সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২১

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২১
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

নিমীলিত চোখ মেলে অনিমেষ চেয়ে রইল শ্রেয়া। বারান্দায় হলুদ রঙের আলো ছড়িয়ে আছে। দমকা হাওয়ায় বাধাহীন শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেদিকে কোনো হুঁশ নেই ওর। অন্দরমহলে যে ঝড় উঠেছে তার নিকট বাহ্যিক অংশের এলোমেলো অবস্থা নিছক। সামনাসামনি, অদূরবর্তীতে দাঁড়ানো রোষপূর্ণ চাউনি নিক্ষেপ করে রাখা ব্যক্তির দিকে চেয়ে চেয়ে কেঁপে উঠছে অন্তর। শ্রবণগ্রন্থিতে বার বার বাজছে তূর্যর ক্রুদ্ধ মিশ্রিত সেই বাক্যগুলো।

বিশেষ করে সর্বশেষ উচ্চারিত শব্দাংশগুলো যেন গলা চেপে ধরেছে,হৃদপিণ্ড ক্ষত করেছে খানিকটা। তবে বিষাদ জনক হলেও এটাই হবার ছিল হয়ত। কেন মেনে নিবে তূর্য তাকে ছেড়ে যাওয়া, নিজের স্বার্থে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে?অহমিকা কেন ছেড়ে গিয়েছিল কারণটা ওর জানা নেই, তবে নিজ প্রয়োজন ছাড়া যায় নি নিশ্চয়ই। তাহলে তার আর অহমিকার মাঝের তফাত কই?তূর্য অহমিকাকে ক্ষমা করে নি, ওকে কেন করবে?অপরাধ টা সমান। শাস্তি সমান হয় নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফিরিয়ে আনার দু’টো হেতুর প্রথম টা খুব ভালোভাবে বোধগম্য হলো শ্রেয়ার। অর্ধাঙ্গিনী বলেই ও একটা সুযোগ পেয়েছে যেটা মিলে নি অহমিকার। সেই কারণের জোরেই ও দ্বিতীয় বার স্বামীর জীবনে ফিরে আসতে পেরেছে। তার মানে তূর্য ওকে সম্পূর্ণ রূপে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। ক্ষমা চেয়ে নিবে ও। দোষ যেহেতু করেছে ক্ষমা চাইতে কিসের লজ্জা?কম্পনরত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত টা ভুল ছিল। বিয়ের পরদিন যখন শুনলাম আপনি,,

গলা ধরে এলো শ্রেয়ার। কষ্টের প্রখরত্ব, তেজ বড্ড। কন্ঠনালি জড়িয়ে আসছে স্বামীকে পাগল বলে সম্বোধন করতে। কেউ যেন ওর বাকশক্তি কেড়ে নিয়েছে। পারবে না বলতে। দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ল ভেজা মেঝেতে। ছিটা বৃষ্টিতে সব ফোঁটা বেঁকে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় বারান্দার অনেকখানি জায়গা। দৃষ্টি নিম্নদিকে নিবদ্ধ ওর।
তূর্য দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে এনে বারান্দায় পাতা চেয়ারে বসল। শ্রেয়ার দিকে দৃষ্টি মেলে ধরতেই বক্ষস্পন্দন ছুটতে শুরু করে নিয়ন্ত্রণহীন,অস্বাভাবিকভাবে। তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে মাথার চুল টেনে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,

‘ নিজের কথা সমাপ্ত করবে নাকি আমাকে বলতে দিবে?এখনও শিক্ষা দেওয়ার সূচনা টা-ই হলো না, আর তুমি দিন দুনিয়া ভুলে গেলে। আচঁল ঠিক করো,নইলে আমি করতে গেলে কিন্তু রেহাই পাবে না। নারীর কোমল দেহ দ্বারা পুরুষের শারীরিক চাহিদা মিটাতে কিন্তু ভালোবাসা লাগে না, ভালোবাসা উজাড় করে দিতে হয় নারী মন জিততে। এ মুহুর্তে তোমার অঙ্গের সৌন্দর্য কিন্তু আমার ভিতরকার অস্থিরতা হিংস্রতায় পরিণত করার চেষ্টা করছে। তুমি কি চাও?প্রেম মিশিয়ে ছুঁই নাকি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে?’

শ্রেয়ার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। প্রেম?চাহিদা?তূর্যর প্রতিনিয়ত কাছে আসা,লজ্জা দেওয়া এসবে কি প্রেম ছিল না?মাথাটা ধরে আসছে। শাড়ির আঁচল টেনে বুকে জড়িয়ে ধাতস্থ স্বরে বললো,
‘ আমার প্রতি ভালোবাসা নেই আপনার?না থাকলে হৃদয়ের টান কেন বললেন?’
তূর্য ঠোঁট কামড়ে তাচ্ছিল্যের সহিত হাসে। বলে,
‘ এই হৃদয়ের টান টা-ই তোমাকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছে। তার মানে কি?অল্প কয় দিনের পরিচয়ে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি?এমনটা নয়। ‘
অতি সূক্ষ্ম,উত্তপ্ত একটা নিঃশ্বাস খোলা আকাশ পানে বিমোচন করে দিল। ঘুরে বসল শ্রেয়ার দিকে। ততক্ষণে শ্রেয়া উঠে দাঁড়িয়েছে।

তূর্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ যেদিন জানতে পারি আমি বিবাহিত, আমার মানসিক অসুস্থতার সুযোগে পরিবার যত্নআত্তির জন্য একটা এতিম মেয়েকে আমার বউ করে এনেছে সারা শরীর গরম হয়ে উঠে। মাথায় রক্ত চেপে বসে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সুস্থ হবার কয়েক মাসেও কথাটা আমার কানে পৌঁছায় নি। জানতে পারলাম চট্টগ্রাম যাবার ঠিক আগের দিন। বুঝলাম কয়েক মাসে কেউ বলে নি তার মানে বছর চলে গেলেও বলবে না। তাই আড়ালে আমার হারিয়ে যাওয়া বউয়ের খোঁজ চালালাম। শুধু যে বউ পালিয়েছে সেটা জেনেছি তা নয়,এটাও জেনেছি বাসর রাতে বউ আমার হাতে আহত হয়েছে। তার পরের দিন পালিয়ে গিয়েছে মেয়েটা।

অভিযান চালিয়ে প্রথমে খুঁজে বের করি সেই কাজী কে যিনি আমাদের বিয়ে পড়িয়েছিলেন,তার মাধ্যমেই মেয়ের নাম জানতে পারি ‘হুমায়রা তাসনিম’। লোক লাগিয়ে এই নামের মেয়েটার ছবি,অন্যান্য তথ্য বের করি। ছবি পেলাম একটা ছোট বেলার। তথ্য পাই নি খুব একটা,সব কাগজ উধাও হয়ে গিয়েছিল। ঠিক উধাও হয় নি,আমার মা সরিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েটাকে এক নজর দেখার ইচ্ছে ছিল,সংসারের কথা ভাবি নি। কারণ স্বার্থপর মেয়েদের ঘৃ*ণা করি আমি। মেয়েটার ছোট বেলার একটা ছবিই পেলাম। সেই ছবিই কাল হয়ে দাঁড়াল তোমার জন্য, আমার জন্যও।

আগে না দেখা বউকে দেখতে চেয়েছিলাম, তার ছোট কালের ছবি দেখে সেই ইচ্ছে দ্বিগুণ হয়ে গেল। মানুষ মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের কথাতেই চলে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার মস্তিষ্কের চেয়ে হৃদয়ের দেওয়া ইশারাকেই প্রাধান্য দেয় বেশি। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। আমি আমার বউয়ের জন্য টান অনুভব করি। তার বর্তমান মুখটা দেখার টান। তাকে নিয়ে সংসার করার টান। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসি নিজ হাতে তাকে বের করার জন্য। সেদিনই ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেক টা স্টুডেন্টের রেজিষ্ট্রেশন কাগজগুলো মেইল করেন স্যার চেক করার জন্য। সেখানেই একটা ছবি ও নাম দেখে আমার খোঁজার ইতি টানতে হয়। তোমার ছবি,তোমার নাম। শিউর হবার জন্য তোমার বাবা মা’র, পরিবারের ব্যাপারে তথ্য বের করতে গিয়েই শুনি তোমার বাবা পাগল ছিল। তোমার মা’কে খু*ন করেছে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে। এম আই রাইট?’
তূর্য তার দীর্ঘ কথার সমাপ্তি ঘটায় একটা প্রশ্ন রেখে। শ্রেয়া অবাক চোখে চেয়েছিল এতটা সময়। প্রশ্নের উত্তরে নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,

‘ হ্যাঁ। ‘
তৎক্ষনাৎ কর্ণধার হয় তূর্যর তীর্যক কন্ঠস্বর,
‘ তোমার বাবা মা’য়ের প্রেমের বিয়ে ছিল। তোমার বাবা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে বলে কখনও তোমার নানার পরিবার তাদের মেনে নেয় নি। বিয়ের এক বছরের মাথায় তোমার বাবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে মানসিক রোগী হয়,তখন তুমি গর্ভে। চাইলে কিন্তু তোমার মা তোমার পাগল বাপকে ছেড়ে চলে যেতে পারত। বড় বাড়ির মেয়ে নিঃসন্দেহে অন্যকেউ বিয়ে করে ফেলত। কিন্তু কেন যায় নি বলো তো?হয়ত তোমার মা বুঝত পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে, নিজের স্বার্থের জন্য ছেড়ে যাওয়াটা উচিত না। প্রেম,ভালোবাসা এতটাই তুচ্ছ? যেই মা কখনও নিজের পাগল স্বামীকে ছেড়ে যায় নি তার মেয়ে স্বামী পাগল জানতেই জান হাতে নিয়ে পালিয়েছে। ‘

শ্রেয়ার সর্বাঙ্গে কম্পন ছড়িয়ে পড়ল। টলমলে পায়ে তূর্যর কাছে এগিয়ে এসে কিছু বলতে চাইলে তূর্য হাত ধরে সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিল ওকে।
‘ কাপছো কেন?আমি মেরে’ছি তোমাকে?নাকি অন্যভাবে ছুঁয়েছি। মা’রলে, আদর করলে কাঁপবে তাছাড়া তোমার শরীরের কম্পন যেন আমার চোখে না পড়ে। আর কি বলবে সেটা জানা আমার। তুমি নিজের অতীতের কথা ভেবে ভয় পেয়ে অবুঝের মতোন পালিয়েছ?’
দুর্বোধ্য হাসল তূর্য। কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে গাঢ় করে বললো,

‘ সিরিয়াসলি? অবুঝ শব্দটা মেনে নিতে পারলাম না। শুনেছি তোমার মতেই নাকি বিয়ে হয়েছিল?তাহলে রাতারাতি মতামত পাল্টে গেল কেন?মত নিশ্চয়ই ভালোবেসেই দিয়েছিলে সুখে থাকার আশায়?যখন দেখলে হাসবেন্ড পাগল বাবার কথা মনে করে ভয়ে পালালে। সেই ভয়ের পিছনেও কিন্তু তোমার স্বার্থ লুকিয়েছিল। পাগল স্বামীর সাথে সুখী হতে পারবে না এটাই মুখ্য কারণ চলে যাওয়ার। জীবন তো একটাই যদি অন্যের জন্য সেটা বিলিয়ে দাও তাহলে আর সুখ এলো কই?ভালো থাকার জন্য গিয়েছিলে,সুস্থ হয়ে শিক্ষা দিতে ধরে বেধে নিয়ে এলাম বউ। ছেড়ে যাওয়া কোনোকিছুর সলিউশন হয় না। তোমার মা’য়ের চরিত্র টার প্রতি সম্মান জেগেছে, আর তোমার চরিত্রটা আমাকে বিক্ষিপ্ত করেছে। তবুও তুমি খুব ভাগ্যবতী। স্বার্থপরদের আমি ঘৃ*ণার লিস্টে রাখি, তুমি সেখানে জায়গা করতে পারলে না। আমার পরিবার তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে বলে সমাজের সামনে স্বীকৃতি দিয়েছি৷ তবে তুমি আমার হৃদয়েরও টান। এতদিন যা যা করেছি একটু ইচ্ছে করে করেছি,জ্বালিয়ে আনন্দ পেয়েছি, বাকিটা স্বামীর দায়িত্ববোধ থেকে। সবসময় করে যাবো। যে আমাকে যা-ই বলুক আমি নিজের মর্জিতে চলা মানুষ।’

কথাগুলো বলে চেয়ার ছেড়ে দ্রুত বেগে রুমে চলে গেল তূর্য। শ্রেয়া সেদিকে তাকিয়ে কাঁদতে চাইল। চক্ষু কোল জলে ভরপুর। তূর্যর একটা কথাও ফেলে দেওয়ার না। সত্যিই তো ভালো থাকার জন্যই ছেড়ে গিয়েছিল ও। কিন্তু যতক্ষণে বুঝ হলো সঠিক কাজ করে নি ততক্ষণে মেহরিমা ওর জন্য চৌধুরী বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে । এটা কখনোই বলবে না ও তূর্যকে। কখনো না। মা, ছেলের মাঝে প্যাচ লাগিয়ে কারো পরিবার নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। যার পরিবার নেই সে-ই বুঝে পরিবারের মর্ম।

রুমে যাবে কি-না যাবে না ভাবতে লাগল শ্রেয়া। ঝরঝরে বৃষ্টির আরম্ভ হয়েছে। বসে আছে অনেকক্ষণ হবে প্রায়। তূর্য ওকে রুমে ডাকে নি। তাহলে কি জায়গা দেবে না রুমে?ধীর গতিতে হেটে আসল। উঁকি দিয়ে দেখে বিছানায় অর্ধ উদোম দেহে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তূর্য।

ধবধবে ফর্সা পিঠ দেখে শ্রেয়া ঢোক গিলল। তূর্যর কথায় কষ্ট পায় নি ও। বরঞ্চ পরখ করেছে তার মন টা।
অনুশোচনায়,অনুতপ্ততার অনলে দগ্ধ হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। এমন একটা মানুষকে ফেলে কি করে যেতে পারল ও?কি সুন্দর করে ওর ভুলগুলো ধরিয়ে দিল,বুঝিয়ে দিল। তূর্যই সঠিক। কিন্তু বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে এটা ভেবে তূর্য ওকে ভালোবাসে না। ভাবতেই বিষাক্ত যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠল ভিতরটা। অগোছালো জীবনটা অবিন্যস্তই থেকে গেল।
সারাদিনের ক্লান্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিছানার দিকে তাকাতেই ফুলগুলো দেখে হাহাকার ধ্বনি তোলে শ্রেয়ার বুকটা। মেঝেতে শোয়ার কথা ভাবতেই তূর্যর রাগান্বিত, গম্ভীর কন্ঠধ্বনি ভেসে আসে,

‘ এত টাকা দিয়ে বাসরঘর সাজিয়েছি তুমি নায়িকা সেজে মেঝেতে ঘুমানোর জন্য? তাড়াতাড়ি বিছানায় শুয়ে,ঘুমিয়ে আমার ফুলের টাকা উসুল করে দাও। ‘
শ্রেয়া বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিষ্পলক, নির্নিমেষ। একটা লোক কিছুক্ষণ আগেও কঠোর গলায় কথা বলে আবার হেয়ালিপনা করে কেমন করে?শাড়ি সামলে বিছানায় উঠতেই তূর্য ওর দিকে মুখ করে শুইয়ে পড়ল। শীতল কন্ঠে বললো,
‘ শুয়ে পড়ো। ‘

শ্রেয়া ঢের অস্বস্তিতে পড়ে গেল। শুয়ে পড়ল বেশ দূরত্ব রেখে। নিমিষেই তূর্য ঘোর লাগানো স্বরে বলে উঠে,
‘ দূরত্ব রেখে শুয়েছো ভালো কথা৷ দেখো খালি শরীর পেয়ে আবার চুমু খেতে খেতে রাত পার করে দিও না৷ তোমার চোখে আমি স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি আমার জন্য, সো সুযোগ পেয়ে লেগে যেও না আবার। পরে যা হবে তার দায়ভার তোমার। কেঁদে কেঁদে ভাঙা গলায় বলতে পারবে না,স্যার আপনি আমাকে ভালোবাসা ছাড়া এত নিষ্ঠুরভাবে কামড়ালেন কেন?’
শ্রেয়া ঝটপট শাড়ি ঠিক করে উল্টো ঘুরে শুইয়ে পড়ল। গলা শুকিয়ে এসেছে ওর। তূর্যর মুখোমুখি হওয়া মানেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। লজ্জায় দুই কপোলে তপ্ততা ছেয়ে গেছে। পরক্ষণেই ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে পড়ে হৃদয়স্থল এটা মনে পড়তেই তূর্যর সব তো ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, জ্বালানোর জন্য বলা।

তজবি হাতে নিয়ে বসার ঘরে এলেন ফাতেমা চৌধুরী। রহিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,’ তাড়াতাড়ি চা দে। তূর্য আওনের আগে চা খাইয়া রুমে গিয়া অসুখের ভান ধইরা পইড়া থাকমু। এনে আইয়া চা না খাইলে শান্তি লাগে না৷ যা যা। ‘
রহিমা হেসে রান্নাঘরে চলে গেল। খানিক সময় বাদে ফিরে আসে হাতে চা নিয়ে। ঘড়িতে তখন সবে সাতটা। এখনও মেহরিমা,ত্রিহা কেউই রুম থেকে বেরোয় নি। চা দেখেই খুশিতে হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন,
‘ প্ররাণ ডা জুড়ায় গেছে রে রহিমা। ‘
‘ আমার জীবন নষ্ট কইরা আর কি কি জুড়াইছে তোমার?’

গম্ভীর কন্ঠ শুনে চা মুখ থেকে ছিটকে পড়ল ফাতেমার সাদা কাপড়ের উপর। বয়স্ক ত্বক কুঁচকে গেল নিমিষেই। ভয়ে সেঁটে গেলেন তিনি। হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন। দেখলেন,তূর্য বড় বড় পা ফেলে ওনার সামনের সোফায় বসেছে। পড়নে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট,কালো টি-শার্ট। মুখভঙ্গি কঠিন৷ রহিমাকে কফি দিতে বলে ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২০

‘ কাপড় টা নষ্ট করে ফেললে?এমন বাচ্চামু করো কেন ফাতু?এই বাচ্চামু করেই বুঝি বউ জুটিয়ে দিলে আমার কপালে?যাক উপকার হলো। তাকিয়ে দেখো তো,আমার স্কিন আজ অনেক গ্লো করছে তাই না?’
ফাতেমা চৌধুরী ভীত হয়ে মুখ কাচুমাচু করে বসে আছেন। তাঁর উত্তরের অপেক্ষা না করে আরেকটু নিচু কন্ঠে বললো তূর্য,’ সবই বউয়ের কামাল। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২২