সুখতারার খোজে সিজন ২ পর্ব ৩

সুখতারার খোজে সিজন ২ পর্ব ৩
লেখক:আর আহমেদ

-ইম্পসিবল! আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি নই তারা। আর যদি তাকে এখানে আনতেই হতো তাহলে কি আমি তোমাকে তার দেখাশোনার জন্য বলতাম? সে অসুস্থ! আর আয়রা কেনই বা মানবে তাকে? এ সম্ভব নয়। আর তইমুর আমায় ছাড়বে না। ও যদি সবটা আয়রাকে বলে দেয়? ওর ক্ষোভ আছে আমার প্রতি। আমার ছেলের বিয়ে তোমার সাথে দেওয়ায় সে বলেছে,সবটা আয়রাকে বলে দেবে। এও বলেছে যেন তোমার আর সায়নের ডিভোর্স করিয়ে দেই। কিন্তু বাবা হয়ে আমি কিভাবে পারবো ছেলের ভালোবাসা কেড়ে নিতে? আমি চাইনা তোমার আর সায়নের ডিভোর্স হোক! চাইনা আমি।
মুখ বিদ্ধস্ত আরমানের। মুখজোড়ায় ভয়ের ছাপ।

-তাহলে কাপুরুষের মতো তইমুর সাহেবের অন্যায় দাবী মানবেন আপনি? পার্টনার না হতে চেয়েও তাকে এতগুলো টাকা এমনি এমনি দিয়ে দিবেন? কেন?
আরমান ঘুরে রেলিং এর কাছে গেলো। নিচে আয়রা খিলখিল করে হাসছে। তার হাসির ঝংকারে ড্রইংরুমটা কেমন জিবন্ত,প্রানবন্ত,সজীব! তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
-আয়রাকে আমি খুব ভালোবাসি। দেখো,সে কত খুশি। তার মুখে হাসি কতটা।যখন শুনবে আমার স্ত্রী আছে আরেকটা,তাও প্রথমপক্ষের। তখন কি আয়রা সেটা সহ্য করতে পারবে? পারবে না! সে কষ্ট পাবে।
তারার মাথার জট আরও বাড়ছে। সে রাতের ঘটনা সামনে ভাসছে তারার। কি করলে স্বাভাবিক হবে সবটা? তারার মাথা ফাঁকাফাঁকা লাগছে। ঝটলা পাকিয়ে আসছে সবকিছু!
~~~ফ্লাসব্যাক~~~

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আমি জানতাম তুমি আসবে তারা। তোমারি দরকার আমাদের।
তূরের মুখে তুমি করে শুনে আরেকদফা চমকে উঠলো তারা। নিশীথ রজনী! একটু পরপর দমকা হওয়ায় শরীর কেঁপে ওঠে। তারার সম্মুখে চারজন স্হির চোখ তার’ই দিকে তাকিয়ে। তারার লোমকূপ শিউরে ওঠে। রন্ধ্র রন্ধ্রে শিহরন বয়। তারাকে মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে হেটে আসে তূর। একটু বিরক্ত গলায় বলে,
-এখানেই দাড়িয়ে থাকবে? নাকি আজ সবটা জানবে?
‘সবটা জানবে’ কথাটা মস্তিষ্ক নিতে সময় নিলো। তারা অবাক চোখে তাকিয়ে রয় সবার দিকে। এগিয়ে আসে আরমান। মুখে অপরাধবোধ! এগিয়ে আসে তইমুর৷ মুখ থনথমে! হঠাৎ আরমান আকুতিভরা গলায় বলে ওঠে,
-আমার একটা কথা রাখবে তারা? শুধু একটা কথা! এর বদলে যা চাইবে তাই পাবে তুমি।
বিশিষ্ট বিজনেসম্যান আরমান চৌধুরীর চোখে মুখে আকুলতা দেখে অবাকের উচ্চসীমা অতিক্রম করলো তারা। তাও তারার মতো একটা সাধারন মেয়ের কাছে? কন্ঠনালীতে যেন মরীচা ধরেছে তারার। কথা বলতে বাধছে! সে যেন কোন অবাস্তব স্হানে স্তম্ভিত!
-তারা তুই ওহ্ সরি তুমি রাখবে না? কথার উত্তর দাও। কথা বলছো না কেন তুমি? তুমি চাইলে আমি কিছু করতে পারবো। বাবার বয়স হচ্ছে না তারা? আমি চাই ওনার পাশে থাকতে। ভালোবাসার মানুষটাকে নাহয় নাই’বা পেলাম। কিন্তু বাবা-মার মুখে হাসি থাকলে সে দুঃখ আর দুঃখ থাকবে না! তুই রাজি হ প্লিজ।
শেষের কথাটুকুতেও আকুতি তূরের। তারা অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,

-কি কাজ?
আরমান একপল সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-তোমায় একজনকে দেখাশোনা করতে হবে। সকাল,বিকেল আর রাতটুকু তাকে খাইয়ে আসতে হবে। চিন্তা করো না,তূর খাবার ওখানে দিয়ে আসবে। তুমি শুধু একটু দেখাশোনা, সেবাযত্ন করবে। অন্যকাউকে দেয়াই যেত….কিন্তু..
বলে থামলেন আরমান। ঘৃনাচোখে তইমুরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কিন্তু সবাই তো আর ভালো হয়না। কেউ কেউ প্রতারোক হয়।
-কে সে? কার দেখাশোনা করতে হবে?
-এতদিনে তুমি হয়তো জেনে গেছো সায়ন আমায় কেন অপছন্দ করে?
তারা মাথা নাড়লো। আরমানের প্রথম বিয়ের জন্যই সায়ন সহ্য করতে পারে না ওনাকে। আরমান সিরদাড়া নিচু করে বললো,
-সায়নের সৎ মা জিবিতো। তিন সপ্তাহ আগে তার এক্সিডেন্টে হয়েছে। বল,বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।
-আর তার’ই দেখাশোনা তোমায় করতে হবে তারা।
তইমুর বললেন। তারা মাথায় বাজ পড়লো! এখনো জীবিত উনি? তাহলে এই লুকোচুরি কেন? তারা শক্ত গলায় বললো,
-একজন অসুস্থ মানুষের সেবা করতে পারলে নিজের’ই ভালো লাগবে। কিন্তু একজনের মুখে হাসি রেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার’ই উপর আবার অবিচার করবো? আমি মায়ের সাথে এ অবিচার হতে দিবো না! কিছুতেই না।

সুখতারার খোজে সিজন ২ পর্ব ২

-তারা প্লিজ না করো না।
বলেই তইমুর একটা ফাইল বের করে। সেটি তারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-এই ফাইলটায় সাইন করো।
তারা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তইমুরের দিকে। বললো,
-কিসের ফাইল এটা?
-এগ্রিমেন্ট! দু বছরের এগ্রিমেন্ট। টানা দুই বছর তোমায় তার সেবা করতে হবে। আর এর বদলে যা চাও তাই পাবে।
-এতে আপনার লাভ কি?
তারার চতুর প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলেন তইমুর। আরমান বললেন,
-আমি বলছি! ওর টাকার অভাব নেই! পূর্বপুরুষ টাকার সাম্রাজ্য গড়ে দিয়ে গেছে ওকে। কিন্তু তবুও তার ব্যাবসায় লস্। বারবার ব্যাবসায় লস্ করে সব টাকা শেষের পথে। অর্নবের চাকরির জোড়েই সংসার চলছে। আমায় ও বলেছিলো যেন এবার ইনভেস্ট করি। পরপর দু বার ইনভেস্ট করে লস খেয়েছি আমি! রাজি হইনি! আমি খুব আপন মনে করে তোমারি মতো ওকে সবটা বলে দেই। কিন্তু জানতাম না ও আমার সাথে চিট করবে! ও ব্লেকমেল করছে সবাইকে সবটা বলে দেবে। আমি নিরুপায়! আয়রাকে খুব ভালোবাসি আমি তারা।
-এটুকুর জন্য আপনি এত বড় সেকরিফাইস কেন করবেন?
-যদি এবারে লাভ হয় ওর বিসনেসে,সেটার অর্ধেক আমি পাবো।
-তাই বলে…
-আমরা আসছি। সবটা ভেবে উত্তর দিও।
বলে চলে যায় সবাই। স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রয় তারা। হঠাৎ পেছোন থেকে কেউ আঘাত করতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।

-যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ আসতো সেখানে? আর যদি মা যেত? তখন কি হতো?
আরমান আবারো নিচে তাকালেন। আয়রা রান্নাঘরে গেলো। সে বললো,
-দরজায় আওয়াজ পেয়েছিলে? আমিই তূরকে বলেছিলাম কাল রিসিপশন পার্টির আগেই যেন ও তোমায় এমন কিছু একটা বলে মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে।ও ঠিক তাই করলো। রাতে যে তোমার ঘুম হবে না তার নিশ্চয়তা ওই দিয়েছে আমায়। দরজার হালকা আওয়াজ ওই করেছে।
-আর আমি যদি বলি মা সবটা মানবে? এ বাড়িতেই থাকবেন ভদ্রমহিলা? তাহলে? তাহলে কি আর কোন সমস্যা থাকে?
আরমান চমকে উঠলেন। পিছু ফিরে বললেন,
-কি বলছো এসব তুমি?
-আপনার মত চাইছি। রাজি কি’না বলুন।
ঠোঁট খিঁচে মাথা নাড়িয়ে বোঝালেন আরমান। সে রাজি! তারা স্মিত হেসে বলে,
-খেতে আসুন। অনেক রাত হলো।
তারা চলে গেলো নিচে। আরমান বুকে হাত গুঁজে সস্তির শ্বাস ফেললেন। আয়রা পারবে তো আরমানকে ক্ষমা করবে?

সুখতারার খোজে সিজন ২ শেষ পর্ব