প্রেমময় বিষ পর্ব ১৩

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৩
মাহিমা রেহমান

কেটে গেছে এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে আভ্র নিজ দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছে।প্রতিদিন একবেলা করে হলেও বেলির পিছন পিছন সব জায়গাতে সে উপস্থিত ছিল।তবে আজকাল রুহাশাকে কেমন ভিন্নরূপে আবিষ্কার করছে সকলে।যেখানে যে একের পর এক মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকে,, সেখানে আজকাল তাকে মেয়েদের আশেপাশে দেখাই যায় না!

সে আজকাল আভ্রর সাথেই চলে আসে,,বেলা যখন তার সম্মুখ হয়ে প্রস্থান করে তখন সে একধ্যানে খুবই গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে তার পানে।এতে বেলা অনেক বেশি আড়ষ্টতায় পড়ে গেলেও সে তার চোখ ফেরাতে নারাজ। আভ্রকে নিজের আশেপাশে দেখলেই ইচ্ছামত বকে দেয় বেলি।কিন্তু কে শুনে কার কথা?,,,তারা দুভাই যেন আঠার মত লেগে আছে তাদের দুবোনের পিছন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বসন্তকে বিদায় জানিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে বরষার।আজকে বৃষ্টির দিন হওয়ায় স্কুলে আসতে হয়নি বেলা-বেলি কে।তাই বেলির মতামত,, ধরায় গোধূলির আগমন ঘটলেই তারা দুজন মিলে ঘুরতে বের হবে। বেলা নাকচ করল না,,কারণ আজকাল তারও গোধূলি লগ্নে বেশ লাগে ঘোরাফেরা করতে।

তাই দুজন বের হয় ঘুরবার উদ্দ্যেশে।প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ব্যস্ত দুজন।তখনই তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি আর কয়েকটি বাইক।ললাট কুঁচকে নেয় বেলি। প্রতিদিন তাদের দুইভাইয়ের এসব মলোড্রামা সহ্য হচ্ছে না আর। আকস্মাৎ আভ্র বলিষ্ঠ হাতে চেপে ধরে বেলির নরম হাত।বেলি ঈষৎ চমকে আভ্রর মুখপানে তাকায় সহসা আভ্র বেলিকে টেনে নামায় বাইক থেকে।

বেলি রেগে কিছু বলতে অগ্রসর হতেই আভ্র মুখ চেপে ধরে বেলির। হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে লাগে বেলিকে। আভ্রর এহেন কাজে অবাক নয়নে তাকিয়ে রয় সেদিকে।সহসা সংবিৎ শক্তি ফিরে আসতেই এক ভয়াবহ চিৎকার করে উঠে বেলা। আচম্বিতে বেলার এহেন কাজে হকচকিয়ে যায় রুহাশ। গটগট পা ফেলে বেলার সান্নিধ্যে এসে সহসা বেলার হাতের কব্জি টেনে ধরে রুহাশ।বেলা শঙ্কিত দৃষ্টিতে রুহাশের পানে তাকায়।রুহাশ বেলাকে টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগে।বেলা ঈষৎ ঘাবড়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠে,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি আমাকে? আর বেলি কোথায়?? বেলিকে কোথায় নিয়ে গেছে তারা? কথা বলছেন না কেনো? আর ছাড়ুন বলছি আমাকে।
রুহাশ নির্নিমেষ বেলার পানে তাকিয়ে নিজ কার্যে মনোনিবেশ করে।গাড়ির সান্নিধ্যে এসে বেলাকে ভিতরে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অজানায় হারিয়ে যায় রুশান।
বেলা তখন থেকে জিজ্ঞেস করে চলছে তারা কোথায় যাচ্ছে? তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে রুশান? কিন্তু পুরো সময় মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছিল রুশান।

আঁধার নেমেছে ক্ষণিক কাল পূর্বে। বেলাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগল রুহাশ।ভরপুর আলোর সমাহারে এনে বেলার হাত ছেড়ে দিল সে। বেলা কিঞ্চিৎ রেগে কিছু বললে,, সহসা তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল রুহাশ।চমকিত নয়নে তার সম্মুখে অবস্থিত ব্যক্তির পানে তাকাল বেলা। আকস্মাৎ বেলার হাত দুটো চেপে ধরল রুহাশ।তার এহেন কাজে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল বেলা।রুহাশ বেলার হাত দুটো চেপে ধরে বলতে লাগে,

— তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিন থেকেই আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।বারংবার তোমার কথা স্মরণে আসত।ঠিক মত খেতে পারতাম না।ঠিক মত ঘুমাতে পারতাম না।দেখ এখনই ঠিক মত ঘুমাতে, খেতে পারিনা আমি।জানিনা এটা ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু? তবে জানি! তোমাকে আমার লাগবে। আমার হয়ে যাও। আমার প্রতি বেলা ,,তুমি নামক বেলা দিয়ে শুরু হবে আর তুমিতেই শেষ! তোমাকে আমার চাই বেলা।

নিজ কক্ষে বসে রাগে ফুঁসছে বেলি।বেলিকে সেই তখন থেকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে বেলা।সর্বশেষ নিজের রাগকে দমন করে বেলার পানে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল,
— রুহাইশায় তোর সাথে কি করেছে’রে বেলা?
বেলা অকপটে উত্তর দিল,
— প্রপোজ করেছিল।
বেলি রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে ব্যক্ত করল,

— আর বলিস না! এই রুহাইশায় যা লুইচ্চা! এলাকার এমন কোনো মেয়ে নেই যার সাথে ওর ‘লুতুপু*তু প্রেম ছিল না।আমাদের স্কুলের একটা মেয়েকে তো ব্যাটা প্রেগনেন্ট ও করে দিয়েছিল।পরবর্তীতে অস্বীকার করায় মেয়েটা সুসাইড করে।কত বড় মাপের লুইচ্চা! তুই একবার চিন্তা করতে পারছ? যাক তুই কি বলেছিস ব্যাটাকে?
বেলা কিঞ্চিৎ শঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠল,

— বলেছি আমার দ্বারা এসব হবে না।কিন্তু সে বলেছে সে আমাকে সময় দিবে।যত সময় লাগুক।কিন্তু তার নাকি আমাকে চাই!
বেলার বলা বাক্য কর্ণগোচর হতেই কাঠখোট্টা কণ্ঠে বলে উঠে বেলি,
— আর রাখ তোর চাওয়া-চাওয়ি! তুই চিন্তা করিস না।বুঝছিস ব্যাটা তোকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ট্রেপ্রে ফেলতে চাচ্ছে। তোর সাথেও লুতুপুতু প্রেমের সম্পর্ক গড়তে চাইছে। খবরদার! তুই কিন্তু গলবি না।
অকস্মাৎ বেলা ডুকরে কেঁদে উঠেন বেলি কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বেলাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে কপোল আলগোছে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল,

— কি হয়ছে? এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমি কি তোকে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?
বেলা দুদিকে মাথা নেড়ে না বোঝায়। বেলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
— তাহলে কি জন্য কাঁদছিস?

বেলা রায়ায সম্পর্কিত সকল ঘটনা তুলে ধরে বেলির পানে।সকল ঘটনা কর্নকুহর অব্দি পৌঁছতেই বেলাকে নিজ বক্ষঃস্থলে জাপটে ধরল বেলি।কথার খেই হারিয়ে ফেলল যেন বেলি তবুও সান্ত্বনা স্বরূপ বলে উঠল,
— তুই এভাবে কাঁদিস না।নিজেকে শক্ত কর। সকল অপমানের জবাব তুই একদিন ঠিকই দিবি বেলা। তবে নিরবে।নিজেকে প্রস্তুত কর আগে।
বেলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো একটি বছর।আজ রবিবার।শিকদার বাড়িতে একপ্রকার তোড়জোড় পড়ে গেছে।শিকদার বাড়ির বড় ছেলে তাহিন শিকদার তার লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরছে আজ।আপন মানুষগুলোর কাছে ফিরে আসছে।আনন্দের যেন সমাপ্তি নেই আজ শিকদার বাড়িতে।

সোফায় বসে একের পর এক মুখের মধ্যে বাদাম পুরে সকলের কার্যক্রম দেখে চলছে বেলা আর বেলি। পুরো বাড়ি সুস্বাদু খাবার ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। বেলির আর সহ্য হল না। সন্তর্পনে বেলি পা টিপে রান্নাঘরে গেল একবাটি মাংসের আশায়। সহসা তার কান কেউ সজোরে মুচড়ে দিল।পিছুমুখী হয়ে তার দৃষ্টিতে তার দাদিয়ার মুখটি ধরা দিল।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১২

( আমি একবারও বলি নি গল্পে উল্লেখিত প্রতিটা ছেলে বেলার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর না বলেছি সবাই নায়ক। আপনাদের এমন ব্যবহারে আমি লিখার খেই হারিয়ে ফেলেছি।তাই আমাকে আমার মত লিখতে দিন।আর ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন।তাহলে এমনি জেনে যাবেন কে নায়ক।)

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৪