স্পর্শানুভূতি শেষ পর্ব 

স্পর্শানুভূতি শেষ পর্ব 
writer:Nurzahan akter (allo)

মিষ্টুঃ হুমমম! তারাতারি চলুন তো আর দুম করে আমার পেট থেকে বাচ্চাটা থেকে বের করে দেন…
ডাক্তারঃ দুম করে বাচ্চা কি করে বের করবো??
মিষ্টুঃ এটা জানেন না! কেঁচো খেয়ে ডাক্তারি পাশ করছেন নাকি?
ডাক্তারঃ ইয়াক….থু।এসব কেমন কথা…

তারপর মিষ্টু সবাইকে বাই বলে ওটিতে ঢুকে যায়।রাসেলের তো হাত পা কাঁপতে শুরু করছে অলরেডি। মিষ্টু যতই দুষ্টুমি করুন যত কথায় বলুক।মিষ্টু যে খুব নার্ভাস সেটা ওর চোখ দেখেই রাসেল বুঝেছে।তারপর ওটি লাইট জলে ওঠে! রাসেল মনে মনে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে! তারপর ১৫ মিঃপর দুই টা নার্স আসে দুইটা বাচ্চা কোলে নিয়ে!রাসেল আগে নার্সদের জিজ্ঞাসা করে মিষ্টু কেমন আছে?নার্স রা জানায় ভালো আছে।রাসেল একটা বাচ্চা কোলে নেয় আর একটা নেয় মুহিত!মুহিত আর রাসেল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কারন একটা বাচ্চার ফেস দেখতে রাসেলের মত আর একটা বাচ্চার ফেস মুহিতের মত।সদ্য জন্ম নিয়েছে তারপরেও কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। আর দুইটা বাচ্চাই সাদা ফর্সা…. রাসেল এত খুশি যা কাউকে বোঝানোর মত না… এমন একটা অনুভূতি যা মনের ভেতর প্রশান্তির বিরাজ করছে।বাচ্চাটাকে কোলে নিতে পেরে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

১ ঘন্টা পর মিষ্টুকে কেবিনে দেয়! সবাই মিষ্টুর সাথে দেখা করে মিষ্টু সবাইকে দেখে মুখে হাসি ফোটে। তারপর বালিশে হেলান দিয়ে অনেক কষ্ট আধাশোয়া হয়ে বসলো।মিষ্টু দুইটা বাচ্চাকেই কোলে নিলো!মিষ্টুর দুইটা ছেলে হয়েছে! বাচ্চা দুইটাকে কোলে নিয়ে আদরে ভরিয়ে দিলো। মিষ্টু বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বললো….
মিষ্টুঃ এদের নাম রাখবো স্পর্শ আর স্পন্দন….এই দুটো নাম রাখলাম কেন জানো???
রাসেলঃনা জানিনা! আমার আর তোমার নামের সাথে তো মিল নেই কেন?? (ভ্র কুচকে)
মিষ্টুঃ কারন আলোমনি ভালবেসে এই নাম দুটি রাখছে…..
❤❤স্পর্শ আর স্পন্দন=স্পর্শানুভূতি❤❤
(দেখছেন আমার কত বুদ্ধি…)
রাসেলঃ স্পর্শানুভূতির কারনে আমাদের দুঃখ,কষ্ট, দুষ্টুমি দিয়েই আমাদের পথ চলার শুরু হয়েছিলো! আর সারাজীবন এভাবেই থাকবো আমরা ইনশাআল্লাহ….
মিষ্টুঃহুমমমম

তারপর রাসেলের দিকে একবার তাকিয়ে মুহিত আর মিতু কাছে ডাকলো।রাসেল জানে মিষ্টু এখন কি করতে চাচ্ছে….

মিষ্টুঃ ভাইয়া আমি আমার স্পন্দন তুলে দিলাম তোমার হাতে!আজকে থেকে ওর বাবা তুমি। আমাকে যেভাবে মানুষ করছো আজকে থেকে স্পন্দনকেও করবে কারন এখন থেকে স্পন্দন তোমার ছেলে…
মুহিতঃ এসব কি বলছিস বোন?তোর মাথা ঠিক আছে..রাসেল ওরে বোঝা এসব ছেলে খেলার জিনিস না।
রাসেলঃ আমি জানি মুহিত!কারন যেদিন আমরা জেনেছিলাম যে আমাদের টুইন বেবি হবে সেইদিনই আমরা ঠিক করেছিলাম।যে আমার একটা বেবি তোকে দিবো!আমি আগেও বলছি আর এখনো বলছি তুই আমার বন্ধু না তুই আমার ভাই..
মিষ্টুঃ ভাইয়া আজকে থেকে আমার একটাই ছেলে সেই হলো স্পর্শ!আমি কখনোই তোমাদের কাছে কোন প্রকার দাবি নিয়ে দাড়াবো না।এটা আমার ওয়াদা…..

রাসেল মিষ্টুর কোলে থেকে স্পন্দনকে কোলে নিয়ে আদরে ভরিয়ে দিলো।তারপর মুহিতের কোলে তুলে দিলো….
রাসেলঃ মিষ্টুকে যখন আমার হাতে তুলে দিয়েছিলি তখন বলেছিলি তোর কলিজাকে যেন কষ্ট না দেয় কখনো।আজকে আমি একটা বাবা হয়ে তোর সামনে দাড়িয়ে বললাম আমার ছেলেটাকে তোর হাতে তুলে দিলাম!তুই ওরে দেখে রাখিস….মিতু বোন আজকে থেকে তুমি মা শুধু স্পন্দনের….

মুহিত আর মিতুর চোখে পানি এটা সুখের।মুহিত মিতুর কোলে স্পন্দনকে দিলো। মিষ্টু মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো…
মিষ্টুঃ আমার ভাইয়া হয়ে তুমি আমার ছায়া হতে পারো,সব সময় সাপোর্ট করতে পারবে,নিজে হাতে খাইয়ে দিতে পারবে,আমি ব্যাথা পেলে তার থেকে দি গুন ব্যাথা তুমি পেতে পারবে ,আমি কাঁদলে বাড়ি মাথায় তুলতে,আমার জরে সারারাত জাগতে পারবে,আর বড় কথা হলো বাবা না থেকেও বাবার অভাব পূরন করতে পারবে,নিজের ভালোটা না ভেবে আমার ভালোটা ভাবতে পারবে!আমাকে তোমার নিজের একটা শরীরের একটা অংশ মনে করতে পারবে! তাহলে আমি কেন বোন হয়ে আমার একটা অংশকে তোমাকে দিতে পারবো না। সারাজীবন তো তুমি দিলে গেলা আমি না হয় আমার স্পন্দনকে দিলাম…..তোমার থেকে যা পেয়েছি সেগুলো শোধ করার মত না ভাইয়া… আর কোনদিন পারবোও না।কারন আমাদের ভাই আর বোনের সম্পর্কটা যে এমনই ভাইয়া….আর মিতু আমার বান্ধবী না শুধু আমার বোনের মত চলছি আর চলবোও। ভাবি আর ননদ যে ঝগড়া ঝাটি হিংসা করবে,কুটকাচালি করবে আমরা সেই রকম না। আর বড় কথা আমি তোমার থেকে শিখেছি প্রতিটা সম্পর্ক আগলে রাখতে….আর না করো না ভাইয়া।
মুহিতঃ আমার বোনের যুক্তির সাথে আর কোনদিনই পেরে উঠিনি আর আজও পারবো না।

তারপর মুহিত আর না করেনি স্পন্দনকে পেয়ে মিতুর মুখে হাসি ফুটেছে!সবাই ভাল থাকুক না…..সব সময় হাত চিৎ করে নয় উপুর করাও জানতে হয়! তাহলে জীবনে অনেক কিছু শেখা যায়।যেমন মিতুর আর মুহিতের সেই তৃপ্তির হাসি….থাকুক না এভাবে।

৪ বছর পর…
স্পর্শঃ বাবাই! ও বাবাই তুমি আমার রিপোর্ট কনট্রোল গাড়ি আনবে,একটা প্লেন আনবে,আর রোবট , একটা বন্দুক আনবে, অবশ্যই আনবে…. (ফোন করে)
রাসেলঃওকে বাবা! সব আনবো…. এখন তুমি পড়ে বসো কেমন।
স্পর্শঃ বাবা আমি আজকে একটা দুষ্টুমি করছি!তোমাকে বলবো তুমি মাম্মাম কে বলবে না তো??
রাসেলঃ না বলবো না আগে বলো শুনি!
স্পর্শঃ আমাদের একটা স্যার আমাদের বাসার ঠিকানা চাচ্ছিলো বাট আমি ভুল ঠিকানা দিয়ে দিসি….কারন আমি জানতাম আমাকে নামেই অভিযোগ দিবে।হা হা হা
রাসেলঃ এটা ঠিক না বাবা….এখন রাখি বাসায় এসে কথা বলবো কেমন।বাবা একটু কাজ করবে…একটু বিজি আছি সোনা…
স্পর্শঃওকে বাবাই….
মিষ্টুঃ আজকে কি কি দুষ্টুমি করছো সব বলবে!যদি একটা মিস হয় তো,,, আজকে তোর বাবারও পিঠের ছাল তুলে দিবো।
স্পর্শঃওকে! মাম্মাম ছাল ভাল করেই তুলবে কেমন।আমি তোমার দল।
মিষ্টিঃতোর টাও তুলবো!যদি এখন না বলিস তো…খবর করে দিবো।দুজনেই সবসময় কিসের এত ঘোট পাকাস শুনি… (স্পর্শের কান টেনে)
স্পর্শঃআহ্ লাগছে!বেশি দুষ্টুমি করি নি শুধু…
১.নাফিসার খাতায় শাকচুন্নি,কুওি লিখছি..
২.রুদ্রের খাতা ছিঁড়ে রনকের নাম দিসি
৩.চেয়ারে চক ঘষে দিসি স্যার চেয়ারে বসেছে আর স্যারের ইয়েতে চক লেগে গেছে।
৪.নাবিলের টিভিন কেড়ে খেয়ে ফেলছি
৫.রিদির কালার পেন ভেঙে দিসি
৬.কৌশিকের ব্যাগের একটা চেন ছিঁড়ে দিসি
৭.আর বাবাইয়ের একটা ওয়াচের এক বেল্ট খুলে দিসি
৮.আমার একটা জুতা নিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলতে খেলতে আসছিলাম।একটা আন্টির মাথা জুতা পড়ছিলো।
৯.আমার বেড শীটে কালার করে দিসি। দেখলাম নতুন কালার পেন গুলো কেমন… পরীক্ষা করছিলাম।
১০.স্যারকে ভুল ঠিকানা দিসি
আর কিছু করি নি…
মিষ্টুঃ ওকে ভালো করছিস।এসব কোন দুষ্টুমি হলো নাকি??দাড়া তোর কথা শুনে ঘুম পাচ্ছে একটু ঘুমিয়ে নেয়। (এমন মা যেন ঘরে ঘরে হয়)
ওইদিকে______________
স্পন্দনঃ বাবা আজকে আমি একজনের প্যান্ট খুলে দিসি!তোমার কাছে বিচার আসতে পারে তাই আগেই বলে দিলাম।পরে আমার বলবে না তো আমি তোমার থেকে কোন কথা লুকায়…
মুহিতঃ কেন?তুমি কার প্যান্ট খুলে দিলো, আর কেন? (অবাক হয়ে)
স্পন্দনঃ প্রতিদিন আমার ব্যাগ দিয়ে ওর বেঞ্চ মুছে! মানা করছি শোনে না।আর ফুপি (মিষ্টু) তো বলছে সবাই একবার সুযোগ দিতে তারপর না শুনলে উতমা ক্যালাতে…তো আমি ক্যালাইনি শুধু প্যান্ট খুলে দিসি তাও আবার মেয়েদের সামনে…. আর (দুষ্টু হেসে)
মুহিতঃ আর কি?? (ভ্র কুচকে)
স্পন্দনঃ আমাকে প্রতিদিন কানে কানে বলে এক প্যান্ট খুলে দেখ!তাই আজকে আমি একা না সবাই মিলে দেখছি…আর কোনদিন এসব বলবে না।কান্না করছে তারপর প্যান্ট দিসি। ভালো করিনি বাবা…(বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে)
মুহিতঃ আর কিছু বলার নাই আমার।মিষ্টু যা ফাজিল ছিলো তোরা দুজন ওভার করে দিস বাবা আমার।এমন করলে তোর আর স্পর্শের বিয়েই হবে না কোনদিন।তোর বাবা এমন ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিবে না।
স্পন্দনঃ ও নিয়ে চিন্তা করো না! আমার শশুড় মেয়ে না দিলে না দিক! শাশুড়ির মেয়ে তুলে আনবো…আমরা হলাম আপডেট ছেলে.. ইয়ো ইয়ো রকস্
মুহিতঃ তুই আমার সামনে থেকে যা! আমার মাথা ঘুরছে..

মিষ্টু একটা সময় ভয় পেয়েছিলো রাসেল ওকে ছেড়ে যাবে কি না তাই নিয়ে!বাট রাসেল আগের তুলনায় মিষ্টুকে আরো বেশি ভালবাসে।সত্যিকারে ভালবাসা মনে থাকলে সেখানে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না।রাসেল আর মিষ্টুর কাছেও সেটা বাধা হতে পারে নি।তারা এখন একে অপরকে পরিপূর্ণ।

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫২

মিষ্টুর ছেলে দুইটা ওর মতই হয়েছে!কেউ কারো থেকে কম না।রোজের বিয়ে হয়ে গেছে।আয়ানরাও বিয়ে করে সবাই সংসারী। আবিদকে যে মারছে পুলিশ তার খোঁজ করতে পারে নি কারন সেদিন রাসেল কোন প্রমান রাখে না।ভালো থাকুক বন্ধুর সাথে বন্ধুর, ভাইয়ের সাথে বোনের,বান্ধবীর সাথে বান্ধবীর,হাজবেন্ড এর সাথে ওয়াইফের।সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক টা অটুট থাকুক।

রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো মিষ্টু! রাসেল গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই…
মিষ্টুঃ ভালবাসি ভালবাসি বড্ড বেশি ভালবাসি
রাসেলঃ আমিও আমার বউটাকে বড্ড বেশি ভালবাসি।আর দুইজন দুইজনকে এত ভালবাসি বলেই তো মনের গহীন থেকে সৃষ্টি হয়েছে..

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন