সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩০

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩০
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

সারা বাড়িতে চোখ বুলিয়েও শ্রেয়া কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার দেখা পেলো না। রেডি হয়ে নিচে এসে সোফায় থম মেরে বসে আছে কতশত, হাজার সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। তবুও ভুল করেও মানুষ টা নিজের পদধূলি ফেলল না এদিকটায় একবারের নিমিত্তে। রাশেদা টুকটাক কথা বলছেন। তন্মধ্যে বার কতক বলে ফেলেছেন মাশাআল্লাহ শব্দখানা। তিনি যতবারই দৃষ্টি মেলে ধরছেন শ্রেয়ার দিক ঠিক ততবারই স্থবির হয়ে পড়ছে চাহনি,চক্ষু কোটরে জমা হচ্ছে অজস্র মুগ্ধতা। কাউকে সাদায় এত মানাতে পারে?কি চোখ ধাঁধানো রূপ!এ যেন গোবরে পদ্ম। অর্থাৎ অস্থানে ভালো জিনিস। শ্রেয়াও ওনার নিকট একটা পদ্মফুল। যার নির্দিষ্ট ঠিকানা এতকাল না থাকলেও নিজের গুণে, রূপে,মনের সৌন্দর্যে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে এই কঠিন,কোলাহলপূর্ণ নগরীতে। হাত বাড়িয়ে শ্রেয়ার মাথার টায়রা টা ঠিক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ তুই খুশি তো এখন?আগের কথা নিয়ে কেউ কিছু বলেছে?’
প্রশ্নটা অনেক রয়েসয়ে করেছেন তিনি। তাও খুব ক্ষীণ স্বরে। খুব বেশি চিন্তা হচ্ছিল মেয়েটার জন্য। আজ বাবা মা থাকলে হয়ত ওনার মতোন জিজ্ঞেস করতেন, মেয়ের মুখের আনন্দের ঝিলিক টা পরখ করতেন। শ্রেয়া হাসল। মৃদু,নিঃশব্দ হাসি। রিনঝিনে কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কেউ কিছু বলে নি আন্টি। সবাই খুব ভালো। আমি জানি তুমি দাদির ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো। উনি এমনই। বুড়ো বয়সে মানুষ বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। কোনটা ভালো,কোনটা সঠিক,কে কি কথায় কষ্ট পাবে এসব আমলে নেয় না, ভাবে না৷ আর দু চারজনের খারাপ ব্যবহার মানিয়ে নিতে পারলে, চুপ করে সহ্য করলে মানুষগুলো পরবর্তীতে এমনি পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে আশা করি আমি। সমান সমান লড়াইয়ে একজন না একজন হারে কিন্তু একজনের লড়াইয়ে হারার পূর্বেই মানুষ টা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কারণ লড়াইয়ের জন্য প্রতিপক্ষই তো পায় না। আমি কখনও লড়ব না। ‘

অত্যন্ত অবাক হলেন রাশেদা। এই মেয়েকে কি বুঝাবেন তিনি?সে নিজেই কত মনোহরণ করা বাক্য শুনালো। একা একা সংগ্রাম করে বাঁচা মেয়েগুলো অল্প বয়সেই বাস্তবতা শিখে যায়,শ্রেয়া তারই এক ত্রুটিহীন উদাহরণ।
ফাতেমা চৌধুরী আসন ছেড়েছেন আয়ুশের কথায় পরাজিত হয়ে সেই কখন। আয়ুশও চলে গেছে বাহিরে। খাবারের আয়োজন বাহিরেই করা হয়েছে। এতিমখানায়ও খাবার পাঠানো হয়েছে। রহিমা খালা এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত এনে শ্রেয়ার সামনে রাখলো। বললো,

‘ খাইয়া নাও নতুন বধূ। তূর্য বাবা ফোন দিয়া কইল আগে এক গ্লাস শরবত এরপর ভাত খাইয়া লইবা প্রিয়ুর বাড়ির সবার লগে। ‘
শ্রেয়া হতভম্ব। বিহ্বল কন্ঠে তূর্যর কথা জানতে ইচ্ছে জাগে। কিন্তু লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পারে না৷ প্রিয়ু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে। রহিমাকে বললো,
‘ ভাইয়া কোথায়?ফোন করে বললো যে?বউয়ের যত্ন সরাসরি এসে নিতে পারেন না?’
নিমিষেই নখ বিঁধিয়ে দিল শ্রেয়া প্রিয়ুর হাতের পিঠে। এতগুলো মানুষের সামনে মেয়েটা এত নির্লজ্জ,লাগামহীন প্রশ্ন করছে!সবাই কি ভাববে?অনেকেই মুখ টিপে হাসছে। রহিমা শাড়ির আঁচল টা মাথায় টেনে বললো,

‘ তূর্য বাবা তো এতিমখানায় গেছে খানাদানা লইয়া। এক্কেবারে সবার খাওয়া হইলেই আইব। আমারে নতুন বধূর দায়িত্ব দিয়া গেল। ‘
প্রিয়ু ঠোঁট গোল করে বলে,’ ওহ আচ্ছা খালা। ‘

এতিমখানায় গিয়েছে মানুষ টা?শ্রেয়ার ইচ্ছে ছিল আরেকবার যাওয়ার। জীবনে বেড়ে উঠার গল্পটা শুরু তো সেখান থেকেই। বেশ স্পৃহা জাগে সেই চিরচেনা মৃত্তিকায় পা রেখে কল্পনায় মোহিত হয়ে একটাবার আলিঙ্গন করতে মাদারকে। জীবন কতকিছু শেখায়। কতকিছু ত্যাগ করে। চেনা মানুষেরা জড়ো হয় স্মৃতির পাতায়,পড়ে থাকে অতীতে। টেবিল থেকে গ্লাস টা তুলে কয়েক চুমুক খেল সে। এই লোক কাল রাত থেকে ওকে শরবত খাওয়াচ্ছে। মতিগতি ভালো ঠেকছে না। ওর পেট কে বড়সড় একটা পুকুরে পরিণত করার ফন্দি এঁটেছে নাকি!ভাবনামাত্র প্রিয়ু নিচু গলায় কানের কাছে ফিসফিস করলো,

‘ এত্ত ভালোবাসা! যা গরম পড়েছে তার জন্য ভাইয়ার কত চিন্তা! শরবতও পাঠিয়ে দিল বউয়ের অন্তর ঠান্ডা করতে। শ্রেয়ু এত আদর,প্রেম কেমনে হজম করছিস?বলস না প্লিজ। ‘
গালে লালের প্রলাপ পড়েছে শ্রেয়ার। আসলেই তূর্য এমনি এমনি কেন ওর জন্য এত চিন্তা করছে?শুধু বউয়ের যত্নের জন্যে?ভালো না বেসেও বউকে কেউ এভাবে আগলে রাখতে পারে?প্রত্যেক অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে এমন হয়? এর পেছনে একটুখানি অনুভূতিও কি লুকায়িত থাকে না?ভাবতে ভাবতে ভিতরে ভিতরে ক্লান্ত। কি করে বুঝবে ও এই রহস্যময়, গম্ভীর লেকচারারের মন,কথা?রসায়নের জৈব যৌগও এর থেকে ঢের সহজ।
মেহরিমা হাসি মুখে এগিয়ে আসলেন ত্রিহা,রুনাকে সাথে নিয়ে। সম্মান রক্ষার্থে শ্রেয়া,প্রিয়ুর উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ বাহিরে চলো দু’জন, খাবে। ‘
পরক্ষণেই রাশেদার দিকে চেয়ে বলে,
‘ চলুন বেয়াইন। অনেক দেরি হয়ে গেল। এখন খেয়ে নেওয়া দরকার। ‘
রাশেদা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেলেন নিজের মনে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কথাটা পাড়ার। দুই অধর প্রসারিত করলেন,
‘ আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আজ প্রিয়ুর সাথে শ্রেয়া ও তূর্যকেও নিয়ে যেতে চাইছি৷ আপনি কি বলেন?’
মেহরিমা থমথমে গলায় বলে উঠেন,

‘ যেতে চাইলে নিয়ে যান। বাকিটা তূর্যর মর্জি। ওর বউ,ওর অনুমতি ছাড়া ওকে কেউ কিছু বললেও বাড়িতে তুফান বয়ে যায়।’
দিব্যি বুঝলো উপস্থিত সবাই মেহরিমা অপ্রকাশ্যে খোঁচা টা শ্রেয়াকেই মে’রেছে। মলিন মুখে ওঠে দাঁড়ায় ও। প্রিয়ুর মা সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসি বজায় রেখেই বললেন,’ আচ্ছা। ‘

একটা তপ্ত দুপুর,অপরাহ্ন কেটে পৃথিবীর দুয়ারে হাজির হয় গোধূলির লগ্ন। শ্রেয়া লেহেঙ্গা সামলে বাহিরে আসলো। সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টার পর ঘন্টা পার হলো অথচ আজ আর বাড়িমুখো হয় নি তূর্য। আয়ুশ ফোন দেওয়ায় জানায় শ্রেয়াকে নিয়ে এতিমখানা পর্যন্ত আসতে। অতঃপর সেখান থেকেই যাবে প্রিয়ুদের বাড়ির দিকে। মেহমান বিদায় দিতে চৌধুরী বাড়ির সবাই বাহির অব্দি আসলেন। শ্রেয়া নুরুল চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে অতীব নম্র কন্ঠে দু’টো শব্দ মিলিয়ে বাক্য বুনে,

‘ আসি বাবা। ‘
নুরুল চৌধুরী হাসলেন না। চোখ মুখও কুঁচকালেন না৷ অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘ নিজের খেয়াল রেখো। ‘
মেহরিমা কে আসি আম্মা বলতেই তিনি দাঁতে দাঁত চেপে সবার অলক্ষ্যে আওড়ায়,’ ম*রে যেও তবুও আমার বাড়ির আঙিনায় তোমার পা না পড়ুক আর। ‘

শ্রেয়ার নেত্রকোণে জল জমে। গড়িয়ে পড়ার অভিপ্রায়। এভাবে কেউ বলতে পারে?নরম মনটা ক্ষতবিক্ষত হলো মুহুর্তেই। এত ধারালো কেন কথা নামক অ-স্ত্র? এ পৃথিবীতে বিশাল বিশাল অ-স্ত্রের প্রয়োজন নেই, মানুষের কন্ঠনালি হতে তৈরি কথার অ-স্ত্র খুবই তীক্ষ্ণ,ধারালো। চাইলেই অন্য একটা মানুষের আত্মার হ-ত্যা করতে পারে নিমেষে। একবার ছু*রি আঘা’তে রক্ত ঝড়ে সময় নষ্ট ব্যতীত কিন্তু কথার আঘা’তে মানুষ রক্তাক্ত হয় ধীরে ধীরে। বুক ফাটে কিন্তু তা দেখানো যায় না। শ্রেয়া কথার মাত্রা না বাড়িয়ে নিঃশব্দে গাড়িতে গিয়ে বসে। টুপ করে মেকআপে সজ্জিত গাল স্পর্শ করে এক বিন্দু অশ্রু। ব্যতিব্যস্ত হাতে মুছে নেয় কেউ দেখার পূর্বে। আয়ুশ ড্রাইভিং সিটে বসা ছিল। গাড়ির সামনে রাখা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু পেছনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রাশ ভারী কন্ঠে বলে,’ মুছে নাও। ‘

শ্রেয়া হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলে,’ ঠ,,ঠিক আছি ভাইয়া। ‘
‘ হুম দেখতে পাচ্ছি। ‘–ছোট্ট আয়না খানায় দৃষ্টি রেখে কথাটা বলে আয়ুশ।
প্রিয়ু পাশের সিটে বসে হাতের চুড়িগুলো খুলে রাখছিল। হাত টা চুলকাচ্ছে খুব,খুব। নিজ কাজেই মগ্ন থেকে বলে ওঠে রসাত্মক করে,

‘ নিশ্চয়ই আয়ুশ ভূত দেখছে মিররে। তাই জলদি নাক,মুখের জল মুছতে বলছে। তাড়াতাড়ি মুছে নে। আমার জামাইয়ের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে তোর মতোন ভূত দেখে। তাকিয়ে দেখ,কান্নার দাপটে মেকআপ খতম। ‘
অশ্রুসিক্ত নয়নে ঠোঁট ছড়ায় শ্রেয়া। টুকটুকে গাঢ় লাল ওষ্ঠদ্বয়ে স্মিত হাসি অনেকখানি জায়গা লিখে নেয় নিজের নামে। এ দু’টো মানুষ যে ওর জন্য আর কত কি করবে!টিস্যু টা হাতে নিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে আওড়ায়, ‘ ধন্যবাদ ভাইয়া। ‘
বিনিময়ে আয়ুশও অধর প্রসারিত করে। হাসে তৃপ্তির হাসি জানালার দিক মুখ রেখে। কিন্তু তা যে প্রিয়ুর চক্ষে বাঁধা পড়ে অত্যন্ত সহজে। চোখে মুখে হাসি ভাসে ওর। মন ভরে,প্রাণপণ দিয়ে প্রত্যাশা করে শেষ নিঃশ্বাস অবধি জীবনটা এমনই থাকুক। সুখ,ভালোবাসা অগোচরে বিলীন হোক এভাবেই একে অপরের জন্য। অব্যক্ত থাকুক চিরকাল কিছু কিছু সত্য, যাতে ওদের তিনজনের মধ্যকার ভালোবাসার সমাপ্তি কভু না হয়।

এতিমখানার সামনে এসে গাড়িটা ব্রেক কষে আয়ুশ। শ্রেয়া জানালা দিয়ে মাথা বের করে দৃষ্টি লুকিয়ে লুকিয়ে তূর্যর তালাশ করছে। তৎপরে কানে আসে আয়ুশের জানালায় টোকার আওয়াজ। কর্ণ খাড়া করে সেদিক। আয়ুশ জানালার কাঁচ নামাতেই সুড়সুড় করে প্রবেশ করে চিরাচরিত, হৃদয়ের গহীনে বাস করা একটা কন্ঠস্বর, ‘ আমার বউ?’
বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় শ্রেয়ার। শীতল পবন সমগ্র প্রকৃতি দখল করে রেখেছে। আয়ুশ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ পিছনে। গার্ড দিয়ে সহিসালামত নিয়ে আসলাম ভাই, তোর অমূল্য রত্ন।’

শ্রেয়া কান খাড়া রেখেই সবটা শুনে। মনটা কেমন কেমন করে ওঠে। এই কথাগুলো ভালোবাসাময় তো!স্রেফ স্ত্রী বলে এতকিছু ওর মন মানতে অপরাগ,নারাজ। অকস্মাৎ পাশের দরজা খুলে যায়। হাত বাড়ায় কেউ একজন। ঝুঁকে সামান্য। কিঞ্চিৎ দেখেই শ্রেয়ার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড্ড অস্বাভাবিক। উথাল-পাতাল ঢেউ অভ্যন্তরে। নরমাল এটা পাতলা সাদা পাঞ্জাবি পড়া তূর্য। গলার দিকটায় একটু একটু কাজ করা। হাতের লোমশে ঘামের অস্তিত্ব। নিয়ন বাতিতে স্পষ্টত সবকিছু।

ঢোক গিলে শ্রেয়া। কাঁপা কাঁপা হাত টা রাখে তূর্যর হাতের উপর। সঙ্গে সঙ্গে মুঠোয় পুরে ওকে গাড়ি থেকে বের নিয়ে এলো তূর্য। গাড়ির দরজা টা সশব্দে লাগিয়ে আয়ুশকে বললো, ‘ তোরা যা,আমরা আসছি কিছুক্ষণ পরেই। ‘
বিনা বাক্যে চলে যায় আয়ুশ। শ্রেয়া স্তব্ধ, নিবিড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে ল্যাম্পপোস্টের নিম্নতলে দাঁড় করায় তূর্য। বিমূঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখে তূর্য বুকে হাত বেঁধে চেয়ে আছে নির্নিমেষ। ভাবভঙ্গি বুঝা অসম্ভব। চোখে কেবল ওর প্রতিচ্ছবি ভাসছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত গুণে গুণে তিন বার চক্ষু দৃষ্টি ফেলেছে। অতিরিক্ত এই চাহনি হৃদয়ে নিংড়ে দিচ্ছে ওর।
তূর্য চোখের পলকে কোমর জরিয়ে কোলে তুলে নিল। আকস্মিকতায় সহসা শিরশির করে কেঁপে উঠে দেহ,অঙ্গ প্রতঙ্গ। ভাঁজে ভাঁজে কম্পন আর কম্পন। তীব্র হতে তীব্রতর। তূর্য সমুখে দৃষ্টি রেখে বলে,’ আমার দুপুর, বিকেল,সন্ধ্যার ক্লান্তির অবসান। ‘

হতবাক, হতবুদ্ধি শ্রেয়া। ওকে সাথে করে আনা গাড়িতে বসিয়ে দিল তূর্য। ড্রাইভিং সিটে এসে বসতেই একটা প্রশ্ন করে বসলো সে। প্রচন্ড সাহস খরচ হলো তাতে।
‘ এটাও কি স্বামীর অধিকারে করেছেন?’
তূর্য নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,’যদি বলি হ্যাঁ?তাতে কি স্বামীর অধিকারে একটা চুমু টুমু পাবো?’
আরক্ত হয়ে সিটে সেঁটে গেল শ্রেয়া। তূর্য ওর দিকে চেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘আকাশের দিকে তাকাও তো?’

‘ কেন?’
‘ তোমাকে বউ ভেবে সুন্দর কয়েকটা বাক্য শুনাবো তাই। ‘
তূর্যর কন্ঠে রাগের মিশ্রণ। পাল্টা প্রশ্ন করলেই তার যত রাগ।
কথামতোন শ্রেয়া দূরের ঐ অম্বরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রূপালী একটা চাঁদ। আলো ঠিকরে পড়ছে ধরণীতে। চোখ ধাঁধানো রূপ তাহার। অনতিবিলম্বে শ্রেয়ার সমস্ত তনুতে শিহরণ খেলে যায়। সিটে রাখা হাতে হাত রাখে তূর্য। অপর হাতে ওকে বন্দীনি বানায় নিজের বক্ষে। কানের কাছে গাঢ়,নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ আকাশে একটা রূপসী, আমার বুকে একটাই শুভ্রপরী। ‘
আবেশে নিমীলিত হয় শ্রেয়ার চক্ষুদ্বয়। শ্বাস ভারী হয়ে আসে। আবারও, আবারো শুনতে পায় সেই মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠস্বরের বাক্য,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২৯

‘ কোনো এক বিষন্ন বিকেল পার করে, রক্তিম আকাশ এড়িয়ে, একটা চাঁদনি রাত আসবে। মুখোমুখি থাকবো আমি, তুমি। নিদারুণ কম্পন হবে বক্ষস্থলের সমগ্র জুড়ে। সন্ধি হবে আরো একবার হৃদয়ে হৃদয়ে। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩১