সুখতারার খোজে পর্ব ৯

সুখতারার খোজে পর্ব ৯
লেখক:আর আহমেদ

পরিক্ষার হল থেকে বেড়োলো মাত্র সকলে। আজ কবিতা খুব খুশি। বুকে আনন্দের সানাই বাজছে যেন। মুখচোখ কুঁচকে বেড়োলো তারা। মাত্রাতিরিক্ত খারাপ হয়েছে আজ তার পরিক্ষা। কমন পড়েনি কিছুই। যা পেরেছে লিখেছে। সঠিক কিংবা ভুল বুঝে আসেনি। আজ তারার সাথে বসা সকলে ভালো রেজাল্টের আশায় ছিলো, কিন্তু হলোনা! যাকে ঘিরে আশা ছিলো তার’ই পরিক্ষা খারাপ হয়েছে। একাউন্টিং এর সব ইংরেজি করা খুব দরকার ছিলো?
তারা বেড়িয়ে আসতেই কবিতা ছুটে তারার কাছে যায়। ছিট দূরে হওয়ায় তাদের একটিবারও যোগাযোগ হয়নি। তাই কবিতা অপেক্ষা করছিলো তারার জন্য৷ সে মুখে চিলতে হাসি নিয়ে বললো,

-কেমন হলো রে পরিক্ষা?
বলেই কবিতা ভ্রুযুগল নাচালো কয়েকবার। তারা শুকনো মুখে মাঠ প্রাঙ্গনে চলে আসে। তারার এহনো কান্ডে কবিতা দ্বিধা নিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। কপালে সূক্ষ্ম কয়েকটা ভাজ পড়ে আপনাআপনি! কবিতা দ্রুত হেঁটে তারার কাছে গিয়ে বলে,
-তোর পরিক্ষা খারাপ হয়েছে?
-হুম।
নিমজ্জিত কন্ঠে বললো তারা। কবিতা যেন ক্ষুদ্র সময় আটকে গেলো। ক্লাসে টপ মেয়েটার মুখে এমন আশাহীন কথা মানায়? এটা সত্যিও? কবিতার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তারা পরিক্ষায় খারাপ করেছে। তারা ধিরবেগে হাঁটছে। কবিতা পা চালিয়ে তার কাছে গেলো আবারো। ফের জিজ্ঞেস করলো,
-তুই পড়িস নি? নাকি…
এতক্ষণ মুখ উচিয়ে তাকালো কবিতার দিকে তারা। মেয়েটা হয়তো তারার খারাপ পরিক্ষার ব্যাপারটা হজম করতে পারছে না। তা কবিতার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু কবিতার থামিয়ে যাওয়া কথাটুকু ধরেই বললো তারা,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-নাকি?
কবিতা গুরুগম্ভীর স্বরে বললো,
-নাকি তোর চাচী তোকে পড়ার সময়ই দেয়নি?
-তেমন কিছুই না!
দুজনে হাটতে লাগলো। কবিতা বললো,
-তাহলে তোর পরিক্ষা কেন খারাপ হতে যাবে?
-মন বসছিলো না পড়ায়। মন দিয়ে না পড়লে পরিক্ষা ভালো হয় কবি?
-তাহলে তুই বলছিস তোকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি?
-বাড়ি চল!
কিছুটা পথ হেঁটেই জিজ্ঞেসু হয়ে বলে ওঠে তারা,
-কবি তোর পরিক্ষা কেমন হলো? সেটাতো জানালি না!
এই প্রশ্নেরই যেন অপেক্ষায় ছিলো কবিতা। ঠোঁট টিপে হেঁসে বললো,
-খুব ভালো হয়েছে।
তারা এইবারে হাসলো চিলতে পরিমান। এই প্রথম পরিক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে কবিতা বললো যে তার পরিক্ষা ভালো হয়েছে। এমনিতে ভালো হলেও সে মুখ ফুটে বলেনা। সব সময় বলে এসেছে খারাপ হয়েছে।

-খুব ভালো?
-খুউউব!
-কত পড়েছিস কাল? পুরো রাত পড়লি নাকি?
-আরে নাহ্। আমি পুরো রাত পরার মেয়ে নাকি?
-এমনি এমনি নিশ্চই পরিক্ষা ভালো হয় নি?
-পড়িয়েছে! বুঝে পড়িয়েছে! তাই বুঝেছি, মনেও রেখেছি! আর তার ফলাফল ভালো কিছু!
-তা কে সে? যে তোকে এত ভালো করে বুঝালো?
-উনি! ইয়ে মানে..
-বুঝলাম! চল,যাওয়া যাক।
গেটের সামনে দুজনে। কবিতা গাড়িতে উঠে চলে গেলো। তারা হাটতে হাটতে হাইওয়ের সামনে চলে এলো। ভর দুপুরে রিকসা পাওয়া কঠিন এ রাস্তায়। কিছুটা দাড়িয়ে হাঁটতে লাগলো তারা। তখনি কোথ থেকে দ্রুতগামী বাইক এসে থামলো তারার নিকটে। তারা ভরকে পিছিয়ে গেলো। মেজাজ আগুন! ঠোঁট খিচে পিছন ফিরতেই রাগ যেন গায়েব হয়ে গেলো তারার। তূর বাঁকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে। পড়নে লাল জ্যাকেট। গরমকালেও ইহা যেন লোকটাকে সুন্দর করে তোলতে সাহায্য করে। তারা বললো,
-আর একটু হলেই তো আমায় পিশে দিচ্ছিলেন। দেখেশুনেও তো চালাতে পারেন নাকি?
-ভয় পেয়েছিস?

সুখতারার খোজে পর্ব ৮

তারা আটকানো গলায় বললো,’তা পাবো না? জান ই তো বেরিয়ে গেছিলো রীতিমতো।’
-তাই নাকি?
তারা আর কিছু বললো না। হাটতে লাগলো হাইওয়ের এককোনা ধরে। তূর বাইক টেনে ঠিক তারার সামনে এনে দাড় করালো। কন্ঠে রাগ তূরের,
-সাহস তো দেখি মাশাল্লাহ! কে তোকে এগোতে বলেছে শুনি?
-ক্ কেউ না!
-তাহলে এগোলি যে?
-আমি আমার পা দিয়ে হেঁটেছি।
-সেই পা’দুটোই যদি ভেঙে দেই তাহলে?
তারা মাজার স্বরে বললো,’ওমা! এমন কেন করবেন?’
-কারন, তোর শ্বাস নিতে হলেও আমার পার্মিশন লাগবে।
-কেন?
-আর একটা কথা বল তোর জিভ খুলে নেব। ওঠ বাইকে।
-না।
-কি বললি?
রক্তবর্ন চোখ নিয়ে বলে উঠলো তূর। তারা তড়িঘড়ি উঠে বসলো। তূর একটু হাসলো। এরপর খুব স্পিডে চালাতে লাগলো।

কফিসপে অভ্রকে আরেকটা মেয়ের সাথে দেখে থমকে গেলো কবিতা। কলিজা চিড়ে বলে উঠলো,
-চাচা গাড়ি থামান!
কথা শেষ হওয়ার আগেই জোড়ে ব্রেক কষলো ড্রাইভার। যেতে যেতে একবার বাইরে তাকিয়ে ছিলো কবিতা। তখনি চোখে পড়ে কফিসপের বা পাশটায়। তারা হন্তদন্ত হয়ে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। ড্রাইভারও বেরিয়ে এলো। পেছন থেকে ম্যাডাম ম্যাডাম ডাকলেও শুনলো না কবিতা। কবিতা সূক্ষ্মমাত্রাতে হেঁটে এগোলো সেদিকে। কৌতুহলের দামামা বাজছে বুকে কবিতার। অভ্র হাসছে! সৌজন্যে হাসছে লাল লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটাও। খুব সেজেগুজে বসে আছে চেয়ারে মেয়েটা। তারা আর একটু এগিয়ে যা শুনলো তাদের কথোপকথন থেকে, তার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিলো না তারা। তার পৃথিবীতে যে ধ্বংস শুরু হলো। ধস নামলো বুকে। কেউ চাকুর তীব্র আঘাত করলো বুকে। অভ্র বলছিল,
-আমি তারাকে ভালোবাসি। আগেও বেসেছি, এখনো বাসি! তুমি এসব বলছো কেন হঠাৎ?

সুখতারার খোজে পর্ব ১০