সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৫

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৫
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলো আর রোদ শুয়ে পড়ে আলো একহাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে রোদের দিকে ফিরে আর রোদের মাথা টিপে দেয়, চুল টেনে দেয়।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে আছে, আলো রোদকে চোখ বন্ধ করতে বলে,রোদ কিছু বলতে গেলে আলো রোদের ঠোঁট হাত দিয়ে কথা বলতে না করে।রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে আর চোখ বন্ধ করে থাকে,আলো রোদের চুল গুলো টেনে দেওয়াতে রোদের খুব ঘুম পায়।রোদ ঘুমিয়ে পড়ে, আলো রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে রোদ সত্যি ঘুমিয়ে গেছে,আলোও একটা সময় ঘুমিয়ে যায়।

ওদিকে বাড়িতে বসে মেঘ চিৎকার করে কাঁদছে,রোদরা ওকে নিয়ে যায় নি তাই।রোদের আববু আর আম্মু মেঘকে বোঝানোর পরও মেঘ থামছে না দেখে সবাই যে যার কাজে বিজি হয়ে পড়ে আর ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে মেঘ হাত পা ছিটিয়ে গলা ফাটিয়ে কাঁদছে।
মেঘঃওরে কেউ আমারেও একটা বউ এনে দাও রে,আমিও হানিমুনে যাবো রে।আজ আমার বউ নাই দেখে দাভাই, বউমনি কেউ আমাকে নিয়ে গেলো না রে। ও দাভাই আমাকে নিয়ে গেলি না তো,দেখিস তুই বউমনির হাতে মার খাবি।যখন ওয়াশরুমে যাবি তখন পানি থাকবে না,দাভাই মিলিয়ে নিস তুই আমাকে নিয়ে গেলি না কেন?আম্মু আমি যাবো।
আম্মুঃমেঘ তোমার কি কান্না করা শেষ হয়ছে?
মেঘঃনা আর একটু বাকি আছে দাড়াও,এখুনি শেষ হয়ে যাবে।ওরে দাভাই রে এই তোর ভালবাসা আমার প্রতি দেখিস তোর প্যান্টের ভেতর লাল পিঁপড়া ডুকে যাবে রে।তখন বুঝবি কষ্ট কেমন লাগে।
আম্মুঃ এসব কেমন ভাষা মেঘ? তোমাকে বলি এসব ভাষায় কথা বলবা না।
মেঘঃসরি আম্মু আমার মন এত কষ্ট পেয়েছে যে,আমার মুখের ব্রেক ফেল হয়েছে গেছে।আমি বলতে চাচ্ছি না তাও বের হয়ে যাচ্ছে।
আম্মুঃমন কষ্ট পেলো তো মুখের ব্রেকফেল হলো কেন?
মেঘঃমুখ আর মন হাজবেন্ড ওয়াইফ এজন্য একজন কষ্ট পেলে আরেকও কষ্ট পেয়ে পাগল হয়ে যা।
আম্মুঃওহহ ভাল কথা, তারাতারি কান্না শেষ করে ঘুমাতে যাও।
মেঘঃহুমম আপাতত শেষ, আবার কাল সকাল সকাল উঠে, শুরু করবো,একদিনে সব কান্না শেষ করা যাবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরের দিন সকালে,,,,
আলোর আর রোদ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আর নামাজ পড়ে নেয়।তারপর হাটতে বের হয় যাতে ওরা চিরসবুজের মাঝে সূর্যোদয়টা দেখে উপভোগ করতে পারে, রোদ আর আলো রিসোর্টে টা ঘুরে ঘুরে দেখলো তারপর সামনের রাস্তাতে হাটতে বের হলো, সকাল বেলা পাখিদের কিচিরমিচির ডাক, শান্ত একটা পরিবেশ,কেমন জানি একটা শীত শীত ভাব, যত দুর চোখ যাচ্ছে সবুজ বন আর বন।আলো আর রোদ একটা হাঁটছে আর টুকটাক কথা বলছে,রোদ হঠাৎ আলো হাত ধরো থামায় আর হাত দিয়ে পূর্বদিকে তাকাতে বলে,আলো তাকিয়ে দেখে কেবল সূর্য উঠছে, তারদিকে লাল রক্তিম একটা আভা দিয়ে সূর্য্যি মামা উঁকি দিচ্ছে, চারদিকে সবুজ আর মাঝখানে একটা লাল আভা ছাড়িয়েছে, সূর্যোদয় টা অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে এতটা সুন্দর সেটা না দেখলে বোঝা যাবে না।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো,,

রোদঃ এই মনোরম পরিবেশ টা তো দেখলে,কিছু বুঝলে এখান থেকে কিছু কি শিক্ষা নিলে,,?
আলোঃকি বুঝবো?বুঝলাম যে অনেক অনেক সুন্দর হয় পাহাড়ী জায়গার সূর্যোদয়।
রোদঃওরে গাধী আর কিছু মনে হচ্ছে না,এখন এই মনোরম পরিবেশ টা দেখে।
আলোঃ আর কি মনে হবে?হুম মন ভাল করার মত একটা পরিবেশ,খুব সুন্দর একটা সকাল।
রোদঃহুমম সুন্দর সকাল,মনোরম পরিবেশ, মন ভালকরার একটা জায়গা সবই বুঝলাম,আচছা আলো আমাদের দেশের পতাকার কালার টা কি জানো?
আলোঃহুম না জানার কি আছে?লাল আর সবুজ,,,বাট এখানে পতাকার কথা আসলো কোথায় থেকে?
রোদঃ আমাদের এই চিরসবুজের বাংলাদেশ,চারদিকে সবুজের সমারোহ আর তার মাঝে এমন রক্তিম আভা ছড়ানো এই সূর্যোদয়,,,টা থেকে কি বোঝা যাচ্ছে না,আমাদের পতাকার রং টা লাল সবুজ কেন সিলেক্ট করা হয়েছে।
আলোঃওহো তাই তো আমার তো মাথাতেই আসে নি।
রোদঃযদিও সবাই ভাবে মুক্তিযোদধাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ, এজন্য আমাদের পতাকার কালার লাল আর সবুজ।বাট চিন্তাটা কিন্ত সূর্যোদয় আর সবুজের সমরোহ দেখেই মাথাতে এসেছিলো লাল সবুজ কালার টা দেওয়াতে। যদিও এখানে অনেকে যুক্তি দেখাতে পারে,বিভিন্ন মত পোষণ করতে পারে,,,,আমার জানা মতে এভাবে চিন্তা করেই আমাদের পতাকার কালার সিলেক্ট করা হয়েছে।
আলোঃ ওহহ এবার বুঝেছি,,আচ্ছা আমাদের দেশে এতটা সুন্দর জায়গা থাকতে মানুষ বিদেশ ঘুরতে যায় কেন?আমি তো এখানে না আসলে জানতামই না আমাদের দেশে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে,,,
রোদঃ এটাও ঠিক বলছো,,বিদেশ ঘুরতে যাওয়া যে যার নিজের ব্যাপার।তবে আগের নিজের দেশ ঘুরে দেখা উচিত,,
চলো এবার চলো ফিরে চলো। আমার তো বের হতে হবে,,
আলোঃ আর একটু থাকি না,আমার যেতে ইচ্ছে করছে না,আর আপনি তো এখন আমাকে একটা রেখে,আবার মিটিংয়ের জন্য বাইরে যাবেন,আমার একা থাকতে ইচ্ছে করছে না।
রোদঃআলোমনি আবার আমরা আসবো তো,আর আমার সাথেও তোমাকে নিয়ে যাবো কেমন।তোমাকে মন খারাপ করতে হবে না।
আলোঃ সত্যি তো,,ওকে তাহলে চলুন।
রোদঃহুম চলো ব্রেক ফাস্ট করে বের হতে হবে।

রোদ আর আলো আবার রিসোর্টে ফিরে যায়,তারপর ব্রেকফাস্ট করে নেয়।দুজনেই সাওয়ার সেরে নেয় কারন কখন ফিরবে জানা নাই। রোদ আলোর দিকে একটা লাল,কালো মিক্স শাড়ি এগিয়ে দেয়।আলো শাড়িটা পড়ে,,, রোদও আজ ফুল ব্ল্যাক ড্রেস পড়ে,রোদকে পুরো প্রিন্স চামিং লাগছে।আলো খুব সিম্পল ভাবে সাজ দেয়, চুল ছেড়ে দেয় এক সাইডে সিথি করে, কাজল,হালকা লিপস্টিক, কানে দুল আর হাতে চিকন কিছু চুরি,,এসব সাজগোজের জিনিস আলোর hand ব্যাগেই ছিলো,আর রোদ,
কালো শার্ট, কালো প্যান্ট,কালো সু, কালো টাই,কালো ওয়াচ,,,, দুজনেই রেডি হয়ে নিলো।রোদ আলোর কুচি ঠিক করে দিলো।
আলো রোদের সামনে গিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় আর রোদের গায়ে থুতু দিয়ে দেয়।
রোদঃ আলো এসব কেমন বিহেভ এটা কি করলে?এমন করে থুতু দিলে কেন?
আলোঃআপনাকে আজ বেশি ভাল দেখাচ্ছে, যাতে নজর না লাগে এজন্য থুতু দিলাম।বেশি কথা বললে এক খাবলা গোবর ছুড়ে মারবো।
রোদঃ না না থাক থুতুই ঠিক আছে,গোবর দেওয়া লাগবে না।তোমার মন চাইলে আরো থুতু দাও,আমার কোন সমস্যা নাই।
আলোঃ বাইরে যদি কোন মেয়ের দিতে তাকাতে দেখি ওখানে উরাধুরা পিটুনি দিবো মাইন্ড ইট।
রোদঃ আমি তাকাবো না বাট অন্য কেউ তাকালে কি করবো?
আলোঃ যে তাকাবে তাকে আমি দেখে নিবো।
রোদঃ ওকে গুন্ডী বউ চলো এবার।

দুজনেই আজ কালো ড্রেসে খুব মানিয়েছে ওরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল, রোদ রিসিপশনে গিয়ে কি যেন কথা বলে আসে,আলো দুরে ছিলো এজন্য শুনতে পায় নি।
রোদরা যতদিন এখানে থাকবে ততদিনের জন্য একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিছে,রোদের এবারের মিটিংটা পাহাড়ের উপর করতে বলে,সবাই যেখানে উপস্থিত হয় সাথে রোদ আর আলোও।আলো রোদকে বলে ও আশপাশটা ঘুরে দেখছে, রোদ যেন মিটিংয়ে এটেন্ড করে।রোদ আলোকে নিয়ে যেতে চাই বাট আলো যায় না।রোদ আলোকে সাবধানে থাকতে বলে মিটিং এটেন্ড করতে যাই, রোদকে যেতে দেখে সবাই দাড়িয়ে যায়। রোদ সবাইকে বসতে বলে,চারটা কোম্পানি, রোদের কোম্পানির সাথে ডিল করতে এসেছে,রোদ মিটিং কাজ শুরু করে,তিনটা কোম্পানির এমডি ছেলে বাট,,,,,, এস, ইউ কোম্পানির মেয়ে এমডি মেয়ে, উনার ফাইল সহ কোম্পানির সব ডিটেইলস রোদ দেখলো,মেয়েটির নাম মিতুর চৌধুরী,,,, কোম্পানিরটাও ভাল। রোদ দুইটা কোম্পানির সাথে ডিল করলো বাট মিতুর সাথে কথা বলার আগেই,,মিতু বললো,,,

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৪

মিতুঃরোদ মেহবুব ইউ লুকিং সো হ্যান্ডসাম। আই ওয়েন্ট টু মেরি ইউ। আই লাইক ইউ,,, ইয়োর পার্রসোনালিটি হ্যাজ্ ইমপিরেজড্।
রোদঃwhat,,,,আ,,প!
আলোঃ ওহ রিয়েলী,,(রোদের পাশে এসে দাড়িয়ে)
রোদঃআম,, মে
আলোঃ আমি বাকিটা বলি রোদ মেহবুব, আপনি যখন এতক্ষণ কিছু বলেন নি।বাকিটা আমিই বলে দিচ্ছি।
মিতুঃ হু আর ইউ Stupid girl
রোদঃ মাইন্ড ইয়োর langugace,,,কাকে কি বলছেন জেনে কথা বলুন?
আলোঃমিস মিতু,, আমি মিসেস রোদ মেহবুব,,,আপনি ভুল জায়গাতে নক করছেন, রোদ মেহবুব সিঙ্গেল না উনি একজন বিবাহিত পুরুষ।ভালো তো লাগতেই পারে, এটা কমন একটা ব্যাপার বাট,,, যাকে প্রোপোজ করবেন তার বিষয়ে জেনে তাকে প্রোপোজাল টা দেওয়া উচিত তাই না।
মিতুঃকি! রোদ মেহবুব মেরিড?
আলোঃ মিতু ম্যম এবার তো জেনে নিলেন,,আশা করি এসব আর কোন বলবেন না।ভালো থাকবেন।বাই
রোদঃআলো ওয়েট প্লিজ,,, আলো আমার কথা তো শোনো(উঠতে গেলে)
মিতুঃআমার ডিলটার কি হবে রোদ মেবুবব?
রোদঃ আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে এখন আপনি ডিল নিয়ে বসে আছেন।কোন ডিল হবে না, ডিল cancel,,,

আলোর যেদিকে গেছে রোদও সে দিকে দৌড় দিসে,রোদ আলোকে কোথাও খুজে পাচ্ছে না।চারদিকে তাকালো বাট আলো কোথাও নেই,কয়েক মিনিটের মধ্যে কোথায় জানি হাওয়া হয়ে গেছে।রোদ চিৎকার করে ডাকছে বাট কোন সাড়াশব্দ নেই,,

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৬