হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২৬

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২৬
লেখিকাঃ দিশা মনি

ফাবিহা এতকিছুর পরেও হার মানতে রাজি নয়। মেঘলা ও রিফাতের চরম সর্বনাশ করতে চায় সে। তাই তো আজ রিফাত ও মেঘলা যখন সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে আবার বিয়ের আয়োজন করছে তখন ফাবিহা নতুন পরিকল্পনা করছে।
রিফাত ও মেঘলা অবশেষে আজ বিয়ের জন্য আবার প্রস্তুত হচ্ছে। আগেরবার বাধার সম্মুখীন হলেও এবার নির্বিঘ্নেই বিয়েটা করে নিতে চায় তারা। এবার বড় কোন উৎসব নয়। খুব সামান্যভাবে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শে’ষ হবে। বিয়ে উপলক্ষে সামান্য কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত হয়েছে।

রোদেলা,আখি সবাই মিলে মেঘলাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলেও মেঘলার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। রোদেলা মেঘলাকে অন্যমনস্ক দেখে প্রশ্ন করে,
‘এত কি ভাবছিস? চিন্তা করিস না মেঘ। দেখবি এবার সবকিছু ভালোই হবে। আল্লাহ চান তো এবার তোর আর রিফাতের বিয়েটা ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে ইনশাআল্লাহ।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘলা জোরপূর্বক একটু হাসে। তার মনের মধ্যে যে কি চলছে সেটা সে কোনভাবেই প্রকাশ করতে পারছে না। আচমকা মুনিয়া এসে বলেন,
‘চলো এখন। কাজি এসে গেছেন। এবার তোমাদের বিয়ে পড়ানো হবে।’
মেঘলা রোদেলা ও মুন্নির সাথে নিচে চলে যায়। রিফাতের পাশে বসানো হয় মেঘলাকে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। মেঘলাকে কবুল বলতে বললেই মেঘলা বলে দেয়,

‘কবুল।’
রিফাতও কবুল বলে দেয়। অবশেষে রিফাত ও মেঘলার বিয়েটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়। মেঘলার মন থেকে অবশেষে ভয় অনেকটাই দূর হয়।
‘যাক তাহলে আমার ভাবনা ভুল ছিল। খারাপ কিছুই তো হলো না। আমাদের জিবনে আর কোন বাধা নেই।’
বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেঘলার বিদায়ের পালা আসে। মেঘলাদের গ্রামের বাড়িতেই বিয়েটা হয়েছে। এখন বিয়ের পর এখান থেকে রিফাতের বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয় তারা।

রিফাত ও মেঘলা পৌছায় রিফাতদের বাড়িতে। আজ আবার রিফাতের হাত ধরে অনেকদিন পর নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করে মেঘলা। রিফাত কক্ষে প্রবেশ করেই মেঘলাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
‘অনেক প্রতীক্ষার পরে আমি আজ তোমাকে পেয়েছি। এবার আর কেউ আমাদের আলাদা কর‍তে পারবে না।’

মেঘলার কপালে নিজের অধর ছুইয়ে দেয় রিফাত। মেঘলার পুরো শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। ধীরে ধীরে আরো গভীরভাবে মেঘলাকে স্পর্শ করতে থাকে রিফাত। মেঘলার ওষ্ঠদ্বয় নিজের আয়ত্তে করে নেয়। একসময় এভাবে পবিত্র বন্ধনের পবিত্র সম্পর্কে মেতে ওঠে দুজনে। প্রথমবারের মতো তাদের ভালোবাসার মিলন ঘটে। এই রাত সাক্ষী হয় মধুচন্দ্রিমার ✨

নতুন দিন যেন নতুন বিপদের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। ফাবিহা রিফাতদের বাড়ির সামনের এসে দাড়িয়েছে। তার দাবি, যেহেতু তার সন্তানের পিতা আমিনুল হক তাই এই বাড়িতে তারও অধিকার আছে। ফাবিহার এই দাবি মানতে রাজি নয় এই বাড়িই কেউই। কিন্তু ফাবিহা একপ্রকার জোর করেই বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে।

মেঘলা ফাবিহাকে এই বাড়িতে দেখে একটুও খুশি হয়না। বরং সে মনে মনে পরিকল্পনা করে নেয় কিভাবে এই মেয়েটাকে বিদায় করবে। মেঘলা কাউকে একটা ফোন করে। ফোনের বিপরীতদিকের মানুষটাকে কিছু বলতেই লোকটি বলে,
‘কোন চিন্তা করবেন না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।’

ফাবিহা জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে আমিনুল হকের রুমে ঢুকে পড়ে। ফাবিহার এই বাড়াবাড়ি কারো সহ্য হচ্ছিল না। এমন সময় কয়েকজন পুলিশ বাড়িতে আসে। তারা এসেই ফাবিহার খোজ করতে থাকে। ফাবিহা নিচে নেমে আসলে বলে,
‘আমরা আপনাকে গ্রেফতার করব।’

ফাবিহা তোতলাতে তোতলাতে বলে,
‘কে,,কেন? আমার অপ,,,অপরাধ কি?’
‘আপনি এভাবে জোর করে অন্য কারো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন না। এটা অপরাধ।’
ফাবিহা তখন বলে,

‘আমার গর্ভে আমিনুল হকের সন্তান। তাই আমি কিছুতেই এই বাড়ি ছেড়ে যাবো না।’
তখন পুলিশ অফিসার বলে,
‘আপনাদের সম্পর্কটা অবৈধ। কারণ আপনারা বিবাহিত নন। তাই এই বাড়িতে থাকার কোন অনুমতি আপনার নেই।’
শেষে বাধ্য হয়ে ফাবিহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। কারণ পুলিশ অফিসার বলেছিল যদি সে বাইরে না যায় তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

ফাবিহা চলে যেতেই মেঘলা পুলিশ অফিসারকে এসে বলে,
‘ধন্যবাদ মুগ্ধ। তুই তো ভালোই অভিনয় করলি।’
মুগ্ধ নামের ছেলেটা বেশ জোরে শব্দ করে হাসে। রিফাত কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে,
‘অভিনয় মানে?’

মেঘলা এবার সব কিছু বলে,
‘আসলে এ হলো আমার বন্ধু। কলেজে আমরা একসাথে পড়েছি। আমি তো চুপচাপ হয়ে থাকতাম তাই আমার বেশি বন্ধু-বান্ধব ছিলনা। তবে যে গুটিকয়েক বন্ধু-বান্ধব ছিল তাদের মধ্যে মুগ্ধ একজন। ও অনেক ভালো অভিনয় করতে পারত।

কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে অভিনয়ও করেছে। ও এখন একটা নাট্যদলে কাজ করে। আজ যখন ফাবিহা এই বাড়িতে আসল তখন আমি মুগ্ধকে ফোন করে সব বললাম। তখন মুগ্ধই ওর নাট্যদলের লোকদের পুলিশ সাজিয়ে নিয়ে এলো।’
রিফাত অবাক হয়ে যায়।
‘তোমার তো অনেক বুদ্ধি হয়েছে। আর মুগ্ধ আপনাকেই থ্যাংকস। আমাদের এভাবে সাহায্য করার জন্য।’
‘থ্যাংকস বলার দরকার নাই। মেঘলা আমার বন্ধু। ওর জন্য এতটুকু করতেই পারি।’

কয়েক মাস পর,
মেঘলা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেলেই পড়ছে। এখন পড়াশোনার অনেক চাপ তাই অনেক ব্যস্ত সে। পড়াশোনার জন্য চট্টগ্রামেই থাকতে হচ্ছে মেঘলাকে। চট্টগ্রামে রিফাত যেই ফ্ল্যাট কিনেছে এখন সেখানেই থাকে মেঘলা। রিফাত অবশ্য সপ্তাহে দু-তিনদিন এসে দেখা করে যায়।

আজকে ক্লাস শেষে আখির সাথে কথা বলছিল মেঘলা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একসময় মেঘলা প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা তোর ভাই আরিয়ানের কি খবর? রিয়্যালিটি শো এর সেমিফাইনালে তো মুন্নি আর আরিয়ান দুজনেই বাদ পড়ে গেল। তারপর মুন্নি তো গান ছেড়ে পড়াশোনায় মন দিল। আরিয়ানের তো কোন খোজই নেই।’

‘ভাইয়ার কথা আর কি বলব। রিয়্যালিটি শো না জেতার দুঃখে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। তাই আব্বু ওকে হায়ার স্টাডিজের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিল। আর আমার ভাইয়া কি লেভের প্লেবয় তোকে কি বলব। আরো গেছে বিদেশে। প্রতি মাসে গার্লফ্রেন্ড বদলাচ্ছে। আমার তো এসব দেখেই কেমন লাগছে।’
মেঘলার বেশ হাসি পায় আখির কথায়। তবে সে অনেক কষ্টে হাসি নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।
আখি প্রশ্ন করে,

‘আমি শুনলাম তুমি নাকি কয়েকদিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছ? কিন্তু কেন?’
‘আসলে সামনে মুন্নির বিয়ে। সেই কারণেই যাবো।’
‘ওহ মুন্নির বিয়ে। কার সাথে?’

‘মুন্নিরই ভার্সিটির এক ফ্রেন্ড নাম রাসেল। মুন্নির কাছে শুনেছিলাম রাসেল নাকি ওকে অনেক আগে থেকেই ওকে ভালোবাসত। এমনকি একদিন প্রপোজও করেছিল। তখন তো মুন্নি আরমান খানের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল তাই রাসেলকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিল। তবে পরে ও বুঝতে পেরেছে যে রাসেল ওকে অনেক ভালোবাসে। মুন্নির আরমান খানের প্রতি যেটা ছিল সেটা শুধুই ভালো লাগা, রাসেলের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে মুন্নি রাসেলের প্রেমে পড়ে যায়। এখন সেই প্রেমেরই পরিণতির সময়।’

‘ও ভালোই তো৷ আচ্ছা ফাবিহা নামের মেয়েটার খবর কি?’
মেঘলা আফসোস করে বলে,
‘মেয়েটার অবস্থা ভালো না। নিজের কলংক ঢাকতে মাঝবয়েসী একটা লোককে বিয়ে করেছিল। এখন সেই লোকটা নাকি ফাবিহার উপর অনেক অত্যা’চা’র করে। এরমাঝে মেয়েটা নাকি অনেকবার পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল কিন্তু পায়নি। বাচ্চাটাও নাকি ন’ষ্ট করেছে ফাবিহা।’

‘সবই কর্মফল। একেই তো এতগুলো অন্যায় করেছে তার উপর নিষ্পাপ বাচ্চাটাকেও শে’ষ করে দিয়েছে। ঐ ফাবিহার সাথে তো আরো খারাপ কিছু হওয়া উচিত।’

হারিয়েছি নাম পরিচয় পর্ব ২৫

দেখতে দেখতে অনেকগুলো পর্ব হয়ে গেল। গল্পটা আপনাদের কেমন লাগে বলবেন। গল্পটার সম্পর্কে আজ আপনাদের অনুভূতি ব্যক্ত করার অনুরোধ রইল

হারিয়েছি নাম পরিচয় শেষ পর্ব