সুখতারার খোজে পর্ব ৫

সুখতারার খোজে পর্ব ৫
লেখক:আর আহমেদ

সজ্জিত একজন মানুষ তারার দিকে তাকিয়ে অপলক ভাবে। সজ্জিত বলার কারন, তার পায়ে ব্রান্ডেড সু, চোখে রোদচশমা, হাতের ঘরিটাও বেশ! তারা রিকশা থেকে নেমে আসে। রিকশাওয়ারও তারা তখনি! চাচা তারাকে বলেন,
-আমার তাড়া আছে। আমি যামুনী আফা?
তারা বাকরুদ্ধ! কথা কেন বলতে পারছে না তারা। গলায় কোথাও আটকাচ্ছে! সবিশেষে নিজেকে সান্ত করে বলে উঠলো তারা,
-যান আপনি!
অথচ তারার দেড়ি হচ্ছে! নজিবুল এগিয়ে আসে তারার দিকে। তারাও এগিয়ে যায়। রিকশাওয়ালা চাচা স্থান পরিত্যাগ করেন। নজিবুল বলে,
-কেমন আছো?
তারা মুখে হাসি টেনে বলে,
-ভালো আছি। হঠাৎ আপনি?
-আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি। স্টার ইয়ে মানে তারা, সেদিন আমার জন্য খুব বাজেভাবে অপমানিত হতে হয়েছে আপনাকে। এর জন্য আ’ম রিয়েলি সরি।
তারা হাসি প্রসারিত করে বলে,

-আপনার দোষ নেই! দোষটা সময়ের! নিজেকে দোষি ভেবে এখানে চলে এসেছেন? জানলেন কিভাবে?
-ওহ্, হ্যা। তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।জানো? অভ্রের নোটপ্যাডেই সব পেয়েছি আমি। কাল ওর অফিসে গিয়েছিলাম। ও কফির ওর্ডার দিতে দিতেই বেড়িয়ে গেলো। সামনেই নোটপ্যাডটা ছিলো। খুলতেই কারো একগাদা ডিটেইলস্! অবাক হলাম! এতো কার ডিটেইলস্? সবিশেষে নামটি দেখে চিনলাম! “সুখতারা” কেন বলোতো?
প্রতিটি কথাই চমকে তুলছে তারাকে। তারা কোথায় যায় না যায় সবটা অভ্র লিখে রেখেছে? কিন্তু কেন? নজিবুলের কথাগুলো শুনেই বোঝা যায়, এতে নজিবুলও অবাকই হয়েছে। হওয়ারি কথা। তারা জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আপনি ঠিক দেখেছেন?
-শোন তারা, আমি কখনো কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ঠিক থাকতে পারিনা। সবসময় শুধু তার কথা মনে পড়ে। এই যেমন তখও স্টার স্টার করছিলো! তো নোটপ্যাডের শেষে “সুখতারা” দেখেই আমার কেমন একটা লাগে! আর যখন জিজ্ঞেস করলাম তো অভ্র রেগে আগুন! যে ছেলেটার সব আমি জানি, সেখানে ও যে কারোর উপর নজরদারি করে এটার সম্পর্কে আমি ঘুনাক্ষরেও জানিনা? এমনকি নোটপ্যাডে হাত দিয়েছি দেখে চটেও গেলো! তবুও এসেছি! যদি দেখা পাই, এই আশায়!
তারার আটকানো গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-নজরদারি ম্ মানেহ্?
-দেখ, কেউ কারো এতকিছু কিভাবে জানবে? কখন কোথায় যায়, কি করে এসব একজন পারসোনাল ইনফর্মার না থাকলে অভ্র জানবে কিভাবে?তাই আমার মনে হয় অভ্র নজরদারি করায়! কিন্তু কেন তারা?
তারা দৃষ্টি মাটিতে স্থির করে। এসব তো অভ্রকে তারাই বলেছে একসময়! কিন্তু তা যে ‘সুখতারা’ দিয়ে অভ্র নোটপ্যাডে লিখেছে তা ভাবতেও পারেনা তারা। যদি সুখতারাই হতো তাহলে এতটা কষ্ট দিতে পারতো অভ্র?
তারার ভাবনার মাঝেই নজিবুল বলে,
-এখানে রাস্তায় তোমার সময় নষ্ট করতে চাই না। পারলে আমায় সেদিনের জন্য ক্ষমা করো!
উত্তরে তারা মুচকি হাসে। নজিবুল দূরে রাখা গাড়িতে গিয়ে উঠে চলে যায়। তারার মাথায় ঘুরতে থাকতে থাকে রহস্য “সুখতারা” নিয়ে! অভ্র খুব রাগি স্বভাবের। একটুতেই সব তছনছ করতে দ্বিতীয়বার ভাবে না। তাহলে নোটপ্যাডে এখনো সুখতারা লিখে রেখেছে? কিম্ভুত!
অতশত ভাবনার পর তারা চলে যায় কোচিং ক্লাসে। 8-10 ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো হয় সেখানে। রাহুল সহ তারা ছয়জন পড়ায়। চারজন ছেলে আর দুই জন মেয়ে। তারা ক্লাস শুরু করে।

সন্ধ্যে সাতটায় বাড়ি ফিরেছে তারা। ঘরে চাল আর ডাল ছাড়া কিছু নেই! তাই দিয়েই খিচুড়ি রান্না করে তারা। লতিফা ডাল খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই।
তারা ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে চলে যায়। হাতে বই! চাল আর ডাল চুলোয় বসিয়ে দেয় তারা। লতিফার এখনো নোংরা কয়েক কাপড় পড়ে আছে। ভাত রান্না হতেই মা’কে খাইয়ে কলপাড়ে গেলো তারা। কাপড় পরিষ্কার করতে করতেই রাত আটটা বেজে যায়। সব কাজ শেষেও তারার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এত কাজের ভিরে কবিতার একটি কলই ছিলো তার শান্তি! তাও নেতিয়ে গেছে! তারা হাড়িয়েছে তার প্রিয় বান্ধবীটাকে!
~
পাখির কিচিরমিচিরের আওয়াজে উঠে বসে কবিতা! সাদা পর্দা পাড়ি দিয়ে রোদ্দুর এসে গায়ে লাগে! এলার্ম বাজছে! কবিতা ঝটপট এলার্ম বন্ধ করে বিছানা ছাড়ে। আজ কলেজে যাবে কবিতা! অভ্র মর্নিং ওয়ার্ক করতে গেছে। বেশ দেড়ি করে আসে অভ্র! কবিতা ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসেই রেডি হয়ে ঘারে ব্যাগ ঝুলিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে কবিতা। আজ তার বড্ড টান কলেজের দিকে!
সিঁড়ি দিয়ে নেমেই অভ্রের বাবা আমির চৌধুরীকে দেখে ছুটে এসে বলে কবিতা,
-গুড মর্নিং আব্বু।
চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে যান আমির চৌধুরী। কবিতাকে হাসি উপহার দিয়ে বললেন,
-হুম, গুড মর্নিং। কিন্তু এখন কই যাও?
-কলেজে..
-ওহ্। খেয়ে যেয়ো!
-জ্বি আব্বু।
কবিতা ডায়নিং এ চলে যায়। খাবার সাজানো টেবিলে। কবিতা নিজে বেড়ে কেয়ে নেয়। আশেপাশে কিছু সার্ভেন্ট ছাড়া কেউ নেই। অভ্রেও মাও নেই!

কলেজ গেটে দাড়িয়ে কবিতা! তারা এখনো আসেনি? নাকি ভেতরে? সত্যি বলতে কবিতার কেমন লজ্জা লাগছে! এত বছরের বন্ধুত্বে আজ এমন সংকটে কবিতা! কিছুক্ষণ দাড়িয়ে চলে ক্লাসের দিকে রওনা হয় কবিতা। ক্লাসেও তারার দেখা নেই! ক্লাসে এককোনে মনমরা হয়ে বসে আছে কবিতা!যার কাল অব্ধি তারার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছিলো না আজ সে ছটফট করছে বসে। বরংবার তার পলক পড়ছে ক্লাসের প্রবেশপথে! তখনি স্যার চলে আসে। কবিতা মন কেমন ঘ্যাচ করে ওঠে! হেড এসেছে ক্লাসে! এখন তারা আসলেও পর্যাপ্ত কথা না শুনিয়ে ডুকতে দিবে না এই লোক।
ডিপার্টমেন্টের সিঁড়ি কাপিয়ে ছুটছে তারা। তারা আজও লেট! সকালে তার মায়ের অবস্থা অনেকটা খারাপ ছিলো। তাই তারার আসতে দেড়ি হলো। তারা ছুটে ক্লাসে চলে যায়। প্রবেশ পথে দাড়িয়ে স্যারকে ডাক দেয় তারা,
-মে আই কামিং স্যার?
প্রিন্সিপাল সূক্ষ্মচোখে তাকান তারার দিকে। কবিতাও তড়িৎ গতিতে তাকায় দরজায়। তারা হেডকে দেখে খানিক চমকায়। এখন তো আরাফ স্যারের ক্লাস! তাহলে হেড কেন এসেছে? তারার দিকে একপলক তাকিয়েই প্রিন্সিপাল সকল স্টুডেন্ট এর উদ্দেশ্য বলতে আরম্ভ করলেন,

সুখতারার খোজে পর্ব ৪

-ডিয়ার অল স্টুডেন্ট,
আগামি বছরের মতন এ বছর একই ভাবে নবীন বরন অনুষ্ঠান হবে! ইতিমধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আর তোমাদের পরিক্ষার ও ডেট এসেছে। খুব শিগগিরই তোমাদের কাছে পৌছাবে!…
বলতে বলতে ক্লাস শুরু করলেন হেড! তারা বাইরে নত দৃষ্টিতে তাকিয়ে! উনি এমনিই! কখনো না দেখলেও শুনেছে বহুবার। তারার আর সাহস হলোনা কথা বলতে। বেশ খানিক সময় পর ক্লাস থেকে বেড়িয়ে আসলেন হেড! তবে কাঙ্ক্ষিত কথাগুলো যে উনি বেরিয়েই বলবেন তা অজানা ছিলো তারার। তারাকে উনি কটাক্ষ স্বরে বলে উঠলেন,
-নাম কি?
তারা শুকনো ডোগ গিলে বলে,
-মিস.তারা!
-তুমি না ফার্স্ট ইয়ারের পরিক্ষার্থী? এত লেট কেন?
ভয়ে তারার কলিজা শুকনো কাঠের মতন! কথা বেরোতেই চাচ্ছে না। এদিকে কবিতারও বেশ খুঁতখুঁতুনি হচ্ছে! প্রিন্সিপাল দমক দিয়ে বললেন,
-কথা বলছো না যে?
তারা কেঁপে ওঠে। ওদিকে কবিতা বসে রয়েছে চুপচাপ! খুব অসস্তি লাগলেও সে প্রকাশ করতে নারাজ। স্যারের কথার উত্তরে বলে তারা,
-আমার মা খুব অসুস্থ ছিলেন স্যার।
স্যার কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। শান্ত স্বরে বলে চলে গেলেন।
-সেকেন্ড টাইম যেন লেট না দেখি।
তারা হাপ ছেড়ে বাঁচলো। ক্লাসে গিয়েই চোখে পড়লো কবিতাকে। কবিতা তাকালো না! তারা ছুটে গিয়ে বলার আগেই ক্লাসে আরাফ স্যারের আগমন! উনি নিজ স্থানে বসতে বলে ক্লস আরম্ভ করলেন। কবিতা একবার তাকালো শুধু! এতক্ষন কথা বলার জন্য কেমন লাগছিলো কবিতার, এখন অসস্তি হচ্ছে! দূরত্বটা বেড়ে গেছে বলে?

-এসব কি অভ্র? বিয়ের পর তোমার উচিত ছিলো না কবিতাকে শপিং এ নিয়ে যেতে? বিয়েতে পাওয়া কয়েকটা শাড়ি পড়ে থাকে মেয়েটা! আর আজ? সে কিনা বাপের বাড়ি থেকে আনা থ্রি-পিচ পড়ে কলেজে গেলো? তুমি কি চাইছো কি অভ্র!
ইরার কথায় অভ্র চোটে ওঠে! দিকহারার মতো লাগছে তাকে! চুলগুলো এলোমেলো! আজ অফিসে যায়নি অভ্র! ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলো। কিন্তু ইরার কথায় অভ্র বিরক্ত প্রকাশিত হয়। কিন্তু অভ্র ল্যাপটপেই মুখ গুজে বলে,
-তো? ও আসুক। যাবে!
ইরা রুমে প্রবেশ করলেন। ছেলেটা পাল্টে গেছে। চোখে চোখ রাখে কথা বলতে পারেনা অভ্র। ইরা অভ্রের সামনে দাড়িয়ে বলে,
-যাবে মানে? বল যাব নিয়ে! এতে খারাপ দেখায় না? নতুন বউ কিনা একা যাবে? অভ্র…
ইরাকে থামিয়ে অভ্র বলে ওঠে,
-মা প্লিজ! আমি পারবো না! তুমি নিয়ে গেলেও তো হয়।
-আমি? আমি নিয়ে যাব? তোর মাথাটা কি সত্যিই গেলো?
-তো নিয়ে গেলে কি হবে? বলে দিও আমি ব্যাস্ত!
-হুম! এতটাই ব্যাস্ত যে যেই কবিতা কলেজে গেলো অমনি তুই অফিসে গেলি না! পালাচ্ছিস কেন?
অবাক চাউনি নিয়ে তাকায় অভ্র! সত্যোটা তার মা কিভাবে জানলো? ইরা আবার বলেন,

-যাকে কষ্ট দিবি বলে বিয়ে করলি,সে কষ্ট তুই পাচ্ছিস না? মধ্যিখানে কবিতাকে আনলি! মেয়েটা তোকে ভালোবাসে অভ্র! তুই তোর কারনে কবিতাকে কষ্ট দিতে পারিস না!
ল্যাপটপ বিছানায় ফেলে উঠে দাড়ায় অভ্র! এতসব তার মা কিভাবে জানলো? কে বলেছে?

সুখতারার খোজে পর্ব ৬