প্রেমময় বিষ পর্ব ১২

প্রেমময় বিষ পর্ব ১২
মাহিমা রেহমান

আভ্রকে সামনে দেখে সংঘাতিক রেগে গেল বেলি।বেলির মুখের সামনে গিয়ে আভ্র সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দেয়। আভ্রের এহেন কাণ্ডে বেলির মুখমণ্ডল ভয়ংকর লাল আভা ধারণ করে,,,বেলি তর্জনী আঙ্গুল উচুঁ করে আভ্রের মুখ-পানে চেয়ে বলে উঠে,

— এগুলো কি ধরনের অসভ্যতামি! আর সামনে থেকে সরে দাড়ান বলছি।আমাদের যেতে দিন।
বেলির ব্যক্ত বাক্য কর্ণপাত হতেই অভ্র বিভৎস হেসে, বেলির দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলে উঠে,
— ওহো সুন্দরী!তুমি খালি খালি রাগ করো। অবশ্য অভ্র চৌধুরীর বউয়ের তেজ থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।কি বলিস তোরা( চামচা গুলোর দিকে তাকিয়ে)।
কথাটা বলেই জোরে জোরে বিভৎস হাসি হাসতে লাগে অভ্র।
বেলা কিছুটা তটস্থ নয়নে আভ্রর পানে তাকিয়ে রইল।সহসা বেলার পানে আঁখি পড়ে আভ্রর।ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বেলিকে জিজ্ঞেস করে উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— এই নতুন পাখিটা কোথা থেকে নিয়ে এলে বউ?পাখিটা নিশ্চয়ই রুহাশ ভাইয়ার পছন্দ নিশ্চয়ই।
কথাটা শেষ হতেই অভ্র রুহাশকে ফোন লাগল। অভ্রর এহেন কাজে বেলি রেগে দৃঢ়কন্ঠে সতর্কমূলক বাক্য বলে উঠল,
— দেখুন বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না।আর বেলার দিকে তো ভুলেও আপনাদের দুইভাইয়ের একজন ও তাকানোর চেষ্টা করবেন না। নতুবা আমি আপনাদের কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে আসব।
বেলির মুখপানে দৃঢ় আঁখিতে দৃষ্টিপাত করে মোবাইলের দিকে মনোনিবেশ করে অভ্র,

— ভাই তাড়াতাড়ি আয়।তোর জন্য একটা নতুন পাখির খোঁজ পেয়েছি। হ্যা! জলদি আয়।
কথা শেষ করে বেলির দিকে আঁখি পল্লব মেলে দৃঢ়চিত্তে বলে উঠে,
— কলিজা ছিঁড়ে নাও আর যাই করো! বেলি ফুল তুমিতো আমার হবেই। আর রইল এই সুন্দরীর(বেলার অভিপ্রায় তাকিয়ে) একে ভাইয়ার পছন্দ হয়ে হলে এই পাখি ভাইয়েরই হবে ব্যাস।

বেলি এবার অচঞ্চল গতিতে রাগতে লাগল। শঙ্কিত বেলা বেলির পৃষ্ঠদেশের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজ সত্তাকে আড়াল করে নিল। বেলি রেগে গিয়ে আভ্রর উদ্দশের বলে উঠল,
— আপনাদের কি নিম্নতম লজ্জবোধ নেই! এতো এতো মেয়েদের জীবন নষ্ট করে আপনার ভাইয়ের শান্তি হয়নি।এখন আমার বোনের দিকে নজর দিতে আসছেন? খবরদার!

চারিদিক কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে রায়াযের।কোথাও যেন কারো উপস্থিতি নেই।সব কিছুতেই সে বিষিয়ে উঠছে। সবকিছুই কেমন বিরক্ত লাগছে।
ফিরেছে অনেক আগেই রায়ায,,নিজের রুমে বসে আছে।কাজেও কেমন মন বসতে অক্ষম সে।তাই নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখতে ব্যস্ত রায়ায।নিজের ভাবনায় বিভোর রায়ায,,সহসা করো কণ্ঠে নিজ নাম কর্ণগোচর হতেই ঈষৎ চমকে রুমের দ্বার খুলে দিতে রাজিয়া বেগমের চেহারা দৃষ্টিপাত হলো,,,পূনরায় সে রুমে বসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল।রাজিয়া বেগম ছেলের মুখপানে একধ্যানে তাকিয়ে থেকে ছেলের মাথায় আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলেন,

— রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে।ধ্যান কোথায় তোমার রায়ায?চলো নিচে যাবে খেতে।
রায়ায নির্জীব কণ্ঠে মাকে উত্তর করল,
— খাবো না মা, তুমি যাও।
রাজিয়া বেগম পূনরায় ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু রায়াযের এক কথা,,এসে খাবে না। অগ্যতা উপরে খাবার এনে রাজিয়া বেগম নিজ ছেলেকে ভালোবাসা সহিত নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন।

রাতের খাবার শেষ হলে বেলা এসে বেলির কক্ষে বসে রয়।কারণ সে’তো এখন থেকে এখানেই রাত্রিযাপন করবে। একটুপর বেলি হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে হাজির হয়।এতো রাতে বেলির হতে আইসক্রিম দেখে বেলা চোখদুটো ঈষৎ বড় করে তাকিয়ে রয় বেলির পানে।বেলি বেলার এহেন দৃষ্টি দেখে কিঞ্চিৎ হেসে বেলার দিয়ে একটা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে,

— এমন হাবার মত তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ধর।খুব রিস্ক নিয়ে মায়ের চোখের আড়ালে চুরি করে নিয়ে এসেছি।
বেলির কথা কর্নগোচর হতেই যেন অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে নিজেকে ধাতস্থ করে বেলির পানে বলে উঠে,
— তখনকার ওই ছেলেগুলো কে ছিলরে? কেমন গুন্ডা গুন্ডা মনে হচ্ছিল।আর কাকে ফোন করেই বা আসতে বলল?
বেলার কথার সমাপ্তিতে বেলি নিজ ললাট চাপড়ে ব্যক্ত করে উঠে,

–আর বলিস না দুঃখের কথা! আর গুন্ডার মত দেখতে কি? এরা আসলে গুন্ডাই।এই অভ্র নামক তুফান আজ দুই বছর ধরে আমার পিছন পড়ে আছে।একটা দিনও শান্তি নেই আমার।যেখানেই যাই সেখানেই পিছন পিছন এসে হাজির হয়।আর যাকে ফোন দিল ওটা হচ্ছে অভ্রর বড় ভাই।আমাদের এলাকার কাউন্সিলরের ছেলে ওরা দুজন।দুই ভাইয়ের দুইজনই গুন্ডা,

একটাও ভালো হলো না। তবে এদের বাবা খুব ভালো।এমন বাপের এমন সন্ত্রাসের মত দুজন ছেলে।মানুষ যেমন বিশ্বাসই করতে চায় না এটা।এখন ঘুমা কালকে চাচ্চু গিয়ে তোকে আমার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। ইয়াহু এখন থেকে আমরা একসাথে থাকব, একসাথে একই স্কুলে পড়ব কি মজা!
কথাটা শেষ করে বেলি বেলাকে জাপটে ধরে।অতঃপর দুই চঞ্চল কন্যা আপন চিত্তে গল্প করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

সকালে নাস্তা করে অনিক সাহেব বেলা আর বেলিকে নিয়ে বের হয়, বেলাকে বেলির স্কুলে ভর্তি করার উদ্দ্যেশে।ভর্তি করে দুজনকে রেখে বাড়িতে ফিরে আসে অনিক সাহেব।বেলা আর বেলি রয়ে যায় ক্লাস করবার উদ্যেশে।বেলি বেলাকে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।বেলাকে কিছুটা ভীত দেখে বেলি বেলার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— তুই এতো ভীতু কেন বল তো বেলা!কিন্তু এখন যখন বেলি আছে, তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই।তোকে সব শিখিয়ে-পড়িয়ে একদম গুলিতে খাইয়ে দিব।

বেলা ঘাড় কাৎ করে সায় জানায়।অতঃপর বেলির ফ্রেন্ডরা সকলে মিলে বেলাকে টেনে ক্লাসে নিয়ে যায়।বেলিদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সব কটা এক-একটা বিচ্ছু।সকলের মাথা চিবিয়ে খেতে এক্সপার্ট।সবকটা বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান হওয়ায়,,পুরো স্কুলে একটা দাপট নিয়ে চলে। অগ্যতা সকলে এদের সহিত মেপে মেপে কথা বলে।একপ্রকার আতঙ্ক এই ব্ল্যাক টিম।

ছুটি শেষে বেলি বেলাকে নিজের বাইকে করে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। সহসা তাদের সমীপে কয়েকটা বাইক এসে থামে।বেলি কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে শক্ত মুখে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে।
অভ্র নেমে আসে,, বেলির সমীপে দাঁড়ায়।তখনই পিছন থেকে একটা গম্ভীর রাশভারি কণ্ঠে কেউ অভ্রর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
— কোন পাখির কথা বলছিলিরে আভ্র? দেখা দেখি তোর পাখি।

আপন চিত্তে সিগারেটের ধোঁয়া শূন্যে ছেড়ে বলে উঠে রুহাশ।
ভাইয়ের বলা বাক্য কর্ণপাত হতেই সহসা আভ্র ভাইয়ের অভিমুখে তাকিয়ে বলে উঠে,
— ভাই আমার বেলি ডার্লিংয়ের পিছনে বসা মেয়েটা।

ভাইয়ের কথার প্রেক্ষিতে রুশান বেলির পিছনে বসে থাকা মেয়েটির অভিমুখে তাকায়।
বেলাকে দেখার সাথে সাথে রুশানের সমস্ত শরীর যেন এক ভয়ঙ্কর বিদ্যুৎ খেলে যায়।চোখের পল্লব ঝাপটে একধ্যানে বেলার দিকে গভীর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে রুশান।সহসা ভাইয়ের ডাকে গভীর ধ্যান থেকে বের হয় রুহাশ।বেলার মুখপানে দৃষ্টি রেখেই ভাইকে বলে উঠে,

— এদের যেতে দে।
ভাইয়ের এহেন কথা কর্ণপাত হতেই চমকে ভাইয়ের পানে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
–কিন্তু ভাই?
রুহাশ আভ্রর দিকে ঘাড় বাঁকা করে তাকিয়ে পুনরায় ভাইকে আদেশ করে,
— যা বলছি তাই কর! বেশি কথা বলিস না।বেশি কথা আমার পছন্দ না।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১১

অগ্যতা সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় আভ্র।বেলা একপলক সকলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেক করে রুশানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে গভীর দৃষ্টি মেলে বেলার পানে তাকিয়ে আছে।এহেন দৃষ্টি দর্শন হতে বেলা আঁখি নত করে নেয়।বেলি আভ্রকে চোখ রাঙিয়ে পাশ থেকে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় সকলের চোখের আড়ালে।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১৩