সুখতারার খোজে পর্ব ১৪

সুখতারার খোজে পর্ব ১৪
লেখক:আর আহমেদ

অভ্র নিখোঁজ প্রায় তিন ঘন্টা। তখন বেড়িয়েছে এখনো তার হদিস পাওয়া যায়নি। অভ্র মঞ্জিলের অতীত-ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। আর না কেউ এ কান্ড অভ্রের দ্বারা আশা করেছিলো। অভ্র ফোনও রিসিভ করছে না। সায়নকে ফোন করার পর সে খুজতে বেড়িয়েছে প্রায় দেড় ঘন্টা! ফোন শেষে উত্তর হাইওয়েরর ধারে চালু ছিলো অভ্রের। ট্রাক করার পরপর’ই সায়ন চলে গেছে। মাসখানেক সে চাকরি পেয়েছে পুলিশে। এখনো কেউ খোঁজ দিতে পারলো না। ইরা ঘরে নির্শব্দে কেঁদে চলেছেন।আমির পাগলের মতো ছুটেছেন। তিনজন যেন নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছে!

পুরো এখতেয়ার বাড়ি আজ স্তব্ধ! ইলিমা কেঁদে অস্থির! তনয়া অনবরত বাম হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছছে। তূরকে পাওয়া যাচ্ছেনা তারার নিখোজের আগ থেকেই। সেই বেড়িয়েছে এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি! না এসেছে কোন ফোনকলস্! কবিতা একে একে তার জানা মতে সবাইকে ফোন করতে ব্যাস্ত! কেউ কোন খবর দিতে পারছে না তারার। সকলে চিন্তিত ভগ্নহৃদয় মুখ করে বসে! এখতেয়ার গেছেন তারাকে খুজতে! যেখানে তূর আগে বেড়িয়েছিলো তাহলে তূরের সাথে তারার থাকার কথা নয়। আর যদি থেকেও থাকে তাহলে কেউ ফোন রিসিভ’ই বা করছে না কেন?
রাত ঠিক এগারোটার কাছাকাছি! এখতেয়ার পাগলের মতো খুজেও পেলো না কাউকে। বেজার মুখ নিয়ে বাড়ির দ্বারে পা রাখতেই কবিতা ছুটে গেলো ওনার সামনে। সাথে তনয়া,ইলিমাও।কবিতা মুখপানে তাকিয়ে বললো,
-তারা? কোথায় ও? পাওয়া যায়নি তাকে? আর আপনার ছেলেই বা কই? পেয়েছেন কোন খবর?
এখতেয়ার হঠাৎ হেঁচকি তুলে কেঁদে ওঠেন। উপস্থিত সকলে অবাক হলো কিছুটা। যে মানুষটা এতটা দিন অপেক্ষা করেছে তারা আর তারার মা’কে বিদেয় করতে অথচ সে আজ কাঁদছে! তাও কার জন্য? তারা! তিনি এলোমেলো পায়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। কবিতাও ফিরে হাটতে লাগলো। এখতেয়ারের ফোন পেতেই চলে আসেছিলো কবিতা।
ইলিমা ছুটে গেলো এখতেয়ারের কাছে। কন্ঠ নিষ্প্রান ইলিমার,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তারাকে পাও নাই? কোন হদিস পাওয়া যায় নাই না?
এখতেয়ার নিচু স্বরে বললেন,
-না।
-তূরেরও পাওয়া যায় নাই?
-না!
-তাইলে গেলো কই দুইজনে? তারা তো কখনোই কোথাও এত রাত করে না।
-ও কোচিং এ যায়নি! খবর নিয়েছি আমি।
ইলিমা কিছু একটা ভাবলেন। এরপর বলে উঠলেন,
-তুমি বরং পুলিশের সাহায্য নাও।
কবিতা ইলিমার কথায় সায় দিয়ে বললো,
-জ্বি আঙ্কেল। আপনি বরং পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করেন। আমার মনে হয় তারা নিজে কোথাও যায়নি। কেউ ওকে তুলে নিয়ে গেছে!
এখতেয়ার কিছুটা সময় বসে রইলেন। গরিব ঘরে এমন পুলিশ আনতে হবে তিনি কখনোই ভাবতে পারেননি। এরপর উঠে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

রাত বারোটা ছুইছুই। উত্তর হাইওয়েতে সিবিলে একলা পা রাখলো সায়ন। গুটঘুটে অন্ধকার চারপাশ।সায়ন নিশাচরী চতুর প্রানীর মতো চারপাশ পরখ করেই রিভলবার বের করলো জ্যাক থেকে। সামনে সুবিশাল এক পরিত্যাক্ত কলোনি। বড়বড় গাছগুলো থেকে ঝড়া পাতা হাটু সমান! সায়ন ধির পায়ে এগোলো কলোনির ভেতরে। এগুলো এখন সরকারের জমি। বিশাল এক নটিস ঝুলানো কলোনির দরজায়। সায়ন আরও একবার লাইটের আলোয় রাস্তাটা দেখলো। কেউ হেঁটে গেছে তা বোঝা যায়। সায়ন কলোনির দরজা খুলে ভেতরে গেলো। বুক ধুকপুক করছে সায়নের। বুকে বাজছে দামামা। প্রিয় বন্ধুর জন্য তাকে এতটুকু যে করতেই হবে। কপালের রগগুলো বরংবার দপদপ করছে! ঘামে লেপ্টে গেলো সায়ন। কলোনিতে মোট সাতটি ঘর গোল করে বাঁধাই করা। সায়ন চক্ষুড়ালে যেতে একঘরের গলিতে ডুকে পড়লো। কেউ পাহারায় থাকতে পারে।

অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গলি! কোন এক বাড়ির ভেতরে থেকে গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসতেই হকচকিয়ে উঠলো সায়ন! এক্ষুনি যেন তার জান উড়ে যাচ্ছিলো।সায়ন চোখজোড়া বড় বড় করে কানদুটি খাড়া করে শুনতে লাগলো শব্দের উৎস কোথায়। একটু এগোলো সায়ন। হাটার গতি বাড়তে সে আওয়াজ বাড়ছে ক্রমশ দ্বীগুন গতিতে। বুকে দামামা বাজছে সায়নের। শহরের প্রায় শেষপ্রান্তের হাইয়েতের উত্তরে পরিত্যাক্ত কলোনিতে রাত্রী বারোটায় সায়ন, ভাবলেই গা ঝিমঝিম করে ওঠে সায়নের। অভ্রের শেষ লোকেশন পাওয়ায় এখানেই কোথাও। সায়ন আর একটু এগোতেই গোঙানির আওয়াজ হঠাৎ থেমে গেলো। বছর পরিত্যক্ত বাড়িগুলো বেশ ভুতুড়ে! সায়ন একপা একপা করে এগোতে গিয়েই থেমে গেলো। আর কোন আওয়াজ আসছে না! সে রিভলবার শক্তহাতে ধরে ভ্রু শক্ত করে তাকালো একবার চারপাশে। নিশাচরী প্রানীরা উড়ে গেলো মাথার উপর দিয়ে। সায়ন আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ছুটে গেলো শব্দ আসা ঘরে। তিনতলা বাড়ি! একতলা থেকে দোতলায় যেতেই গোঙানির মৃদু আওয়াজ ভেসে আসলো কানে। হাতের টর্চ হাতমুষ্টি করে কমালো আলোর তেজ! সায়ন শব্দের উৎস খুজতে চলতে লাগলো।

একটি ঘরের সামনে গিয়ে থেমে গেলো সায়ন। মনে তোলপাড় চলছে সায়নের। সায়ন শুকনো ডোগ গিলে দরজায় হাত দিলো। না! ভেতর থেকে লাগানো। সায়ন ছুটে চলে হাতের সোজা পিঠে ধাক্কা দিলো। পুরোনো দরজা পুরোটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো ঠিক উল্টোদিকে। সায়ন সঙ্গেসঙ্গে রিভলবার উঁচিয়ে বললো,
-হ্যান্ডস্ আপ!
একহাতে রিভলবার অন্যহাতে টর্চ আলোয় পর্যবেক্ষন করলো পুরো রুমটা। ঘরে কেউ নেই। সায়ন রিভলবার নামিয়ে একটু এগোতেই মুখে কাপড় বাঁধা একটি মেয়েকে দেখতে পেলো। গুটিয়ে রয়েছে একদম। তখনি খপ করে কিছুর আওয়াজ শুনতে পেলো সায়ন। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে সায়ন ছুটে মেয়েটার কাছে চলে গেলো। মেয়েটি যেন ভয়ে কুঁকড়ে গেলো আরও। সায়ন শান্তনা দিয়ে বললো,
-আমি কিছু করবো না। ডোন্ট ওয়ারি। তোমায় বাঁচাতে এসেছি আমি।
তারা মৃদু আলোয় তাকাতেই চেনা মুখটি জ্বলজ্বল করে উঠলো।সেদিন হাইওয়েতে দেখার পর আর তাদের দেখা হয়নি। মাঝেই তো কেটে গেলো প্রায় তিন মাস! তারা উমম উমম করে মুখের বাঁধন খুলতে বললো। সায়ন কাপাকাপা হাতে খুলে দিলো মুখের বাঁধন। তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল! সায়ন তারাকে দেখেই হতভম্ব হয়ে পড়লো। অবাক স্বরে বলে উঠলো,

সুখতারার খোজে পর্ব ১৩

-স্টাররর?তুমি এখানে?
-আমার একটা কথা রাখবেন?
কথার প্রতিত্তোরে তারার এমন কথা আশা করেনি সায়ন। মাথা কিছুটা ঝাকিয়ে বললো,
-বলো!
-একটা আশ্রয়স্হল দিতে পারবেন? আমি আর পারছি না।
-কিন্তু তুমি এখানে কেন? কে আনলো?
-আনা হয়েছে। সব বলবো। আগে প্লিজ এখান থেকে চলুন।
আড়ালে ছবি ক্যাপচার করলো কেউ! মুখে বিশ্বজয়ের তৃপ্তিরত হাসি তার!

তার’ও পর কেটে গেলো চারদিন। তারা এখনো নিখোজ! পুলিশে বলার পর’ও পাওয়া গেলো না তাকে। জেনে গেলো সবাই। নিখোজ বিজ্ঞপ্তি ছড়ানো হলো নেট দুনিয়ায়। পাশে দাড়ালো অনেকে। তূর বাড়ি ফিরেছিলো সে রাতের ফজরে! পুলিশ তাকে সন্দেহ করছে। এদিকে চারদিন পর কবিতা ফেজবুকে আসতেই একটি পোস্ট দেখতে পেলো। যা তার ভূমিদ্বয় কাঁপিয়ে তুললো। ছবি ক্যাপশন আরও জটিলোতর!

সুখতারার খোজে পর্ব ১৫