সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪৩
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
সকাল থেকে আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ লেজ তুলে পালিয়েছে এখন। রাতের অন্ধকারকে সাক্ষী রেখে গায়ে ওরাও কালো রং মেখেছে। অদূর হতে তেড়ে আসছে ছোটো ছোটো বাঁজ পড়ার শব্দ। থমকে থমকে পৃথিবীর বক্ষপট আলোড়নে কাঁপিয়ে তুলছে সে৷ এক্ষুনি মাটি ভেজাতে ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নামবে হয়ত! আহা! প্রবল বাতাসে দুলতে থাকা সবুজ পাতার বুকেও কত আয়োজন পৃথিবীর। অথচ
এতো আয়োজন বৃথা রইল, স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা পুষ্পিতার কাছে।
হিমালয় থেকে ছুটে আসা হাওয়ার মতো তুষার তার শরীর। মুখে কথা নেই। চোখে নড়ন নেই। মৃত মানুষের মুখখানাও হয়ত এতোটা দৃষ্টিবিভ্রম লাগে না! যতটা রক্তশূন্য চেহারায় একযোগে সম্মুখের পুরুষ পানে চেয়ে আছে তরুণী।
আর সেই চাউনীই যেন কাল হলো তীব্রর। তার বক্ষ কোষ কাঁপছে৷ গলবিলের পথটা কাঠ কাঠ মরুর মতোন শুষ্ক।
শনশন বাতাসের মাঝেও ঘেমে একাকার ছেলেটা। বুকের লোমে লেপটে থাকা শার্ট দেখে মনে হচ্ছে ,ঘন বর্ষায় ভিজে এসেছে কেবল। মাস্কের পরপর মাথা থেকে ক্যাপটাও খুলে ফেলল তীব্র। এবড়োখেবড়ো চুল গুলো বড়ো অবহেলায় পড়ে৷ ফরসা কপালের অর্ধেক জুড়ে রাজত্ব ওদের। তিমিরে তলানো রাতের দাপট কমাতে যে হলদে লাইট জ্বলছে? তাতে পুষ্পিতার নিষ্প্রভ মুখবিবর বড্ড যত্নে দেখল সে। পুরন্ত ঠোঁট দুটো নেড়ে নিস্তব্ধের ন্যায় শুধাল মেয়েটা,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আ..আপপনিই ববিট…”
এর বেশি শব্দ পুষ্পিতার গলা ছিঁড়ে বের হয়নি। কিন্তু তীব্র বুঝে নিলো ওর প্রশ্ন,ওর কথা। ঢোক গিলে বলল,
“ হ্যাঁ। আমিই বিট্টু,আমিই তীব্র!”
পুষ্পিতা জবাব দিলো না। নিভন্ত মৃগনয়নে কেবল ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি।
তীব্র এক পা এগিয়ে, আরেকটু কাছে এসে দাঁড়াল। মাঝে কয়েক ফুটের দুরুত্ব আর। এইটুকু মেটানোর সাহস আজ ওর হলো না। দোষীর মতো মাথা নামিয়ে বলল,
“ আমি জানি, আমাকে বলার মতো তোমার কাছে কোনও কথা নেই ভীতু মেয়ে। তোমার সবথেকে অপছন্দের,ঘৃনার যে মানুষটা? যার একটা ভুলে তোমার পুরো জীবন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল? সেই বিট্টু মাস্তান আমিই। তোমার তীব্র স্যার ভীতু মেয়ে!”
পুষ্পিতা এবারেও নিশ্চুপ। ক্ষুদ্র শরীর তার মিনারের মতোন সটান দাঁড়িয়ে শুধু। তীব্র ব্যাকুল চোখে চাইল এবার৷ তেমনই আকুল গলায় বলল,
“ এই সত্যিটা আমি তোমাকে কোনওদিন জানাতে চাইনি। বিট্টু মাস্তানকে মেরে ফেলে, সারাজীবন তোমার কাছে তীব্র হয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম,ভেবেছিলাম তোমাকে কোনও দিন জানতেই দেব না। একদিন তোমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া,গোটা বাড়ির মানুষের সামনে হেনস্তা করার মানুষটা যে আমি।
হোলো না! ভালোবাসার কাছে আমার সব চাওয়া পাওয়া তুচ্ছ হয়ে দাঁড়াল। আজ সকালে যখন তুমি ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে? মাথা রাখলে এখানটায়?
( বুকে হাত দিয়ে দেখাল তীব্র)হুট করে কেমন জ্বালাপোড়া শুরু হলো জানো! তোমার চোখের জলে আমার বুক ভিজলেও,ওই জ্বালা নিভছিল না। বরং বাড়ছিল আরও। হঠাৎ করেই মনে হলো, তোমার মতো মেয়েকে ভালোবেসে বুকে আগলে রাখা যায় ভীতু মেয়ে! কিন্তু মিথ্যে বলে প্রতারণা করা যায় না। তাই আমি আর চুপ থাকতে পারিনি। নিজের স্বরূপটা নিয়ে তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।”
আচমকা ধপ করে হাঁটুভেঙে বসে পড়ল তীব্র। হাড় দুটো আরামসে লুফে নিলো নিষ্ঠুর পিচের পথ।
মাথা তুলল না। চোখে চোখ মেলাল না। শুধু দুহাতের মাঝে একটা ছুরি নিয়ে পুষ্পিতার সামনে বাড়িয়ে ধরল।
দশ এলাকায় দাপট খাটানো মাস্তান,এক সামান্য তরুনীর কাছে আনত হয়ে বলল,
“ আমি তোমাকে ঠকিয়েছি ভীতু মেয়ে! ভালোবাসার ছুঁতোয় তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছি।
এ অন্যায় তো ক্ষমার যোগ্য নয়। তাই আজ তুমি যা বলবে,যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নিতে এসেছি। তোমার নিশ্চয়ই খুব রাগ হচ্ছে আমার ওপর? যদি চাও আমাকে খুন করতে,আমি তাতেও রাজি।”
তারপর মাথা তুলল তীব্র। অনুভূতিশূন্য পুষ্পিতার সাথে নজর মিলিয়ে বলল,
“ আমি তোমাকে ভালোবাসি ভীতু মেয়ে! প্রচণ্ড ভালোবাসি! কিন্তু এই ভালোবাসার কী মানে আছে, যদি তোমার জন্যে মরতেই না পারলাম!”
থামল সে। শ্বাস নিলো। জ্যোৎস্না আর কৃত্রিম আলোর মাখামাখিতে ধার চকচক করছে ছুরির। তীব্র সেদিক চেয়ে বলল
“ আমি তৈরি!
যে বুকে তোমাকে যত্ন করে আকড়ে রেখেছি,সেই বুকে নাহয় প্রথম ঘা-টা তুমিই বসিয়ে দাও ভীতু মেয়ে! আমি তোমাকে ঠকিয়েছি,মিথ্যে বলেছি, এই অপরাধে যে শাস্তিটা তোমার যোগ্য বলে মনে হবে তাই করো। এই ছুরি দিয়ে আজ আমার বুকটা ক্ষতবিক্ষত করে দাও তুমি । ঠকবাজদের তো বাঁচার কোনও অধিকার নেই। তাই না?”
পুষ্পিতা কিছু বলল না। চোখ ফেটে এক কণা নোনতা জল টুপ করে গালে এসে পড়ল। তীব্র কাতর কণ্ঠে বলে,
“ তুমি কেঁদো না ভীতু মেয়ে! তুমি কাঁদলে আমার বুকে ব্যথা হয়।”
পুষ্পিতা জড়বস্তু তখনও। কোনও রকম সাড়া না পেয়ে তীব্রর ফরসা মুখে নিরাশার ছাপ পড়ল। উঠে দাঁড়াল সে। একটু এগোতে নিলেই হাত তুলে মানা করল পুষ্পিতা। চোখে তার থইথই পারাবার। অথচ শক্ত কণ্ঠে বলল,
“ এগোবেন না।”
তীব্র দাঁড়িয়ে যায়। সাফাই দেয়ার আশায় নিটোল ঠোঁট তিরতির করে ওঠে। কিন্তু সুযোগটা আজ দিলো না পুষ্পিতা। চোখমুখের ঘৃনার পাহাড় উগড়ে দিতে বলল,
“ ছি!”
তুরন্ত,চোখ দুটো খিচে নিলো তীব্র। ধারালো দায়ের কোপে দুভাগ হলো বুক। পুষ্পিতার এই ছিঃ শব্দটা
দেহের শিরায় শিরায় কাঁটার মতো ফুটছে তার।
মেয়েটা আর থামল না। কথা বাড়াল না। না শুনল এক বখাটের প্রেমিক হওয়ার গল্প। চোখের জল বাধ ভাঙার আগেই,
ওড়না মুখ চেপে ছুটে যায় সে।
তীব্রর মনে হলো গায়ে শক্তি নেই। নাহলে পুষ্পিতা চলে যাচ্ছে, ও আটকাতে পারছে না কেন? কেন বুঝিয়ে বলছে না, আমি তোমাকে পেতে সব ছেড়ে এসেছি! আমি আর আগের মতো নেই!
তার দেহের সঙ্গে সঙ্গে চোখের পাতাগুলোও বিবশ বিবশ ঠেকল।
টনটন করে উঠল বুকের পাঁজর। হৃদয়ের গতিবেগ থিতিয়ে এলো ভয়ে। ঝাপসা নয়ন জোড়া পুষ্পিতার ছুটে যাওয়া দেখতে দেখতেই বুঝে নিলো,
তার ভালোবাসা শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্তির দাঁড়ি টেনে ফেলেছে। মস্তিষ্কের কোনায় কানায় বিষাক্ত এক সুরে নীল হয়ে গেল তীব্র।
যে সুরে কেবল একটাই গান,
“ এখানেই বিচ্ছেদ,এখানেই বিচ্ছেদ।”
তীব্র হাঁসফাঁস করে উঠল। ছুটে যাওয়া ক্ষুদ্র শরীরটার উদ্দেশ্যে চ্যাঁচিয়ে বলল,
“ ভীতু মেয়ে! ভীতু মেয়ে শুনছো?
তুমি আমার মরণ চেও ভীতু মেয়ে! তবু বিচ্ছেদ চেও না।”
চৌকাঠে বসে বসে ঘুমে টলছিল নূহা। সারাদিন অফিসে খাটাখাটুনির পর আয়েশাও গভীর ঘুমে তখন। ঘরে থাকা দুই মেয়ের কোনও কারসাজিই এখন অবধি টের পাননি তিনি।
নূহা দোরগোড়ায় একটা চেয়ার পেতে বসেছিল। মাথাটা প্রায় এক পাশে হেলে পড়া ভাব। আচমকা কিছু ধুপধাপ শব্দে হকচকাল খুব! চোখ মেলল ধড়ফড়িয়ে।
পুষ্পিতা দৌড়ে আসছে। কাঁদছে। সারা মুখ চটচটে, ভেজা। নূহা চমকে গেল ভীষণ। কিছু বলার আগেই পুষ্পিতা পাশ কাটিয়ে ছুট্টে গেল নিজেদের ঘরে। নূহা কিছুই বোঝেনি। আশ্চর্যকতায় মূর্তি বনে ছিল।
হুশ ফিরতেই দোর লাগিয়ে ত্রস্ত পিছু নিলো ওর। পুষ্পিতা একছুটে এসেই আছড়ে পড়ল মেঝেতে। লেপটে বসে বিছানার চাদর খামচে, কেঁদে উঠল হাহাকার করে। নূহা হুড়মুড়িয়ে পাশে এসে বসে। ধৈর্য হীন শুধায়,
“ কী হয়েছে? কাঁদছিস কেন? ভাইয়া কিছু বলেছেন? দেখা হয়নি? এই পুষ্পিতা,কাঁদছিস কেন বল না! বল না!”
সময় নিয়ে সিক্ত চোখে চাইল পুষ্পিতা। কোটর উথলানো জলের পুকুর। হেচকি তুলে বলল,
“ উনি,উনিই ববিট্টু মাস্তান!”
নূহার উদ্বীগ্ন চোখ ঝলকে ওঠে বিস্ময়ে। এই রে,তীব্র ভাইয়া সত্যিটা বলে দিয়েছেন? এতো তাড়াহুড়ো করতে গেলেন কেন? পুষ্পিতা তো ভুল বুঝবে এখন!
ও কিছু বলতে হাঁ করেও কী ভেবে ঠোঁট টিপে নিলো আবার। এতক্ষণের চিন্তিত কণ্ঠটা মুহূর্তেই সতর্ক,শান্ত করে বলল,
“ এখন তাহলে কী করবি তুই? আগের মতো ওনাকে ভালোবাসবি? না, ঘৃনায় দূরে সরে যাবি?”
পুষ্পিতার কান্নাটা অমনি থেমে গেল। ফিরল নিস্পন্দ চোখে। কেঁদে ভাসানো মেয়েটার এমন সময়েও হাসল নূহা। বড্ড আলগোছের হাসি। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ তুই ভীষণ বোকা কেন জানিস পুষ্পিতা? কারণ তুই খুব সরল একটা মানুষ। যার মধ্যে পৃথিবীর কোনও প্যাঁচই নেই। কিন্তু জীবন যে এতো সোজা ভেবে চলে না। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসে আমাদেরকে প্যাঁচ বুঝতেই হয়। গুণে গুণে,বুঝে-শুনে সেই প্যাঁচের জট ছাড়াতে হয়।
নাহলে এই চোরাবালিতে আমরা নিজেরাই আটকে যাব।
তীব্র ভাইয়া কে! কী! কেন! এসব নিয়ে আমি তোর সাথে একটা আলোচনাও করব না। কারণ, এই সময়টা শুধু তোর নিজের পুষ্পিতা। তুই ঠিক করবি,তোর ভালোবাসা কোন দিকে যাবে! তাকে তুই কোন দিকে নিবি! সব কিছু তোর হাতে পুষ্পিতা। সব কিছু তোর হাতে!”
নূহা বলে দিয়ে উঠে গেল। পুষ্পিতাকে ঠায় বসিয়ে রেখেই গিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। ভাবল মনে মনে,
“ আমি তোকে তীব্র ভাইয়ার হয়ে সাফাই দিতে পারতাম। তোর প্রেমে পাগল এক পুরুষের বদলে যাওয়ার রচনাটা তোকে বলতে পারতাম পুষ্পিতা! কিন্তু বলব না! সম্পর্কের মাঝে কে আমার জন্যে কী করেছে সেসব তো বড়ো নয়! সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসাটাই আসল। তাই, ভাইয়া তোর জন্যে কী কী করেছেন সেসবের ভিত্তিতে নয়,আজ ওনাকে ভালোবাসা দিয়ে বিচার কর তুই! এই সিদ্ধান্ত বোঝানোর নয়, এই সিদ্ধান্ত মনের পুষ্পিতা। মনকে বোঝা,প্রশ্ন কর,দ্যাখ কী বলে!”
নূহা শুলেও ঘুম হলো না। পুষ্পিতার কান্নার শব্দ ঘরের চার দেয়ালে বাড়ি খেল শুধু। হুট করে আকাশে মেঘের প্রতাপ বাড়ল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শব্দের সেই বাঁজ গুলো বৃহৎ হলো ক্রমে। বাইরের একেকটি প্রকট আওয়াজের মাঝে ঠান্ডা মেঝেতে পাথরের মতো শক্ত হয়ে বসে রইল পুষ্পিতা।
মাথা,মন,শরীর,শরীরের সব রন্ধ্রের প্রতিটি ভাঁজে সত্যিই কিছু প্রশ্ন ছুড়ল সে।
চোখের পর্দায় কখনও ভাসল সেই ভয়ানক রাত! মাস্ক-ক্যাপের আড়ালে থাকা সেই বখাটে বিট্টু। কখনও ভাসল তীব্রর সুতনু চেহারা। তার হাসি। তার কাছে আসা। একটু ছোঁয়া, একেকটি কথার বাণে প্রাণ কেড়ে নেয়া পুষ্পিতার।
শেষ কানে বাজল একটু আগেই তীব্রর সেই আর্তনাদ,
“ তুমি আমার মরণ চেও ভীতু মেয়ে! তবু বিচ্ছেদ চেও না।”
সহসা চট করে মাথা তুলল মেয়েটা। উঠে দাঁড়ালও তাড়াহুড়ো করে। জানলার বাইরে থেকে প্রবল বর্ষার ছাট ছিটকে আসছে ঘরে। সাথে মেঘের কী তেজ!
এক পল ভেজা চোখে সেদিক চেয়ে থেকে,পুষ্পিতা ছুট লাগাল কোথাও। সবেগী হাওয়ার মতো পায়ের গতি দেখে কাঁথার ভেতর হতে মুখ তুলল নূহা। কোঁচকানো ভ্রুটা টানটান করে মুচকি হাসল একটু।
আগেরবার যাওয়ার সময় যে মেয়েটা আয়েশার ভয়ে নেতিয়ে ছিল? সেই মেয়ে এখন অতো রাতে দুরন্ত পায়ে সিঁড়ি গলে ছুটছে।
তীব্র একইরকম বসে তখনও। শক্তপোক্ত দেহের বিধ্বস্ত চিত্ত। চোখে জল নেই। কিংবা আছে! বৃষ্টির তোড়ে সেসব নোনতা স্রোত তো আলাদা করা যাচ্ছে না। অদূরের দারোয়ান বেশ কিছুক্ষণ দেখলেন ওকে। এই স্যার ওনাকে মাঝেমধ্যেই হাতের মুঠোয় বখশিশ গুঁজে দেয়। আজকেও অসময়ে গেইট খুলে রাখার জন্যে ভালো অঙ্ক দিয়েছিল। কিন্তু এখন কী কিছু হয়েছে? মেয়েটা ওইভাবে চলে গেল,স্যারও এইভাবে তখন থেকে বসে আছেন!
এমন মরা বৃষ্টিতে ভিজলে যে শরীর খারাপ করবে! ভদ্রলোকের চিন্তা হলো। ঝটপট করে নিজের ছোট্ট কামরা থেকে ছাতা আনতে গেলেন।
দীর্ঘদেহী তীব্রকে দেখতে তখন প্রস্তরের ন্যায় লাগছে। লাগামহীন বর্ষার তাণ্ডবে সাদা মুখ পাংশুটে। বিলাতি নয়নের খাঁজে কোনও প্রাণ নেই,চপলতা নেই৷ মাথা নুইয়ে অমন হাঁটুগেড়ে বসার মাঝেই কানে এলো নুপুরের রিনঝিন শব্দ। এক জোড়া পা বড়ো উদ্বেগ নিয়ে কাছে আসছে তার। চকিতে মাথা তুলল তীব্র।
ছোটো ছোটো বর্ষণের ফাঁক গলে আবছা দৃষ্টি খুঁজে পেলো দৌড়ে আসা পুষ্পিতাকে।
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪২
ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল সে৷ কপালে ভাঁজ। চোখেমুখে বিভ্রম! নেত্রমণির পরতে পরতে যে প্রশ্নদের আনাগোনা?
ওদের মেটাতে হাওয়ার মতো এসেই বুকের মধ্যে ঢুকে গেল পুষ্পিতা।
পেলব দুই হাতে তীব্রর ভিজে চপচপে শার্ট খামচে ধরে বলল,
“ আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার! আমি আপনাকে ভালোবাসি!”