সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২২

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২২
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

ঘুম ভেঙে শ্রেয়া নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড বিস্মিত হলো। কপালে ভাঁজ পড়ল এক দু’টো। অঢেল চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। প্রথমবার শাড়ি পড়ে ঘুমিয়ছে আশ্চর্যের কান্ড হলো গা থেকে একটুও সরে যায় নি। বাঁধাবিহীন শাড়ি ঘুমের ঘোরে উড়তেও পারত এত সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু হলো বিপরীত। দেহ থেকে সরলো না। শ্রেয়া চক্ষু মেলে দেখে শাড়ি একদম ঠিক আছে। পা থেকে উপরে উঠে নি,বুক থেকেও সরে নি৷ অথচ রাত্রের অনেকখানি প্রহর কেটেছে ওর শাড়ির ভাবনায়। ইতস্তত বোধ হওয়ায় তূর্যকে একটা বার বলতে পারে নি কাঁথার কথা। ভেবেছিল কাঁথা দিয়ে গা ঢাকা দিলে মান ইজ্জত বেঁচে যাবে। এখন দেখা গেল সব ঠিক আছে। তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে পারে নি। কি করে সম্ভব! যেখানে থ্রি পিসই ঠিকঠাক থাকে না, শাড়ি?এ যেন অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর ব্যাপার স্যাপার। তবুও মান সম্মান বেঁচে গেছে তূর্যর সমুখে এতেই ঢের।

চুলগুলো হাত খোঁপা করে বিছানা ছাড়ে শ্রেয়া। মানুষ সাধারণত ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে ছুটে ব্রাশ করতে কিন্তু ও গেল বারান্দায়। উদ্দেশ্য নতুন প্রত্যুষে ঢুলুঢুলু আবছা দৃষ্টে চৌধুরী বাড়ির সৌন্দর্য দেখবে। ভিতরকার নয়,বাহিরের। বৃষ্টিতে ভিজে এখনো পিচ্ছিল হয়ে আছে বারান্দার মেঝে। শুকনো কাপড় দিয়ে মুছলে কিংবা রোদ্দুরের দেখা মিললেই শুকিয়ে যাবে। সূর্যকে কৃষ্ণ মেঘ আড়ালে রেখে ঘাপটি মেরে অম্বরে বসে আছে দিব্যি। এক প্রকার লড়াই চলছে তাদের মাঝে। হয়ত লড়াইয়ে মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামবে নয়ত দিবাকর মেদিনীতে রশ্মি বিলিয়ে উজ্জ্বল করে তুলবে প্রকৃতি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শ্রেয়া বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়েই দেখতে পেল নুরুল চৌধুরী দু’হাত পেছনে আড়াআড়িভাবে বেঁধে হাঁটাহাটি করছেন বিরতিহীন। ওনার পাশেই বাগানের একাংশ জুড়ে নানান ফুলের গাছ। ফুলের গাছগুলোর সমাপ্তি রেখা যেখানে টানা হয়েছে সেখানেই অবস্থিত একটা পেয়ারা গাছ। বেশ বড় বড় পেয়ারা ঝুলে আছে তাতে। থেকে থেকে তিনি বারংবার চক্ষু নিক্ষেপ করছেন গাছটায়।

পাতার চেয়ে পেয়ারার পরিমাণই বেশি লাগল শ্রেয়ার কাছে। অবিলম্বে খালি রুমে ফিরে আসল। শশুর যদি সাতসকালে পুত্রবধূকে এলোমেলো অবস্থায় দেখেন তাহলে তা খুবই নিন্দাজনক। বলতে পারে মেয়েটা অগোছালো, অভদ্র। ফলস্বরূপ তড়িঘড়ি করে ফিরে এসে বিছানায় বসে পড়ল। ভেবে ভেবে অবাক হচ্ছে তূর্য কখন উঠলো? ওকে কেন একটা বারও ডাকল না?গেল কোথায়? রাতের অনেকখানি সময় ও ব্যয় করেছে তূর্যর কথাগুলো চিন্তা করে। ভাবল,তূর্য সঠিক কিন্তু ওর ভীতি টাও ফেলনা নয়। মানুষ টা ওকে ভালো না বাসুক নিজের দিক থেকে ভাবনাগুলো খোলামেলা করবে। তিন বছর আগে হাল ছেড়ে দিয়ে যে ভুল করেছে সেটা পুনর্বার ঘটাবে না। তূর্য ভালোবাসে না তাই বলে ওর গলা তো চেপে ধরে নি, তাহলে কেন নিজের অন্তঃপুরের অনুভূতিদের সাথে বেই-মানি করবে?যা বলবে সোজাসাপ্টা।

কাঠ দ্বারা তৈরি কারুকার্য নির্মিত আলমারি খুলে একটা কালো রঙের মাঝে লাল পাড়ের শাড়ি হাতে তুলে নিল। গোসল সেড়ে এসে ভেজা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে বসে রইল বিবশ মুখে। কোনো কিছুই গোছাতে পারছে না ও। কাঁদতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। এ মুহুর্তে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য যে খুবই প্রয়োজন। হাউমাউ করে চিৎকার করে কাঁদতে পারলে কিছুটা শান্তি মিললেও হয়ত মিলতে পারে। কেন ওর জীবনে সবকিছু সহজভাবে হয় না। যা-ই পেতে চায় কঠিন সাধনার পরও পায় না৷ অভাগীদের জীবন এমনই বোধহয়!অক্ষিকোটর ছাপিয়ে জলধারা নেমেই এলো অবশেষে।

ফাতেমা চৌধুরী বসে বসে তজবি পড়ছেন চোখ বুঁজে। তূর্যর কথার জবাবে তখন বিমূঢ়তায় বাক হারা হয়ে পড়েন। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিরীহ মুখ করে পালিয়ে যেতে চায় কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিলেন না। পেলেনও না। তবে ছেলে এসে বাঁচিয়ে দিলেন ওনাকে। নুরুল চৌধুরী তূর্যর পাশে বসে রহিমার কাছে চা চাইলেন। বাহির থেকে হেঁটে ফিরেছেন তিনি। নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন,রাস্তায় হাঁটলেন তৎপরে বাগানে। হাঁটাহাঁটির অভ্যেস টা উনি যৌবন বয়স থেকেই রপ্ত করেছেন। তখন তিনি একা হাঁটতেন না,পাশে থাকতেন ওনার প্রিয় মানুষ। সকালে,সন্ধ্যায় হাঁটার নাম করে লুকিয়ে বাঁচিয়ে কতশত প্রেমময় কাব্য লিখেছেন তা সীমাবদ্ধ থেকে যায় দু’জনের মধ্যেই। সেই প্রিয় মানুষ টা একটা প্রাণ রেখে গেল দুনিয়ায় অথচ তিনি কথা দিয়েও আগলে রাখতে ব্যর্থ হলেন। এক বুক হতাশা মিশ্রিত নিঃশ্বাস নিঃশব্দে নাসারন্ধ্র গলিয়ে বাহিরে মুক্ত হয়। গম্ভীর স্বরে বলেন,

‘ তোমার বউ উঠেছে তূর্য?’
‘ কেন?বউ সমেত আমাকেও ঘর ছাড়তে হবে?’
সোফায় মাথা এলিয়ে বসেছিল তূর্য। বাবার কথায় সোজা হয়ে বসল। ছেলের ত্যাড়াবাকা কথায় নুরুল চৌধুরীর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ফাতেমাও তজবি পড়া বন্ধ করে কান পেতে রইলেন পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষায়। তিনি হারে হারে টের পাচ্ছেন দ্বন্দ্ব একটা আজ লাগবেই। বাপ,ছেলে দু’জনই ত্যাড়া প্রকৃতির, রগচটা স্বভাবের। মিলে গেল খাপে খাপ। আগে গ্রামে পাশের বাড়িতে ঝগড়াঝাটি হলে তিনি কোমর বেঁধে লেগে পড়তেন উপভোগ করার জন্য। তার মতে,সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু বিয়ে বসে যখন ইট পাথরের নগরীতে পা রাখলেন আশেপাশের মানুষের ঝগড়া, চুলোচুলি দূর কান পেতে চাপা আওয়াজটাও শুনতে পান না। ওনার দ্বন্দ্ব কলহ দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা টা মাঝে একবার পূরণ হয় আরিয়ানার মাধ্যমে। আরিয়ানা বাড়িতে পা রাখতেই চৌধুরী বাড়ি গরম হয়ে উঠে,আর আগুনের তেজ কমে আসত তূর্য বাড়িতে পা রাখলেই। দিনগুলো ভারী মজার ছিল।

নুরুল চৌধুরী শক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘ ত্যাড়ামো কবে ছাড়ছো?তোমাকে বিয়ে করতে অনুমতি দিয়েছি বলে লাফ দিয়ে আমার ঘাড়ে চেপে বসবে?লেকচারারের চাকরি ছেড়ে বিজনেসে জয়েন করো। একা হাতে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আয়ুশও নিজের পেশা ছাড়তে রাজি না,আমরা দু ভাই বুড়ো বয়সে কত করবো?সে নাহয় আগে থেকেই এই পেশায় নিয়োজিত কিন্তু তুমি কেন বিজনেস ছেড়ে ছুঁড়ে এই পেশায় লেগে পড়লে?’
তূর্য নির্বিঘ্নে জবাব দেয়, ‘ কারণ টা আপনার অজানা নয়। আমি মানুষের কাছ থেকে অপবাদ কুড়াতে পারবো না। লোক মুখে শুনতে পারবো না বড় ভাইকে সবকিছু থেকে সরিয়ে নিজে একা বাবার টাকা ভোগ করছি। আসল কথা তো কেউ জানে না। সমাজের মানুষ একটা কারণ পেলে হাজারো কারণ বানাতে দ্বিধাবোধ করে না। একজন বলেছে,পরবর্তীতে শতজন বলবে। ‘

‘ যে বলেছে তার সাথেই তো ভালোই যোগাযোগ রাখছো। ‘
নুরুল চৌধুরীর কথা শুনে তূর্য অধর কার্নিশ বাঁকিয়ে বলে,’ ভাই তো। ভাই ফেলে দেওয়া যায় না। আমাকে হাজার টা কঠিন কথা বললেও মাথায় থাকবে মানুষ টা আমার ভাই। সে দূরে গিয়েছে বলে আমিও দূরে সরে আসব নাকি?’
‘ তাহলে তার কথা ধরে রেখে আমার বিজনেস সামলাচ্ছ না কেন?’

‘ আপনার সবকিছুতে প্রথম অধিকার আপনার বড় ছেলের। ভাই আসুক,নিজের ভাগ বুঝুক অবশিষ্ট থাকলে বাকিটা আমি বুঝে নিব। আর চাচার ভাগের টা সম্পূর্ণ আয়ুশ ও আয়ুশীর। তাছাড়া আমি আপনার কম টাকা নেই নি। এখনও আপনার দেয়া টাকা আছে আমার একাউন্টে। বাড়ির বড় ছেলে অন্যের অধীনে চাকরি করছে, আমি কেন বাবার টাকায় চলব আর?’
‘ ঠিক আছে। যে ছেলে বাবা মা’য়ের উপর মিথ্যা আরোপ লাগিয়ে চলে যায় তার ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাইছি না। তোমার বউকে ডাকো,কথা আছে। তোমার মা সব বলেছে আমাকে তিন বছর আগে মেয়েটা এ বাড়িতে পুত্রবধূ হয়ে এসেছিল। আমি ওই মেয়েটার কোনো দোষ পেলাম না৷ পেলাম তোমার মা’র, আমার মা’র। ‘
ছেলের কথা শুনে বিষম খেলেন ফাতেমা। রহিমা রান্নাঘর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এসে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,’ আমি জানতাম আম্মা আপনের পানি লাগব। লন,খাইয়া লন। ‘

নুরুল চৌধুরী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বয়স্ক মা’কে সন্তান হয়ে বকাঝকা কিংবা রাগ দেখানোর সাধ্য নেই তার। এতিম মেয়েকে বাড়ির বউ করেছে নিঃসন্দেহে উত্তম কাজটাই করেছেন, তাই বলে মেয়েটাকে ঠকানো!এটা মানতে পারলেন না তিনি। একদিক হতে তূর্যর প্রতি গর্ববোধ করছেন মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য,সমাজের চোখে বউরূপে স্বীকৃতি দিয়ে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে বিধায়। আজকাল কেউ কাউকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকুই দিতে নারাজ।
মেহরিমা রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলেন। শ্রেয়াকে তিনি কখনও ক্ষমা করতে পারবেন না। ভয় হয় সেও যদি আরিয়ানার মতোন আধো ভাঙ্গা পরিবারটাকে সম্পূর্ণ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়!

শ্রেয়া জানালার ধারে দাঁড়ানো। বিমর্ষ মনে, স্থির নেত্রে বাহিরে তাকিয়ে। নিচে গিয়ে সবার সাথে কথা জমাতে ইচ্ছে করছে। যদিও সে অল্পস্বল্প কথা বলে। এত বড় একটা পরিবার কিন্তু ওর সাথে কথা বলার কেউ নেই। বিয়ের পরের সকালে নাকি পরিবারের সদস্যরা নতুন বউকে ডাকতে আসে, কই কেউ এলো না। হিসেব-নিকেশে সে পুরাতন বধূ তবুও রহিমা খালার ডাক অনুয়ায়ী সে এখনও নতুন বধূ রয়ে গেল। অকস্মাৎ চুলে প্যাঁচানো তোয়ালে টান পড়তেই হকচকিয়ে গেল। ধুকপুক করতে লাগে বুক। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতেই নিষ্প্রাণ আঁখি যুগলে বিঁধে তূর্য ওর অতীব কাছাকাছি। সুঠাম হাতে তোয়ালে ধরে অতি নিখুঁতভাবে চুল মুছে দিচ্ছে। সযত্নে ঝেড়ে দিচ্ছে চুলের পানি।

শ্রেয়া মোহগ্রস্ত নয়নে তাকিয়ে রইল। কিন্তু বহুক্ষণব্যাপী স্থায়ী হলো না তা। সময়ের পরিমাণ টা ছিল অত্যধিক কম,হয়ত কয়েক সেকেন্ড। তূর্যর কন্ঠে গম্ভীরতা,’ এভাবে তাকালে ঘাড় সারাজীবনের জন্য বাঁকা হয়ে যাবে। মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই, স্বামীর দায়িত্ব পালন করছি। ভালোবাসা খুঁজতে যেও না। ‘
তির্যক,তীক্ষ্ণতেজী কন্ঠে শ্রেয়ার মুগ্ধ দৃষ্টি উবে গিয়ে চক্ষু কোটরে একরাশ বিষাদ জড়ো হলো। শূণ্য হলো মর্মদেশ। সকল যত্ন কেবল স্বামীর দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে!অবিলম্বে অন্তরাত্মার চিৎকারে বক্ষস্থল চিনচিন করে উঠে। অনুভূত হয় তূর্য সরে গেছে। কিন্তু যাওয়ার পূর্বে আঁচল দ্বারা ঢেকে দিয়েছে ওর উন্মুক্ত কেশ। ঘুরে দেখল বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। ইতমধ্যে শুয়ে পড়ল?আবার চোখের পাতায় হাত রাখা। এত কম সময়ে ঘুমায় না কেউ, তা শ্রেয়ার অজানা নয়। একপাশে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল তূর্যকে ঠিক কিভাবে কথাগুলো বললে বুঝবে। ডাকলো ভয়ে ভয়ে,

‘ স্যার। ‘
‘ এখানে স্যার নেই। আমি আছি, আমার বউ আছে। বাচ্চা কাচ্চা নেই তবে সময়ে হলে ডাউনলোড হবে,রুমও দখল করবে। ‘
তূর্যর নির্লিপ্ত অভিব্যক্তিতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল শ্রেয়া। বুঝল অনেক মেপে মেপে কথা বলতে হবে এই লোকের সাথে। নাহলে কোনদিক থেকে লজ্জার পুকুরে ধাক্কা মেরে ডুবিয়ে দিবে তা অভাবনীয়, কল্পনা হীন। রয়েসয়ে রিনঝিনে কন্ঠে বলতে চাইল,

‘ আমি আপনার সাথে কিছু কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই। সুযোগ দিলে বলব। ‘
তূর্য হাত সরিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। কপালে কতশত ভাঁজ। হয়ত বুঝার চেষ্টা করছে নয়ত চিন্তা করছে সুযোগ দিবে কিনা!সুন্দর গড়নের মুখের আদল দেখে ঠাহর করে নিল শ্রেয়া। প্রতীক্ষিত হয়ে তাকিয়ে থাকল জবাবে হ্যাঁ শব্দ শোনার। শুনল তবে তূর্য সাথে আরো কয়েকটা বর্ণ, শব্দ সংযুক্ত করলো,’ এখন নই,দুপুরে নিরিবিলিতে শুনবো। ‘
শ্রেয়ার বলতে ইচ্ছে করলো রুমে কি নিরবতার অভাব, অনটন?এত রুক্ষ কেন আপনি স্যার?ভালোবাসি বুঝে ফেলেছেন বলেই রুষ্ট ব্যবহার করছেন?

দরজার ঠকঠক আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো ও। দরজা তো ভেজানো ছিল, তূর্য ঢুকে লাগিয়ে দিয়েছে কি?মন্থরগতিতে পৌঁছে খুলতেই দেখে প্রিয়ু লাল একটা শাড়ি পড়ে ঘোমটা দিয়ে একগাল হাসি নিয়ে উপস্থিত, সঙ্গে আয়ুশী। দু’জনেই ওকে ঠেলে রুমে উঁকি দিয়ে তূর্যকে শোয়া অবস্থায় দেখে যেই প্রশ্ন টা করলো তাতে লজ্জায় কেঁপে উঠলো শ্রেয়া। চাপা স্বরে বললো,’ কি ধরনের প্রশ্ন প্রিয়ু?শুনবেন উনি। ভাসুর আর জা কে নিয়ে এমন কথা বলছিস নির্লজ্জ মেয়ে। ‘
প্রিয়ুর নরম ওষ্ঠ জুড়ে হাসি খেলে গেল। শ্রেয়াকে টেনে রুমের বাহিরে আনতেই শুনতে পায়,’ আমার বউকে প্রশ্ন করে মে’রো না আবার। বেচারি অনেক লাজুক ও ভীতু টাইপের। ‘

লজ্জায় মাথা কেটে যাওয়ার উপক্রম শ্রেয়ার। প্রিয়ু ও আয়ুশী তূর্যর কন্ঠ শুনে দমে গেলেও, পরমুহূর্তেই শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। বিফলে গেল না প্রয়াস।
দরজা বাহির থেকে টেনে ভিড়িয়ে দেয় শ্রেয়া। প্রিয়ু ফিসফিস করে বলে,
‘ আমি তো ঠিকি বলেছি,রুম থেকে বের হোস নি না?মনে হয় না স্যার তোকে বের হতে দিয়েছে। দেখলি না এখন কেমন করে বলল?ইশ!কি ভালোবাসা!আর আমি তোর বান্ধবী ছিলাম,থাকব। সো আমার একটা হক আছে। চল আয়ুশীর রুমে চল গোপন কথাগুলো সেড়ে নেই।’
শ্রেয়ার সাদামাটা বাক্য,’ যাবো না। ‘

‘ চুপ থাক। ‘ –বলে টেনেটুনে আয়ুশীর রুমে নিয়ে আসল প্রিয়ু। তূর্যর রুমের সাথেই ওর রুম টা। আয়ুশী কে বললো,তুমি একটু আমার জন্য পানি নিয়ে আসবে?অধর জোড়া প্রশস্ত করে আয়ুশী চলে গেল। শত হোক প্রিয়ু ননদের সামনে তার ভাইদের কথা বলতে পারবে না। কেমন যেন লাগে। আয়ুশী প্রস্থান ঘটাতেই তার কন্ঠে প্রবল উৎকন্ঠা,
‘ স্যার তোকে খুব ভালোবাসে তাই না শ্রেয়া?রাতে অতীত নিয়ে কিছু বলেছে?তুই খুশি তো এখন?’
শ্রেয়া মনের বিরুদ্ধে গিয়ে মস্তিষ্কের সাড়া মেনে নিল। মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। হাসল স্মিত। সাথে সাথেই প্রিয়ু ওর শাড়ির আঁচল কিছুটা টেনে গলার নিচের অংশ হতে সরিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলে,’ এটাই আমাকে উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছিল স্যার তোকে আপন করে নিয়েছে। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২১

প্রিয়ুর চাহনি অনুসরণ করে নিজের গলার নিচে বুকের ঠিক উপরের অংশে চোখ রাখল। ভালোভাবে দেখতে না পেরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিমেষে রক্ত হিম হয়ে গেল ওর। বুকে বজ্রপাত পড়লো যেন। কামড়ের গাঢ় চিহ্ন!

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২৩