স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৭

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৭
writer:Nurzahan akter (allo)

রাসেলঃহুমম বুঝলাম!বাট এখন তো তোমার হাতের কাটতে হবে এখন!সো তারাতারি উঠো…
মিষ্টুঃকেন? নখ কাটবো কেন?(ঘুম ঘুম কন্ঠে)
রাসেলঃকারণ কালকে রাতে আমার পিঠের অবস্থা খারাপ করে ফেলছো। এত বড় বড় নখ থাকলে আমি শেষ….. হা হা হা (মিষ্টুকে জড়িয়ে ধরে)
মিষ্টুঃঅসভ্য একটা..

তারপর দুজন উঠে আর ব্রেক ফাস্ট করে নেয়!মিষ্টু ওর আম্মুর সাথে কথা বলে নেয়!রাসেল মিষ্টুকে ওর বাসায় জানাতে নিষেধ করছে যে রাসেল চোট পেয়েছে!আজকে মিষ্টুদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো বাট রাসেল এভাবে গেলে ওরা টেনশন করবে তাই যায় নি।আজকে রাসেল অফিসেও যায় নি…সারাটা দিন বাসায় ছিলো।সাথে ওদের খুনশুটি আর দুষ্টুমিতেই দিনটা কাটলো লাগলো…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিকেল বেলা বকুল, রাত্রি,মিতু, জয়,আর আয়ান, শুভ্র আসে মিষ্টুদের বাসায়। রাসেল তখন মিষ্টুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলো আর মিষ্টু রাসেলের চুল টেনে দিচ্ছিলো।ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠলো!রাসেল বিরক্ত মুখে বললো…

রাসেলঃধুররর!এই সময় আবার কে এলো?আমার বউটা কত যত্ন করে আমার চুল টেনে দিচ্ছে! না জানি কে আবার কাবাবের হাড্ডি হয়ে আসলো।আর একটু পর আসলে কি এমন ক্ষতি হতো… (অভিমানি কন্ঠে)
মিষ্টুঃহা হা হা!থাক আর রাগ দেখাতে হবে না।তুমি থাকো দেখি আসি কেমন।
রাসেলঃহুমমম!ধুররর (বিরক্তিকর সুরে)

মিষ্টু দরজা খুলতেই ওদের দেখে অবাক হয়ে যায়।তারপর সবাই ড্রয়িংরুমে বসে মিষ্টু বেড রুমে গিয়ে রাসেলকে একটা হালকা আকাশি কালারে গেন্জী পড়িয়ে দেয় কারন রাসেল হাত নাড়াতে পারছে না।তারপর দুজনেই এসে ড্রয়িং রুমে বসে!রাসেলকে এভাবে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে….ওর হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে….।জয় তো রাসেলকে দেখে এক দৌড়ে আগে বেড রুমে গিয়ে বেড চেক করে আসলো…তারপর তো মুখ ফসকে বলেই ফেললো।

জয়ঃ আচ্ছা বেড তো ভাঙ্গেনি তাহলে তুই এভাবে চোট পেলি কি করে বলতো?আমি ভাবছিলাম এসে দেখবে তোর বেড ভেঙ্গে পড়ে আছে…এত তো দেখি সবই ঠিক আছে তাহলে কেমনে কি হলো বলতো??
শুভ্রঃতোরা কি কালকে মারামারি করছিলি নাকি?আচ্ছা রাসেল মিষ্টু তোকে এভাবে মারে নি তো??
রাসেলঃ কি পাগলের মত বকছিস ভাই??
আয়ানঃআসল কাহিনী কি বলতো ভাই?কালকে আসার সময় কি চোট পেয়েছিলি নাকি???
রাসেলঃআরে না? এসব বাদ দে…পরে সব বলবো..
বকুলঃতারপর বলো কালকে যুদ্ধ কেমন করলে?
মিষ্টুঃজিজু তুমি আর আপু যেমন করেছিলে তেমনই…(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
বকুলঃ উহুম উহুম (কাশি দিয়ে)
মিষ্টুঃতোমাদের বাসার রাতে আমি তো ফোন দিয়েছিলাম!ভাইয়া তুমি তো বললে আপু ঘুমাচ্ছে!তুমি তখন ফোন ধরেছিলে আ..র
রাত্রিঃথাক থাক আর মুখ খুলিস না বোন!আমরা আর কিছু বলছি না… বুঝে গেছি কিছু বললে উল্টো বাঁশ ধেড়ে আসবে আমাদের দিকে…আমরা আর কিছু জিজ্ঞাসা করবো না…
বকুলঃওটাই ভালো হবে।হা হা হা
রাসেলঃহা হা হা হা! তোমরা সবাই মিষ্টুর কাছেই কাবু…

তারপর সবাই সেই জমপেশ আড্ডা দিলো খাওয়া -দাওয়াত করলো তারপর সবাই চলে গেল।ওরা চলে গেল আর মিষ্টু দুম করে গিয়ে রাসেলের কোলে বসে পড়লো আর রাসেলের গলা জড়িয়ে ধরে আর আদুরে সুরে বলে যে…

মিষ্টুঃআমি আর পড়াশোনা করবো না!এত পড়ে কি হবে বলো?? বাচ্চাকে ও আ মুরগির ঠ্যাং শিখাতে পারলেই তো হলো… তাই আমি আর পড়বো না (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
রাসেলঃ জি না! আপনি রেগুলার কলেজ যাবেন আর পড়াশোনাতে কোন ফাঁকিবাজি না।আমি এই কথা শুনবো না ম্যম… পড়াশোনাতে কোন ফাঁকি আমি মোটেও এলাও করবো না।
মিষ্টুঃছাতার মাথা দুই সাবজেক্টে কম নাম্বার পেয়েছি
?আমার আর ইচ্ছে করছে না ওই প্যারা বয়ে বেড়াতে….প্লিজ আমি আর আর পড়াশোনা করবো না!আমি ভাল বউ হতে চাই…
রাসেলঃ তুমি এমনিতেই ভাল আমার বউ! পড়াশোনাতে মন দাও!এসব ফাঁকিবাজি আমার কাছে চলবে না। বুঝলেন…(মিষ্টুর কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিতে দিতে)
মিষ্টুঃপারুম না আমি পড়াশোনা করতে এখন একটা বাবু নিবো আর মন দিয়ে সংসার করবো।বর আর বাবু নিয়া উরাধুরা সংসার করবো..( আদুরে গলায়)
রাসেলঃ এখন কোন বাবু টাবু হবে না!নিজে পিচ্চি একটা মেয়ে আর এসেছে বাবু নিতে…!(মিষ্টুর গাল টেনে)

এবার মিষ্টু রাসেলের চুল ধরে দুইহাত মুঠো করে ধরে টানতে থাকে!রাসেলে কোন রকম মিষ্টুর থেকে চুল ছাড়িয়ে মিষ্টুকে বেডের সাথে চেপে ধরে আর মিষ্টুর গলাতে কামড় বসায় পর পর পাঁচটা। আর বেচারা মিষ্টু অসহায় বিড়াল ছানার মত রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে..

মিষ্টুঃআর করবো না! তাও এভাবে খাটাশের মত কামড়িও না রে,,,ভ্য ভ্য
রাসেলঃআর চুল টানবে!আমার এত সুন্দর চুল গুলোর উপর হামলা করো কেন তাহলে?আজকে কত চুল তুলে ফেলছো দেখো!
মিষ্টুঃহ! আর দুই দিয়ে চুল টানবো না।এক হাত দিয়া
টানবো…
রাসেলঃ তাই না…. (আরেকটা কামড় বসায়)।
মিষ্টুঃআহহ্!মা গো মা এই কোন ভ্যামপায়ারের হাতে আমাকে তুলে দিলে।আমাকে কামড়ে শেষ করে দিলো..ওরে কেউ আমারে বাঁচাও রে…
রাসেলঃ কি বললে আমি কি?এবার থেকে দুষ্টুমি করবে তো এরকম রোমান্টিক থেরাপি দিবো।আর কই কামড়ালাম এভাবে চিৎকার করছো কেন?এটা কেবল শুরু ম্যম.. (দুষ্টু হেসে)
মিষ্টুঃএটা রোমান্টিকতা!কোন দেশের মানুষ এভাবে রোমাঞ্চ করে শুনি?? (দাঁতে দাঁত চেপে)
রাসেলঃ যে সব ছেলেদের ভাগ্যতে তোমার মত দুষ্টু বউ পায়!সেই সব রুমেই এমন থেরাপি দেওয়া হয় বুঝলে।এসব তুমি বুঝবে না….
মিষ্টুঃএমন রোমাঞ্চের মায়েরে বাপ। মা গো মা কি
জলছে…দাগ বসে গেছে রে।ওরে কেউ এই হারপিকের সুপ করে খাওয়ারে যাতে এর দাঁত গুলো পড়ে যায়।
রাসেলঃ তাই না!দাঁড়াও জালা কমিয়ে দিচ্ছি বউ! (গলায় লিক করে)
তারপর…তারপর….তারপর….

এভাবে ওদের খুনশুটি দিন চলতে থাকে!রাসেল ওর অফিস আর মিষ্টুকে নিয়ে ভালোই দিন কাটাতে থাকে।মিষ্টু রাসেলের বাবাকে ফোন দেয় খোঁজ নেওয়া জন্য! রাসেলের বাবা জানায় যে রাসেলের আম্মু ওরই বিজনেস পাটনারের সাথে চলে গেছে।মিষ্টু কি বলবে বুঝতে পারছে না?তবে রাসেলের বাবার সাথে কথা বলে বুঝলো যে,রাসেলের বাবার কোন আপসোস নেই!বরং ভালোই হয়েছে।কারন ওই মহিলা থেকেও উনি কোনদিন কারো খোঁজ নেয় নি,,,নিজেকে নিয়ে সবসময় বিজি থেকেছে…

রাসেল এটা জানার পর কোন রিয়েক্টই করে নি!তাই মিষ্টুও ওরে আর এই বিষয়ে কিছু বলে নি।মিষ্টু বাবার বাড়ি,কলেজ,নিজের সংসার, আর রাসেলকে নিয়ে দিন ভালোই দিন কাটছে।আজকে মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুকে বলছে মুহিতের জন্য মেয়ে দেখতে এবার মুহিতের বিয়েটাও দিয়ে দেওয়া উচিত।মিষ্টু আর ওর আম্মু কথা অনেকটা সময় পর কথা শেষ করে ফোন রাখে….মিষ্টুর এখন পরীক্ষা এজন্য এই বিষয়টাতে গুরুত্ব দিলো না।পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর না হয় উঠে পড়ে লাগবে..

কালকে থেকে মিষ্টুর পরীক্ষা তাই মিষ্টুর কোন হুশ নাই!সারাবছর পড়ে নি এখন খাওয়া -দাওয়া ছেড়ে ধুমাইয়া পড়ছে।রাসেল ওকে জোর করে খাইয়ে দেয়, ঘুম পাড়িয়ে দেয়।মিষ্টুর রাত জেগে পড়াশোনা করে আর রাসেল ওর পাশে বসে থাকে। কফি করে এনে দেয়, চেয়ারের সাথে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে পড়তে বলে,আবার কখন চুলে তেল দিয়ে দেয়, চিরুনি করে দেয়,চুল বেধে দেয়।রাসেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১ বাজে!রাসেল মিষ্টুকে কোলে তুলে নেয়…

রাসেলঃআর পড়তে হবে না!এখন একটু ঘুমাও…
মিষ্টুঃআর একটু! তুমি ঘুমাও আমি একটু পর ঘুমাবো..
রাসেলঃনা আর পড়তে হবে না। আজকে এত পড়তে হবে না কারন পরীক্ষা আগের দিন রাতে পড়তে হয় না।এখন একটা ঘুম দাও আর ব্রেনকে ঠান্ডা রাখো…(বইটা কেড়ে পাশে রেখে দেয়)
মিষ্টুঃহুমম! তাহলে আমার একটা শর্ত আছে..
রাসেলঃকি শর্ত শুনি??? (জড়িয়ে ধরে)
মিষ্টুঃ ঠোঁট খাবো! বেশি না অল্প একটু…
রাসেলঃওহহহ! কি খাবে???????
মিষ্টুঃহএকটু ঠোঁট খাবো আর কি ! বেশি খাবো না পাঁচ টাকার খাবো শুধু?
রাসেলঃ ঠোঁট কি করে খায়?আমি তো জানি না..এটা কেমন খেতে শুনি।আমি পাঁচ টাকা খেতে দেয় না…খেলে কোটি টাকার খেতে হবে…(দুষ্টু হেসে)
মিষ্টঃ হুমমম!আমি জানি কেমনে খায়!এমনে খায় (ঠোঁটে ঠোঁট রেখে)

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৬

পরেরদিন সকালে…
রাসেল মিষ্টুকে নিয়ে ওর কলেজে যায়!মিতু আর মিষ্টু দুইজনের সীট দুই রুমে এজন্য দুজনেরই চিন্তাতে মুখটা শুকিয়ে গেছে!রাসেলে দুই জনের দিকে দুইটা জুসের বোতল এগিয়ে দেয়!মিষ্টু তো স্যারদের ইচ্ছে মত গুষ্ঠী উদ্ধার করছে….তারপর ওরা পরীক্ষা দিতে যে যার রুমের চলে
গেল।

এভাবেই রাসেল প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে নিয়ে যায় আবার মিষ্টুকে আর নিয়েও আসে।আর চলতে থাকতে ওদের খুনশুটি,দুষ্টুমি ভালবাসা।মিষ্টু ওদের বাসায় যায় বাট রাসেলের জন্য রাতে থাকতে পারে না!রাসেলের জন্য। মিষ্টুর থাকার কথা শুনলে রাসেল আর মিষ্টুকে যেতে দেয় না।আর এভাবে দেখতে দেখতে মিষ্টুর পরীক্ষা শেষ হয়….
তবে শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকে মিষ্টুর জর আর বমি….রাসেল বাসায় ফিরে দেখে মিষ্টুর শুয়ে আছে!আর এভাবে শুয়ে থাকা দেখে কেমন সন্দেহ হলো তাই মিষ্টুর কপালে হাত দিলো! আর হাত দিয়েই চমকে উঠলে…

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৮