সুখতারার খোজে পর্ব ৪

সুখতারার খোজে পর্ব ৪
লেখক:আর আহমেদ

কেটে গেছে চারদিন। সেদিনের পর তারা নিজেকে খুব একা মনে করে। একাকিত্বটা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। কারন, তার বেস্টফ্রেন্ড তাকে ভুল বুঝছে! শতাধিক ফোন দেওয়ার পরও ফোন রিসিভ করেনি কবিতা! সেদিন অভ্রের নোংরামি গুলো কারো চোখে পড়েনি। তার অশ্লীল কথা, অসভ্যতা কেউ দেখেইনি! হয়তো দেখেও না দেখার ভান ধরেছিলো সবাই। অনেকেই অনেক কটু কথা বলে গালিগালাজ করেছে তারাকে! অথচ, অপরাধী আড়ালে হেসেছে! কবিতা সেদিন প্রতিবাদ করলেও কাল থেকে কবিতা কথা বলছে না। ফোনটাও রিসিভ করছে না! অভ্র কি ভুল বুঝালো কবিতাকে? আবারো মিথ্যের বেসাতি খুব করে ডোকালো?
দুদীন আগে..
তারা ঘরে এপাশ থেকে ওপাশ হাটাহাটি করছে! যে কবিতা তাকে দু মিনিট পরপর ফোন করতো সেদিনের পর থেকে আর কথা হয়নি কবিতার সাথে। তারা তৃতীয় বারের মত ফোন দিতেই কবিতা ফোন রিসিভ করে। তারাকে বলতে না দিয়েই কবিতা রেগে উত্তর দেয়,

-এত ফোন করার কি আছে? তুই তো জানিস, এখন আমি বিবাহিত তারা। আমার একটা সংসার আছে! সেখানে তুই কেন এত ডিস্টার্ব করছিস?
কথাগুলো করাঘাত করে বুকে তারার। যেন বুকের এপিট ওপিট ছ্যাত করে কেউ ছুড়ি বসিয়ে দিলো। তারা শুকনো ডোক গিলে আনমনেই বলে ওঠে,
-কবিহ্!
-উফফ!তারা যা বলবি স্পষ্ট স্বরে বল। আমার অনেক কাজ আছে।
-তুই আমার উপর রেগে কবি?
কথাটার পর কিছুক্ষণ নিরবতা কাটে। তারপর কবিতা বলে,
-রাগ করার কি আছে?
-দেখ আমি….
ফোনের ওপাড়ে বিরক্তির শ্বাস ছেড়ে বলে কবিতা,
-অনেক হলোতো তারা! আমি রাখছি।
-প্লিজ কবি দাড়া, এতটুকু শুধু বল তুই কি রেগে আছিস?
কবিতা চুপ! কবিতার এমন নিস্তব্ধতা তারার বুক ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। তারা অনুনয়ের স্বরে ফের বলে,
-কবি চুপ কেন তুই?
-তুই কেন অভ্রের ওই বন্ধু..কি যেন নাম.. নজিবুল! ওর সাথে তোর কি?
-আমি চিনি না ওই লোকটাকে! তোকে অভ্র ভুল বুঝাচ্ছে কবিতা। আমায় বিশ্বাস কর একটি বারের জন্য।
-ব্যাস তারা। সেদিন অভ্র তোর ভাই হিসেবে তোকে শাষন করতে গিয়েছিলো। আর তুই?…আমি আর কথা বলতে পারছি না। রাখ তুই।
কবিতা ফোন কেটে দেয়। তারার সে রাতেও হয়না ঘুম!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বুক চিড়ে দূর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তারার। গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। তারার কোন কিছুতেই মন বসছে না! খেতে গেলেও গলায় বাধছে!
-মা! তারা,তোরা কই? কি রে?
মেঝে থেকে উঠে চোখ মুছে বেড়িয়ে আসে তারা। বাইরে আসতেই নিজের বড় আব্বুকে দেখে হতবাক হয়। হাতে মিষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে উনি। তারা নিজেকে কড়া করে নেয়। এই লোকটা শুধু নিজের সার্থটাকেই সবসময় গুরুত্ব দেয়। অভ্রকে এখানে আনার কারনটা যে নিজের সার্থ ছাড়া কিছু নয় জানে তারা। তারাকে দেখেই এগিয়ে আসেন এখতেয়ার আহমেদ। মিষ্টি প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলেন,
-নে মা! এগুলো ঘরে রেখে আয়। তোর মা ঘুমোচ্ছে নাকি?
তারা চোখ বুজে একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
-কি বলবে আমাকেই বলো চাচা। মা’কে কেউ অযথা বিরক্ত করবে এটা আমি মানতে পারবো না।
কথাগুলোয় যে উনি অখুশি তা দেখে বোঝায় যায়। কিন্তু তবুও টেনেটুনে হাসছেন এখতেয়ার। বলেন,
-আগে মিষ্টিটা নিবি তো..?
-প্রয়োজন নেই চাচা। আপনি বলেন কেন এসেছেন?
-বিয়ে! তোর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে তারা। বিরাট বড়লোক বাড়ির থেকে।
আর দমে থাকতে পারেনা তারা। চেঁচিয়ে বলে,
-কত কত? এতদিনে আমরা মরলাম না বাঁচলাম এতে তো তোমার কিছু যেতে আসতে দেখিনি? আমার বিয়েতে তোমার কি স্বার্থ চাচা? এই জমিটুকু? এর জন্য এত তাড়া আমার বিয়ের? নিজের ভাবিকে আগে দেখাশোনা করতে এসো। একটু ভালোবাসো! মহিলাটি শান্তিতে মরতে পারবে। আমি জানি, এখন হয়তো বলবে আমার সময় নেই তারা! রাখ তোমার সময়, তনয়া, তূর তো তোমারি ছেলে-মেয়ে! কখনো তাদের বলেছো যা তো তোদের চাচীকে একটি বার দেখে আয়। কিছু প্রয়োজন কি না জেনে আয়! একটি মেয়ে আর কতদিক সামলাবে! বরং এ বাড়ির আশেপাশেও আসতে দাওনা! চলে যান চাচা, অত লোভ ভালো নয়!
এখতেয়ার আহমেদ ভেজা বেড়ালের মত প্যাকেট হাতে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে তারা। এইতো তার ভালোবাসা! আদেক্ষেতা! আজকাল লোকটা জোর করতেও ভয় পায়।

সুখতারার খোজে পর্ব ৩

ফোনের দিকে এক চোখে তাকিয়ে কবিতা! তার চেনা তারা কয়েক মুহুর্তে পালটে গেছে! হাতটি উঁচু করে আংটিকে দেখে কবিতা! কবিতার কান্না আসছে। তারার সাথে যা করলো তা কি ঠিক হলো? এতোটা কঠোরতা না দেখালেও চলতো!
কবিতার ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে অভ্র। আয়নার সামনে টাই ঠিক করতে করতে একবার আড়চোখে কবিতার দিকে তাকায়। বিষন্ন মুখ কবিতার। সেদিনের পর অভ্র তাকে নানাভাবে বুঝিয়েছে সবটা দোষ তারার। নজিবুল কিছু বলার সুযোগ পায়নি। তারাকে অপমান করার সময়ও তাকে আটকে রেখেছিলো অভ্র! মেয়েটাকে এত কষ্ট দিতে তার কি যে এক আনন্দ হয়, পৈশাচিক আনন্দ!
টাই না খুলেই অভ্র কবিতার সামনে গিয়ে বলে,
-কি হয়েছে কবিতা? কোন কারনে তুমি চিন্তিত?
-আমি কাল থেকে কলেজে যেতে চাই!
হাতের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো কবিতা। কথাটায় অভ্র ফিক করে হেঁসে দেয়। বলে,
-তো যাবে। আর তোমার তো পরিক্ষাও তাইনা?
-হুম।
-মনে রেখো তোমায় যেন তারার সাথে না দেখি! মেয়েটা প্রথম থেকেই কেমন সুবিধাবাদি।
কবিতার এসব কথা সহ্য হচ্ছে না। একমাত্র তারার জন্যই তার কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত! নয়তো এইচএসসি দেয়ার পর সে পড়তেই চায়নি। কলেজ, পড়াশোনা কোন কালেই পছন্দ নয় কবিতার, ছিলোও না! এতদিন তারা না থাকলে হয়তো অনেক আগেই পরাশোনা বন্ধ করে দিত কবিতা।
-এই যে কবিতা ম্যাম!
অভ্রে কন্ঠে ধ্যান ভাঙে কবিতার। বলেই চলে যাওয়ার জন্য ফিরে অভ্র। পেছন থেকে কবিতা হাত ধরে ফেলে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায় কবিতার দিকে। কবিতা উঠে টাই’টায় হাত দিতেই সরে যায় অভ্র। কবিতার ভ্রুযুগোল নেমে আসে। অভ্র সরে নিজে আয়নার সামনে গিয়ে টাই খুলে। তাজ্জব হয়ে যায় কবিতা। বিয়ের চারদিন হতে চললো অভ্র তাকে স্পর্শ করেনি! আর আজ যখন কবিতা তার টাই’টা খুলতে গেলো তখন সে সরে গেলো?

বিকেল হয়ে আসছে। ৩.৪৭ বাজে! তারার যেন খেয়ালই নেই এখন তার কচিং এ যাওয়ার সময়। মায়ের কাছে বসে আছে তারা। অসুস্থতা বাড়ছে লতিফার। তারা খেয়াল করে আগের মতন মা আর তাকে ডাকে না! খাইয়ে দিয়ে যেভাবে সুইয়ে দেয় তেমনিই থাকে। পাশ ফিরে শোয়ার সামর্থ্য নেই লতিফার। হঠাৎ পাশের টেবিলে ফোন বেজে উঠতেই একটু নড়েচড়ে বসে তারা। নামস্হানে ‘রাহুল’ লেখাটি জ্বলজ্বল করছে। মানুষটা অদ্ভুত! প্রতিদিন এ সময়ে ফোন করা তার যেন অভ্যাস হয়ে উঠেছে! তারা আনমনেই হেসে ফেলে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাড় থেকে রাহুলের আওয়াজ,
-আসলামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসলাম ভাইয়া।
-তুমি আজও আসবে না?
-ওহ্। আমি আসছি!
-রাখো তাহলে।
তারা ফোন কেটে দেয়। মায়ের কপালে গাঢ় চুম্বন করে নিজ রুমে চলে আসে। একটি সালোয়ার কামিজ পড়ে রেডি হয়ে হয়ে নেয়। মা’কে আরেকবার বলে বেড়িয়ে পড়ে।
হাইওয়েতে..
বিকেলে রিকশা পেতে তেমন দাড়াতে হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা রিকশা পেয়ে যায়। রিকশায় উঠতেই তাড়া দেয় তারা। কিন্তু রিকসা চালাতে পারেনা রিকসাওয়ালা। কারন,রিকসার ঠিক সামনেই নজিবুল দাড়িয়ে!

সুখতারার খোজে পর্ব ৫