স্পর্শানুভূতি পর্ব ৬

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৬
writer:Nurzahan akter (allo)

বকুল কয়েকটা লাইন লিখে উঠে পড়ে ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন পায়চারি করে।ওদিকে মিষ্টু রাত্রির গায়ের উপর পা তুলে আরামসে ঘুমাচ্ছে! মিষ্টুর ফুপি এসে রাত্রির গায়ের উপর থেকে মিষ্টু পা নামিয়ে দিয়ে চাদর টেনে দেয় তারপর চলে যায়।

সকালে বেলা খুব ভোরে মিষ্টুর ঘুম ভাঙে আর উঠে বারান্দায় গিয়ে আগে নিজেকে শুভ সকাল বলে উয়িশ করে চোখ বন্ধ করে! তারপর নামাজ পড়ে নেয় রাত্রিও উঠে নামাজ পড়ে নেয়! দুইবোন বাগানে যায় আর খালি পায়ে ঘাসের উপর আস্তে আস্তে হাটছে। সকাল বেলা শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাটলে সত্যি খুব সুন্দর একটা ফিলিংস আসে।পায়ের তলার গরম ঘাসে শরীরটা শিরশির করে উঠে।সকালে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাঝেও রয়েছে একরকম প্রশান্তি! আর এই কয়েকটা জিনিস যারা উপভোগ করতে পারে তারাই বোঝে আসলে সুন্দর সকাল কাকে বলে…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যদিও এসব মনের ব্যাপার কারন প্রতিটা জিনিস মন থেকে উপভোগ করলে সেই জিনিসটার ভালো খারাপ খুব ভালো ভাবেই বোঝা যায়। সকালে এই শিশির ভেজা ঘাসও উপভোগ করতে জানলে এটাও মাঝেও কত ভাল লাগা লুকিয়ে থাকে তাহলে সেটা বোঝা যায়। আমাদের এই যান্ত্রিক শহরে এমন ভাবে কারো উপভোগ করার সময় নেই যদিও! তবে যারা প্রকৃতি প্রেমী তারা ঠিকই প্রকৃতি টাকে উপভোগ করে।

হালকা হালকা শীত পড়ছে রাত্রির ওর ওড়না চাদরের মত করে জড়িয়ে পড়ছে!এবার মিষ্টুর শীত লাগছে তাই রাত্রির ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করে! পরে রাত্রি মিষ্টুর ওড়নাকে ওর মত করে পড়িয়ে দেয়। এবার মিষ্টু একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়!ওদের ফুপির বাড়ির সামনেই একটা শিউলি ফুলের গাছ আছে শিউলি ফুলে বিছিয়ে রাস্তাটা! অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে! মিষ্টু দৌড়ে গিয়ে অনেক গুলো ফুল কুড়িয়ে নিলো!তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে বকুল ফুলও পড়ে আছে। মিষ্টু বকুল ফুল নিলো আর রাত্রিকে শিউলি ফুল দিলো ।মিষ্টুর বকুল ফুল খুব পছন্দের! মিষ্টু রাত্রির দিকে তাকিয়ে কি যে ভেবে আবার রাত্রির থেকে ফুল বদলে নিলো।আর মনে মনে বললো..

মিষ্টুঃআমি আছি আপু তোর পাশে! তোর বকুল তোরই থাকবে!আমি তোকে কথা দিচ্ছি।
তারপর ওরা বাসায় ফিরে গেল!রাত্রি খুব যত্ন করে বকুল ফুল গুলোকে ওর কাছে রেখে দিল।বকুল নামের মানুষটাকে নাই বা পেলো! ফুলের মত পবিএ জিনিসটা না হয় কাছে থাকুক কিছুদিনের জন্য। মিষ্টু সব খেয়াল করেও না দেখার ভান করে চেপে গেল।সকালবেলা ব্রেক ফাস্ট করে নিলো মুহিতের সাথেও কথা বলে নিলো মিষ্টু!আজকে বুধবার বকুল আজ অফিসে যায় নি কোন এক কারণে!মিষ্টুর ফুপি বকুলকে ফোন করে আসতে বললো বকুল এসে সবার সাথে কথা বললো।ফুপি বকুলকে বললো মিষ্টু আর রাত্রিকে নিয়ে শপিংমলে যেতে রাত্রির বরের জন্য রিং কেনার জন্য।আর আসল উদেশ্য বকুল সাথে গেলে বকুলের হাত মাপও পেয়ে যাবে তাই!বকুল মুখ ফুটে না বলতে পারলো এজন্য রাজি হয়ে গেল।

১০ টার দিকে ওরা বেরিয়ে গেল আর সোনার দোকানে গিয়ে মিষ্টু আর রাত্রি রিং চয়েজ করছিলো।বকুল এটা কাপল রিং বক্স এগিয়ে দিলো রাত্রি বকুলের দিকে তাকিয়ে..
রাত্রিঃআমরা তো একটা রিং কিনতে এসেছি কাপল রিং নিয়ে কি করবো?
বকুলঃমনে করো তোমার বিয়েতে আমার দেওয়া সামান্য একটা উপহার!নিলে অনেক খুশি হবো।
রাত্রিঃএসবের কোন দরকার ছিলো না! (মাথা নিচু করে)
মিষ্টুঃভাইয়া যখন দিচ্ছে কিছু ভালবেসে নিয়ে নাও আপু(তোরই বর বলে কথা! মনে মনে বলছে)
রাত্রিঃএটা সামান্য কিছু নয় মিষ্টু এটার প্রাইজ টা দেখছিস!(মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
বকুলঃ বেঁচে থাকলে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবো!তাই বলে টাকার চিন্তা করে কি মনমত উপহার দিবো না কাউকে।আর কোন কথা হবে না প্লিজ
রাত্রিঃহুমম
বকুলঃ মিষ্টু তোমার কি পছন্দ হয় দেখো তো!তুমিও কিছু একটা নাও (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃআমি কিছু লাগবে না ভাইয়া! গয়না ঘাটি আমার খুব একটা পছন্দ না (কেন রে দুলাভাইয়ের বাচ্চা আমাকেও কাপল রিং এর বক্স কিনে দেন যদি এতই দেওয়ার শখ থাকে!আমাকে তো দিবেন না, জানি তো।আপুকে কেন দিলেন সেটাও তো জানি।আজ একটা বর নাই বলে শুধু দেখে যাচ্ছি।মনে মনে)
বকুলঃ মিষ্টু এই দুলটা তুমি নাও!বড় ভাইয়া হিসেবে দিলাম।
মিষ্টুঃএসবের কি দরকার ছিলো!যদিও কেউ কিছু দিলে আমি না করতে পারি না।আপনার মত দুলাভাই ঘরে ঘরে হোক (জিহ্বাতে কামড় দিয়ে)
বকুলঃদুলাভাই হবে কেন?কথাটা ঠিক বুঝলাম না(মিষ্টুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃনা মানে আমার আর একটা বোন থাকলে আপনাকে দুলাভাই বানাতাম সেটাই বলছি!এমন যদি দুলাভাই পেতাম নিজের টাকা অযথা অপচয় করতাম না।
বকুলঃহুমম ব্যাড লাক!সেই সৌভাগ্য আমার হয় নি যে তোমার মত শালিকা পাবো।(আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃতাও ঠিক বলছে!(শুক্রবারের মত বুঝবেন শালিকা কি জিনিস)
ওরা আরো কিছু কেনাকাটা করে একবারে ট্রেনের টিকিট কেটে বাসায় ফিরলো!মিষ্টুদের সাথে নিরবও যাবে তাই তিনটা টিকিট কেটেছে ওরা!মিষ্টু বাসায় এসে আগে একটা সাওয়ার নিলো তারপর মুহিতের আর ওর আম্মু সাথে কথা বলে নিলো।রাত্রি মিষ্টুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো..
রাত্রিঃতুই এতো অগোছালো কেন রে মিষ্টু!ভেজা টাওয়াল এভাবে বিছানার উপর রেখে দিয়েছিস কেন?
মিষ্টুঃআমার বরটা গোছালো হবে এজন্য আমি অগোছালো ! আর মনে থাকে না টাওয়াল শুকাতে দিতে। (হেসে হেসে)
রাত্রিঃযেদিন বরের হাতে থাপড়ানি খাবে সেদিন বুঝবে।
মিষ্টুঃসে তখন দেখা যাবে।(কে কাকে দেয়)

পরের দিন সকালে ওরা রাজশাহীর উদেশ্য রওনা দেয়! কয়েক ঘন্টা জার্নি পর রাজশাহীতে পৌঁছালো! মুহিত ওদের রেলস্টেশনে থেকে আনতে গিয়েছিলো ওরা তিনজনই মিষ্টুদের বাসায় গেল!তারপর ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো রাত্রিরা!আর কিছু সময় থেকে রাত্রি ওর বাসায় চলে গেল!মিষ্টুদের পাশের বাসাটাই রাত্রিদের!মিষ্টু শুয়ে ছিলো মাথা ব্যাথা করছিলো মুহিত এসে মিষ্টুকে এককাপ চা করে দিলো।মিষ্টু একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো!মিষ্টুও মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা মুহিত কি করে ওর মনের কথা সব বুঝে যায়। মিষ্টু ওর বাবাকে দেখে নি! বাবা রা কেমন হয় জানেনা?বাট বাবা মত আরেকটা ছায়াকে সব সময় পাশে পেয়েছে।বাবার আরেকটা কার্বন কপি বড় ভাইয়ারা হয়।

মিষ্টু চা টা খেয়ে শুয়ে পড়ে আর মুহিত মিষ্টুর মাথা টিপে দেয় আর মিষ্টুও একটা সময় ঘুমিয়ে যায়।রাত্রিদের বাসাতে সবাই বিয়ে বিয়ে করছে এটা রাত্রি যে অসহ্য লাগছে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।রাত্রির কার সাথে এনগেজমেন্ট হচ্ছে! সে কি করে জানার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নেই রাত্রি।চুপচাপ বসে বসে বকুল ফুল গুলোকে নাড়াচাড়া করছে।

রাসেল ফেনী এসেছে একটা কনট্রাকশনের জন্য! একটা জমি দেখতে এসেছিলো।বাট জমিটা ওর পছন্দ হয়নি তাই এখানে না থেকে ঢাকা ব্যাক করবে!এটা জানাতেই রাসেল ওর বাবাকে ফোন দিয়ে জানালো…

রাসেলঃআসসালামু আলাইকুম বাবা!কেমন আছো?
বাবাঃওয়ালাইকুমুস সালাম!আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
রাসেলঃজি আমিও ভালো আছি?
বাবাঃগুড বয়!তা ওদিকের কাজ কতদূর এগোলো?
রাসেলঃবাবাতুমি যে জমিটা দেখার জন্য বলেছিলে ওটা আমার পছন্দ হয়নি।আর আমাদের কনট্রাকশনের জন্য এই জমিটা পারফেক্ট না।
বাবাঃওকে মাই বয়!আমি জানি তুমি সব সময় বেষ্ট কিছুই চুজ করো! যদি পছন্দ না হয় তাহলে ওখানে থাকার দরকার নাই।চলে এসো।
রাসেলঃজি বাবা!আমি আজ রাতেই ঢাকা ব্যাক করছি।
বাবাঃওকে

মিষ্টু ঘুম ভাঙে সন্ধ্যার আজান শুনে তারাতারি করে অযু করে নামাজটা পড়ে নিল!নামাজ সেরে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখলো রাত্রির বাবা মা এসেছে। বড়রা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে মিষ্টু সেদিকে না গিয়ে আস্তে করে দরজা খুলে রাত্রিদের বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।রাত্রিদের বাসায় গিয়ে আগে ফ্রিজ খুলে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে খেতে খেতে রাত্রির রুমে গেল!রাত্রি তখন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলো এজন্য আর ওকে ডিসট্রাব না করে মিষ্টু মিষ্টি খেতে খেতে ওর বাসায় যাচ্ছিল।

মিষ্টু ওদের বাসার গেট খুলতে যাবে ওমনি মুহিত গেট খুলে মিষ্টুকে দেখে ভ্রু কুচকে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে।মুহিত সন্ধ্যার পর মিষ্টুকে বের হতে মানা করে দিসে!কারন মিষ্টু খুব পড়াচোর! পড়তে বসার ভয়ে বার বার ওর চাচ্চুদের বাসায় পালিয়ে যায় আর মুহিত গিয়ে ধরে আনে।একটা রোজ কারের ঘটনা সবারই এসব দেখে অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।মিষ্টু জানে ওর চাচ্চুর বাসাতে কালো মিষ্টি থাকবেই! রাত্রি খায় সাদা মিষ্টি আর মিষ্টু খায় কালো মিষ্টি এজন্য বেশি করেই কিনে আনে ওর চাচ্চু।মুহিতও আনে তবে বাসাতে মিষ্টি থাকলে মিষ্টু আর কিছু খায় না।এজন্য আনলে অল্প করে আনে….

মিষ্টু আমতা আমতা করে কিছু বলতে না পেরে দৌড় দিলো মুহিত ডাকলো কিন্তু কোন কথা শুনলো না।দৌড়াতে দৌড়াতে আর একটা মিষ্টি মুখে পুরে দিলো। মুহিত মিষ্টুকে কিছু বলার আগেই মিষ্টু দৌড় দিসে।

মুহিতঃবোন আস্তে যা!এভাবে দৌড় দিস না আমি বকা দিবো না তোকে!তুই হেঁটে যা তা না হলে পড়ে গিয়ে ব্যাথা।
মিষ্টুঃউমমমমম উমম বুজে গেছি(মিষ্টি মুখে নিয়েই)
মিষ্টু দৌড়ে গিয়ে ওর চাচ্চুর পাশে বসে পড়লো দুম করে!ওর এভাবে দৌড়ে আসা দেখে বড়রা কথা থামিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে!মিষ্টু মিষ্টি খেতে খেতেই ওর চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বললো….
মিষ্টুঃএটাই শেষ প্যাকেট চাচ্চু!কালকে নিয়ে এসো কেমন(মিষ্টি হেসে)
চাচ্চুঃওকে ডিয়ার (হা হা হা)
মুহিতঃ মিষ্টু রাতে মিষ্টি খেতে নেয়! দাঁতে ক্যাবিটিজ হয়। আর কতদিন বলবো তোকে বলতো।
মিষ্টুঃওহহহ!প্রতিদিন তো ব্রাশ করিয়ে ছাড়ো।আমি তো কোলগেট দিয়ে ব্রাশ করি এজন্য কোন ক্যাবিটিজ হবে না।
মুহিতঃজি ম্যম আপনি সব জানেন?এখন যাও তুমি! আর তুমি গিয়ে পড়তে বসো!বড়রা এখানে কথা বলছে।
মিষ্টুঃওকে (মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল)
মিষ্টুর আম্মুঃ inter 1st ইয়ারে পড়ছে তাও এখনো দুষ্টুমি কমছে না।এই মেয়েকে কি করে বোঝায় এখন ও বড় হচ্ছে?এখন এত দুষ্টুমি করা ঠিক না (চিন্তিত মুখে)

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৫

মুহিতঃ আম্মু দুষ্টুমি করতেও একটা বুদ্ধি লাগে জানো!আর সাথে পরিষ্কার একটা মন!আর মনের উপর নির্ভর করে দুষ্টুমির ব্যাপার টা।যেটা সবাইকে দিয়ে হয় না।আর যাদের মাথাতে আর মনে কুটিল বুদ্ধি থাকে তারা দুষ্টুমি করতে পারে না।তারা অন্যের কিছু দেখে হিংসা, রাগ, অভিযোগ এসবই করে।আর আমার বোন দুষ্টুমি করলেও বাজে ভাবে দুষ্টুমি করে কাউকে বিপদে ফেলে না!ওকে ওর মত থাকতে দাও আম্মু।আমার বোনকে আমি খুব ভালো করেই জানি
আম্মুঃহুমম আদরে বাদর করো পরে বুঝবে।

পরের দিন সকালে…
মিষ্টুর কলেজ থেকে মুহিতকে ইমারজেন্সি ভাবে ডেকে পাঠিয়েছে কলেজের প্রোফেসর!মুহিতও দেরি না করে কলেজে ছুটে এসেছে!আপাতত মুহিত চেয়ার বসে আছে আর মিষ্টু মুহিতের পাশে দাড়িয়ে নখ কামড়াচেছ।

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৭