সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১
Jannatul Firdaus Mithila
“মনে রাখিস, যদি কোনদিন এই এহসান পরিবারের কোন সদস্য তোর মতো ভুল করে বা করার চেষ্টাও করে তাহলে আমি কবির এহসান আজ সকলের সামনে কথা দিলাম তার সাথে এই পরিবারের সকল সম্পর্ক সেখানে সেই মুহুর্তে শেষ হবে এবং এই এহসান বাড়ির দরজা তার জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
আর একটা কথা সবাই কান খুলে শুনে রাখো,এই পরিবারের কেউ যদি ওর সাথে কোন প্রকারের যোগাযোগ করে কিংবা রাখার চেষ্টা সে আমার মরা মুখ দেখবে।এটাই আমার, এ-ই কবির এহসানের ওয়াদা।”
” না ভাইজান। আল্লাহর দোহাই লাগে ও কথা মুখেও এনো না।তোমরা ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।মা-বাবার পরে তোমরাই যে আমার সব।আমাকে শেষবারের মতো মাফ করে দাও ভাইজান মাফ করে দাও। ” পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
“চলে যা এখান থেকে। আর কোনোদিনও এ বাড়ির চৌকাঠ মাড়াবার দুঃসাহস ও করবি না ” পা থেকে হাতদুটো ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন কবির এহসান।
“ভাইজান আমার কথা টা শোনো,ভাইজান,, ভাইজান,, ” চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মহিলা টি।
“চলে যা,, চলে যা,,”
হঠাৎ করে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলেন কবির এহসান। উঠেই বুঝতে পারলেন তিনি আবারও সেই দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। পাশেই তার স্ত্রী জুবাইদা এহসান এতক্ষণ গভীর ঘুমে থাকলেও হঠাৎ করে স্বামীর এরূপ ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ার কারনে তার ঘুমও এতক্ষণে ছুটে গেছে।
হন্তদন্ত হয়ে স্বামীর কাধে হাত রেখে প্রশ্ন করলেন জুবাইদা বেগম,,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কিগো কি হলো তোমার? শরীর খুব খারাপ লাগছে? আবারও কি তোমার প্যানিক এ্যাটাক হলো নাকি?”
চিন্তিত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে নিজ স্বামীর বুকে-পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করতে লাগলেন। ইতোমধ্যে কবির সাহেব ঘেমে-নেয়ে একাকার। স্ত্রীর দুশ্চিন্তা দেখে অবশেষে মুখ খুললেন তিনি,,
“আহ! এত চিন্তা করো নাতো জবা,আমি ঠিক আছি, কিচ্ছু হয়নি আমার “। – এই বলে স্ত্রীকে আশ্বাস দিতে লাগলেন তিনি আর পরক্ষণেই মনে মনে ভাবলেন না জানি আল্লাহ কবে তাকে এই দুঃস্বপ্নগুলো থেকে রেহাই দিবেন।নাকি এই দুঃস্বপ্নগুলো আবারও কিছু অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অশনি সংকেত বয়ে আনছে। নাহ আর ভাবতে পারলেন না তিনি। ইতোমধ্যেই বুকের বা-পাশটায় কেমন যেনো চিনচিনিয়ে উঠছে। তাই নিজেকে একটু ধাতস্থ করে স্ত্রী কে বললেন,
” এক গ্লাস পানি দাও তো জবা আর সাথে ড্রয়ার থেকে একটা ট্যাবলেটও দিও”।
জুবাইদা বেগম শোনার সাথে সাথে পানি এবং ঔষধ এগিয়ে দিলেন এবং চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
“ওগো, তোমার কি বুকে ব্যাথা করছে? আমি কি রোদকে একটা কল করবো?
স্ত্রীর মুখে এরুপ কথা শুনে কবির সাহেব তড়িঘড়ি করে বলে ওঠলেন,
” আরে না-না, কি করছো কি,ছেলেটা সারাদিন ক্লান্ত থাকে তাকে এখন আর ডিস্টার্ব করো না, আর তাছাড়া এখন ঐ দেশে হয়তো রাত, ও হয়তো এতক্ষণে শুয়েও পড়েছে কেননা এখন প্রায় ভোর হতে চললো।তারওপর এখন আমার এই অবস্থা শুনলে ছেলেটা খামোখা টেনশন করবে। তাই ওকে এখন আর কল দিও না। আর এটা ঐ আরকি একটু আধটু ব্যাথা,যেহেতু ঔষধ খেয়েছি সেড়ে যাবে আশা করি। তুমি আর চিন্তা করো না তো।”
স্বামীর মুখে এরুপ কথা শুনেও পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হতে পারলেন না জুবাইদা বেগম কিন্তু এই মুহূর্তে ঠিক কি করবেন তাও বুঝতে পারছেন না।তাই আর তার সাথে তর্কে গেলেন না তিনি। পরমুহূর্তেই ভাবলেন সকালে উঠে নাহয় একবার ছেলের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলে নিবেন।এসব ভেবেই বিছানায় স্বামীর পাশে শুয়ে তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। কবির সাহেব একপলক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। পরমুহূর্তেই স্মৃতির দৃশ্যপটে আজ থেকে ১১ বছর আগের দৃশ্য গুলো ভেসে উঠতে শুরু করলো,,
(চলুন আগে সকলের পরিচয় জানা যাক)
এহসান ভিলা। নামে যেমন সকলের কাছে পরিচিত ঠিক তেমনি কর্মের দিক থেকেও সমাজে এহসান পরিবারের বেশ আলাদাই একটি সুপরিচিতি আছে।
জনাব মো: খায়রুল এহসান তিনিই নির্মাণ করেছেন এই ভিলা। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের সুখ্যাতীসম্পন্ন চেয়ারম্যান।সমাজে তার ন্যায় বিচারের জন্য তার বেশ নামডাক ছিলো।কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা এহসান। তার সন্তান ছয়জন। ৪ ছেলে ২ মেয়ে। তার বড় ছেলের নাম মো:কবির এহসান। একজন সফল ব্যাবসায়ি। তার স্ত্রী জুবাইদা এহসান। এই দম্পতির রয়েছে ১ ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলে ইফতেখার এহসান রৌদ্র । মেয়ে তাসনিয়া এহসান রুহি।
খায়রুল এহসানের ২য় ছেলে মো:সাব্বির এহসান। তিনি ও বড় ভাইয়ের মতো পারিবারিক ব্যাবসায় নিয়োজিত আছেন।তার স্ত্রী রাফিয়া এহসান একজন গৃহিণী। এই দম্পতির ও ২ সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে ইশতিয়াক এহসান অনিক এবং মেয়ে তাফসিরা এহসান অরিন।
খায়রুল এহসান এর ৩য় সন্তান আমরিন এহসান।
৪র্থ সন্তান জনাব মো: তায়েফ এহসান। একজন পুলিশ কর্মকর্তা।তার স্ত্রী মাইমুনা এহসান। তাদের রয়েছে ২ জমজ মেয়ে। আহিয়া এহসান এবং মাহিয়া এহসান। দুজনেই সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
খায়রুল সাহেবের ৫ম সন্তান মো:তাশরিক এহসান। তিনি একজন সরকারি ভার্সিটির প্রফেসর। তার স্ত্রী রাইসা এহসান। তাদের রয়েছে এক ছেলে তাকবির এহসান পুতুল সবে ক্লাস ৮ এ পড়ে।
সবশেষে রয়েছেন মাহমুদা মেহরিন এহসান। তার স্বামী সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মেজর)। তাদের রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে রাতুল ও মেয়ে রিমি
এহসান বাড়ির মুখ্যকর্তা জনাব মো : কবির এহসান। তিনি যা বলবেন তাই যেন এ বাড়ির শেষ কথা। অবশ্য এর কারনও আছে বৈকি। খায়রুল এহসান সাহেব যখন হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তখন কবির এহসান সবে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। বাবা মারা যাবার পর পুরো পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে চলে আসে। তখন তিনি পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পড়াশোনা ত্যাগ করে নিজের বাবার রেখে যাওয়া টাকা পয়সা দিয়ে একটা ছোটো খাটো ব্যাবসা দাড় করায়। পরবর্তীতে তার কঠোর পরিশ্রমে আজ সমাজে তিনি একজন বিশিষ্ট সফল ব্যাবসায়ি। এত ত্যাগ স্বীকার করার পরও তিনি তার ভাই-বোনদের কোন কিছুর কমতি বা কষ্ট দেননি।সকলকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার এই অবদান যে সকলের অবগত, যার জন্য পরিবারের সকলের শ্রদ্ধার পাত্র তিনি।
অতীত :-
সবকিছুই ভালো চলছিলো। পাড়া প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন সকলের কাছেই এহসান পরিবার হচ্ছে যৌথ পরিবারের রোল মডেল। কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় চলে আসে এই আদর্শ পরিবারে। বয়ে আনে কিছু দুঃখ, কিছু বিচ্ছিন্ন বেদনা।জনাবা ফজিলাতুন্নেছা এহসান হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক করেন।এবং কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান। তারপর থেকে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। বদল হয়েছে কিছু সদস্যদের বৈশিষ্ট্য,বদল হয়েছে এহসান পরিবারের কিছু নিয়ম।তখন কবির সাহেবের বড় ছলে রৌদ্র সবে ক্লাস ওয়ানে পড়ে,,
তারপর, তারপর কেটে যায় অনেক বছর। নদীর স্রোতের সাথে সময়ও যেনো নিজের তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
গ্রীষ্মের এক রৌদ্রময় দিনে দুপুরের কাঠফাটা রোদের প্রখরে শহুরে মানুষদের জিবন যেনো অতিষ্ঠ প্রায়,,তবুও নিজ নিজ জৈবিক চাহিদায় কতো মানুষই যে এই রোদ মাথায় নিয়ে নিজ নিজ কাজের গন্তব্যে যাচ্ছেন।কিন্তু এতসবের মাঝে ও আজ এহসান পরিবারের সকলের মাঝে রয়েছে ভিন্ন এক উৎকন্ঠা। সকল সদস্য( গৃহিনীরা বাদে) একসঙ্গে বসে আছেন বাড়ির বড় সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমে। তার পাশেই রয়েছে বাড়ির ডাইনিং রুম। তার কিছুটা দুরত্বে আছে বড় একটি কিচেন রুম,,,,যেখানে আপাততঃ বাড়ির গৃহিণীরা বিশেষ কিছু রাঁধতে ব্যাস্ত।বলাবাহুল্য এ বাড়ির কর্তাদের মতোই এ বাড়ির গৃহিণীদের মধ্যে রয়েছে অসম্ভব ভালো বন্ধন।
অবশ্য এর মূলে রয়েছে সকলের মন মানসিকতা। জুবাইদা বেগম এবং রাফিয়া বেগম হচ্ছেন বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের বন্ধুত্বের গন্ডি যে স্কুল পেড়িয়ে এখন অবধি। জুবাইদা বেগম এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর ২ বছরের মধ্যেই সাব্বির সাহেবের জন্য পাত্রি দেখা শুরু হয়। কেননা কবির সাহেব নিজ পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটু বয়স করেই বিয়ে করেন।যখন সাব্বির সাহেবের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিলো তখন জুবাইদা বেগমই রাফিয়া বেগমের কথা শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলে এবং তার কথামতো রাফিয়া বেগমকেই সাব্বির এহসানের বউ করে আনা হয়।অবশ্য রাফিয়া বেগমকে অপছন্দ করবার ও কারণ নেই। দুধে আলতা গায়ের রং এবং বড্ড ভালো ও মিশুক প্রকৃতির হওয়ায় সকলের বেশ পছন্দের তিনি। তাদের বিয়ের প্রায় ৫ বছর পর এ বাড়ির বউ করে আনা হয় মাইমুনা বেগমকে।তিনি ও যেনো বোনের মতো জা – দের পেয়ে বড্ড খুশি।খুব তাড়াতাড়িই তাদের সাথে বোনের মতো মিলে মিশে চলতে শিখে গেলেন তিনি। তার বেশ দু কি তিন বছর পর বাড়ির ছোট ছেলে বিয়ে করে আনে রাইসা বেগমকে। অন্য জা-দের চেয়ে ছোট এবং একটু চঞ্চল হওয়ায় সকলেই তাকে স্নেহ করে। তিনিও তার জা-দেরকে ভিষণ সম্মান করেন,,মাঝে মাঝে তো ভেবে ও বসেন এরা কি আসলেই একে অপরের জা নাকি আপন বোন। ভাগ্যিস আর পাঁচটা বাড়ির জা দের মতো না তার জা-গুলো।
বাড়িতে জুবাইদা আর রাফিয়া বেগমের রান্নার হাত বেশ ভালো। বেশিরভাগ রান্নাই তারা করেন। মাইমুনা বেগম রান্না পারলেও তাকে ততটা করতে দেননা তারা।আর রাইসা বেগমকে তো আর-ও আগে রান্না করতে দেননা তারা। তিনি জা-দের ঐ টুকটাক কিছু সাহায্য করে রান্নার বাহিরে এই আরকি।আপতত সকলেই ভিষণ ব্যাস্ত হাতে কাজ করছে। রাফিয়া বেগম রৌদ্রর জন্য গাজরের সন্দেশ বানাচ্ছেন নিজ হাতে,, কেননা ছেলেটা তার মেজো মার হাতের সন্দেশ টা ভিষণ পছন্দ করে।এদিকে জুবাইদা বেগমও ছেলের পছন্দের খিচুড়ি রান্না করছেন।আর মাঝে মাঝে সকলকে তাড়া দিতে লাগলেন,,,
“ওরে ছোটো তোর আর কতদূর রে সোনা
এক্ষুনি তাশরিক আর তায়েফ মিষ্টি হাতে এলো বলে,,,,ওরে মেজো তোর সন্দেশ আর কতদূর?
সেজো ড্রয়িং রুমের পরিস্থিতি কি একটু দেখে আয় না বোন। ”
জুবাইদা বেগমের অস্থির ভঙ্গিতে বলা কথাগুলো শুনে রাফিয়া বেগম আশ্বাস দিয়ে বলতে লাগলেন,,
“আরে জবা এত চিন্তা করছিস কেনো? আমাদের রৌদ্র হচ্ছে ভিষণ ট্যালেন্টেড ছেলে।তোর মনে নেই,,আমাদের ছেলেটা যে সবসময় বোর্ড স্ট্যান্ডে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।ওকে নিয়ে এতো টেনশন করিস না বোন,, দেখবি এবার ও প্রতিবারের মতো অসাধারণ রেজাল্ট করবে ইনশাআল্লাহ। তুই একটু শান্ত হ।”
রাফিয়া বেগমের কথায় তাল মিলিয়ে মাইমুনা বেগম ও বলতে লাগলেন ” মেজো আপা তো ঠিকি বলছে বড় আপা,, তুমি রোদকে নিয়ে শুধু শুধুই চিন্তা করছো,, আমাদের ছেলে অবশ্যই এস,এস,সি তে জিপিএ ৫ ই পাবে দেখে নিয়ো”
ওনাদের কথার মাঝেই রাইসা বেগম চঞ্চল পায়ে এগিয়ে এসে বললেন “বড় বু,মেজো বু, সেজো বু, ওরা এসে গেছে মিষ্টি নিয়ে আর রোদের রেজাল্ট ও নাকি বেরিয়েছে।জলদি এসো সকলে ডাকছে”
কথাগুলো শোনামাত্রই সকলে এগিয়ে গেলেন ড্রয়িং রুমের দিকে,,গিয়ে দেখতে পেলেন কবির সাহেব ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছেন,, ছাড়ার পরপরই সাব্বির সাহেব জড়িয়ে ধরেছেন,, তার ছাড়ার পরই তায়েফ সাহেব ভাতিজাকে সস্নেহে কপালে চুমু খেলেন। তার ছাড়ার পরই তাশরিক সাহেব ভাতিজা কে একেবারে কোলে তুলে নিলেন আর উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন,, ” আমার রোদ ট্যালেন্টপুলে জিপিএ ৫ পেয়েছে,, বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছে ”
কথাগুলো শোনা মাত্রই গৃহিণীরা চটজলদি এগিয়ে আসলেন রৌদ্রর কাছে,, জুবাইদা বেগমতো ছেলেকে জড়িয়ে কেঁদেই ফেললো আর ছেলের মুখে অজস্র চুমু খেতে খেতে বললেন “আমার আব্বা, জিপিএ ৫ পেয়েছে,, আলহামদুলিল্লাহ,,, ওরে রাফু তারাতাড়ি তোর সন্দেশ আন বোন,, আমার আব্বা কে তাড়াতাড়ি খাওয়া ”
কথাগুলো বলে পাশে তাকাতেি দেখলেন রাফিয়া বেগম আগে থেকেই সন্দেশের থালা নিয়ে হাজির,, কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,, “ছাড়তো বাপটাকে,, রোদ আব্বু একটু মিষ্টি মুখ করো ” রৌদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি খাওয়াতে খাওয়াতে বলতে লাগলেন। ওনার কথার মাঝেই বাকিরাও রৌদ্রর মাথায়,, মুখে অজস্র চুমু খেতে লাগলেন।
হুট করেই তাদের এতশত কথার মাঝে এক গুলুমুলু ছোট্ট খাট্টো একটা লাল টুকটুক ফ্রক পড়ে চঞ্চল পায়ের নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ তুলে একজন তার দুহাত দিয়ে রৌদ্রর কোমর জড়িয়ে ধরে পেছন দিয়ে। আর অভিমানি স্বরে বলতে থাকে,, ” তোমরা আমার রোদ ভাইয়াকে এভাবে মারছো কেনো? কি করেছে আমার রোদ ভাই,,ও রোদ ভাই,,রোদ ভাই কি হয়েছে তোমার,, বলেই রৌদ্রর হাত ধরে টানতে থাকে অভিমানিনী। কিছুপল পড়েই রৌদ্র ফিরে চায় সেই ছোট্ট বাচ্চা পুতুল টার দিকে। ডাগর ডাগর হরিণি দুচোখ,, চোখ ধাঁধানো গায়ের রং যেনো হালকা একটু টোকা দিলেই রক্ত বেরোবে,,চুলগুলো পেছন দিয়ে পনিটেইল করে বাধা,,, আর রৌদ্রর হৃদয় থমকে দেওয়া সেই নজরকাড়া গালে টোল পড়া হাসি। কিছুক্ষণ পর রৌদ্র তার হাতগুলো কোমর থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলতে লাগলো,,”কেউ আমায় মারছে না অরি ”
রৌদ্র বুঝতে পারছে সবাই ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরে একে একে ঘিরে রেখেছে এ জন্য হয়তো ছোট্ট অরিন ভেবেছে ওকে সবাই মারছে।কথাগুলো ভেবেই রৌদ্র মুচকি হাসলো।
রৌদ্রর মুখে এ কথা শুনেও অভিমানীনি শান্ত হতে পারলো না। টলমল চোখে চেয়ে আছে রৌদ্রর পানে।এমন সময় জুবাইদা বেগম এগিয়ে এসে অরিনের গালে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে বলতে লাগলেন,”অরি মা, তোমার রোদ ভাইকে আমরা কেউ মারছি না, আদর করছি,,তোমার ভাইয়া আজকে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সেজন্য “।
একথা শোনা মাত্র অরি আবারও ছুটে রোদের সামনে গিয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎকাল কেননা ১৬ বছরের রৌদ্রর দিকে তাকাতে যে ৭ বছরের ছোট্ট অরিনের ভিষণ বেগ পেতে হয়।অতপর অরিন বলতে লাগলো, ” রোদ ভাই,, তুমি ও কি আমার মতো ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করেছো? তোমাকেও কি স্যারেরা চকলেট দিয়েছে? ”
অরিনের এমন বোকা কথায় সকলেই হেসে উঠলো,, গম্ভীরমুখো রৌদ্র অরিনের কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষন।
ভাইয়া তুমি কি আমায় ভুলে গেলে?”
ছোট্ট রুহির এমন কথায় ঘাড় বাকিয়ে তাকালো রৌদ্র , মুচকি হেসে হাটু গেড়ে বোনের সামনে বসে দু’হাতের আজলায় বোনের মুখটি নিয়ে বেশ নরম স্বরে বলতে লাগলো,, ” নাহ,, আমার বুড়িকে আমি কি করে ভুলি? ”
“তাহলে সবার হাতে মিষ্টি খেলে আমার হাতে খাবে না ?” বেশ অভিমান নিয়ে বলতে লাগলো রুহি।
“কে বললো খাবো না.? আলবাত খাবো,, আমার বুড়ীর হাতে খাবো না তো কার হাতে খাবো শুনি.? ” সাফাই গাইতে গাইতে বললো রোদ্র।
ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে খুশি হয়ে একছুটে মিষ্টি এনে খাইয়ে দিতে লাগলো রুহি।
সকলে এতক্ষণ দেখছিলেন এই ভাই বোনদের খুনসুটি অতঃপর রোদের চাচারা মিলে প্রতিবেশীদের মাঝে মিষ্টি বিলিয়ে দিতে চলে যায়। ইতোমধ্যেই স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে অনিক । অনিক ৯ম শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে ঢুকেই ভাইকে জড়িয়ে ধরে সে। উচ্ছ্বাসের সহিত বলতে লাগলো,,
“কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া”
“হুম থ্যাংকস বাট তুই কিভাবে জানলি?”রোদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
“আরে আমিতো তোমার রেজাল্ট দেওয়ার আগে থেকেই জানতাম তুমি খুব ভালো রেজাল্ট করবে,,আর তাছাড়া বাড়িতে ঢুকবার সময় আব্বু ও বললো।” লম্বা একটা হাসি দিয়ে বেশ গর্বের সাথে বলতে লাগলো অনিক।এই ছেলেটার হাসিও মারাত্মক,, কি সুন্দর থুতনিতে একটা ভাগ বসা,, ফর্সা গায়ের রং ইতোমধ্যেই লাল হয়ে আসছে প্রখর রোদের তাপে,,রৌদ্র তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ অনিকের দিকে। তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়েই তার চিরচেনা ভাবভঙ্গি নিয়ে আসলো চেহারায়। বয়স অনুযায়ী বেশ গুরুগম্ভীর ছেলেটা। সহজে মুখ ফুটে কিছু বলে না। কেউ কিছু বললে শুধু হু,হা,এতেই উওর সীমাবদ্ধ রাখে নিজের। কিন্তু অনিক এই ছেলেটা যেনো রৌদ্রর চেয়ে পুরোই উল্টো। প্রানবন্ত এবং হাস্যজ্বল ছেলেটা। সবসময় মুখে যেনো হাসিটা লেগেই থাকে।
দুপুরের দিকে সকলে একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খেতে,, বলাবাহুল্য বিশাল ডাইনিং রুম জুড়ে টেবিলটি,,যে পরিবারের সদস্য বেশি সেহেতু টেবিল বড় হবে এটিইতো স্বাভাবিক তাই না।সকলে খাবার খেতে বসেছে আর গৃহিনীরা খাবার সার্ভ করছে,,হঠাৎ খাবারের মাঝে কবির সাহেব ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,,
” আব্বু রোদ,, আজ তো তোমার রেজাল্ট দিলো,,তা তোমার বড় হয়ে কি হবার ইচ্ছে আছে বাবা? তুমি যেটাই হতে চাও সেটাই হতে দেওয়া হবে,, আর তাছাড়া তোমার বাকি পড়াশোনা বাহিরে কমপ্লিট করাবো ভাবছি,, আমি চাই তুমি লন্ডন তোমার মামা মামির কাছে থেকে বাকি পড়াশোনা কমপ্লিট করো। তা তোমার কি সিদ্ধান্ত আব্বু? ”
বাবার মুখে এরুপ কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো রোদ অতঃপর বেশ গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলো,”আব্বু তোমার যা মতামত আমার তাতে কোন আপত্তি নেই,,আর তাছাড়া আমি জানি তুমি আমার জন্য বেস্টটাই ভাববে,,আর রইলো বাকি আমার বড় হয়ে কি হবার ইচ্ছে,, সেটা আমি তোমাকে কিছুদিন পরে জানাই আব্বু,, আমি একটু সময় চাচ্ছি।”
ছেলের মুখে এমন গোছালো কথা শুনে প্রাপ্তির হাসি হাসলে কবির এহসান অতপর বললেন “তোমার যখন ইচ্ছে বলো রোদ,, আমি তাহলে তোমার মামার সাথে বাকি কথা বলে নিচ্ছি। আর তুমি ও যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকো বাবা।
“আচ্ছা আব্বু”
এতক্ষণ খাবার টেবিলে দুই বাবা- ছেলের কথা চুপচাপ শুনছিলেন বাকি সদস্যরা। এসব শুনে ইতোমধ্যেই জুবাইদা বেগমের চোখে পানি এসে ভিড় জমিয়েছে। কত আদরের সন্তান তার,, কি দরকার ওকে ওতো দূর পাঠানোর, দেশেই নাহয় কোন একটা ভালো জায়গায় পড়াতে পারতেন। ছেলের রেজাল্ট দেওয়ার আগেই এই ব্যাপারে তার স্বামী তার সাথে আলোচনা করেছে কিন্তু জুবাইদা বেগমের মাতৃস্নেহ বরাবরই নাকচ করেছে স্বামীর এই প্রস্তাব কিন্তু কবির এহসান যথেষ্ট ঠান্ডা ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন “আমাদের রোদ এর মেধা মাশাআল্লাহ অনেক ভালো,, আমি চাই ওর মেধার যথেষ্ট কদর হোক,, ও যেনো ওর জিবনে সবচেয়ে ভালো সুযোগ টা পায়,,দেখো জবা আমার বাবা বেচে থাকলে কিন্তু আমিও বিদেশেই পড়াশোনা করতে যেতাম কেননা আমার খুব ইচ্ছে ছিলো এটা,, কিন্তু ভাগ্যর অন্য কিছু ইচ্ছে ছিলো,,সে যাকগে এখন আর তুমি না করো না,,নিজেকে এ বিষয়ে সামলাও,, রোদের রেজাল্ট দিলেই ওর সামনে এই প্রস্তাব রাখবো দেখি ও রাজি হয় কি-না ” এসব ভেবেই আচলে চোখের পানিটুকু আড়াল করলেন তিনি।হঠাৎ কাঁধে কারো শিতল স্পর্শ পেতেই পাশে তাকালেন তিনি, দেখলেন রাফিয়া বেগম দাড়িয়ে এবং চোখ দিয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি যেনো এটাই রোদের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। অতপর সকলেই খাওয়া দাওয়া করে যার যার রুমে চলে গেলেন।
তারপর কেটে গেলো আরও ৫ দিন,, সেদিনের কথামতো রোদের বাহিরে যাওয়ার জন্য সকল বন্দোবস্ত করছেন কবির সাহেব।
এদিকে আজ দুদিন যাবৎ অরিনের জ্বর। বাচ্চা টা জ্বর হলেই একদম কাবু হয়ে যায়। সারাদিন নিজের চঞ্চলতা, আর খিলখিল হাসিতে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখা মেয়েটা কেমন নির্জীব হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। মেয়ের এমন করুন চেহারা দেখে বুকটা হুহু করে উঠছে রাফিয়া বেগমের। সাব্বির সাহেব ও বেশ চিন্তিত। মেয়ে যে তার চোখের মনি। কিন্তু মেয়েটা আবার হচ্ছে গিয়ে প্রচুর জেদি। দুদিন ধরে বিছানা পড়ে আছে তবুও তাকে জোর করে ও একটু ঔষধ খাওয়ানো যাচ্ছে না,,খাওয়াতে গেলেই চিৎকার দিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নিচ্ছে,, চিৎকার শুনে যখন সকলে একে একে রুমে আসে তখন আবার মেয়ে আহ্লাদী হয়ে একবার তার বড়বাবার কোলে নাহয় বড়মার কোলে নাহয় অন্য কারো কোলে চড়ে বসে। আর রুহিও আজ দুদিন নিশ্চুপ হয়ে আছে কেননা মেয়েটার খেলার সাথি যে বিছানায়,, এখনও কেমন অরিনের মাথার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন সাব্বির সাহেব। লম্বা কদমে ঘর ছেড়ে বের হলেন তিনি,,বের হয়েই দেখতে পেলেন নিজের ছেলের শুকনো মুখ,,বোন যে তার কলিজার টুকরো সেটা সে বেশ ভালো করেই বুঝেন,, অনিকও এ পর্যন্ত অনেকবারই চেষ্টা করেছে ছলে বলে কৌশলে অরিনকে ঔষধ খাওয়ানোর কিন্তু এ মেয়েতো খাবেই না উল্টো অনিককে বলে বসেছে “ভাইয়ু তুমি পচা” আদুরে বোনের মুখে এমন কথা শুনেতো বেচারা একদম চুপসে গিয়েছে। এখন ভুলেও সে বোনকে ঔষধ খাওয়াতে যায় না পাছে না আবার তার সাথে তার ছোট্ট বনুপাখিটা কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। সাব্বির সাহেব ছেলেকে দেখে একটা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন সিড়ি বেয়ে।
কিছুক্ষণ পর রৌদ্র আসে অরিনদের রুমে,,এসেই দেখতে পেলো বিছানার হেড বোর্ডের পাশেই তার মেজো মা মেয়ের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন,, সেজো মা হাত-পা মালিশ করছেন,, জুবাইদা বেগম খাবার হাতে বসে আছেন,চেষ্টায় আছেন যদি একটু খাওয়াতে পারেন আর কি,,রাইসা বেগম এতক্ষণ এখানেই ছিলেন কিন্তু এখন সকলে মিলে তাকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে কেননা তিনি এখন আটমাসের গর্ভবতী,, কতক্ষণই বা এখানে বসে থাকবে তাই,,রৌদ্র একপল চেয়ে রইলো দুরন্ত বাচ্চা মেয়েটার পানে,জ্বরের তোপে চেহারায় রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। পরক্ষণেই মুখ ফিরিয়ে চাইলো অন্যদিকে এই পিচ্চি টা কে এভাবে দেখে কেনো যেনো ওর খুব কষ্ট হচ্ছে,, এতটা খারাপ লাগার তো কিছু নেই,সামান্য জ্বরই তো, এ আর এমন কি,, কই রুহিরও তো কতবার এমন জ্বর হয়েছে তখন একটু আধটু খারাপ লাগলেও ভিতরে ভিতরে তো এমন হাসফাস লাগতো না,,তাহলে এই দুটো দিন হঠাৎ এমন লাগছে কেনো তার। তারজন্য এমন অনুভূতি নিতান্তই নতুন এবং মনে মনে তো সে এগুলো কে বিদঘুটে তকমা ও দিয়ে ফেলেছে। নাহ এতো কিছু ভেবেও শান্তি পাচ্ছে না সে। মন শুধু এই পিচ্চি টার হাসি দেখতে চাইছে,, ওর সুস্থতা কামনা করছে।
বেশ অনেকক্ষণ পর পর জুবাইদা বেগম উঠে চলে গেলেন রান্না ঘরে খাবারের প্লেট রাখতে,, নাহ মেয়েটাকে এক লোকমাও জোর করে খাওয়াতে পারলো না,অবশেষে হার মানলেন তিনি।তার কিছুক্ষণ পর মাইমুনা বেগমকে ডাক পাঠালেন তায়েফ সাহেব,,, আপাতত ঘরে আছে শুধু রৌদ্র আর রাফিয়া বেগম,,রাফিয়া বেগমের দিকে চেয়ে থেকে রৌদ্র বলে উঠলো,,” মেজো মা, তুমি তো এখনো খেলে না,, আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে, পরে তো তুমিই অসুস্থ হয়ে পড়বে,, যাও আগে খেয়ে নাও,,পরে অরির কাছে বসো,
রাফিয়া বেগম চাইলেন একবার বলবেন কিচ্ছু হবে না তার,মেয়ের কাছে থাকবে সে কিন্তু রৌদ্রর জোরাজোরিতে যেতেই হলো তাকে। রাফিয়া বেগম চলে যেতেই রৌদ্র বসলো তার জায়গায় আর অরির মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর অরি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো রৌদ্র তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই রৌদ্র গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,” তাকিয়ে আছিস কেনো? আর ঔষধ খাচ্ছিস না কেনো তুই,, জ্বরে পড়ে থাকতে ভালো লাগছে তোর? এত জ্বালাস কেন তুই,?
জ্বরের শরীরে এত কথা আদৈা অরি বুঝলো কি না কে জানে,শুধু বললো ঔষধ পচা রোদ ভাই। আমার ভালো লাগে না খেতে ওগুলো।
“ঔষধ পচাই হয়,, তাও খেতে হবে সুস্থ হতে চাইলে।তুই কি সুস্থ হবি না? ”
তড়িঘড়ি করে মাথা উপর নিচ ঝাকালো অরি যার মানে সে সুস্থ হতে চায়।
রৌদ্র ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে অরিকে আস্তে করে উঠিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসায়। তারপর পাশে থাকা ফ্রুটস থেকে কিছু ফ্রুটস চাকু দিয়ে কেটে অরির মুখের সামনে ধরে। অরি মাথা ডানে বামে ঘুরায় মানে সে খেতে চায় না। এ দেখে রৌদ্রর মেজাজ চটে যায় , দাত কিড়মিড়িয়ে বলে ওঠে, ” এগুলো খাবি নাকি থাপ্পড় খাবি? একটা থাপ্পড় দিয়ে দাত সব ভেঙে দিব তাহলে আর খাওয়ার ঝামেলা থাকবে না”
থাপ্পড়ের কথা শুনে অরি চুপচাপ ভালো বাচ্চার মতো হা করে,,বাড়িতে কেউ তার গায়ে ফুলের টোকা ও দেয় না কিন্তু তার মা মাঝে মাঝে দু একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে বেশি দুষ্টুমি করলে,, সেজন্যে থাপ্পড় কে বেশ ভালোই ভয় পায় অরি।
এদিকে অরিকে খেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রোদ। অরিকে ফ্রুটস আর এক গ্লাস দুধ খাইয়ে ঔষধ হাতে নেয় রৌদ্র। ঔষধ দেখেই নাক মুখ কুচকে ফেলে অরি অসহায় ভঙ্গিতে বলতে থাকে, “রোদ ভাই এগুলো না খেলে জ্বর সাড়বে না? ”
“না ”
মন খারাপ করে ফেলে ছোট্ট অরিন, ফের বলে ওঠে
“তুমি এই পচা ঔষধ ছাড়া মজা ঔষধ দাও না , এগুলো মজা না, এগুলো খেতে পারি না ”
“আমি তোকে কিভাবে অন্য ঔষধ দিবো বল আমি কি ডাক্তার? ”
ঠোট উল্টে অবুঝ অরিন ফের জিজ্ঞেস করে, “ডাক্তার না হলে ঔষধ দিতে পারবে না তুমি? ”
“না”
অরিন এবার কাঁদোকাঁদো হয়ে বলেই ফেললো “কেন হলে না ডাক্তার রোদ ভাই, তুমি না পরিক্ষায় ভালো নাম্বার পেয়েছো,,তাহলে ডাক্তার হলে না কেনো?, তুমি ডাক্তার হলেতো আমাকে মজা ওষুধ খেতে দিতে পারতে,, আমিও সুস্থ হয়ে যেতাম।”
রৌদ্র ছোট্ট অরিনের কথা শুনে না চাইতেও হেসে ফেললো আর অরিনের কাঁদোকাঁদো চেহারার দিকে তাকিয়ে চোখে একরাশ মায়া নিয়ে অরিনের জ্বরের তাপে উষ্ণ গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
” আমি ডাক্তার হলে তুই আমার কাছে নিজের চিকিৎসা করাবি.? ”
ছোট্ট অরিন কি বুঝলো কে জানে রৌদ্রর মুখে ডাক্তার হবার কথা শোনা মাত্রই কালবিলম্ব না করেই মাথা জোরে জোরে উপর নিচ ঝাকাতে লাগলো।
রৌদ্র ও অরির দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো এবং অরির লাল হয়ে যাওয়া নাক টেনে দিয়ে বললো,
“ঠিক আছে,, আমি ইফতেখার এহসান রৌদ্র আজ কথা দিচ্ছি আমি অনেক বড় ডাক্তার হবো অরি”।
” ইয়ে আর আমি অসুস্থ হলে তোমার দেওয়া মজা ওষুধ খাবো”, হাততালি দিতে দিতে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলতে লাগলো অরিন।
আর রৌদ্র চেয়ে রইলো সেই উচ্ছ্বসিত হতে থাকা পিচ্চি মেয়েটার দিকে যার টোল পড়া হাসিতে রৌদ্রর বুকে কেমন যেনো মোচড় দেয়া অনুভূতি হচ্ছে। আচ্ছা এমন লাগছে কেনো তার। কেনো এই পিচ্চির কথামতো সেও ডাক্তার হতে চাইছে। কেনো ওর জন্য মনটা আনচান করছে।আচ্ছা রোদের কি কোন কঠিন অসুখ হলো,, আচ্ছা অসুখ যদি হয়েও থাকে তবে এ কেমন অসুখ হলো তার,, ১৬ বছরের কিশোর সে, অনুভুতি জন্মানো টা যে এখন নিরন্তর স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এ কেমন অনুভূতি? বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন ধাপই সে পার করেছে কিন্তু এ অনুভুতির সাথে সে এই পিচ্চি টা সামনে আসলেই পরিচিত হয়। উফফ! কি এক জ্বালা! বুকটা কেমন অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে। নাহ আর এই পিচ্চির সামনে বসা সম্ভব নয়। তাই রৌদ্র বিছানা ছেড়ে উঠেই ধপাধপ পা ফেলে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। এদিকে রৌদ্রর হঠাৎ চলে যাওয়ায় ছোট্ট অরিন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবছে তার রোদ ভাই চলে গেলো কেন.?