স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৯

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৯
writer:Nurzahan akter (allo)

রাসেল অসহায় দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে!আর মুহিত বুঝে গেছে আয়ানরা রাসেলকে এখন ছাড়বে না আর মুহিত মিষ্টুর বড় ভাই সো এসব কিছু শুনতেও পারবে না!মুহিত আর উপায় না পেয়ে উল্টো ঘুরে হাটা দিলো।আর বেচারা রাসেল মুহিতের চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলো..

রাসেল আর উপায় না পেয়ে হুট করে মামনি কি এটা?বলে চিৎকার করতেই ওরা সবাই পেছনে ঘুরে তাকালো আর রাসেল এই ফাঁকে বগার পাড়!রাসেল এক দৌড়ে ছাদে গিয়ে হাফাতে শুরু করলো!রাসেল ছাদে গিয়ে দেখলো মিষ্টু ছাদের চিলেকোঠার ঘরের পাশে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে!রাসেল গিয়ে মিষ্টুকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে… তখন মিষ্টু রাসেল বলে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মিষ্টুঃআমি খুব খুশি আজকে জানো!আজকে মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেছে।আর প্রাণ ভরে নিঃশ্বাসও নিতে পারছি..
রাসেলঃহুমমম বুঝলাম!একটা নিউজ আছে ম্যম!আমার জন্য তো এটা গুড নিউজ..(মিষ্টুর কাধে মুখ রেখে)
মিষ্টুঃকি নিউজ আগে শুনি?
রাসেলঃ নিচে মুহিতরা সবাই মিলে ঠিক আমাদের আবার নাকি বিয়ে দিবে।আর সেটা দুইদিন পর…
মিষ্টুঃওহহ্!এসব কেন আবার (মাথা নিচু করে একটু হেসে)
রাসেলঃহুমম ভালোই হবে!এবার তো …..আর ছাড় পাবে না ম্যম।এবার আর কোন অযুহাত চলবে না। (মিষ্টুকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে)
মিষ্টুঃআমি নিচে গেলাম(দৌড় দিয়ে)

মিষ্টু দৌড় দিতেই রাসেল মিষ্টুকে ধরে ফেলে আর পজড়িয়ে ধরে। রাসেল মিষ্টুর কাঁধে হাত রাখে আর বলে..
রাসেলঃম্যম আর কতদিকে দুরে সরিয়ে রাখবেন শুনি!এবার আর কোন অযুহাত মানবো না।আমি আমার জুনিয়র দের খুব তারাতারি আনতে চাই…
মিষ্টুঃছাড়ো কেউ চলে আসবে।(নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
রাসেলঃকেউ আসবে না!সবাই আড্ডা দিতে বিজি..

মিষ্টু রাসেলের থেকে হাত ছুটিয়ে চলে যায়!আর রাসেল ওখানে দাড়িয়ে হাসতে থাকে!রাসেলও ছাদে থেকে নেমে এসে দেখে মিষ্টু ওর আম্মুর পাশে বসে আছে!রাসেলও সোফাতে বসে।আর সবাই ঠিক করে আগামী বৃহস্পতিবার ওদের বিয়ে দিন মানে আর দুইদিন পর!আয়ান সবাইকে উদেশ্য করে বলে..

আয়ানঃরাসেল মিষ্টু তাহলে এখানে থাকুক!তুই ওর বাসায় চলে যা কেমন। একেবারে বিয়ের দিন আসিস।
জয়ঃহুম হুম এটাই বেটার হবে!
রাসেলঃকেন?তোরা এমন করছিস বলতো..(অসহায়ের মত মুখ করে)
শুভ্রঃকেন আবার? এই দুইদিন দুই জায়গাতে থাকবি তোরা ব্যস্
আম্মুঃকেন তা হবে কেন?রাসেল ওর বাসায় যাবে কেন?ওখানে একা একা থেকে কি করবে?
আয়ানঃও মামনি তুমি এসব বুঝবে না!আর রাসেল একা একা থাকবে কেন শুনি? আমরা আছি কি করতে..কি রে মুহিত কি বলিস?

মিষ্টু উঠে ওর রুমে চলে গেল!আর বেচারা মুহিত পড়ছে বিপদে কারন কি বলবো আর কি করবে সব গুলিয়ে ফেলছে।একদিন বন্ধু আর দিকে বোনের বর..

একটু পরে মুহিত, আয়ানকে মেসেজ করে বললো ওদের মুহিতের রুমে যেতে বাট রাসেল বাদে।জয় রাসেলকে তুলে হাটতে শুরু করলো তারপর মিষ্টুর রুমে দরজা খোলা দেখে রাসেলকে দিলো একটা ধাক্কা! আর বাকিরা সবাই হাসতে হাসতে মুহিতের রুমে চলে গেল।মিষ্টু একটা ড্রেস বের করে ঘুরতেই রাসেলের সাথে ধাক্কা খায়।তখন নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে…

মিষ্টুঃতুমি এভাবে হুটরাই বেড়াচ্ছো কেন?চোখের মাথা খাইছো নাকি?
রাসেলঃআরে ধুর ওই ফাজিল জয়টা আমাকে ধাক্কা দিসে!ওরা মে বি আমাদের রোমাঞ্চ করার সুযোগ করে দিলো।(মিষ্টুকে জড়িয়ে ধরে)
মিষ্টুঃথাক আর রোমাঞ্চ করতে হবে না আপনি কখন বাসায় যাবেন বলেন তো স্যার।আপনার খুব ফাজিল হয়ে গেছেন..
রাসেলঃ এভাবে বলো কেন? থাকি না এখানে তোমার সাথে! প্লিজ মিষ্টু!আমার এখন তোমাকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে। (করুন চোখে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃমাএ তো দুইটা দিন! দেখতে দেখতে কেটে যাবে।আর শোনো! বাসায় গিয়ে রান্না করার দরকার নাই আমি খাবার পাঠিয়ে দিবো কেমন।আর এখন তো দুপুরে খেয়েই যাবে..
রাসেলঃ এত নিষ্ঠুর কেন তুমি?এটা দুইটা দিন না আমার কাছে দুই দুইটা বছর বলে মনে হচ্ছে! এককাজ করি আমি সবাইকে বলি যে এসব বিয়ে টিয়ে আর করবো না।
মিষ্টুঃএই না!সবাই কি ভাববে বলো তো!
রাসেলঃযে যা ভাবার ভাবুক! আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে ব্যস্।তুমি তো জানো আমি এখন তোমাকে ছাড়া অচল(বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মিষ্টুকে)
মিষ্টুঃথাক আর ভালবাসা দেখাতে হবে না!শোন তুমি এমন করলে ভাইয়া কি ভাববে বলো তো?তুমি এমন করলে আমিই লজ্জা পাবো বেশি!আর সবাই কত হাসাহাসি করবে এটা নিয়ে..
রাসেলঃআর দুইটা দিন যে তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হবে না!তুমি জানো না তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না।
মিষ্টুঃঢং দেখি বাঁচি না!দেখি ছাড়ো আর বেশি বকবক করলে কিন্তু ১ মাস পর বিয়ের ডেট ঠিক করতে বললো।(দাঁতে দাঁত চেপে)
রাসেলঃএই না! আমি তাহলে মারা যাবো।আচ্ছা থাক আর কিছু বলবো না আমি..এটাই ঠিক আছে।
মিষ্টুঃহুমম।

মুহিত জয়দের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে ডিসকাস করছে!তারপর সবাই বেশ কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা শেষ করতেই মুহিতের আম্মু সবাইকে খেতে ডাকলো।মুহিতরা রুম থেকে বের হয়ে দেখে মিষ্টু শসা কাটছে আর রাসেল বসে শসা খাচ্ছে!সব বন্ধুরা মিলে খেতে বসলো মুহিত ভাত মাখিয়ে মিষ্টুর মুখে দিলো। রাসেলেরও ইচ্ছে করছিলো!বাট মুহিত মিষ্টু কে খাইয়ে দিবে এটা রাসেল জানে তাই রাসেল আর দেয় নি।রাসেল মিষ্টুকে বসে খেতে নিতে বলতেই..

জয়ঃহুম হুম মিষ্টু তোকে ছাড়া তোর বরের গলা দিয়ে খাবার নামাছে না বোন!তুই তারাতারি খেতে বস.. হা হা
আম্মুঃতোরা ওর পেছনে শুধু শুধু লাগছিস কেন রে?
আয়ানঃ মিষ্টু চেয়ার তো ফাঁকা নেই তুই এক কাজ কর বোন রাসেলের কোলেই বসে পড়।
শুভ্রঃহুম এটাই বেটার হবে।
মুহিতঃতোরা আবার শুরু করলি!
রাসেলঃআমি আর কিছু বলবো না ভাই!বিষেশ করে তোদের সামনে তাও এবারের মত মাফ কর। আর আমার ইজ্জতের ফালুদা করিস না…
আয়ানঃহা হা হা! কেবল তো শুরু মনু…
মিষ্টুঃ আম্মু আমার হকিস্টিক টা কই দাও তো!আজকে এই তিনটাকে উওমা ক্যালাবো!ওরা হয়তো ভুলে গেছি আমি কে?
জয়ঃওহহ্ তুমি এখন তোমার বরকে পেয়ে আমাদের পর করে দিচ্ছো তাই না।আচ্ছা দেখি তোর বরকে এই দুইদিন এই বাসায় পা রাখে কি করে?
রাসেলঃ জয় এসব কথা বলিস না ভাই আমি মারা যাবো।
আম্মুঃআহারে! এই তোরা এসব বলিস না তো(মুচকি হেসে)
রাসেলঃ মামনি সরি সরি আম্মু তুমি হাসছো..
আম্মুঃ কই হাসলাম আমি!তুই এখন আমার জামাই তোকে নিয়ে হাসতে পারি…
বাকিরাঃহা হা হা

মুহিত মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি শুধু হাসছে!বাকিরাও মজা নিচেছ শুধু বেচারা রাসেল পারছে না হাউমাউ করে কেঁদে দিতে।তারপর ওরা খাওয়া শেষ করে তারপর একটু রেস্ট নিয়ে নেয়।আর এখন সবাই একটু বাইরে যাবে! সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবে এ জন্য! রাসেল মিষ্টুর রুমে এসে হাত-মুখ ধুয়ে নিলো আর চুল গুলোও ঠিক করে নেয়।তারপর মিষ্টুর কপালে আদর দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আর সাবধানে থাকতে বলে নিচে চলে যায়।রাসেল নিচে গিয়ে দাড়াতেই আয়ান রাসেলকে বলে…

আয়ানঃহামি টামি দিয়ে আসলি নাকি শুধু শুধু বাই বলে চলে আসলি শুকনো মুখেই..
রাসেলঃআমার বউকে আমি হামি দিবো নাকি কামড় দিবো সেটা তোকে বলবো কেন রে শালা?
মুহিমঃউহুম! উহুম!তাহলে যাওয়া যাক (পেছন থেকে কাশি দিয়ে)

মুহিত ড্রাইভ করছে আর রাসেল মুহিতের পাশে বসেছে আর ওরা তিনজন পেছনের সিটে। জয় এখনো রাসেলকে খোঁচাতে থাকে!এবার রাসেল মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো..
রাসেলঃমুহিত আমাদের বিয়ের কাজ শেষ করার পর এই তিন শালাকে তুই আটকে রাখবি!এদের দেখলেই আমি তখন উরাধুরা মার শুরু করবো আগেই বলে দিলাম..
শুভ্রঃকবুল বলার পর কে তোকে ছাড়ে তুই শুধু তাই দেখ। আর কে কে আটকে রাখে তখন দেখা যাবে..
জয়ঃদাড়াও মনু আমরা তোমার বাসর করার সাধ মিটিয়ে দিচ্ছি ???
রাসেলঃআমিও দেখি তোরা কি করে আমাকে আটকাস?(মুহিতের সামনে মুখ কাচুমাচু করে)
মুহিতঃ তোমরা ওকে খোঁচা মারছো তো! তোমাদের বেলাতে তোমরা ছাড় পাবে না মনে রেখো ভাইরা…মিষ্টু আমার বোন আর আমার সামনে রাসেল কিছু বলছে বলে মনে করো না তোমরা ছাড় পাবে…সময় হোক যাকে তোমরা খোঁচা মেরে কথা বলছো সে তোমাদের থেকে কম যায় না…
শুভ্রঃ বন্ধু তুই বাসর ঘরে ঢোকার কথা ভুলে যা ভাও!হা হা হা হা
তারপর ওরা অনেকটা সময় আড্ডা দিলো!আজকে সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ করে দুই বন্ধু এত হলো। রাসেল আড্ডা দিচ্ছে ঠিকই বাট ওর মনটা পড়ে আছে ওর প্রাণপাখিটার কাছে!

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৮

মুহিত রাসেলের দিকে দেখে রাসেল কিছু একটা ভাবছে! মুহিত রাসেলের কাঁধে হাত রাখে তখন রাসেল মুহিতের দিকে তাকায় আর জিজ্ঞাসা করে কিছু বলবে কি না!মুহিত তখন রাসেলকে বলে!

মুহিতঃআমার কলিজাটাকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি রাসেল! ওকে কষ্ট দিস না ভাই তাহলে আমি মারা যাবো।তুই এখন আমার বন্ধু না তোর সাথে আর একটা গভীর সম্পর্কের আবদ্ধ আমরা!মিষ্টু যদি কোন ভুল করে থাকে মানিয়ে তাও ওকে কষ্ট দিস না ভাই।মিষ্টু খুব রাগী আর জেদি কিন্ত বুঝালো অল্পতেই বুঝে…আমাদের দোয়া সবসময় তোদের সাথে থাকবে!তোরা অনেক ভাল থাক।
রাসেলঃ মুহিত আমি হয়তো তোর মত করে ভালবাসতে পারবো না তবে বিশ্বাস কর ভাই আমি আমার সবটুকু দিয়ে মিষ্টুকে ভাল রাখার চেষ্টা করবো।আর সত্যি কথা বলতে আমি মিষ্টুকে এখন নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি এটা তুই তো জানিস!তুই একদম চিন্তা করিস না মিষ্টু আমি সব সময় আগলে রাখবো।
তারপর ওরা শপিংমলে চলে যায়…..

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪০