সুখতারার খোজে সিজন ২ শেষ পর্ব 

সুখতারার খোজে সিজন ২ শেষ পর্ব 
লেখক:আর আহমেদ

খাওয়ার টেবিলে বসেছে সবাই। জবা সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে। টেবিলের এ মাথায় সায়ন বসে। তার ওপর প্রান্তে বসে আছে তারা। সায়ন উশখুশ করছে। সে যেন বারবার চাইছে তারা তাকাক তার দিকে। কিন্তু তারা খাওয়ায় মগ্ন। তাকালো না একবারও। আয়রা লক্ষ করতেই কড়া গলায় বললেন,
-সায়ন তুমি তো নিজেও ঠিক মতো খাচ্ছো না অন্যকেও খেতে দিচ্ছো না। কিছু লাগবে?
আয়রার কথায় সবাই তাকালো সায়নের দিকে।সায়ন মাথা চুলকে বললো,
-না। কিছু না।
আবারো সবাই খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো। খানিক পর তারা সায়নের দিকে তাকাতেই সায়ন মুচকি হাসলো। সায়নের হঠাৎ হাসি দেখে তারা চোখ বড়বড় করে তাকালো সেদিকে। মুখ উঁচিয়ে বোঝালো,
-কি হয়েছে?

সায়ন দু হাত উপরে করে দেখালো। তারা হাত দেখে কিছু বুঝতে পারলো না। তারা না বুঝতে পারায় সায়ন বিরক্তি নিয়ে হাত নামালো। তারা তাকিয়েই। তার একটু পর সায়ন মুখ দিয়ে দশ এর মতো কিছু বোঝালো। এরপর ঘরির দিকে দেখালো। তারা তাও বুঝলো না। লোকমা মুখে দেওয়ার আগেই খক করে কেশে উঠলো তারা। তারা বুঝেছে! মনে পড়লো সায়নের বেলকনিতে বলা কথাগুলো! ‘ রাত দশটার আগ পর্যন্ত সায়ন গুড বয়,তারপর….’
তারপর কি? কি বোঝাতে চাইলো সায়ন? তারা মুখে রাগি ফেস নিয়ে তাকালো সায়নের দিকে। সায়ন আবারো মুচকি হাসলো। সবটা বুঝে উঠতেই কাশি হতে লাগলো তারার। আয়রা ব্যাস্ত স্বরে বললেন,
-পানি নাও।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারা সামনের গ্লাস ভর্তি পানিটুকু টগটগ করে খেয়ে নিলো। কি সাংঘাতিক! সায়ন হাসছেই! আয়রা তারাকে বললো,
-এখন ভালো লাগছে তারা?
তারা ক্ষীণস্বরে বললো,জ্বি।
সকলে আবারো খাওয়ায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। খাওয়া ঠিকমতো হয়ে গেলো সবার। আরমান সাহেব উঠে গেলেন। আয়রার খাওয়া হতেই জবা সহ তিনি প্লেট গুছাতে লাগলেন। সায়নও আরেক দফা হেঁসে চলে গেলো। ছেলেটার কি লজ্জা নেই? প্রশ্ন জাগলো তারার মনে। সায়ন যেতেই তারা আয়রাকে বললো,
-মা,আপনার সাথে কিছু কথা আছে। উপরে আসবেন একটু?
-কেন? এখানে বললে কি হবে?
-বাবারও জানা উচিত। তাই…
-আচ্ছা দাড়াও।

কাজ গুছিয়ে আয়রা আর তারা একসাথে উপরে চলে গেলো। সায়ন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে! তারা আসলো না!
আরমানের ঘরে ডুকতেই দুজনকে বিছানায় বসালো তারা। একে একে বিস্তারিতো বসতে লাগলো সবকিছু।
সবটা শুনে স্তব্ধ আয়রা। তার আঁখি জোড়া চিকচিক করছে। বিয়ের এত বছর পর কোন নারী যদি জানতে পারে তার স্বামীর আরেক স্ত্রী আছে তা কেউ কি মানতে পারবে? গাল ভিজে উঠলো আয়রার। অপরাধী স্বরে ডাকলো আরমান,
-আ…আয়রা!
জলভরা চোখে তাকালেন উনি। শরীর যেন শক্তি আর নেই! অসর হয়ে আসছে হাত পা। তিনি যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বললেন,
-এসব সত্যি?
মাথা নাড়লেন আরমান। বেডশিড খিচে নিলো আয়রা। মুখ ভিজে গেছে পানিতে। তারা পাশে বসলো আয়রার। আয়রা হঠাৎ জড়িয়ে নিলো তারাকে। হু হু করে কেঁদে উঠলো।
খানিক কাটলো! আয়রা তারাকে ছেড়ে দু হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছলো। এরপর তাকালো আরমানের দিকে। মেঝের দিকে তাকিয়ে আরমান। আয়রা শক্ত গলায় বললো,

-কোথায় উনি? কেন লুকিয়ে রেখেছো তাকে?
-হসপিটালে।
-আর এতদিন?এতদিন কই ছিলেন উনি?
-এতদিন নয়, একমাস যাবৎ! আমাদের কুটির হস্ত বাড়িটায়। তুমি বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই জানতাম না ও বেঁচে আছে। আমাদের বিয়ের দু মাসের মাথায় ও বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ও আমায় ভালোবাসেনি! আমার মা একদম ভেঙে পড়ে। আমি চাইনি আর বিয়ে করতে! মেয়েদের থেকে সকল বিশ্বাস হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। তিশা তইমুরের এক আত্মীয়ের বোন হয়। ওর মা’ই আমার মাকে ওর বিয়ের বলেছিলো। আর সেদিন হুট করেই আমায় তইমুর বললো ও ফিরে এসেছে। তখন আমার ঠিক কেমন অনুভব হচ্ছিলো বোঝাতে পারবো না। আমি বুঝতেই পারছিলাম না কেন ও ফিরে এলো? আমাদের ডিভোর্স ও হয়নি! ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। তইমুর ওদের বাড়িতে থাকতে দিলো ওকে। ও বললো আমার সাথে থাকতে চায়। ফিরে আসতে চায়। আমি মোটেই রাজি নই! মোটেই নয়! একমাস ও আমাকে মানানোর জন্য খুব চেষ্টা করলো। সে আসতেও চেয়েছিলো এখানে! বাঁচালো তইমুর তখন। ওর একটি কাজে সহায়তা করেছিলাম,তাই ও অনেক বলেকয়ে আটকালো তিশাকে।

-ও এলো কেন? বলেনি?
-ওর নাকি কঠিন রোগ আছে। অক্ষমতাও আছে তার। সে কখনোই মা হতে পারবে না। তাই তার ডিভোর্স হয়েছে। সে কোন এক রেস্তরায় শেফ হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু রোগ এতটাই বেড়ে গেলো সে ছুটে এসেছে এখানে। আর কয়েকদিন হলো সে একদম সহ্যাসাহী। একটু এক্সিডেন্টেই তার হাল নাজেহাল।
চোখে পানি চিকচিক করে ওঠে আরমানের। আয়রার কাঁধে হাত রাখে তারা। বলে,
-কয়েকদিন নয় মা,তিন সপ্তাহ আগে তার এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমরা কি পারি না, তার পাশে থাকতে? মা আমি ওনার খেয়াল রাখতে চাই।
চোখ বুজলেন আয়রা। হতাশা নিয়ে তাকায় আরমান। এমন কোনদিন হবে সে ভাবতেই পারেনি। তারা বললো,
-মা…
আয়রা চুপ! কি করা উচিৎ সে বুঝছে না। তারা আবারো বললো,
-জোর করবো না আপনাকে। আপনি…
তারাকে থামিয়ে মাথা নাড়লেন আয়রা। অতঃপর বললো,
-ঠিক আছে।
আরমান বাধভাঙ্গা নদীর মতো ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। আয়রার হাত ধরে বলে,
-আমায় ক্ষমা করে দিও আয়রা। আমায় মাফ করে দিও।
তারা উঠে আসে। চলে যায় নিজ রুমে। রুমে গিয়েই সে চমকে ওঠে। সায়নের হাতে একগাদা গোলাপ। তারা ফিক করে হাসে। বলে,

-এসব কি?
-পারলে সব মিটমাট করতে?
তারা চোখদুটো ডিমের আকার ধারন করে। বলে,
-তুমি সবটা জানতে?
-হুম। এটাও জানি,তূর কি করে!
-রাইট পয়েন্ট। ও বলেছিলো চাচা-চাচীর পাশে থাকতে চায়। আমি ঠিক বুঝিনি!
-আরমান চৌধুরী ওকে কাজে লাগিয়েছে তারা। আমাদের বাঙলোতে ওকে খাবার দিয়ে আসার কাজ। তুমি চিন্তা করো না,ওনাকে বলবো যেন তূরকে অফিসে রাখে। ছেলেটা কাজ ভালো পারে। আমায় একটা কথা বলবে? আগে বলো রাগ করবে না!
-কি?
সায়ন মুখ কাচুমাচু করে বললো,
-সে রাতে লাস্ট মারটা আমি মেরেছিলাম।
-কিহ্??[রাগান্বিত কন্ঠে]
সায়ন কাঁদোকাদোঁ গলায় বললো,
-হ্যা,সম্মুখে তইমুর ভালোই বিহেভ করছিলো। কিন্তু ও চায়নি যাতে তুমি সব দায়ভার নাও। চায়নি ওই মহিলা সুস্থ হোক। শুধু আরমান চৌধুরীর সামনে নাটক করে গেছে। কারন মহিলা সুস্থ হলেই তো সে নিজে এখানে চলে আসতো। তাহলে কি ব্লাকমেল করা হতো? তাই সবাই গেলেও ও দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলো। আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাবলাম তোমায় আটকাবো,আর এটা মার জানারও এই সুযোগ! আর কাল এটা না হলে কি এতকিছু হতো? মা জানতো সবকিছু? তোমায় বাইরে পাওয়া গেলে এখান থেকেই শুরু হতো সব জানাজানি। আর হলোও তাই!

-তাই আপনি মেরে দিলেন?
-হ্যা?
-আপনাকে….
বলেই বালিশ হাতে তাড়া করলো তারা। সায়ন ছুটে বিছানায় উঠে। তারা বলে,
-নামুন খালি…
-স্টার?
-একদম ন্যাকা গান গাইবেন না। একটা কথা বলবো?
-কি?
-আপনি নামুন”
-এ্যাহ্?
-জ্বি হ্যা।
সায়ন নেমে এলো। তারা বালিশ দিয়ে উরুম ধুরুম মার শুরু করলো। সায়ন হঠাৎ তারাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। তারার মাথা নিজের বুকে নিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে।
-তুমিই আমার সুখ! আমার আনন্দ।
সময় বহমান! কেটে গেছে তিন সপ্তাহ। তারার দিনগুলি কেমন দেখতে দেখতেই কাটছে। বাড়ছে চাপও। সায়ন তার চাকরি ফিরে পায়,কিন্তু সে সরাসরি না বলে নিজের বাবার ব্যাবসায় যোগ দেয়। রেজাল্ট নিয়ে সে কি আক্ষেপ তারার! খুব খারাপ না হলেও ভালোও হয়নি কিন্তু। তারার প্রথম কয়েকটি পরিক্ষা, আর কবিতার শেষের কয়েকটি। দুজনের’ই অবস্থা এক! আক্ষেপের শেষ নেই তারার।
ইশা একটু সুস্থ! তার এক’পা প্যারালাইস্ট হয়ে গেছে। একেবারে বলতে তার একপা অচল হওয়া শুরু করেছে। একজন রাখা হয়েছে তার জন্য। কিন্তু তবুও তারা,কিংবা আয়রা তার খেয়াল রাখছে। কিছুদিন পর তার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি তারার। সায়নও এখন খুব বিজি। তাদের দেখা রাত সকাল ছাড়া হয় না।

কবিতা আর অর্নবের মিল ভালোই হয়েছে। সেদিন কফিসপে দেখা হওয়ার পর থেকে অর্নব যেন জাদু করেছিলো কবিতার উপর। সবসময় তার কথা মাথায় ঘুরপাক খায় ওর। দিন যত বাড়ছিলো তাদের দেখা হওয়া, কথা হওয়া বাড়ছিলো দ্বীগুন গতিতে। কবিতা এখন অর্নবের সাথে ফোনে কথা বলা আরম্ভ করেছে। তিন ঘন্টা কথা বললেও তার কোনপ্রকার বিরক্তি আসে না। ভালো লাগে বরং। অর্নবের কথা ভাবতেও যেন আনন্দ পায় কবিতা। ব্যাতিক্রম নয় অর্নবও! সারাক্ষন মেসেজিং চলছেই! ব্যাপারটা লক্ষ করছে কবিতার মা। মেয়েটা এখন আর আগের মতো মনমরা থাকে না। ফোন হাতে থাকলেই মুচকি মুচকি হাসে৷ অর্নব এ বাড়িতে না আসলেও কবিতা অর্নবকে বন্ধু আখ্যা দিয়ে বলেছে তার ব্যাপারে। গভির রাতে কবিতার মা টের পায় কবিতা কারো সাথে কথা বলে। প্রান খুলে কথা বলে। রেজাল্টের দিন কবিতাকে ড্রপ করতে এসেছিলো অর্নব বাড়ির সামনে। কবিতা বারবার বলেছিলো ভিতরে আসতে। কিন্তু লজ্জাশীল অর্নব আসেনি। সেদিন কবিতার মা অর্নবকে দেখেছে। ছেলেটাকে মন্দ লাগেনি!

ড্রইংরুমে কবিতা টিভি অন করে বসেছে। অথচ তার একহাতে ফোন আর তার পাশে টিভির রিমোট। টিভির দিকে চোখ না থাকলেও ফোন থেকে চোখ নড়ছে না! কারো মেসেজ আসছে আর সে হাসছে এবং রিপ্লে দিচ্ছে। হঠাৎ তার পাশে বসে কেউ। অস্তিত্ব টের পেতেই ফোনের আলো অফ করে তাকায় কবিতা। তার মা বসেছে। কবিতা হেঁসে বললো,
-এ সময়ে তুমি এখানে?কিছু বলবে?
-কে ছেলেটা কবিতা?
কবিতা থমথমে মুখ করে বলে ওঠে,
-কোন ছেলের কথা বলছো তুমি?
কবিতার মা হাসলো। তারপর বললো, এইযে তুই যার সাথে সারাক্ষণ কথা বলিস?
কবিতা মুহুর্তে তোতলানো শুরু করলো। তার মস্তিষ্ক বিপদের সংকেত বুঝলো না? সে আমতাআমতা করে বলে,
-ক..কই কে আবার?
-সত্যিই কেউ নেই তোর? তাহলে এইযে রাতে কত কত কথা বলিস, তারপর এইযে মেসেজ তোকে দিচ্ছিলো। এগুলো তো কেউ না তাইনা? অদ্ভুত ভাবে এগুলো তোর ফোনে আসছিলো না?
কবিতা তপ্তশ্বাস ছাড়লো। বিরক্তের ভান ধরলো,

-মা তুমিও না!
-ছেলেটাকে পছন্দ তোর না রে?
এবারে কবিতা সোফা থেকেই উঠে পড়লো। তার মায়ের উল্টোদিক ফিরে লজুক কন্ঠে বলে,
-তুমি যা ভাবছো ভুল ভাবছো।
-বললে আমরা সন্মন্ধ পাঠাবো। ছেলেটা ভালোই তাইনা?
-ভালো! কিন্তু তুমি আমায় এত তারাতাড়ি বিয়ে দিবে কেন? এখন আমি ডিসিশন নিয়েছি,আগে ফাইনাল দিবো তারপরে। আর ওর খেয়েদেয়ে কাজ নাই ও আমার জন্য বসে থাকবে?
আগুনে অজান্তেই ঘি ডাললো কবিতা। উনি যেন এটার’ই অপেক্ষায় ছিলেন,
-তাহলে তোর পছন্দ তাইতো?
কবিতা স্নিগ্ধ ফরসা গাল লাল হয়ে ওঠে। ‘ধ্যাত’ বলে ছুটে চলে যায় রুমে। উপরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
‘ইশশ্! মা এতোটা লজ্জা না দিলেও পারতো। অর্নব আদেও কি তার ব্যাপারে এসব ভাবে? বলে কি’না সম্নন্ধ পাঠাবে? এই কবিতাকে শেষে ছ্যাছড়া বলবে! বলবে একটু কথা বলি কি বলি না আবার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে!’
হঠাৎ ফোন কলে ধ্যানের সমাপ্তি ঘটে কবিতার। ফোনে ‘অর্নব’ নামটি জ্বলজ্বল করছে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে ফোন রিসিভ করলো কবিতা। কবিতা বলার আগেই অর্নব বলে ওঠে,

-আর মেসেজ দিলে না?
-আম্মু ডাকছিলো।
নিরবতা! কেউ কিছু বলছে না। অথচ তাদের মন কিছু বলার জন্য ছটফট করছে। উশখুশ করছে নিজের মনের সবটা বলার। নীরবতা কাটিয়ে অর্নবই বলে,
-একটা কথা বলি?
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কবিতাও বলে ফেললো,
-আমি একটা কথা বলি?
-ওকে,ফাইন! আগে তুমি বলো।
-না না,আপনি তো আগে বলতে চাইছিলেন। বলুন,,,
কবিতার কথার পরপরই ফোনের ওপাড় থেকে শব্দ করে ওঠে কিছুর। যেন কেউ ফোনটা কেড়ে নিলো এমন। এবারো কিছু বলার আগেই ওপাড় থেকে কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে কেউ,
-এই মে তুমি কে বলোতো? দিনরাত খেয়ে না খেয়ে ও তোমার সাথে কথা বলে কেন হ্যা? অফিসের কাজেও তেমন মন নেই অর্নের। তুমিকি ওর ক্যারিয়ার নষ্ট করেই শান্ত হবে?
এপাড়ে থমকে গেলো কবিতা। মহিলার আওয়াজ স্পষ্ট! কবিতার চোখে অজান্তেই নোনাজল বাসা বাধে। কথাগুলো হৃদয়ে গভির হানা দিলো যেন। কবিতা চুপ দেখে মহিলাটি ফের বলতে আরম্ভ করে,
-এত কথা, এত মেসেজ! কে হয় অর্নব তোমার?
কবিতার গলায় দলা পাকিয়ে আসছে। বুক ফেটে আসছে! অস্ফুটস্বরে বলে,

-জাস্ট…
-জাস্ট? জাস্ট ফ্রেন্ড? এটাকে জাস্ট ফ্রেন্ড বলে? জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে নিশ্চই কেউ দিন রাত পরে পরে কথা বলে না? ভালোবাসো অর্নবকে?
শেষের প্রশ্নে অবাক করে তুললো কবিতাকে। শুকনো ঠোগ গিললো কবিতা। পাশে অর্নব চুপ করে আছে। অর্নবের শ্বাস প্রখড়! কবিতা নিশ্চিত, পাশে বসে অর্নব! আরও দ্বিধাদন্ড ঘিরলো তাকে। কিয়ৎক্ষন অপেক্ষা করেই আবারো মহিলাটি বলে ওঠে,
-কাঁদছো? বলি এতোই যখন ভালোবাসো তখন বিয়ে করে নিলেই তো পারো। তোমার জন্য আমার ছেলেটা কেমন আগোছালো হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন। আর কতো গুছাবো আমি? বিয়ে করে এসে সামলাও তো তোমার অর্নবকে।
আবারো চোখ পানিতে ভরে ওঠো কবিতার। এ পানি আনন্দের পানি! কবিতার ঠোঁট প্রসার হয়। অনিতা (অর্নবের মা) আবারো বললো,
-অর্নব সব বলেছে। অভ্রের ব্যাপারেও বলেছে ও। আমার ছেলের বৌ হতে সমস্যা নেই তো তোমার?
এবার একরাশ লজ্জা ছেয়ে গেলো কবিতার মুখে। অর্নব সব বলেছে? কবিতা হাসলো। সে দৌড়ে গিয়ে মায়ের হাতে ফোন দিয়ে ইসারায় কথা বলতে বলে দৌড়ে পালালো রুমে। আকস্মিক ঘটনায় কিছু বঝলেন না তিনি। কিন্তু ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কারো কথার আওয়াজে তিনি ফোন কানে দেয়।
-বউমা? বোবা হয়ে গেলে নাকি?
কবিতার মা ক্ষিন স্বরে বললেন,
-জ্বি কে…??
অনিতা হো হো করে হাসে। বলে,
-আপনি কবিতার মা? মেয়ে এতো লাজুক আপনার? তা বেয়ান হবেন আমার?
কবিতার মা না বুঝেই বলে,
-ম্ মানে?

সুখতারার খোজে সিজন ২ পর্ব ৩

সাজানো হচ্ছে কবিতাদের তিন তলা বাড়িটা। বেশ জাকজমক আয়োজন করেছে। বাড়ির সামনে বেশ লম্বা রাস্তা পুরোটা লাল নীল মরিচ বাতিতে সাজানো। সেদিনই অর্নবরা কবিতাকে দেখতে চলে আসে। তাদের পছন্দ হয় কবিতাকে। আজ কবিতা,অর্নবের এনগেজমেন্ট! পুরো বাড়ি গাধা, গোলাপে সজ্জিত একদম। তারা সেজেছে খুব! সাদার উপরে পাথর পড়া একটা গরজিয়াস শাড়ি পড়েছে তারা। এখন কবিতাকে সাজাতে ব্যাস্ত সে। এরিমধ্য অর্নবরা চলে আসে। কবিতাকে নীল লেহেঙ্গা পড়ানো হলো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। তারা কবিতার মুখশ্রীতে আলতো ছুঁয়ে বলে,
-খুব সুন্দর লাগছে আমার কবিকে!
কবিতা লজ্জা পেলো। তারা হেসে কবিতাকে নিয়ে গেলো নিচে। সন্ধ্যার আগ মুহুর্ত! হালকা অন্ধকারে মরিচবাতির আলোয় পুরো জায়গাটা সুন্দর লাগছে। কবিতাকে অর্নবের সাথে দাড় করিয়ে একটু দূরে দাড়ায় তারা। বারবার হাতের ঘরি দেখছে সে। এতক্ষণে সায়নের চলে আসার কথা। তাহলে সে এখনো নেই কেন? লোকটা সুধরাবে না! পার্টি জমে উঠলো। সকল আত্মীয় চলে এসেছে। হঠাৎ কেউ বলে ওঠে,

-আমার সুখতারা কই? দেখছি’না তো!
উপস্থিত সকলে তাকালো সেদিকে। হাতে ওয়াচ ঠিক করতে করতে বললো সায়ন। তারা রিয়েক্ট করতে চেয়েছিলো কিন্তু ‘সুখতারা’ শুনে থেমে গেলো সে। তন্দা মেরে দাড়িয়ে রইলো। সায়ন তার নিকট এলো। বললো,
-তুমি এখানে? পুরো বাড়ি খুজে এলাম। অবশেষে সুখতারার দেখা!
কবিতা ও হেঁসে ফেলে। একটু পরই তার এনগেজমেন্ট হয়ে যায়।

( লেখাঃ আর আহমেদ ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন