প্রেমময় বিষ পর্ব ১৪

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৪
মাহিমা রেহমান

বিকেল গড়িয়ে গোধূলির লগ্ন পড়েছে আকাশের বুকে।শিকদার বাড়িতে আজ বিয়ের আমোদ লেগেছে।কিন্তু না আজ করো বিয়ে নয়। বরং বাড়ির বড় ছেলের চরণ পড়েছে সবেমাত্র বাড়ির আঙিনায়।খুশিতে হইহই করে উঠছে বাড়িতে অবস্থানরত প্রতিটি মানুন। ‘হ্যা’ তাহিনের অধমাঙ্গ পড়েছে শিকদার বাড়িতে।

সদর দরজায় সম্মুখে ছেলের মুখখানা দর্শন হতেই অমি বেগম ছুটে ছেলের সম্মুখে দাড়িয়ে ছেলের বক্ষপটে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তাহিন নিজ বক্ষে মাকে জায়গা দিয়ে আদর সহিত মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মায়ের।অমি বেগম আদরের ছেলেকে এতকাল পর সম্মুখে দেখতে পেয়ে আবেগে-আটখানা হয়ে একদম ভেঙে পড়লেন।ফলস্বরূপ তখন থেকে তিনি অশ্রু বিসর্জন দিয়েই যাচ্ছেন।এই কান্না কোনো বিষন্নতার কান্না নয়। বরং এই কান্না সুখের কান্না,, হৃষ্টোতার কান্না।মায়ের এহেন বাচ্চামো দেখে তাহিন ওষ্ঠের কার্নিশে হাসি ফুটিয়ে তুলে মায়ের উদ্দেশ্যে বাক্য ব্যক্ত করল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— মা তুমি তখন থেকে কেমন বাচ্চাদের মত কেঁদে চলছ বলতো?আর কেঁদো না! তুমি কাঁদলে আমার কত কষ্ট হয় জানো না?তাহলে কেনো কাদঁছো? এখনই চোখ মুছে ফেল।
কথাটার সমাপ্তি ঘটিয়ে তাহিন নিজ হাতে মায়ের আঁখির কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল গুলো মুছে দেয়। আকস্মাৎ কোথা থেকে বেলি দৌড়ে এসে ভাইয়ের বক্ষপটে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ভাইকে জাপটে ধরে বলে উঠে,

— ভাই আমি তোমাকে যে ব্যান্ডের মেকআপ আর যে যে চকলেট গুলো আনতে বলেছিলাম এনেছো?
বোনের এহেন বাচ্ছাসুলভ কথা কর্ণকুহরে পৌঁছতেই কিঞ্চিৎ হেসে উঠে সে।বোনের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলে উঠে,
— এনেছি সবই এনেছি।এখন ভিতরে চল কেমন?
বেলি ভাইকে ছেড়ে ভাইয়ের হাত ধরে ভিতরে চলে আসে।তাহিনকে পেয়ে সবাই আহ্লাদে-আটখানা হয়ে পড়ে।সকলের আহ্লাদের সমাপ্তি ঘটতে অমি বেগম ছেলেকে উপরে পাঠিয়ে দেয় রেস্ট করার জন্য।
বেলি দৌড়ে বেলাকে জাপটে ধরে বলে উঠে,

— ভাই এসেছে বেলা। তুই দেখা করলি না?
নিজ কাজে মত্ত বেলা উত্তর দেয়,
— আমি দেখা করে কি করব?উনি হয়তো আমাকে এখন চিনতে পারবে না।
বেলি অবাক নয়নে বেলার পানে দৃষ্টিপাত করে বলে উঠে,
— তো কি হয়েছে? তাই বলে দেখা করবি না?।
বেলা কাঠখোট্টা স্বরে বলে উঠে,

— না
বেলি নিরাশ হয়ে বেলার হাত থামিয়ে দিয়ে,, নিজ সন্মুখে বেলাকে বসিয়ে বলে,
— কি হয়েছে তোর? মন খারাপ।
বেলা নিবিড় চোখে বেলিকে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠে,
— কি হবে? কিছুই হয়নি।তুই না বললি নিজেকে শক্ত করতে? তাই করছি।
বেলি রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠে,

— আচ্ছা ঠিক আছে চল দুজন কফি খাই।
বেলা ঘাড় কাৎ করে সম্মতি জানায়।বেলি তৎক্ষণাৎ বেলাকে টেনে নিচে নিয়ে আসে।অতঃপর দুজন মিলে কফি আর কিছু স্ন্যাক্স বানিয়ে নিজ কক্ষের বেলকনিতে চলে যায়।দোলনায় অবস্থানরত দুই তরণী আপন চিত্তে বকবক করে চলে।

রাত নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট।খাবার টেলিকে সকলে উপস্থিত।অনুপুস্থিতি কেবল তাহিনের।ক্ষনকাল অবিহিত হতেই তার আগমন ঘটে।চেয়ার টেনে হাসি মুখে বোনের পাশ্ববর্তী চেয়ারে আসন পাতে সে।খাবার সময় তাকে সকলে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করতে থাকে এসে হু, হা করে জবাব দেয়।রাতের খাবারের পর্ব সমাপ্তি ঘটলে,,সহসা তাহিন বেলির উদ্দেশ্যে ভরাট কন্ঠে বলে উঠে,

— খাওয়া শেষে তাড়াতাড়ি আমার রুমে আসবি।সাথে করে একেও (বেলার উদ্দেশ্যে) সাথে করে নিয়ে আসবি,,কুইক।
বেলি ঘাড় কাৎ করে সায় জানালে সহসা তাহিন নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উদ্যত হয়। খাওয়া শেষে বেলি বেলার মুখপানে তাকিয়ে চপলা কণ্ঠে বলে উঠে,

— বেলা! বেলা তাড়াতাড়ি চল।ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাদের চকলেট দিবে এখন। আয় আয়।
কথাটা শেষ করে বেলি সময় ব্যয় করল না।বেলাকে ধেনুর মত টেনে নিয়ে যেতে লাগল।আকস্মাৎ এমন হওয়ায় বেলা কিছুটা হকচকিয়ে গেল।
তাহিনের রুমের দ্ধারের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে দুই চপলা চিত্তের তরণী।সহসা ভিতর থেকে রাশভারি কণ্ঠে কেউ বলে উঠল,

— ভিতরে আয়।
ভাইয়ের কথা শেষ হতেই ত্বরান্বিত পায়ে রুমে প্রবেশ করে বেলি সাথে বেলাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।রুমে অবস্থানরত বেলি ভাইয়ের অভিমুখে দাঁড়িয়ে একটা মিষ্টি হাসি হাসে।বিছানায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে তাহিন দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— দুজন এখানে এসে বস।

সত্বর গতিতে বেলি গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে বেলাকে টেনে বসিয়ে দেয়।বেলা আড়ষ্টতায় জড়িয়ে যাচ্ছিল ক্ষনকাল।তাহিন নির্নিমেষ বেলাকে দেখে নিয়ে বেলার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— আমি তোমায় বড় ভাই হই।বেলি যেমন আমার
বোন ঠিক তুমিও আমার বোন। সো রিকেক্স!এতো অস্থির হওয়ার কিছুই নেই।
বেলা মাথা নেড়ে সায় জানাল।পুনরায় তাহিন নিজ চিত্তের বাক্য ব্যক্ত করে

— ফুপিয়ার সাথে কিছুক্ষন আগে আমার কথা হয়েছিল। ওদিকটায় প্রচুর গ্যাঞ্জাম থাকায় আপাদত তিনি আসতে পারবে না।তবে তোমার সম্পর্কে আমাকে তিনি সব বলেছেন।তোমাকে এখানে পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো উনি চায় তুমি বাস্তবতায় সম্মুখীন হও। আর সেই সূত্র ধরেই তুমি নিজেকে গড়ে তুলো।তাই আজ থেকে আমি তোমার ট্রেইনার।এখন থেকে আমার কথা মত চলতে হবে তোমায় বুঝেছো? আর বেলি আর তুমি আমার কাছে একদম এক।তাই ভাই হিসেবে বোনের ভালোটাই চাইব আমি।

মায়ের কথা কর্ণপাত হতেই অভিমানে মুখ ভারী হয়েছিল বেলার।সহসা তাহিনের পরবর্তী বলা বাক্য গুলো শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে ঘাড় কাৎ করে সায় জানায় বেলা।তাহিন বেলার মাথায় ভরসার হাত বুলিয়ে দেয়।বেলার মনেও এক প্রকার ভালোলাগা দোল খেয়ে যায়।কারণ তার যে বড়ভাই নেই।আজ কেমন তাহিনকে নিজ বড়ভাই রূপে আবিষ্কার করছে।সহসা বেলি চাপা আর্তনাদ করে উঠে।হকচকিয়ে যায় বেলা, হচকায় তাহিন।বেলি দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— আরে এসব পড়ে হবে।আগে ভাইয়া তুমি চকলেট গুলো তো দাও।আমার জিভে জল চলে এসেছে অলরেডি।
তাহিন কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বোনের পানে তাকিয়ে,, সত্বর উঠে দাঁড়িয়ে এক গাদা চকলেট বোনের হতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

— যা এবার বিদেয় হ। আর অবশ্যই অর্ধেক ভাগের চকলেট বেলাকে দিবি।
বেলির পড়ে যাওয়ায় উপক্রম হতেই চকলেটের বেশ কিছু প্যাকেট বেলার হাতে ধরিয়ে দেয়।বেলি খুশিতে গদগদ করতে করতে বেলাকে নিয়ে ভাইয়ের কক্ষ প্রস্থান করে।
দুজন চকলেট খেতে খেতে খেজুরে আলাপ লাগিয়ে দিয়েছে।সহসা বেলি বলে উঠে,

— জানিস আমার ভাইয়ার মনের ভিতর অনেক কষ্ট!
বেলা চমকে বেলির পানে তাকায়।বেলি পূনরায় বলতে লাগে,
— শুনেছি ভাইয়া নাকি একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।কিন্তু মেয়েটা নাকি ভাইয়াকে ধোঁকা দিয়েছে।জানিস আজও ভাইয়ার চোখে সেই বেদনা দেখা যায়।ভাইয়া মেয়েটাকে ভুলতেই দেশ ছেড়েছিল।
বেলা বিষন্ন মনে নিবিড় শ্বাস ত্যাগ করে আপন চিত্তে আওড়াতে লাগল,
— আর আমি শহর।

আজ বেলার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।আর এই অধ্যায়ের সূচনাকারী বেলার রিসেন্ট ট্রেইনার ওরফে তাহিন শিকদার।
বেলা-বেলি, ইন্নি-পিন্নি আর পিন্টু সব কটা’কে প্রতিদিন ভোর চারটার দিকে ঘুম থেকে তুলে পড়াতে বসায় তাহিন।পড়া শেষে সকলের সহিত নামায আদায় করে ছয়টার দিকে বেলা আর বেলাকে নিয়ে জিমের উদ্দেশ্যে বের হয়।বেলার উসিলায় এখন মধ্যিখানে বেলি ফেসে যায়।

ফলস্বরূপ তাকেও ভাইয়ের সাথে জিমে যেতে হয়।এই নিয়ে বেলির আক্ষেপের সমাপ্তি নেই।ক্ষানিক পূর্বেই ফিরেছে তারা।তাহিন সরাসরি নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়াল।বেলি সোফায় নিজ গ্ৰীবাদেশ বাঁকিয়ে ক্রন্দনরত মুখ বানিয়ে শুয়ে আছে।আর ক্ষানিক পর পর নিজ চিত্তের ক্রোধ ঝরছে। সে বারংবার ভাইকে বলেছে তার জিমে কাজ নেই।কিন্তু তার ভাই তাকে টেনে-হিচরে সঙ্গে করে নিয়ে গেল।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৩

নাস্তা করে বেলাকে সাথে নিয়ে কোথাও একটা রওনা হয় তাহিন।লেজ স্বরূপ তাদের পিছন পিছন ছুটে যায় বেলি।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৫