সুখতারার খোজে পর্ব ৬

সুখতারার খোজে পর্ব ৬
লেখক:আর আহমেদ

প্রিয়,
ছলনাময়ী,,
তুমি যে আমার জিবনের সবচেয়ে জঘন্যতম অংশ তা তোমায় বুঝিয়েছি আমি! যতটা পারো ঘৃনা করো! মন থেকে বহিষ্কার করে দিও কেমন? আমার তোমায় সম্মোধন করে নিজেকে তোমাতে আসক্ত করতে চাইনা! শুধু একটি নামেই তুমি, সুখতারা! নামটি জানা কি অতিব জরুরি? হুম? তাই বলিনি তোমায়! ডাকিনি আজ অব্ধি! তুমি নিজেও জানোনা কতটা ঘৃন্য তুমি! নিজের স্বার্থে সব করতে পারো! আর এসব আমি টলারেট করতে পারিনা! প্রিয় বলে তুবুও সম্মোধন করেছি! ভুলার মতন নও তুমি! আমায় না ঠকালেও পারতে! শাস্তি হিসেবে তোমারি চোখের সামনে বিয়ে করেছি! কিন্তু তাকেও আমি মানতে পারছি না।
জানো, তাকে আমি পিরিয়ে দিয়েছি! সে কষ্ট পায় না? দায়ী তুমি! কাউকে জীবিত লাশ বানিয়ে দেওয়ার জন্য তোমার মত মেয়েই যথেষ্ট! সবিশেষ তোমায় মাফ করবো না! দগ্ধিত আমি হচ্ছি! তোমাকেও হতে হবে! চারপাশ থেকে বিষাক্ত কাটা পুরে খাক করে দেবো তোমায়। ‘প্রিয়’ র মর্জাদা রাখার মত মেয়ে তোমরা নও! অনেক প্যাচ জানোতো? তবুও কষ্ট হয়। বুক ফেটে আসে। দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন!
ইতি,
তোমার কষ্ট!

চিঠিটি বন্ধ করে অভ্র আগোছালো চুলগুলো উল্টে ধরে। তার বুকে আর এতটুকু অনুভূতি নেই তারার জন্য। অনুভব নয় আছে শুধু ক্রুদ্ধ রাগ! নিজে যেভাবে জ্বলছে তারাকেও সেভাবেই জ্বালানোর ইচ্ছে অভ্রের বুকে। ডায়েরিতে এই প্রথম অভ্র কিছু লিখছে তারাকে নিয়ে, অথচ এতে তার রাগ, সংমিশ্রণ হয়তো কষ্ট!
দরজায় দাড়িয়ে আছেন ইরা! ছেলের বেখেয়ালি আচরণ, ভাব বোধগম্য হচ্ছেনা ইরার কাছে! তার সম্মুখে অধপতন! নেতানো অভ্রের ভ্রোমগুলোয় চোখে পড়ছে। এর কারন কি? কি ভুল করেছিলো তারা? ইরার প্রশ্ন নিজের কাছেই থেকে যায়। জানা হলোনা এর উত্তর। সাহসটুকু হলোনা অভ্রকে বলার।
-এখানে কেন তুমি?
ইরার কারো কন্ঠে চমকে ওঠে। পুরুষালি স্বর আমিরের! সস্তির শ্বাস ছেড়ে পেছনে ফেরেন ইরা। যদি কবিতা হতো? হাপ ছেরে বাঁচলেন যেন ইরা। ধির স্বরে বললেন,
-কিছু না! তবে অভ্র আজকাল কেমন অদ্ভুত হয়ে থাকে তাইনা?
আমির হেঁসে বললেন,
-কই? আমিতো কখনো দেখিনা৷ বরং বিয়ের পর ওর কাজের উন্নতি হয়েছে। সবসময় কাজে মন রাখে ছেলেটা৷ আজ হয়তো শরীরটা একটু খারাপ। তাই অফিসে যায়নি।
-না..কিন্তু..
-তুমি এটা নিয়ে ঘরের দরজায় পড়ে থাকো। আমি আসছি!
বলে চলে গেলেন আমির। আমির কথাটা হেঁসে উড়িয়ে দিলেও ইরা পারলেন না। তার সবটা জানা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে! ইরা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্থান ত্যাগ করলেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ক্লাস শেষ! আরাফ স্যার বেড়িয়ে গেলেন। যেন কয়েকজন এটারই অপেক্ষা করছিলো। পুরো ক্লাসে একটু আধটু গুনগুনিয়ে আওয়াজ এসেছে। তারাকে গিরে ধরলো ছ’জন। তারা সবার দিকে তাকিয়ে হাসলো। কিন্তু বোকার মতো চেয়ে রইলো সবার দিকে। অপরপ্রান্তে কবিতা মেঝেতে তাকিয়ে রয়েছে। তার কাছেও দু’জন। একজন জিজ্ঞেস করলো তারাকে,
-সীট তো ফাঁকাই ছিলো। তাহলে তুই আলাদা কেন রে মানিক জোর?
তারা ভির ঠেলে কবিতার দিকে তাকাবার ব্যার্থ চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। একদম ঘিরে সকলে। কবিতাকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।কলেজ লাইফে দুজনকে কখনো আলাদা বসতে দেখেনি কেউ। তাই সবার জানার আগ্রহ। এদিকে তারাও চাইছে কথা বলতে। আরেকজন বলে উঠলো,
-আরে বল না!কবিতার বিয়ের পর কি তোদের দূরুত্ব বেড়ে গেছে নাকি?
এটপর ছেলেটা কবিতার দিকে ফিরে বললো,
-আরে কবিতা বল!
দুজনেই চুপচাপ! একে একে সকলেই তাদের জেরা করা শুরু করলো। ক্লাসে চিৎকারের আওয়াজ এখন স্যারের রুম থেকেও শোনা যাবে এমন অবস্থা! তারা সব্বাইকে থামিয়ে বলে ওঠে,
-ওয়েট!

সবাই চুপ! নিবিড় নীরবতা দেখে কবিতা মাথা উঁচু করে করে তাকালো তারার দিকে। তারা বললো,
-আগে নিজ নিজ স্থানে গমন করো তোমরা। আমি বলছি..
সকলেই করলো কাজটি। হুট করেই কবিতার ডান পার্শে ব্যাগ নিয়ে বসে পড়লো তারা। কেউ কেউ একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়া চাওই করলো বটে! তারপর বললো,
-এবার বল কি হয়েছে!
তারা কবিতাকে একবার আড়চোখে দেখেই বলতে লাগলো,
-তো প্রন্সিপাল স্যার যাওয়ার একটু পরই ইতো আরাফ স্যার আসলো। তাই যেদিকে চোখ গেছে বসে পড়েছি। এবার শান্তিতো?
তিথি বলে উঠলো,
-তো স্যার যাওয়ার সাথেসাথে তুই গেলি না কেন?
-তোরাই তো ঘিরে নিলি! আমি কি করবো বল?
কেউ আর কিছু বলে না। এদিকে কবিতা নিচ মুখ করে রয়েছে। তারা যেন বুঝতে পেরেছে কবিতার অসস্তি সমেত লজ্জা হচ্ছে! তারা বলে ওঠে,
-কবি? কি রে..
কবিতা নিষ্পাপ শিশুর মতো মুখ উঁচিয়ে তাকায়। বলে,
-কি রে..
তারা হাসবে না কেঁদে জড়িয়ে নেবে বুঝে উঠছে না। অবশেষে কথা হলো! কন্ঠে উৎফুল্লতা তারার,
-কি? কথা বলবি না? এমন হয়ে আছিস কেন তুই?
-ক্ কই না তো!
-ওহ্, তাহলে আমি কি দেখছি?
-আসলে..আসলে আমায় না খুব পড়তে হবে জানিস? তাই আরকি চুপই আছি। বইটা সামনে রেখে পড়লে খুশি হতাম।
নিজের লজ্জা ডাকতে কবিতা ঝটপট বই খুলে তাকায়। তারা সবার সামনে কবিতাকে জাপটে ধরে।

সুখতারার খোজে পর্ব ৫

কলেজ শেষ! বাড়ি থেকে গাড়ি আনায় কবিতা গাড়ি করে চলে গিয়েছে। তারাকে জিজ্ঞেস করছিলো পৌছে দিবে নাকি। তারা না করে দেয়! ভাব হয়েছে দুটোর। প্রায় পনেরো মিনিটে অভ্র মঞ্জিলে পা রাখে কবিতা। ড্রাইভার গাড়ি পার্ক করতেই নেমে বাড়িতে ডোকে কবিতা। ড্রইংরুমে ইরা বসে আছেন। কবিতা ভেতরে যতেই বলে ওঠে,
-আম্মু কি করো?
ইরা যেন চমকালেন কবিতার হুট করে বলা কথায়। অতঃপর হাসি মুখে বললেন,
-এইতো বসে আছি। ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়,তারপর তোকে অভ্র শপিং এ নিয়ে যাবে।
কবিতা আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না। ছুটে রুমে গেলো। কথাটায় সে প্রচন্ড খুশি। আয়নায় চুল ঠিক করছিলো অভ্র। পেছন থেকে কবিতা বলে ওঠে,
-আমায় সপিং এ নিয়ে যাবেন আপনি?
পেছনে একবার তাকিয়েই আবারো আয়নার দিকে তাকায় অভ্র। কবিতার মন যেন ভেঙে গুড়িয়ে গেলো। আশাহত কবিতা বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে। তখনি অভ্র বলে,
-হুম যাবো।
চোখ দুটি ডিমের মতো করে তাকায় কবিতা। ক্লান্তি যেন নিমিষেই উধাও হয়েছে। খুশিতে গদগদ কথাটায়। কবিতা দ্রুত ওয়াশরুমে ছোটে।

রিকশাওয়ালার ভারা মিটিয়ে বাড়ির পথে হাটছে তারা। মন একটু খুশি! অবশেষে তার বেস্টফ্রেন্ডকে সে আবারো ফিরে পেয়েছে৷ এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে চলে আসে তারা। কিন্তু বাড়ির আশেপাশে আজ ভির জমেছে! অনেক মেয়ে মহিলা মুখে হাত গুজে দাড়িয়ে আছেন। তারা ভ্রুযুগল নামিয়ে এগিয়ে আসে। ভির কেমন যানি অতিরিক্ত। তারাদের ছোট্ট উঠানটায় মানুষ কিলবিল করছে।

সুখতারার খোজে পর্ব ৭