শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৫৮
নূরজাহান আক্তার আলো
-‘এ্যাই যে আমাদের লাভগুরু শোয়াইব শুদ্ধ ওইদিকে কই যাস?’
লিফট থেকে বেরিয়ে কয়েক ধাপ এগোতেই হাসানের গলা শুনে দাঁড়িয়ে গেল শুদ্ধ। হাসান এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে শুদ্ধর কাঁধ চাপড়ে বলল,
-‘সোনা বাঁধানো কপাল রে তোর ভাই নয়তো কেমনে কী! আমি দৃশ্যটুকু জাস্ট ভুলতে পারছি না। এই তোর ব্যাঙাচি! যাক অবশেষে আল্লাহর
দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া যে এখন সব ঠিকঠাক।’
শুদ্ধ আপাতত সকালের সেসব ঘটনার ধার না ঘেঁষে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
-‘তোকে রেস্ট করতে পাঠিয়েছি তুই এখানে কি করছিস?’
-‘ঘুম আসছে না তাই পায়চারি করছিলাম। আমার কথা রাখ। আগে বল
তুই এখানে কেন? তোকে না প্রেম করতে স্পেস দিয়ে এলাম?’
-‘ডাক্তার ডেকেছে।’
-‘ডাক্তার? কোন ডাক্তার?’
-‘আলতাফ খন্দকার।’
-‘হঠাৎ?’
-‘জানি না। কি বলবে শুনতেই তো যাচ্ছিলাম।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘তুই সিওর? না মানে আমি কিন্তু পাকিং লটে আলতাফ স্যারকে অনেক আগে বেরিয়ে যেতে দেখেছি। কথাও হয়েছে আমার সাথে। আমি যতদূর জানি উনার ভাবি সুইসাইড করেছে আজ রাতে উনি হসপিটালে থাকতে পারবে না। এজন্য মুজাহিদ স্যারকে দায়িত্ব দিয়ে উনি ছুটেছেন ফেনির পথে।’
একথা শুনে হাঁটতে থাকা শুদ্ধর পা আচমকায় থেমে গেল। তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে হাসানের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। অতঃপর কিছু বুঝে দুই বন্ধু দৌড়ানো শুরু করল। তাদের মস্তিষ্কে ক্যাচ করছে খারাপ কিছুর ইঙ্গিত। লিফটের আশা না করে সিঁড়ি দিয়েই নামতে লাগল দ্রুত গতিতে। কেবিনের কাছে এসে দেখে রেখে যাওয়া নার্স আশপাশের কোথাও নেই।
কেবিনের দরজা টানতে গিয়ে দেখে ভেতর থেকে বন্ধ। শীতল তো তখন ঘুমাচ্ছিল তাহলে কে লক করল? ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। পুরুষালি কন্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে। হাসান শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত
গলায় বলল,
-‘ভাই…ইয়াসির ভেতরে নাকি? ও কিভাবে? ওর গলায় তো মনে হচ্ছে। ‘
শুদ্ধ জবাব দিলো না বরং লাথি দিতে লাগল কেবিনের দরজায়। হাসান নিজেও লাথি কষাল দরজায়। পরপর লাথি দিতেই খুলে গেল দরজাটা।
তারা কেবিনে ঢুকে দেখে ইয়াসির শক্ত হাতে চেপে ধরে আছে শীতলের গলা। আর উন্মাদের মতো সমানে চেঁচিয়ে বলেই যাচ্ছে,
-‘কেন ভালোবাসবি না আমায়, হ্যাঁ? কেন বাসবি না? শুদ্ধর জন্য? ওকে,
তাহলে তোরও বাঁচার দরকার নেই। মরে যা তুই, প্রয়োজনে তোর কবরে রোজ কাঁচা ফুল দেবো নয়তো তোর দেহকে মমি বানিয়ে আমাকে কাছে রেখে দেবো।’
একথা বলে ইয়াসির হাতের বাঁধন আরো শক্ত করল। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে শীতল কাটা মুরগির মতো ছটফটিয়েই যাচ্ছে। চোখর সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। শুদ্ধ ক্ষীপ্ত গতিতে ইয়াসিরের শার্টের কলার ধরে তার দিকে ঘুরাল। তারপর কোনোদিকে না তাকিয়ে একের পর এক ঘুষি দিতেই থাকল। হাতের কাছে না পেয়ে প্যান্টের বেল্ট খুলে মারতে লাগল
উন্মাদের মতো করে।ইয়াসির অনেক চেষ্টা করেও পারল না শুদ্ধর সঙ্গে। মার খেতে খেতেই তার নাজেহাল অবস্থা হলো। তবুও সে সমানে বলেই চলেছে, ‘মুক্তি চাস না? মুক্তি? পাবি না।’ একথা শুনে শুদ্ধের শরীরে যেন
কেউ আগুন ধরিয়ে দিলো। সে বেল্টটা ছুঁড়ে ফেলে চেয়ার তুলে মারতে গেলে হাসান চিৎকার করে শুদ্ধকে ডেকে উঠল। শীতল হাঁপরের মতো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। চিৎকার শুনে শুদ্ধ চেয়ার ফেলেই ছুঁটে গেলে শীতলের কাছে। শীতলকে বুকে আগলে গিয়ে বলতে লাগল,
-‘শী..শীতল! ভয় নেই। এইতো আমি,,তাকা,,কোথায় কষ্ট হচ্ছে? বল বল আমাকে?’
শীতল ধীরে ধীরে চোখ বুঝে ফেলছে দেখে শুদ্ধ পাগলের মতো করতে লাগল। বুকের সাথে চেপে ধরে কত কী বলতে লাগল। গাল চাপড়ে ধরে ডাকতে লাগল। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসান চিৎকার করে ডাক্তারদের ডাকল। কিন্তু এদিকে কেউ নেই বিধায় কেউ এলো না।অগত্যা সে দৌড়ে ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে ডাক্তার ডাকতে গেল। ধস্তাধস্তির এক পযার্য়ে শীতলের হাতের ক্যানোলা টা ছিঁটকে কোথায় পড়েছে কে জানে জানে।
ক্যানোলা লাগানো হাতে দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। গুলি লাগা হাতের ব্যান্ডেজে লাল রক্ত ভেসে উঠেছে। শীতল চোখ বড় বড় করে হাঁ করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। শীতল হঠাৎ শুদ্ধর হাতটা আঁকড়ে ধরল। হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্টে উচ্চারণ করল,
-‘ কষ্ট হচ্ছে। শ্বা..শ্ব..নিঃশ্বাস নিতে পাচ্ছি না।’
একথা বলতে বলতে নার্স ডাক্তারও ছুটে এলো। পেশেন্টের অবস্থা দেখে অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে দিলো। শীতল হাঁপড়ের মতো শ্বাস নিতে লাগল একের পর এক। হার্টবিট দ্রুত গতিতে ছুঁটছে। তার চোখের কোণা বেয়ে ঝরছে অশ্রুবিন্দু। বেশ কিছুক্ষণ পর শীতলের নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হলো।
সে অক্সিজেন মাক্সটা সরাতে গেলে শুদ্ধ বারণ করলে শীতল সেভাবেই
কিছু বলল তবে অস্পষ্ট হলো। বোঝা গেল না। কিন্তু সে কিছু বলার জন্য উতলা দেখে ডাক্তার নিজে বললেন কি বলতে চায় শুনতে। একথা শুনে শীতল মাক্স সরাল ঠিকই তবে কিছু বলতে পারল না। বলতে গেলে তার
শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে। শুদ্ধ নিবার্ক! সে যেন বাকশক্তিও হারিয়েছে।
নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়েই আছে শীতলের মুখপানে। ডাক্তার যদি শীতলকে রেখে শুদ্ধর হার্টবিট চেক করতো তাহলে তাকেও বোধহয় পেশেন্ট বলে চিকিৎসার পরামর্শ দিতেন। তার এই নীরাবতা শীতলের সহ্য হলো না সে ফের হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-‘আমাকে বাড়ি নিয়ে চলুন নয়তো বাড়ির ডাকুন সবাইকে। নয়তো..!’
সে আর পুরো কথা বলতে পারল না তবে উঠে বসতে চাইল। তার হাত থেকে রক্ত ঝরছে দেখে নার্স রক্ত পরিষ্কার করছিল। শীতল হাত ছুটিয়ে নিয়ে শুদ্ধর বুকে আছড়ে পড়ে বলতে লাগল,
-‘আমার কাউকে দরকার নেই। কারো ভালোবাসার দরকার নেই।আমার আমার শুধু আপনাকেই চাই মানে শুধুই আপনাকে।’
-‘আমি তো শুধু তোর, তোরই। থাম না,, প্লিজ দোহায় লাগে একটু শান্ত হো।’
এতক্ষণ ডাক্তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল ওদেরকেই। মেয়েটা আঁকড়ে ধরে আছে ছেলেটাকে। বুঝতে বাকি রইল মূল ঘটনা। তবে পেশেন্টের কনডিশন দেখে উনি বলতে বাধ্য হলেন,
-‘ইয়াং ম্যান যা চাচ্ছে সম্ভব হলে রাজি হয়ে যাও। ওর শারীরিক মানসিক দুটোই বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গুলির আঘাত কারেন্টের শকের পর ও যে বেঁচে আছে এটাই তো শুকরিয়া। যতটুকু বুঝছি ওর হার্টেও সমস্যা করছে। যার কারণে বারবার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে! ওকে স্বাভাবিক করো নয়তো যা লক্ষণ দেখছি হার্ট অ্যাটাক করতে পারে যখন তখন।’
একথা বলে উনি শীতলকে শান্ত হতে বললেন। কিন্তু শীতল শান্ত হওয়া দূর শুদ্ধর বুকে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। পুনরায় অক্সিজেন মাক্স তার মুখে ঢুকিয়ে দিলো শুদ্ধ। সরাতে গেলে জোর ধরে ধরে মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে থাকল। ওদিকে নড়লেই গুলি লাগা হাত ব্যথায় টনটন করছে। সে অপষ্ট সুরে বিরবির করতে আছে। থামছে না দেখে শুদ্ধ আদুরে সুরে বলল,
-‘ আমি তোর। প্রমাণ চাস, হ্যাঁ? সকালটা হোক সকালেই বিয়ে করব।’
শীতল শুদ্ধর বুকে মাথা ঠেঁকিয়ে অনবরত মাথা নাড়াল। অর্থাৎ এখনই বিয়ে করবে। তাকে থামানো যাচ্ছে না দেখে ডাক্তার শুদ্ধকে কিছু বলে নার্সকে নিয়ে চলে গেলেন। শীতল রক্তমাখা হাতে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। তার কান্নার চোটে চোখের পানিতে শুদ্ধর বুকটাও ভিজে গেল।
তখন শীতল অস্পষ্ট সুরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগল,
-‘আমি আপনার বউ হবো শুদ্ধ ভাই। এখনই হবো,,এই মুহূর্তেই হবো। হয় আপনি আমায় এখনই বিয়ে করবেন নয়তো আমাকে মেরে ফেলবেন। আপনি ছাড়া অন্য কারো অযাচিত স্পর্শ আমার শরীরে এসে লেগেছে।
আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি মানতে পারছি না। আপনার পবিত্র ছোঁয়ায় হয় আমাকে পবিত্র করুন নয়তো আজই আমার কবর খোঁড়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
তাকে ব্যাকুল সুরে কাঁদতে দেখে শুদ্ধ কিছু বলার ভাষা পেল না। তারও চোখজোড়া ছলছল করে উঠল। অসহায় লাগছে খুব। সে নিজে মেরে শীতলকে কাঁদালে তখন কষ্ট লাগে না। ইচ্ছে করে আরো মেরে, বকে ব্যাঙাচিকে কাঁদাতে। কিন্তু সে ব্যাতীত কারো আঘাতে যখন শীতল কাঁদে ইচ্ছে করে পুরো পৃথিবীর ধ্বংস করে দিতে। সে এতদিন খুব করে চাইত
শীতল ভালোবাসা বুঝুক। সবার সামনে তাকে চাইতে শিখুক। একদিন সে শীতলকে বলেছিল একথা। আজ পরিস্থিতি এমন যে শীতলই ব্যাকুল হয়ে তাকে চাইছে,,তার ব্যাঙাচি তাকে চাইছে। আর কিছু ভাবার সময় নিলো না শুদ্ধ। শীতলের মাথাটা বুকে আগলে নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করল। কয়েকবার ঢোক গিলে নিজেকে সামলাল। প্রথমবার কল রিসিভ হতেই সে বলল,
_’বাবা? বা…বাবা? ঠিক আছো তুমি? হসপিটালের আসতে পারবে? কষ্ট করে হলেও এসো না বাবা….প্লিজ! তোমাকে যে আমার ভীষণ দরকার বাবা।’
-‘কি হয়েছে শুদ্ধ? গলা এমন লাগছে কেন? শীতল মা ঠিক আছে?’
-‘এসো বাবা,, তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ।’
ফোনকলে শুদ্ধর ভেজাকন্ঠ শুনে শারাফাত চৌধুরী শোয়া থেকে হুড়মুড় করে উঠে বসলেন। কাঁচা ঘুম ভাঙায় চোখে ঝাপসা দেখছেন। নিজেরও শরীরটা ভালো না। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। এখন রাত আড়াইটা। রাত এগারোটার দিকে স্বপরিবারে সবাই বাড়ি ফিরেছিলেন তাও শুদ্ধর কথায়। তখন শীতল একটু ভালো ছিল। তাহলে কি আবার খারাপ হয়ে গেছে? শুদ্ধ কাঁদছে কেন এভাবে? অকারণে কাঁদার ছেলে তো শুদ্ধ না।
বিপদে না পড়লে দুই ছেলের কেউ কখনো এভাবে ডাকে না। শারাফাত চৌধুরী যেভাবে ছিলেন সেভাবেই গাড়ির চাবি নিয়ে নামতেই পা সড়কে গেল। আসবাবপত্রে ব্যথা পেলেন। ব্যথা গিলে কল কেটে রুমের বাইরে আসতেই দেখে কেউ কেউ জেগে আছে। উনাকে এভাবে আসতে দেখে সিঁতারা, সিরাত, সিমিন, সাফওয়ান চৌধুরী কিছু বলার আগেই উনি বললেন হসপিটালে যাচ্ছে। একথা শুনে উনারাও তড়িৎ উঠে দাঁড়াল। এতরাতে যাচ্ছে মানে আবারও কিছু ঘটেছে? শারাফাত চৌধুরী মানা করলেও কেউই শুনলেন না বরং শখ স্বর্ণকে ঘুমন্ত সাম্য সৃজনের দিকে খেয়াল রাখতে বলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। গেটে থাকা দারোয়ানকে আদেশ করে গেলেন চোখ,কান খেলা রাখতে। ওদিকে শুদ্ধ সায়নকেও আসতে বলল একইভাবে। ভাইয়ের ডাক শুনে সায়নসহ তার সব বন্ধুরা হাজির হলো হসপিটালে।হাসান বেরিয়ে গেছে কাজি ডাকতে।
বেরিয়েছে ঠিকই কিন্তু এতরাতে কাজি পাবে কোথায়? অগত্যা অর্কদের জানাতেই তারা গেল কাজি অফিসের সামনে। সাইনবোর্ড থাকা ফোননং টুকে কল দিতে থাকল অনবরত। কাজি অফিসের বিল্ডিংয়েই থাকতেন কাজি। সবাই মিলে গিয়ে একপ্রকার চ্যাংদোলা করে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসাল। বেচারা কাজি ভয় টু শব্দ করতে পারলেন না। কারণ ছেলেগুলো
ভদ্রবেশের হলেও সবকটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এরা হাসতে জানে না। ভুলভাল কিছু বললেই ভবলীলা সাঙ্গ করে দেবে। অগত্যা উনি চুপ করে
মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলেন।
এদিকে ইয়াসির উঠে বসে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। শীতলের বলা প্রতিটা কথায় তার কানে ঢুকেছে। তার ছোঁয়া এত জঘন্য? শুধু ছুঁয়েছে বলেই সে এভাবে বলতে পারল? সে তো ছোটো থেকে দেখে বড় হয়েছে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা খুব কমন। নারী-পুরুষের দৈহিক ব্যাপারটাও খুব নরমাল। যেখানে সে শীতলকে দু’বার চুমু খেয়েছে নোংরা স্পর্শ করে নি। তাও এত ঘৃণা!
এদিকে শারাফাত চৌধুরীরা পৌঁছে শুদ্ধকে কেবিনের বাইরে না দেখে সকলে কেবিনে ঢুকতেই হতবাক হয়ে গেলেন। কারণ কেবিনে শুধু শুদ্ধ শীতল না মাফিয়া কিং ইয়াসির খানও উপস্থিত রয়েছে!রক্তাক্ত অবস্থায় এখনো সেভাবে বসে আছে। তাকে রাখার কারণও আছে যদিও। বিশেষ করে শুদ্ধ চাচ্ছে তার সামনে ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ করতে।শীতলের বেহাল
দশা আর ইয়াসিরকে দেখে বড়দের ঘটনা বুঝতেও দেরি হলো না। তবে শুদ্ধর থমথমে মুখ দেখে কেউ কিছুই বললেন না। নীরবেই মেনে নিলেন।
শারাফাত চৌধুরী নিজেই শাহাদত চৌধুরী কল করে ঘটনাটা জানালেন।
ভিডিও কলে উনিও উপস্থিত থাকলেন। তখন কাজি নিয়ে অর্করা এলো।
শীতল মাথায় ওড়না দিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। শুদ্ধ তার পাশে বসা। বাকিরা কেবিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়াল। কাজিকে
আদেশ করতেই উনি লেখালেখি সেরে বিয়ের পড়ানোও শুরু করলেন। প্রথমে শীতলকে কবুল বলতে বললে খুব একটা সময় নিলো না শীতল,
এ কয়েকদিনে হাঁপিয়ে গেছে সে। সে এবার স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায়।
শুদ্ধর সহধর্মিণীর পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চায়। তাছাড়া সে বুঝে গেছে বিয়ে ছাড়া ইয়াসির সহজে তার পেছন ছাড়বে না। তাদেরকে ভালো থাকতেও দেবে না। মনে মনে একথা ভেবে সে মনকে শান্ত করে
অঝরে কাঁদতে কাঁদতে শুদ্ধর নামে কবুল পড়ল। শুদ্ধকে কবুল বলতে
বলায় ইয়াসির ফুঁসে উঠল। উঠে দাঁড়িয়ে হাতের কাছে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস ছুঁড়ে মারল শুদ্ধর দিকে। সেটা গিয়ে নিঁখুত ভাবে লাগলও শুদ্ধর কপালে,, সঙ্গে সঙ্গে শুদ্ধর ভ্রু কেঁটে রক্ত গড়াতে লাগল। অর্ক, সায়নরা
হুংকার ছুঁড়ে তাকে মারতে গেলে শুদ্ধ ওদের থামিয়ে দিলো। কেউ তার দিকে এগোতে গেলে শুদ্ধই সরিয়ে দিলো তার কাছে থেকে। তারপর সে ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে শীতলের চোখে চোখ রাখল। সু-স্পষ্টসুরে তিনবার কবুল বলল। তাকে কবুল বলতে ইয়াসির হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠল,
-‘তুমি আজও আমার পাশে দাঁড়ালে না বাবা! আজও না! অথচ তুমিই আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে শীতলকে আমার হাতে তুলে দিবে। শুধু তোমার কথার ভিত্তিতে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। দিনের পর দিন পড়েওছিলাম তোমার কথা বিশ্বাস করে। তুমি আজও আমায় ঠকালে।
সব জেনেবুঝে আমাকে কষ্টের সাগরে ডুবালে। তুমি থাকতে আজ আমি আবারও হেরে গেলাম। ওরা আমাকে আবার হারিয়ে দিলো। তুমি প্রমিস রাখতে পারো না বাবা। ইউ আর লায়্যার বাবা..ইউ আর লায়্যার,,,আই জাস্ট হেট ইউ বাবা! আই জাস্ট হেট ইউ!
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৫৭
ইয়াসিরের চিৎকার করে বলা কথাগুলো শুনে সকলে হতবাক। উপস্থিত সকলে একে অপরকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। ইয়াসির কাকে বাবা বলছে? কে তার বাবা? এখানে বাইরের কেউ নেই, তাহলে? এদিকে তার কথা শুনে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছেন শারাফাত চৌধুরী। আপাতত বাকহারা তিনি।