স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩
writer:Nurzahan akter (allo)

রাসেলঃহুমম আমার কাছে একশত টাকা আছে!আর
আমি তোমার বড় ভাইয়ের মত এজন্য তোমারে খাওয়ামু!চলো যায়গা খইয়া আসি আমি মেলা খুধা লাগছে।
বাচ্চাটিঃ আচ্ছা (অনেক খুশি হয়ে)
রাসেল রেলস্টেশনে থেকে বের হতেই দেখে ওকে নেওয়ার জন্য অনেক বডিগার্ড গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে!রাসেল ইশারা দিয়ে ওদের কাছে না আসার জন্য বলে।

রাসেল বাচ্চাটি নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট ঢুকতে গেলে ম্যানেজার আটকায় তখন একটা কার্ড দেখাতেই ম্যানেজার মুখ কাচুমাচু করে ওদের সামনে থেকে সরে দাড়ায়।ওরা একটা টেবিলের বসে আর রাসেলে ওয়েটাকে ডেকে আর বাচ্চাটিক দিকে তাকিয়ে বলে।

রাসেলঃএত কথা হলো তোমার নামটাই তো জানা হলো না।

বাচ্চাটিঃআমার নাম মাকু!সবাই মাকু নামেই ডাকে আমাকে।

রাসেলঃ এবার বলো তো মাকু কি কি তোমার খেতে ইচ্ছে করছে তোমার??

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাকুঃবেশি কিছু লাগবো না!গোশত দিয়ে এক প্লেট ভাত হইলেই চলবো (খুশি হয়ে)

রাসেলঃ গরুর মাংস,মুরগির মাংসা,মাছ ভাজা,ডাল,সালাদ, আইসক্রিম,দুইটা কোল্ড ড্রিংকস্ অডার করলো।

মাকুঃএত খওন আমি কোনদিনও একসাথে খায় নি।আমি হাফ খাবো আর আমার ভাগ থেকে আমার ছোডু বইনের জন্য নিয়া যাবো। (মাথা নিচু করে)

মাকুঃতুমি খাও তোমার বোনের জন্যও আমি কিনে দিবো কেমন।

দুজনে খুব মজা খেলো আর মাকুর বোনের জন্য খাবার কিনে দিল।তারপর মাকু আর ওর বোনকে লাল জামা আর ওর পকেটে কিছু টাকা দিয়ে দেয়। তারপর মাকুর থেকে বিদায় নেয়।আর রাসেল গাড়িতে করে চলে যায়।

ওদিকে মিষ্টু একটা অটোতে উঠে আর বকবক করতে থাকে!তারপর ওর ফুপির বাসার সামনে নেমে ভাড়া নিয়ে অটো ওয়ালার সাথে এক দফা ঝগড়া করে তারপর ভাড়া মিটিয়ে ওর ফুপির বাসায় ঢুকে ওর ফুপির সাথে কথা বলে তারপর মিষ্টুদের রুম দেখিয়ে দেয়!মিষ্টু বাসাতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় ওরা পৌঁছে যায়।মিষ্টুর ফুপির এক ছেলে এক মেয়ে! মেয়েটাই বড়।আর বড় মেয়ের বিয়েো হয়ে গেছে সেই সুবাদে উনি এখন শশুড়বাড়িতেই থাকেন। আর মিষ্টুর ফুপাতো ভাই এবার এস.এস.সি দিবে নাম নিরব।মিষ্টু নিরবকে লাড্ডু বলে ডাকে।তারপর মিষ্টুরা ফ্রেস হয়ে নিচে আসে,,,দেখে নিরব বসে বসে টিভি দেখছে।মিষ্টু নিরবের পাশে বসে নিরব কে বলে….

মিষ্টুঃ লাড্ডু শোন!আমি কিছু খেতে দে তো!ওই মুটকিটা আমাকে কিছু খেতে দেয় নি ট্রেনে(রাএির দিকে তাকিয়ে)
রাত্রিঃ মিষ্টু ঠাডা পড়া মিথ্যা কথা বলবি না।ভাইয়া আমাদের ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে কত খাবার কিনে দিলো তোকে!আর তুই ট্রেন ছাড়ার আগেই সব সাবাড় করে দিলি।তাও বলছিস কিছু খাস নি,,আমার বাদামও কেড়ে খেয়ে নিলি।পেয়ারা গুলোও একা একা পেটে চালান করলি( মিষ্টুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে)
নিরবঃরাত্রি আপু এভাবে বলছো কেন জানো না পেটুকদের তাদের সামনে পেটুক বলতে নেয়।মিষ্টু আপু এত পেটুক বাট দেখে তো বোঝা যায় না এজন্য কেউ বিশ্বাসও করবে না।(হা হা হাা)
মিষ্টুঃ লাড্ডু সোনা!এভাবে বাঁশ দিলে তো!বাঁশ বাগান নেওয়া জন্য রেডি হও বেবি।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
রাত্রিঃ নিরব ভাই ওরে কিছু বলিস না !তোকে কখন কেস খাইয়ে দিবে।মিষ্টুর বাঁশ যে কখন কোন পাশ দিয়ে সেটা ও ছাড়া কেউ জানে না।
নিরবঃতা ঠিক বলছো রাত্রি আপু(মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃতোরে সাথে থাকা যাবে না!তোরা বিরোধী দল(মুখ ভেংচি দিয়ে)

মিষ্টু ওর ফুপি কাছে রান্না গেল পাম মারতে!মিষ্টুর ফুপি রান্না করছে।মিষ্টু যা যা খেতে পছন্দ করে সব উনি নিজে হাতে রান্না করছেন!মিষ্টু রান্না ঘরের সেল্ফ থেকে একটা বইয়াম নামিয়ে তিলের নাড়ু নিলো। আর একটা নাড়ু মুখে ঢুকিয়ে দিলো!আর এক মুঠো হাতে নিল তারপর মিষ্টু গিয়ে ওর ফুপিকে জড়িয়ে ধরে আর বলে।

মিষ্টুঃদিন দিন এত ইয়াং হচ্ছো কি করে বলো তো!তোমাকে দেখে আমার তো খুব হিংসা হচ্ছে।

ফুপিঃমা! এত তেল মারা হচ্ছে কেন শুনি!তোমার কি চাই সেটা বলে ফেলো..

মিষ্টুঃইয়ে মানে আচ্ছা ফুপি তোমার ভাইঝির বিয়ে খেতে মন চাই না।কিছু তো একটা ব্যবসথা করো।বিয়ের বয়স হয়ে গেছে আর কতদিন এভাবে ঝুলিয়ে রাখবে শুনি।

ফুপিঃতা আমার ভাইঝির কি কাউকে মনে ধরছে নাকি?যদি কাউকে মনে ধরে তো বলতে পারিস!ঘটকালির কাজ শুরু করবো।( হা হা করে হেসে)

মিষ্টুঃহুমম মনে তো ধরেছেই তো! আর ঘটকালিও শুরু করো ফুপি!চারহাত এক করার দায়িত্ব তুমি নাও!আমি জানি এই কাজ তুমি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।

ফুপিঃতা সেই রাজকুমার কে? আমার ভাইঝির মন কেড়ে নিয়েছে।তারপর বল ঝটকালির শুরু করি আর জামাইয়ের কাছে থেকে ট্রিট নেই।

মিষ্টুঃহা হা হা হা ওকে।ট্রিট তো দিবেই তোমাকে তুমি হবু ফুপি শাশুড়ি বলে কথা।(হা হা হা)

ফুপিঃতা কে সে বলনা?দেখি আমার ভাইঝি কেমন হিরে চুজ করছে।শোন জামাই পছন্দ না হলে কিন্তু জামাইয়ের পিটেই ডাল ঘুটি ভাংবো বলে দিলাম।

মিষ্টুঃহবে হবে ছেলে তোমার খুব পছন্দ হবে।কারন ছেলেপুরাই এক “ক”।আর জিরাফের মত খাটো!আমি সিওর! তোমার পছন্দ হবে। আর তুমি তাকে চিনোও।খুব ভালো একটা ছেলে।
ফুপিঃকে সে সত্যি করে বলো তো (ভ্রু কুচকে)
মিষ্টুঃতোমার জা এর ছেলে বকুল
ফুপিঃকি??????????
মিষ্টুঃহুমম যা বলছি ঠিকই বলছি?
ফুপিঃবলিস কি? আর ছেলে পালি না সব থেকে বকুলকেই তোর পছন্দ হলো।য
দিও বকুল ছেলে হিসেবে যথেষ্ট ভালো বাট ও তো তোর থেকে অনেক বড় হবে।

মিষ্টুঃফুপি তোমার মাথা থেকে সার গুলো ফেলো বুদ্ধি ডাউনলোড দাও।আমি কেন বকুল ভাইয়া কে পছন্দ করবে? পছন্দ করে রাএি আপু! দুজন দুজনকে পছন্দ করে বাট কেউ কাউকে বলতে পারে না।তাই তোমাকে এখন যা করার করতে হবে।

ফুপি বকুলের এত বড় সাহস আজকেই ওরে আমি ঝাটা পিটা করবো দাড়া!আমার ভাইঝিকে মন দিয়ে বসে আছে আর আমাকেই ট্রিট দিলো না।দাড়া আজকেই যদি আমি ওরে পিটিয়ে না আসি আমি তোদের বাঘিনী ফুপি না (রেগে রেগে)

মিষ্টুঃ কিউটি ফুপি রেগে যেও না!ওদের আগে বিয়ে দিয়ে দাও তারপর ও তখন তোমার জামাই হয়ে যাবে আর আমার দুলাভাই! তখন আমি আর তুমি মিলে উরাধুরা প্যারা দিবো,

ফুপিঃহুমম তাও ঠিক বলছিস

তারপর মিষ্টু ওর ফুপিকে ভুজুংভাজুং দিয়ে বোঝালো যাতে বিয়ের কথা দুবাড়িতেই জানানো হয়।মিষ্টু এখানে আসার একমাএ উদেশ্য হচ্ছে রাএি আর বকুলকে এক করে দেওয়া।মিষ্টুর বড় ভাই মুহিতকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে এখানে এসেছে মিষ্টু।মুহিতের কলিজার টুকরো মিষ্টু,এই প্রথম মুহিত মিষ্টুকে একা কোথাও পাঠিয়েছে।মিষ্টুর বাবা মারা গেছে! তবে ওদের বিসনেজ আছে আর বিসনেজটা মুহিত নিজেই দেখাশোনা করে!মিষ্টু ওর ফুপিকে আপাতত এখন বকুল আর সাগরেকে জানাতে মানা করে।

দুপুরে সবাই এক সাথে খেতে বসে!মিষ্টু তো নিরবের সাথে লেগেই আছে!হঠাৎ মিষ্টুর মন খারাপ হয়ে যায়! কারন মুহিতের হাতে ভাত না খেলে নাকি মিষ্টুর পেট ভরে না!মিষ্টু দৌড়ে গিয়ে ওর ফোন আনে আর মুহিতকে ফোন দেয়। মুহিত তখন হাতমুখ ধুয়ে কেবল খাবার টেবিলে এসে বসে মিষ্টুকে ফোন দিবে বলে ফোন হাত ধরেছে।সাথে সাথে মুহিতের ফোনে ভিডিও কল আসে!মুহিত হেসে কল রিসিভ করতেই তার মিষ্টি বোনের মুখটি দেখতে পায়। মিষ্টু হেসে হেসে জিজ্ঞেস করে,,,

মিষ্টুঃভাইয়া খেয়েছো!তারাতারি খাও আমার খুধা লাগছে তো!
মুহিতঃ না রে মিষ্টু সোনা!আমি এখনো খাইনি কেবল আসলাম অফিস থেকে!ওকে ওকে আমি খাচ্ছি! তুইও মুখে ভাত দে!
মিষ্টুঃআগে তুমি খাও না!জানো না আগে তুমি না খেলে আমি খেতে পারি না।
মুহিতঃওকে ওকে! নে এবার আমি খাচিছ এবার তুই খা তো দেখি!পেট ভরে ভাত খাবি! তুই খা আমি দেখবো যে তুই কতটুকু খাচ্ছিস।আর ফুপিকে ফোনটা দে।
ফুপিঃমুহিত ভালো আছিস বাবা!হুম বল কিছু বলবি?
মুহিতঃজি আমি খুব ভাল আছি!ফুপি আমার এই পাগলি বোনকে মাছটা একটু বেছে দাও আর হাড় ছাড়া মাংস দিও ওরে! আর কষ্ট করে কয়েকদিন ঝাল কম করে রান্না করবে প্লিজ।কয়েকদিন তোমাদের কষ্ট হবে তারপরেও ম্যানেজ করে নাও ! আর হ্য ঘুমানোর পর গিয়ে রুমে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিবে আর চাদর টেনে দিও প্লিজ।
ফুপিঃ মুহিত বাবা একদম চিন্তা করিস না! আমি তোর মিষ্টু সোনাকে দেখে রাখবো।
মুহিতঃআমি জানি ফুপি! তারপরেও বললাম জানোই তো মিষ্টু সোনাটা আমার কলিজা।আর হ্যা ওকে একটু চোখে চোখে রেখো কেমন!জানোই তো কত দুষ্টু।
মিষ্টুঃভাইয়া একদম দুষ্টু বলবে না।আর আমি খাচ্ছি তুমিও খেয়ে নাও কেমন!হালুম হালুম করে খাবে না কিন্তু! আস্তে আস্তে খাও(খিলখিল করে হেসে)
মুহিতঃআমি হালুম হালুম করে কখন খেলাম!তুই তো হালুম হালুম করে খাস।মাঝে মাঝে আমার হাতেও কামড় দিয়ে দিস(হেসে হেসে)
মিষ্টুঃ আচ্ছা এসব কথা বাদ!নিজের পেসট্রিজ নিজে পামচার করতে চাই না।
মুহিতঃ হা হা হা ওকে

স্পর্শানুভূতি পর্ব ২

তারপর ভাইবোন গল্প করতে করতে খাওয়ার শেষ করে!তারপর সবাই গিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করে।নিরব মিষ্টু দিকে তাকিয়ে আছে!মিষ্টু নিরবের মাথাতে একটা গাট্টা মেরে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে তাকিয়ে আছে কেন?নিরব ওর মাথা নাড়তে নাড়তে বলে।

নিরব: আচ্ছা মিষ্টু আপু আমাকে একটা কথার উত্তর দাও তো? সত্যিটা জানতে চাই আর কি?
মিষ্টুঃহুমমম! লাড্ডু বল তো শুনি! তোর সার ওয়ালা মাথাতে কি এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে?(হেসে হেসে)
নিরব: আমি শুনেছি অনেক মেয়ে তার বর না খেলে খায় না! কিন্তু তুমি মুহিত ভাইয়ের না খেলে খাও না কেন?

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪