প্রেমময় বিষ পর্ব ১১

প্রেমময় বিষ পর্ব ১১
মাহিমা রেহমান

ট্রেনে বসে বাহিরের দিকে আঁখি মেলে চেয়ে আছে বেলা।নির্বাক চিত্তে বিরতিহীন অশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলছে বেলা।আজকেই ঢা’কাতে তার শেষ দিন।আজই নিজ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অচেনা শহরে।শেষ দেখা ও হলো না আপন মানুষগুলোর সাথে। প্রগাঢ় ভাবনায় বিভোর বেলা টেরই পেল না তার অপরপাশে কেউ একজন এসে নিজ আসন গ্রহণ করেছে।সহসা কারও কণ্ঠে নিজ নাম শুনে ইষৎ চমকে উঠে বেলা, পাশ ঘুরে অপরপাশের ব্যক্তির মুখপানে তাকিয়ে বিস্ময়কর নয়ন-জোড়া বড় বড় করে রাখে।অপরপাশে অবস্থিত ব্যক্তি নিজ ওষ্ঠ নেড়ে বেলার পানে তাকিয়ে বলে উঠে,

–, আমাকে চিনতে পেরেছো বেলা?
বেলা আপন চিত্তে ভাবনায় বিভোর হয়ে বলে ওঠে,
— আর আপনিতো সেই ভাইয়াটা তাই না! যে আমাকে ওইদিন বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল।
রাফি নিজের মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।অতঃপর পূনরায় অবাক চিত্তে ব্যক্ত করে উঠে,
— কিন্তু তুমি একা! এতো সকালে কোথায় যাচ্ছো?
সহসা বেলা নিজের মাথা পতিত করে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— খুলনা যাচ্ছি। নানুর বাড়িতে।
বেলার বলা বাক্য সমূহ কর্ণগোচর হতেই রাফি কিঞ্চিৎ চমকে পুনরায় বেলাকে জিজ্ঞেস করতে লাগে,
— কিন্তু তুমি একা কেনো! বাকিরা কোথায়?
পূর্বেরন্যায় বসে থেকে বেলা উত্তর প্রদান করে,
— ভাইয়া এতকিছু বলতে পারছি না আপাদত। কিন্তু এটা বলতে পারব, আমাকে এই মুহূর্তে নিজ শহর, নিজ পরিবার সব ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কিছু মনে করবেন না আমার কথায়।
অজ্ঞতা রাফি আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে চুপটি করে বসে রইল।

নাস্তার সময় হতে সকলে এসে উপস্থিত হলো।যে যার যার আসন গ্রহণ করে বসে পড়ে টেবিলে।বেলার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে রাজিয়া বেগম রুমি বেগমকে জিজ্ঞেস করে উঠে,
— বেলা কোথায় ছোট? ওকে তো দেখছি না সকাল থেকে।
রুমি বেগম জায়ের পানে আঁখি মেলে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে উত্তর দেয়,
— যেখানে থাকার সেখানেই আছে আপা।
ঈষৎ চমকে উঠে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে রাজিয়া বেগম বলে উঠে,

— কিন্তু আমি তো ওকে কোথাও দেখতে পারছি না ছোট? সত্যি করে বল বেলা কোথায়?
ভাবহীন চিত্তে রুমি বেগম ব্যক্ত করে,
— সকলের মঙ্গলের জন্য বেলা এই শহর ছেড়ে চলে গেছে, এরবেশি আমি আর কিছু বলতে পারব না আপা।তবে বলল তোমরা কেউ চিন্তা করো না,, ও যেখানেই আছে ভালো আছে।

কথাটা বলেই রুমি বেগম প্রস্থান করলেন।কেবল রেখে গেলেন কিছু মানুষের শঙ্কিত চমকিৎ মুখচ্ছবি।
রায়াযের গলা দিয়ে যেন খাবার নামতে নারাজ।সেই যে আটকে গেছে আর নামতে চাইছে না। সে নির্জীব দৃষ্টিতে একমনে তাকিয়ে আছে খাবারের দিকে। সে আপন চিত্তে ভাবতে লাগল,, সে কি খুব বেশি খারাপ করে ফেলল মেয়েটার সাথে?কেনো মেয়েটাকে তার জন্য শহর ছাড়তে হলো?খুব কি বড় ভুল করেছিল মেয়েটা?একটু বোঝালেই হতো।নিজের রাগকে যদি একটু সংযত করতে পারত তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হয়তো না।খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রায়ায়,,গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।

স্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তে নারাজ জিসান সাহেব।কারণ তার একটাই মেয়ে, বড়ই আদরের মেয়ে তার কিন্তু তার স্ত্রী সর্বদাই মেয়ের প্রতি একটু কঠোর। সহসা খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।স্ত্রীর পানে ব্যগ্র পায়ে ছুটে চললেন।তার মেয়ে কি এমন ভুল করল যার দারুণ তাকে বাড়ি ছাড়া এমন কি শহর ছাড়া করলেন তার স্ত্রী।
রুমি বেগিনের সন্নিধ্যে এসে জিসান সাহেব স্ত্রীকে প্রশ্ন করে উঠলেন,

— কি এমন করেছে বেলা? যার জন্য তুমি ওকে এতবড় শাস্তি দিলে।
স্বামীর পানে তাকিয়ে রুমি বেগম দৃঢ় চিত্তে জবাব দেয়,
— মস্ত বড় ভুল করেছে আপনার মেয়ে।আপনার মেয়ের বয়স হচ্ছে ঠিকই কিন্তু জ্ঞান হাঁটুর নিচে।তাই একটু আক্কেল হওয়ার আশায় ওকে ওর উপযুক্ত স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি।আমি চাইছি ওর জবাব ও নিজে দেক।
কথা শেষ করেই রুমি বেগম নিজ গন্তব্যে ছুটলেন।স্ত্রীর কথার শুরু-শেষ বুঝে উঠলেন না জিসান সাহেব।অজ্ঞতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেছে বেলা।আপন চিত্তে এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে খুজে চলছে কাউকে।অতঃপর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে পেয়ে ওষ্ঠে ছেয়ে গেল বেদনার আড়ালে কৃত্রিম হাসি।বেলা এগিয়ে গেল সেই দিক,,গিয়ে নিজ মামাকে সালাম প্রদান করল। অনিক নিজ ভাগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে ব্যক্ত করলেন,
— ইশ’রে! বেলা তুই মাশাল্লাহ কত বড় হতে গেছিস।কতদিন পর তোকে দেখলাম।সাথে আপা এলে বেশ হতো।তোকে কেন যে এতটা পথ একা পাঠাল আপা!, কিছুই বুঝলাম না।
বেলা আঁখির পল্লব ঝাঁপটে ব্যক্ত করে,

— এখন থেকে তোমাদের এখানেই থাকব মামা।আচ্ছা এবার চলো বাসায় যাওয়া যাক।
অনিক সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে ওঠে,
— হ্যা চল চল। দে তোর লাগেজটা আমায় দে।
অতঃপর তারা পা বাড়ায় নিজ গন্তব্যে
অনিক সাহেব হচ্ছে বেলার ছোট মামা।যে বর্তমানে মাস্টার্স কমপ্লিট করে ঘরে বসে।কাজে তার কোনো মন নেই,, সে নিজের মত দেশের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়।বেলার মায়েরা তিন ভাই এক বোন।তিন ভাইয়ের আদরের বোন হচ্ছে রুমি বেগম।

শিকদার বাড়িতে হইহই পড়ে গেছে বেলার আগমনে।বেলার বড় মামা রাজিব শিকদারের এক পুত্র এক কন্যা।মেঝো মামা আতিক শিকদারের দুই মেয়ে এক ছেলে।আর ছোট মামা অনিক শিকদার বর্তমানে ব্যাচেলর।রাজিব শিকদারের বড় পুত্র যে বর্তমানে উচ্চডিগ্ৰি অর্জনের উদ্দেশ্যে কানাডা অবস্থান করছে।

বর্তমানে বেলা নিজ নানুমনির সন্নিকটে অবস্থান করছে। রাফিদা বেগম আদরের মেয়ের একমাত্র কন্যার মাথায় আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।সহসা বেলি( রাজিব শিকদারের মেয়ে) এসে বেলাকে নিজ সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।সত্বর ওষ্ঠ নাড়িয়ে বেলা জিজ্ঞেস করে উঠে,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে বেলি?
চপলতা সহিত বেলি বলে উঠে,
— চল তোকে নিয়ে আমাদের এলাকায় ঘুরে আসি।তার আগে চল আগে তোকে রেডি করিয়ে দেই।
অজ্ঞতা বেলা বেলির সঙ্গে পা বাড়াল বেলির রুমের দিকে।

— বেলি তুই এগুলো কি ড্রেস পরালি আমাকে!
বেলি ভাবহীন ভঙ্গিতে বেলার মুখ পানে আঁখি মেলে তাকিয়ে ব্যক্ত করে,
— শোন বেলা ফুপিয়া বলছে তোকে একটু মডার্ন আর দুনিয়া-ধারী শিখাতে।তুই যা গাধা! তোকে একটু চালক বানাতে বলেছে ফুপিয়া বুঝেছিস।এবার চল আমরা একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।বিকেল বেলা ঘুরে মজা আছে বুঝেছিস।
বেলা বিস্মিত আঁখি মেলে বেলির পানে চেয়ে মাথা কা্ৎ করে সায় জানায়।
অমি বেগমের কাছে বলে বেলাকে নিয়ে বের হয়ে এলো বেলি।

বাহিরে এসে বেলি নিজের বাইক বের করতে যায়। বেলিকে বাইক চালাতে দেখে বেলার চোখ বের হাওয়ায় উপক্রম।বেলা বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠে,
— বেলি তুই বাইক ও চালাতে জানিস!
বেলি ওষ্ঠের কার্নিশে অকৃত্রিম হাসি বজায় রেখে বলে উঠে,
— তোকে ও শিখিয়ে দিব। এবার তাড়াতাড়ি উঠে বস আয়।

নিজ এলাকা বেলাকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে বেলি। শঙ্কিত বেলা বেলির পৃষ্ঠদেশ খামচে ধরে বসে আছে।আগে কখনো বাইক উঠা হয়নি বেলার।শঙ্কিত চিত্তে সহসা প্রমোদ খেলে যায়।বেলা আঁখি জোড়া বুঝে নেয়।তার সর্ব কায়া জুড়ে খেলে যাচ্ছে মুগ্ধতা।বেলি এটা-সেটা দেখিয়ে যাচ্ছে বেলাকে।বেলি পার্কের পাশে নিজ বাইক সাইড করে নেমে পড়ে সঙ্গে বেলাকে টেনে নামিয়ে দেয়।দুজন আপন মনে হেঁটে চলছে,, বেলি বেলাকে এটা-সেটা চিনাচ্ছে।সহসা কোনো এক স্থান হতে অবির্ভাব হয় রুবেলের।

রুবেলের মুখমণ্ডল দৃষ্টিগোচর হতেই রেগে ভৎস হয়ে পড়ে বেলি,,রেগে হুংকার ছেড়ে বলে উঠে,
— এই চামচার বাচ্চা পথ ছাড় বলছি! নয়তো তোর একদিন কি আমার একদিন।
রুবেল মাথা নত করে নিজ চিত্তে অভিব্যক্ত করে,
— ভাবী আভ্র ভাই আপনাকে যেতে বলেছে।
বেলি এবার রেগে ফেঁটে পড়ে বলে উঠে,

প্রেমময় বিষ পর্ব ১০

— সা*লা আমি তোর কোন জনমের ভাবীরে?সামনে থেকে সর বলছি।
কথাটা শেষ করে বেলি বেলার হাত ধরে সত্বর গতিতে সামনের দিকে নিজের অধমাঙ্গ জোড়া বাড়াল।সহসা ওষ্ঠের কার্নিশে সিগারেট চেপে ধরে ধোয়া গগনের পানে উড়িয়ে বেলির সামনে এসে দাঁড়ায় আভ্র।

প্রেমময় বিষ পর্ব ১২