সুখতারার খোজে পর্ব ১৫

সুখতারার খোজে পর্ব ১৫
লেখক:আর আহমেদ

সূর্য ডোবার সীমিত সময় বাকি। সূদুরে ঝাকেঝাকে পাখিগুলো নিজডানায় ভর করে বাড়িমুখে যাচ্ছে। আকাশ লাল! সেই লাল আভার দিকে অপলকচোখে তাকিয়ে তারা। পৃথিবীতে সবার সবাই নিজের নিয়ে ব্যাস্ত।সার্থ কতটুকু আজ সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কাছের মানুষগুলো তাকে নানাভাবে কোলঠাসা করতে ব্যাস্ত! নেট দুনিয়া ছাড়খাড় তার ঘুম হওয়ার কারনে। এদিকে সায়ন আর তার ছবি যেন দৃষ্টান্তমূলক ঝড় তুলেছে ফেসবুক,ইউটিউবে! নষ্টা,কলঙ্কিনী আরও কত কি বলা হচ্ছে তাকে। টানাহেঁচড়ায় আছে সায়নের চাকরিটাও। তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সন্ধ্যা গাঢ় হচ্ছে। তারা ছাদের বেলকনিতে হাত দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। সায়ন তাকে নতুন আশ্রয় করে দিয়েছে। আগের সিমদুটি বন্ধ করা হয়েছে। নতুন সিম নিয়েছে তারা। তারা দেখলো সায়ন ফোন করেছে। সে তড়িঘড়ি রিসিভ করলো ফোনটা,

-কি করছো?
তারা নতজানু কন্ঠে বললো,
-কিছুই না।
-কিছু লাগবে তোমার?
-না তো। আমি ঠিক আছি।
-আমি ইব্রাহিম এর হাতে প্রয়োজনীয় কিছু পাঠিয়ে দিবো। আর কিছু টাকাও দিয়ে দিবো। কিছু লাগলে কিনে নিও?
-আচ্ছা। তাহলে রাখছি?
-শুনেন…
সায়ন কিছুটা থামলো। এরপর বললো,
-কি?
-আজ আমি সবার সামনে যেতে চাই। আমি আর আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হতে দিতে চাই না।
-তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি?
-আর আপনি?
-তুমি থাকো আমি আসছি।
-কিন্তু..
তারার কোন কথা না শুনেই কেটে গেলো ফোন। এদিকে তারা বেশ উদ্বিগ্ন! সেদিন রাতে তারার বলায় একটি আশ্রয়ের ব্যাবস্হা করেছিলো সায়ন। কিন্তু তার পরদিনই অন্ধকারের আবছা আলোয় সায়ন সমেত তারার ছবি ইন্টারনেটে দেওয়া হয়। এখতেয়ারে ডায়েরি করার আজ সায়ন বেশ মুছিবতে পড়েছে। তূরের প্রতি সন্দেহ পুলিশের আর নেই বললেই চলে। সায়ন আর তারা কল্পনাদৃশ্যেও ভাবতে পারেনি কোথাকার খবর কোন দিক দিয়ে কোথায় ঠেকবে। সায়নের সাথে তারাকে দেখা যাওয়ায় সায়নকে আজ ভোর থেকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তারার খুব অসস্তি লাগছে। তার ভাবনা মতে এই গ্যাংস্টার অভ্র। তাহলে ছবি ই বা তুললো কে? কেন? নিজের বন্ধুকে অভ্র এভাবে ফাঁসাবে?
মাগরিবের আযান শোনা যায়। তারা ছাঁদ থেকে নেমে আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কবিতার সামনে কয়েকপাতার সম্পর্ক ছেদের নামা পড়ে আছে। সামনে রয়েছেন কবিতার মামা। কবিতার পুরো বাড়ির মানুষ দাড়িয়ে একদিকে। অন্যদিকে অভ্রের পরিবারের লোক। ইরা বাদে এসেছে সকলে। কবিতা চুপটি করেই বসে রইলো। অভ্র একবার তাকালো কবিতার দিকে। না! কবিতা একটিবারও তাকালো না। অভ্র চোখ সরিয়ে নিলো। সামনে দু’পক্ষের দুজন লয়ার। ডিভোর্স পেপার সামনে নিলো জর্জ সাহেব। হঠাৎ কবিতার মামা বলে উঠলেন,
-এ বিচ্ছেদের কারন?
কবিতার পক্ষের উকিল উঠে দাড়ালো। তাদের কোর্টে নেওয়া হয়নি। তিনি বললেন,
-মাই লর্ড, আজ দুর্ভগ্যবসত আমার ক্লাইন্ড প্রতারিত হয়েছে। কারো পাগলামির জন্য সে প্রায় দু’মাস নিজের বাপের বাড়িতে রয়েছে। যেখানে বাদি পক্ষের ক্লাইন্ট কাউকে দেখানোর জন্য বিয়ে নামক একটি বিশেষ সম্পর্ককে সাজিয়ে গুছিয়ে নাটকের খাতায় নামযোগ করেছে,সেখানে তো কেউ কেন চাইবে তার সাথে থাকতে? মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে বাঁচতে? আমার ক্লাইন্ট অরফে কবিতা এ সম্পর্কের বিচ্ছেদ চায়। তিনি এ সম্পর্ক এতটুকু এগোতে আর রাজি নন মাই লর্ড!
মোঃমোশরেখ(জর্জ) কবিতার দিকে তাকালেন। বললেন,

-কাউকে দেখানোর জন্য মানে?
লয়ার বললেন,
-মিথ্যে সম্পর্ক মানে হলো বাদি পক্ষের ক্লাইন্ট অলিভ অভ্র বিয়ের আগে প্রায় দু মাসের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তাদের মধ্যো কোন অনাকাক্ষিত সমস্যা হওয়ায় তিনি ওই মেয়েটারই বন্ধবী আমার ক্লাইন্ট কবিতাকে বিয়ে করেন সবকিছু না জানিয়ে! বিয়ের আসরে সে মেয়ে এসব দেখে ফেলে। শুধুমাত্র বান্ধবীর জন্য সেও সব লুকিয়ে ফেলে মাই লর্ড। একমাস পর কবিতা সবকিছু জেনে ফেলে দূর্ঘটনাবসত। মেয়েটির নাম তারা। সিটি কলেজের শিক্ষার্থী, অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। আর সে’ই মেয়েটিই এখন নিখোজ। তার সাথে দেখা গেছে এই অভ্রের বন্ধু সায়নকে। এটা সবারই জানা মাই লর্ড। আমার তো এটাও মনে হয় মেয়েটির ঘুম হওয়ায় অভ্রেরও হাত আছে।
-অবজেক্টশন ইউর অর্নার। আমার বিপরিত বন্ধু আমার ক্লাইন্টের উপর এভাবে কোনরকম প্রুভ ছাড়া এত বড় দোষারোপ করতে পারেন না।

সুখতারার খোজে পর্ব ১৪

অপরপক্ষের কথায় সায় দিলেন জর্জ। বললেন,
-অবজেকশন সাসটেইন! আপনি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছেন ফারুক।
ইয়াসিন ফারুক বললেন,
-সরি ইউর অর্নার।
মোঃমোশরেক অভ্রের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে চাইলেন! বললেন,
–উনি যা বললেন তা সত্যি?
অভ্র অপরাধীর স্বরে বললো,
-হ্যা। সবটা সত্য।
জর্জ সাহেব দু পক্ষকেই বললেন
-কবিতা,অভ্র তুমি একবার ভাবতে পারো! বা ছয়মাস দেখতে ও পারো। হতেও তো পারে তোমরা স্বাবাভিক হতে পারো।
কবিতা অভ্রের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো,
-নো ইউর অর্নার। আমি চাইনা এ সম্পর্ক!
জর্জ অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-অভ্র তুমি?

অভ্র মাথা নত করলো। বেশ কিছুটা সময় পর এপাশ ওপাশ করে মাথা ঝাকিয়ে নোঝালো সেও রাজি নয়।
মোঃমোশরেখ ডিভোর্স পেপার লয়ারের মাধ্যমে সামনে দিলেন। সইস্হান দেখাতেই কাঁপাকাপা হাতে সই করে দিলো কবিতা। অভ্র একটানে নিজের নামটি লিখে দিলো পেপারে। কবিতা বুক যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। ভালোবাসা সত্যিই নিষ্ঠুর৷ হয়তো ভালোবাসায় কখনোই সুখ নেই!

সুখতারার খোজে পর্ব ১৬