স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫০

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫০
writer:Nurzahan akter (allo)

ডাক্তারঃআসলে অপারেশন রুগী জর আসাটা মোটেও ভাল কিছু ইঙ্গিত নায়!কারন জরটা হচ্ছে বড় রোগের আগাম সংকেত! আর রুগী তে কম কম সহ্য করছে না।ওরে প্রতিদিন দুইটা করে ইনজেকশন দিতে হবে! সাত হাজার পাওয়ারের এই ইনজেকশন টা।আর এটাই আমার লাষ্ট চিকিৎসার এটাতে যদি না কমে তো আমার হাতে আর কিছু করার থাকবে না।এই ইনজেকশন গুলো ইমিডিয়েট আনার ব্যবসথা করুন….

রাসেল সেই রাতে মেডিসিন নিয়ে আসে!জরের জন্য মিষ্টুর সেন্স নাই।রাসেল ওর রুমাল ভিজিয়ে সারারাত বসে মিষ্টুর মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে!রাসেল মিষ্টুকে হারানো ভয়ে ওর দুচোখে ঘুমও উধাও!রাসেল এক মনে আল্লাহকে ডাকছে! সকালের দিকে মিষ্টু জর টা কমে আসে!সকালে মুহিতরা আসে তখন মিষ্টু ঘুমাচ্ছিলো…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুহিত রাসেলকে জোর বাসায় যেতে বললো কারন ওর ফ্রেশ হওয়া দরকার।রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো ঘুমাচ্ছো।তাই রাসেল দ্রুত বেরিয়ে গেল…।মুহিত মিষ্টু পাশে বসে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।ভাই হয়ে বোনের এত কষ্ট আর দেখতে পারছে না।রাসেল যাওয়ার ১ঃ৩০ মিঃ পর মিষ্টুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।মিষ্টু পাশে তাকিয়ে দেখে মুহিতকে…আর মুহিতকে দেখেই মুহিতের হাত চেপে ধরে তোতাপাখির মত আবার বলতে শুরুর করলো…

মিষ্টুঃওহহ সোনা ভাইয়া আমাকে কিছু খেতে দে না!আমার যে খুধায় পেট জলে যাচ্ছে রে ভাইয়া।(উওেজিত হয়ে)
মুহিতঃ দিবো তো খেতে বোন!আর কয়েক ঘন্টা পরেই তোকে খেতে দিবো। শান্ত হ বোন…
মিষ্টুঃনা না এখনই দে না ভাইয়া? যা দিয়ে খেতে দিবি তাই খাবো। আর আবদার করবো না তাও আমাকে একটু ভাত খেতে দে । আর একটু পানি দে না রে ভাইয়া।তোরা কেন আমাকে খেতে দিচ্ছিস না আমাকে??তোরা আমারে মেরে ফেলতে চাচ্ছিস?আমাকে না খাইয়ে মারতে চাচ্ছিস…( চিৎকার করে)
মুহিতঃ এমন করিস না বোন!পেটে টান লাগবে রক্ত বের হয়ে যাবে তো… (কেঁদে দিয়ে)

সেই সময় রাসেল কেবিনে ঢুকে আর মিষ্টু শান্ত হয়ে যায়।মুহিত এভাবে মিষ্টুর শান্ত হতে দেখে পেছনে তাকিয়ে দেখে রাসেল দাড়িয়ে আছে।মুহিত মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টু ছলছল চোখে মুহিতের দিকেই তাকিয়ে আছে।মুহিত আর এক পা ও দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। মুহিত কেবিন থেকে বের হয়ে একটা চেয়ারে বসে দুই হাত দিয়ে মুখ ডেকে কেঁদে দিল।যে মেয়েটা কে খাওয়ার জন্য বকা দিতো আজ সেই একটু খাবারের জন্য ছটফট করছে।রাসেল সব ই শুনছে আর আড়ালে চোখের পানি মুছে নেয়….মিষ্টু চোখ বন্ধ করে আছে আর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি গাল বেয়ে পড়ছে…
রাসেল মিষ্টুর মুছে দিয়ে মিষ্টুর চোখ আদর দিয়ে দিলো।

এভাবে প্রায় ৪ দিন কেটে যায়…
রাসেলের আড়ালে সবার থেকে খেতে চাই বাট কেউ ওরে খেতে দিচ্ছে না।৪ দিনের বেলায় ডাক্তার এসে পেটের ব্যান্ডেজ খুলে আর জোরে একটা চাপ দেয়!আর মিষ্টু ও মা গো চিৎকার করে ওঠে। রাসেল উঠে ডাক্তারের কাছে তেড়ে যায় আর মুহিত রাসেলকে আটকায়।ডাক্তার মুচকি হেসে রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে…

ডাক্তারঃআমার রুগী ক্ষতি আমি চাইবো না।ওর ভালো জন্য চাপটা আমি দিসি।চাপ দিয়ে দেখলাম ওখানে ইনফেকশন হয়েছে কি না?
রাসেলঃ কাটা জায়গায় এভাবে কেউ চাপ দেয়।ও তো মানুষ…. আর কত সহ্য করবে বলতে পারেন।
ডাক্তারঃদিলাম বলেই তো দেখলাম যে ওর পেটে ইনফেকশনে ধরছে। এখন দুই বেলা ডেসিং করতে হবে…

এবার রাসেলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! কারন ডেসিং মানেই তো গজ কাপড় দিয়ে ঘসবে।এবার কি করে মিষ্টুকে সামলাবে! রাসেল তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে!যেই নালি ফুটা হয়েছে ওটাই সেলাই করা হয়েছিলো বাট মিষ্টুর পেট সেলাই করে নি।কারন আগে নালির সেলাই শুকাতে হবে!ডাক্তার রাসেল আর মুহিতের সামনেই সেই কাটার ভেতর থেকে অনেক টুকরো টুকরো গজ বের করলো তারপর রাসেলকে ইশারা করলো মিষ্টুর হাত ধরতে!আর একটা নার্স গিযে মিষ্টুর পা ধরলো….যাতে মিষ্টু ড্রেসিংয়ের কাছে বাধা দিতে না পারে…

ডাক্তার আগে সেই কাটার মধ্যে প্রৌভিসেফ(মেডিসিন) আর স্পিট দিলো তারপর ছোট্ট একটা কাঁচির মাথায় গজ কাপড় নিয়ে ঘসা দিলো।আর মিষ্টু চিৎকার করে কাঁদছে আর ওকে ছেড়ে দিতে বলছে।মিষ্টুর সাথে কাঁদছে রাসেল,মুহিত আর ওর আম্মু….
মিষ্টুঃ ওহহ ভাইয়া আমি মরে যাবো ভাইয়া! আমি আর সহ্য করতে পারছি না ভাইয়া। আর পেটের মধ্যে জলে যাচ্ছে ভাইয়া। রাসেল আমার হাত ছাড়ো আমার খুব ব্যাথা পাচ্ছি প্লিজ আমার হাত ছাড়ো। (চিৎকার করে)
মুহিতঃ এই তো হয়ে গেছে বোন আর একটু!তুই তো আমার সাহসী বোন তাই না। (মিষ্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে)
আম্মুঃ হয়ে গেছে মা!আর একটু তোমার ভালো জন্যই আমরা এসব করছি মা ( কেঁদে কেঁদে)

রাসেলের কিছু বলার নাই ওর চোখ থেকে শুধু ঝরঝর করে পানি পড়ছে। ডাক্তার ড্রেসিং শেষ করতেই মিষ্টু সেন্স হারিয়ে ফেলে।রাসেল মিষ্টুর চোখে মুখে পানি ছিটা দেয় তারপর সেন্স ফেরায়।চিৎকারে করে কান্না করার কারনে কান্ত হয়ে পড়ছে।ডাক্তার আবার সেই কাটার ভেতরে গজ ঢুকিয়ে ব্যান্ডেজ করে আর মেডিসিন দিয়ে চলে যায়।

এভাবে ছয় দিন দুই বেলা করে ড্রেসিং করে! সেই সাথে মিষ্টুর আহাজারি কান্না আর আকুতি মিনতি।কাটা জায়গায় ড্রেসিং করার কারনে জায়গাটা শুকিয়ে উঠছে।ওদের কেবিনে দুইটা বেড আছে! রাসেল দুইটা বেডই এক করে দিয়েছে কারন রাতে যদি রাসেল ঘুমিয়েও পড়ে তাহলে যাতে টার্চ করে মিষ্টু রাসেলকে ডাকতে পারে।সেইদিন রাতে মুহিতদের রাসেল বাসায় পাঠিয়ে দেয়!তখন মিষ্টু ঘুমাচ্ছিলো আর সারাদিনের দৌড়াদৌড়ির কারনে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত দুইটার দিকে মিষ্টুর কেমন জানি লাগছে! রাসেলকে দুইবার ডাকছে বাট আস্তে ডাকার কারনে রাসেল শুনতে পায় নি।মিষ্টু রাসেলের গায়ে হাত দিতেই রাসেলের ঘুম ভেঙ্গে যায়!রাসেল তাড়াহুড়ো করে উঠি মিষ্টুকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে?কিছু হয়েছে কি না?কোন সমস্যা কি না???মিষ্টু রাসেলকে বলে…

মিষ্টুঃআমার পেটের মধ্যে কেমন জানি সুড়সুড়ি লাগছে..
রাসেলঃ সুড়সুড়ি লাগবে কেন??
মিষ্টুঃ মনে হচ্ছে কেউ পেটের মধ্যে সুড়সুড়ি দিচ্ছে..আমার খুব কাতুকুতু লাগছে।

রাসেল উঠে লাইট জালিয়ে মিষ্টুর পেটের দিকে তাকালো!সব তো ঠিকই আছে… রাসেলের কি জানি মনে হলো তাই আস্তে করে ব্যান্ডেজের একটা পাশে হাত দিতেই চমকে উঠলো…মিষ্টু শুয়ে থেকেই রাসেলকে জিজ্ঞাসা করলো

মিষ্টুঃ কি হয়েছে??
রাসেলঃ এখানে এত পিঁপড়া আসলো কই থেকে!এত কালো পিঁপড়া….
মিষ্টুঃ পিঁপড়া গুলো আমার পেট খেতে চলে এসেছে।তুমি,ভাইয়া,ডাক্তার,নার্স,মেডিসিন,ক্যানোলা,স্যালাইন,ইনজেকশন,ড্রেসিং এসব কষ্ট দিতে কম করছিলো তাই পিঁপড়াও এসে হাজির এখন…

প্রৌভিসেফ আর স্পিটে গন্ধ পিঁপড়া এসে হাজির।আর কালো পিপড়া দেওয়াল বেয়ে সিরিয়াল নেমে আসছে প্রৌভিসেফ আর স্পিটের গন্ধ পেয়ে।রাসেল অবাক হয়ে দেওয়ালে দিকে তাকিয়ে আছে।এই কাহিনী দেখে দুজনেই হেসে দিল….মাঝে মাঝে কষ্টের মাঝেও হাসি আছে।তারপর রাসেল বসে বসে সব পিঁপড়া গুলো মারলো।মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বললো…

মিষ্টুঃআমাকে একটু পানি দাও না। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে….
রাসেলঃ……..

রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে ওর স্যালাইন বন্ধ করে দিলো।তারপর প্রায় চারমিনিট পর বোতলের একটা খাপ নিলো।আর এক খাপ পানি ঢেলে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললো…
রাসেলঃ এর থেকে বেশি কিছু পানি তোমাকে দেওয়া যাবে না।তোমার ভালোর জন্য আমাকে কঠোর হতেই হবে এবার বলো একটুকু খাবে না নাকি..
মিষ্টুঃহুম হুম দাও দাও! একটুকুই তাও

রাসেল মিষ্টুর মুখে সেই এক খাপ পানি দিলো!যেখানে মিষ্টুর এক জগ পানির প্রয়োজন। মিষ্টু আলহামদুলিল্লাহ বলে সেই পানি টুকু খেয়ে তৃপ্তির হাসি দিলো।তারপর আর তিন মিনিট পর রাসেল স্যালাইনটা আবার অন করে দিলো।মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলছে…
মিষ্টুঃআমাকে কি তুমি পর করে দিতে চাচ্ছো??
রাসেলঃকেন? এটার মনে হলো কেন??
মিষ্টুঃকতদিন তোমার বুকে ঘুমায় নি…কতদিন জড়িয়ে
ধরি নি। এভাবে কি দিন দিন আমাকে ইগনোর করবে…
রাসেলঃ ওরে পাগলি রে তুমি ব্যাথা পাবে তাই তো জড়িয়ে ধরি না।তোমার পেটে টান লাগবে এজন্যই তো ধরি না।আর ইগনোর কেন করবো? তোমার মধ্যে আমার প্রান আছে তাহলে ইগনোর করে কেন??

তারপর রাসেল মিষ্টুর আরো কাছে গিয়ে কপালে, চোখে, গালে, আদর দিয়ে দেয় আর হালকা করে জড়িয়ে ধরে।আর এতে মিষ্টুর মুখে হাসি ফোটে…

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৯

ভালবাসা কথাটা যদিও খুব ছোট বাট এর দায়িত্ব অসীম।ভালবাসি ভালবাসি করলেই ভালবাসা হয় তা নয়! বিপদের সময় যে একে অপরের পাশে থাকবে! একজনের কষ্টের আরেকজন ছটফট করবে।রাসেলের প্রান মিষ্টু !তাই রাসেল জানে মিষ্টুর যাই হোক না কেন সে কখনো দুরে সরে যাবে না।মিষ্টু হয়তো ভাবছে তার এত বড় অপারেশনের জন্য ওকে রাসেল এখন ইগনোর করবে! এটা মিষ্টুর ভুল ধারনাও হতে পারে! এমনও হতে পারে রাসেল আরো বেশি করে ভালবাসবে এখন মিষ্টুকে…রাসেল তো মিষ্টুকে ভালবাসে মিষ্টুর শরীর কে নয়। তাহলে দুরে সরে যাওয়া বা ইগনোর করা কোন কথায় আসছে না এখানে….. রিয়েল ভালবাসা এতটাও ঠুনকো নয়।

পরেরদিন সকালবেলা…
ডাক্তার বলে মিষ্টু ভেতরের নালির সেলাই শুকিয়ে গেছে!এখন অপারেশন করে উপরের সেলাই করে দিতে হবে…এতদিন তো ফাঁকা ছিলো।সেটা দেখলে যে কেউ শিউরে উঠতো।ডাক্তার কথা গুলো বলছিলো!আজকেই মিষ্টুর শেষ ড্রেসিং।ডাক্তার ড্রেসিং করার জন্যই হাত বাড়াচ্ছিলো…তখন মিষ্টু ডাক্তার যা বললো তাতে সবাই হা করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে ছিলো…..

মিষ্টুঃ ডাক্তার আংকেল আপনি বসুন! আমি আমার পেট থেকে আগের গজ বের করছি!!!!!

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫১