সুখতারার খোজে পর্ব ১৩

সুখতারার খোজে পর্ব ১৩
লেখক:আর আহমেদ

-নাহ্! কেন আমি কবিতাকে আনতে যাবো বলতে পারো?
অভ্রের নাকোচ কথা শুনে ক্ষেপে গেলেন আমির। ইরা মুখে হাত গুজে কাঁদতে লাগলো। ছেলের মতিগতি তিনি বুঝতে অক্ষম! আমির সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতেই ইরা মাথা নারলেন, যেন অভ্রকে কিছু না বলে। ঘৃনা দৃষ্টি ছুড়ে স্হান ত্যাগ করলেন আমির। ইরা চোখের পানিটুকু আঁচল দিয়ে মুছে ধীর পায়ে এগোলেন অভ্রের দিকে। অভ্র এলোমেলো দৃষ্টি মেঝেতে স্হাপন করেছে। ইরা আলতো হাতে অভ্রকে স্পর্শ করতেই অভ্র বিভ্রান্তের মতো তাকালো ইরার দিকে। চেহারাটুকুর আচরনেই হু হু করে কেঁদে উঠলেন ইরা। একজন মায়ের কাছে ছেলের এমন পাগলের মতো অবস্থা যেন না হয়, মনে মনে দোয়া করে চাপদাড়িতে স্পর্শ করেই দুগালে দু হাত দিয়ে বলে উঠলেন ইরা,
-কি হয়েছে তোর?অভ্র তোর বউকে তুই আনবি না? একমাত্র তোর কথাতেই আসতে পারে কবিতা। তুই একবার বলেই দেখ,ও ঠিক আসবে। বাড়ির বউ প্রায় দু’মাসখানেক বাইরে। নিয়ে আয়! মেয়েটাও তো কষ্ট পাচ্ছে নাকি?
অভ্র বললো,
-তোহ্? আমি কি ওকে আনতে যায়নি? চাপ দিয়েছিলে না তোমরা? এখন কি পা ধরতে বলছো তোমরা?
ইরা শীতল কণ্ঠে বললেন,
-তোকে আমি পা ধরতে বলিনি নিশ্চই? তুই একবার ওদের বাড়ি যা। ও না করতে পারবে না।
-পারবো না আমি! পারবো না।
অভ্র মেঝে থেকে উঠে দাড়ালো। চোখ লালচে! সটাং বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। ইরা পিছু ডাকলেও আর শুনলো না অভ্র।

উঠোনে তারা কাপর তুলছিলো। এখতেয়ার বারান্দায় এসে দাড়ালেন। কিছু ভাবছেন উনি। মুখ দেখেই তা স্পষ্ট! তারা খেয়াল করলো এখতেয়ার কিছু ভাবছেন।তারা বললো,
-চাচা কিছু হয়েছে?
এখতেয়ার হতাশার শ্বাস ফেলে বললেন,
-না রে..তেমন কিছু না।
-তোমায় চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
কথার পরপরই ইলিমা কোথথেকে ছুটে এসে বলে উঠলেন এখতেয়ারকে,
-বলছি,বড়’টার বিয়া সাদি দিবা না? বয়স তো আর কম না। আমার মতে বিয়া দেও তুমি তারার!
উঠোনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো তারা। হঠাৎ ইলিমার এমন কথা তার বোধগম্য হচ্ছেনা। এখতেয়ারের কপালে ভাজ পড়লো। ইলিমাকে শক্ত স্বরে বলে উঠলো,
-ওর পড়াশোনা বাকি এখনো!
কথাটায় আটকে গেলেন ইলিমা। আড়চোখে একবার তাকালেন তারার দিকে। চোখে চোখ পড়তে দিলো না তারা। চোখ সরিয়ে নিলো। ইলিমা এখতেয়ারের দিকে তাকিয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-কই তনয়ার তো সেদিনেই বিয়া দিতে চাচ্ছিলেন। তাহলে তারার দিতে সমস্যা কোথায়?
-শোন ইলিমা, আমার চোখ খুলে গেছে। তারার বিরুদ্ধে আমি ওর বিয়ে দিতে পারি না!
হঠাৎ ইলিমার নতুন কথায় তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছেন। অথচ,তার পরিবর্নের কোন ছাপ নেই মুখে। না আছে লজ্জা। তারা মৃদু হেঁসে কাপরগুলো হাতে চালিতে এলো। ইলিমা তারাকে দেখেই বলতে লাগলেন,
-বিয়ের পর কি পড়াশোনা করা যায় না?
-যায়তো চাচী। চাচা তুমি বরং পাত্র দেখো। সত্যিই তো,বয়স তো আর কম হলোনা! আমি বিয়ে করতে চাই চাচা।
এখতেয়ার বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন তারার দিকে। তারা মাথা উঁচু নিচু করে বোঝালো, সে রাজি। এরপর বললো,
-পাত্র দেখো চাচা।

কাপরগুলো নিয়ে তারা ঘরে চলে গেলো। উঠোনের পরে রয়েছে আরেকটা ছোটখাটো বারান্দা। সেখানে গিয়েই কাঠের হাতল খামচে নিলো। নিজেকে বোঝা মনে হচ্ছে! তার জন্য কি তনয়ার ভবিশ্যতে আধার নামছে? নাকি তার চাচী ভয় পাচ্ছেন ভাগাভগি নিয়ে? তারার কি’বা অধিকার আছে এ জমিতে? চোখের কোনে পানি জমলো তারার। বিয়ের স্বাদ তার মিটেছে! তবুও কারো কাছে খারাপ হয়ে সে থাকতে চায়না! কোন আপত্তিই নেই তার বিয়েতে!
ভাবনার মাঝে পেছন থেকে কেউ শক্ত হাতে কোমর জড়িয়ে নিলো তারার। তারা কেঁপে উঠলো! সামনে অগ্নিসংযোগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর। নাকে জমেছে কয়েক বিন্দু ঘাম। তার গাঢ় গরম শ্বাস মুখচোখে আঁচড়ে পড়ছে! তারা অভুভব করলো তার পা কাঁপছে! চেয়াল খিচে তূর বলে উঠলো,
-আর কত পোড়াবি আমায়? তুই বিয়ে করতে রাজি হস কোন সাহসে তারা?
কোমর ছাড়িয়ে তারাকে ছিটকে দিয়ে বললো তূর। তারা কিছুটা ব্যাথা অনুভব করলো। এতটা রাগি তো তূরকে সে কখনই দেখেনি! তারউপর মুখচোখ রক্তরঙা! তূর আবারো এসে তারার বাহু খিচে নিলো। বললো,

-কেন রাজি হলি বল!
-তাতে আপনার কি তূর ভাই?
-আমার কি মানে? তুই কি আমায় এভয়েড করছিস?
-আমার লাগছে তূর ভাই!
-লাগুক!
আরো জোরে খিচে নিলো হাত! চোখের পানি আর আটকাতে পারলো তারা। শ্যামলা মুখখানা দিয়ে গড়িয়ে পড়লো অস্ত্রু। তূর হঠাৎ তাকে ছেড়ে দিলো। বারান্দার কাঠের হাতল শক্ত করে ধরে দাড়ালো। মাথার রগগুলো কেমন দপদপ করছে তার। আবারো একা মনে হচ্ছে তারার! তারা জোড়ে হেঁটে চলে গেলো নিজের রুমে। তূর তা আঁড়চোখে দেখতেই জোরপায়ে হেটে গেলো পেছন পেছন। তারা আলমারি থেকে একটি সালোয়ার কামিজ বের করলো। তূর এসেই কটাক্ষ স্বরে বললো,
-এখন কই যাবি তুই? আমার কথার উত্তর দেওয়ার জন্যও কি তোর সময় নেই? তুই কি মুখের উপর বলতে পারতি না তুই কোচিং করাস? তোর টাকা তো তুই নিজেই যোগাড় করতে সক্ষম তারা। তাহলে তুই বোঝার নাটক করে বিয়েতে রাজি হলি কেন?
শেষের কথাটা চিৎকার করে বলে উঠলো তূর। তারা ভয়ে গুটিয়ে গেলো কিছুটা! মেঝের দিকে তাকিয়ে অনবরত ঠেস দিতে লাগলো ডান’পা! তা কাঁপছে! তারা যেন তা প্রকাশ করতে চাইছে না। তূর তারার উত্তর না পেতেই নির্মল কন্ঠে বললো,

-কোথায় যাচ্ছিস?
তারা খুব ধিরে বললো,
-ক্ কোচিং!
-কিহ্? কোথায়?
ফের চেঁচালো তূর। তারা বললো,
-কোচিং এ যাচ্ছি..
-বিয়ের প্রসঙ্গে যেন তোকে আর না পাই! না হলে তোকে শুদ্ধ গুম করে দেবো!
বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো তূর। তারা বিদ্ধস্ত দৃষ্টিতে তাকায় ঘরের চালের দিকে। আজ ফের তাকে তার মায়ের কথা স্বরন করালো এ পরিবার! সুখ তার ভাগ্যে নেই’কি?
বেড়িয়ে গেলো তারা। ইলিমা এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। তারা বেড়োতেই এখতেয়ার ইলিমার পিছনে দাড়ালেন। বললেন,
-তুমি মেয়েটার সামনে এভাবে বলতে পারলে? এতটুকু মায়া নেই?
এখতেয়ারের কথায় পেছন ফিরলেন ইলিমা। তার চোখে পানি টইটই করছে। তিনি ভাঙা গলায় বললেন,
-মেয়েটা কি সুখ দেখবে না? আমিও তো চাই ও সুখে থাক! আ..আমি বলছি! তূর এর থেকে তারাকে আলাদা করে ওর বিয়েটা দিয়ে দাও! তূরের ভালোবাসায় রয়েছে চরম ঘারতি। তুমি না করো না! তারার জিবনে কি সুখের দরকার নেই? সুখ কি জিবন থেকেই আলাদা হয়ে গেছে তারার জিবনে?
এখতেয়ারের চোখেও চিকচিক করছিলো তখন! হয়তো ছেলে বলেই এদিক ওদিক তাকিয়ে আটকালো!

সুখতারার খোজে পর্ব ১২

গাঢ় সন্ধ্য! আকাশে চাঁদ নেই! রাত প্রায় আটটার আগ-মুহুর্ত! কবিতা ফোন ঘাটতে ব্যাস্ত নিজ রুমে। তখনি বেজে উঠলো ফোনটা! আন্নন নাম্বার! তবুও ফোন রিসিভ করলো কবিতা। তখনি রুমে আসলেন কবিতার মা! হাতের দুধের গ্লাসটা টি টেবিলে রেখে এগোলেন মেয়ের দিকে। কবিতা ফোন রিসিভ করে উঠে বসলো। জিজ্ঞেস করলো,
-আসলামু আলাইকুম। কে বলছেন?
এরপর ওপাড় থেকে কেউ কিছু বললো কবিতাকে। মুহুর্তে যেন মুখে বিষন্নতা ছেয়ে গেলো কবিতার। কবিতার মা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,

-কে ফোন করেছে রে?
কবিতার ফোন আলগা হয়ে পড়ে গেলো বিছানায়। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো তার। কবিতার মা বিচলিত ভঙ্গিতে মেয়ের পাশে বসে পড়লেন। কাধে হাত রেখে বললেন,
-কি হয়েছে? তুই হঠাৎ কাঁদছিস কেন? কে ফোন..
কথা শেষ হওয়ার আগেই আটকানো গলায় বললো কবিতা,
– তারা…তারা কিডন্যাপড্ মা! ওকে… ওকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!

সুখতারার খোজে পর্ব ১৪