প্রেমময় বিষ পর্ব ১৬

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৬
মাহিমা রেহমান

রাতে ডিনারের সময় সকলে এসে উপস্থিত।রায়াযের অগমন ঘটতেই বেলা অন্তঃকরণে বক্র হাঁসি হেঁসে তাহিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠে
— তাহিন ভাইয়া তুমি বরং আমার পাশে বসো।আর বেলি তুই আমার অপরপাশে এসে বস।

তাহিন হাস্যোজ্জ্বল মুখে বেলার পাশে গিয়ে বসে পড়ে।এতেই যেন রায়াযের পায়ের রক্ত তালুতে উঠে যায়। চোখ দুটো রঞ্জিত করে ত্বরিত উঠে দাঁড়ায় সে।গটগট শব্দ তুলে ডাইনিং প্রস্থান করে।তার আকস্মাৎ এহেন অন্ন ছেড়ে উঠে যাওয়াতে বেলা-বেলি একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে দুজন-দুজনকে চোখ মেরে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাজিয়া বেগম ছেলেকে হঠাৎ খাবার ছেড়ে উঠতে দেখে ছেলের পিছন পিছন সেও ছুটে।একটা মাত্র ছেলে তার। কথায় কথায় রেগে যাওয়া যেন তাই বদঅভ্যাস বটে।রাগ যেন তার নাকের ডগায় অবস্থান করে সর্বদা।তাই বলে কি ছেলেকে পর করে দেবে।নাড়ি ছেঁড়া-ধন তার,,একমাত্র কলিজার টুকরা এই ছেলে। সে পুনরায় আবার ডাইনিংয়ে ফিরে এসে হাতে খাবার নিয়ে ছেলের রুমের দিকে ছুটল।মা-ছেলের এহেন ভালোবাসায় সকলে অবাক।অতি সন্তর্পনে রাজিয়া বেগম ছেলের কক্ষে প্রবেশ করল।দেখতে পেল ছেলে তার সিগারেট ফুঁকছে।তিনি মৃদু চিৎকার সহিত বলে উঠলেন,

— বাবু তুই ভাত রেখে এসব কি খাচ্ছিস?
মায়ের কণ্ঠ কর্নগোচর হতেই হাতের মধ্যিখানে অবস্থানরত সিগারেটটা মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলল রায়ায।রাজিয়া বেগম ছেলের সান্নিধ্যে এগিয়ে এলেন।ছেলের শিয়রে বসে খাবার মেখে মুখে তুলে দিলেন।রায়ায আর না করল না মাকে।খেয়ে নিল কিছুটা।বাকিটা বলল নিয়ে যেতে।রাজিয়া বেগম ছেলের নিকট হার মেনে চলে গেল।

রুমে এসে বসে আছে বেলা।রাতে খাবারের পর্ব চুকেছে ক্ষণকাল পূর্বেই।বেলি বসে বসে আভ্রর সাথে কথা বলছে ফোনে।’হ্যা’ আভ্রের সহিত বেলির প্রণয় হয়েই গেছে মাস ক্ষানিক আগেই।একন চুটিয়ে প্রেম করছে দুই কপোত-কপোতী।সহসা বেলার ফোনে কল এলো।স্ক্রিনে রুহাশ নামকা দৃষ্টিপাত হতেই অধর কার্নিশে সূক্ষ্ম হাসি ফুটিয়ে তুলল।

রুহাশের সহিত বেলার খুব ভালো সম্পর্ক চলছে,, মাস ক্ষানিক ধরে।রুহাশ নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে পরিবর্তন করেছে কেবল বেলার জনই।তবে বেলার একটাই কথা,, সে তাকে ভালোবাসতে পারবে না।তবে রুহাশ দমবার পাত্র নয়।সে এর শেষ দেখে ছাড়বে।আপাদত বেলার সাথে তার সম্পর্কটা খুব সুন্দর একটা সম্পর্কে স্থগিত।সে আর বেলা একে-অপরের খুব ভালো বন্ধু।রুহাশের মনে প্রাণে একটাই আশা,, তাদের বন্ধুত্বটা যেন প্রণয়ে পরিণত হয়।কারণ তার ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র খাদ নেই।তাহলে চাওয়াতে কেনো ভুল হবে?

বেলিকে নির্নিমেষ দেখে ফোনটা রিসিভ করে ছাদের দিকে অগ্রসর হয় বেলা।বেলি মেয়েটা আভ্রর প্রেমে যা মজেছে না? ওকে ডিস্টার্ব না করাই উচিত।
কথা বলতে বলতে ছাদে চলে আসে বেলা।রুহাশের সহিত কথা বলতে এতটাই ব্যাপৃত সে, কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না তার নেত্র জোড়ায়।

যেই ছাদের রেলিংয়ের কাছে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হবে আকস্মাৎ সে একটি পুরুষালি ছায়ামূর্তি দেখতে পেল।সত্বর বুঝে যায়,, কে এই ছায়া মূর্তি।ত্বরিত ঘুরে ব্যগ্র পায়ে ফিরে যেতে উদ্যত হয়। সহসা তীক্ষ্ম পুরুষালি কণ্ঠে উচ্চারিত কিছু বাক্য বেলার কর্ণকুহরে স্পর্শ করে,
— বেশ বড় হয়ে গেছিস!!বেশ পরিবর্তন ও এনেছিস দেখছি নিজের মধ্যে।
বেলার দৃঢ় কণ্ঠে জবাব,

–আপনি নিশ্চয়ই সেই আগের বেলাটাকেই আশা করেছিলেন?
অদ্ভুতভাব হাসল রায়ায।বেলাকে কাছে ডাকে।এগিয়ে আসে বেলা।পিছুমুখী হয়ে দাড়িয়ে রয়।বেলাকে হঠাৎ হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সম্মুখে দাঁড় করায় রায়ায।হকচকিয়ে যায় বেলা।রায়াযের মুখপানে তাকায়।কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে রায়ায। আকস্মাৎ আড়ষ্টতা এসে গ্রাস করে তাকে বেলাকে।সহসা শুনতে পায় রায়াযের রাশভারি কণ্ঠ,
— আমি তোকে এই মুহূর্তে মোটেও আগের বেলা আশা করছিনা (কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে) আগের বেলা এতটা ও বেহায়া ছিল না যে,,নিজ শরীরের আকর্ষণীয় অঙ্গ অন্যকে দেখিয়ে বেড়াতো।

ঈষৎ চমকে পিছুমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বেলা।তার পরিধানে কেবল একটা লেডিস টি-শার্ট আর প্লাজো। এই অসময়ে ছাদে কেউ থাকবে নাএই আশা করেই সে ওড়না ব্যতীত চলে এসেছে। টি-শার্ট পাতলা হওয়ার সুবাদে বডি স্ট্রাকচার অনেকটা বোঝা যাচ্ছে।এই সময় সে ছাদে রায়াযকে মোটেও আশা করেনি।রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে চুলগুলো একহাতে খুলে দিয়ে বক্ষের সমীপে এনে পিছু ঘুরে দাঁড়ায়।কিছু কড়া কথা শোনানোর তাগিদে।চোখ-মুখ শক্ত করে বলে উঠে,

— আপনার চোখের কি চারিত্রিক কোনো সমস্যা আছে? অন্যের শরীরের বিশেষ অঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কথার সমাপ্তি ঘটতেই হিংস্র বাঘের মত বেলাকে একটানে নিজ সম্মুখে এনে দাঁড় করিয়ে সহসা ধাক্কা মেরে রেলিংয়ের নিচে ফেলে দেয়।

তখন থেকে ক্রন্দনরত মুখ বানিয়ে ঝুলে যাচ্ছে বেলা।কিন্তু রায়াযের পাথর সম চিত্ত গলবার নয়।আর কতক্ষন এভাবে ঝুলে থাকা যায়? হাত প্রায় অবশ হয়ে আসছে। এবার না পেরে বলে উঠল বেলা,
— আপনি একটা পাথর মনের মানুষ।যার না আছে কোনো ফিলিংস।না আছে মায়া-দয়া।একটা নিষ্ঠুর আপনি। আপনি যেমন অন্যের ভালোবাসার গুরুত্ব দেন না।ঠিক তেমনি আপনি ও একদিন আপনার ফিলিংসের গুরত্ব পাবেন না।আপনিও আপনার ভালোবাসা পাবেন না। হার্টলেস!!
সহসা রায়াযের মুখখানা মলিন রূপ ধারণ করে।বিড়বিড় করে বলে উঠে,

— হয়তো।
পূনরায় বেলার সম্মেখে গিয়ে তাকে একটানে উপরে তুলে আনে।চোখ মুখ কঠিন করে বলে উঠে,
— আর কোনোদিন আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার দুর্সাহস দেখবি না।আমার চরিত্রে যদি সমস্যা থাকত? তাহলে ওইদিন চুমুর বিপরীতে তোকে থাপ্পড় দিতাম না।নিজের বিছানায় নিয়ে যেতাম।
সহসা শ্রবণপথ আর কপোল অগ্নির ন্যায় গরম হয়ে গেল বেলার।ত্বরিত মাথা পতিত করল সে।গটগট শব্দ তুলে জায়গা প্রস্থান করল রায়ায।

রুমে গিয়ে সকল ঘটনা ব্যক্ত করল বেলির কাছে।সকল কিছু শুনে বেলি রাগে ফুঁসতে লাগল।বেলা গোমড়া মুখ করে বসে রয়েছে।বেলার পানে তাকিয়ে বেলি বলে উঠল,
— ব্যাটাকে জব্দ করতে এসে তুই পুনরায় নিজেই জব্দ হয়ে গেলি!! দাঁড়া কিছু একটা করতে হবে।ব্যাটাকে এমন জব্দ করব না।তুই খালি ওয়েট কর।
বেলা মুখ মলিন করে বেলির পাশে শুয়ে পড়েল।

ভোর ছয়টা বেজে পাঁচ মিনিট।আদিবকে সাথে নিয়ে বাগানে জগিং করছে রায়ায।আকস্মাৎ বেলাকে জগিং স্যুট পরিধেয় অবস্থায় দেখে কিছুটা হচকিয়ে যায় রায়ায।অভিমুখে এসে হাত নেড়ে স্টাইল মেরে তাদের দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠে বেলা,

— হ্যালো ব্রাদার্স।
পুনরায় হচকায় রায়ায।তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেলার পানে।তাদেরকে এমন ভাবে ব্রাদার্স বলল?,, রায়াযের মনে হলো তারা বুঝি তার মায়ের পেটের ভাই।
আদিব বেলার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে উত্তর করল,
— হ্যালো ডিয়ার।
‘ডিয়ার’ কথাটা শুনেই গা’টা জ্বলে উঠল রায়াযের।বেলা ন্যাকা সুরে আদিবকে কিছু বলতে নিবে আকস্মাৎ বেলার কর চেপে ধরে নিজের সান্নিধ্যে টেনে এনে বলে উঠে,

— কি সমস্যা? ন্যাকামো রেখে বিদেয় হ এখান থেকে।
বেলা ঈষৎ আনন কুঁচকে বলে উঠে,
— আপনার সমস্যা কি? হাত ছাড়ুন আমার। লাগছে খুব!!
ঝাড়া মেরে বেলার হাত ছেড়ে দিল রায়ায। দৃঢ়কন্ঠে বলে উঠল,
— চুপচাপ এখন থেকে বিদেয় হ!!

সহসা তাহিন, বেলি, কিয়ারা, টায়রা এসে বাগানে দাঁড়াল।সকলের গায়ে জগিং স্যুট কেবল টায়রা বাদে।কিঞ্চিৎ চমকাল রায়ায।ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকিয়ে রইল সকলের পানে।হঠাৎ মুখে চুক চুক শব্দ তুলে রায়াযের সমীপে এগিয়ে এল বেলা।ওষ্ঠের কার্নিশে বক্র হাসি ফুটিয়ে তুলে রায়াযের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

— তখন কি যেন বলছিলেন? বিদেয় হ? ন্যাকামো রেখে বিদেয় হ! ব্লা ব্লা। কিন্তু কি বলুনতো আমরা সবাই এখন জিমে যাচ্ছি মর্নিং এক্সারসাইজটা সেরে নিতে।আর একটা কথা(রায়াযের নিকটবর্তী হয়ে ফিসফিসিয়ে) আপনাকে দেখলে আজকাল আমার ন্যাকামো ও করতে ইচ্ছে করে না ট্রাস্ট মি(কন্ঠনালী চেপে ধরে ন্যাকা কণ্ঠে)। তা রায়ায ভাইয়া এবার নিশ্চয়ই কিছু বলার আছে আপনার? আপনি তো আবার যেকোনো মতে নিজের ইগোকে বজায় রাখতে চান! রাইট!(ঘাড় কাৎ করে) আমাকে বুঝি এখন থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করছে?

অগ্নিদগ্ধ চোখে বেলার আননে তাকায় রায়ায।ঈষৎ কুটিল হেসে তাহিনকে আহ্লাদি কণ্ঠে বলে উঠে বেলা,
–আমাকে একটু কোলে নাও তো। হঠাৎ করে পা দুটো খুবইইই ব্যথা করছে জানো তো (ন্যাকা কণ্ঠে)।
নির্নিমেষ বেলার পানে তাকিয়ে হনহনিয়ে স্থান ত্যাগ করে রায়ায। তার পিছু পিছু আদিব ছুটে চলে।আদিবের উদ্দেশ্যে বেলা বলে উঠে,

— আরে ভাইয়া তুমিও রাগ করলে নাকি?
সহসা হাসিতে ফেটে পড়ল সকলে।বেলি বেলাকে বলে উঠল,
— ভালোই জব্দ করেছিস বেলা।
তখনই টায়রা পানসে মুখে বলে উঠল,
— এটা কিন্তু তুই ঠিক করলি না বেলা! ভাইয়া কিন্তু খুব রাগ করেছে।
টায়রার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আলগোছে কপোল জোড়া স্পর্শ করে ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে উঠে,

— আমি বুঝি তোর ভাইকে খুব উত্যক্ত করে ফেলেছি তাই না রে টায়রা?তোর ভাই নিশ্চয়ই খুব লজ্জা পেয়েছে তাই না?আমিতো তোর ভাইয়ের পরিধেয় বস্ত্র হরণ করেছি তাই নাহহহহ!!
পুনরায় হাসির শব্দে বিভৎস হলো চারিপাশ। আকস্মাৎ শক্ত হাতে বেলা চেপে ধরল টায়রার গাল দুটো। হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,

— সবসময় ভাইয়ের টা দেখিস।তোর ভাই যে অন্যকে আঘাত করে সেটা চোখে পড়ে না তোর? ভাইয়ের চামচি কোথাকার।দুর হ! আমার চোখের সামনে থেকে।
কথাটা বলেই টায়রাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় বেলা। যখন দেখল টায়রা দাঁড়িয়ে আছে এখনো।পূনরায় হুংকার ছাড়ল সে।মলিন মুখ বানিয়ে জায়গা প্রস্থান করল টায়রা।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৫

সারপ্রাইজ!! নিন আপনাদের খুশি করে দিলাম।এবার আপনারা ও আমাকে খুশি করে দিন। আশা করছি আমাকে নিরাশ করবেন না এবার।

প্রেমময় বিষ শেষ পর্ব