সুখতারার খোজে পর্ব ২০

সুখতারার খোজে পর্ব ২০
লেখক:আর আহমেদ

-আরে কোন তারিখ বললি? বারো? আরে সেদিন রাতে তো আমি উত্তর হাইওয়ের কলোনিতে ছিলাম। কিন্তু…
বলেই থেমে গেলো অভ্র। পরমুহূর্তেই ভেবে সে অবাক হলো তার অজান্তেই সে কতটুকু বলে ফেলেছে। এপাড়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সায়ন। তার কাজ সম্পন্ন। এটাই চেয়েছিলো সায়ন। চেয়েছিলো অভ্রের গুমড় ফাঁস করতে। আর তালগোলে অজান্তেই সবটা বলে দিয়েছে অভ্র!
-তুই ধরা পড়ে গেছিস অভ্র! তাহলে তু’ই ওই কিডন্যাপার? তুই ওই ছবি তুলে দিয়েছিলি না?
অভ্র হা পা ক্রমশ শীতলতা আহরণ করতে আরম্ভ করেছে। সায়নের কথার উত্তরে আটকানো গলায় বললো অভ্র,
-আ্ আমি কি ক্ করলাম?
-কি করলি মানে? তুই একটা কিডন্যাপার! প্রতারক। পারলি কিভাবে নিজের বন্ধুকে ফাঁসাতে তুই? তুই একটা মানুষিক রোগি অলিভ। তা না হলে আমায় তুই এমন ফাঁসাতে পারতিস না! জানিস? এর জন্য আজ আমার চাকরিটা আর নেই? নিজের একটা পরিচিতি হারালাম আমি!
অভ্রের ঘাম ছুটছে। ভয়ে অস্হির অস্হির লাগছে অভ্রের। অভ্র দিকশারা হয়ে বললো,

-ত্ তুই ভুল ভা…ভাবছিস আমায়। আমি…
-ব্যাস অভ্র! মজার ব্যাপার কি জানিস? আজ চাকরিটা নেই ঠিকি কিন্তু দোষির শাস্তি হবে। সবটা রেকর্ড করা হয়েছে! আর আমি এসব পুলিশের হাতে তুলে দেব। হু, দেব আমি।
-সায়ন, সায়ন এমন করিস না প্লিজ। আমার পুরো কথা..
-তুই তারাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছিলি না? কি রে? বল!
-হ্যা কিন্তু..
-কিন্তু? হ্যা এই কিন্তুর জন্যই তারা আজ আমার লিগাল ওয়াইফ।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো অভ্রের। ডান পায়ের উঁচু গোড়ালি আলগা হয়ে আসছে। হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো অভ্র,
-এ..এসব কি বলছিস তুই? তোর ওয়াইফ মানে?
-বাদ দে! কাল রিসিপশন! বড় করে পার্টি দেওয়া হবে। সপরিবারে আসতে ভুলিস না। তারপর না হয় আমি সবটা পুলিশের কাছে দিব?
-সায়ন শোন আমার কথা..
ফোন কেটে দিলো সায়ন। অভ্র উন্মাদ পাগলের মতো মেঝেতে ধপাশ করে বসে পড়লো। কপালের রগগুলো দপদপ করছে। সব ওলট পালট লাগছে। সবটা!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরমান সাহেব তারাকে দেখেই রেগে আগুন হয়ে উঠলেন। কর্কষ কন্ঠে বললেন,
-তুমি? এখানে?
চুপটি করে ঠায় দাড়িয়ে রইলো তারা। আর কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে গেলেন আরমান সাহেব। উনি চলে যেতেই সাবিহা তারার পাশে এসে দাড়ালো। বললো,
-তুমি মন খারাপ করো না। আব্বু অমনি। বাই দা ওয়ে এমন ভেজা চুলে বাইরে কি করছো? আর এই সকাল সকাল গোসল? হুমম?
শেষের কথাটা সাবিহা আনন্দিত কন্ঠে বললো। তারা নিজের মুখ কোথায় লুকাবে এবারে? আরও একরাশ লজ্জা ঘিরে নিলো তাকে। কিন্তু কারো রাগান্বিত কন্ঠে দমে গেলো সাবিহা,
-ছোট ছোটর মতো থাকবি। ভাবি কে এসব কি বলছিস তুই সাবি?
দরজা থেকে ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলে উঠলেন সাবিহার মা। তারা পিছনে তাকালো। উনি বললেন,
-এত সকাল সকাল উঠে পড়েছো? আর চুলটা মুছে এসো।
বেশ সুলভ কন্ঠে বললেন মিস আয়রা। তারা জ্বি বলেই চলে গেলো উপরে।

এদিকে আরমান সাহেব ঘরে ডুকতেই আড়চোখে বাইরে তাকিয়ে চোরের মতো ফোন হাতে নিলেন। এদিক ওদিক,একপলক ওয়াশরুমটাও পরখ করে ফোন ধরালেন আব্বাস তুইমুরকে। দু বার ফোন রিং হয়েও রিসিভ করলো না আব্বাস। আরমান সাহেবের উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। পরের বার ফোন রিসিভ হতেই ওপাড় থেকে বাজখায়ী গলায় বলে উঠলেন কেউ,
-এত ফোন করার কি আছে? এ ডিল আর পসিবল নয় আরমান চৌধুরী। বিসনেসের থেকেও নিজ পার্সোনেলিটি টা নিয়ে আমি কতটা কেয়াফুল আপনার জানা নেই? জানেন না আপনি আমার স্ট্রং হেড’এ কেউ আঘাত করলে তাকে নিঃস না করে আমি দম ফেলি না?
আরমান চটে গেলেও কন্ঠে সাবলীল করে বললেন,

-দেখুন আমি কিন্তু ছেলের বিয়েতে মোটেও রাজি নই। দয়া করে কালকের রিসিপশনে আসবেন সবাইকে নিয়ে। আর আপনার সকল চাওয়া চুকিয়ে দিবো আমি। আ’ম টেলিং ইউ! প্লিজ অর্নব, আরিশা দুজনকেই নিয়ে আসবেন।
-প্রশ্নই আসে না! একটা কথা বলি আপনাকে? গিরগিটি আপনি! দেখলেন তো আজ কেমন ইনভাইট করছেন? এ ইনভিটিশন রিজেক্ট করলাম আমি। আমার মেয়ে ডিপ্রেশনে চলে গেছে আরমান চৌধুরী। সব রেসপন্সিব্লিটি আপনার! দায়ী আপনি আর আপনার ছেলে!
ফোন কেটে দিলেন তইমুর। আরমান বিশ্রীকন্ঠে ‘কচুখোর’ শব্দে গালি দিলেন ওনাকে। কেন এ উশৃঙ্খল? কেন এত রাগ থাকার পরও এতটা শাবলীল ছিলেন আরমান? কোন পাপের সাথে যুক্ত উনি? বিয়েতে নিজে রাজি নয়, তবুও পার্টিতে ইনভাইট? সবটা কি জানেন তইমুর? নয়তো আসল দোষি ই তুইমুর!

সুখতারার খোজে পর্ব ১৯

আরমান ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেললেন। বেডের বেত পেড়িয়ে ল্যাম্প বাতির টেবিল ডিস্কটায় আড়াত পেলো ফোন। খেয়াল না করেই বেড়িয়ে গেলেন রুমথেকে আরমান।
গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন আরমান। আয়রা রান্নাঘরে ডিমের অমলেটটা উল্টাতেই চোখ পড়লো আরমান সাহেবে দিকে। উনি সম্মুখে এসেই বলে উঠলেন,
-কি রান্না করছো সেই থেকে। ক্ষিদে পেয়েছে। সকলে কোথায়?
আয়রা ভয়ক্লিষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
-আ্ আপনি বসুন আ্ আমি আনছি!
পানিশূন্য কলিজা আয়রার। লোকটা অদ্ভত! সায়ত্রিশ বছরের সংসারে তিনি শান্ত-চিন্তাহীন আরমানকে কখনো দেখেননি। ভয়ে যে তার ডান হাতের রগগুলো দপদপ করছে! আরমান সাহেব একপ্রাকার তাড়া নিয়ে টেবিলে বসলেন। আয়রা একে একে খাবার বেরে দিলো। কিছুটা খেতেই উনি গম্ভির কন্ঠে আয়রাকে বললেন,
-সায়নরা কি খেয়েছে?
-জ্বি না তো।
-সাবিহা যেন ঠিকমতো খেয়ে নেয়। আর ওই মেয়েটাকে বলো যেন আগ বাড়িয়ে কিছু না করে। আর হ্যা, যাকে যাকে ডাকবে ডেকে নিও। কাল রিসিপশন হচ্ছে!
চমকে উঠলেন আয়রা। এই অদ্ভুত মানুষটাকে তিনি বুঝতে অক্ষম! তারা’কে মিডিলক্লাস বলে যে বিয়েতে গেলো না, সে নিজমুখে রিসিপশনের কথা বললো? শুকনো ঠোগ গিলে ‘হুম’ উচ্চারন করলেন আয়রা।

রুমের কোথাও কেউ নেই! তারা এদিক সেদিক তাকিয়ে সায়নকে দেখতে পেলো না। ঘরে আরেকটু এগোতেই ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ কর্নকুহরে হানা দিলো তারার। তারমানে সায়ন ওয়াশরুমে। তারা কিছু না ভেবেই যেই বিছানায় বসবে ওমনি সায়ন চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-তারা প্লিজ আলমাড়ি থেকে আমার জিন্স আর একটা টি শার্ট বের করে দেবে? আমি ভুলে গেছি নিতে।
তারা নির্বিকারে আলমাড়ির সম্নুখে দাড়ালো। আলমাড়ি খুলে হ্যাঙ্গার থেকে একটি ব্লাক কালারের টি শার্ট বের করে নিলো। এরপর পরের তাক থেকে জিন্স বের করতে যাবে তার আগেই সশব্দে একটি ফাইল নিচে পড়লো। তারা বিরক্তি নিয়ে নিচে ঝুকতেই বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়! কারো ডিভোর্স পেপার’স! তারার বুকে দামামা বাজছে। কার ডিভোর্স পেপার সায়ন তার আলনারিতে রেখেছে? ফাইল তুলে পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই তারার ভূ-মন্ডল কেঁপে উঠলো। আরমান চৌধুরীর ডিভোর্স পেপার। তারমানে সায়নের বাবা আগে আরেকটা বিয়ে করেছিলো? আর সায়ন এটা অতি যত্নে নিজের আলমাড়ি তে রেখে দিয়েছে? কেন?

সুখতারার খোজে পর্ব ২১