স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৯

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৯
writer:Nurzahan akter (allo)

এবার রাসেল আরো ভয় লাগতে শুরু করে! কেন লাগবে না রক্ত? তাহলে কি সব শেষ??তাহলে কি মিষ্টু সত্যি সত্যি ওকে ফাকি দিলো?রাসেল চোখ পানি আর বাঁধা মানছে না!রাসেল দ্রুত হসপিটালে যায়..

রাসেল ওটির সামনে গিয়ে ছটফট করতে থাকে! মুহিত রাসেলকে বার বার শান্ত হতে বলে। বাট রাসেলের যেন দম আটকে আসছে।রাসেল দ্রুত অযু করে আর নফল নামাজ পড়ে আর আল্লাহ কাছে মিষ্টুকে চাই। মিষ্টু অপারেশনের প্রায় ৪ ঘন্টা হতে চললো তাও ডাক্তার না বের হচ্ছে না ওদের কোন খবর দিচ্ছে। মুহিত দেখলো মিতু দৌড়ে এসে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়!মুহিতের এবার অসহায় লাগছে, মুহিতও কান্না শুরু করে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুহিতঃ আমার মিষ্টি বোনটার কিছু হবে না!তোমরা কেউ কাঁদবে না প্লিজ। আমার বোনটা তো আমার চোখের পানি মোটেই পছন্দ করে না আমি কাঁদবো না।আমি জানি আমার বোন আবার আগের মত হয়ে যাবে।আমি কলিজাটার কিছু হবে না। (কেঁদে কেঁদে)

প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পরে…
ডাক্তারও বের হয় আর রাসেল এসে তখন দাঁড়ায়! রাসেল দেখে ডাক্তারের পুরো জামাতে রক্তে মাখামাখি। রাসেল উনার কাছে যায় আর করুন কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে মিষ্টুর এখন কেমন আছে…
ডাক্তারঃআমার লাইফে এমন রুগী দেখি নি! আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাকসেস ফুল। তবে এই মেয়েটা মনোবল শক্তি যথেষ্ট প্রখর।ইনশাআল্লাহ টেনশন করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে…তবে এত বড় অপারেশন কষ্ট তো করতেই হবে।
রাসেলঃআমরা একবার শুধু ওকে দেখবো!প্লিজ ডাক্তার… প্লিজ
ডাক্তারঃওকে!ওকে অঙ্গানের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। আর এটা তো ঘন্টার হিসেবে তাই কোন কথা না বলে শুধু দেখে চলে আসবেন।
রাসেলঃহুম হুম।

তারপর সবাই একে একে মিষ্টুকে দেখে আসে!মুখটা শুকিয়ে গেছে। রাসেল আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।রাসেলের মনে হচ্ছে নতুন একটা জীবন ফিরে পেয়েছে!এই কয়েটা ঘন্টা যা গেল এটা সারাজীবন জন্য সবার মনে গেথে গেছে!এই মারাত্মক কঠিন একটা সময় যেন কারো জীবনে না আসে।এভাবে যাতে কারো প্রিয়জনদের দেখতে না হয় কাউকে…

মিষ্টু তো জানেই না ওর কি হয়েছিলো?মিষ্টু সেন্স আসে আরো দুই ঘন্টা পর তখন ব্যাথাতে কেঁদে দেয়।নার্স দেখে দ্রুত ডাক্তার ডেকে আনে আর অবশ ছাড়ার ইনজেকশন আর ব্যাথার ইনজেকশন পুশ করে। তারপর মিষ্টুকে একটা কেবিনে রাখে…মিষ্টু একটা সময় ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।

রাসেল সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় জোর করে।মুহিত অনেক জোর করে রাসেলকে কিছু খাইয়ে তারপর গেছে। রাতে হুট করে মিষ্টুর ঘুম ভেঙে যায়। মিষ্টু তো পেটের ব্যাথাতে নড়তেও পারছে না। পাশে তাকিয়ে দেখে রাসেল মিষ্টুর হাত ধরে ঘুমাচ্ছে, রাসেল চোখের নিচে কালি পড়ছে, চোখ মুখ ফুলে আছে।মুখটা শুকিয়ে গেছে…মিষ্টু হাত নাড়াতেই পারছে না হাতে ক্যানেলা লাগানো! আর আলতো করে রাসেল সেই হাতটাই ধরে আছে।মিষ্টু পেটের মাঝখানে হাত দিয়ে ভাবছে….

মিষ্টুঃআমার তো পেট ফুটা করে অপারেশন করার কথা ছিলো তাহলে আমার পেট কাটলো কেন?আমার বাবু হবে তো। আমি কখনো মা হতে পারবো তো… (মনে মনে)

পরেরদিন সকাল থেকে মিষ্টু ব্যাথা তে কান্না করতেই আছে!ওর কষ্ট দেখে সবার চোখে পানি। আর মিষ্টুর তো মেশিন দিয়ে পেটের নাড়ি ভুড়ি ওয়াশ করার কারনে ওর বড্ড খুধা লাগছে! বাট ওকে খেতে দিচ্ছে না গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তাও এক ফোঁটা পানিও দিচ্ছে না।মিষ্টু কাঁদতে কাঁদতে ওর গলা বসে গেছে!হাতের ব্যাথাতেও হাত নাড়াতে পারছে না! নতুন করে পাঁচ জায়গায় সুচ ফুটানোর পর রগ পেয়েছে তারপর অন্য হাতে নতুন ক্যানোলা লাগিয়েছে…মিষ্টুর যেন এখন কষ্টের শেষ নেই।মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলছে??

মিষ্টুঃরাসেল আমাকে একটু পানি দাও রে!আমি গলা শুকিয়ে গেছে আমি না হলে মারা যাবো।আমাকে একটু কিছু খেতে দাও রে। খুধায় মরে যাবো রে প্লিজ একটু খেতে দাও আমাকে! আমি আর খুধা সহ্য করতে পারছি না।এত কষ্ট দিচ্ছো কেন আমাকে তোমরা?আমাকে প্লিজ সামান্য কিছু হলেও খেতে দাও…(করুন সুরে কাঁদছে আর বলছে)

রাসেল আর বসে থাকতো পারলো না বাইরে চলে আসলো আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।এমন ভাবে মিষ্টু খেতে চাচ্ছে তাও ওকে কিছু খেতে দিতে পারছে না।রাসেলের নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে এখন!আল্লাহ এই কোন পরিস্থিতি ফেললো তাদের। আর কত এভাবে মিষ্টু পাচ্ছে আর সেটা নিজের চোখে দেখতে হবে। রাসেলের মনে হচ্ছে বার বার ওকে কেউ বুকে ছুড়ির আঘাত করছে…মিষ্টুর আম্মু রাসেলের কাঁধে হাত রাখতে রাসেল উনার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।

আম্মুঃতুই কাঁদছিস কেন বোকা ছেলে?তোর ভালাবাসার জোরে তো আবার মিষ্টু আমাকে কাছে ফিরে এসেছে???সব ঠিক হয়ে যাবে তো।তুই যদি ভেঙ্গে পড়িস মিষ্টুর কি হবে ভেবে দেখেছিস?তোকে কাঁদতে দেখলে তো মিষ্টু আরো বেশি কষ্ট পাবে..(কেঁদে কেঁদে)
রাসেলঃ ও আম্মু আমার মিষ্টু কিছু খেতে চাচ্ছে বাট আমি কিছু ওরে খেতে দিতে পারছি না আম্মু।আমি যে ওর কষ্ট আর দেখতে পারছি না আম্মু! একফোঁটা পানির জন্য কত আকুতি মিনুতি করছে বাট আমি একফোঁটা পানিও ওরে দিতে পারছি না।আমার ভালবাসার মানুষটার এমন আহাজারি কি করে সহ্য করবো আমি?আমি আর পারছি না সহ্য করতে! ওর এক ফোঁটা রক্ত ঝড়লে আমার বুকে গিয়ে লাগে আর আজ আমার মিষ্টু পেটে কতখানি কাটা হয়েছে! কত কষ্ট পাচ্ছে আমি যে এসব নিজের চোখে আর মানতে পারছি আম্মু….. আজকে আমি ওর পাশে থেকে ওর কষ্ট দূর করতে পারছি না আম্মু। আমার কলিজাটা এক ফোটা পানির জন্য এত আকুতি মিনতি আমি আর এসব মানতে পারছি না আম্মু!জীবনে আর কত কষ্ট সহ্য করবো আমি….আর কত ত্যাগ করলে আমি একটু সুখের দেখা পাবো… (চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে)

এখন যদি মিষ্টুকে একটু খাবার বা পানি দেওয়ার হয় হিতে বিপরীত হবে। কারন ওর সদ্য অপারেশন করা হয়েছে! ওকে কিছুতেই পানি দেওয়া যাবে না।এখন ওর শরীরে শুধু স্যালাইন দেওয়া হবে আর ইনজেকশন পুশ করা হবে।আর স্যালাইনের মধ্যেই ওর শরীরে খাবারের অভাব দূর হবে।রাসেল চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার মিষ্টুর কাছে গেল।তারপর মুখের হাসির রেখা টেনে বললো…

রাসেলঃ আচ্ছা মিষ্টু তুমি কি পেটে আঘাত পেয়েছিলো এর আগে??
মিষ্টুঃহুমমম! একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলাম উপুর হয়ে।তুমি বকবে বলে তোমাকে জানাই নি…সেদিন খুব ব্যাথা পেয়েছিলাম। (আস্তে করে বললো)
রাসেলঃ এটা কি ঠিক করছো বলো?আচ্ছা তুমি কি এই কয়েকদিনের মধ্যে বেশি পাওয়ারের কোন মেডিসিন খেয়েছিলো?মনে করো তো… (মিষ্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে)
মিষ্টুঃ আমি তো টাইফয়েডের মেডিসিন ছাড়া কোন মেডিসিন খাই নি।তবে..
রাসেলঃতবে কি বলো??আমি একটুও বকবো না প্রমিস সোনা বলো।
মিষ্টুঃআমার একা একা ভাত খেতে ভালো লাগতো না!আর উঠতে ইচ্ছে করতো নাই তাই আমি ভাবতাম আগে মেডিসিন খায় পরে কিছু খেয়ে নিবো। বাট পরে কিছু খেতে ইচ্ছে করতো না বা খেতাম না।
রাসেলঃতারমানে তুমি খালি পেটে মেডিসিন নিতে??(অবাক হয়ে)
মিষ্টুঃহুমম!কেন তাতে কি হয়েছে??এই কথা জিজ্ঞাসা করলে কেন??আর আমার পেট কাটলো কেন?
রাসেলঃ এমনি জানতে চাইলাম!আসলে তুমি পড়ে গিয়ে ছিলো পেটে আঘাত পেয়ে রক্ত জমে ছিলো সেটাই পেট কেটে বের করে ফেলা হয়েছে??
মিষ্টুঃআমি একটু খেতে দাও না কিছু? আমি কাউকে বলবো না.প্লিজ আমাকে খেতে দাও না…চুপিচুপি খাবো কেউ দেখবে না। ডাক্তারও জানবে না… দাও না রে..
রাসেলঃতুমি যদি খেতে চাও তাহলে আমি তোমার সামনে আসবো না।আমি ঢাকায় চলে যাবো।
মিষ্টুঃআমি বুঝে গেছি!তোমরা ছেলেরা সত্যি মেয়েদের শরীরের পাগল।এখন আমার পেট কাটা আমাকে তো ভালো লাগবে না।আমি তো খারাপ দেখতে হয়ে গেছি। আমাকে তো আর ভালোবাসবে না।আমার মরে যাওয়াই উচিত উচিত… (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে)
রাসেলঃকাদে না সোনা!পেটে ব্যাথা লাগবে তো! আর আমার প্রাণ টা রেখে আমি তো নিজেই থাকতে পারবো না। (মিষ্টুর চোখের পানি মুছে)
মিষ্টুঃতাহলে বললে কেন? জানি আমাকে এবার থেকে ইগনোর করবে??যদিও করাটাও আনকমন কিছু না…এখন তো আগে মত ফিগারও থাকবে না আমার।
রাসেলঃবলা শেষ!ভালবাসি রে পাগলি বড্ড বেশি ভালবাসি তোকে! তোর ফিগার না তোরে চাই আমার।তোকে ছাড়া আমি নিজেই বাঁচবো না…( ছলছল চোখে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃ আচ্ছা আমি আর তোমার থেকে খেতে চাইবো না!তাও প্লিজ তুমি যেও না..আসলে সত্যি বড্ড খুধা লাগছে আমার.. (করুন সুরে)
রাসেলঃ এই তো খাবারের স্যালাইন চলছে তো!আর খুধা লাগবে না।না রে সোনা আমি কোথাও যাবো না?আমি আছি তো..তোমার পাশে (কপালে আদর দিয়ে)
মিষ্টুঃকে বলছে খাবারের স্যালাইন চললে খুধা লাগে না!ওরে ধরে আনো ওরে মেতে পুঁতে ফেলবো আমি।

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৮

রাসেল এত এত গল্প করছে তাও মিষ্টু ছটফটানি কমছে না।একদিকে অসহ্য কর ব্যাথা আর অন্যদিকে খুধা। সেইদিন রাতে মিষ্টুর জর আসে প্রচন্ড জর!ডাক্তার মিষ্টুর জর মেপে দেখে ১০৩”। ডাক্তার রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলছে…

ডাক্তারঃ রাসেল সাহেব রুগীর অবস্থা ভালো না।এখন তো দেখছি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে.. জর বাড়লে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে…
রাসেলঃএখন কি করা যায়?যা করা লাগে আপনি তাই করুন প্লিজ
ডাক্তারঃরুগীতে এক সপ্তাহ ইনজেকশন পুশ করতে হবে।আর একটা ইন্জেকশন ৪ হাজার ৭০০ করে দাম পড়বে।অনেকের এই চিকিৎসার করাতে পারে না কারন এটা প্রচুর ব্যায় বহুল চিকিৎসা…
রাসেরঃআপনাকে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না!আপনি শুধু ওর সুস্থতার জন্য কি করতে হবে?কি আনতে হবে?সেটা বলুন…
ডাক্তারঃআসলে অপারেশন রুগী জর আসাটা মোটেও ভাল কিছু ইঙ্গিত নয়!কারন জরটা হচ্ছে বড় রোগ হওয়ার আগাম সংকেত! আর রুগী তে কম কষ্ট সহ্য করছে না।ওরে প্রতিদিন দুইটা করে ইনজেকশন দিতে হবে! সাত হাজার পাওয়ারের এই ইনজেকশন টা।আর এটাই আমার লাষ্ট চিকিৎসার এটাতে যদি না কমে তো আমার হাতে আর কিছু করার থাকবে না।এই ইনজেকশন গুলো ইমিডিয়েট আনার ব্যবসথা করুন….

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫০