স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৮

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৮
writer:Nurzahan akter (allo)

তবে শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকে মিষ্টুর জর আর বমি….রাসেল বাসায় ফিরে মিষ্টুকে এভাবে শুয়ে থাকা দেখে কেমন সন্দেহ হলো তাই মিষ্টুর কপালে হাত দিলো! আর হাত দিয়েই চমকে উঠলে…

রাসেল মিষ্টুকে হসপিটালে নিয়ে গেল তারপর ডাক্তার দেখলো!তারপর মিষ্টুকে বেশ কয়েক প্রকার টেস্ট করালো আর জানতে পারলো মিষ্টুর টাইফয়েড হয়েছে তারপর মিষ্টুকে মেডিসিন দিলো।রাসেল মিষ্টুকে খুব দেখাশোনা করে… মুহিত আর ওর আম্মু ওকে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো বাট মিষ্টু যায়নি।কারন তার পাগলটা যে তাকে ছাড়া এক দন্ডও থাকতে পারে না….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আগের থেকে মিষ্টু এখন অনেকটাই সুস্থ! রাসেল আজকে একটু বিজি থাকায় দুপুরে আসতে পারে নি তাই মিষ্টু কে দুপুরে লাঞ্চ সেরে মেডিসিন নিতে বলছে।মিষ্টু মেডিসিন দেখলেই বমি পাচ্ছে,,,, তাই কোন রকম মেডিসিন নিয়ে শুয়ে থাকলো।এভাবে বেশ কয়েকদিন রাসেল বিজি থাকায় মিষ্টু মন খারাপ করে আর একা একাই খায় আর শুয়ে থাকে….এভাবে চারদিন চলে যায়।

পরের দিন সকালে..
মিষ্টুর পেট ব্যাথা নিয়ে সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না।গ্যাসট্রিকের ব্যাথা মনে করে মেডিসিন নেয় বাট তাও কমে না!জর,বমি আর পেটে ব্যাথা…আর ব্যাথাটা সহ্য করাও আর যাচ্ছে না!রাসেল অফিসে ছিলো কাজ করছিলো মিষ্টু রাসেলকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওর খুব পেটে ব্যাথা করছে!মিষ্টুর এভাবে কান্না করা দেখে রাসেল দ্রুত বাসায় চলে আসে এসে দেখে মিষ্টু বমি করে একাকার অবস্থা। রাসেল আর কোন কিছু না ভেবে হসপিটালে নিয়ে আসে! কারন মিষ্টুর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,,

ডাক্তার খুব দ্রুত টেস্ট করে আর রাসেল ডেকে বলে মিষ্টুর পেটে হয়তো কোন আঘাত পেয়েছিলো!আর সেই আঘাতেই রক্ত জাতীয় কিছু জমে আছে বাট কি সেটা বোঝা যাচ্ছে না!তবে ডাক্তার রা টিবি রোগ বলে ধারণা করছে।ডাক্তার রাসেলকে বলে পেট না কেটেও এক সাইডে ফুটা অপারেশন করে দেখবে আসলে সেই জিনিসটা কি,ডাক্তারদের ধারনা ওই রক্তটার কারনে মিষ্টুর পেটে ব্যাথা…।রাসেল তো মিষ্টুর এমন অবস্থা দেখে পাগল প্রায় অবস্থা!ডাক্তার রাসেলকে বলে অপারেশন করতে বলে তাও যত দ্রুত সম্ভব হয়।রাসেল মুহিত কে ফোন দিয়ে বলে….মুহিত তো এটা শুনে ওর জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম!মুহিত আর ওর আম্মু হসপিটালে চলে আসে….

রাসেলের মনে
কেন জানি অজানা একটা ভয় কাজ করছে মনের ভেতর!মিষ্টুকে যখন ওটি নিয়ে যায় তখন রাসেল হাত শক্ত করে ধরে বার বার বলছিলো…
মিষ্টুঃআমি যাবো না!আমাকে যেতে দিও না রাসেল আমি মারা যাবো মনে হয়! আমি আর বাঁচবো না…রাসেল প্লিজ আমার হাতটা ধরে রাখো শক্ত করে… ও ভাইয়া ওদের মানা করো ভাইয়া আমার খুব ভয় লাগছে আমি যাবো না ওটিতে!ওহ আম্মু ওদের বলো না আমার ভয় করছে… (কেঁদে কেঁদে)
রাসেলঃধুর বোকা কিছু হবে না!আমরা সবাই আছি তো। (গলা ধরে আসছে কান্নায়)
মুহিতঃছোট্ট অপারেশন বোন কিছু হবে না।এত ভয় কিসের তুই না আমার সাহসী বোন।
আম্মুঃ কাঁদে না মা সব ঠিক হয়ে তো!কিসের ভয় আমরা সবাই আছি তো…(কেঁদে কেঁদে)

রাসেল মিষ্টুকে কি বলবো বুঝতে পারছে না!নার্স রা মিষ্টুকে ওটিতে চলে যায়।রাসেল উল্টো ঘুরে বার বার ওর চোখের পানি আড়াল করছে!মুহিত রাসেল কাঁধে হাত রাখতেই রাসেল মুহিতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে!মুহিত কি করবে বুঝতে পারছে না কারন ওর কলিজার টুকরো বোন ওটি নিজেকে সামলাবে,নাকি ওর আম্মুকে সামলাবে নাকি রাসেলকে।রাসেল অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে ই যাচ্ছে….

১ ঘন্টা পর…
হঠাৎ ডাক্তার হন্তদন্ত হয়ে রাসেল আর মুহিতকে ডেকে মুখ কাচুমাচু করে বললো..
ডাক্তারঃ আমরা এক অপারেশনের জন্য রুগীকে ওটি নিয়ে গেছি বাট রুগীর তো অন্য রোগ হয়েছে।এখন আমরা কি করবো তাই বুঝতেছি না?? (মুখ কাচুমাচু করে)
রাসেলঃ কি হয়েছে বলবেন তো?আমার মিষ্টু ঠিক আছে তো (উতলা হয়ে)
মুহিতঃ ডাক্তার কি হয়েছে?? এভাবে চুপ করে থাকবেন না প্লিজ…
ডাক্তারঃআসুন আমার সাথে…

রাসেলের বুক কাপছে কারন মিষ্টুই এখন ওর বাঁচার অবলম্বন!এখন যদি মিষ্টুর যদি কিছু হয়ে যাই রাসেল আর ওর বাঁচার আশায় ছেড়ে দিবে।রাসেল আর মুহিত ওটিতে ডুকলো আর গিয়ে দেখলে মিষ্টুকে ওটির ড্রেস পরানো হয়েছে আর ও নিষ্পাপ শিশুর মত ঘুমাচ্ছে। মিষ্টু দুই হাত বাঁধা! রাসেল এতক্ষণ মিষ্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর ডাক্তারের দিকে তাকাতেই মিষ্ট রাসেল দম আটকে যায় কারন মিষ্টুর পেটের ভেতরে যত যা নাড়ি ভুড়ি ছিলো সেগুলো মিষ্টুর বুকের উপর পালা দেওয়া….রাসেল সাথে সাথে সেন্স হারায় ওখানে। কারন এমন দৃশ্য দেখবে সেটা রাসেল কল্পনাও করে নি…

বেশ কিছুক্ষণ পরে রাসেলের সেন্স ফিরে আর দৌড় আবার ওটির ভেতরে ঢুকে পড়ে।ডাক্তার ঘাবড়ে গেছে রাসেল ডাক্তারের পাশে দাড়ায় তখন ডাক্তার একটা নাড়ি দেখায় আর বলে…
ডাক্তার আপনার ওয়াইফের খাদ্য নালি ফুটা হয়ে গেছে।আমরা ভাবছিলাম টিবি হয়েছে এজন্য ফুটা করে অপারেশন করতে চেয়েছিলো।অনেক ট্রাই করছি ফুটা করে অপারেশন টা করতে বাট না পেরে পেট কাটি আর পেট কেটেই দেখি এই অবস্থা? আর একটা নালিই পাঁচ জায়গায় ফুটা হয়েছে।এর কারন হতে পারে বেশি পাওয়ারের এমন কিছু খেয়েছিলো যার কারন এমন ভাবে নালি ফুটা হয়ে গেছে। আর পুটো পেটে মল ছাড়িয়ে পড়ছে যার কারন এত পেটে ব্যাথা।পেট অনেকটা ফুলেও গিয়েছিলো যদি দ্রুত হসপিটালে না আনতেন রুগী আর বাঁচানো যেতো না!কারন রুগী পেটের অবস্থা খুব খারাপ আর আমরা রুগিকে অন্য হসপিটাল রেফাড করছি…
রাসেলঃকেন?রেফাড করলে তাহলে কি আপনি যাবেন সাথে?(শান্ত গলায়)
ডাক্তারঃনা আমি যাবো না তবে ফোন করে বলে দিচ্ছি।যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে তারা..
রাসেলঃনা! তাহলে আমিও আমার ওয়াইফ কে কোথাও নিয়ে যেতে দিবো না।(শান্ত গলায়)
ডাক্তারঃকেন???
রাসেলঃকারণ এমন পেট কাটা অবস্থায় যদি অন্য হসপিটালে নিয়ে যায় তাহলে কেউ সহসে হাত দিতে চাইবে না। কারন এক ডাক্তারের কাছের এই অবস্থার রুগী অন্য ডাক্তার সহজে গুরুত্ব দিতে চাই না।আপনি যদি অপারেশন টা না পারতেন তাহলে কেন কাটলেন?আপনি না পারলে বলে দিতেন!আপনি এখন কেটে কুটে বলবেন অন্য কোথাও রেফাড করবেন তাহলে আমি মানবো না…
ডাক্তারঃআমাদের কাছে এখন ডাক্তার নাই!এজন্য রেফাড করতে চাচ্ছি..
রাসেলঃযেখানে থেকে পারেন ডাক্তার নিয়ে আসেন তাও আমি এভাবে রুগী নিয়ে না কোথাও যাবো আর না আপনাকে যেতে দিবো…।যত টাকা লাগে লাগুক তাও ডাক্তার আনার ব্যবসথা করুন।

রাসেল ডাক্তার কথা বলার মাঝখানে মিষ্টু হুট করে জেগে উঠে আর বলে
মিষ্টুঃআমি কথা বলবো? আমি রাসেলের কাছে যাবো।
ডাক্তার সাথে সাথে নার্সকে বলে মিষ্টুর মুখে অক্সিজেন চেপে ধরতে।নার্স তাই করলো আর মিষ্টু আবার ঘুমিয়ে পড়লো।রাসেল ঠোঁট কামড়ে ধরে ওর কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছে! রাসেল মিষ্টুর কাছে যায় আর মিষ্টুর কপালে আদর দিয়ে বলে।
রাসেলঃআমি আছি তো পাগলি!কিছু হবে না তোর।ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের সহায় হবে।তোর কিছু হলে আমিই তো মারা যাবো…(কপালে কপাল ঠেকিয়ে)
ওদের দেখে ডাক্তার আর নার্সের চোখে পানি!কারন এই প্রথম ওরা এমন একটা ঘটনা দেখলো।যে পেট ফাকা অবস্থায় কোন অঙ্গান করা রুগি এভাবে জেগে উঠে তার প্রিয় মানুষ টাকে খুঁজতে পারে।

রাসেল এমন কঠিন পরিস্থিতি তে বুঝে গেছে যে ওর মাথা ঠান্ডা করতে হবে। ডাক্তার এখন উনার দায় এড়ানোর জন্যই মিষ্টুকে অন্য হসপিটালে রেফাড করতে চাচ্ছে। আর এখন একটা ভুল পদক্ষেপেই মিষ্টুকে ওর হারাতে হবে…তারপর ডাক্তার আরো পাঁচজন ডাক্তার আনলো তারপর আবার অপারেশন শুরু করলো আর রাসেলকে বললো রক্তের ব্যবসথা করতে!মুহিত গেছে মেডিসিন আনতে, আর ওর আম্মুের প্রেশার বেড়ে গেছে তাই উনাকে পাশে কেবিনে এডমিট করা হয়েছে। মুহিত ফোনটাও ধরছে না।একদিকে রাসেল জানে না মিষ্টুর রক্ত কি গ্রুপের?এখন এক একটা সময় অনেক দামী তাই রাসেল আর বসে না থেকে মিষ্টুর রক্ত নিয়ে রাসেল বেরিয়ে পড়লো ব্ল্যাড ব্যাংকের দিকে তারপর মিষ্টুর রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারলো মিষ্টুর রক্তের গ্রুপ A+.

রাসেল ব্ল্যাড ব্যাংকের সামনে গিয়ে দেখলো ইয়া বড় লম্বা লাইন!এখন কি করবে?রাসেল অনেক কষ্টে সামনে এগিয়ে গেল আর রক্ত চাইলো বাট উনার রাসেলকে না করে দিলো।কারন শত মত মানুষ দাড়িয়ে আছে রক্তের জন্য!এবার কি করবো রাসেল?ওখানেই বসে পড়লো! রাসেলের হাত অনবরত কাঁপছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। রাসেল ওর চুল খামছে ধরে মনে প্রানে আল্লাহকে ডাকছে যাতে মিষ্টুর কিছু না হয়।

হুট করে রাসেলের মনে পড়ে যে ওর তো সেইম গ্রুপের রক্ত! রাসেল ব্ল্যাড ব্যাংকের ভেতরে যায় আর একজন নার্সকে বলে যাতে ওর শরীর থেকে রক্ত নেয়!নার্স তো রাসেলকে দেখে বলে এখন রাসেলের শরীর থেকে কিছুতেই রক্ত নেওয়ার যাবে না কারন রাসেল তখন অতিরিক্ত টেনশনে ছিলো।রাসেল অনেক বার রিকুয়েস্ট করার পর নার্স টা বললো এক ব্যাগ রক্ত নিবে তবে রাসেলকে আগে কিছু খেয়ে নিতে তারপর রক্তটা নিবে।

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৭

রাসেলের তো গলা দিয়ে কিছু নামছে না!রাসেল কিছু খাবার কিনে বসলো আর খাবার দেখে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো…
রাসেলঃআমার কলিজাটা ওটি তে পড়ে আছে আর আমি কি করে এখানে খাবার খাবো?আমার গলা দিয়ে যে কিছু নামছে না।আমার কলিজাটা আমার হাতে ছাড়া তো খেতেই চাই না।আল্লাহ একোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো ওকে!আমি পারবো না আমার মিষ্টুটাকে ছাড়া বাঁচতে! হে আল্লাহ আমাকে তুমি মেরে ফেলো তাও আমার মিষ্টুকে বাঁচিয়ে রাখো।আমার মিষ্টুর থেকে আলাদা করে দিও না!আমি যে পারবো না একা চলতে।
আমি যে ওরে ছাড়া বাচতেও পারবো না আমার যে ওরে ছাড়া দম বন্দ হয়ে আছে… (দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে)

অনেক কষ্টে কিছু খেয়ে নিলো রাসেল!তারপর রাসেলের থেকে রক্ত নেয়!নার্স রাসেল হাতের তালুতে একটা জিনিস দিয়ে বলে ওটাতে ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে!বাট রাসেল অতি দ্রুত ওটা চাপতে থাকে ৪ মিনিটেই ব্যাগ ভরে যায় রক্তে।এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব ওর যে হসপিটালে যাওয়া দরকার।রাসেল উঠে বসতেই ওর মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে আর তারাতারি বসে পড়ে বেড়ে।তারপর একটু রেস্ট নিয়ে রক্ত নিয়ে একটা রিকশা করে হসপিটালে যায় বাট মাঝ রাস্তাতে মুহিত ফোন দিয়ে বলে…
মুহিতঃ রক্ত আর লাগবে না…….
এবার রাসেল আরো ভয় লাগতে শুরু করে! কেন লাগবে না রক্ত? তাহলে কি সব শেষ??তাহলে কি মিষ্টু সত্যি সত্যি ওকে ফাকি দিলো??????

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৯