প্রেমময় বিষ পর্ব ১৫

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৫
মাহিমা রেহমান

প্রায় তিন বছর পর নিজ গৃহে পা রাখছে বেলা।তিনবছর! প্রায় তিন-তিনটা বছর সে নিজের আপন মানুষগুলোর থেকে দূরে ছিল।দূরে ছিল নিজ পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের কাছ থেকে।নিজ গর্ভধারিণীর উপর ক্ষণকাল কিঞ্চিৎ পরিমাণ চাপা অভিমান থাকলেও সময়ের সহিত তা সমীরের বেগে মিলিয়ে তা জলে পরিণত হয়েছে।

মায়ের সেদিনের কঠোরতার মানে আজ বুঝতে সক্ষম বেলা।মায়ের সেদিনকার সিদ্ধান্তের জন্যই সে বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে।নিজের সংবিৎ শক্তি ফিরে পেয়েছে।নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছে এক অন্য বেলায়।তাই হয়তো বলে,, মেয়েরা যা করে সন্তানের ভালোর জনই করে। এই তিন বছর করো সাথেই তার কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না।ফলস্বরূপ এতো বছর পর আকস্মাৎ নিজ বাড়ির মেয়েকে নিজ আঁখির সম্মুখে দেখেবার জন্য সকলে অস্থির হয়ে রয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই তিন বছর পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রতিনিয়ত রুমি বেগমকে বেলার কথা জিজ্ঞেস করে চলেছে।প্রতিদিন একবার করে হলে প্রতিটি সদস্য রুমি বেগমের শিয়রে এসেছে কেবল বেলার হাল-চাল জানতে, কোথায় আছে জানতে? কিন্তু রুমি বেগমের সেই এক কথা,, যেখানে আছে ভালো আছে।চিন্তার কোনো কারণ নেই।

অগত্যা সকলে হতাশ হয়ে ফিরে যেত।সেদিন প্রভাত বেলা বেলির নিখোঁজ হওয়ার খবরটা যখন কিয়ারার কর্ণকুহরে পৌঁছাল,, সেদিন মেয়েটা বাড়ি ফেরার মুহূর্তে প্রচুর কেঁদেছিল।আদিব বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে নিয়ে গিয়েছিল বাড়ি।তাই আজ বোনের বাড়ি ফেরার খুশিতে সে সকলকে নিয়ে গতকালই নানুর বাড়িতে হাজির হয়েছে।কেবল আসতে পারেনি তাদের বাবা।উনার নাকি খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ রয়েছে।

বেলার আসায় অপেক্ষায় অপেক্ষারত বাড়ির প্রতিটি মানুষ।মাথা ব্যথা নেই কেবল একটি মানুষের। হ্যা! ঠিকই ধরেছেন সে আর কেউ না রায়ায। অবশ্য তার মাথা না ঘামানোর কারণ ও বিদ্যমান।বর্তমানে সে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে।বছর দুয়েক হলো সে পূর্ণরূপে ব্যবস্যায় মনোনিবেশ করেছে তার সহিত রয়েছে তার রাজনৈতিক কোলাহল।

আজকাল সব কিছুই সে দৃঢ়চিত্তে সামলাচ্ছে।অবশ্য সে শুনেছিল আজকে কেউ বিশেষ একজন তাদের বাড়িতে আসতে চলছে।তবে ব্যক্তিটা কে? সে সম্পর্কে অবগত নয় সে। প্রভাত বেলা থেকে দেখে চলছে মা-চাচিদের তোড়জোড় কিন্তু সে জিজ্ঞেস করেনি কিছুই।তার এসবে আপাদত কোনো ইন্টারেস্ নেই। তবে সে এটা বুঝতে সক্ষম যে বিশেষ কেউও আসছে।

আজ এতদিন পর বেলাকে দেখার তৃষ্ণায় সকলের অন্তঃকরণের অন্তরালে কেমন হুহু করে উঠছে।বাড়ির প্রতিটি মহিলা সদস্য সদর দ্বারের সম্মুখে অশ্রুসিক্ত নয়নে বেলার পথ চেয়ে।তাদের সহিত টিনা-মিনা, কিয়ারা আর টায়রা ও উপস্থিত।টায়রা মেয়েটা কেমন এই তিনটি বছর প্রাণহীন ভাবে কাটিয়েছে।প্রিয় বান্ধবী/বোনের প্রয়োজনীয়তা সে এই কয়টি বছর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।ফলস্বরূপ প্রিয় সঙ্গীকে বারংবার বড্ড মনে করেছে। কবে ফিরবে সে? এই আশায় বুক বেঁধে বসে ছিল সে।অবশেষে তার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

আকস্মাৎ বাড়ির মেইন গেটের সম্মুখে একটা গাড়ি এসে থমকাশ।গাড়ির ডোর খুলে সহসা বেরিয়ে এলো একজন সুঠমদেহি যুবক।তার পাশ্ববর্তী দ্বার উন্মোচন করে বেরিয়ে এলো এক সুশ্রী চেহারার তরুণী।সর্বশেষ গাড়ি হতে বের হল সকলের চেনা সেই মুখ।যাকে দেখে সকলের অন্তঃকরণে তুফান বইতে লাগল।

সকলের চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।সকলে কেমন গোলগোল নয়নে তাকিয়ে আছে রমণীর পানে।কোথায় সকলের ছুটে এগিয়ে যাওয়ায় কথা,, সেখানে তারা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।সকলের অন্তঃকরণে কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরছে।আর তা হলো,, কে এই মেয়ে? এটা কি সত্যি সত্যি বেলা? নাকি অন্যকেউ?সকলের চিত্তে কেবল একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

রায়ায় সকলের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্তি প্রকাশ করে নিজ খাওয়ায় মনোনিবেশ করেছিল তখন।বর্তমানে তার খাওয়া শেষে সে অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে নিলে সকলের বিস্ময়কর মুখমণ্ডল দেখে হকচকিয়ে যায়।কাউকে যে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার কোন উপায় নেই অগত্যা সে সকলের দৃষ্টি অনুসরণ করে সে নিজে থমকে যায়।

এতসময় ধরে নির্নিমেষে একমাত্র মেয়ের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল রুমি বেগম। সংবিৎ শক্তি ফিরে আসতেই তিনি ছুটে চলল মেয়ের সান্নিধ্যে। এতো বছর পর মেয়েকে নিজের সান্নিধ্যে পেয়ে হিয়ার মাঝে চেপে ধরে নিজের একমাত্র আদরের মেয়েকে।

এতগুলো বছর কেবল নিজ মেয়ের ভালোর আশায় নিজের থেকে এতো দূর রেখেছিলেন তিনি।ঠিক কতটা কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল তা কেবল তিনিই জানেন! রুমি বেগমকে বেলার দিকে ছুটতে দেখে চেতনা ফিরে আসে সকলের।রুমি বেগমের পিছন পিছন সকলে ছুটে যায়।রুমি বেগম মেয়েকে নিজের অভিমুখে দাঁড় করিয়ে সর্বমুখে চুম্বনে ভরিয়ে তুলে।মায়ের এহেন ভালোবাসা পেয়ে আঁখি জোড়া টলটল করে উঠে।সত্বর গতিতে সকলে এসে বেলাকে জাপটে ধরে। কিযারা আর টায়রা এরপ্রকার কেঁদেই দেয়।বাড়ির সকলে আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বেলার মাথায়।টিনা-মিনা এবার বলেই উঠল,

— বেলা আপু তুমি কত পরিবর্তন হয়ে গেছো? এখন দেখি কেমন শার্ট-পেন্ট পড়ে আছো।তোমাকে কিন্তু সেই সুন্দর লাগছে।আগের থেকে আবার কিছুটা মোটা ও হয়েছো বেলা আপু।আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর ও হয়ে গেছ তুমি বেলা আপু!!

টিনা-মিনার কন্ঠে অত্যাধিক বিস্ময়।বেলার পরিধানে রয়েছে লেডির শার্ট যা হাঁটুর একটু উপরে, রয়েছে লেডিস জিন্স, পায়ে রয়েছে ব্র্যান্ডেড হোয়াইট ক্যাডস।বেলা দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে অধর কোণে মুচকি হাসি ঝুলায়
রায়ায বেলার এহেন নবরূপ দর্শন করে কেমন সৎবিৎ শক্তি হারিয়ে ফেলে।পরমুহুর্তে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে বেলার সর্বাঙ্গে নির্নিমেষ চোখ বুলিয়ে পরিধেয় বস্র দেখে দুহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয় রায়ায়।এই মেয়েকে তো সে পরে মজা বুঝবে। তিনবছরে কি কোনো সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে?নাকি উগ্র হয়ে এসেছে?কি ধরনের বস্ত্র পরিধান করে নিলজ্জের মত ধেই ধৈই করে যাচ্ছে।মুখ ঘুরিয়ে নিল রায়ায।ঠায় দাঁড়িয়ে সকলের মলোড্রামা দৃঢ় দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।

সহসা বেলি বেলার সান্নিধ্যে এসে তার শ্রবণ পথে কিছু বাক্য ব্যক্ত করতেই সে নির্নিমেষ রায়াযের মুখপানে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে,, সকলকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগে,
— তোমরা এবার থামো সবাই।আমাদের এবার ভিতরে যেতে দাও।আমরা খুব টায়ার্ড তাইনা?(তাহিনের মুখপানে তাকিয়ে)

কথাটা বলেই বেলা তাহিনের বাহু আকড়ে ধরে,, পিছনে অবস্থানরত বেলির মুখপানে তাকিয়ে একটা চোখ মেরে সম্মুখে পা বাড়ায়।তাহিন হাসিমুখে বেলার সহিত ভিতরে যেতে থাকে।যাওয়ার আগে রুমি বেগমকে বলে যায় গাড়ির ভিতরে থাকা জিনিসপত্রের ব্যাপারে।রুমি বেগম আশ্বাস দেয় সে কাউকে দিয়ে বের করে নিবে।

যখন বেলা তাহিনের বাহু চেপে ধরেছিল সহসা
রায়াযের অন্তঃকরণে যেন ধাও ধাও করে অগ্নি জ্বলে উঠল।তার মনে হলো,, তার পুরো দেহে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।তার পুরো দেহ কেমন জ্বলে জ্বলে উঠছে।তার হৃৎপিণ্ড আজ কেমন বেসামাল হয়ে পড়েছে।ক্ষণকাল পর পর কেমন জ্বলে পরে যাচ্ছে তার বক্ষ।

রায়ায কম্পন দুটি অধমাঙ্গ বাড়িয়ে অফিস যাওয়ার উদ্যেশে রওনা হলো সহসা রাজিয়া বেগম ছেলের হাত আঁকড়ে ধরে বলে উঠল,
— রায়ায কোথায় যাচ্ছিস তুই? আজকের দিন অন্তত কোথাও যাস না।মেয়েটা এতগুলো বছর পর বাড়ি ফিরেছে।অন্তত আজকে থেকে যা!

রায়ায জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।নিজেকে শান্ত করে
মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— মা আমি এখানে থেকে কি করব? তার চেয়ে বরং অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে,,কাজগুলো আগে কমপ্লিট করি গিয়ে।
রাজিয়া বেগম ছেলের পানে অসহায় মুখ বানিয়ে চেয়ে রইল।মায়ের এহেন চাহনি দেখে রায়াযের আর কিছু বলার সাহস পেল না।

ড্রইংরুমে বসে আছে বাড়িয়ে সকল পুরুষেরা।তখনই বাড়ির অন্দরে প্রবেশ করল বেলা।এতবছর বাদে মেয়েকে দেখে নিজেকে আর দমাতে পারলেন না জিসান সাহেব। আকস্মাৎ উঠে মেয়েকে নিজ বক্ষপটে চেপে ধরলেন।বাবার এহেন ভালোবাসা পেয়ে নয়ন জোড়া টলটল করে উঠল বেলার।
বাবা-মেয়ের ভালোবাসায় পর্ব সমাপ্তি ঘটলে,,বেলা এক-এক করে সকলের অদূরবর্তী হয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগল।রায়ায় ততক্ষণে নিজ আসন পেতেছে ড্রইংরুমে।সহসা রায়াযের পাশবর্তী হয়ে বসে পড়ে আদিব।বেলা সেদিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে অধর কার্নিশে ক্রুস হাসি ঝুলিয়ে সেদিন এগিয়ে যায়।

বেলাকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে রায়ায আঁখি পল্লব না ফেলে তাকিয়ে থাকে একমনে।আকস্মাৎ বেলা রায়াযকে উপেক্ষা করে আদিবের সান্নিধ্যে এসে তার সহিত খেজুরে আলাপ জুড়ে দেয়।বেলা খুব হাস্যজ্বল মুখে আদিবের সহিত কথা বলছে।রায়ায বেলার মুখপানে ভ্রু কিঞ্চিৎ উচুঁ করে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।রায়াযের মনে হচ্ছে,, বেলা এবার হাসতে হাসতে আদিবের কোলে উঠে যাবে।

সে সেদিন থেকে চোখ সরিয়ে ত্বরিত উঠে দাঁড়ায়।জোরে জোড়ে উত্তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে নিজেকে শীতল করার প্রয়াস চালায়।কিয়ৎ কাল অবহিত হওয়ার পর বেলা রায়াযের সমীপে এসে তাকে পূনরায় উপেক্ষা করে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।যাওয়ার আগে রুমি বেগমকে বলে যায় তাহিনের থাকার ব্যবস্থা করতে।বেলার সহিত বেলি ও ছুটে চলে উপরে।তারা দুজন একই কক্ষে অবস্থান করবে তাই।

রায়াযের মধ্যে আজ অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে বেলা। এই যেমন,,মুখ ভর্তি করে দাড়ি রেখেছে।আগের থেকে সাস্থ্যটা অনেকটা ভালো হয়েছে।দেখতেও আগের থেকে অনেক সুদর্শন হয়ে গেছে।তবে চুলগুলো কেবল উস্কোখুস্কো ছিল।বেলার ভাবনায় মাঝে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেলি বের হয়ে আসে।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৪

আমি এতো কষ্ট করে গল্প লিখি।কিন্তু আপনারা তেমন রেসপন্সই করেন না। এতো কষ্ট আমি কাদের জন্য করি? আপনাদের জন্যই তো! আপনাদের খুশি করার জন্য।কিন্তু আপনারা বিনিময়ে আমাকে কেবল নিরাশই করে যাচ্ছেন। পোস্টে না পড়ছে আশানুরূপ রিয়েক্ট আর না কমেন্ট।তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাকে আর নিরাশ করবেন না।পেজের রিচ অনেক ডাউন।পেজের রিচ বাড়াতে সাহায্য করুন।পরবর্তী পর্ব আপনাদের সাড়া দেওয়ার উপর নির্ভর করে আসবে।
ধন্যবাদ~

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৬