সুখতারার খোজে পর্ব ১৯

সুখতারার খোজে পর্ব ১৯
লেখক:আর আহমেদ

বুক ক্রমশ ভার হয়ে আসছে তারার। একচোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে আরম্ভ করলো তারা। তার বুক চিড়ে আসছে৷ কলঙ্কের মিথ্যে দাগের এ বিয়ে সায়নের বাবা মানতে নারাজ। সায়নের পাশে হয়তো মানায় কোন রাজকুমারীকে। তারার মতো সাধারন মেয়েকে কেনই বা কেউ মানবে? প্রশ্নবোধক জিনিসটা আজ ছুড়ির মতো গেথে রইলো। সায়ন হাতাশার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাথার উঁচু পাগড়িটা বিছানার কোনে রাখলো। এরপর চলে গেলো ওয়াশরুমে। কিছুক্ষন পর বেড়িয়েও এলো। কিন্তু তারাকে আগের মতো দেখেই সায়ন বললো,

-মিস স্টার,
আপনাকে এভাবে মানায় না! মনে হয় যেন তারার ঠিক চকচকে নিখুঁত আলোটা নেই। কেন এভাবে নিশ্চুপ বসে আছেন? আরমান চৌধুরীর জন্য মন খারাপ?
তারা উত্তর দিলো না। শুধু একটি ঠোগ গিলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো সায়নকে,
-আপনার আব্বু জানতেন না এ বিয়ের কথা?
সায়ন উঁচু স্বরে বললো,
-হু। অবশ্যই জানতো।
-তাহলে উনার অমতেও এ বিয়ে?
-মিস্টার আরমান চৌধুরী একমাত্র নিজের সার্থটা বুঝেছেন সবসময়। তোমার আমার বিয়েতে কোন সার্থ নেই বা ছিলোনা। তিনি চেয়েছিলেন বিসনেসম্যান আব্বাস তইমুর এর একমাত্র মেয়ে আরিশার সাথে বিয়ে দিতে।যেখানে তার সার্থ ছিলো। আরমান চৌধুরী চেয়েছিলেন এ বিয়ের মাধ্যমে তিনি পার্টনার শীপ করবেন আব্বাস তইমুর এর সাথে। যেহেতু তা হলো না তাই এ বিয়েতে তিনি যাননি। বলতে পারো তিনি খুশি নন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আপনার পিতা হন উনি! নাম ধরে না ডাকলেই নয়?
হঠাৎ রেগে উঠলো সায়ন। কটমটে গলায় বললো,
-এ নিয়ে তোমার না জানাই শ্রেয়।
তারা অবাক চোখে দৃষ্টিপাত করলো। হঠাৎ এমন রাগারই বা কারন বুঝে আসলো না তারার। আবারো মাথা নিচু করে রইলো তারা। সায়ন এসে পাশে বসে তারার। তারা তাকায়। জাগে আরো প্রশ্ন। নিজ পিতাকে নিয়ে এত ঘৃনা প্রকাশ কেন পেলো সায়নের মুখে?
-কি ভাবছো?
-নাহ কিছু না।
-তাহলে তাকিয়ে আছো যে..
-বললে রাগ করবেন?
-উহুক। তবে আরমান চৌধুরীকে নিয়ে কোন কথা নয়।
-আচ্ছা, কিন্তু অভ্রের শাস্তি.?
-কাল পরশু’ই ব্যাবস্হা হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই সায়ন আলতো স্পর্শ করলো তারার হাতে। পুরো শরীর ঝেকে উঠলো তারার। এতে মুচকি হাসলো সায়ন। কিছুটা সময় অপলক ভাবে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-ঘুমিয়ে পড়ো। রাত হয়েছে।

খুব ভোর! সূর্যমামা তখনো জাগেনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো তারার। উঠতে গিয়েও পারলো না উঠতে। কারো বাহুতোরে বাধা দেখে চমকে উঠলো।সবটা বুঝতে পেরেই একরাশ লজ্জা তাকে ঘিরলো যেন। মুচকি হেঁসে তারা সায়নের এক হাত উচু করে সরে যেতে নিলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো সায়ন। তারার বুক ধুক করে উঠলো। তার হাত ক্রমশ আসর হয়ে আসছে। তারা দ্বিতীয় চেষ্টা করতেই ঘুম ভেঙে গেলো সায়নের। পিঠপিঠ করে আধখোলা চোখে তাকালো তারার দিকে। তারার মুখে স্পশ্ট লজ্জা! সবুজ ডিমলাইটের আলোতেও আক্ষআড়াল হলো না। সায়ন এক চিলতে হেঁসেই বলে ফেললো,
-এত লজ্জা আমার সুখতারার?
আবারো মৃদু হাসলো তারা। কিছুই বলতে পারলো না। সায়ন পাশ থেকে ফোন অন করতেই দেখলো সাড়ে চারটে বাজে। ক্রুদ্ধ নয়তে তাকিয়ে বলে উঠলো সায়ন,
-এত সকাল সকাল উঠছো যে?
-ইয়ে মানে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেলো।
সায়ন আরো খিচে জড়িয়ে নিলো তারাকে। বুকের ধুকপুক আওয়াজে মুখোরিত চারপাশ। প্রতিটা শ্বাস অদ্ভুতভাবে কানে বাজছিলো দুজনের। সায়ন তারার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলো। কিন্তু বুজতে পারলো না তারা। তার হৃদপিণ্ড বরাবর কাঁপছে!
একটু পরই ফজরের আজান পড়লো। তারা তখনো জেগে। সায়ন ঘুমে কাদা। তারার উষ্ণ বুক থেকে উঠতেই মন চাইলো না। কিছুটা আলো ফুটতেই আলতো করে সায়নের হাত ছাড়িয়ে উঠে পড়লো তারা। ঘুমন্ত সায়নকে একপলক দেখেই ওয়াশরুমে চলে গেলো।

মোনাজাতে হু হু করে কেদে উঠলেন ইলিমা। পাশে তনয়া সেজদায় ছিলো। মায়ের সশব্দে কান্নার আওয়াজে বুক ছেত করে উঠলো তনয়ায়। ইলিমা কেঁদে কেঁদে দোয়া করতে লাগলেন। নামাজ শেষে তনয়ায় মোনাজাতে সবার জন্য দোয়া করলো। ইলিমা ডাহুক নদীর মতো কাঁদছে। প্রতিটা কান্নার স্বরই বোঝাচ্ছিলো ইলিমা তার আরেক মেয়ে তারার জন্য কাঁদছেন। মায়ের পাশে বসে রইলো তনয়া। কাল রাত থেকে মানুষটা ঘুমোয়নি। আজানের আগেই উঠে কলপাড়ে গিয়েছিলো ওজু করতে। তার আগেই টের পেয়ে যায় তনয়া। বিছানা ছেড়ে উঠে পিছু ডাক ডাকে তনয়া,

-মা কই যাও?
ইলিমা না ঘুরেই বলে উঠলো,
-কেন? ওজু করতে!
-ফজরের আজানের দেড়ি আছে।
-জানি। তাহাজ্জুদ পড়মু।
তনয়া আর কিছু বলেনি। মায়ের ডাথে নিজেও তাহাজ্জুদ আদায় করলো। আগে মকতবে কোরআন পড়তো তনয়া। অনেকদিন পর আবার কোরআন খুলে বসে পড়তে বসতেই আগের থেকে অনেক বেগ পেতে হলো তাকে। তবুও কষ্টেশিষ্টে পড়লো কয়েক পাতা।
মোনাজাদ শেষ হতেই ভাবুক তনয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন ইলিমা। মুচকি হেঁসে মাথায় হাত রাখতেই ধরফর করে উঠলো সে। শান্ত গলায় বললেন ইলিমা,
-তোর পড়াশোনা নাই?
-হুম। আছে তো!
-তাহলে যা পড়তে বস।
-জ্বি আম্মা। আচ্ছা আম্মা, তুমি ভাইয়ারে দেখছো? সে কি বাড়ি ফিরছিলো রাত্রে?
-না। আসে নাই।
-ওও।
বলেই জায়নামাজ গুটিয়ে তনয়া উঠে বসলো। শিত পড়ছে! তনয়া কাথা মুড়িয়ে পড়তে বসলো টেবিলে। ইলিমাও উঠে পড়লেন। তনয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-গজি বের করে দিবো?
-পড়ে দিও। এখন লাগবে না।

ঘারে কারো উষ্ণ স্পর্শে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো তারার। ঘার ফেরাতে যাবে তার আগেই দু হাতে জড়িয়ে আটকালো তারাকে সায়ন। সায়নের ভারি শ্বাস আচড়ে পড়ছে তারার ঘারে। পা দু খানা থরথর করে কাঁপছে তারার। দেড়মিনিট কাটলো এভাবেই। সায়ন বললো,
-তারাদের চুলের গন্ধ এত সুমিষ্ট?
তারা ওভাবেই বলে উঠলো,
-হওয়ার’ই কথা নয় কি?
-হওয়ার’ই কথা? মানে?
ঘার ঘুরিয়ে সায়নের দিকে তাকালো তারা। বললো,
-স্যাম্পুহীনা এ চুলের মূল্য আছে?
-আছে! আমার সুখতারার প্রতিটা কোনায় প্রচুর মায়া। গন্ধ! শুধু আমার তুমি! চুলটা,নাকটা,কানটা এবং লাল রঙের গালটাও শুধু আমার।
সঙ্গে সঙ্গে তারা ছিটকে দু হাত পিছিয়ে গেলো। আকম্বিক তারার আচরনে খানিকটা অবাক হলো সায়ন। তারা উঁচু করে হেঁসে বলে উঠলো,
-ছেলেদের এতটা নির্লজ্জ হতে নেই”!
-কেন?
-ধ্যাত!

সুখতারার খোজে পর্ব ১৮

বলেই ভেজা চুলে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো তারা। লক্ষ ও করলো না চুলবেয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে। কিন্তু এই অচেনা বাড়ির কোন কোনায় গেলে তার লজ্জা গুলো ডাকবে? কোথায় গেলে চুকবে তার এই আকাশসম লজ্জা? তারা ভাবতে ভাবতে কখন নিচে নেমেছে সে নিজেই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না। এদিকে আরমান সাহেব জড়জড় হয়ে বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলেন। মেয়েদের হাটার আওয়াজ পেতেই তিনি বলে উঠলেন,
-সাবিহা, তোর মা’কে একবার বলতো শিতের সব কাপড় কই রাখছে? বেশ ঠান্ডা পড়তে আরম্ভ করেছে।
তারার বুঝতে বাকি রইলো না তিনি তারাকে সাবিহা ভাবছেন, না দেখে। তারা ঠাই দাড়িয়ে রইলো। কেউ তারার পেছন থেকে জোরে বলে উঠলো,
-আম্মু বাগানে গাছে পানি দিচ্ছে। আর আমি তো কিছুই জানি না।
তারা পিছু ফিরে সাবিহাকে দেখে শ্বাস ফেললো। এতক্ষণ যেন দম আটকে ছিলো তারার।
আরমাস সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজের পৃষ্ঠা উল্টালেন। বললেন,
-বাসায় তো একজন মালি আছেই। তাহলে আমি বুঝলাম না যে, কেন প্রতিদিন পানি দেওয়া লাগে?
বলেই উঠে দাড়ালেন আরমান চৌধুরী। কিন্তু সামনে তারাকে দেখবেন ভাবতেই পারেননি। চোখ যেন ছানাবড়া আরমান সাহেবের।

ফোন হাতে নিয়েই ‘অলিভ’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারে কল করলো সায়ন। ওপাড়ে কিছুক্ষন ফোন বাজতেই রিসিভ করে নিলো অভ্র। সায়ন ভালোমন্দো জিজ্ঞেস করতে করতে কথার মাঝেই বলে উঠলো,
-দোস্ত ১২ ই নভেম্বর রাতে যে আড্ডাটা আমারা রাত একটা নাগাত কন্টিনিউ করেছিলাম সে রাতে আমি…
সায়নকে থামিকে খানিক চেঁচিয়ে বললো অভ্র,
-আরে কোন তারিখ বললি? বারো? সে রাতে তো আমি উত্তর হাইওয়ের কলোনিতে ছিলা…!!

সুখতারার খোজে পর্ব ২০