিন্তু বিশ্বাস? একবাড়িতে, এতরাতে বিশ্বাসের ব্যাপারটা বোকামি হয়ে যায় না? বলা বাহুল্য, সবচেয়ে মন্দ ঘটনাও যদি ঘটে যায় কিছু করতে পারবে না সে। ফাঁকা বাড়িতে কেউ বাঁচাতেও আসবে না। শুধুমাত্র তার অসহায়ত্বের সাক্ষী থাকবে প্রানহীন জড়বস্তুগুলো। আবার নিজে নিজে একটা কিছু করবে এটাও রিক্সি হয়ে যাবে। লোকটা যদি তার অভিনয় ধরে ফেলে? রাগের বশে যদি….! আর একজন সুঠাম দেহের পুরুষের শক্তির সাথে পেরে উঠবে না। কখনোই না! বরং গায়ের শক্তি দেখাতে গেলে হার নিশ্চিত। তাছাড়া লোকটা প্রচুর চালাক। এতটাই চালাক এসে অবধি তার প্রতিটা কদমে নজরবন্দী করছে। এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন ভেতরের কথাগুলো পড়ে ফেলবে। এভাবে নজরবন্দি করলে কিভাবে পালাবে সে? সে যে এখানে আছে শুদ্ধর কাছে অন্তত একটা ক্লু পাঠাতে হবে। আগেরবার জানানোয় প্রাণে বেঁচেছিল। কিন্তু এবার? এবার কেউই তার বর্তমান অবস্থার কথা জানে না! এমনকি সে এখন কোথায় আছে নিজেও বলতে পারবে না। রেস্টুরেন্টে স্বর্ণ ওয়াশরুমে গিয়েছিল এরপর বোনের কি হলো? তাকে না পেয়ে নিশ্চয়ই পাগলের মতো খুঁজে চলেছে।তার থেকে খবর পেয়ে বাবা-ভাইয়রা হন্ন হয়ে খুঁজছে। বিশুদ্ধ পুরুষটার কানে ওর নিঁখোজের কথা পৌঁছেছে তো? সে কি খুব বেশি রেগে গেছে? বকছে খু্ব? বকলে বকুক, মারুক, যা ইচ্ছে করুক তবুও নিতে আসুক।
তার এখন খুব ভয় লাগছে। অজানা ভয়ে অন্তর আত্মা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। এইটুকু সময়ে এসব নানান কথা ভাবতে ভাবতে শীতল ঘেমে ওঠা হাতের তালু শক্ত করে মুঠো করে ধরল। তারপর নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাল। এরপর ঢোক গিলে
মুখে হাসি এঁটে ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরতেই দেখে ইয়াসির কাছাকাছিই দাঁড়িয়ে আছে। ঈগল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখ, মুখে বেশ থমথমে ভাব! তাকে এভাবে তাকাতে দেখে শীতল মাথা নিচু করে থুতনী গলার সাথে ঠেঁকিয়ে নিলো। তারপর আচমকা ঠোঁট ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলেন? এত বড় বাড়িতে একা থাকা যায় নাকি? তাও এ রাতের বেলা?’
ইয়াসির এখনো ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার অন্তভেদী চাহনী যেন
মনের কথা পড়ে ফেলতে সক্ষম। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে শীতল ঢোক গিলে পুনরায় মিনমিন করে বলল,
-‘একা বাড়িতে থাকার অভ্যাস নেই আমার। অন্ধকারে প্যানিক এ্যার্টাক হয়। নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলি। আমার বাড়ির মানুষের কাছে আমাকে পৌঁছে না দেওয়া অবধি একা ফেলে যাবেন না প্লিজ।’
একথা বলে শীতল হেঁচকি তুলে কেঁদে ফেলল। আসলে কান্নাটা এতক্ষণ চাপিয়ে রাখলেও এবার আর সম্ভব হলো না। অভিনয় ভালো জানে সে।
কিন্তু তার থেকেও বড় অভিনেতা তারই সামনে দাঁড়িয়ে,নতুবা কিডন্যাপ করে এনে মনভোলা গল্প শোনায়? তাকে অঝরে কাঁদতে দেখে ইয়াসির
এগিয়ে আসতেই শীতল দু’পা পেছনে পিছিয়ে গেল। তাতে ইয়াসিরের রাগ হলো। ইচ্ছে করল একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু এটা করলে এই মেয়েকে এখানে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। তাই থমথমে সুরে সে বলল,
-‘তোমার কেন মনে হলো আমি কোথাও গিয়েছিলাম? তারমানে আমাকে সারা বাড়ি খুঁজেছো?’
-‘হুম।’
-‘পাও নি?’
-‘না।’
-‘কোথায়, কোথায় খুঁজেছো?’
-‘বেডরুম, ওয়াশরুম, রান্নাঘর আর ড্রয়িংরুম।’
-‘কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে নয় খুঁজেছো তোমার পালানোর পথ।’
-‘ পালানোর পথ? কি আশ্চর্য, পালাব কেন? এতরাতে পালিয়ে কোথায় যাব? তাছাড়া আপনি কী আমাকে কিডন্যাপ করেছেন যে এ মাঝরাতে পালাব?’
-‘মিথ্যা কি রেগুলার বলো নাকি মাঝে মাঝে?’
-‘ সুযোগ বুঝে।’
-‘ভেরি গুড, আমিও।’
ইয়াসির একথা বলতেই শীতল ইয়াসিরের হাতে স্বজোরে চিমটি কাটল। এত জোরে চিমটি দিয়েছে জায়গাটা সাথে সাথে লাল হয়ে গেছে। তাকে হঠাৎ চিমটি দিতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালে শীতল আমতা আমতা করে বলল,
-‘আপনার সঙ্গে আমার কত মিল তাই চিমটিটা দিলাম। লেগেছে খুব? আচ্ছা সরি।’
-‘ পাকনামি সাইডে রেখে এবার খাবে চলো।’
-‘ আপনার ফোনটা দিন বাবাকে কল করে আসতে বলি। বাবা আসতে আসতে আমার খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাবে।’
-‘আমার কাছে কোনো ফোন নেই। বললাম না, ডাকাতরা নিয়ে গেছে।’
-‘ওহ তাই তো। তা আশেপাশে দোকান-পাট নেই? কল করা যাবে না?’
-‘না। এখন মধ্যেরাত। আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ। কাল সকালে আমি নিজে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব। এখন এসো খাবে, খেয়ে ঘুমাবে।’
-‘কোথায় ঘুমাব?’
-‘আমার বেডরুমে।’
-‘কিন্তু শুদ্ধ ভাই ছাড়া অন্যকারো বেডরুমে আমার ঘুম আসে না যে?’
-‘তুমি শুদ্ধর রুমে ঘুমাতে? একসাথে, একবেডে? ‘
-‘ না, একসাথে না তো। আসলে, শুদ্ধ ভাইয়ের রুমটা খুব সুন্দর। যখন শুদ্ধ ভাই বাড়ি থাকে না তখন আমি ওই রুমে ঘুমাই। কি যে শান্তি লাগে।’
-‘ও আই সি। তাহলে অন্য কারো বেডরুমে যখন তোমার ঘুম আসেই না তাহলে এক কাজ করো, আমার কোলে বসে বুকে মাথা রেখে ঘুমিও, ওকে?’
-‘ কেন? আমি কী আপনার বেবি নাকি যে আমাকে কোলে বুকে জাপটে ধরে ঘুম পাড়াবেন? তাছাড়া আমার এত হ্যান্ডসার্ম বাবা চাই না, মানুষ মন্দ কথা বলবে।’
একথা শুনে ইয়াসির চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইল। ননসেন্স মেয়েটা বলে কি? আর বেবিকেই পুরুষ মানুষ বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়ায়? বউকে পাড়ায় না? নিজের মুখে স্বীকার করছে সে হ্যান্ডসাম আবার বলে কী না সে নাকি হ্যান্ডসাম বাবা চাই না! উদাহরণ দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে আর কোনো ডাক ছিল না? শেষে কী না বাবা! মোদ্দাকথা,তার নিজের কাছে নিজের ধৈর্য্যশক্তি দেখে অবাক হচ্ছে। কবে এত ধৈর্য্য হলো তার? কবেই বা মেয়ে মানুষের প্যানপ্যানানি শুনেও নিজেকে শান্ত রাখা শিখল। আজ
শীতলের জায়গায় অন্যকেউ থাকলে হাল বেহাল করত এতক্ষণে। কিন্তু
কেন জানি এই মেয়েটার খু্ব কাছে ঘেঁষতে পারছে না। জোরজবরদস্তি করতে মন সায় দিচ্ছে না। পুতুলের মতো আদুরে মুখটার দিকে তাকালে অন্যরকম কিছু অনুভব করছে। হাত নাড়িয়ে তার অনবরত কথা বলা,
খিলখিল করে হাসা, দুষ্টুমি দেখে বুকের ভেতরটা শীতলতায় শীতল হয়ে যাচ্ছে। এতদিন কত নারী, কত দেহের স্বাদ নিয়েছে, ধারণারও বাইরে। তাদের প্রতি কখনো মায়া হয় নি, কাউকে এতটা আদুরে লাগে নি, বরং আগে সুন্দরী মেয়ে পেলে দৈহিক কামনার দোহায় দিয়ে যন্ত্রণায় কাতর করে তুলেছে। তার সংস্পর্শে যখন যেই এসেছে শারীরিক যন্ত্রণায় সেই কুঁকড়ে উঠেছে। ভয় পেয়েছে। বাঁচার জন্য কত আকুতি মিনুতি করেছে।
এমনকি চৌধুরী বাড়ির মেজো কন্যা স্বর্ণ অর্থাৎ অগ্নিকন্যার ব্যাপারটাও এখন বড্ড ফিঁকে লাগছে। সামনাসামনি দেখেও নজর যাচ্ছিল শীতলের দিকে। অনুধাবণ করছে তার কাছে শীতলের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।
গতকালই বুঝেছে অগ্নিকন্যা তার কাছে কেবলমাত্রই মোহ। আর মোহের পেছনে দৌড়ে সময় নষ্ট করার মানেই না।
এতদিন মোহকেই মায়া ভেবে
একই জপ জপে গেছে, কিন্তু আর না। সে বুঝে গেছে তার অবুঝ মনের কথা, অনুভূতির কথা, উপলব্ধির কথা। কিন্তু সে তো ভালোবাসার রুলস জানে না। কোন নিয়মে ভালোবাসতে হয় তাও জানে না। শুধু জানে এই
পিচ্চি মেয়েটার সঙ্গ তার ভালোই লাগছে। তার বোকা বোকা কথায় খুব হাসতে ইচ্ছে করছে, পালাতে গিয়ে ধরা খেয়ে যখন কেঁদে ফেলল তখন কী যে মিষ্টি লাগছিল দেখতে। ইচ্ছে করছিল গাল দুটো টেনে দিয়ে জোর করে হলেও চুমু খেতে। কিন্তু সেসব করতে গেলে ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যেতে পারে তাই সে থমথমে মুখে তাকিয়ে দেখছিল।কিন্তু তাকে তাকাতে দেখে
শীতল ভাবল সে আবার রেগে গেছে। তাই বলল,
-‘ নুডুলস খাওয়ার মুড চলে গেছে। এখন খাব না কিছু। আমাকে একটু ঠান্ডা পানি দেন।’
-‘আমার মা, বোন, বউ কেউ নেই। আমি জানি না কোনো মেয়ের সাথে কীভাবে মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলতে হয়। না খেতে চাইলে কীভাবে হাতে তুলে খাওয়াতে হয়। কিভাবে তাদের মন ভালো করতে। মেয়িলি ব্যাপার বুঝতে আগ্রহী ছিলাম না কখনো। সেসব আমার পেশার সঙ্গে যায়ও না।
শুরু থেকেই তোমাকে যথেষ্ট ভদ্রতা দেখাচ্ছি। নিজেও ভদ্র হয়ে আছি।
তবে জানো তো বাবুই, ভদ্রতাকে সাইডে রাখলে আমি খুব রুড পারসন।
এতটাই রুড যে তুমি নিতে পারবে না। তাই বলছি, কথা বাড়িও না খাবে এসো।’
একথা বলে ইয়াসির শীতলকে টেনে ডায়নিং টেবিলে নিয়ে গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত ডিশের মধ্যে নুডলস নেই। টেবিল ভর্তি সব ইটালিয়ান খাবার। শীতল ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে প্লেট নিজের দিকে টেনে নিলো। বুকের ভেতরটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। আল্লাহ জানে, খাবার কোনো কিছু মেশানো টেশানো আছে কী না। এবার খাবে না বললে যদি রেগে যায়? বা কোনো সন্দেহ করে? সে ভয়ে ভয়ে মুখে খাবার দিয়ে চিবানোর আগে ইয়াসির বেশ নরম সুরে বলল,
-‘বাবুই? আমি মনের কথা চেপে রাখতে পারি না। এতক্ষণ মনের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম ঠিকই বাট পারলাম না। আসলে তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ভালোলাগার ধরণ বিয়ে করে বউ করার মতো। প্লিজ আমার কাছে থেকে যাও।’
-‘আমারও আপনাকে ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ওই নীল চোখ দুটো। আমি সিঙ্গেল হলে ক্রাশ খেতাম। আপনি না বললেও ওই চোখের মায়ায় পড়ে আপনার গলায় ঝুলে পড়তাম। কিছুদিন আগে এলে কিছু করা যেতো কিন্তু এখন তো আর সম্ভব না।’
-‘কেন সম্ভব না?’
-‘কারণ আমি বর্তমানে এক পুরুষে আসক্ত। আমার একটা বিশুদ্ধ পুরুষ আছে। তাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমার পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমার ব্যক্তিগত পুরুষ আরেকদিকে। আমি ছোটো মানুষ ভেবে ভাববেন না তাকে ছোটো করেই ভালোবাসি। মোটেও তা নয়, তাকে আমার পুরোটা দিয়েই ভালোবাসি। নিঁখোজ হয়ে এই যে আমি এখানে,
আমার বিশুদ্ধ পুরুষের মনের অবস্থা আমি দূরে থেকেও অনুভব করতে পারছি। আমি এটাও জানি সে পাগলের মতো আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
সে আবার অন্য ধাঁচের পুরুষ কী না, যদি জানে আপনার সঙ্গে অহেতুক বকবক করেছি তাতেও রেগে যাবে। আর যদি জানে ক্রাশ খেয়েছি তবে
আমাকে জ্যান্ত কবর দিবে।’
-‘ভুলে যাও তাকে। আমি তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখাব।’
-‘ না, আপনি বরং অন্য মেয়ে বেছে নিন ঘটকালি নাহয় আমিই করব।’
একথা শুনে ইয়াসির ঠান্ডা দৃষ্টি ছুঁড়ল শীতলের দিকে। শীতল নির্বিকার ভাবে মুখে খাবার দিয়ে ধীরে ধীরে চিবাতে লাগল। তখন ইয়াসির আবার বলল,
-‘ আমার হয়ে থেকে যাও এক পৃথিবীর সুখ এনে দেবো তোমার কাছে।’
-‘সুখে না থাকলে সুখে থাকার লোভ করতাম। কিন্তু আমি তো সুখী। কে নেই আমার? কি নেই? আমার সব আছে, সবাই আছে, তাহলে আপনার কাছে কেন থাকব?’
-‘ তাহলে প্রমাণ হয়ে গেল পালাচ্ছিলে তুমি। কিন্তু কেন?’
-‘কারণ আমি বুঝে গেছি আপনি আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছেন।’
-‘কিডন্যাপ করলেও কী মেরেছি নাকি বকেছি? কিছুই তো করি নি। খুব
আদরে রাখতে চাচ্ছি ভালো লাগছে না, না?’
শীতল চোখ তুলে তাকাল না। এতক্ষণ অভিনয় করতে করতে নিজেরও অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে করছে কাঁটা চামচটা এই হতচ্ছাড়ার চোখে ঢুকিয়ে দিতো। টেনশনে তার শ্বাস আঁটকে আসছে আর এই লোক কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই যাচ্ছে। তবে সে রাগ দেখাল না। হাসল না। এমনকি ভয়ও পেল না। তবে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে হাসি মুখে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল,
-‘আমার বোন কোথায়? অগ্নিকন্যা ডাকেন আমার বোনকে অথচ আজ কিডন্যাপ করলেন আমাকে, কিন্তু কেন? ‘
ইয়াসির এবার অবাক হলো। প্লেটে নাড়াচাড়া করতে থাকা চামচ থেমে গেল। সে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
-‘তুমি জানলে কিভাবে?’
শীতল জবাবের আশেপাশে না গিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। চোখে মুখে দুষ্টুমির ঢেউ। এই মুহূর্তেও ইয়াসির চেয়ারে হেলান দিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। নিশ্চুপ হয়ে কতক্ষণ দেখল চঞ্চলাবতীর মিষ্টি চঞ্চলতা। এরপর নিজেও ফিচেল হেসে বলল,
-‘প্রয়োজনে শুদ্ধকে মেরে দেবো তবুও তোমাকে আমি ছাড়ছি না বাবুই পাখি। একদমই ছাড়ছি না!’
একথা শুনে শীতলের হাসির বেগ যেন দ্বিগুন বাড়াল। সে হাসতে হাসতে
জবাব দিলো,
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৫১
-‘ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বোকা যতক্ষণ আমার আপনজনরা সুস্থ থাকে।
নয়তো আমিও কিন্তু চৌধুরীদেরই রক্ত!ওহ হ্যাঁ কি যেন বললেন, আমার বিশুদ্ধ পুরুষকে মারবেন? মারা তো দূর, তার দিকে শুধু হাত বাড়িয়েই দেখুন না, হাতটা হাতের জায়গায় রাখি কী না!